shabd-logo

কভার্স

3 November 2023

1 Viewed 1

১৫ই আগস্ট

পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা পোষা ময়না ছিল, সেটাকে আমি একশোর উপর বাংলা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও কথার মানে বোঝে না। একবার এই ময়নাটাই এমন এক কাণ্ড করে বসল যে, আমার সে ধারণা প্রায় পালটে গেল। দুপুরবেলা সবেমাত্র আমি ইস্কুল থেকে ফিরছি, মা রেকাবিতে মোহনভোগ এনে দিয়েছেন, এমন সময় ময়নাটা হঠাৎ 'ভূমিকম্প, ভূমিকম্প' বলে চেঁচিয়ে উঠল। আমরা কোনও কম্পন টের পাইনি, কিন্তু পরের দিন কাগজে বেরোল সিমোগ্রাফ যন্ত্রে সত্যিই নাকি একটা মৃদু কম্পন ধরা পড়েছে ।

সেই থেকে পাখিদের বুদ্ধির দৌড় সম্পর্কে মনে একটা অনুসন্ধিৎসা রয়ে গেছে, কিন্তু অন্যান্য পাঁচ রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণার মধ্যে ওটা নিয়ে আর চর্চা করা হয়নি। আর একটা কারণ অবিশ্যি আমার বেড়াল নিউটন। নিউটন পাখি পছন্দ করে না, আর নিউটনকে অখুশি করে আমার কিছু করতে মন চায় না। সম্প্রতি, বয়সের জন্যই বোধ হয়, নিউটন দেখছি পাখি সম্বন্ধে অনেকটা উদাসীন হয়ে পড়েছে। সেই কারণেই আমার ল্যাবরেটরিতে আবার কাক, চড়ুই, শালিক ঢুকতে আরম্ভ করেছে। আমি সকালে তাদের খেতে দিই। সেই খাদ্যের প্রত্যাশায় তারা সূর্য ওঠার আগে থেকেই আমার জানালার বাইরে জটলা করে ।

প্রত্যেক প্রাণীরই কিছু কিছু নির্দিষ্ট সহজাত ক্ষমতা থাকে। আমার ধারণা, অন্য প্রাণীর তুলনায় পাখির ক্ষমতা আরও বেশি, আরও বিস্ময়কর। একটা বাবুইয়ের বাসা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলে গুণ্ডিত হতে হয়। একজন মানুষকে কিছু খড়কুটো দিয়ে যদি ও রকম একটা বাসা তৈরি করতে বলা হয়, আমার বিশ্বাস সে কাজটা সে আদৌ করতে পারবে না, কিংবা যদি বা পারে তো মাসখানেকের অক্লান্ত পরিশ্রম লেগে যাবে।

অস্ট্রেলিয়াতে ম্যালি-ফাউল বলে এক রকম পাখি আছে, যারা মাটিতে বাসা করে। বালি, মাটি আর উদ্ভিজ্জ দিয়ে তৈরি একটা ঢিপি, আর তার ভিতরে ঢোকার জন্য একটা গর্ত। ডিম পাড়ে বাসার ভিতরে, কিন্তু সে ডিমে তা দেয় না। অথচ উত্তাপ না হলে তো ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোবে না। উপায় কী ? উপায় হল এই যে ম্যালি-ফাউল কোনও এক আশ্চর্য অজ্ঞাত কৌশলে বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইটের এক ডিগ্রিও এদিক ওদিক হতে দেয় না, তা বাইরের আবহাওয়া ঠাণ্ডা বা গরম যাই হোক না কেন ।

আরও রহস্য। গ্রিব নামক পাখি তাদের নিজেদের পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় এবং শাবকদের খাওয়ায়, কেন তা কেউ জানে না। আবার এই একই গ্রিব পাখি জলে ভাসমান অবস্থায় কোনও শত্রুর আগমনের ইঙ্গিত পেলে, নিজের দেহ ও পালক থেকে কোনও এক অজ্ঞাত উপায়ে বায়ু বার করে দিয়ে শরীরের স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি বাড়িয়ে গলা অবধি জলে ডুবে ভাসতে থাকে ।

এ ছাড়া যাযাবর পাখির দিকনির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল-বাজের শিকার ক্ষমতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি, অসংখ্য পাখির আশ্চর্য সংগীতপ্রতিভা— এ সব তো আছেই। এই কারণেই কিছু দিন থেকে পাখির পিছনে কিছুটা চিন্তা ও সময় দিতে ইচ্ছা করছে। তার সহজাত বুদ্ধির বাইরে তাকে কত দূর পর্যন্ত নতুন জিনিস শেখানো যায় ? মানুষের জ্ঞান, মানুষের বুদ্ধি তার মধ্যে সঞ্চার করা যায় কি ? এমন যন্ত্র কি তৈরি করা সম্ভব, যার সাহায্যে এ কাজটা হতে পারে ?

২০শে সেপ্টেম্বর

আমার পাখিপড়ানো যন্ত্র নিয়ে কাজ চলেছে। আমি সহজ পথে বিশ্বাসী। আমার যন্ত্রও তাই হবে জলের মতো সহজ। দুটি অংশে হবে এই যন্ত্র। একটি হবে খাঁচার মতো। পাখি থাকবে সেই খাঁচার মধ্যে। খাঁচার সঙ্গে বৈদ্যুতিক যোগ থাকবে দ্বিতীয় অংশের। এই অংশটি থেকে জ্ঞান ও বুদ্ধি চালিত হবে পাখির মস্তিষ্কে।

এই এক মাস আমার ল্যাবরেটরির জানালা দিয়ে খাদ্যের লোভে যে সব পাখি এসে ঢুকেছে, সেগুলোকে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে স্টাডি করেছি। কাক, চড়ুই, শালিক ছাড়া পায়রা, ঘুঘু, টিয়া, বুলবুলি ইত্যাদিও মাঝে মাঝে আসে। সব পাখির মধ্যে একটি বিশেষ পাখি বিশেষভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেটা একটা কাক । দাঁড়কাক নয়, সাধারণ কাক। কাকটা আমার চেনা হয়ে গেছে। ডান চোখের নীচে একটা সাদা ফুটকি আছে, সেটা থেকে তো চেনা যায়ই, তা ছাড়া হাবভাবও অন্য কাকের চেয়ে বেশ একটু অন্য রকম। ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে টেবিলের উপর আঁচড় কাটতে আর কোনও পাখিকে দেখিনি। কালকে তো একটা ব্যাপারে রীতিমতো হকচকিয়ে গেছি। আমি আমার যন্ত্র তৈরির কাজ করছি, এমন সময় একটা খচ খচ শব্দ পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, কাকটা একটা আধখোলা দেশলাইয়ের বাক্স থেকে ঠোঁট দিয়ে একটা কাঠি বার করে তার মাথাটা বাক্সের পাশটায় ঘষছে। আমি বাধ্য হয়ে হুস হুস শব্দ করে কাকটাকে নিরস্ত করলাম। কাকটা তখন উড়ে গিয়ে জানালায় বসে গলা দিয়ে দ্রুত কয়েকটা শব্দ করল, যেটার সঙ্গে কাকের স্বাভাবিক কা কা শব্দের কোনও সাদৃশ্য নেই। হঠাৎ শুনে মনে হবে, যেন কাকটা বুঝি হাসছে।

যে রকম চালাক পাখি, আমার পরীক্ষার জন্য একে ব্যবহার করতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হবে। দেখা যাক কত দূর কী হয় ।

২৭শে সেপ্টেম্বর

আমার 'অরনিথন' যন্ত্র আজ তৈরি শেষ হল। কাকটা সকালেই আমার ঘরে ঢুকে পাঁউরুটি খেয়ে এ জানালা ও জানালা লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল, যন্ত্রটা টেবিলের উপর রেখে যেই তার দরজা খুলে দিলাম, অমনি কাক দিব্যি লাফাতে লাফাতে এসে তার ভিতরে ঢুকে পড়ল। এ থেকে এটাই অনুমান করা যায় যে, কাকটার শেখার আগ্রহ প্রবল। প্রথমে কিছুটা ভাষা জ্ঞান হওয়া দরকার, না হলে আমার কথা বুঝতে পারবে না; তাই সহজ বাংলা দিয়ে শুরু করেছি। আমাকে বোতাম টেপা ছাড়া আর কোনও কাজই করতে হচ্ছে না। শেখাবার বিষয় সমস্তই আগে থেকে রেকর্ড করা। বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন বিষয়, প্রত্যেকটার আলাদা নম্বর দেওয়া। একটা আশ্চর্য জিনিস লক্ষ করলাম- বোতাম টিপলেই কাকটার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে, আর সঙ্গে সঙ্গে তার নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে যায়। কাকের মতো ছটফটে পাখির পক্ষে এটা যে কত অস্বাভাবিক, সে তো বুঝতেই পারছি।

নভেম্বর মাসে চিলির রাজধানী সানতিয়াগো শহরে সারা বিশ্বের পক্ষিবিজ্ঞানীদের একটা কনফারেনস্ আছে। মিনেসোটাতে আমার পক্ষিবিজ্ঞানী বন্ধু রিউফাস গ্রেনফেলকে একটা চিঠি লিখে দিয়েছি। যদি আমার বায়স বন্ধুটি সত্যি করে মানুষের বুদ্ধি কিছুটা আয়ত্ত করতে পারে, তা হলে ওকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সম্মেলনে ডিমন্‌সট্রেশন সহ একটা বক্তৃতা দেওয়া চলতে পারে।

৪ঠা অক্টোবর

কভার্স হল কাক জাতীয় পাখির ল্যাটিন নাম। আমার ছাত্রটিকে আমি ওই নামেই ডাকছি। নাম ধরে ডাকলে প্রথম দিকে আমার দিকে ফিরে ফিরে চাইত, এখন দেখছি গলা দিয়ে শব্দ করে উত্তর দেয়। এই প্রথম একটা কাককে 'কা' না বলে 'কি' বলতে শুনছি। তবে কণ্ঠস্বরের বিশেষ পরিবর্তন আমি আশা করছি না। অর্থাৎ কভার্সকে দিয়ে কথা বলানো চলবে না। তার বুদ্ধির পরিচয় তার কাজেই প্রকাশ পাবে বলে আমার বিশ্বাস।

কভার্স এখন ইংরাজি শিখছে। বাইরে গিয়ে ডিমন্‌সট্রেশন দিতে গেলে এই ভাষাটার প্রয়োজন হবে। ওর ট্রেনিং-এর সময় হল সকাল আটটা থেকে ন'টা। দিনের বেলা বাকি সময়টা ও আমার ঘরের আশপাশেই ঘোরাফেরা করে। সন্ধ্যা হলে এখনও রোজই চলে যায় আমার বাগানের উত্তর-পশ্চিম কোণের আম গাছটায় ।

নিউটন দেখছি কভসিকে দিব্যি মেনে নিয়েছে। আজকে যে ঘটনাটা ঘটল, তার পরে সম্পর্কটা বন্ধুত্বে পরিণত হলেও আশ্চর্য হব না। ব্যাপারটা ঘটল দুপুরে। নিউটন আমার আরাম কেদারাটার পাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে, কর্ভাস কোথায় যেন উধাও, আমি খাতায় নোট লিখছি, এমন সময় হঠাৎ ডানার ঝটপটানি শুনে জানালার দিকে চেয়ে দেখি কভার্স ঘরে ঢুকেছে, তার ঠোঁটে একটি সদ্য কাটা মাছের টুকরো। সে সেটাকে এনে থপ করে নিউটনের সামনে ফেলে দিয়ে আবার জানালায় ফিরে গিয়ে বসে বসেই ঘাড় বেঁকিয়ে এ দিক ও দিক দেখতে লাগল ।

গ্রেনফেল আমার চিঠির উত্তর দিয়েছে। লিখেছে, সে পক্ষিবিজ্ঞানীদের সম্মেলনে আমাকে নেমন্তন্ন পাঠানোর বন্দোবস্ত করছে। আমি অবশ্যই যেন কাক সমেত যথাসময়ে সানতিয়াগোতে গিয়ে হাজির হই।

২০শে অক্টোবর

দু' সপ্তাহে অভাবনীয় প্রোগ্রেস। কভার্স ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে ইংরিজি কথা আর সংখ্যা লিখছে। কাগজটাকে টেবিলের উপর ফেলে দিতে হয়, কভার্স তার উপর দাঁড়িয়ে লেখে । ওর নিজের নাম ইংরাজিতে লিখল— C-O-R VUS সহজ যোগ বিয়োগ করতে পারছে, ইংল্যান্ডের রাজধানী কী জিজ্ঞেস করলে লিখতে পারছে, আমার পদবি লিখতে পারছে। তিন দিন আগে মাস, বার, তারিখ শিখিয়ে দিয়েছিলাম, আজকে কী বার, জিজ্ঞেস করাতে পরিষ্কার অক্ষরে লিখল — F-R-I-DAY

কভার্সের খাওয়ার ব্যাপারেও বুদ্ধির পরিচয় পেয়েছি। আজ একটা পাত্রে রুটি-টোস্টের টুকরো আর আরেকটাতে খানিকটা পেয়ারার জেলি ওর সামনে রেখেছিলাম। ও রুটির টুকরোগুলো মুখে পোরার আগে প্রতি বারই ঠোঁট দিয়ে খানিকটা জেলি মাখিয়ে নিচ্ছিল ।

২২শে অক্টোবর

কভার্স যে এখন সাধারণ কাকের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে চায়, তার স্পষ্ট প্রমাণ আজকে পেলাম। আজ দুপুরে হঠাৎ খুব বৃষ্টি হল, সঙ্গে বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত। তিনটে নাগাত একটা কানফাটানো বাজ পড়ার শব্দ শুনে জানালার কাছে গিয়ে দেখি, আমার বাগানের বাইরের শিমুল গাছটা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বিকেলে বৃষ্টি থামার পর প্রচণ্ড কাকের কোলাহল। এ তল্লাটে যত কাক আছে, সব ওই মরা গাছটায় জড়ো হয়ে হল্লা করছে। আমার চাকর প্রহ্লাদকে ব্যাপারটা দেখতে পাঠালাম। সে ফিরে এসে বলল, 'বাবু, একটা কাক মরে পড়ে আছে গাছটার নীচে, তাই এত চেল্লাচেল্লি। বুঝলাম বাজ পড়ার ফলেই কাকটার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য— কভার্স আমার ঘর থেকে বেরোবার কোনও রকম আগ্রহ দেখাল না। সে একমনে পেনসিল মুখে দিয়ে প্রাইম নাম্বারস লিখে চলেছে— 2,3,4,5,7,11,13.......

৭ই নভেম্বর

কভার্সকে এখন সদর্পে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থিত করা চলে। পাখিকে শিখিয়ে পড়িয়ে খুঁটিনাটি ফরমাশ খাটানোর নানা রকম উদাহরণ পাওয়া যায়, কিন্তু কভার্সের মতো এমন শিক্ষিত পাখির নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে বলে আমার জানা নেই। অরনিথন যন্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অঙ্ক, জ্যামিতি, ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ইত্যাদি সব বিষয়েই যে সব প্রশ্নের উত্তর সংখ্যার সাহায্যে বা অল্প কয়েকটি শব্দের সাহায্যে দেওয়া যায়, কভার্স তা শিখে নিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ওর মধ্যে যে জিনিসটা প্রায় আপনার থেকে জেগে উঠেছে, সেটাকে বলা চলে মানবসুলভ বুদ্ধি বা হিউম্যান ইনটেলিজেন্‌স – যেটার সঙ্গে পাখির কোনও সম্পর্ক নেই। উদাহরণস্বরূপ একটা ঘটনার উল্লেখ করা যেতে পারে। সানতিয়াগো যাব বলে আজ সকালে আমার সুটকেস গোছাচ্ছিলুম। গোছানো শেষ হলে পর বাক্সের ঢাকনা বন্ধ করে পাশে ফিরে দেখি, কভার্স সুটকেসের চাবিটা ঠোঁটে নিয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। কাল গ্রেনফেলের আর একটা চিঠি পেয়েছি। ও সানতিয়াগো পৌঁছে গেছে।

পক্ষিবিজ্ঞানী সম্মেলনের কর্তৃপক্ষ আমার আসার পথ চেয়ে আছে। এর আগে এই সব সম্মেলনে কেবল পাখি নিয়ে বক্তৃতাই হয়েছে, জ্যান্ত পাখির সাহায্যে উদাহরণ সমেত কোনও বক্তৃতা কখনও হয়নি। গত দু' মাসের গবেষণার ফলে পাখির মস্তিষ্কের বিষয়ে আমি যে দুর্লভ জ্ঞান সঞ্চয় করেছি, সে সম্পর্কে একটা প্রবন্ধ লিখছি। সেটাই হবে সম্মেলনে আমার পেপার। প্রতিবাদীর মুখ বন্ধ করার জন্য সঙ্গে থাকবে কভাস।

১০ই নভেম্বর

দক্ষিণ আমেরিকা যাবার পথে প্লেনে বসে এই ডায়রি লিখছি। একটিমাত্র ঘটনাই লেখার আছে। বাড়ি থেকে যখন রওনা হব, তখন কভার্স হঠাৎ দেখি তার খাঁচা থেকে বার হওয়ার জন্য ভারী ছটফটানি আরম্ভ করেছে। কী ব্যাপার বুঝতে না পেরে খাঁচার দরজা খুলে দিতেই সে সটান উড়ে গিয়ে আমার রাইটিং টেবিলে বসে ঠোঁট দিয়ে উপরের দেরাজটায় ভীষণ ব্যস্তভাবে টোকা মারতে আরম্ভ করল। দেরাজ খুলে দেখি, আমার পাসপোর্ট-টা তার মধ্যে

রয়ে গেছে। কভার্সের জন্য একটা নতুন ধরনের খাঁচা বানিয়ে নিয়েছি। যে আবহাওয়া কভার্সের পক্ষে সবচেয়ে আরামদায়ক, খাঁচার ভিতর কৃত্রিম উপায়ে সেই আবহাওয়া বজায় রাখার ব্যবস্থা করেছি। খাবার জন্য কাকের পক্ষে পুষ্টিকর ভিটামিন দিয়ে হোমিওপ্যাথিক বড়ির মতো মুখরোচক বড়ি তৈরি করে নিয়েছি।

প্লেনের যাত্রীদের মধ্যে কেউই বোধ হয় এর আগে কখনও পোষা কাক দেখেনি। কভার্স তাই সকলেরই কৌতূহল উদ্রেক করছে। তবে আমি আমার কাকের বিশেষত্ব সম্পর্কে কাউকে কিছু বলিনি। ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাই অনুমান করেই বোধ হয় কভার্সও সাধারণ কাকের মতোই ব্যবহার করছে।

১৪ই নভেম্বর

হোটেল একসেলসিয়র, সানতিয়াগো। রাত এগারোটা। দু' দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম, তাই ডায়রি লেখার সময় পাইনি। আগে আমার বক্তৃতার কথাটা বলে নিই, তারপর এই কিছুক্ষণ আগের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আসা যাবে। এক কথায় বলা যায়, কভাসসহ আমার বক্তৃতাটা হয়েছে— অ্যানাদার ফেদার ইন মাই ক্যাপ । লেখাটা পড়তে লেগেছিল আধ ঘণ্টা, তারপর কভার্সকে নিয়ে ডিমন্‌সট্রেশন চলল এক ঘণ্টার উপর। আমি মঞ্চে উঠেই কভার্সকে খাঁচা থেকে বার করে টেবিলের উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। প্রকাণ্ড লম্বা মেহগনির টেবিল, তার পিছনে লাইন করে সম্মেলনের কর্তৃপক্ষরা বসেছেন, আমি এক পাশে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে আমার প্রবন্ধ পড়ছি। পড়া যতক্ষণ চলল, ততক্ষণ কভার্স এক পা-ও নড়েনি। তার এক পাশে ঘাড় কাত করার ভঙ্গি ও মাঝে মাঝে মাথা উপরনীচ করা থেকে মনে হচ্ছিল, সে গভীর মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে এবং কথা বুঝতেও পারছে। বক্তৃতা শেষ হবার পর চারিদিক থেকে করধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে একটা কাঠঠোকরার মতো শব্দ শুনে টেবিলের দিয়ে চেয়ে দেখি, কভার্স তার ঠোঁট দিয়ে হাততালির সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেবিলের উপর ঠুকে চলেছে।

ডিমন্‌সট্রেশনের সময় অবিশ্যি কভার্সের কোনও বিরাম ছিল না। গত দু' মাসে সে যা কিছু শিখেছে সবই সম্মেলনের অভ্যাগতদের সামনে উপস্থিত করে তাঁদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছে যে পাখির মস্তিষ্কে মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি যে এভাবে প্রবেশ করতে পারে, তা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। এখানকার কাগজ * কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো'-র সান্ধ্য সংস্করণে এর মধ্যেই কভার্সের খবর বেরিয়ে গেছে। শুধু বেরিয়েছে নয়, প্রথম পাতায় প্রধান খবর হিসেবে বেরিয়েছে, আর তার সঙ্গে বেরিয়েছে পেনসিল মুখে কভার্সের একটা ছবি।

মিটিং-এর পর গ্রেনফেল ও সম্মেলনের চেয়ারম্যান সিনিয়র কোভারুবিয়াসের সঙ্গে সানতিয়াগো শহর দেখতে বেরিয়েছিলাম। জনবহুল মনোরম আধুনিক শহর, পুব দিকে আন্ডিজ পর্বতশ্রেণী চিলি ও আরজেনটিনার মধ্যে প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ঘণ্টাখানেক ঘোরার পর কোভারুবিয়াস বললেন, সম্মেলনের প্রোগ্রামে দেখে থাকবে, অতিথিদের জন্য আমরা নানা রকম আমোদপ্রমোদের আয়োজন করেছি। তারমধ্যে আজ বিকেলের ব্যাপারটায় আমি ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করছি। একটি চিলিয়ান জাদুকর আজ তামাশা দেখাবেন তোমাদের খাতিরে। ইনি আগার্স নামে পরিচিত। এঁর বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, ইনি ম্যাজিকে নানা রকম পাখি ব্যবহার করেন। '

ব্যাপারটা শুনে কৌতূহল হয়েছিল, তাই আমি আর গ্রেনফেল আজ বিকেলে এখানকার প্লাজা থিয়েটারে আগাসের ম্যাজিক দেখতে গিয়েছিলাম। লোকটা নানা রকম পাখি ব্যবহার করে, সেটা ঠিকই। হাঁস, কাকাতুয়া, পায়রা, মোরগ, তিন হাত লম্বা সারস, এক ঝাঁক হামিং বার্ড— এ সবই কাজে লাগায় আগার্স এবং বোঝাই যায় যে, সব ক'টি পাখিকেই সে বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ শিখিয়ে নিয়েছে। বলাবাহুল্য, এই কাজের কোনওটাই আমার কভার্সের কৃতিত্বের ধারেকাছেও আসে না। সত্যি বলতে কী, পাখির চেয়ে আমার অনেক বেশি ইনটারেস্টিং মনে হল জাদুকর ব্যক্তিটিকে। টিয়াপাখির মতো নাক, মাঝখানে সিঁথি করা, টান করে পিছনে আঁচড়ানো নতুন গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো চকচকে চুল, চোখে মাইনাস পাওয়ারের চশমা, তার কাচ এত পুরু যে, মণি দুটোকে তীক্ষ্ণ বিন্দুর মতো দেখায়। লম্বায় লোকটা ই ফুটের উপর। চকচকে কালো কোটের আস্তিনের ভিতর থেকে দুটো শীর্ণ ফ্যাকাশে হাত বেরিয়ে আছে, সেই হাতের বিভিন্ন ভঙ্গিমাই দর্শকদের সম্মোহিত করে রাখে। জাদু খুব উঁচু দরের না হলেও, জাদুকরের চেহারা ও হাবভাব দেখেই প্রায় পয়সা উঠে আসে। আমি শো দেখে হল থেকে বেরোবার সময় গ্রেনফেলকে পরিহাসচ্ছলে বললাম,

'আমাদের যেমন আগাসের ম্যাজিক দেখানো হল, আগার্সকে তেমনই কভার্সের খেলা

দেখাতে পারলে মন্দ হত না। '

রাত ন'টায় ডিনার ও তারপরে অতি উপাদেয় চিলিয়ান কফি খেয়ে গ্রেনফেলের সঙ্গে হোটেলের বাগানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সবেমাত্র ঘরে এসে বাতি নিবিয়ে বিছানায় শুয়েছি, এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। আমি একটু অবাক হয়ে অন্ধকারেই রিসিভারটা তুলে কানে দিলাম ।

'সিনিয়ার শঙ্কু ?" 'হ্যাঁ'

“আমি রিসেপশন থেকে বলছি। আপনাকে অসময়ে বিরক্ত করার জন্যে ক্ষমা চাইছি। একটি ভদ্রলোক বিশেষ করে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। '

আমি বাধ্য হয়েই বললাম যে আমি ক্লান্ত, সুতরাং ভদ্রলোক যদি কাল সকালে আমাকে টেলিফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে পারেন, তা হলে ভাল হয়। নিশ্চয়ই কোনও রিপোর্টার হবে। এরমধ্যেই চারজন সাংবাদিককে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে এবং তারা যে সব প্রশ্ন করেছে, তাতে আমার মতো ঠাণ্ডা মেজাজের মানুষকেও রীতিমতো অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে হয়। একজন সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, ভারতবর্ষে যেমন গোরুকে পুজো করা হয়, তেমনই কাককেও হয় কি না ।

রিসেপশন লোকটির সঙ্গে কথা বলে বলল, 'সিনিয়র শঙ্কু, ভদ্রলোক বলছেন তিনি পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নেবেন না। সকালে ওঁর একটা অন্য এনগেজমেন্ট রয়েছে। '

বললাম, 'যিনি এসেছেন তিনি কি সংবাদপত্রের লোক ?

“আজ্ঞে, না। ইনি হলেন বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আগার্স। '

নামটা শুনে বাধ্য হয়েই ভদ্রলোককে উপরে আসতে বলতে হল। বিছানার পাশের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিলাম। তিন মিনিট পরে কলিং বেল বেজে উঠল ।

দরজা খুলে যাঁকে সামনে দেখলাম, তাঁকে স্টেজে ছ' ফুট বলে মনে হয়েছিল, এখন বুঝলাম তিনি সাড়ে ছ' ফুটেরও বেশি লম্বা। সত্যি বলতে কী, এত লম্বা মানুষ এর আগে আমি কখনও দেখিনি। বিলিতি কায়দায় সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে নমস্কার জানাবার সময়ও তিনি আমার চেয়ে প্রায় ছ ইঞ্চি লম্বা রয়ে গেলেন। ভদ্রলোককে ঘরে আসতে বললাম। স্টেজের পোশাক ছেড়ে জাদুকর এখন সাধারণ সুট পরে এসেছেন, তবে এ সুটের রংও কালো। ঘরে ঢোকার পর লক্ষ করলাম, কোর্টের পকেটে 'কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো'-র সান্ধ্য সংস্করণ। আগার্স চেয়ারে বসার পর তাঁর ম্যাজিকের তারিফ করে বললাম, 'যত দূর মনে পড়ছে, গ্রিক উপকথায় আগার্স নামক একজন কীর্তিমান পুরুষের কথা পড়েছি, যার সর্বাঙ্গে ছিল সহস্র চোখ। একজন জাদুকরের পক্ষে নামটা বেশ মানানসই। '

আগার্স মৃদু হেসে বললেন, 'সেই কীর্তিমান পুরুষটির সঙ্গে পাখির একটা সম্পর্ক রয়েছে, মনে পড়ছে নিশ্চয়ই।'

আমি বললাম, 'হ্যাঁ। গ্রিক দেবী হেরা আর্গাসের চোখগুলি তুলে ময়ূরের পুচ্ছে বসিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ময়ূরের লেজে চাকা চাকা দাগ। কিন্তু আমার কৌতূহল হচ্ছে আপনার চোখ সম্পর্কে। কত পাওয়ার আপনার চশমার ?'

'মাইনাস কুড়ি। তবে তাতে কিছু এসে যায় না। আমার পাখিগুলোর কোনওটারই চশমার প্রয়োজন হয় না।

নিজের রসিকতায় নিজেই অট্টহাস্য করে উঠলেন আগার্স। কিন্তু সে হাসি ফুরোবার আগেই ভদ্রলোক হঠাৎ মুখ-হাঁ অবস্থাতেই থেকে গেলেন। তাঁর চোখ চলে গেছে আমার ঘরের তাকে রাখা প্লাস্টিকের খাঁচাটার দিকে। কভার্স ঘুমিয়ে পড়েছিল; এখন দেখছি জাদুকরের অট্টহাসিতেই বোধ হয় তার ঘুমটা ভেঙে গেছে। সে দিব্যি ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে আগন্তুকটির দিকে।

আগার্স মুখ-হাঁ অবস্থাতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে খাঁচাটার দিকে এগিয়ে গেলেন । তারপর মিনিটখানেক ধরে কভার্সের দিকে চেয়ে বললেন, 'আজ সন্ধ্যার কাগজে এর বিষয় পড়ে অবধি আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছি। আপনার বক্তৃতা শোনার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমি পক্ষিবিজ্ঞানী নই, কিন্তু আমিও পাখিদের শিক্ষা দিয়ে থাকি। ভদ্রলোক চিন্তিতভাবে ফিরে এসে চেয়ারে বসলেন। তারপর বললেন, 'বেশ বুঝতে পারছি আপনি ক্লান্ত, কিন্তু তাও অনুরোধ করছি যদি আপনার এই পাখিটিকে একবার খাঁচা থেকে বার করতে পারেন... একবার যদি ওর বুদ্ধির একটু নমুনা...'

আমি বললাম, 'শুধু আমিই ক্লান্ত নই, আমার পাখিও ক্লান্ত। আমার খাঁচার দরজা খুলে দিচ্ছি। বাকিটা নির্ভর করবে আমার পাখির মেজাজের উপর। আমি ওকে জোর করে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করাতে চাই না।'

“বেশ তো—তাই হোক.....

খাঁচার দরজা খুলে দিলাম। কর্ভাস বেরিয়ে এসে ডানার তিন ঝাপটায় আমার খাটের পাশে টেবিলটায় এসে ঠোঁটের এক অব্যর্থ ঠোকরে ল্যাম্পটা নিবিয়ে দিল।

ঘর এখন অন্ধকার। জানালা দিয়ে রাস্তার উলটো দিকে হোটেল মেট্রোপোলের জ্বলা-নেবা সবুজ নিয়নের ফিকে আলো ঘরে প্রবেশ করছে। আমি চুপ। কভার্স ডানা ঝটপটিয়ে ফিরে গিয়ে খাঁচায় ঢুকে ঠোঁট দিয়ে টেনে দরজা বন্ধ করে দিল ।

আর্গাসের মুখের উপর সবুজ আলো নিয়নের তালে তালে জ্বলছে, নিবছে। তার সোনার চশমার পুরু কাচের ভিতর সাপের মতো চোখ সবুজ আলোয় আরও বেশি সাপের মতো মনে হচ্ছে। বেশ বুঝতে পারছি সে অবাক, হতভম্ব। বেশ বুঝতে পারছি, কর্ভাস ঘরের বাতি নিবিয়ে তার মনের যে ভাবটা প্রকাশ করল, সেটা আগাসের বুঝতে বাকি নেই। কভার্স এখন বিশ্রাম চাইছে। সে চায় না ঘরে আলো জ্বলে। সে অন্ধকার চায়, অন্ধকারে ঘুমোতে চায়।

আর আগাস ? তার সরু গোঁফের নীচে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে একটা ফিসফিসে শব্দ উচ্চারিত হল— 'ম্যানিফিকো।'—অর্থাৎ চমকপ্রদ, অসামান্য। সে তার হাতদুটো যেন তালির ভঙ্গিতে থুতনির সামনে এনে জড়ো করেছে। লক্ষ করলাম, তার নখগুলো অস্বাভাবিক রকম লম্বা ও চকচকে। বুঝলাম, সে নখে নেলপালিশ মেখেছে। রুপোলি পালিশ। তার ফলে মঞ্চের স্পষ্ট লাইটে আঙুলের খেলা জমে ভাল। সেই রুপোলি নখে এখন বার বার বাইরের সবুজ নিয়নের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে।

'আই ওয়ান্ট দ্যাট ক্রো।' ফিসফিসে শুকনো গলায় ইংরিজিতে আর্গাসের কথা এল। এতক্ষণ সে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছিল আমার সঙ্গে। কথাগুলো লিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি, তাতে একটা নগ্ন নির্লজ্জ লোভের ইঙ্গিত এসে পড়ছে, কিন্তু আসলে আর্গাসের কণ্ঠস্বরে ছিল অনুনয় ।

'আই ওয়ান্ট দ্যাট ক্রো । আবার বলল আগার্স । আমি চুপ করে তার দিকে চেয়ে রইলাম। এখন কিছু বলার দরকার নেই। আরও কী বলতে চায় লোকটা, দেখা যাক। আগার্স এতক্ষণ

জানালার দিকে চেয়ে ছিল। এবার সে আমার দিকে দৃষ্টি ফেরাল। ভারী অদ্ভুত লাগছিল এই অন্ধকার আর সবুজ আলোর খেলা। এও যেন একটা ভেলকি । লোকটা এই আছে, এই নেই।

আগাসের লম্বা আঙুলগুলো নড়েচড়ে উঠল। সেগুলো এখন তার নিজের দিকে ইঙ্গিত করছে।

'আমাকে দেখো প্রোফেসর। আমি আগার্স। আমি বিশ্বের সেরা জাদুকর। দুই আমেরিকার প্রতিটি শহরের প্রতিটি জাদুপ্রিয় লোক আমাকে চেনে। ছেলে, বুড়ো, মেয়ে, পুরুষ সবাই চেনে। আগামী মাসে আমি পৃথিবী ভ্রমণে বেরোচ্ছি। রোম, মাড্রিড, প্যারিস, লন্ডন, অ্যাথেন্‌স, স্টকহোল্‌ম, টোকিও, হংকং...। আমার ক্ষমতা এবার স্বীকৃত হবে সারা বিশ্বে। কিন্তু আমার চমকপ্রদ ম্যাজিক আরও সহস্র গুণে বেশি চমকপ্রদ হবে— কীসে জান ? ইফ আই গেট দ্যাট ক্রো— দ্যাট ইন্ডিয়ান ক্রো ! ওই পাখি আমার চাই প্রোফেসর- ওই পাখি আমার চাই... আমার চাই... আমার চাই...

আগার্স তার ফিসফিসে কথার সঙ্গে সঙ্গে তার হাতটা আমার চোখের সামনে নাড়ছে, আঙুলগুলোকে সাপের ফণার মতো দোলাচ্ছে, নখগুলো সবুজ আলোয় চকচক করছে। আমি মনে মনে হাসলাম। আমার জায়গায় অন্য যে কোনও লোক হলে আর্গাসের কার্যসিদ্ধি হত। অর্থাৎ সে লোক হিপনোটাইজড হত, সেই সুযোগে খাঁচার পাখিও আগাসের হস্তগত

হত। আমাকে হিপনোটাইজ করা যে সহজ নয় সেটা এবার আমার কথা থেকেই বোধ হয় জাদুকর বুঝতে পারল।

'মিষ্টার আগার্স, আপনি বৃথা বাক্য ব্যয় করছেন। আর আমাকে সম্মোহিত করার চেষ্টাও বৃথা। আপনার অনুরোধ রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কর্ভাস শুধু আমার ছাত্রই নয়, সে আমার সন্তানের মতো, সে আমার বন্ধু, আমার অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার—'

'প্রোফেসর! আর্গাসের কণ্ঠস্বর আগের চেয়ে অনেক তীব্র। কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার গলা নামিয়ে বলে চলল, 'প্রোফেসর, তুমি কি জান যে আমি ক্রোড়পতি ? শহরের পূর্ব প্রান্তে আমার একটা পঞ্চাশ কামরাবিশিষ্ট প্রাসাদ রয়েছে, সেটা কি তুমি জান ? আমার বাড়িতে ছাব্বিশজন চাকর, আমার চারটে ক্যাডিলাক গাড়ি— এ সব কি তুমি জান ? খরচের তোয়াক্কা আমি করি না, প্রোফেসর। ওই পাখির জন্য তোমাকে আমি আজই, এক্ষুনি দশ হাজার একুডো দিতে রাজি আছি।'

দশ হাজার এস্কুডো মানে প্রায় পনেরো হাজার টাকা। আর্গাস জানে না যে, সে যেমন খরচের তোয়াক্কা করে না, আমি তেমনই টাকা জিনিসটারই তোয়াক্কা করি না। সে কথাটা তাকে বললাম। আর্গাস এবার একটা শেষ চেষ্টা করল।

"তুমি তো ভারতীয়। তুমি কি অলৌকিক যোগাযোগে বিশ্বাস কর না? ভেবে দেখো—আগার্স—কভার্স! ওই কাকের নামকরণ হয়েছে আমারই জন্য, সেটা কি তুমি বুঝতে পারছ না, প্রোফেসর ?'

আমি আর ধৈর্য রাখতে পারলাম না। চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে বললাম, 'মিস্টার আগার্স—তোমার গাড়ি বাড়ি খ্যাতি অর্থ নিয়ে তুমি থাকো, কভার্স আমার কাছেই থাকবে। ওর শিক্ষা এখনও শেষ হয়নি। ওকে নিয়ে আমার এখনও অনেক আজ বাকি। আমি আজ ক্লান্ত। তুমি পাঁচ মিনিট সময় চেয়েছিলে, আমি বিশ মিনিট দিয়েছি, আর দিতে পারছি না। আমি এখন ঘুমোব। আমার পাখিও ঘুমোবে। সুতরাং গুড নাইট।

আমার কথাগুলো শুনে আর্গাসের মুখে হতাশার ছাপ দেখে একটা সামান্য অনুকম্পার ভাব মনে প্রবেশ করলেও আমি সেটাকে একেবারেই আমল দিলাম না। আগার্স আবার বিলিতি কায়দায় মাথা নুইয়ে স্প্যানিশ ভাষায় 'গুড নাইট' জানিয়ে আমার ঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেল।

দরজা বন্ধ করে খাঁচার কাছে গিয়ে দেখি কভার্স এখনও জেগে আছে। আমি যেতেই সে ঠোঁট ফাঁক করে একটা শব্দ উচ্চারণ করল 'কে' এবং শব্দটাতে যে একটা জিজ্ঞাসা রয়েছে, সেটা তার বলার সুরেই স্পষ্ট ।

বললাম, 'এক পাগলা জাদুকর। টাকার গরমটা বড্ড বেশি। তোমাকে চাইতে এসেছিল, আমি না করে দিয়েছি। সুতরাং তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারো।'

১৬ই নভেম্বর

ভেবেছিলাম কালকের ঘটনা কালকেই লিখে রাখব, কিন্তু বিভীষিকার ঘোর কাটতে সারা রাত লেগে গেল ।

কাল সকালটা যেভাবে শুরু হয়েছিল, তাতে বিপদের কোনও পূর্বাভাস ছিল না। সকালে সম্মেলনের বৈঠক ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে জাপানি পক্ষিবিজ্ঞানী তোমাসাকা মোরিমোতোর ঘোর ক্লান্তিকর ভাষণ। সঙ্গে কভার্সকে নিয়ে গিয়েছিলাম। প্রায় এক ঘণ্টা বক্তৃতার পর হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে মোরিমোতো আমতা আমতা করছিল, এমন সময় কভসি হঠাৎ আমার চেয়ারের হাতলে সশব্দে ঠোঁটতালি আরম্ভ করে দিল। হলের লোক তাতে হো হো করে হেসে ওঠাতে আমি ভারী অপ্রস্তুতে পড়ে গিয়েছিলাম ।

দুপুরে আমাদের হোটেলেই সম্মেলনের কয়েকজন ডেলিগেটের সঙ্গে লাঞ্চ ছিল। সেখানে যাবার আগে আমি আমার একাত্তর নম্বর ঘরে এসে কভার্সকে খাঁচায় রেখে খাবার দিয়ে বললাম, 'তুমি থাকো। আমি খেয়ে আসছি।' বাধ্য কর্ভাস কোনও আপত্তি করল না ।

লাঞ্চ শেষ করে যখন ওপরে এসেছি, তখন আড়াইটে। দরজায় চাবি লাগাতেই বুঝলাম, সেটার প্রয়োজন হবে না, কারণ দরজা খোলা। মুহূর্তের মধ্যে একটা চরম বিপদের আশঙ্কা আমার রক্ত জল করে দিল। ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকে দেখি— যা ভেবেছিলাম, তাই। খাঁচা সমেত কভসি উধাও ।

আবার ঝড়ের মতো ঘরের বাইরে এলাম। উত্তরদিকে দুটো ঘর পরেই বাঁ দিকে রুমবয়দের ঘর। ঊর্ধ্বশ্বাসে সে ঘরে গিয়ে দেখি, দুটো রুমবয়ই পাশাপাশি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চোখের চাহনি দেখেই বুঝতে পারলাম, তাদের দুজনকেই হিপনোটাইজ করা হয়েছে।

চলে গেলাম একশো সাত নম্বর ঘরে গ্রেনফেলের কাছে। তাকে সমস্ত ব্যাপারটা বলে দুজন সটান গিয়ে হাজির হলাম একতলার রিসেপশনে। রিসেপশন ক্লার্ক বলল, 'আমাদের কাছ থেকে কেউ আপনার ঘরের চাবি চাইতে আসেনি। ডুপ্লিকেট চাবি রুমবয়দের কাছে থাকে, তারা যদি দিয়ে থাকে।

রুমবয়দের অবিশ্যি দেওয়ার দরকার হয়নি। আগার্স তাদের জাদুবলে অকেজো করে দিয়ে নিজেই চাবি নিয়ে তার কাজ হাসিল করেছে।

শেষটায় হোটেলের দ্বাররক্ষকের কাছে গিয়ে আসল খবর পাওয়া গেল। সে বলল, আধ ঘণ্টা আগে একটা সিল্ভার ক্যাডিলাক গাড়িতে আর্গাস এসেছিলেন। তার দশ মিনিট পরে হাতে একটা সেলোফেনের ব্যাগ নিয়ে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান।

রুপোলি রঙের ক্যাডিলাক । কিন্তু এখান থেকে কোথায় গেছে আগার্স ? তার বাড়িতে কি ? না অন্য কোথাও ?

অবশেষে কোভারুবিয়াসের শরণাপন্ন হতে হল। ভদ্রলোক বললেন, 'আর্গাসের বাড়ি কোথায় সেটা এক্ষুনি জেনে দিতে পারি, কিন্তু তাতে কী লাভ হবে ? সে কি আর বাড়িতে গেছে ? সে তোমার কভার্সকে নিয়ে নিশ্চয়ই অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়েছে। তবে সে যদি শহরের বাইরে বেরোতে যায়, তা হলে একটাই রাস্তা আছে। তোমাদের আমি ভাল গাড়ি, ভাল ড্রাইভার আর সঙ্গে পুলিশ দিতে পারি। সময় কিন্তু খুব কম। আধ ঘণ্টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ো। হাইওয়ে ধরে চলে যাবে। যদি কপালে থাকে তো তার সন্ধান পাবে। '

সোয়া তিনটের মধ্যে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। রওনা হবার আগে হোটেল থেকে ফোন করে জেনে নিয়েছিলাম যে, আগার্স (আসল নাম দোমিনগো বার্তেলেমে সারমিয়েতো) তার বাড়িতে ফেরেনি। আমাদের সঙ্গে দুজন সশস্ত্র পুলিশ, আমরা পুলিশেরই গাড়িতেই চলেছি। দু'জন পুলিশের একজন ছোকরা বয়স, নাম কারেরাস – দেখলাম আগার্স সম্বন্ধে বেশ খবরটবর রাখে। বলল, সানতিয়াগো এবং আশেপাশে আর্গাসের নাকি একাধিক আস্তানা আছে। এককালে জিপসিদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছে। উনিশ বছর বয়স থেকে ম্যাজিক দেখাতে আরম্ভ করেছে। পাখি নিয়ে ম্যাজিক শুরু করেছে বছরচারেক আগে, আর

সেই থেকেই ওর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'ও কি সত্যিই ক্রোড়পতি ?'

কারেরাস বলল, 'তাই তো মনে হয়। তবে লোকটা ভয়ানক কঞ্জুস, আর কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই ওর বন্ধু বলতে এখন আর বিশেষ কেউ নেই।'

শহর থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে পড়ে একটা মুশকিল হল। হাইওয়ে দু' ভাগে ভাগ হয়ে একটা চলে গেছে উত্তরে লস্ আনডিজের দিকে, আর একটা চলে গেছে পশ্চিমে ভালপারাইজো বন্দর পর্যন্ত। দুটো হাইওয়ের মুখের কাছে একটা পেট্রোলের দোকান। দোকানের লোকটাকে জিজ্ঞেস করাতেই সে বলল, 'ক্যাডিলাক ? সিনিয়র আগাসের ক্যাডিলাক ? সে তো গেছে ভালপারাইজোর রাস্তায়। '

আমাদের কালো মারসেডিস তিরবেগে রওনা দিল ভালপারাইজোর উদ্দেশে। কভার্সের প্রাণহানি হবে না সেটা জানি, কারণ তার প্রতি আগাসের লোভটা খাঁটি। কিন্তু কাল রাত্রে কভার্সের হাবভাব দেখেই বুঝেছিলাম যে, সে জাদুকর লোকটিকে মোটেই পছন্দ করছে না । সুতরাং আর্গাসের খপ্পরে পড়ে তার যে মনের অবস্থা কী হবে, সেটা ভাবতেই খারাপ লাগছে ।

পথে আরও দুটো পেট্রোল স্টেশন পড়ল, এবং দুটোরই মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিশ্চিন্ত হলাম যে আগাসের সিলভার ক্যাডিলাক এই রাস্তা দিয়েই গেছে ।

আমি আশাবাদী লোক। নানান সময় নানান সংকট থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছি। আজ পর্যন্ত আমার কোনও অভিযানই ব্যর্থ হয়নি। কিন্তু আমার পাশে বসে গ্রেনফেল ঘন ঘন মাথা নাড়ছে আর বলছে, 'ভুলে যেও না, শঙ্কু – তুমি একজন অত্যন্ত ধূর্ত লোকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছ। তোমার কভার্সকে সে যখন একবার হাতে পেয়েছে, তখন সে পাখি তুমি সহজে ফিরে পাবে না এটা জেনে রেখো। '

কারেরাস বলল, 'সিনিয়র আগাসের হাতে কিন্তু অস্ত্র থাকার সম্ভাবনা। এককালে তার অনেক ম্যাজিকে তাকে আসল রিভলভার ব্যবহার করতে দেখেছি।

হাইওয়ে ক্রমে ঢালু নামছে। সানতিয়াগোর ষোলোশো ফুট থেকে এখন আমরা হাজারে নেমে এসেছি। পিছনে দূরে পর্বতশ্রেণী ক্রমে ঝাপসা হয়ে মিলিয়ে আসছে। চল্লিশ মাইল পথ এসেছি, আরও চল্লিশ মাইল গেলে ভালপারাইজো। গ্রেনফেলের ব্যাজার মুখ আমার আশার প্রাচীরে বার বার আঘাত করে তাকে টলিয়ে দিচ্ছে। হাইওয়েতে কিছু না পেলে শহরে গিয়ে পড়তে হবে। তখন আগার্স-এর অনুসন্ধান আরও সহস্র গুণ বেশি কঠিন হয়ে পড়বে ।

রাস্তা সামনে খানিকটা চড়াই উঠে গেছে। পিছনে কী আছে দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। চড়াই পেরোল। সামনে রাস্তা ঢালু নেমে গেছে বহু দূর । রাস্তার পাশে এখানে ওখানে দু-একটা গাছ। বহু দূরে একটা গ্রাম। মাঠে মোষের দল । জনমানবের কোনও চিহ্ন নেই। কিন্তু সামনে ওটা কী ? এখনও বেশ দূর। সিকি মাইল তো হবেই ।

এখন চারশো গজের বেশি নয়। একটা গাড়ি। রোদে ঝলমল করছে। রাস্তার এক পাশে বেঁকে দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনে একটা গাছের গুঁড়ি।

এবার কাছে এসে পড়েছে গাড়িটা । ক্যাডিলাক গাড়ি। সিলভার ক্যাডিলাক ।

আমাদের মারসেডিস তার পাশে এসে দাঁড়াল। গাড়িটা কেন থেমে আছে, তার কারণটা এবার বুঝলাম। রাস্তার এক পাশে ছটকে গিয়ে সেটা একটা গাছের গুঁড়িতে মেরেছে ধাক্কা । গাড়ির সামনের অংশ গেছে থেঁতলে ।

কারেরাস বলল, 'সিনিয়র আর্গাসের গাড়ি। এ ছাড়া আরেকটা সিলভার ক্যাডিলাক আছে সানতিয়াগোতে। ব্যাঙ্কার সিনিয়র গাদামেসের গাড়ি। কিন্তু এটার নম্বর আমার চেনা। ' গাড়ি তো রয়েছে, কিন্তু আগাস কোথায় ?

আর আমার কভার্সই বা কোথায় ?

ড্রাইভারের পাশের সিটে ওটা কী ?

জানালা দিয়ে মুখ ঢুকিয়ে দেখলাম, সেটা কভার্সের খাঁচা। দরজার চাবি আমারই তৈরি, আর সেটা রয়েছে আমারই পকেটে। আজ দুপুরে দরজায় চাবি দিইনি, শুধু ছিটকিনিটাই লাগানো। কভার্স খাঁচা থেকে নিজেই বেরিয়েছে সন্দেহ নেই; কিন্তু তার পরে ? হঠাৎ একটা চিৎকার কানে এল। দূর থেকে। মানুষের গলা।

কারেরাস ও অন্য পুলিশটি বন্দুক উচিয়ে তৈরি। আমাদের ড্রাইভার দেখলাম ভিতু লোক। সে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে মেরিমাতার নাম জপ করতে শুরু করেছে। গ্রেনফেল ফিসফিস করে বলল, 'ম্যাজিশিয়ান জাতটা আমাকে বড্ড আনকাম্‌ফারটেবল করে তোলে । আমি বললাম, 'তুমি বরং আমাদের গাড়ির ভিতরে গিয়ে বোসো।'

চিৎকারটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। রাস্তার বাঁ দিক থেকে। কিছু দূরে কতকগুলো ঝোপড়া। দু-একটা বড় বড় গাছও রয়েছে। সেই দিক থেকেই আসছে চিৎকারটা। কাল রাত্রে ফিসফিসে গলা শুনেছি, তাই চিনতে দেরি হল । এ গলা আর্গাসের। অকথ্য অশ্রাব্য স্প্যানিশে সে গাল দিয়ে চলেছে। কার উদ্দেশে ? ডেভিল বা শয়তানের স্প্যানিশ প্রতিশব্দটা বারকয়েক কানে এল, আর তার সঙ্গে কর্ভাসের নামটা।

'কোথায় গেল সে শয়তান পাখি ? কর্ভাস। কভার্স। মূর্খ পাখি। শয়তান পাখি নরকবাস আছে তোর কপালে। নরকবাস !'—

আগাসের কথা আচমকা থেমে গেল— কারণ সে আমাদের দেখতে পেয়েছে। আমরাও দেখতে পাচ্ছি তাকে। তার দু' হাতে দুটো রিভলভার। একশো হাত দূরে একটা ঝোপড়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।

কারেরাস হুঙ্কার দিয়ে উঠল, 'সিনিয়র আগার্স, তোমার অস্ত্র নামাও! নইলে

একটা কর্ণপটহবিদারক শব্দে আমাদের মারসেডিসের দরজায় একটা রিভলভারের গুলি এসে লাগল। তারপর আরও তিনটে গুলির শব্দ। এ দিকে ও দিকে আমাদের মাথার উপর দিয়ে ছটকে বেরিয়ে গেল সেগুলি। কারেরাস দৃপ্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল, 'সিনিয়র আগার্স, আমাদের কাছে বন্দুক রয়েছে। আমরা পুলিশ। আপনি যদি রিভলভার না ফেলে দেন, তবে আমরা আপনাকে জখম করতে বাধ্য হব।'

'জথম ?' আগার্স শুকনো গলায় আর্তনাদ করে উঠল। 'তোমরা পুলিশ ? আমি যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না ।'

আগার্স এখন পঁচিশ হাতের মধ্যে। এইবার বুঝলাম তার দশাটা। তার চশমাটি খোওয়া যাওয়াতে সে প্রায় অন্ধের সামিল হয়ে পড়ে যত্রতত্র গুলি চালিয়েছে।

আগার্স হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে হোঁচট খেতে খেতে এগিয়ে এল। কারেরাস ও অন্য পুলিশটি তার দিকে এগিয়ে গেল। আমি জানি, এ সংকটে আর্গাসের কোনও ভেলকিই কাজ করবে না। তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কারেরাস এগিয়ে গিয়ে মাটি থেকে রিভলভার দুটো তুলে নিল। আগার্স তখন বলছে, সে পাখি উধাও হয়ে গেল । দ্যাট ইন্ডিয়ান ক্রো ! শয়তান পাখি...কিন্তু কী অসামান্য তার বুদ্ধি

গ্রেনফেল কিছুক্ষণ থেকে ফিসফিস করে কী যেন বলতে চেষ্টা করছিল, এবারে তার কথাটা বুঝতে পারলাম ।

"শঙ্কু দ্যাট বার্ড ইজ হিয়ার।'

কী রকম ? কোথায় কভার্স ? আমি তো দেখছি না তাকে।

গ্রেনফেল রাস্তার উলটোদিকে নেড়া অ্যাকেসিয়া গাছটার মাথার দিকে আঙুল দেখাল । উপরে চেয়ে দেখলাম— সত্যিই তো—আমার বন্ধু, আমার শিষ্য, আমার প্রিয় কভার্স গাছটার সবচেয়ে উঁচু ডালে বসে নিশ্চিতভাবে আমাদের দিকে ঘাড় নিচু করে দেখছে।

তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতেই সে অক্লেশে গোঁত খাওয়া ঘুড়ির মতো গাছের মাথা থেকে নেমে এসে বসল আমাদের মারসেডিসের ছাদের উপর। তারপর অতি সন্তর্পণে— যেন জিনিসটার মূল্য সে ভালভাবেই জানে— তার ঠোঁট থেকে তার সামনেই নামিয়ে রাখল আগাসের মাইনাস বিশ পাওয়ারের সোনার চশমাটা ।

38
Articles
শঙ্কু সমগ্র
0.0
একটি প্রফেসর এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মহাজাগতিক ঘটনার সম্মিলিত রূপ
1

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

30 October 2023
1
0
0

প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা আমি পাই তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে । একদিন দুপুরের দিকে আপিসে বসে পুজো সংখ্যার জন্য একটা লেখার প্রুফ দেখছি, এমন সময় তারকবাবু এসে একটা লাল খাতা আমার সামনে ফেলে দিয়ে

2

প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক

30 October 2023
1
0
0

পোর্ট সেইডের ইম্পিরিয়াল হোটেলের ৫ নং ঘরে বসে আমার ডায়রি লিখছি ! এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এখানে বোধ হয় অনেক রাত অবধি লোকজন জেগে থাকে, রাস্তায় চলাফেরা করে, হইহল্লা করে। আমার পূর্বদিকের খোলা জানালাটা দ

3

প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড়

30 October 2023
1
0
0

(বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিখোঁজ । তাঁর একটি ডায়রি কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে আমাদের হাতে আসে। 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' নাম দিয়ে আমরা সন্দেশে ছাপিয়েছি। ইতিমধ্যে আম

4

প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও

30 October 2023
1
0
0

৭ই জুন বেশ কিছুদিন থেকেই আমার মন মেজাজ ভাল যাচ্ছিল না। আজ সকালে একটা আশ্চর্য ঘটনার ফলে আবার বেশ উৎফুল্ল বোধ করছি। আগে মেজাজ খারাপ হবার কারণটা বলি। প্রোফেসর গজানন তরফদার বলে এক বৈজ্ঞানিক কিছুদিন আগে

5

প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল

30 October 2023
2
0
0

আজ আমার জীবনে একটা স্মরণীয় দিন! সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়ান্স আজ আমাকে ডক্টর উপাধি দান করে আমার গত পাঁচ বছরের পরিশ্রম সার্থক করল। এক ফলের বীজের সঙ্গে আর এক ফলের বীজ মিশিয়ে এমন আশ্চর্য সুন্দর, সুগন্ধ

6

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক-রহস্য

31 October 2023
1
0
0

৭ই এপ্রিলঅবিনাশবাবু আজ সকালে এসেছিলেন। আমাকে বৈঠকখানায় খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে বললেন, 'ব্যাপার কী ? শরীর খারাপ নাকি ? সকালবেলা এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।'আমি বল

7

প্রোফেসর শঙ্কু ও চী-চিং:

31 October 2023
1
0
0

১৮ই অক্টোবরআজ সকালে সবে ঘুম থেকে উঠে মুখটুখ ধুয়ে ল্যাবরেটরিতে যাব, এমন সময় আমার চাকর প্রহ্লাদ এসে বলল, 'বৈঠকখানায় একটি বাবু দেখা করতে এয়েছেন। আমি বললাম, 'নাম জিজ্ঞেস করেছিস ?"প্রহ্লাদ বলল, 'আজ্ঞে

8

প্রোফেসর শঙ্কু ও খোকা

31 October 2023
1
0
0

৭ই সেপ্টেম্বরআজ এক মজার ব্যাপার হল। আমি কাল সকালে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করছি, এমন সময় চাকর প্রহ্লাদ এসে খবর দিল যে একটি লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কে লোক জিজ্ঞেস করতে প্রহ্লাদ মাথা চুলকে বলল 'আজ

9

প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত

31 October 2023
1
0
0

১০ই এপ্রিলভূতপ্রেত প্ল্যানচেট টেলিপ্যাথি ক্লেয়ারভয়েন্স—এ সবই যে একদিন না একদিন বিজ্ঞানের আওতায় এসে পড়বে, এ বিশ্বাস আমার অনেকদিন থেকেই আছে। বহুকাল ধরে বহু বিশ্বস্ত লোকের ব্যক্তিগত ভৌতিক অভিজ্ঞতার ক

10

প্রোফেসর শঙ্কু ও রোবু

2 November 2023
1
0
0

১৬ই এপ্রিল আজ জার্মানি থেকে আমার চিঠির উত্তরে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর পমারের চিঠি পেয়েছি। পমার লিখছেন— প্রিয় প্রোফেসর শঙ্কু, তোমার তৈরি রোবো (Robot) বা যান্ত্রিক মানুষ সম্বন্ধে তুমি যা লিখেছ,

11

প্রোফেসর শঙ্কু ও রক্তমৎস্য রহস্য

2 November 2023
1
0
0

১৩ই জানুয়ারি গত ক'দিনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি, তাই আর ডায়রি লিখিনি। আজ একটা স্মরণীয় দিন, কারণ আজ আমার লিঙ্গুয়াগ্রাফ যন্ত্রটা তৈরি করা শেষ হয়েছে। এ যন্ত্রে যে কোনও ভাষার কথা রেকর্ড হয়ে গিয়ে তিন

12

প্রোফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা

2 November 2023
1
0
0

৭ই আগস্ট আজ আমার পুরনো বন্ধু হনলুলুর প্রোফেসর ডাম্বার্টনের একটা চিঠি পেয়েছি। তিনি লিখছেন— প্রিয় শ্যাঙ্কস, খামের উপর ডাকটিকিট দেখেই বুঝতে পারবে যে বোলিভিয়া থেকে লিখছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যে

13

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোরিলা

2 November 2023
1
0
0

১২ই অক্টোবর আজ সকালে উশ্রীর ধার থেকে বেড়িয়ে ফিরছি, এমন সময় পথে আমার প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর সঙ্গে দেখা। ভদ্রলোকের হাতে বাজারের থলি। বললেন, 'আপনাকে সবাই একঘরে করবে, জানেন তো। আপনি যে একটি আস্ত শকুনির

14

প্রোফেসর শঙ্কু ও বাগ্দাদের বাক্স

2 November 2023
1
0
0

১৯শে নভেম্বর গোল্ডস্টাইন এইমাত্র পোস্টআপিসে গেল কী একটা জরুরি চিঠি ডাকে দিতে। এই ফাঁকে ডায়রিটা লিখে রাখি। ও থাকলেই এত বকবক করে যে তখন ওর কথা শোনা ছাড়া আর কোনও কাজ করা যায় না। অবিশ্যি প্রোফেসর পেত্

15

স্বপ্নদ্বীপ

2 November 2023
1
0
0

২২শে মার্চ অনেকে বলেন যে, স্বপ্নে নাকি আমরা সাদা আর কালো ছাড়া অন্য কোনও রং দেখি না। আমার বিশ্বাস আসল ব্যাপারটা এই যে, বেশিরভাগ সময় স্বপ্নের ঘটনাটাই কেবল আমাদের মনে থাকে; রং দেখেছি কি না দেখেছি, সেট

16

আশ্চর্য প্রাণী

3 November 2023
1
0
0

১০ই মার্চ গবেষণা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমার জীবনে এর আগে এ রকম কখনও হয়নি। একমাত্র সান্ত্বনা যে এটা আমার একার গবেষণা নয়, এটার সঙ্গে আরও একজন জড়িত আছেন । হামবোল্টও বেশ মুষড়ে পড়েছে। তবে এত সহজে নিরুদ্যম

17

মরুরহস্য

3 November 2023
2
0
0

১০ই জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম মাসেই একটা দুঃসংবাদ। ডিমেট্রিয়াস উধাও! প্রোফেসর হেক্টর ডিমেট্রিয়াস, বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ক্রীট দ্বীপের রাজধানী ইরাক্লিয়ন শহরের অধিবাসী ছিলেন ডিম

18

কভার্স

3 November 2023
1
0
0

১৫ই আগস্ট পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা পোষা ময়না ছিল, সেটাকে আমি একশোর উপর বাংলা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও

19

একশৃঙ্গ অভিযান

4 November 2023
3
0
0

১লা জুলাই আশ্চর্য খবর। তিব্বত পর্যটক চার্লস উইলার্ডের একটা ডায়রি পাওয়া গেছে। মাত্র এক বছর আগে এই ইংরাজ পর্যটক তিব্বত থেকে ফেরার পথে সেখানকার কোনও অঞ্চলে যাম্‌পা শ্রেণীর এক দস্যুদলের হাতে পড়ে। দস্য

20

ডক্টর শেরিং-এর স্মরণশক্তি

4 November 2023
1
0
0

২রা জানুয়ারি আজ সকালটা বড় সুন্দর। চারিদিকে ঝলমলে রোদ, নীল আকাশে সাদা সাদা হৃষ্টপুষ্ট মেঘ, দেখে মনে হয় যেন ভুল করে শরৎ এসে পড়েছে। সদ্য পাড়া মুরগির ডিম হাতে নিলে যেমন মনটা একটা নির্মল অবাক আনন্দে

21

হিপনোজেন

5 November 2023
1
0
0

৭ই মে আমার এই ছেষট্টি বছরের জীবনে পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকে অনেকবার অনেক রকম নেমন্তন্ন পেয়েছি; কিন্তু এবারেরটা একেবারে অভিনব। নরওয়ের এক নাম-না-জানা গণ্ডগ্রাম থেকে এক এক্সপ্রেস টেলিগ্রাম; টেলিগ্র

22

শঙ্কুর শনির দশা

5 November 2023
2
0
0

৭ই জুন আমাকে দেশ বিদেশে অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞাসা করেছে আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি। কি না। প্রতিবারই আমি প্রশ্নটার একই উত্তর দিয়েছি—আমি এখনও এমন কোনও জ্যোতিষীর সাক্ষাৎ পাইনি যাঁর কথায় বা কাজে আমার জ্য

23

শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ

6 November 2023
2
0
0

২৪শে জুনইংলন্ডের সল্সবেরি প্লেনে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে তৈরি বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের ধারে বসে আমার ডায়রি লিখছি। আজ মিড-সামার ডে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি । যে সময় স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়, তখন এ দেশে প্রস্তর

24

মানরো দ্বীপের রহস্য

6 November 2023
1
0
0

মানরো দ্বীপ, ১২ই মার্চএই দ্বীপে পৌঁছানোর আগে গত তিন সপ্তাহের ঘটনা সবই আমার ডায়রিতে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা আছে। হাতে যখন সময় পেয়েছি তখন সেগুলোকেই একটু গুছিয়ে লিখে রাখছি। আমি যে আবার এক অভিযানের দলে ভিড

25

কম্পু

8 November 2023
0
0
0

১২ই মার্চ, ওসাকা আজ সারা পৃথিবী থেকে আসা তিনশোর উপর বৈজ্ঞানিক ও শ'খানেক সাংবাদিকের সামনে কম্পুর ডিমনস্ট্রেশন হয়ে গেল। ওসাকার নামুরা টেকনলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের হলঘরের একপ্রান্তে মঞ্চের উপর একটা তিন ফু

26

মহাকাশের দূত

8 November 2023
0
0
0

২২শে অক্টোবরপ্রিয় শঙ্কু,ব্রেন্টউড, ১৫ই অক্টোবরমনে হচ্ছে আমার বারো বছরের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল পেতে চলেছি। খবরটা এখনও প্রচার করার সময় আসেনি, শুধু তোমাকেই জানাচ্ছি।কাল রাত একটা সাঁইত্রিশে এপসাইলন ই

27

নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো

9 November 2023
0
0
0

১৩ই জুনআজ সকালের ঘটনাটা আমার কাজের রুটিন একেবারে তছনছ করে দিল। কাজটা অবিশ্যি আর কিছুই না : আমার যাবতীয় আবিষ্কার বা ইনভেশনগুলো সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ লিখছিলাম সুইডেনের বিখ্যাত 'কসমস' পত্রিকার জন্য। এ ক

28

শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান

9 November 2023
0
0
0

প্রিয় শঙ্কু,আমার দলের একটি লোকের কালাজ্বর হয়েছে তাই তাকে নাইরোবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার হাতেই চিঠি যাচ্ছে, সে ডাকে ফেলে দেবার ব্যবস্থা করবে। এই চিঠি কেন লিখছি সেটা পড়েই বুঝতে পারবে। খবরটা তোমাকে না দি

29

প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ.এফ.ও.

11 November 2023
0
0
0

১২ই সেপ্টেম্বরইউ. এফ.ও. অর্থাৎ আনআইডেনটিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট অর্থাৎ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু। এই ইউ.এফ.ও. নিয়ে যে কী মাতামাতি চলছে গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে। সারা বিশ্বে বহু সমিতি গড়ে উঠেছে, যাদের কাজই হল এই ই

30

আশ্চর্জন্তু

11 November 2023
0
0
0

আগস্ট ৭আজ এক আশ্চর্য দিন।সকালে প্রহ্লাদ যখন বাজার থেকে ফিরল, তখন দেখি ওর হাতে একটার জায়গায় দুটো থলি। জিজ্ঞেস করাতে বলল, 'দাঁড়ান বাবু, আগে বাজারের থলিটা রেখে আসি। আপনার জন্য একটা জিনিস আছে, দেখে চমক

31

প্রোফেসর রন্ডির টাইম মেশিন

11 November 2023
0
0
0

নভেম্বর ৭পৃথিবীর তিনটি বিভিন্ন অংশে তিনজন বৈজ্ঞানিক একই সময় একই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, এরকম সচরাচর ঘটে না। কিন্তু সম্প্রতি এটাই ঘটেছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন অবিশ্যি আমি, আর যন্ত্রটা হল টাইম মে

32

শঙ্কু ও আদিম মানুষ

12 November 2023
0
0
0

এপ্রিল ৭ নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইনের আশ্চর্য কীর্তি সম্বন্ধে কাগজে আগেই বেরিয়েছে। ইনি দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজনের জঙ্গলে ভ্রমণকালে এক উপজাতির সন্ধান পান, যারা নাকি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে মানুষ যে অবস্থায় ছিল

33

নেফ্রুদেৎ-এর সমাধি

12 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বর ৭ এইমাত্র আমার জার্মান বন্ধু ক্রোলের কাছ থেকে একটা টেলিগ্রাম পেলাম। কোল লিখছে— সব কাজ ফেলে কায়রোতে চলে এসো। তুতানখামেনের সমাধির মতো আরেকটি সমাধি আবিষ্কৃত হতে চলেছে। সাকারার দু মাইল দক্ষিণে

34

শঙ্কুর পরলোকচর্চা

12 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ১২ আজ বড় আনন্দের দিন। দেড় বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ আমাদের যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ হল। 'আমাদের' বলছি এই কারণে যে, যদিও যন্ত্রের পরিকল্পনাটা আমার, এটা তৈরি করা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল ন

35

শঙ্কু ও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন

12 November 2023
0
0
0

৭ মে কাল জার্মানি থেকে আমার ইংরেজ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের একটা চিঠি পেয়েছি। তাতে একটা আশ্চর্য খবর রয়েছে। চিঠিটা এখানে তুলে দিচ্ছি। প্রিয় শঙ্কু, জার্মানিতে আউগ্‌গ্সবুর্গে এসেছি ক্রোলের সঙ্গে ছুটি

36

ডাঃ দানিয়েলির আবিষ্কার

12 November 2023
0
0
0

১৫ এপ্রিল, রোম কাল এক আশ্চর্য ঘটনা। এখানে আমি এসেছি একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে। কাল স্থানীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ দানিয়েলির বক্তৃতা ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। অবিশ্যি আমি যে অন্যদের মতো

37

ডন ক্রিস্টোবাল্ডির ভবিষ্যদ্বাণী

13 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ৬ আজ আমার বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কাছ থেকে একটা আশ্চর্য চিঠি পেয়েছি। সেটা হল এই— প্রিয় শঙ্কু, তোমাকে একটা অদ্ভুত খবর দেবার জন্য এই চিঠির অবতারণা। আমাদের দেশের কাগজে খবরটা বেরিয়ে

38

স্বর্ণপর্ণী

13 November 2023
0
0
0

১৬ জুনআজ আমার জন্মদিন । হাতে বিশেষ কাজ নেই, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আমি বৈঠকখানায় আমার প্রিয় আরামকেদারাটায় বসে কড়িকাঠের দিকে চেয়ে আকাশপাতাল ভাবছি। বৃদ্ধ নিউটন আমার পায়ের পাশে কুণ্ডলী

---