shabd-logo

চার

31 October 2023

1 Viewed 1

নিখুঁত সাহেবী-পরিচ্ছদে ভূষিত একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক চেয়ারে বসিয়াছিলেন এবং একটি কুড়ি-একুশ বছরের মেয়ে তাঁহারই পাশে দাঁড়াইয়া দেয়ালে টাঙানো মস্ত একখানি জগদ্ধাত্রী দেবীর ছবি অত্যন্ত মনোযোগের সহিত নিরীক্ষণ করিতেছিল। তাহারও পরনে যাহা ছিল তাহা নিছক মেমসাহেবের মত না হউক, বাঙালীর মেয়ে বলিয়াও হঠাৎ মনে হয় না। বিশেষতঃ গায়ের রঙটা যেন সাদার ধার ঘেঁষিয়া আছে— এমনি ফরসা। দেহের গঠন ও মুখের শ্রী অনিন্দ্যসুন্দর। দেবরের কাছে সতী এইমাত্র যে গর্ব করিয়া বলিতেছিল তার রূপটা ত শাশুড়ীর চোখে পড়িবে, – চোখ বুজিয়া ত এটা তিনি অস্বীকার করিতে পারিবেন না, - বস্তুতঃ, এ কথা সত্য। ভগিনীর হইয়া এ রূপ লইয়া অহঙ্কার করা চলে।

ঘরে ঢুকিয়া সতী গড় হইয়া প্রণাম করিল, বলিল, সেজকাকা, মেয়ের বাড়িতে এতকাল পরে পায়ের ধূলো পড়ল?

ভদ্রলোক উঠিয়া দাড়াইয়া সতীর মাথায় হাত দিলেন, সহাস্যে কহিলেন, হ্যাঁ রে বুড়ি, পড়ল! কবে, কোন্ কালে কাকাকে নেমন্তন্ন করে খবর পাঠিয়েছিলি যে অস্বীকার করেছিলাম? কখনো বলেচিস আসতে? নিজে যখন যেচে এলাম তখন মস্ত ভণিতা করে বলা হচ্ছে পায়ের ধূলো পড়ল? দ্বিজদাসের প্রতি চোখ পড়িতে জিজ্ঞাসা করিলেন, এটি কে?

সতী পিছনে চাহিয়া দেখিয়া কহিল, উটি আমার দেওর—দ্বিজু।

দ্বিজদাস দূর হইতে নমস্কার করিল। বন্দনা দিদিকে প্রণাম করিয়া হাসিয়া বলিল, ওঃইনিই সেই? যাঁর জ্বালায় জমিদারি বুঝি যায় যায়। আমাকে চিঠিতে লিখেছিলে। বংশ-ছাড়া, গোত্র-ছাড়া, ভয়ঙ্কর স্বদেশী?

অমন কথা তোকে আবার কবে লিখলুম?

এই ত সেদিন। এরই মধ্যে ভুলে গেলে?

সতী ঘাড় নাড়িয়া কহিল, না, ও-সব লিখিনি, তোর মনে নেই।

দ্বিজদাস এতক্ষণ পর্যন্ত কি একপ্রকার সঙ্কোচের বশে যেন আড়ষ্ট হইয়াছিল। অনাত্মীয়, অপরিচিত যুবতী স্ত্রীলোকের সম্মুখে কি করা উচিত, কি বলিলে ভাল দেখায়, কিছুই স্থির করিতে পারিতেছিল না। ইতিপূর্বে কখনো সুযোগও ঘটে নাই, প্রয়োজনও হয় নাই, কিন্তু এই নবাগত তরুণীর আশ্চর্য স্বচ্ছন্দতায় সে যেন একটা নূতন শিক্ষা লাভ করিল। তাহার অহেতুক ও অশোভন জড়তা একমুহূর্তে কাটিয়া গিয়া সে এক অনাবিল আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করিল। মেয়েদেরও যে শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রয়োজন এ কথা সে বুদ্ধি দিয়া চিরদিনই স্বীকার করিত এবং মা ও দাদার সহিত তর্ক বাধিলে সে এই যুক্তিই দিত যে, স্ত্রীলোক হইলেও তাহারা মানুষ, সুতরাং শিক্ষা ও স্বাধীনতায় তাহাদের দাবী আছে। মূর্খ করিয়া তাহাদের ঘরে বন্ধ করিয়া রাখা অন্যায়। কিন্তু আজ এই অতিথি মেয়েটির আকস্মিক পরিচয়ে সে চক্ষের পলকে প্রথম উপলব্ধি করিল যে, ঐ সব মামুলী দাবী-দাওয়ার যুক্তির চেয়েও ঢের বড় কথা এই যে, পুরুষের চরম ও পরম প্রয়োজনেই রমণীর শিক্ষা ও স্বাধীনতার প্রয়োজন। তাহাকে বঞ্চিত করিয়া পুরুষে কতখানি যে নিজেকে বঞ্চিত করিতেছে এ সত্য এতবড় স্পষ্ট করিয়া ইতিপূর্বে সে কখনো দেখে নাই । মেয়েটিকে উদ্দেশ করিয়া হাসিমুখে কহিল, আপনার কথাই ঠিক, বৌদি ভুলে গেছেন। কিন্তু এ নিয়ে বাদানুবাদ করে লাভ নেই । এই বলিয়াই সে ছদ্মগাম্ভীর্যে মুখ গম্ভীর করিয়া বলিল, বৌদি, তোমার জোরেই আমার সমস্ত জোর, আর তোমারই চিঠিতেই এই কথা? বেশ, আমাকে তোমরা ত্যাগ কর, আর আমিও আমার সমস্ত অধিকার পরিত্যাগ করচি। তোমাদের জমিদারি অক্ষয় হয়ে থাক, তুমি একটিবার মুখ ফুটে আদেশ কর, আজই উকিল ডেকে সমস্ত লেখাপড়া করে দিচ্ছি। ইনিই সাক্ষী থাকুন, দেখ আমি পারি কি না ? সাহেব মুখ তুলিয়া চাহিয়া বলিলেন, তোর দেওর ভয়ঙ্কর স্বদেশী নাকি সতী?

সতী বলিল, হাঁ, ভয়ঙ্কর। তুই বললেই লেখাপড়া করে জমিদারির অংশ ছেড়ে দিতে চায়? সতী ঘাড় নাড়িয়া জবাব দিল, ও স্বচ্ছন্দে পারে। ওর অসাধ্য কাজ নেই।

বন্দনা কৌতূহল দমন করিতে পারিল না, জিজ্ঞাসা করিল, সত্যি বলচেন? চিরকালের জন্য বাস্তবিক সমস্ত ত্যাগ করতে পারেন?

দ্বিজদাস তাহার মুখের প্রতি ক্ষণকাল দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, সত্যিই পারি। ওতে আমার একতিল লোভ নেই। দেশের পনের-আনা লোক একবেলা পেট ভরে খেতে পায় না—উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও না- আর বিনা পরিশ্রমে আমার বরাদ্দ পোলাও কালিয়া ও পাপের অন্ন আমার মুখে রোচে না, গলায় আটকাতে চায়। ও বিষয় আমার গেলেই ভাল। তখন দেশের পাঁচজনের মত খেটে খেয়ে বাঁচি। জোটে মঙ্গল, না জোটে তাদের সঙ্গে উপোস করে মরতে পারলে বরঞ্চ একদিন হয়ত স্বর্গে যেতেও পারব, কিন্তু এ পথে কোন কালে সে আশা নেই ।

বন্দনা নিষ্পলকচক্ষে চাহিয়া শুনিতেছিল, কথা শেষ হইলে আর কোন কথা কহিল না, শুধু মুখ দিয়া তাহার একটা নিশ্বাস পড়িল । সতীর হঠাৎ যেন চমক ভাঙ্গিল। ঠাকুরপোর এ-ছাড়া যেন আর কথা নেই। বলে বলে এমনি মুখস্থ হয়ে গেছে । কহিল, পুরনো বক্তৃতা পরে দিও ঠাকুরপো, ঢের সময় পাবে। সেজকাকাবাবুর হয়ত এখনও হাতমুখ ধোয়াও সারা হয়নি। বন্দনা, চল ভাই, ওপরে গিয়ে কাপড়-চোপড় ছাড়বি।

সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, জামাই বাবাজীকে দেখচি নে ত?

সতী কহিল, তিনি সকালেই কি একটা জরুরী কাজে বেরিয়েচেন, ফিরতে বোধ করি দেরি হবে। বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, মেজদি, তোমার শাশুড়ীকে ত দেখতে পেলুম না? বাড়িতেই আছেন?

সতী কহিল, এখনো আছেন, কিন্তু শীঘ্রই কৈলাস মানস সরোবরে তীর্থযাত্রা করবেন। সমস্ত সকালটা পূজো-আহ্নিক নিয়েই থাকেন আর একটু বেলা হলেই তাঁকে দেখতে পাবে ।

বন্দনা প্রশ্ন করিল, তিনি খুব বেশী ধর্মকর্ম নিয়েই থাকেন, না?

সতী বলিল, হাঁ।

বিধবা হবার পরে শুনেচি ঘর-সংসার কিছুই দেখেন না, সত্যি? সত্যি বৈ কি। সব আমাকেই দেখতে শুনতে হয়।

বন্দনা উৎসুক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, উনি তোমার সৎশাশুড়ী না মেজদি? সতী হাসিয়া কহিল, চোখে ত দেখিনি বোন, লোকে হয়ত মিথ্যে কথা বলে ।

দ্বিজদাস উত্তর দিয়া বলিল, মিথ্যেই বলে। কারণ, সৎশাশুড়ীর মানে দাদার সত্মা ত? মিছে কথা। সৎমা বটে, দাদার নয়, আমার। সে যাক, স্নানাদি সেরে নিয়ে সে আলোচনা পরে হবে, এখন ওপরে চলুন। আচ্ছা, আমি দেখি গে—বৌদি, আর দেরি করো না, এঁদের নিয়ে এস। এই বলিয়া সে আয়োজনের তত্ত্বাবধান করিতে চলিয়া যাইতেছিল, এমনি সময় মাকে দেখিয়া থমকিয়া দাঁড়াইল। খুব সম্ভব দয়াময়ী খবর পাইয়া আহ্নিকের মাঝখানেই পূজার ঘর ছাড়িয়া চলিয়া আসিয়াছিলেন। বয়স বেশী নয় বলিয়া তিনি বৈধব্যের পরেও সচরাচর অনাত্মীয় পুরুষদের সম্মুখে বাহির হইতেন না, অন্তরালে থাকিয়াই কথা কহিতেন, কিন্তু আজ একেবারে ঘরের মাঝখানে আসিয়া দাঁড়াইলেন। মাথার কাপড় কপালের উপর পর্যন্ত টানিয়া দেওয়া, – কিন্তু মুখের সবখানিই দেখা যাইতেছে।

আমার সেজকাকাবাবু, মা। আর এইটি আমার বোন বন্দনা। এই বলিয়া সতী কাছে আসিয়া হঠাৎ শাশুড়ীকে প্রণাম করিল। এমন অকারণে প্রণাম করা প্রথাও নয়, কেহ করেও না। দয়াময়ী মনে মনে হয়তো একটু আশ্চর্য হইলেন, কিন্তু সে উঠিয়া দাঁড়াইতে সস্নেহে সযত্নে তাহার চিবুক স্পর্শ করিয়া অঙ্গুলির প্রান্তভাগ চুম্বন করিয়া আশীর্বাদ করিলেন, কিন্তু বন্দনার প্রতি চোখ পড়িতেই তাঁহার চোখের দৃষ্টি রুক্ষ হইয়া উঠিল। দিদির দেখাদেখি সেও কাছে আসিয়া প্রণাম করিল, কিন্তু তিনি স্পর্শ করিলেন না, বরঞ্চ বোধ হয় স্পর্শ বাঁচাইতেই এক পা পিছাইয়া গিয়া শুধু অস্ফুটে বলিলেন, বেঁচে থাক।

কহিলেন, বেইমশাই, নমস্কার। ছেলেমেয়ের ভাগ্য যে হঠাৎ আপনার পায়ের ধূলো পড়ল । ভদ্রলোক প্রতি-নমস্কার করিয়া কহিলেন, নানা কারণে সময় পাইনে বেষ্ঠাকরুন, কিন্তু না বলে কয়ে এমন হঠাৎ এসে পড়ার দোষ মার্জনা করবেন। এবারে যখন আসব যথাসময়ে একটা খবর দিয়েই আসব।

দয়াময়ী এ-সব কথার উত্তর দিলেন না, শুধু বলিলেন, পুজো-আহ্নিক এখনো সারা হয়নি বেইমশাই, আবার দেখা হবে। বৌমা, এদের ওপরে নিয়ে যাও, খাওয়া-দাওয়ার যেন কষ্ট না হয়। বিপিন এলে আমার কাছে একবার পাঠিয়ে দিয়ো। এই বলিয়া তিনি আর কোন দিকে না চাহিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। বাহ্যতঃ, প্রচলিত সৌজন্যের বিশেষ কিছু যে ত্রুটি হইল তাহা নয়, কিন্তু ভিতরের দিক দিয়া সকলেরই মনে হইল জ্যোৎস্নার মাঝামাঝি একখণ্ড কালো মেঘ নির্মল আকাশের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত ভাসিয়া গেল ।


26
Articles
বিপ্রদাস
0.0
"বিপ্রদাস" প্রখ্যাত লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি কেন্দ্রীয় চরিত্র বিপ্রদাসকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, একটি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পরিবারের একজন সংবেদনশীল এবং অন্তর্মুখী যুবক। তিনি রক্ষণশীল মূল্যবোধ এবং সামাজিক নিয়ম দ্বারা চিহ্নিত একটি সমাজে তার স্থান খুঁজে পেতে সংগ্রাম করেন। বিপ্রদাস প্রেম, কর্তব্য এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্খার নেভিগেট করার সময় অসংখ্য চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন। উপন্যাসটি সামাজিক প্রত্যাশা, পারিবারিক চাপ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। শরৎচন্দ্র দক্ষতার সাথে বিপ্রদাসের মানসিক অশান্তিকে চিত্রিত করেছেন, এটিকে আত্ম-আবিষ্কার এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার একটি মর্মস্পর্শী গল্পে পরিণত করেছেন। "বিপ্রদাস" একটি আকর্ষক আখ্যান যা মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্খা এবং সামাজিক সামঞ্জস্যের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে।
1

এক

31 October 2023
0
0
0

বলরামপুর গ্রামের রথতলায় চাষাভুষাদের একটা বৈঠক হইয়া গেল। নিকটবর্তী রেলওয়ে লাইনের কুলি গ্যাং রবিবারের ছুটির ফাঁকে যোগদান করিয়া সভার মর্যাদা বৃদ্ধি করিল এবং কলিকাতা হইতে জনকয়েক নামকরা বক্তা আসিয়া আ

2

দুই

31 October 2023
0
0
0

বিপ্রদান নিজের বসিবার ঘরে ছোটভাইকে ডাকাইয়া আনিয়া বলিলেন, কালকের আয়োজনটা মন্দ হয়নি। অনেকটা চমক লাগাবার মত। War cry-গুলোও বেশ বাছা বাছা, ঝাঁজ আছে তা মানতেই হবে। দ্বিজদাস চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

3

তিন

31 October 2023
0
0
0

এ বাড়িতে দ্বিজদাস সবচেয়ে বেশী খাতির করিত বৌদিদিকে। তাহার সর্ববিধ বাজে খরচের টাকাও আসিত তাঁহারই বাক্স হইতে। সতী শুধু সম্পর্ক হিসাবেই তাহার বড় ছিল না, বয়সের হিসাবেও মাস কয়েকের বড় ছিল। তাই অধিকাংশ

4

চার

31 October 2023
0
0
0

নিখুঁত সাহেবী-পরিচ্ছদে ভূষিত একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক চেয়ারে বসিয়াছিলেন এবং একটি কুড়ি-একুশ বছরের মেয়ে তাঁহারই পাশে দাঁড়াইয়া দেয়ালে টাঙানো মস্ত একখানি জগদ্ধাত্রী দেবীর ছবি অত্যন্ত মনোযোগের সহিত নিরীক

5

পাঁচ

31 October 2023
0
0
0

বন্দনা স্নানাদি সারিয়া বসিবার ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, পিতা ইতিপূর্বেই প্রস্তুত হইয়া লইয়াছেন। একখানা জমকালোগোছের আরামকেদারায় বসিয়া চোখে চশমা দিয়া সংবাদপত্রে মনোনিবেশ করিয়াছেন। পাশের ছোট্ট টেবিল

6

ছয়

31 October 2023
0
0
0

বন্দনা নীচে আসিয়া দেখিল পিতা হৃষ্টচিত্তে আহারে বসিয়াছেন। সেই বসিবার ঘরের মধ্যেই একখানি ছোট টেবিলের উপর রূপার থালায় করিয়া খাবার দেওয়া হইয়াছে। একজন দীর্ঘাকৃতি অতিশয় সুশ্রী ব্যক্তি অদূরে দাঁড়াইয়

7

সাত

31 October 2023
0
0
0

স্টেশনে পৌঁছিয়া খবর পাওয়া গেল, কোথায় কি একটা আকস্মিক দুর্ঘটনার জন্য ট্রেনের আজ বহু বিলম্ব, – বোধ করি বা একঘণ্টারও বেশী লেট হইবে। - পরিচিত স্টেশনমাস্টারটিও হঠাৎ পীড়িত হওয়ায় একজন মাদ্রাজী রিলিভিং

8

আট

1 November 2023
1
0
0

গণ্ডগোল শুনিয়া পাশের কামরার সহযাত্রী সাহেবরা প্লাটফর্মে নামিয়া দাঁড়াইল, এবং রুক্ষকণ্ঠে সমস্বরে প্রশ্ন করিল, what's up? ভাবটা এই যে, সঙ্গীদের হইয়া তাহারা বিক্রম দেখাইতে প্রস্তুত। বিপ্রদাস অদূরবর্তী

9

নয়

1 November 2023
0
0
0

বন্দনা সকালে উঠিয়া দেখিল এই বাড়িটার সম্বন্ধে সে যাহা ভাবিয়াছিল তাহা নয়। মনে করিয়াছিল পুরুষমানুষের বাসাবাড়ি, হয়ত ঘরের কোণে কোণে জঞ্জাল, সিঁড়ির গায়ে থুথু, পানের পিচের দাগ, ভাঙ্গাচোরা আসবাবপত্র,

10

দশ

1 November 2023
0
0
0

বিপ্রদাস আসনে বসিয়া পুনরায় সেই প্রশ্নই করিল, সত্যিই আবার স্নান করে এলে নাকি? অসুখ করবে যে তা করুক। কিন্তু হাতে না-খাবার ছলছুতা আবিষ্কার করতে আপনাকে দেব না এই আমার পণ। স্পষ্ট করে বলতে হবে, তোমার ছোঁয

11

এগার

1 November 2023
0
0
0

রাত্রের গাড়িতে আসিতেছে মেজদি এবং সঙ্গে আসিতেছে দ্বিজদাস। বন্দনার আনন্দ ধরে না। সেদিন দিদির শ্বশুরবাড়িতে নিজের আচরণের জন্য সে মনে মনে বড় লজ্জিত ছিল, অথচ প্রতিকারের উপায় পাইতেছিল না। আজ অত্যন্ত অনিচ

12

বার

1 November 2023
0
0
0

কৈলাস তীর্থযাত্রায় পথের দুর্গমতার বিবরণ শুনিয়া মামীরা পিছাইয়াছেন, দয়াময়ীর নিজেরও বিশেষ উৎসাহ দেখা যায় না, তথাপি তাঁহার কলিকাতায় কাটিল পাঁচ-ছয়দিন দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট ও গঙ্গাস্নান করিয়া। কাজের

13

তের

1 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা-বন্দনা সারিয়া বিপ্রদাস সেইমাত্র নিজের লাইব্রেরিঘরে আসিয়া বসিয়াছে; সকালের ডাকে যে-সকল দলিলপত্র বাড়ি হইতে আসিয়াছে সেগুলা দেখা প্রয়োজন, এমনি সময়ে মা আসিয়া প্রবেশ করিলেন, হাঁ রে বিপিন, তুই

14

চৌদ্দ

1 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা উত্তীর্ণপ্রায়, বন্দনা আসিয়া দ্বিজদাসের ঘরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া ডাকিল, একবার আসতে পারি দ্বিজবাবু? ভিতর হইতে সাড়া আসিল, পার। একবার নয়, শত সহস্র অসংখ্য বার পার। বন্দনা দরজার পাল্লা দুটা শেষপ

15

পনর

1 November 2023
0
0
0

নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া বন্দনার অত্যন্ত গ্লানি বোধ হইতে লাগিল। সে কি নেশা করিয়াছে যে, নির্লজ্জ উপযাচিকার ন্যায় আপন হৃদয় উদ্ঘাটিত করিয়া সমস্ত আত্মমর্যাদার জলাঞ্জলি দিয়া আসিল। অথচ দ্বিজদাস পুরুষ হ

16

ষোল

2 November 2023
1
0
0

দয়াময়ীর আচরণে বন্দনার প্রতি যে প্রচ্ছন্ন লাঞ্ছনা ও অব্যক্ত গঞ্জনা ছিল সতীকে তাহা গভীরভাবে বিধিয়াছিল। কিন্তু শাশুড়ীকে কিছু বলা সহজ নয়, তাই সে একখানি চিঠি লিখিয়া বোনের হাতে দিবার জন্য স্বামীকে ঘরে

17

সতর

2 November 2023
0
0
0

হঠাৎ বড়মাসীর সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে বন্দনার যখন দেখা হইয়া গেল তখন বোম্বাই যাওয়া বন্ধ করিয়া তাহাকে বাড়ি ফিরাইয়া আনা মাসীর কষ্টসাধ্য হইল না। তিনি মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে স্বামীর কর্মস্থল উত্তর-পশ্চিমাঞ

18

আঠার

2 November 2023
0
0
0

বন্দনা বলিল, খাবার হয়ে গেছে নিয়ে আসি?বন্দনা বলিল, খাবার হয়ে গেছে নিয়ে আসি? বিপ্রদাস হাসিয়া বলিল, তোমার কেবলি চেষ্টা হচ্চে আমার জাত মারার। কিন্তু সন্ধ্যে আহ্নিক এখনো করিনি, আগে তার উদ্যোগ করিয়া

19

উনিশ

2 November 2023
0
0
0

পরদিন বিকালের দিকে বন্দনা আসিয়া বলিল, মুখুয্যেমশাই, আবার চললুম মাসীমার বাড়িতে। এবার আর ঘণ্টা-কয়েকের জন্যে নয়, এবার যতদিন না মাসী আমাকে বোম্বায়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন ততদিন। অর্থাৎ? অর্থাৎ

20

কুড়ি

2 November 2023
0
0
0

দ্বিজদাস জিজ্ঞাসা করিল, বন্দনা হঠাৎ চলে গেলেন কেন? আমার এসে পড়াটাই কি কারণ নাকি? বিপ্রদাস বলিল, না ওঁর বাবা টেলিগ্রাম করেছেন মাসীর বাড়িতে গিয়ে থাকতে যতদিন না বোহায়ে ফিরে যাওয়া ঘটে। কিন্তু হঠাৎ ম

21

একুশ

2 November 2023
0
0
0

অনেকদিনের পরে বিপ্রদাস নীচের আফিসঘরে আসিয়া বসিয়াছে। সম্মুখে টেবিলের পরে কাগজপত্রের স্তূপ কতদিনের কত কাজ বাকী। দেহ ক্লান্ত, কিন্তু দ্বিজুর ভরসায় ফেলিয়া রাখাও আর চলে না। একটা খেরো-বাঁধানো মোটা থাতা

22

বাইশ

2 November 2023
0
0
0

পরদিন সকালেই সকলে বলরামপুরের উদ্দেশে যাত্রা করিল। বাটীর কাছাকাছি আসিতে দেখা গেল দ্বিজদাস প্রায় রাজসূয় যজ্ঞের ব্যাপার করিয়াছে। সম্মুখের মাঠে সারি সারি চালাঘর — কতক তৈরি হইয়াছে— কতক হইতেছে— ইতিমধ্যে

23

তেইশ

3 November 2023
0
0
0

সংসারে বিপদ যে কোথায় থাকে এবং কোন পথে কখন যে আত্মপ্রকাশ করে ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। কাজের মাঝখানে কল্যাণী আসিয়া কাঁদিয়া বলিল, মা. উনি বলছেন ওঁর সঙ্গে আমাকে এখুনি বাড়ি চলে যেতে। ট্রেনের সময় নেই—

24

চব্বিশ

3 November 2023
0
0
0

মেজদিদিকে জোর করিয়া একটা চেয়ারে বসাইয়া বন্দনা তাহার পায়ে আলতা পরাইয়া দিতেছিল। এই মঙ্গলাচারটুকু অন্নদা তাহাকে শিখাইয়া দিয়া নিজে আত্মগোপন করিয়াছে। তাহার চোখ রাঙ্গা, অবিরত অশ্রুবর্ষণে চোখের পাতা

25

পঁচিশ

3 November 2023
0
0
0

বন্দনার নির্বিঘ্নে বোম্বাই পৌঁছান-সংবাদের উত্তরে দিনকয়েক পরে দ্বিজদাসের নিকট হইতে জবাব আসিয়াছিল যে, সে নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় যথাসময়ে চিঠি লিখিতে পারে নাই। বন্দনা নিজের চোখে যেমন দেখিয়া গেছে সমস্

26

ছাব্বিশ

3 November 2023
0
0
0

ম্যানেজার বিরাজ দত্ত মোটর লইয়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন। বন্দনাকে সসম্মানে ট্রেন হইতে নামাইয়া গাড়িতে আনিয়া বসাইলেন । বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, মা আজও বাড়ি এসে পৌঁছল নি দত্তমশাই? না দিদি। মৈত্রেয়ী?

---