shabd-logo

বাইশ

2 November 2023

8 Viewed 8

পরদিন সকালেই সকলে বলরামপুরের উদ্দেশে যাত্রা করিল। বাটীর কাছাকাছি আসিতে দেখা গেল দ্বিজদাস প্রায় রাজসূয় যজ্ঞের ব্যাপার করিয়াছে। সম্মুখের মাঠে সারি সারি চালাঘর — কতক তৈরি হইয়াছে— কতক হইতেছে— ইতিমধ্যেই আহূত ও অনাহূত পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, এখনো কত লোক যে আসিবে তাহার নির্দেশ পাওয়া কঠিন।

বিপ্রদাসকে দেখিয়া মা চমকিয়া গেলেন, এ কি দেহ হয়েছে বাবা, একেবারে যে আধখানা হয়ে গেছিস। বিপ্রদাস পায়ের ধূলা লইয়া বলিল, আর ভয় নেই, মা, এবার সেরে উঠতে দেরি হবে না। কিন্তু কলকাতায় ফিরে যেতেও আর দেবো না, তা যত কাজই তোর থাক। এখন থেকে নিজের চোখে চোখে রাখবো। বিপ্রদাস হাসিমুখে চুপ করিয়া রহিল।

বন্দনা তাঁহাকে প্রণাম করিলে দয়াময়ী আশীর্বাদ করিয়া বলিলেন, এসো মা, এসো বেঁচে থাকো। কিন্তু কণ্ঠস্বরে তাঁহার উৎসাহ ছিল না, বুঝা গেল এ শুধু সাধারণ শিষ্টাচার, তার বেশি নয়। তাহাকে আসার নিমন্ত্রণ করা হয় নাই, সে স্বেচ্ছায় আসিয়াছে, মা এইটুকুই জানিলেন। তিনি মৈত্রেয়ীর কথা পাড়িলেন। মেয়েটির গুণের সীমা নাই, দয়াময়ীর দুঃখ এই যে এক-মুখে তাহার ফর্দ রচিয়া দাখিল করা সম্ভপর নয়। বলিলেন, বাপ শেখায়নি এমন বিষয় নেই, মেয়েটা জানে না এমন কাজ নেই। বৌমার শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না, তাই ও একাই সমস্ত ভার যেন মাথায় তুলে নিয়েছে। ভাগ্যে ওকে আনা হয়েছিল। বিপিন, নইলে কি যে হোতো আমার ভাবরে ভয় করে।

বিপ্রদাস বিস্ময় প্রকাশ করিয়া কহিল, বলো কি মা দয়াময়ী কহিলেন, সত্যি বাবা। মেয়েটার কাকর্ম দেখে মনে হয় কর্তা যে বোঝা আমার ঘাড়ে ফেলে রেখে চলে গেছেন তার আর ভাবনা নেই। বৌমা ওকে সঙ্গী পেলে সকল ভার স্বচ্ছন্দে বইতে পারবেন, কোথাও ত্রুটি ঘটবে না। এ বছর ত আর হলো না, কিন্তু বেঁচে যদি থাকি আসবে বারে নিশ্চিন্ত মনে কৈলাস- দর্শনে আমি যাবোই যাবো।

বিপ্রদাস নীরব হইয়া রহিল। দয়াময়ীর কথা হয়ত মিথ্যা নয়, মৈত্রেয়ী হয়ত এমনি প্রশংসার যোগ্য, কিন্তু যশোগানেরও মাত্রা আছে, স্থান-কাল আছে। তাঁহার লক্ষ্য যাই হোক, উপলক্ষ্যটাও কিন্তু চাপা রহিল না। একটা অকরুণ অসহিষ্ণু ক্ষুদ্রতা তাঁহার সুপরিচিত মর্যাদায় গিয়া যেন রূঢ় আঘাত করিল। হঠাৎ ছেলের মুখের পানে চাহিয়া দয়াময়ী নিজের এই ভুলটাই বুঝিতে পারিলেন, কিন্তু তখনি কি করিয়া যে প্রতিকার করিবেন তাহাও খুঁজিয়া পাইলেন না। দ্বিজদাস। কাজের ভীড়ে অন্যত্র আবদ্ধ ছিল, খবর পাইয়া আসিয়া পৌছিল।

বিপ্রদাস কহিল, কি ভীষণ কাণ্ড করেছিস দ্বিজু, সামলাবি কি করে?

দ্বিজদাস বলিল, ভার ত আপনি নিজে নেননি দাদা, দিয়েছেন আমার ওপর আপনার পরম ধার্মিক ছেলে, সবাই মিলে ওকে মিথ্যে খোঁটা দিলে আমার সয় না।

বন্দনা কহিল, খোঁটা মিথ্যে হলে গায়ে লাগে না মা, তাতে রাগ করা উচিত নয়।

মা বলিলেন, রাগ ত ও করে না, ও শুনে হাসে।

বন্দনা বলিল, তারও কারণ আছে মাকুয্যেমশাই জানেন পেটে খেলে পিঠে সইতে হয়, রাগারাগি করা মূর্কর্তা। ঠিক না মুহুয্যেমশাই? বিপ্রদাস হাসিয়া কহিল, ঠিক বৈ কি। মূর্খের কথায় রাগারাগি করা করা নিষেধ, শাস্ত্রে তার অন্য ব্যবস্থা আছে।

বন্দনা কছিল, মেজদি কিন্তু আমার চেয়ে মুখ্য মুখুয্যেমশাই এবাধ হয় আপনার শাস্ত্রে তারর এই ব্যবস্থার জোরেই সবাই আপনাকে এত ভক্তি করে। এই বলিয়া সে হাসিয়া মুখ ফিরাইল। দ্বিজদাস হাসি চাপিতে অন্যত্র চাহিয়া রহিল এবং দয়াময়ী নিজেও হাসিয়া ফেলিলেন, বলিলেন, বন্দনা মেয়েটা বড় দুষ্টু, ওর সঙ্গে কারো কথায় পারবার জো নেই।

একটু থামিয়া একটু গম্ভীর হইয়া কহিলেন, কিন্তু দেখো মা, কর্তাদের আমলে প্রজাদের ওপর এ-রকম যে একেবারেই হত না তা বলিনে, কিন্তু তোমাকে ত বলেছি, বিপিন আমার পরম ধার্মিক ছেলে, যা অন্যায়, যা ওর যথার্থ প্রাপ্য নয়, সে ও কিছুতে নিতে পারে না কিন্তু ভয় আমার দ্বিজুকে, ও পারে। বিপ্রদাস প্রতিবাদ করিয়া বলিল, এ তোমার অন্যায় কথা মা। দ্বিজু করবে প্রজাপীড়ন। প্রজার পক্ষ নিয়ে ও আমাদের বিরুদ্ধেই একবার তাদের খাজনা দিতে নিষেদ করেছিল সে-কথা কি তোমার মনে নেই?

মা বললেন, মনে আছে বলেই তা বলছি। যে ন্যায্য দেনা দিতে বারণ করে, অন্যায় আদায় সে-ই পারে বিপিন, অপরে পারে না। দয়া-মায়া ওর আছে,–একটু বেশী পরিমাণেই আছে মানি, কিন্তু তবু দেখতে পাচি একদিন, ওর হাতেই প্রজারা দুঃখ পাবে ঢের বেশি। না মা, পাবে না তুমি দেখো।

দয়াময়ী কহিলেন, ভরসা কেবল তুই আছিস বলে। নইলে এমন কেউ চাই যে ওকে ঠিক পথে চালিয়ে যেতে পারবে। নইলে ও নিজেও একদিন ডুববে, পরকেও ডোবাবে। দ্বিজদাস এতকষণ চুপ করিয়া ছিল, এবার কথা কহিল, বলিল, তোমার শেশের কথাটা ঠিক হল না মা। নিজে ডুববো সে হয়ত একদিন সত্যি হবে কিন্তু

পরকে ডোবাবো না এ তুমি নিশ্চয় জেনো। মা বলিলেন, এর এটাও সুখের নয় দ্বিজু, ওটাও আনন্দের নয়। আসলে তোকে চালাবার একজন লোক থাকা দরকার। কিন্তু সে যোগাড় ত তুমি প্রায় করে এনেছো মা।

মা বলিলেন, যদি সত্যিই করে এনে থাকি সে তোর ভাগ্যি বলে জানিস।

তর্ক-বিতর্কের মূল তাৎপর্যটা এবার সকলের কাছেই সুস্পষ্ট হইয়া পড়িল ।

মা বলিতে লাগিলেন, এত বড় যে কাণ্ড করে তুললি কারো কথা শুনলি নে, বললি দাদার হুকুম; কিন্তু দাদা কি বলেছিল অশ্বমেধ করতে? এখন সামলায় কে

বল তো? ভাগ্যে মৈত্রেয়ী এসেছিল সেই তো শুধু ভরসা। দ্বিজদাস বলিল, কাজটা আগে হয়ে যাক মা, তার পরে যাকে খুশি সনন্দ দিও, আমি আপত্তি করবো না, কিন্তু এখনি তার তাড়াতাড়ি কি!

দ্বিজদাস কহিল, না, তৃতীয় পক্ষর সাধ্য কি! আজও মহাপরাক্রান্ত প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষ যে তেমনিই বিদ্যমান। বলিতে দুইজনেই হাসিয়া ফেলিল।

বিপ্রদাস ও মা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিলে কিন্তু অর্থ বুঝিলেন না । অন্নদা আসিয়া বলিল, বন্দনাদিদি, বড়বাবুর ওষুধগুলো যে কাল গুছিয়ে ভুললে সেই কাগজের বাক্সটা ত দেখতে পাচ্ছিনে — হারালো না ত?

না, হারায় নি অনুদি, কলকাতার বাড়িতেই রয়ে গেছে।

দয়ময়ী ভয় পাইয়া বলিলোন, উপায় কি হবে বন্দনা, এত বড় ভুল হয়ে গেল।

বন্দনা কহিল, ভুল হয়নি মা, আসবার সময়ে সেগুলো ইচ্ছে করেই ফেলে এলুম।

ইচ্ছে করে ফেলে এলে? তার মানে?

ভাবলুম, ওষুধ অনেক খেয়েছেন, আর না। তখন মা কাছে ছিলেন না তাই ওষুধের দরকার হয়েছিল, এখন বিনা ওষুধেই সেরে উঠবেন একটুও দেরি হবে না।

কথাগুলি দয়ময়ীর অত্যন্ত বলল লাগিল, তথাপি বলিলেন, কিন্তু ভালো করোনি মা। পাড়াগাঁ জায়গা, ডাক্তার-বদ্যি তেমন মেলে না, দরকার হলে—

অন্নদা বলিল, দরকার আর হবে না মা। হলে উনি নিশ্চয় আনতেন, কখনো ফেলে আসতেন না। বন্দনাদিদি ডাক্তার-বদ্যির চেয়েও বেশী জানে।

দয়াময়ী প্রশংসমান চক্ষে নীরবে চাহিয়া রহিলেন, বন্দনা কহিল, অনুদির বাড়িয়ে বলা স্বভাব মা, নইলে সত্যিই আমি কিছু জানিনে। যা একটু শিখেছি সে শুধু মুখয্যেমশায়ের সেবা করে।

অনুদা বলিল, সে যে কি সেবা মা, সে শুধু আমি জানি। হঠাৎ একদিন কি বিপদেই পড়ে গেলুম। বাড়িতে কেউ নেই, বাসুর অসুখের তার পেয়ে রিজু চলে এসেছে এখানে, দত্তমশাই গেছেন ঢাকায়, বিপিনের হল জ্বর । প্রথম দুটো দিন কোনমতে কাটলো, কিন্তু তার পরের দিন জ্বর গেল ভয়ানক বেড়ে। ডাক্তার ডেকে পাঠালুম, সে ওষুধ দিলে কিন্তু ভয় দেখালে চর্তগুণ। মুখ্যু মেয়েমানুষ, কি যে করি, তোমাদেরও খবর দিতে পারিনে, বিপিন করলে মানা, – আকুল হয়ে ছুটে গেলুম বন্দনার কাছে, ওঁর মাসীর বাড়িতে। কেঁদে বলুলু,ম দিদি, রাগ করে থেকো না, এসো। তোমার মুখুয্যেমশাদিয়ের বড় অসুখ। বন্দনাদিদি যেমন ছিলেন তেমনি এসে আমার গাড়িতে উঠলেন, মাসীকে বলবারও সময় পেলেন না। বাড়ি এসে বিপিনের ভার নিলেন। দিনরাতে একটি ঘণ্টা ৫সে কটা দিন উনি

জিরোতে পাননি। কেবল ওষুধ খাওয়ানোই ত নয়, সকালে পুজোর সাজ থেকে আরম্ভ করে রাত্তিরে মশারি ফেলে শুইয়ে আসা পর্যন্ত যা-কিছু সমস্ত। এখন বন্দনাদিদি যদি ওষুধ দিতে আর না চায় মা, অন্যথা করে কাজ নেই, ওতেই বিপিন সুস্থ হয়ে উঠবে ।

বিপ্রদাস তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া গম্ভীর হইয়া বলিল, সত্যিই সুস্থ হয়ে উঠবো মা, তোমারা ওকে আর বাধা দিও না, ওর সুবুদ্ধি হোক, আমাকে ওষুধ গেলানো বন্ধ করুক। আমি কায়মনে আশীর্বাদ করবো, বন্দনা রাজরানী হোক।

দয়াময়ী নীরবে চাহিয়া রহিলেন। তাঁহার দুই চক্ষু দিয়া যেন স্নেহ ও মমতা উছলিয়া পড়িতে লাগিল । ঝি আসিয়া কহিল, মা, বৌদিদি বলছেন কলকাতা থেকে যে-সব জিনিসপত্র এখন এলো কোন্ ঘরে তুলবেন?

দয়াময়ী জবাব দিবার পূর্বেই বন্দনা বলিল, মা, আমি আপনার স্লেচ্ছ মেয়ে বলে আপনার এতবড় কাজে কি কোন ভারই পাবো না, কেবল চুপ করে বসে থাকবো? এমন কত জিনিস ত আছে যা আশি ছুঁলেও ছোয়া যায় না।

দয়াময়ী তাহার হাত ধরিয়া একেবারে বুকের কাছে টানিয়া আনিলেন, আঁচল হইতে একটা চাবির গোছা খুলিয়া তাহার হাতে দিয়া বলিলেন, চুপ করে তোমাকে বসে থাকতেই বা দেব কেন মা? এই দলুম তোমাকে আমার আপন ভাঁড়ারের চাবি, যা বৌমা ছাড়া আর কাউকে দিতে পারিনে। আজ থেকে এ ভার রইলো তোমার।

কি আছে মা এ ভাঁড়ারে?

এ চাবির গুচ্ছ অত্যন্ত পরিচিত, দ্বিজদাস কটাক্ষে দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, আছে যা ছোঁয়াছুয়ির নাগালের বাইরে, আছে সোনা-রূপো, টাকাকড়ি, চেলি- গরদের জোড়। যা অতি বড় ধার্মিক ব্যক্তিরও মাথায় তুলে নিতে আপত্তি হবে না তুমি ছুঁলেও।

বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, কি করতে হবে মা আমাকে?

দয়াময়ী বলিলেন, অধ্যাপক – বিদায়, অতিথি-অভ্যাগতদের সম্মানরক্ষা, আত্মীয়স্বজনগণের পাথেয়র ব্যবস্থা, আর ঐ সঙ্গে রাখবে এই ছেলেটাকে একটু - কড়া শাসনে। এই বলিয়া তিনি দ্বিজদাসকে দেখাইয়া কহিলেন, আমি হিসেব বুঝিনে বলে ও ঠকিয়ে যে আমাকে কত টাকা নিয়ে অপব্যয় করচে তার ঠিকানা নেই মা। এইটি তোমাকে বন্ধ করতে হবে। দ্বিজদাস বলিল, দাদার সামনে এমন কথা তুমি ব'লো না মা। উনি ভাববেন সত্যিই বা। খরচের খাতায় রীতিমত ব্যয়ের হিসেব লেখা হচ্চে, মিলিয়ে দেখলেই দেখতে পাবে।

দয়াময়ী বলিলেন, মেলাবো কোনটা? বায়ের হিসেব লেখা হচ্ছে মানি, কিন্তু অপব্যয়ের হিসেব কে লিখচে বল ত? আমি সেই কথাই বন্দনাকে জানাচ্ছিলুম।

বন্দনা বলিল, জেনেই বা কি করবো মা? ওঁর টাকা উনি অপব্যয় করলে আমি আটকাবো কি করে?

দয়াময়ী কহিলেন, সে আমি জানিনে। তুমি ভার নিতে চেয়েছিলে, আমি ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হলুম; কিন্তু একটা কথা বলি বন্দনা, তোমাকেও একদিন সংসার করতে হবে, তখন অপব্যয় বাঁচানোর দায় এসে যদি হাতে ঠেকে জানিনে বলেই ত নিস্তার পাবে না !

বন্দনা দ্বিজদাসের প্রতি চাহিয়া কহিল, শুনলেন ত মায়ের হুকুম?

দ্বিজদাস কহিল, শুলুম বৈ কি। কিন্তু দাদা দিয়েছেন আমার ওপর খরচ করার ভার, মা দিলেন তোমাকে খরচ না করার ভার। সুতরাং, খণ্ডযুদ্ধ বাধবেই, তখন দোষ দিলে চলবে না।

বন্দনা মাথা নাড়িয়া স্মিতমুখে বলিল, দোষ দেবার দরকার হবে না দ্বিজুবাবু, ঝগড়া আমাদের হবে না। আপনার টাকা নিয়ে আপনার সঙ্গেই মক ফাইট শুরু করবার ছেলেমানুষি আমার গেছে। বাঙলা দেশে এসে সে শিক্ষা আমার হয়েছে। ঝগড়ার আগে মায়ের দেওয়া ভার মার হাতেই ফিরিয়ে দিয়ে আমি সরে যাবো। দয়াময়ী ঠিক না বুঝিলেও বুঝিলেন, এ অভিমান স্বাভাবিক। ব্যথিতকণ্ঠে কহিলেন, ভার আমি ফিরে নেবো না মা, তোমাকেই এ বইতে হবে। কিন্তু এখানে আর নয, ভেতরে চলো, তোমার কাজ তোমাকে আমি বুঝিয়ে দিই গে। এই বলিয়া হাত ধরিয়া তাহাকে টানিয়া লইয়া গেলেন।

সেদিন বন্দনা এ-বাড়িতে ঘণ্টা কয়েক মাত্র ছিল, কোথায় কি আছে দেখিবার সুযোগ পায় নাই, আজ দেখিল মহলের পরে মহলের যেন শেষ নাই। আশ্রিত আত্মীয়ের সংখ্যা কম নয়, বউ-ঝি নাতি-পুতি লইয়া প্রত্যেকের এক-একটি সংসার। ওদিকটায় আছে কাছারিবাড়ি ও তাহার আনুষঙ্গিক যাবতীয় ব্যবস্থা; কিন্তু এ অংশে আছে ঠাকুরবাড়ি, রান্নাবাড়ি, দয়াময়ীর বিরাট গোশালা এবং উচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত বাগান ও পুষ্করিণী। দ্বিতলের পূর্বের ঘরগুলো দয়াময়ীর, তাহারই একটার সম্মুখে বন্দনাকে আনিয়া তিনি বলিলেন, মা, এই ঘরটি তোমার, এরই সব ভার রইলো তোমার উপর।

ও-ধারের বারান্দায় বাসিয়া সতী ও মৈত্রেয়ী কি কতকগুলা দ্রব্য মনঃসংযোগে পরীক্ষা করিতেছিল, দয়াময়ীর কণ্ঠস্বরে মুখ তুলিয়া চাহিল, এবং বন্দনাকে দেখিতে পাইয়া দুজনেই কাজ ফেলিয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। সে যে সত্যই আসিবে এ প্রত্যাশা কেহ করে নাই। দিদির পায়ের ধূলা লইয়া বন্দনা মৈত্রেয়ীকে নমস্কার করিল । মা বলিলেন, আমার এই স্লেচ্ছ মেয়েটিও কোন একটা কাজের ভার চায় বৌমা, চুপ করে বসে থাকতে ও নারাজ।

তোমাদের দিয়েছি নানা কাজ, ওকে দিলুম আমার এই ভাঁড়ারের চাবি। মৈত্রেয়ী জিজ্ঞাসা করিল, এ ভাঁড়ারে কি আছে মা?

আছে এমন সব জিনিস যা স্লেচ্ছ মেয়েতে ছুঁলেও ছোঁয়া যায় না। এই বলিয়া দয়াময়ী সকৌতুকে হাসিয়া বন্দনাকে দিয়া ঘর খুলাইয়া সকলে ভিতরে আসিয়া দাঁড়াইলেন। মেঝের উপর থরে থরে সাজানো রূপার বাসন, ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতদের মর্যাদা দিতে হইবে। কলিকাতা হইতে ভাঙ্গাইয়া টাকাসিকি প্রভৃতি আনানো হইয়াছে, থরিগুলা স্তূপাকার করিয়া একস্থানে রাখা; গরদ প্রভৃতি বহুমূল্য বস্ত্ৰসকল বস্তাবন্দী হইয়া এখনো পড়িয়া, খুলিয়া দেখার অবসর ঘটে নাই,—এ-সকল ব্যতীত দয়াময়ীর আলমারী সিন্দুকও এই ঘরে। হাত দিয়া দেখাইয়া হাসিয়া বলিলেন, বন্দনা, এর মধ্যেই রয়েছে আমার যথাসর্বস্ব, আর ওর পরেই দ্বিজুর আছে সবচেয়ে লোভ। ওইখানেই পাহারা দিতে হবে মা তোমাকে সবচেয়ে বেশি। আমার মতো তোমাকেও যেন ফাঁকি দিতে ও না পারে।

বন্দনার বিপন্ন-মুখের পানে চাহিয়া সতী ভগিনীর হইয়া বলিল, এতবড় কাজের ভার দেওয়া কি ওকে চলবে মা? অনেক টাকাকড়ির ব্যাপার। তাহার কথাটা শেষ হইবার পূর্বেই দয়াময়ী বলিলেন, অনেক টাকাকড়ির ব্যাপার বলেই ওর হাতে চাবি দিলুম বৌমা। নইলে দ্বিজু আমাকে দেউলে করে দেবে।

কিন্তু ও যে বাইরে থেকে এসেছে মা?

সতীর এ কথাটাও শেষ হইল না, দয়াময়ী হাসিয়া বলিলেন, বাইরে থেকে একদিন তুমিও এসেছিলে, আর তারও অনেক আগে এমনি বাইরে থেকেই আমাকে আসতে হয়েছিল। ওটা আপত্তি নয় বৌমা। কিন্তু আর আমার সময় নেই, আমি চললুম। এই বলিয়া তিনি ঘর হইতে বাহিরে আসিয়া নীচে নামিয়া গেলেন ।

বন্দনা বলিল তোমাদের বাড়িতে এসে এ কি জালে জড়িয়ে পড়লুম মেজদি। আমি যে নিশ্বাস ফেলবার সময় পাব না। তাই ত মনে হচ্ছে, বলিয়া সতী শুধু একটু হাসিল।

26
Articles
বিপ্রদাস
0.0
"বিপ্রদাস" প্রখ্যাত লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি কেন্দ্রীয় চরিত্র বিপ্রদাসকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, একটি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পরিবারের একজন সংবেদনশীল এবং অন্তর্মুখী যুবক। তিনি রক্ষণশীল মূল্যবোধ এবং সামাজিক নিয়ম দ্বারা চিহ্নিত একটি সমাজে তার স্থান খুঁজে পেতে সংগ্রাম করেন। বিপ্রদাস প্রেম, কর্তব্য এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্খার নেভিগেট করার সময় অসংখ্য চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন। উপন্যাসটি সামাজিক প্রত্যাশা, পারিবারিক চাপ এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। শরৎচন্দ্র দক্ষতার সাথে বিপ্রদাসের মানসিক অশান্তিকে চিত্রিত করেছেন, এটিকে আত্ম-আবিষ্কার এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার একটি মর্মস্পর্শী গল্পে পরিণত করেছেন। "বিপ্রদাস" একটি আকর্ষক আখ্যান যা মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং ব্যক্তিগত আকাঙ্খা এবং সামাজিক সামঞ্জস্যের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে।
1

এক

31 October 2023
0
0
0

বলরামপুর গ্রামের রথতলায় চাষাভুষাদের একটা বৈঠক হইয়া গেল। নিকটবর্তী রেলওয়ে লাইনের কুলি গ্যাং রবিবারের ছুটির ফাঁকে যোগদান করিয়া সভার মর্যাদা বৃদ্ধি করিল এবং কলিকাতা হইতে জনকয়েক নামকরা বক্তা আসিয়া আ

2

দুই

31 October 2023
0
0
0

বিপ্রদান নিজের বসিবার ঘরে ছোটভাইকে ডাকাইয়া আনিয়া বলিলেন, কালকের আয়োজনটা মন্দ হয়নি। অনেকটা চমক লাগাবার মত। War cry-গুলোও বেশ বাছা বাছা, ঝাঁজ আছে তা মানতেই হবে। দ্বিজদাস চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

3

তিন

31 October 2023
0
0
0

এ বাড়িতে দ্বিজদাস সবচেয়ে বেশী খাতির করিত বৌদিদিকে। তাহার সর্ববিধ বাজে খরচের টাকাও আসিত তাঁহারই বাক্স হইতে। সতী শুধু সম্পর্ক হিসাবেই তাহার বড় ছিল না, বয়সের হিসাবেও মাস কয়েকের বড় ছিল। তাই অধিকাংশ

4

চার

31 October 2023
0
0
0

নিখুঁত সাহেবী-পরিচ্ছদে ভূষিত একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক চেয়ারে বসিয়াছিলেন এবং একটি কুড়ি-একুশ বছরের মেয়ে তাঁহারই পাশে দাঁড়াইয়া দেয়ালে টাঙানো মস্ত একখানি জগদ্ধাত্রী দেবীর ছবি অত্যন্ত মনোযোগের সহিত নিরীক

5

পাঁচ

31 October 2023
0
0
0

বন্দনা স্নানাদি সারিয়া বসিবার ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, পিতা ইতিপূর্বেই প্রস্তুত হইয়া লইয়াছেন। একখানা জমকালোগোছের আরামকেদারায় বসিয়া চোখে চশমা দিয়া সংবাদপত্রে মনোনিবেশ করিয়াছেন। পাশের ছোট্ট টেবিল

6

ছয়

31 October 2023
0
0
0

বন্দনা নীচে আসিয়া দেখিল পিতা হৃষ্টচিত্তে আহারে বসিয়াছেন। সেই বসিবার ঘরের মধ্যেই একখানি ছোট টেবিলের উপর রূপার থালায় করিয়া খাবার দেওয়া হইয়াছে। একজন দীর্ঘাকৃতি অতিশয় সুশ্রী ব্যক্তি অদূরে দাঁড়াইয়

7

সাত

31 October 2023
0
0
0

স্টেশনে পৌঁছিয়া খবর পাওয়া গেল, কোথায় কি একটা আকস্মিক দুর্ঘটনার জন্য ট্রেনের আজ বহু বিলম্ব, – বোধ করি বা একঘণ্টারও বেশী লেট হইবে। - পরিচিত স্টেশনমাস্টারটিও হঠাৎ পীড়িত হওয়ায় একজন মাদ্রাজী রিলিভিং

8

আট

1 November 2023
1
0
0

গণ্ডগোল শুনিয়া পাশের কামরার সহযাত্রী সাহেবরা প্লাটফর্মে নামিয়া দাঁড়াইল, এবং রুক্ষকণ্ঠে সমস্বরে প্রশ্ন করিল, what's up? ভাবটা এই যে, সঙ্গীদের হইয়া তাহারা বিক্রম দেখাইতে প্রস্তুত। বিপ্রদাস অদূরবর্তী

9

নয়

1 November 2023
0
0
0

বন্দনা সকালে উঠিয়া দেখিল এই বাড়িটার সম্বন্ধে সে যাহা ভাবিয়াছিল তাহা নয়। মনে করিয়াছিল পুরুষমানুষের বাসাবাড়ি, হয়ত ঘরের কোণে কোণে জঞ্জাল, সিঁড়ির গায়ে থুথু, পানের পিচের দাগ, ভাঙ্গাচোরা আসবাবপত্র,

10

দশ

1 November 2023
0
0
0

বিপ্রদাস আসনে বসিয়া পুনরায় সেই প্রশ্নই করিল, সত্যিই আবার স্নান করে এলে নাকি? অসুখ করবে যে তা করুক। কিন্তু হাতে না-খাবার ছলছুতা আবিষ্কার করতে আপনাকে দেব না এই আমার পণ। স্পষ্ট করে বলতে হবে, তোমার ছোঁয

11

এগার

1 November 2023
0
0
0

রাত্রের গাড়িতে আসিতেছে মেজদি এবং সঙ্গে আসিতেছে দ্বিজদাস। বন্দনার আনন্দ ধরে না। সেদিন দিদির শ্বশুরবাড়িতে নিজের আচরণের জন্য সে মনে মনে বড় লজ্জিত ছিল, অথচ প্রতিকারের উপায় পাইতেছিল না। আজ অত্যন্ত অনিচ

12

বার

1 November 2023
0
0
0

কৈলাস তীর্থযাত্রায় পথের দুর্গমতার বিবরণ শুনিয়া মামীরা পিছাইয়াছেন, দয়াময়ীর নিজেরও বিশেষ উৎসাহ দেখা যায় না, তথাপি তাঁহার কলিকাতায় কাটিল পাঁচ-ছয়দিন দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট ও গঙ্গাস্নান করিয়া। কাজের

13

তের

1 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা-বন্দনা সারিয়া বিপ্রদাস সেইমাত্র নিজের লাইব্রেরিঘরে আসিয়া বসিয়াছে; সকালের ডাকে যে-সকল দলিলপত্র বাড়ি হইতে আসিয়াছে সেগুলা দেখা প্রয়োজন, এমনি সময়ে মা আসিয়া প্রবেশ করিলেন, হাঁ রে বিপিন, তুই

14

চৌদ্দ

1 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা উত্তীর্ণপ্রায়, বন্দনা আসিয়া দ্বিজদাসের ঘরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া ডাকিল, একবার আসতে পারি দ্বিজবাবু? ভিতর হইতে সাড়া আসিল, পার। একবার নয়, শত সহস্র অসংখ্য বার পার। বন্দনা দরজার পাল্লা দুটা শেষপ

15

পনর

1 November 2023
0
0
0

নিজের ঘরে ফিরিয়া আসিয়া বন্দনার অত্যন্ত গ্লানি বোধ হইতে লাগিল। সে কি নেশা করিয়াছে যে, নির্লজ্জ উপযাচিকার ন্যায় আপন হৃদয় উদ্ঘাটিত করিয়া সমস্ত আত্মমর্যাদার জলাঞ্জলি দিয়া আসিল। অথচ দ্বিজদাস পুরুষ হ

16

ষোল

2 November 2023
1
0
0

দয়াময়ীর আচরণে বন্দনার প্রতি যে প্রচ্ছন্ন লাঞ্ছনা ও অব্যক্ত গঞ্জনা ছিল সতীকে তাহা গভীরভাবে বিধিয়াছিল। কিন্তু শাশুড়ীকে কিছু বলা সহজ নয়, তাই সে একখানি চিঠি লিখিয়া বোনের হাতে দিবার জন্য স্বামীকে ঘরে

17

সতর

2 November 2023
0
0
0

হঠাৎ বড়মাসীর সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে বন্দনার যখন দেখা হইয়া গেল তখন বোম্বাই যাওয়া বন্ধ করিয়া তাহাকে বাড়ি ফিরাইয়া আনা মাসীর কষ্টসাধ্য হইল না। তিনি মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে স্বামীর কর্মস্থল উত্তর-পশ্চিমাঞ

18

আঠার

2 November 2023
0
0
0

বন্দনা বলিল, খাবার হয়ে গেছে নিয়ে আসি?বন্দনা বলিল, খাবার হয়ে গেছে নিয়ে আসি? বিপ্রদাস হাসিয়া বলিল, তোমার কেবলি চেষ্টা হচ্চে আমার জাত মারার। কিন্তু সন্ধ্যে আহ্নিক এখনো করিনি, আগে তার উদ্যোগ করিয়া

19

উনিশ

2 November 2023
0
0
0

পরদিন বিকালের দিকে বন্দনা আসিয়া বলিল, মুখুয্যেমশাই, আবার চললুম মাসীমার বাড়িতে। এবার আর ঘণ্টা-কয়েকের জন্যে নয়, এবার যতদিন না মাসী আমাকে বোম্বায়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন ততদিন। অর্থাৎ? অর্থাৎ

20

কুড়ি

2 November 2023
0
0
0

দ্বিজদাস জিজ্ঞাসা করিল, বন্দনা হঠাৎ চলে গেলেন কেন? আমার এসে পড়াটাই কি কারণ নাকি? বিপ্রদাস বলিল, না ওঁর বাবা টেলিগ্রাম করেছেন মাসীর বাড়িতে গিয়ে থাকতে যতদিন না বোহায়ে ফিরে যাওয়া ঘটে। কিন্তু হঠাৎ ম

21

একুশ

2 November 2023
0
0
0

অনেকদিনের পরে বিপ্রদাস নীচের আফিসঘরে আসিয়া বসিয়াছে। সম্মুখে টেবিলের পরে কাগজপত্রের স্তূপ কতদিনের কত কাজ বাকী। দেহ ক্লান্ত, কিন্তু দ্বিজুর ভরসায় ফেলিয়া রাখাও আর চলে না। একটা খেরো-বাঁধানো মোটা থাতা

22

বাইশ

2 November 2023
0
0
0

পরদিন সকালেই সকলে বলরামপুরের উদ্দেশে যাত্রা করিল। বাটীর কাছাকাছি আসিতে দেখা গেল দ্বিজদাস প্রায় রাজসূয় যজ্ঞের ব্যাপার করিয়াছে। সম্মুখের মাঠে সারি সারি চালাঘর — কতক তৈরি হইয়াছে— কতক হইতেছে— ইতিমধ্যে

23

তেইশ

3 November 2023
0
0
0

সংসারে বিপদ যে কোথায় থাকে এবং কোন পথে কখন যে আত্মপ্রকাশ করে ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। কাজের মাঝখানে কল্যাণী আসিয়া কাঁদিয়া বলিল, মা. উনি বলছেন ওঁর সঙ্গে আমাকে এখুনি বাড়ি চলে যেতে। ট্রেনের সময় নেই—

24

চব্বিশ

3 November 2023
0
0
0

মেজদিদিকে জোর করিয়া একটা চেয়ারে বসাইয়া বন্দনা তাহার পায়ে আলতা পরাইয়া দিতেছিল। এই মঙ্গলাচারটুকু অন্নদা তাহাকে শিখাইয়া দিয়া নিজে আত্মগোপন করিয়াছে। তাহার চোখ রাঙ্গা, অবিরত অশ্রুবর্ষণে চোখের পাতা

25

পঁচিশ

3 November 2023
0
0
0

বন্দনার নির্বিঘ্নে বোম্বাই পৌঁছান-সংবাদের উত্তরে দিনকয়েক পরে দ্বিজদাসের নিকট হইতে জবাব আসিয়াছিল যে, সে নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় যথাসময়ে চিঠি লিখিতে পারে নাই। বন্দনা নিজের চোখে যেমন দেখিয়া গেছে সমস্

26

ছাব্বিশ

3 November 2023
0
0
0

ম্যানেজার বিরাজ দত্ত মোটর লইয়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন। বন্দনাকে সসম্মানে ট্রেন হইতে নামাইয়া গাড়িতে আনিয়া বসাইলেন । বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, মা আজও বাড়ি এসে পৌঁছল নি দত্তমশাই? না দিদি। মৈত্রেয়ী?

---