এই বইয়ে সংকলিত গল্পগুলি অনেক আগে লেখা। "নৈখতে মেঘ" বইয়ে "রুন্দালি", "দৌলতি" বইয়ে "গোহুমনি" আছে। "টুংকুড়" আমার অনেক গল্পের মত আজও কোন সংকলনে প্রকাশিত হয়নি। নিজের লেখার বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী থাকতে পারি না, তাই অনেক লেখাই পুস্তকাকারে বেরোয় নি।
"রুদালি" ও "গোহুমনি", আমার লেখার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে পালামৌ পর্বে লিখিত। বিহারের দরিদ্রতম জেলা পালামৌয়ের পটভূমিতে আমি পর পর অনেকগুলি ডারতীয় গল্প ও উপন্যাস লিখি। কিছুকাল ধরে আবার সেখানে ফিরে আসার জন্য মনের প্রস্তুতি পর্ব শেষ হয়ে এল। পালামৌয়ের আধারে আমি ভারতবর্ষের ভূমিব্যবস্থা ও শ্রেণী বিভাজিত সমাজের অন্ধকার সামন্ত স্বরূপকেই উদ্ঘাটন করেছি বারবার। শোষক যে শ্রেণী চরিত্রে সমন্তিক, সে কথা জানানো দরকার ছিল। শোষণের জন্যই দেখা দেয় সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা। এ সংগ্রাম সর্বদা রাজনীতিক দলীয় নেতৃত্বের সংগ্রাম নয়। ব্রাত্যসমাজে বাঁচার জন্য সংগ্রামই চলে, পন্থাটা অন্য, এই যা। তিনটি গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তিনটি মেয়ে এবং তারা তাদের সমাজকে সঙ্গে রেখে বাঁচার তাগিদেই লড়ে। জয়ী হয়। বেঁচে থাকে। জীবনের দাবীই তো সর্বাগ্রগণ্য।
আমি এই নগ্ন দারিদ্র, নির্লজ্জ শোষণ দেখেছি। এখনো দেখি। নতুন বঙ্গাব্দ এল। নতুন খ্রীষ্টাব্দও এসে পড়ল বলা যায়। দারিদ্র্যে, ক্ষুধায়, শ্রেণীশোষণে, পুঁজিবাদী দুনিয়ার শোষণে, ভারত আজ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে এক হয়ে যাবে না কি, শঙ্কা হয়।
"গোহুমনি" গল্পটি সম্বন্ধে আমার দুর্বলতা আছে। পালামৌ ভেলায় ভারতের বহু জায়গার মত ভূমিদাস বা বনডেড লেবার প্রথা খুবই প্রচলিত। ১৯৭৬ সালে প্রথাটি নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু আজও তা চালু আছে। ১৯৭৯/৮০ সালে পালামৌ জেলায় সংগঠন গড়ে বনডেড লেবাররা, ভারতে প্রথম। এরা আন্দোলনও করে "গোহুমনি" সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে লেখা। ওদের সঙ্গে আমিও ছিলাম তো!
বড়লোকের বাড়ি মানুষ মরলে আজও ভাড়াটে কাঁদুনী কাঁদে, ধান কাটার পর আক্তও মানুষ টুং কুড়ায়, ভূমিদাস প্রথা আজও বহাল আছে, তাই এই গল্পগুলি আজও প্রাসঙ্গিক রয়ে গেল। এটা ঘটনা। অন্নক্ষুধা নিয়ে রোমান্টিক
গল্প লেখা যায় নি। পাঠক ক্ষমা করবেন।