shabd-logo

সপ্তম পরিচ্ছেদ

9 November 2023

0 Viewed 0

পূর্ণিমার রাত্রি! –সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির। সেই ঘোড়ার দড়বড়ি, বন্দুকের কড়কড়ি, কামানের গুম্ গুম্ – সর্বব্যাপী ধূম, আর কিছুই নাই। কেহ হুরে বলিতেছে না – কেহ হরিধ্বনি করিতেছে না । - শব্দ করিতেছে – কেবল শৃগাল, কুক্কুর, গৃধিনী। সর্বোপরি আহত ব্যক্তির ক্ষণিক আর্তনাদ। কেহ ছিন্নহস্ত, - কেহ ভগ্নমস্তক, কাহারও পা ভাঙ্গিয়াছে, কাহারও পঞ্জর বিদ্ধ হইয়াছে, কেহ ঘোড়ার নীচে পড়িয়াছে। কেহ ডাকিতেছে “মা!” কেহ ডাকিতেছে “বাপ!” কেহ চায় জল, কাহারও কামনা মৃত্যু। বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, ইংরেজ, মুসলমান, একত্র জড়াজড়ি; জীবন্তে-মৃতে, মনুষ্যে-অশ্বে, মিশামিশি ঠেসাঠেসি হইয়া পড়িয়া রহিয়াছে। সেই মাঘ মাসের পূর্ণিমার রাত্রে, দারুণ শীতে, উজ্জ্বল জ্যোৎস্নালোকে রণভূমি অতি ভয়ঙ্কর দেখাইতেছিল। সেখানে আসিতে কাহারও সাহস হয় না।

কাহারও সাহস হয় না, কিন্তু নিশীথকালে এক রমণী সেই অগম্য রণক্ষেত্রে বিচরণ করিতেছিল। একটি মশাল জ্বালিয়া সেই শবরাশির মধ্যে সে কি খুঁজিতেছিল। প্রত্যেক মৃতদেহের মুখের কাছে মশাল লইয়া মুখ দেখিয়া, আবার অন্য শবের কাছে মশাল লইয়া যাইতেছিল। কোথায়, কোন নরদেহ মৃত অশ্বের নীচে পড়িয়াছে; সেখানে যুবতী, মশাল মাটিতে রাখিয়া, অশ্বটি দুই হাতে সরাইয়া নরদেহ উদ্ধার করিতেছিল। তার পর যখন দেখিতে পায় যে, যাকে খুঁজিতেছে, সে নয়, তখন মশাল তুলিয়া সরিয়া যায়। এইরূপ অনুসন্ধান করিয়া, যুবতী সকল মাঠ ফিরিল – যা খুঁজে, তা কোথাও পাইল না। তখন মশাল - ফেলিয়া, সেই শবরাশিপূর্ণ রুধিরাক্ত ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল। সে শান্তি; জীবানন্দের দেহ খুঁজিতেছিল ।

শান্তি লুটাইয়া পড়িয়া কাঁদিতে লাগিল, এমন সময়ে এক অতি মধুর সকরুণধ্বনি তাহার কর্ণরন্ধে প্রবেশ করিল। কে যেন বলিতেছে, “উঠ মা! কাঁদিও না।” শান্তি চাহিয়া দেখিল – দেখিল, সম্মুখে - জ্যোৎস্নালোকে দাঁড়াইয়া, এক অপূর্বদৃশ্য প্রকাণ্ডাকার জটাজুটধারী মহাপুরুষ।

শান্তি উঠিয়া দাঁড়াইল। যিনি আসিয়াছিলেন, তিনি বলিলেন, “কাঁদিও না মা! জীবানন্দের দেহ আমি খুঁজিয়া দিতেছি, তুমি আমার সঙ্গে আইস।”

তখন সেই পুরুষ শান্তিকে রণক্ষেত্রের মধ্যস্থলে লইয়া গেলেন; সেখানে অসংখ্য শবরাশি উপর্যপরি পড়িয়াছে। শান্তি তাহা সকল নাড়িতে পারে নাই। সেই শবরাশি নাড়িয়া, সেই মহাবলবান পুরুষ এক মৃতদেহ বাহির করিলেন। শান্তি চিনিল, সেই জীবানন্দের দেহ। সর্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত, রুধিরে পরিপ্লুত। শান্তি সামান্যা স্ত্রীলোকের ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে লাগিল।

আবার তিনি বলিলেন, “কাঁদিও না মা! জীবানন্দ কি মরিয়াছে? স্থির হইয়া উহার দেহ পরীক্ষা করিয়া দেখ। আগে নাড়ী দেখ”।

শান্তি শবের নাড়ী টিপিয়া দেখিল, কিছুমাত্র, গতি নাই। সেই পুরুষ বলিলেন, “বুকে হাত দিয়া দেখ।”

যেখানে হৃৎপিণ্ড, শান্তি সেইখানে হাত দিয়া দেখিল, কিছুমাত্র গতি নাই; সব শীতল।

সেই পুরুষ আবার বলিলেন, “নাকের কাছে হাত দিয়া দেখ – কিছুমাত্র নিঃশ্বাস বহিতেছে কি?” - শান্তি দেখিল, কিছুমাত্র না।

সেই পুরুষ বলিলেন, “আবার দেখ, মুখের ভিতর আঙ্গুল দিয়া দেখ – কিছুমাত্র উষ্ণতা আছে কি - ?” শান্তি আঙ্গুল দিয়া দেখিয়া বলিল, “বুঝিতে পারিতেছি না।” শান্তি আশামুগ্ধ হইয়াছিল। না

মহাপুরুষ, বাম হস্তে জীবানন্দের দেহ স্পর্শ করিলেন। বলিলেন, “তুমি ভয়ে হতাশ হইয়াছ! তাই

বুঝিতে পারিতেছ না – শরীরে কিছু তাপ এখনও আছে বোধ হইতেছে। আবার দেখ দেখি।”

-

শান্তি তখন আবার নাড়ী দেখিল, কিছু গতি আছে। বিস্মিত হইয়া হৃৎপিণ্ডের উপরে হাত রাখিল একটু ধক্ ধক্ করিতেছে! নাকের আগে অঙ্গুলি রাখিল – একটু নিঃশ্বাস বহিতেছে! মুখের ভিতর অল্প - উষ্ণতা পাওয়া গেল। শান্তি বিস্মিত হইয়া বলিল, “প্রাণ ছিল কি? না আবার আসিয়াছে?” -

তিনি বলিলেন, “তাও কি হয় মা! তুমি উহাকে বহিয়া পুষ্করিণীতে আনিতে পারিবে? আমি চিকিৎসক, উহার চিকিৎসা করিব।” শান্তি অনায়াসে জীবানন্দকে কোলে তুলিয়া পুকুরের দিকে লইয়া চলিল। চিকিৎসক বলিলেন, “তুমি ইহাকে লইয়া গিয়া, রক্তসকল ধুইয়া দাও। আমি ঔষধ লইয়া যাইতেছি।”

শান্তি জীবানন্দকে পুষ্করিণীতীরে লইয়া গিয়া রক্ত ধৌত করিল। তখনই চিকিৎসক বন্য লতা - পাতার প্রলেপ লইয়া আসিয়া সকল ক্ষতমুখে দিলেন, তার পর, বারংবার জীবানন্দের সর্বাঙ্গে হাত বুলাইলেন।

তখন জীবানন্দ এক দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া উঠিয়া বসিল। শান্তির মুখপানে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “যুদ্ধে কার জয় হইল?”

শান্তি বলিল, “তোমারই জয়। এই মহাত্মাকে প্রণাম কর।”

তখন উভয়ে দেখিল, কেহ কোথাও নাই! কাহাকে প্রণাম করিবে?

নিকটে বিজয়ী সন্তানসেনার বিষম কোলাহল শুনা যাইতেছিল, কিন্তু শান্তি বা জীবানন্দ কেহই উঠিল না সেই পূর্ণচন্দ্রের কিরণে সমুজ্জ্বল পুষ্করিণীর সোপানে বসিয়া রহিল। জীবানন্দের শরীর ঔষধের - গুণে, অতি অল্প সময়েই সুস্থ হইয়া আসিল। তিনি বলিলেন, “শান্তি! সেই চিকিৎসকের ঔষধের আশ্চর্য গুণ! আমার শরীরে আর কোন বেদনা বা গ্লানি নাই এখন কোথায় যাইবে চল। ঐ সন্তানসেনার - জয়ের উৎসবের গোল শুনা যাইতেছে।”

শান্তি বলিল, “আর ওখানে না। মার কার্যোদ্ধার হইয়াছে রাজ্যের ভাগ চাহি না - এখন আর কি করিতে যাইব?” - এ দেশ সন্তানের হইয়াছে। আমরা

জী। যা কাড়িয়া লইয়াছি, তা বাহুবলে রাখিতে হইবে।

শা। রাখিবার জন্য মহেন্দ্র আছেন, সত্যানন্দ স্বয়ং আছেন। তুমি প্রায়শ্চিত্ত করিয়া সন্তানধর্মের জন্য দেহত্যাগ করিয়াছিলে; এ পুনঃপ্রাপ্ত দেহে সন্তানের আর কোন অধিকার নাই। আমরা সন্তানের পক্ষে মরিয়াছি। এখন আমাদের দেখিলে সন্তানেরা বলিবে, “জীবানন্দ যুদ্ধের সময়ে প্রায়শ্চিত্তভয়ে লুকাইয়াছিল, জয় হইয়াছে দেখিয়া রাজ্যের ভাগ লইতে আসিয়াছে।”

জী। সে কি শান্তি? লোকের অপবাদভয়ে আপনার কাজ ছাড়িব? আমার কাজ মাতৃসেবা, যে যা বলুক না কেন, আমি মাতৃসেবাই করিব।

শা। তাহাতে তোমার আর অধিকার নাই - কেন না, তোমার দেহ মাতৃসেবার জন্য পরিত্যাগ করিয়াছ। যদি আবার মার সেবা করিতে পাইলে, তবে তোমার প্রায়শ্চিত্ত কি হইল? মাতৃসেবায় বঞ্চিত হওয়াই এ প্রায়শ্চিত্তের প্রধান অংশ। নহিলে শুধু তুচ্ছ প্রাণ পরিত্যাগ কি বড় একটা ভারি কাজ?

জী। শান্তি! তুমিই সার বুঝিতে পার। আমি এ প্রায়শ্চিত্ত অসম্পূর্ণ রাখিব না। আমার সুখ সন্তানধর্মে - সে সুখে আমাকে বঞ্চিত করিব। কিন্তু যাইব কোথায়? মাতৃসেবা ত্যাগ করিয়া, গৃহে গিয়া ত সুখভোগ করা হইবে না।

শা। তা কি আমি বলিতেছি? ছি! আমরা আর গৃহী নহি; এমনই দুই জনে সন্ন্যাসীই থাকিব চিরব্রহ্মচর্য পালন করিব। চল, এখন গিয়া দেশে তীর্থদর্শন করিয়া বেড়াই। -

জী। তার পর?

শা। তার পর – হিমালয়ের উপর কুটীর প্রস্তুত করিয়া, দুই জনে দেবতার আরাধনা করিব - যাতে 1 মার মঙ্গল হয়, সেই বর মাগিব।

তখন দুই জনে উঠিয়া, হাত ধরাধরি করিয়া জ্যোৎস্নাময় নিশীথে অনন্তে অন্তর্হিত হইল।

হায়! আবার আসিবে কি মা! জীবানন্দের ন্যায় পুত্র, শান্তির ন্যায় কন্যা, আবার গর্ভে ধরিবে কি?


46
Articles
আনন্দমঠ
0.0
"আনন্দমঠ" হল 1882 সালে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি 18 শতকের শেষের দিকে সেট করা হয়েছে এবং ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। উপন্যাসটি একদল সন্ন্যাসীর যাত্রা অনুসরণ করে যারা ব্রিটিশ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি গোপন সমাজ গঠন করে। তারা আনন্দমঠ, একটি মঠে আশ্রয় নেয় এবং একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা সত্যানন্দের নেতৃত্বে থাকে। উপন্যাসটি দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। এটি তার জাতীয়তাবাদী উত্সাহের জন্য পরিচিত এবং বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান "বন্দে মাতরম" এর রচনার জন্যও বিখ্যাত। "আনন্দমঠ" ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম এবং অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে।
1

প্ৰথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

১১৭৬ সালে গ্রীষ্মকালে এক দিন পদচিহ্ন গ্রামে রৌদ্রের উত্তাপ বড় প্রবল। গ্রামখানি গৃহময়, কিন্তু লোক দেখি না। বাজারে সারি সারি দোকান, হাটে সারি সারি চালা, পল্লীতে পল্লীতে শত শত মৃন্ময় গৃহ, মধ্যে মধ্যে

2

প্ৰথম খণ্ড দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্ৰ চলিয়া গেল। কল্যাণী একা বালিকা লইয়া সেই জনশূন্য স্থানে প্রায় অন্ধকার কুটীরমধ্যে চারি দিক নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। তাঁহার মনে মনে বড় ভয় হইতেছিল। কেহ কোথাও নাই, মনুষ্যমাত্রের কোন শব্দ পাওয়া যা

3

প্ৰথম খণ্ড : তৃতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

যে বনমধ্যে দস্যুরা কল্যাণীকে নামাইল, সে বন অতি মনোহর। আলো নাই, শোভা দেখে এমন চক্ষুও নাই, দরিদ্রের হৃদয়ান্তর্গত সৌন্দর্যের ন্যায় সে বনের সৌন্দর্য অদৃষ্ট রহিল। দেশে আহার থাকুক বা না থাকুক বনে ফুল আছে,

4

প্ৰথম খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

বন অত্যন্ত অন্ধকার, কল্যাণী তাহার ভিতর পথ পায় না। বৃক্ষলতাকণ্টকের ঘনবিন্যাসে একে পথ নাই, তাহাতে আবার ঘনান্ধকার। বৃক্ষলতাকণ্টক ভেদ করিয়া কল্যাণী বনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলেন। মেয়েটির গায়ে কাঁটা ফুট

5

প্ৰথম খণ্ড : পঞ্চম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই বনমধ্যে এক প্রকাণ্ড ভূমিখণ্ডে ভগ্নশিলাখন্ডসকলে পরিবেষ্টিত হইয়া একটি বড় মঠ আছে। পুরাণতত্ত্ববিদেরা দেখিলে বলিতে পারিতেন, ইহা পূর্বকালে বৌদ্ধদিগের বিহার ছিল- তার পরে হিন্দুর মঠ হইয়াছে। অট্টালিকাশ্

6

প্ৰথম খণ্ড : ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি অনেক। চাঁদ মাথার উপর। পূর্ণচন্দ্র নহে, আলো তত প্রখর নহে। এক অতি বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপর সেই অন্ধকারের ছায়াবিশিষ্ট অস্পষ্ট আলো পড়িয়াছে। সে আলোতে মাঠের এপার ওপার দেখা যাইতেছে না। মাঠে কি আছে,

7

প্ৰথম খণ্ড : সপ্তম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

চটীতে বসিয়া ভাবিয়া কোন ফলোদয় হইবে না বিবেচনা করিয়া মহেন্দ্র গাত্রোত্থান করিলেন। নগরে গিয়া রাজপুরুষদিগের সহায়তায় স্ত্রী-কন্যার অনুসন্ধান করিবেন, এই বিবেচনায় সেই দিকেই চলিলেন। কিছু দূর গিয়া পথি

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর আজ্ঞা পাইয়া ভবানন্দ মৃদু মৃদু হরিনাম করিতে করিতে, যে চট্টীতে মহেন্দ্ৰ বসিয়াছিল, সেই চটার দিকে চলিলেন। সেইখানেই মহেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বিবেচনা করিলেন। সেসময়ে ইংরেজের কৃত আধুনিক

9

নবম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র শকট হইতে নামিয়া একজন সিপাহীর প্রহরণ কাড়িয়া লইয়া যুদ্ধে যোগ দিবার উদ্যোপী হইয়াছিলেন। কিন্তু এমন সময়ে তাঁহার স্পষ্টই বোধ হইল যে, ইহারা দস্যু; ধনাপহরণ জনাই সিপাহীদিগকে আক্রমণ করিয়াছে। এইর

10

দশম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই জ্যোৎস্নাময়ী রজনীতে দুই জনে নীরবে প্রান্তর পার হইয়া চলিল। মহেন্দ্র নীরব, শোককাতর, গর্বিত, কিছু কৌতূহলী। ভবানন্দ সহসা ভিন্নমূর্তি ধারণ করিলেন। সে স্থিরমূর্তি ধীরপ্রকৃতি সন্ন্যাসী আর নাই; সেই রণন

11

একাদশ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি প্রভাত হইয়াছে। সেই জনহীন কানন, - এতক্ষণ অন্ধকার, শব্দহীন ছিল – এখন আলোকময় পক্ষিকুজনশব্দিত হইয়া আনন্দময় হইল। সেই আনন্দময় প্রভাতে আনন্দময় কাননে, “আনন্দমঠে”, সত্যানন্দ ঠাকুর হরিণচর্মে বসিয়া

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

অনেক দুঃখের পর মহেন্দ্র আর কল্যাণীতে সাক্ষাৎ হইল। কল্যাণী কাঁদিয়া লুটাইয়া পড়িল। মহেন্দ্ৰ আরও কাঁদিল। কাঁদাকাটার পর চোখ মুছার ধুম পড়িয়া গেল। যত বার চোখ মুছা যায়, ততবার আবার জল পড়ে। জলপড়া বন্ধ ক

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

এদিকে রাজধানীতে রাজপথে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। রব উঠিল যে, রাজসরকার হইতে কলিকাতায় যে খাজনা চালান যাইতেছিল, সন্ন্যাসীরা তাহা মারিয়া লইয়াছে। তখন রাজাজ্ঞানুসারে সন্ন্যাসী ধরিতে সিপাহী বরকন্দাজ ছুটিতে লা

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

রাত্রি উপস্থিত। কারাগারমধ্যে বদ্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বদ্ধ হইয়াছি। বল হরে মুরারে!” মহেন্দ্র কাতর স্বরে বলিলেন, "হরে মুরারে!” স। কাতর কেন বাপু? তুম

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর গান অনেকে শুনিয়াছিল। অন্যান্য লোকের মধ্যে জীবানন্দের কাণে সে গান গেল। মহেন্দ্রের অনুবর্তী হইবার তাহার প্রতি আদেশ ছিল, ইহা পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। পথিমধ্যে একটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সে স্ত্রীলোকের বয়স প্রায় পঁচিশ বৎসর, কিন্তু দেখিলে নিমাইয়ের অপেক্ষা অধিকবয়স্কা বলিয়া বোধ হয় না। মলিন, গ্রন্থিযুক্ত বসন পরিয়া সেই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে, বোধ হইল যেন, গৃহ আলো হইল । বোধ হইল, পাতায

17

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ মঠের ভিতর বসিয়া হরিগুণ গান করিতেছিলেন। এমত সময়ে বিষণ্নমুখে জ্ঞানানন্দনামা একজন অতি তেজস্বী সন্তান তাঁহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভবানন্দ বলিলেন, “গোঁসাই, মুখ অত ভারি কেন?” জ্ঞানানন্দ বলি

18

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা না হইতেই সন্তানসম্প্রদায় সকলেই জানিতে পারিয়াছিল যে, সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী আর মহেন্দ্র, দুইজনে বন্দী হইয়া নগরের কারাগারে আবদ্ধ আছে। তখন একে একে, দুয়ে দুয়ে, দশে দশে, শতে শতে সন্তানসম্প্রদায়

19

দ্বিতীয় খণ্ড: প্রথম পরিচ্ছেদ

6 November 2023
1
0
0

শান্তির অল্পবয়সে, অতি শৈশবে মাতৃবিয়োগে হইয়াছিল। যে সকল উপাদানে শান্তির চরিত্র গঠিত, ইহা তাহার মধ্যে একটি প্রধান। তাহার পিতা অধ্যাপক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার গৃহে অন্য স্ত্রীলোক কেহ ছিল না। কাজেই শান

20

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

জীবানন্দ চলিয়া গেলে পর শান্তি নিমাইয়ের দাওয়ার উপর গিয়া বসিল। নিমাই মেয়ে কোলে করিয়া তাহার নিকট আসিয়া বসিল। শান্তির চোখে আর জল নাই; শান্তি চোখ মুছিয়াছে, মুখ প্রফুল্ল করিয়াছে, একটু একটু হাসিতেছে

21

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

পরদিন আনন্দমঠের ভিতর নিভৃত কক্ষে বসিয়া ভগ্নোৎসাহ সন্তাননায়ক তিন জন কথোপকথন করিতেছিলেন। জীবানন্দ সত্যানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ! দেবতা আমাদিগের প্রতি এমন অপ্রসন্ন কেন? কি দোষে আমরা মুসলমানের নি

22

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সায়াহ্নকৃত্য সমাপনান্তে মহেন্দ্রকে ডাকিয়া সত্যানন্দ আদেশ করিলেন, “তোমার কন্যা জীবিত আছে।” ম। কোথায় মহারাজ? স। তুমি আমাকে মহারাজ বলিতেছ কেন? ম। সকলেই বলে, তাই। মঠের অধিকারীদিগকে রাজা সম্বোধন করিত

23

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ কথাবার্তা সমাপনান্তে মহেন্দ্রের সহিত সেই মঠস্থ দেবলয়াভ্যন্তরে, যেখানে সেই অপূর্ব শোভাময় প্রকাণ্ডাকার চতুর্ভুজ মূর্তি বিরাজিত, তথায় প্রবেশ করিলেন। সেখানে তখন অপূর্ব শোভা। রজত, স্বর্ণ ও রত্

24

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

দীক্ষা সমাপনান্তে সত্যানন্দ, মহেন্দ্ৰকে অতি নিভৃত স্থানে লইয়া গেলেন। উভয়ে উপবেশন করিলে সত্যানন্দ বলিতে লাগিলেন, “দেখ বৎস! তুমি যে এই মহাব্রত গ্রহণ করিলে, ইহাতে ভগবান আমাদের প্রতি অনুকূল বিবেচনা করি।

25

সপ্তম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র সত্যানন্দের পাদবন্দনা করিয়া বিদায় হইলে, তাঁহার সঙ্গে যে দ্বিতীয় শিষ্য সেই দিন দীক্ষিত হইয়াছিলেন, তিনি আসিয়া সত্যানন্দকে প্রণাম করিলেন। সত্যানন্দ আশীর্বাদ করিয়া কৃষ্ণাজিনের উপর বসিতে অনু

26

অষ্টম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

প্রদীপ হাতে সে রাত্রি শান্তি মঠে থাকিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন। অতএব ঘর খুঁজিতে লাগিলেন। অনেক ঘর খালি পড়িয়া আছে। গোবর্ধন নামে এক জন পরিচারক সেও ক্ষুদ্রদরের সন্তান - করিয়া ঘর দেখাইয়া বেড়াইতে লাগিল। ক

27

তৃতীয় খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

কাল ৭৬ সাল ঈশ্বরকৃপায় শেষ হইল। বাঙ্গালার ছয় আনা রকম মনুষ্যকে, - কত কোটী তা কে জানে, -যমপুরে প্রেরণ করাইয়া সেই দুর্বৎসর নিজে কালগ্রাসে পতিত হইল। ৭৭ সালে ঈশ্বর সুপ্রসন্ন হইলেন। সুবৃষ্টি হইল, পৃথিবী শ

28

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

তখন কোম্পানির অনেক রেশমের কুঠি ছিল । শিবগ্রামে ঐরূপ এক কুঠি ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই কুঠির ফ্যাক্টর অর্থাৎ অধ্যক্ষ ছিলেন। তখনকার কুঠিসকলের রক্ষার জন্য সুব্যবস্থা ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই জন্য কোন প্

29

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

শান্তি সাহেবকে ত্যাগ করিয়া হরিণীর ন্যায় ক্ষিপ্রচরণে বনমধ্যে কোথায় প্রবিষ্ট হইল। সাহেব কিছু পরে শুনিতে পাইলেন, স্ত্রীকণ্ঠে গীত হইতেছে, এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে? হরে মুরারে! হরে মুরারে! আবার কোথায

30

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ গোস্বামী একদা নগরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রশস্ত রাজপথ পরিত্যাগ করিয়া একটা অন্ধকার গলির ভিতর প্রবেশ করিলেন। গলির দুই পার্শ্বে উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী; সূর্যদেব মধ্যাহ্নে এক একবার গলির ভিতর উঁকি ম

31

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ ভাবিতে ভাবিতে মঠে চলিলেন। যাইতে যাইতে রাত্রি হইল। পথে একাকী যাইতেছিলেন। বনমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, বনমধ্যে আর এক ব্যক্তি তাঁহার আগে আগে যাইতেছে। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে হে যাও?

32

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

মঠে না গিয়া ভবানন্দ গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সেই জঙ্গলমধ্যে এক স্থানে এক প্রাচীন অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে। ভগ্নাবশিষ্ট ইষ্টকাদির উপর, লতাগুল্মকণ্টকাদি অতিশয় নিবিড়ভাবে জন্মিয়াছে। সেখানে অসংখ্য স

33

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
1
0
0

জীবানন্দ কুটীর হইতে বাহির হইয়া গেলে পর, শান্তিদেবী আবার সারঙ্গ লইয়া মৃদু মৃদু রবে গীত করিতে লাগিলেন, - “প্রলয়পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদম্‌ বিহিতবহিত্রচরিত্রখেদম্ কেশব ধৃতমীনশরীর জয় জগদীশ হরে।” গো

34

অষ্টম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ক্রমে সন্তানসম্প্রদায়মধ্যে সংবাদ প্রচারিত হইল যে, সত্যানন্দ আসিয়াছেন, সন্তানদিগের সঙ্গে কি কথা কহিবেন, এই বলিয়া তিনি সকলকে আহ্বান করিয়াছেন। তখন দলে দলে সন্তানসম্প্রদায় নদীতীরে আসিয়া সমবেত হইতে ল

35

নবম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

“গুডুম্ গুডুম্ গুম্।” ইংরেজের কামান ডাকিল। সেই শব্দ বিশাল কানন কম্পিত করিয়া প্রতিধ্বনিত হইল, “গুডুম্ গুডুম গুম্।” নদীর বাঁকে বাঁকে ফিরিয়া সেই ধ্বনি দূরস্থ আকাশপ্রান্ত হইতে প্রতিক্ষিপ্ত হইল, “গুডুম্

36

দশম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

সেই দশ সহস্র সন্তান “বন্দে মাতরম্” গায়িতে গায়িতে বল্লম উন্নত করিয়া অতি দ্রুত বেগে তোপশ্রেণীর উপর গিয়া পড়িল। গোলাবৃষ্টিতে খণ্ড বিখণ্ড বিদীর্ণ উৎপতিত অত্যন্ত বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, তথাপি সন্তানসৈন্য ফ

37

একাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

এই সময়ে টমাসের তোপগুলি দক্ষিণে আসিয়া পৌঁছিল। তখন সন্তানের দল একেবারে ছিন্নভিন্ন হইল, কেহ বাঁচিবার আর কোন আশা রহিল না। সন্তানেরা যে যেখানে পাইল, পলাইতে লাগিল । জীবানন্দ ধীরানন্দ তাহাদিগকে সংযত এবং এক

38

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

রণজয়ের পর অজয়তীরে সত্যানন্দকে ঘিরিয়া বিজয়ী বীরবর্গ নানা উৎসব করিতে লাগিল। কেবল সত্যানন্দ বিমর্ষ, ভবানন্দের জন্য। এতক্ষণ বৈষ্ণবদিগের রণবাদ্য অধিক ছিল না, কিন্তু সেই সময় কোথা হইতে সহস্র সহস্র কাড়

39

চতুর্থ খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণা হইল। সন্তানেরা দলে দলে যেখানে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কেহ “বন্দে মাতরম্” কেহ “জগদীশ হরে” বলিয়া গাইয়া বেড়াইতে লাগিল। কেহ শত্রুসেনার অস্ত্র, কেহ বস্ত্র অপহরণ

40

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

যখন শান্তি আপন আশ্রম ত্যাগ করিয়া গভীর রাত্রে নগরাভিমুখে যাত্রা করে, তখন জীবানন্দ আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন। শান্তি জীবানন্দকে বলিল, “আমি নগরে চলিলাম। মহেন্দ্রর স্ত্রীকে লইয়া আসিব। তুমি মহেন্দ্রকে বলিয়া

41

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পদচিহ্নে নূতন দুর্গমধ্যে, আজ সুখে সমবেত, মহেন্দ্র, কল্যাণী, জীবানন্দ, শান্তি, নিমাই, নিমাইয়ের স্বামী, সুকুমারী। সকলে সুখে সম্মিলিত। শান্তি নবীনানন্দের বেশে আসিয়াছিল। কল্যাণীকে যে রাত্রে আপন কুটীরে আ

42

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

উত্তর বাঙ্গালা মুসলমানের হাতছাড়া হইয়াছে। মুসলমান কেহই এ কথা মানেন না মনকে চোখ - ঠারেন – বলেন, কতকগুলি লুঠেড়াতে বড় দৌরাত্ম্য করিতেছে – শাসন করিতেছি। এইরূপ কত কাল - যাইত বলা যায় না; কিন্তু এই সময়ে

43

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

তখন দুই জনে কাণে কাণে কি পরামর্শ করিলেন। পরামর্শ করিয়া জীবানন্দ এক বনে লুকাইলেন। শান্তি আর এক বনে প্রবেশ করিয়া এক অদ্ভুত রহস্যে প্রবৃত্ত হইল। শান্তি মরিতে যাইতেছিল, কিন্তু মৃত্যুকালে স্ত্রীবেশ ধরিব

44

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

এডওয়ার্ডস পাকা ইংরেজ। ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে তাহার লোক ছিল। শীঘ্র তাহার নিকটে খবর পৌঁছিল যে, সেই বৈষ্ণবীটা লিণ্ডলে সাহেবকে ফেলিয়া দিয়া আপনি ঘোড়ায় চড়িয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। শুনিয়াই এডওয়ার্ডস বলিলে

45

সপ্তম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পূর্ণিমার রাত্রি! –সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির। সেই ঘোড়ার দড়বড়ি, বন্দুকের কড়কড়ি, কামানের গুম্ গুম্ – সর্বব্যাপী ধূম, আর কিছুই নাই। কেহ হুরে বলিতেছে না – কেহ হরিধ্বনি করিতেছে না । - শব্দ করিতেছে

46

অষ্টম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকে কিছু না বলিয়া আনন্দমঠে চলিয়া আসিলেন। সেখানে গভীর রাত্রে, বিষ্ণুমণ্ডপে বসিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত। এমত সময়ে সেই চিকিৎসক সেখানে আসিয়া দেখা দিলেন। দেখিয়া সত্যানন্দ

---