shabd-logo

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

9 November 2023

0 Viewed 0

তখন দুই জনে কাণে কাণে কি পরামর্শ করিলেন। পরামর্শ করিয়া জীবানন্দ এক বনে লুকাইলেন। শান্তি আর এক বনে প্রবেশ করিয়া এক অদ্ভুত রহস্যে প্রবৃত্ত হইল।

শান্তি মরিতে যাইতেছিল, কিন্তু মৃত্যুকালে স্ত্রীবেশ ধরিবে, ইহা স্থির করিয়াছিল। তাহার এ পুরুষবেশ জুয়াচুরি, মহেন্দ্র বলিয়াছে। জুয়াচুরি করিতে করিতে মরা হইবে না। সুতরাং ঝাঁপি টেপারিটি সঙ্গে আনিয়াছিলেন । তাহাতে তাহার সজ্জাসকল থাকিত। এখন নবীনানন্দ ঝাঁপি টেপারি খুলিয়া বেশপরিবর্তনে প্রবৃত্ত হইল ।

চিকণ রকম রসকলির উপর খয়েরের টিপ কাটিয়া তৎকালপ্রচলিত ফুরফুরে কোঁকড়া কোঁকড়া কতকগুলি ঝাপটার গোছায় চাঁদমুখখানি ঢাকিয়া, শান্তি একটি সারঙ্গ হস্তে বৈষ্ণবীবেশে ইংরেজ - শিবিরে দর্শন দিল। দেখিয়া ভ্রমরকৃষ্ণশ্মশ্রুযুক্ত সিপাহীরা বড় মাতিয়া গেল। কেহ টপ্পা, কেহ গজল, কেহ শ্যামাবিষয়, কেহ ফরমাস করিয়া শুনিল। কেহ চাল দিল, কেহ ডাল দিল, কেহ মিষ্টি দিল, কেহ পয়সা দিল, কেহ সিকি দিল। বৈষ্ণবী তখন শিবিরের অবস্থা স্বচক্ষে সবিশেষ দেখিয়া চলিয়া যায়; সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করিল, “আবার কবে আসিবে?” বৈষ্ণবী বলিল, “তা জানি না, আমার বাড়ী ঢের দূর।” সিপাহীরা জিজ্ঞাসা করিল, “কত দূর?” বৈষ্ণবী বলিল, “আমার বাড়ী পদচিহ্নে।” এখন সেই দিন মেজর সাহেব পদচিহ্নের কিছু খবর লইতেছিলেন। একজন সিপাহী তাহা জানিত। বৈষ্ণবীকে ডাকিয়া কাপ্তেন সাহেবের কাছে লইয়া গেল। কাপ্তেন সাহেব তাহাকে মেজর সাহেবের কাছে লইয়া গেল। মেজর সাহেবের কাছে গিয়া বৈষ্ণবী মধুর হাসি হাসিয়া, মর্মভেদী কটাক্ষে সাহেবের মাথা ঘুরাইয়া দিয়া, খঞ্জনীতে আঘাত করিয়া গান ধরিল -

“ম্লেচ্ছনিবহনিধনে কলয়সি করবালম্।”

সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “টোমাড় বাড়ী কোঠা বিবি?”

বৈষ্ণবী বলিল, “আমি বিবি নাই, বৈষ্ণবী। বাড়ী পদচিহ্নে।”

সাহেব। Well that is Padsin - Padsin is it? হুয়া একটো গর হ্যায়?

বৈষ্ণবী বলিল, “ঘর? - কত ঘর আছে।”

সা। গর নেই,-গর নেই,- গর, - গর-

শা। সাহেব, তোমার মনের কথা বুঝেছি। গড়?

সা। ইয়েস ইয়েস, গর! গর! - হ্যায়?

শা। গড় আছে। ভারি কেল্লা।

সা। কেটে আডমি?

শা। গড়ে কত লোক থাকে? বিশ পঞ্চাশ হাজার।

সা। নন্সেন্স। একটো কেল্লেমে ডো চার হাজার রহে শক্তা। হুঁয়া পর আবি হ্যায়? ইয়া নিকেল গিয়া?

শা। আবার নেকলাবে কোথা?

সা। মেলামে – টোম কব আয়া হ্যায় হুঁয়াসে?

শা। কাল এসেছি সায়েব।

সা। ও লোক আজ নিকেল গিয়া হোগা।

শান্তি মনে মনে ভাবিতেছিল যে, “তোমার বাপের শ্রাদ্ধের চাল যদি আমি না চড়াই, তবে আমার রসকলি কাটাই বৃথা। কতক্ষণে শিয়ালে তোমার মুণ্ড খাবে আমি দেখব।” প্রকাশ্যে বলিল, “তা সাহেব, হতে পারে, আজ বেরিয়ে গেলে যেতে পারে। অত খবর আমি জানি না, বৈষ্ণবী মানুষ, গান গেয়ে ভিক্ষা শিক্ষা করে খাই, অত খবর রাখি নে। বকে বকে গলা শুকিয়ে উঠল, পয়সাটা সিকেটা দাও – উঠে চলে -

যাই। আর ভাল করে বখশিশ দাও ত না হয় পরশু এসে বলে যাব।” সাহেব ঝনাৎ করিয়া একটা নগদ টাকা ফেলিয়া দিয়া বলিল, “পরশু নেহি বিবি!” শান্তি বলিল, “দূর বেটা! বৈষ্ণবী বল্‌, বিবি কি?”

এডওয়ার্ডস। পরশু নেহি, আজ রাংকো হামকো খবর মিলনা চাহিয়ে।

শা। বন্দুক মাথায় দিয়ে সরাপ টেনে সরষের তেল নাকে দিয়ে ঘুমো। আজ আমি দশ কোশ রাস্তা যাব - আসব –ওঁকে খবর এনে দেব! ছুঁচো বেটা কোথাকার।

এ। ছুঁচো ব্যাটা কেস্কা কয়তা হ্যায়?

শা। যে বড় বীর - ভারি জাঁদরেল।

এ। Great General হাম হো শক্তা হ্যায় চাহিয়ে। শও রূপেয়া বখশিশ দেঙ্গে। ক্লাইবকা মাফিক। লেকেন আজ হামকো খবর মিলনে

শা। শ-ই দাও আর হাজার দাও, বিশ ক্রোশ এ দুখানা ঠেঙ্গে হবে না। 

এ। ঘোড়ে পর।

শা। ঘোড়ায় চড়িতে জানলে আর তোমার তাঁবুতে এসে সারেঙ্গ বাজিয়ে ভিক্ষে করি?

এ। গদী পর লে যায়েগা।

শা। কোলে বসিয়ে নিয়ে যাবে? আমার লজ্জা নাই?

এ। ক্যা মুস্কিল, পানশো রূপেয়া দেঙ্গে।

শা। কে যাবে, তুমি নিজে যাবে?

সাহেব তখন অঙ্গুলিনির্দেশপূর্বক সম্মুখে দণ্ডায়মান লিণ্ডলে নামক একজন যুবা এনসাইনকে দেখাইয়া তাহাকে বলিলেন, “লিগুলে, তুমি যাবে?” লিওলে শান্তির রূপযৌবন দেখিয়া বলিল, “আহ্লাদপূর্বক।”

তখন ভারি একটা আরবী ঘোড়া সজ্জিত হইয়া আসিলে লিওলেও তৈয়ার হইল। শান্তিকে ধরিয়া ঘোড়ায় তুলিতে গেল। শান্তি বলিল, “ছি, এত লোকের মাঝখানে? আমার কি আর কিছু লজ্জা নাই! আগে চল ছাউনি ছাড়াই।”

লিওলে ঘোড়ায় চড়িল। ঘোড়া ধীরে ধীরে হাঁটাইয়া চলিল। শান্তি পশ্চাৎ পশ্চাৎ হাঁটিয়া চলিল । এইরূপে তাহারা শিবিরের বাহিরে আসিল। শিবিরের বাহিরে আসিলে নির্জন প্রান্তর পাইয়া, শান্তি লিগুলের পায়ের উপর পা দিয়া এক লাফে ঘোড়ায় চড়িল। লিগুলে হাসিয়া বলিল, “তুমি যে পাকা ঘোড়সওয়ার।”

শান্তি বলিল, “আমরা এমন পাকা ঘোড়সওয়ার যে, তোমার সঙ্গে চড়িতে লজ্জা করে। ছি! রেকাব পায়ে দিয়ে ঘোড়ায় চড়া!”

একবার বড়াই করিবার জন্য লিওলে রেকার হইতে পা লইল। শান্তি অমনি নির্বোধ ইংরেজের গলদেশে হস্তার্পণ করিয়া ঘোড়া হইতে ফেলিয়া দিল। শান্তি তখন অশ্বপৃষ্ঠে রীতিমত আসন গ্রহণ করিয়া, ঘোড়ার পেটে মলের ঘা মারিয়া, বায়ুবেগে আরবীকে ছুটাইয়া দিল। শান্তি চারি বৎসর সন্তানসৈন্যের সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়া অশ্বারোহণবিদ্যাও শিখিয়াছিল। তা না শিখিলে জীবানন্দের সঙ্গে কি বাস করিতে পারিত? লিণ্ডলে পা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া রহিলেন। শান্তি বায়ুবেগে অশ্বপৃষ্ঠে চলিল।

যে বনে জীবানন্দ লুকাইয়াছিলেন, শান্তি সেইখানে গিয়া জীবানন্দকে সকল সংবাদ অবগত করাইল। জীবানন্দ বলিলেন, “তবে আমি শীঘ্র গিয়া মহেন্দ্রকে সতর্ক করি। তুমি মেলায় গিয়া সত্যানন্দকে খবর দাও। তুমি ঘোড়ায় যাও - প্রভু যেন শীঘ্র সংবাদ পান।” তখন দুই জনে দুই দিকে ধাবিত হইল । বলা বৃথা, শান্তি আবার নবীনানন্দ হইল।

46
Articles
আনন্দমঠ
0.0
"আনন্দমঠ" হল 1882 সালে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি 18 শতকের শেষের দিকে সেট করা হয়েছে এবং ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। উপন্যাসটি একদল সন্ন্যাসীর যাত্রা অনুসরণ করে যারা ব্রিটিশ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি গোপন সমাজ গঠন করে। তারা আনন্দমঠ, একটি মঠে আশ্রয় নেয় এবং একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা সত্যানন্দের নেতৃত্বে থাকে। উপন্যাসটি দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। এটি তার জাতীয়তাবাদী উত্সাহের জন্য পরিচিত এবং বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান "বন্দে মাতরম" এর রচনার জন্যও বিখ্যাত। "আনন্দমঠ" ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম এবং অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে।
1

প্ৰথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

১১৭৬ সালে গ্রীষ্মকালে এক দিন পদচিহ্ন গ্রামে রৌদ্রের উত্তাপ বড় প্রবল। গ্রামখানি গৃহময়, কিন্তু লোক দেখি না। বাজারে সারি সারি দোকান, হাটে সারি সারি চালা, পল্লীতে পল্লীতে শত শত মৃন্ময় গৃহ, মধ্যে মধ্যে

2

প্ৰথম খণ্ড দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্ৰ চলিয়া গেল। কল্যাণী একা বালিকা লইয়া সেই জনশূন্য স্থানে প্রায় অন্ধকার কুটীরমধ্যে চারি দিক নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। তাঁহার মনে মনে বড় ভয় হইতেছিল। কেহ কোথাও নাই, মনুষ্যমাত্রের কোন শব্দ পাওয়া যা

3

প্ৰথম খণ্ড : তৃতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

যে বনমধ্যে দস্যুরা কল্যাণীকে নামাইল, সে বন অতি মনোহর। আলো নাই, শোভা দেখে এমন চক্ষুও নাই, দরিদ্রের হৃদয়ান্তর্গত সৌন্দর্যের ন্যায় সে বনের সৌন্দর্য অদৃষ্ট রহিল। দেশে আহার থাকুক বা না থাকুক বনে ফুল আছে,

4

প্ৰথম খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

বন অত্যন্ত অন্ধকার, কল্যাণী তাহার ভিতর পথ পায় না। বৃক্ষলতাকণ্টকের ঘনবিন্যাসে একে পথ নাই, তাহাতে আবার ঘনান্ধকার। বৃক্ষলতাকণ্টক ভেদ করিয়া কল্যাণী বনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলেন। মেয়েটির গায়ে কাঁটা ফুট

5

প্ৰথম খণ্ড : পঞ্চম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই বনমধ্যে এক প্রকাণ্ড ভূমিখণ্ডে ভগ্নশিলাখন্ডসকলে পরিবেষ্টিত হইয়া একটি বড় মঠ আছে। পুরাণতত্ত্ববিদেরা দেখিলে বলিতে পারিতেন, ইহা পূর্বকালে বৌদ্ধদিগের বিহার ছিল- তার পরে হিন্দুর মঠ হইয়াছে। অট্টালিকাশ্

6

প্ৰথম খণ্ড : ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি অনেক। চাঁদ মাথার উপর। পূর্ণচন্দ্র নহে, আলো তত প্রখর নহে। এক অতি বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপর সেই অন্ধকারের ছায়াবিশিষ্ট অস্পষ্ট আলো পড়িয়াছে। সে আলোতে মাঠের এপার ওপার দেখা যাইতেছে না। মাঠে কি আছে,

7

প্ৰথম খণ্ড : সপ্তম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

চটীতে বসিয়া ভাবিয়া কোন ফলোদয় হইবে না বিবেচনা করিয়া মহেন্দ্র গাত্রোত্থান করিলেন। নগরে গিয়া রাজপুরুষদিগের সহায়তায় স্ত্রী-কন্যার অনুসন্ধান করিবেন, এই বিবেচনায় সেই দিকেই চলিলেন। কিছু দূর গিয়া পথি

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর আজ্ঞা পাইয়া ভবানন্দ মৃদু মৃদু হরিনাম করিতে করিতে, যে চট্টীতে মহেন্দ্ৰ বসিয়াছিল, সেই চটার দিকে চলিলেন। সেইখানেই মহেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বিবেচনা করিলেন। সেসময়ে ইংরেজের কৃত আধুনিক

9

নবম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র শকট হইতে নামিয়া একজন সিপাহীর প্রহরণ কাড়িয়া লইয়া যুদ্ধে যোগ দিবার উদ্যোপী হইয়াছিলেন। কিন্তু এমন সময়ে তাঁহার স্পষ্টই বোধ হইল যে, ইহারা দস্যু; ধনাপহরণ জনাই সিপাহীদিগকে আক্রমণ করিয়াছে। এইর

10

দশম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই জ্যোৎস্নাময়ী রজনীতে দুই জনে নীরবে প্রান্তর পার হইয়া চলিল। মহেন্দ্র নীরব, শোককাতর, গর্বিত, কিছু কৌতূহলী। ভবানন্দ সহসা ভিন্নমূর্তি ধারণ করিলেন। সে স্থিরমূর্তি ধীরপ্রকৃতি সন্ন্যাসী আর নাই; সেই রণন

11

একাদশ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি প্রভাত হইয়াছে। সেই জনহীন কানন, - এতক্ষণ অন্ধকার, শব্দহীন ছিল – এখন আলোকময় পক্ষিকুজনশব্দিত হইয়া আনন্দময় হইল। সেই আনন্দময় প্রভাতে আনন্দময় কাননে, “আনন্দমঠে”, সত্যানন্দ ঠাকুর হরিণচর্মে বসিয়া

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

অনেক দুঃখের পর মহেন্দ্র আর কল্যাণীতে সাক্ষাৎ হইল। কল্যাণী কাঁদিয়া লুটাইয়া পড়িল। মহেন্দ্ৰ আরও কাঁদিল। কাঁদাকাটার পর চোখ মুছার ধুম পড়িয়া গেল। যত বার চোখ মুছা যায়, ততবার আবার জল পড়ে। জলপড়া বন্ধ ক

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

এদিকে রাজধানীতে রাজপথে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। রব উঠিল যে, রাজসরকার হইতে কলিকাতায় যে খাজনা চালান যাইতেছিল, সন্ন্যাসীরা তাহা মারিয়া লইয়াছে। তখন রাজাজ্ঞানুসারে সন্ন্যাসী ধরিতে সিপাহী বরকন্দাজ ছুটিতে লা

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

রাত্রি উপস্থিত। কারাগারমধ্যে বদ্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বদ্ধ হইয়াছি। বল হরে মুরারে!” মহেন্দ্র কাতর স্বরে বলিলেন, "হরে মুরারে!” স। কাতর কেন বাপু? তুম

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর গান অনেকে শুনিয়াছিল। অন্যান্য লোকের মধ্যে জীবানন্দের কাণে সে গান গেল। মহেন্দ্রের অনুবর্তী হইবার তাহার প্রতি আদেশ ছিল, ইহা পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। পথিমধ্যে একটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সে স্ত্রীলোকের বয়স প্রায় পঁচিশ বৎসর, কিন্তু দেখিলে নিমাইয়ের অপেক্ষা অধিকবয়স্কা বলিয়া বোধ হয় না। মলিন, গ্রন্থিযুক্ত বসন পরিয়া সেই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে, বোধ হইল যেন, গৃহ আলো হইল । বোধ হইল, পাতায

17

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ মঠের ভিতর বসিয়া হরিগুণ গান করিতেছিলেন। এমত সময়ে বিষণ্নমুখে জ্ঞানানন্দনামা একজন অতি তেজস্বী সন্তান তাঁহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভবানন্দ বলিলেন, “গোঁসাই, মুখ অত ভারি কেন?” জ্ঞানানন্দ বলি

18

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা না হইতেই সন্তানসম্প্রদায় সকলেই জানিতে পারিয়াছিল যে, সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী আর মহেন্দ্র, দুইজনে বন্দী হইয়া নগরের কারাগারে আবদ্ধ আছে। তখন একে একে, দুয়ে দুয়ে, দশে দশে, শতে শতে সন্তানসম্প্রদায়

19

দ্বিতীয় খণ্ড: প্রথম পরিচ্ছেদ

6 November 2023
1
0
0

শান্তির অল্পবয়সে, অতি শৈশবে মাতৃবিয়োগে হইয়াছিল। যে সকল উপাদানে শান্তির চরিত্র গঠিত, ইহা তাহার মধ্যে একটি প্রধান। তাহার পিতা অধ্যাপক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার গৃহে অন্য স্ত্রীলোক কেহ ছিল না। কাজেই শান

20

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

জীবানন্দ চলিয়া গেলে পর শান্তি নিমাইয়ের দাওয়ার উপর গিয়া বসিল। নিমাই মেয়ে কোলে করিয়া তাহার নিকট আসিয়া বসিল। শান্তির চোখে আর জল নাই; শান্তি চোখ মুছিয়াছে, মুখ প্রফুল্ল করিয়াছে, একটু একটু হাসিতেছে

21

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

পরদিন আনন্দমঠের ভিতর নিভৃত কক্ষে বসিয়া ভগ্নোৎসাহ সন্তাননায়ক তিন জন কথোপকথন করিতেছিলেন। জীবানন্দ সত্যানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ! দেবতা আমাদিগের প্রতি এমন অপ্রসন্ন কেন? কি দোষে আমরা মুসলমানের নি

22

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সায়াহ্নকৃত্য সমাপনান্তে মহেন্দ্রকে ডাকিয়া সত্যানন্দ আদেশ করিলেন, “তোমার কন্যা জীবিত আছে।” ম। কোথায় মহারাজ? স। তুমি আমাকে মহারাজ বলিতেছ কেন? ম। সকলেই বলে, তাই। মঠের অধিকারীদিগকে রাজা সম্বোধন করিত

23

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ কথাবার্তা সমাপনান্তে মহেন্দ্রের সহিত সেই মঠস্থ দেবলয়াভ্যন্তরে, যেখানে সেই অপূর্ব শোভাময় প্রকাণ্ডাকার চতুর্ভুজ মূর্তি বিরাজিত, তথায় প্রবেশ করিলেন। সেখানে তখন অপূর্ব শোভা। রজত, স্বর্ণ ও রত্

24

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

দীক্ষা সমাপনান্তে সত্যানন্দ, মহেন্দ্ৰকে অতি নিভৃত স্থানে লইয়া গেলেন। উভয়ে উপবেশন করিলে সত্যানন্দ বলিতে লাগিলেন, “দেখ বৎস! তুমি যে এই মহাব্রত গ্রহণ করিলে, ইহাতে ভগবান আমাদের প্রতি অনুকূল বিবেচনা করি।

25

সপ্তম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র সত্যানন্দের পাদবন্দনা করিয়া বিদায় হইলে, তাঁহার সঙ্গে যে দ্বিতীয় শিষ্য সেই দিন দীক্ষিত হইয়াছিলেন, তিনি আসিয়া সত্যানন্দকে প্রণাম করিলেন। সত্যানন্দ আশীর্বাদ করিয়া কৃষ্ণাজিনের উপর বসিতে অনু

26

অষ্টম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

প্রদীপ হাতে সে রাত্রি শান্তি মঠে থাকিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন। অতএব ঘর খুঁজিতে লাগিলেন। অনেক ঘর খালি পড়িয়া আছে। গোবর্ধন নামে এক জন পরিচারক সেও ক্ষুদ্রদরের সন্তান - করিয়া ঘর দেখাইয়া বেড়াইতে লাগিল। ক

27

তৃতীয় খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

কাল ৭৬ সাল ঈশ্বরকৃপায় শেষ হইল। বাঙ্গালার ছয় আনা রকম মনুষ্যকে, - কত কোটী তা কে জানে, -যমপুরে প্রেরণ করাইয়া সেই দুর্বৎসর নিজে কালগ্রাসে পতিত হইল। ৭৭ সালে ঈশ্বর সুপ্রসন্ন হইলেন। সুবৃষ্টি হইল, পৃথিবী শ

28

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

তখন কোম্পানির অনেক রেশমের কুঠি ছিল । শিবগ্রামে ঐরূপ এক কুঠি ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই কুঠির ফ্যাক্টর অর্থাৎ অধ্যক্ষ ছিলেন। তখনকার কুঠিসকলের রক্ষার জন্য সুব্যবস্থা ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই জন্য কোন প্

29

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

শান্তি সাহেবকে ত্যাগ করিয়া হরিণীর ন্যায় ক্ষিপ্রচরণে বনমধ্যে কোথায় প্রবিষ্ট হইল। সাহেব কিছু পরে শুনিতে পাইলেন, স্ত্রীকণ্ঠে গীত হইতেছে, এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে? হরে মুরারে! হরে মুরারে! আবার কোথায

30

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ গোস্বামী একদা নগরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রশস্ত রাজপথ পরিত্যাগ করিয়া একটা অন্ধকার গলির ভিতর প্রবেশ করিলেন। গলির দুই পার্শ্বে উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী; সূর্যদেব মধ্যাহ্নে এক একবার গলির ভিতর উঁকি ম

31

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ ভাবিতে ভাবিতে মঠে চলিলেন। যাইতে যাইতে রাত্রি হইল। পথে একাকী যাইতেছিলেন। বনমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, বনমধ্যে আর এক ব্যক্তি তাঁহার আগে আগে যাইতেছে। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে হে যাও?

32

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

মঠে না গিয়া ভবানন্দ গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সেই জঙ্গলমধ্যে এক স্থানে এক প্রাচীন অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে। ভগ্নাবশিষ্ট ইষ্টকাদির উপর, লতাগুল্মকণ্টকাদি অতিশয় নিবিড়ভাবে জন্মিয়াছে। সেখানে অসংখ্য স

33

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
1
0
0

জীবানন্দ কুটীর হইতে বাহির হইয়া গেলে পর, শান্তিদেবী আবার সারঙ্গ লইয়া মৃদু মৃদু রবে গীত করিতে লাগিলেন, - “প্রলয়পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদম্‌ বিহিতবহিত্রচরিত্রখেদম্ কেশব ধৃতমীনশরীর জয় জগদীশ হরে।” গো

34

অষ্টম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ক্রমে সন্তানসম্প্রদায়মধ্যে সংবাদ প্রচারিত হইল যে, সত্যানন্দ আসিয়াছেন, সন্তানদিগের সঙ্গে কি কথা কহিবেন, এই বলিয়া তিনি সকলকে আহ্বান করিয়াছেন। তখন দলে দলে সন্তানসম্প্রদায় নদীতীরে আসিয়া সমবেত হইতে ল

35

নবম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

“গুডুম্ গুডুম্ গুম্।” ইংরেজের কামান ডাকিল। সেই শব্দ বিশাল কানন কম্পিত করিয়া প্রতিধ্বনিত হইল, “গুডুম্ গুডুম গুম্।” নদীর বাঁকে বাঁকে ফিরিয়া সেই ধ্বনি দূরস্থ আকাশপ্রান্ত হইতে প্রতিক্ষিপ্ত হইল, “গুডুম্

36

দশম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

সেই দশ সহস্র সন্তান “বন্দে মাতরম্” গায়িতে গায়িতে বল্লম উন্নত করিয়া অতি দ্রুত বেগে তোপশ্রেণীর উপর গিয়া পড়িল। গোলাবৃষ্টিতে খণ্ড বিখণ্ড বিদীর্ণ উৎপতিত অত্যন্ত বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, তথাপি সন্তানসৈন্য ফ

37

একাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

এই সময়ে টমাসের তোপগুলি দক্ষিণে আসিয়া পৌঁছিল। তখন সন্তানের দল একেবারে ছিন্নভিন্ন হইল, কেহ বাঁচিবার আর কোন আশা রহিল না। সন্তানেরা যে যেখানে পাইল, পলাইতে লাগিল । জীবানন্দ ধীরানন্দ তাহাদিগকে সংযত এবং এক

38

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

রণজয়ের পর অজয়তীরে সত্যানন্দকে ঘিরিয়া বিজয়ী বীরবর্গ নানা উৎসব করিতে লাগিল। কেবল সত্যানন্দ বিমর্ষ, ভবানন্দের জন্য। এতক্ষণ বৈষ্ণবদিগের রণবাদ্য অধিক ছিল না, কিন্তু সেই সময় কোথা হইতে সহস্র সহস্র কাড়

39

চতুর্থ খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণা হইল। সন্তানেরা দলে দলে যেখানে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কেহ “বন্দে মাতরম্” কেহ “জগদীশ হরে” বলিয়া গাইয়া বেড়াইতে লাগিল। কেহ শত্রুসেনার অস্ত্র, কেহ বস্ত্র অপহরণ

40

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

যখন শান্তি আপন আশ্রম ত্যাগ করিয়া গভীর রাত্রে নগরাভিমুখে যাত্রা করে, তখন জীবানন্দ আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন। শান্তি জীবানন্দকে বলিল, “আমি নগরে চলিলাম। মহেন্দ্রর স্ত্রীকে লইয়া আসিব। তুমি মহেন্দ্রকে বলিয়া

41

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পদচিহ্নে নূতন দুর্গমধ্যে, আজ সুখে সমবেত, মহেন্দ্র, কল্যাণী, জীবানন্দ, শান্তি, নিমাই, নিমাইয়ের স্বামী, সুকুমারী। সকলে সুখে সম্মিলিত। শান্তি নবীনানন্দের বেশে আসিয়াছিল। কল্যাণীকে যে রাত্রে আপন কুটীরে আ

42

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

উত্তর বাঙ্গালা মুসলমানের হাতছাড়া হইয়াছে। মুসলমান কেহই এ কথা মানেন না মনকে চোখ - ঠারেন – বলেন, কতকগুলি লুঠেড়াতে বড় দৌরাত্ম্য করিতেছে – শাসন করিতেছি। এইরূপ কত কাল - যাইত বলা যায় না; কিন্তু এই সময়ে

43

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

তখন দুই জনে কাণে কাণে কি পরামর্শ করিলেন। পরামর্শ করিয়া জীবানন্দ এক বনে লুকাইলেন। শান্তি আর এক বনে প্রবেশ করিয়া এক অদ্ভুত রহস্যে প্রবৃত্ত হইল। শান্তি মরিতে যাইতেছিল, কিন্তু মৃত্যুকালে স্ত্রীবেশ ধরিব

44

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

এডওয়ার্ডস পাকা ইংরেজ। ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে তাহার লোক ছিল। শীঘ্র তাহার নিকটে খবর পৌঁছিল যে, সেই বৈষ্ণবীটা লিণ্ডলে সাহেবকে ফেলিয়া দিয়া আপনি ঘোড়ায় চড়িয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। শুনিয়াই এডওয়ার্ডস বলিলে

45

সপ্তম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পূর্ণিমার রাত্রি! –সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির। সেই ঘোড়ার দড়বড়ি, বন্দুকের কড়কড়ি, কামানের গুম্ গুম্ – সর্বব্যাপী ধূম, আর কিছুই নাই। কেহ হুরে বলিতেছে না – কেহ হরিধ্বনি করিতেছে না । - শব্দ করিতেছে

46

অষ্টম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকে কিছু না বলিয়া আনন্দমঠে চলিয়া আসিলেন। সেখানে গভীর রাত্রে, বিষ্ণুমণ্ডপে বসিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত। এমত সময়ে সেই চিকিৎসক সেখানে আসিয়া দেখা দিলেন। দেখিয়া সত্যানন্দ

---