shabd-logo

দ্বিতীয় খণ্ড: প্রথম পরিচ্ছেদ

6 November 2023

3 Viewed 3

শান্তির অল্পবয়সে, অতি শৈশবে মাতৃবিয়োগে হইয়াছিল। যে সকল উপাদানে শান্তির চরিত্র গঠিত, ইহা তাহার মধ্যে একটি প্রধান। তাহার পিতা অধ্যাপক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার গৃহে অন্য স্ত্রীলোক কেহ ছিল না।

কাজেই শান্তির পিতা যখন টোলে ছাত্রদিগকে পড়াইতেন, শান্তি গিয়া তাঁহার কাছে বসিয়া থাকিত। টোলে কতকগুলি ছাত্র বাস করিত; শান্তি অন্য সময়ে তাহাদিগের কাছে বসিয়া খেলা করিত, তাহাদিগের কোলে পিঠে চড়িত; তাহারাও শান্তিকে আদর করিত।

এইরূপ শৈশবে নিয়ত পুরুষসাহচর্যের প্রথম ফল এই হইল যে, শান্তি মেয়ের মত কাপড় পরিতে শিখিল না, অথবা শিখিয়া পরিত্যাগ করিল। ছেলের মত কোঁচা করিয়া কাপড় পরিতে আরম্ভ করিল, কেহ কখন মেয়ে কাপড় পরাইয়া দিলে, তাহা খুলিয়া ফেলিত, আবার কোঁচা করিয়া পরিত। টোলের ছাত্রেরা খোঁপা বাঁধে না; অতএব শান্তিও কখন খোঁপা বাঁধিত না – কে বা তার খোঁপা বাঁধিয়া দেয়? - টোলের ছাত্রেরা কাঠের চিরুনি দিয়া তাহার চুল আঁচড়াইয়া দিত, চুলগুলা কুণ্ডলী করিয়া শান্তির পিঠে, কাঁধে, বাহুতে ও গালের উপর দুলিত। ছাত্রেরা ফোঁটা করিত, চন্দন মাখিত; শান্তিও ফোঁটা করিত, চন্দন মাখিত। যজ্ঞোপবীত গলায় দিতে পাইত না বলিয়া শান্তি বড় কাঁদিত। কিন্তু সন্ধ্যাহ্নিকের সময়ে ছাত্রদিগের কাছে বসিয়া, তাহাদের অনুকরণ করিতে ছাড়িত না। ছাত্রেরা অধ্যাপকের অবর্তমানে, অশ্লীল সংস্কৃতের দুই চারিটা বুকনি দিয়া, দুই একটা আদি রসাশ্রিত গল্প করিতেন, টিয়া পাখীর মত শান্তি সেগুলিও শিখিল – টিয়া পাখীর মত, তাহার অর্থ কি, তাহা কিছুই জানিত না। -

দ্বিতীয় ফল এই হইল যে, শান্তি একটু বড় হইলেই ছাত্রেরা যাহা পড়িত, শান্তিও তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে শিখিতে আরম্ভ করিল। ব্যাকরণের এক বর্ণ জানে না, কিন্তু ভট্টি, রঘু, কুমার, নৈষধাদির শ্লোক ব্যাখ্যা সহিত মুখস্থ করিতে লাগিল। দেখিয়া শুনিয়া, শান্তির পিতা “যদ্ভবিষ্যতি তদ্ভবিষ্যতি” বলিয়া শান্তিকে মুগ্ধবোধ আরম্ভ করাইলেন। শান্তি বড় শীঘ্র শীঘ্র শিখিতে লাগিল। অধ্যাপক বিস্ময়াপন্ন হইলেন । ব্যাকরণের সঙ্গে সঙ্গে দুই একখানা সাহিত্যও পড়াইলেন। তার পর সব গোলমাল হইয়া গেল। পিতার পরলোকপ্রাপ্তি হইল। তখন শান্তি নিরাশ্রয়। টোল উঠিয়া গেল; ছাত্রেরা চলিয়া গেল। কিন্তু শান্তিকে তাহারা ভালবাসিত - শান্তিকে পরিত্যাগ করিয়া যাইতে পারিল না। একজন তাহাকে দয়া করিয়া আপনার গৃহে লইয়া গেল। ইনিই পশ্চাৎ সন্তানসম্প্রদায়মধ্যে প্রবেশ করিয়া জীবানন্দ নাম গ্রহণ করিয়াছিলেন জীবানন্দই বলিতে থাকিব। তখন জীবানন্দের পিতামাতা

। আমরা তাঁহাকে বর্তমান। তাঁহাদিগের নিকট জীবানন্দ কন্যাটির সবিশেষ পরিচয় দিলেন। পিতামাতা জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন এ পরের মেয়ের দায়ভার নেয় কে?” জীবানন্দ বলিলেন, “আমিই আনিয়াছি – আমিই দায় ভার গ্রহণ করিব।” পিতা-মাতা বলিলেন, “ভালই।” জীবানন্দ অনূঢ় - - শান্তির বিবাহবয়স উপস্থিত। অতএব জীবানন্দ তাহাকে বিবাহ করিলেন।

বিবাহের পর সকলেই অনুতাপ করিতে লাগিলেন। সকলেই বুঝিলেন, “কাজটা ভাল হয় নাই।” শান্তি কিছুতেই মেয়ের মত কাপড় পরিল না; কিছুতেই চুল বাঁধিল না। সে বাটীর ভিতর থাকিত না; পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মিলিয়া খেলা করিত। জীবানন্দের বাড়ীর নিকটেই জঙ্গল, শান্তি জঙ্গলের ভিতর একা প্রবেশ করিয়া কোথায় ময়ূর, কোথায় হরিণ, কোথায় দুর্লভ ফুল-ফল, এই সকল খুঁজিয়া বেড়াইত। শ্বশুর-শাশুড়ী প্রথমে নিষেধ, পরে ভর্ৎসনা, পরে প্রহার করিয়া শেষে ঘরে শিকল দিয়া শান্তিকে কয়েদ রাখিতে আরম্ভ করিল। পীড়াপীড়িতে শান্তি বড় জ্বালাতন হইল। একদিন দ্বার খোলা পাইয়া শান্তি কাহাকে না বলিয়া গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল।

জঙ্গলের ভিতর বাছিয়া বাছিয়া ফুল তুলিয়া কাপড় ছোবাইয়া শান্তি বাচ্চা সন্ন্যাসী সাজিল। তখন বাঙ্গালা জুড়িয়া দলে দলে সন্ন্যাসী ফিরিত। শান্তি ভিক্ষা করিয়া খাইয়া জগন্নাথক্ষেত্রের রাস্তায় গিয়া দাঁড়াইল। অল্পকালেই সেই পথে এক দল সন্ন্যাসী দেখা দিল। শান্তি তাহাদের সঙ্গে মিশিল ।

তখন সন্ন্যাসীরা এখনকার সন্ন্যাসীদের মত ছিল না। তাহারা দলবদ্ধ, সুশিক্ষিত, বলিষ্ঠ, যুদ্ধবিশারদ, এবং অন্যান্য গুণে গুনবান ছিল। তাহারা সচরাচর একপ্রকার রাজবিদ্রোহী রাজার রাজস্ব লুটিয়া - খাইত। বলিষ্ঠ বালক পাইলেই তাহারা অপহরণ করিত। তাহাদিগকে সুশিক্ষিত করিয়া আপনাদিগের সম্প্রদায়ভুক্ত করিত। এজন্য তাহাদিগকে ছেলেধরা বলিত।

শান্তি বালকসন্ন্যাসীবেশে ইহাদের এক সম্প্রদায়মধ্যে মিশিল। তাহারা প্রথমে তাহার কোমলাঙ্গ দেখিয়া তাহাকে গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক ছিল না, কিন্তু শান্তির বুদ্ধির প্রাখর্য, চতুরতা, এবং কর্মদক্ষতা দেখিয়া আদর করিয়া দলে লইল। শান্তি তাহাদিগের দলে থাকিয়া ব্যায়াম করিত, অস্ত্রশিক্ষা করিত, এবং পরিশ্রমসহিষ্ণু হইয়া উঠিল। তাহাদিগের সঙ্গে থাকিয়া অনেক দেশবিদেশ পর্যটন করিল; অনেক লড়াই দেখিল, এবং অনেক কাজ শিখিল।

ক্রমশঃ তাহার যৌবনলক্ষণ দেখা দিল। অনেক সন্ন্যাসী জানিল যে, এ ছদ্মবেশিনী স্ত্রীলোক। কিন্তু সন্ন্যাসীরা সচরাচর জিতেন্দ্রিয়; কেহ কোন কথা কহিল না।

সন্ন্যাসীদিগের মধ্যে অনেকে পণ্ডিত ছিল। শান্তি সংস্কৃতে কিছু ব্যুৎপত্তি লাভ করিয়াছে দেখিয়া, একজন পণ্ডিত সন্ন্যাসী তাহাকে পড়াইতে লাগিলেন। সচরাচর সন্ন্যাসীরা জিতেন্দ্রিয় বলিয়াছি, কিন্তু সকলে নহে। এই পণ্ডিতও নহেন। অথবা তিনি শান্তির অভিনব যৌবনবিকাশজনিত লাবণ্যে মুগ্ধ হইয়া ইন্দ্রিয় কর্তৃক পুনর্বার নিপীড়িত হইতে লাগিলেন। শিষ্যাকে আদিরসাশ্রিত কাব্যসকল পড়াইতে আরম্ভ করিলেন, আদিরসাশ্রিত কবিতাগুলির অশ্রাব্য ব্যাখ্যা শুনাইতে লাগিলেন। তাহাতে শান্তির কিছু অপকার না হইয়া কিছু উপকার হইল। লজ্জা কাহাকে বলে, শান্তি তাহা শিখে নাই; এখন স্ত্রীস্বভাবসুলভ লজ্জা আসিয়া আপনি উপস্থিত হইল। পৌরুষ চরিত্রের উপর নির্মল স্ত্রীচরিত্রের অপূর্ব প্রভা আসিয়া পড়িয়া, শান্তির গুণগ্রাম উদ্ভাসিত করিতে লাগিল। শান্তি পড়া ছাড়িয়া দিল।

ব্যাধ যেমন হরিণীর প্রতি ধাবমান হয়, শান্তির অধ্যাপক শান্তিকে দেখিলেই তাহার প্রতি সেইরূপ ধাবমান হইতে লাগিলেন। কিন্তু শান্তি ব্যায়ামাদির দ্বারা পুরুষেরও দুর্লভ বলসঞ্চয় করিয়াছিল, অধ্যাপক নিকটে আসিলেই তাঁহাকে কীলঘুষার দ্বারা পূজিত করিত – কীলঘুষাগুলি সহজ নহে। এক দিন সন্ন্যাসী - ঠাকুর শান্তিকে নির্জনে পাইয়া বড় জোর করিয়া শান্তির হাতখানা ধরিলেন, শান্তি ছাড়াইতে পারিল না। কিন্তু সন্ন্যাসীর দুর্ভাগ্যক্রমে হাতখানা শান্তির বাঁ হাত; দাহিন হাতে শান্তি তাহার কপালে এমন জোরে ঘুষা মারিল যে, সন্ন্যাসী মূর্ছিত হইয়া পড়িল। শান্তি সন্ন্যাসীসম্প্রদায় পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিল।

শান্তি ভয়শূন্যা। একাই স্বদেশের সন্ধানে যাত্রা করিল। সাহসের ও বাহুবলের প্রভাবে নির্বিঘ্নে চলিল। ভিক্ষা করিয়া অথবা বন্য ফলের দ্বারা উদর পোষণ করিতে করিতে, এবং অনেক মারামারিতে জয়ী হইয়া, শ্বশুরালয়ে আসিয়া উপস্থিত হইল। দেখিল, শ্বশুর স্বর্গারোহণ করিয়াছেন। কিন্তু শাশুড়ী তাহাকে গৃহে স্থান দিলেন না, - জাতি যাইবে। শান্তি বাহির হইয়া গেল। জীবানন্দ বাড়ী ছিলেন। তিনি শান্তির অনুবর্তী হইলেন। পথে শান্তিকে ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কেন আমার গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিলে? এত দিন কোথায় ছিলে?” শান্তি সকল সত্য বলিল। জীবানন্দ সত্য মিথ্যা চিনিতে পারিতেন। জীবানন্দ শান্তির কথায় বিশ্বাস করিলেন ।

অপ্সরাগণের ভ্রূবিলাসযুক্ত কটাক্ষের জ্যোতি লইয়া অতি যত্নে নির্মিত যে সম্মোহন শর, পুষ্পধন্বা তাহা পরিণীত দম্পতির প্রতি অপব্যয় করেন না। ইংরেজ পূর্ণিমার রাত্রে রাজপথে গ্যাস জ্বালে; বাঙ্গালী তেলা মাথায় তেল ঢালিয়া দেয়; মনুষ্যের কথা দূরে থাক, চন্দ্রদেব, সূর্যদেবের পরেও কখন কখন আকাশে উদিত থাকেন, ইন্দ্র সাগরে বৃষ্টি করেন; যে সিন্দুকে টাকা ছাপাছাপি, কুবের সেই সিন্দুকেই টাকা লইয়া যান; যম যার প্রায় সবগুলিকেই গ্রহণ করিয়াছেন, তারই বাকিটিকে লইয়া যান। কেবল রতিপতির এমন নির্বুদ্ধির কাজ দেখা যায় না। যেখানে গাঁটছড়া বাঁধা হইল – সেখানে আর তিনি পরিশ্রম করেন না, - প্রজাপতির উপর সকল ভার দিয়া, যাহার হৃদয়শোণিত পান করিতে পারিবেন, তাহার সন্ধানে যান। কিন্তু আজ বোধ হয় পুষ্পধন্বার কোন কাজ ছিল না - হঠাৎ দুইটা ফুলবাণ অপব্যয় করিলেন। একটা আসিয়া জীবানন্দের হৃদয় ভেদ করিল – আর একটা আসিয়া শান্তির বুকে পড়িয়া, প্রথম শান্তিকে জানাইল যে, - সে বুক মেয়েমানুষের বুক-বড় নরম জিনিস। নবমেঘনিমুক্ত প্রথম জলকণা নিষিক্ত পুষ্পকলিকার ন্যায়, শান্তি সহসা ফুটিয়া উঠিয়া, উৎফুল্লনয়নে জীবানন্দের মুখপানে চাহিল।

জীবানন্দ বলিল, “আমি তোমাকে পরিত্যাগ করিব না। আমি যতক্ষণ না ফিরিয়া আসি, ততক্ষণ তুমি দাঁড়াইয়া থাক।”

শান্তি বলিল, “তুমি ফিরিয়া আসিবে ত?” জীবানন্দ কিছু উত্তর না করিয়া, কোন দিক না চাহিয়া, সেই পথিপার্শ্বস্থ নারিকেলকুঞ্জের ছায়ায় শান্তির অধরে অধর দিয়া সুধাপান করিলাম মনে করিয়া, প্রস্থান করিলেন। মাকে বুঝাইয়া, জীবানন্দ মার কাছে বিদায় লইয়া আসিলেন। ভৈরবীপুরে সম্প্রতি তাঁহার ভগিনী নিমাইয়ের বিবাহ হইয়াছিল। ভগিনীপতির সঙ্গে জীবানন্দের একটু সম্প্রীতি জন্মিয়াছিল। জীবানন্দ শান্তিকে লইয়া সেইখানে গেলেন। ভগিনীপতি একটু ভূমি দিল। জীবানন্দ তাহার উপর এক কুটীর নির্মাণ করিলেন। তিনি শান্তিকে লইয়া সেইখানে সুখে বাস করিতে লাগিলেন। স্বামিসহবাসে শান্তির চরিত্রের পৌরুষ দিন দিন বিলীন বা প্রচ্ছন্ন হইয়া আসিল। রমণীয় রমণীচরিত্রের নিত্য নরোন্মেষ হইতে লাগিল। সুখস্বপ্নের মত তাঁহাদের জীবন নির্বাহিত হইত; কিন্তু সহসা সে সুখস্বপ্ন ভঙ্গ হইল । জীবানন্দ সত্যানন্দের হাতে পড়িয়া, সন্তানধর্ম গ্রহণপূর্বক, শান্তিকে পরিত্যাগ করিয়া গেলেন। পরিত্যাগের পর তাঁহাদের প্রথম সাক্ষাৎ নিমাইয়ের কৌশলে ঘটিল। তাহাই আমি পূর্বপরিচ্ছেদে বর্ণিত করিয়াছি।

46
Articles
আনন্দমঠ
0.0
"আনন্দমঠ" হল 1882 সালে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি 18 শতকের শেষের দিকে সেট করা হয়েছে এবং ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। উপন্যাসটি একদল সন্ন্যাসীর যাত্রা অনুসরণ করে যারা ব্রিটিশ নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি গোপন সমাজ গঠন করে। তারা আনন্দমঠ, একটি মঠে আশ্রয় নেয় এবং একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা সত্যানন্দের নেতৃত্বে থাকে। উপন্যাসটি দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। এটি তার জাতীয়তাবাদী উত্সাহের জন্য পরিচিত এবং বিখ্যাত দেশাত্মবোধক গান "বন্দে মাতরম" এর রচনার জন্যও বিখ্যাত। "আনন্দমঠ" ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম এবং অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে।
1

প্ৰথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

১১৭৬ সালে গ্রীষ্মকালে এক দিন পদচিহ্ন গ্রামে রৌদ্রের উত্তাপ বড় প্রবল। গ্রামখানি গৃহময়, কিন্তু লোক দেখি না। বাজারে সারি সারি দোকান, হাটে সারি সারি চালা, পল্লীতে পল্লীতে শত শত মৃন্ময় গৃহ, মধ্যে মধ্যে

2

প্ৰথম খণ্ড দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্ৰ চলিয়া গেল। কল্যাণী একা বালিকা লইয়া সেই জনশূন্য স্থানে প্রায় অন্ধকার কুটীরমধ্যে চারি দিক নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। তাঁহার মনে মনে বড় ভয় হইতেছিল। কেহ কোথাও নাই, মনুষ্যমাত্রের কোন শব্দ পাওয়া যা

3

প্ৰথম খণ্ড : তৃতীয় পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

যে বনমধ্যে দস্যুরা কল্যাণীকে নামাইল, সে বন অতি মনোহর। আলো নাই, শোভা দেখে এমন চক্ষুও নাই, দরিদ্রের হৃদয়ান্তর্গত সৌন্দর্যের ন্যায় সে বনের সৌন্দর্য অদৃষ্ট রহিল। দেশে আহার থাকুক বা না থাকুক বনে ফুল আছে,

4

প্ৰথম খণ্ড : চতুর্থ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

বন অত্যন্ত অন্ধকার, কল্যাণী তাহার ভিতর পথ পায় না। বৃক্ষলতাকণ্টকের ঘনবিন্যাসে একে পথ নাই, তাহাতে আবার ঘনান্ধকার। বৃক্ষলতাকণ্টক ভেদ করিয়া কল্যাণী বনমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিলেন। মেয়েটির গায়ে কাঁটা ফুট

5

প্ৰথম খণ্ড : পঞ্চম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই বনমধ্যে এক প্রকাণ্ড ভূমিখণ্ডে ভগ্নশিলাখন্ডসকলে পরিবেষ্টিত হইয়া একটি বড় মঠ আছে। পুরাণতত্ত্ববিদেরা দেখিলে বলিতে পারিতেন, ইহা পূর্বকালে বৌদ্ধদিগের বিহার ছিল- তার পরে হিন্দুর মঠ হইয়াছে। অট্টালিকাশ্

6

প্ৰথম খণ্ড : ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি অনেক। চাঁদ মাথার উপর। পূর্ণচন্দ্র নহে, আলো তত প্রখর নহে। এক অতি বিস্তীর্ণ প্রান্তরের উপর সেই অন্ধকারের ছায়াবিশিষ্ট অস্পষ্ট আলো পড়িয়াছে। সে আলোতে মাঠের এপার ওপার দেখা যাইতেছে না। মাঠে কি আছে,

7

প্ৰথম খণ্ড : সপ্তম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

চটীতে বসিয়া ভাবিয়া কোন ফলোদয় হইবে না বিবেচনা করিয়া মহেন্দ্র গাত্রোত্থান করিলেন। নগরে গিয়া রাজপুরুষদিগের সহায়তায় স্ত্রী-কন্যার অনুসন্ধান করিবেন, এই বিবেচনায় সেই দিকেই চলিলেন। কিছু দূর গিয়া পথি

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর আজ্ঞা পাইয়া ভবানন্দ মৃদু মৃদু হরিনাম করিতে করিতে, যে চট্টীতে মহেন্দ্ৰ বসিয়াছিল, সেই চটার দিকে চলিলেন। সেইখানেই মহেন্দ্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব বিবেচনা করিলেন। সেসময়ে ইংরেজের কৃত আধুনিক

9

নবম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র শকট হইতে নামিয়া একজন সিপাহীর প্রহরণ কাড়িয়া লইয়া যুদ্ধে যোগ দিবার উদ্যোপী হইয়াছিলেন। কিন্তু এমন সময়ে তাঁহার স্পষ্টই বোধ হইল যে, ইহারা দস্যু; ধনাপহরণ জনাই সিপাহীদিগকে আক্রমণ করিয়াছে। এইর

10

দশম পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

সেই জ্যোৎস্নাময়ী রজনীতে দুই জনে নীরবে প্রান্তর পার হইয়া চলিল। মহেন্দ্র নীরব, শোককাতর, গর্বিত, কিছু কৌতূহলী। ভবানন্দ সহসা ভিন্নমূর্তি ধারণ করিলেন। সে স্থিরমূর্তি ধীরপ্রকৃতি সন্ন্যাসী আর নাই; সেই রণন

11

একাদশ পরিচ্ছেদ

4 November 2023
0
0
0

রাত্রি প্রভাত হইয়াছে। সেই জনহীন কানন, - এতক্ষণ অন্ধকার, শব্দহীন ছিল – এখন আলোকময় পক্ষিকুজনশব্দিত হইয়া আনন্দময় হইল। সেই আনন্দময় প্রভাতে আনন্দময় কাননে, “আনন্দমঠে”, সত্যানন্দ ঠাকুর হরিণচর্মে বসিয়া

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

অনেক দুঃখের পর মহেন্দ্র আর কল্যাণীতে সাক্ষাৎ হইল। কল্যাণী কাঁদিয়া লুটাইয়া পড়িল। মহেন্দ্ৰ আরও কাঁদিল। কাঁদাকাটার পর চোখ মুছার ধুম পড়িয়া গেল। যত বার চোখ মুছা যায়, ততবার আবার জল পড়ে। জলপড়া বন্ধ ক

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

এদিকে রাজধানীতে রাজপথে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। রব উঠিল যে, রাজসরকার হইতে কলিকাতায় যে খাজনা চালান যাইতেছিল, সন্ন্যাসীরা তাহা মারিয়া লইয়াছে। তখন রাজাজ্ঞানুসারে সন্ন্যাসী ধরিতে সিপাহী বরকন্দাজ ছুটিতে লা

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

রাত্রি উপস্থিত। কারাগারমধ্যে বদ্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বদ্ধ হইয়াছি। বল হরে মুরারে!” মহেন্দ্র কাতর স্বরে বলিলেন, "হরে মুরারে!” স। কাতর কেন বাপু? তুম

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

5 November 2023
0
0
0

ব্রহ্মচারীর গান অনেকে শুনিয়াছিল। অন্যান্য লোকের মধ্যে জীবানন্দের কাণে সে গান গেল। মহেন্দ্রের অনুবর্তী হইবার তাহার প্রতি আদেশ ছিল, ইহা পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। পথিমধ্যে একটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সে স্ত্রীলোকের বয়স প্রায় পঁচিশ বৎসর, কিন্তু দেখিলে নিমাইয়ের অপেক্ষা অধিকবয়স্কা বলিয়া বোধ হয় না। মলিন, গ্রন্থিযুক্ত বসন পরিয়া সেই গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে, বোধ হইল যেন, গৃহ আলো হইল । বোধ হইল, পাতায

17

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ মঠের ভিতর বসিয়া হরিগুণ গান করিতেছিলেন। এমত সময়ে বিষণ্নমুখে জ্ঞানানন্দনামা একজন অতি তেজস্বী সন্তান তাঁহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভবানন্দ বলিলেন, “গোঁসাই, মুখ অত ভারি কেন?” জ্ঞানানন্দ বলি

18

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সন্ধ্যা না হইতেই সন্তানসম্প্রদায় সকলেই জানিতে পারিয়াছিল যে, সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী আর মহেন্দ্র, দুইজনে বন্দী হইয়া নগরের কারাগারে আবদ্ধ আছে। তখন একে একে, দুয়ে দুয়ে, দশে দশে, শতে শতে সন্তানসম্প্রদায়

19

দ্বিতীয় খণ্ড: প্রথম পরিচ্ছেদ

6 November 2023
1
0
0

শান্তির অল্পবয়সে, অতি শৈশবে মাতৃবিয়োগে হইয়াছিল। যে সকল উপাদানে শান্তির চরিত্র গঠিত, ইহা তাহার মধ্যে একটি প্রধান। তাহার পিতা অধ্যাপক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁহার গৃহে অন্য স্ত্রীলোক কেহ ছিল না। কাজেই শান

20

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

জীবানন্দ চলিয়া গেলে পর শান্তি নিমাইয়ের দাওয়ার উপর গিয়া বসিল। নিমাই মেয়ে কোলে করিয়া তাহার নিকট আসিয়া বসিল। শান্তির চোখে আর জল নাই; শান্তি চোখ মুছিয়াছে, মুখ প্রফুল্ল করিয়াছে, একটু একটু হাসিতেছে

21

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

পরদিন আনন্দমঠের ভিতর নিভৃত কক্ষে বসিয়া ভগ্নোৎসাহ সন্তাননায়ক তিন জন কথোপকথন করিতেছিলেন। জীবানন্দ সত্যানন্দকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহারাজ! দেবতা আমাদিগের প্রতি এমন অপ্রসন্ন কেন? কি দোষে আমরা মুসলমানের নি

22

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

6 November 2023
0
0
0

সায়াহ্নকৃত্য সমাপনান্তে মহেন্দ্রকে ডাকিয়া সত্যানন্দ আদেশ করিলেন, “তোমার কন্যা জীবিত আছে।” ম। কোথায় মহারাজ? স। তুমি আমাকে মহারাজ বলিতেছ কেন? ম। সকলেই বলে, তাই। মঠের অধিকারীদিগকে রাজা সম্বোধন করিত

23

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ কথাবার্তা সমাপনান্তে মহেন্দ্রের সহিত সেই মঠস্থ দেবলয়াভ্যন্তরে, যেখানে সেই অপূর্ব শোভাময় প্রকাণ্ডাকার চতুর্ভুজ মূর্তি বিরাজিত, তথায় প্রবেশ করিলেন। সেখানে তখন অপূর্ব শোভা। রজত, স্বর্ণ ও রত্

24

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

দীক্ষা সমাপনান্তে সত্যানন্দ, মহেন্দ্ৰকে অতি নিভৃত স্থানে লইয়া গেলেন। উভয়ে উপবেশন করিলে সত্যানন্দ বলিতে লাগিলেন, “দেখ বৎস! তুমি যে এই মহাব্রত গ্রহণ করিলে, ইহাতে ভগবান আমাদের প্রতি অনুকূল বিবেচনা করি।

25

সপ্তম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

মহেন্দ্র সত্যানন্দের পাদবন্দনা করিয়া বিদায় হইলে, তাঁহার সঙ্গে যে দ্বিতীয় শিষ্য সেই দিন দীক্ষিত হইয়াছিলেন, তিনি আসিয়া সত্যানন্দকে প্রণাম করিলেন। সত্যানন্দ আশীর্বাদ করিয়া কৃষ্ণাজিনের উপর বসিতে অনু

26

অষ্টম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

প্রদীপ হাতে সে রাত্রি শান্তি মঠে থাকিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন। অতএব ঘর খুঁজিতে লাগিলেন। অনেক ঘর খালি পড়িয়া আছে। গোবর্ধন নামে এক জন পরিচারক সেও ক্ষুদ্রদরের সন্তান - করিয়া ঘর দেখাইয়া বেড়াইতে লাগিল। ক

27

তৃতীয় খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

কাল ৭৬ সাল ঈশ্বরকৃপায় শেষ হইল। বাঙ্গালার ছয় আনা রকম মনুষ্যকে, - কত কোটী তা কে জানে, -যমপুরে প্রেরণ করাইয়া সেই দুর্বৎসর নিজে কালগ্রাসে পতিত হইল। ৭৭ সালে ঈশ্বর সুপ্রসন্ন হইলেন। সুবৃষ্টি হইল, পৃথিবী শ

28

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

তখন কোম্পানির অনেক রেশমের কুঠি ছিল । শিবগ্রামে ঐরূপ এক কুঠি ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই কুঠির ফ্যাক্টর অর্থাৎ অধ্যক্ষ ছিলেন। তখনকার কুঠিসকলের রক্ষার জন্য সুব্যবস্থা ছিল। ডনিওয়ার্থ সাহেব সেই জন্য কোন প্

29

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

শান্তি সাহেবকে ত্যাগ করিয়া হরিণীর ন্যায় ক্ষিপ্রচরণে বনমধ্যে কোথায় প্রবিষ্ট হইল। সাহেব কিছু পরে শুনিতে পাইলেন, স্ত্রীকণ্ঠে গীত হইতেছে, এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে? হরে মুরারে! হরে মুরারে! আবার কোথায

30

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

7 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ গোস্বামী একদা নগরে গিয়া উপস্থিত হইলেন। প্রশস্ত রাজপথ পরিত্যাগ করিয়া একটা অন্ধকার গলির ভিতর প্রবেশ করিলেন। গলির দুই পার্শ্বে উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী; সূর্যদেব মধ্যাহ্নে এক একবার গলির ভিতর উঁকি ম

31

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ভবানন্দ ভাবিতে ভাবিতে মঠে চলিলেন। যাইতে যাইতে রাত্রি হইল। পথে একাকী যাইতেছিলেন। বনমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, বনমধ্যে আর এক ব্যক্তি তাঁহার আগে আগে যাইতেছে। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে হে যাও?

32

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

মঠে না গিয়া ভবানন্দ গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সেই জঙ্গলমধ্যে এক স্থানে এক প্রাচীন অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ আছে। ভগ্নাবশিষ্ট ইষ্টকাদির উপর, লতাগুল্মকণ্টকাদি অতিশয় নিবিড়ভাবে জন্মিয়াছে। সেখানে অসংখ্য স

33

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
1
0
0

জীবানন্দ কুটীর হইতে বাহির হইয়া গেলে পর, শান্তিদেবী আবার সারঙ্গ লইয়া মৃদু মৃদু রবে গীত করিতে লাগিলেন, - “প্রলয়পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদম্‌ বিহিতবহিত্রচরিত্রখেদম্ কেশব ধৃতমীনশরীর জয় জগদীশ হরে।” গো

34

অষ্টম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

ক্রমে সন্তানসম্প্রদায়মধ্যে সংবাদ প্রচারিত হইল যে, সত্যানন্দ আসিয়াছেন, সন্তানদিগের সঙ্গে কি কথা কহিবেন, এই বলিয়া তিনি সকলকে আহ্বান করিয়াছেন। তখন দলে দলে সন্তানসম্প্রদায় নদীতীরে আসিয়া সমবেত হইতে ল

35

নবম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

“গুডুম্ গুডুম্ গুম্।” ইংরেজের কামান ডাকিল। সেই শব্দ বিশাল কানন কম্পিত করিয়া প্রতিধ্বনিত হইল, “গুডুম্ গুডুম গুম্।” নদীর বাঁকে বাঁকে ফিরিয়া সেই ধ্বনি দূরস্থ আকাশপ্রান্ত হইতে প্রতিক্ষিপ্ত হইল, “গুডুম্

36

দশম পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

সেই দশ সহস্র সন্তান “বন্দে মাতরম্” গায়িতে গায়িতে বল্লম উন্নত করিয়া অতি দ্রুত বেগে তোপশ্রেণীর উপর গিয়া পড়িল। গোলাবৃষ্টিতে খণ্ড বিখণ্ড বিদীর্ণ উৎপতিত অত্যন্ত বিশৃঙ্খল হইয়া গেল, তথাপি সন্তানসৈন্য ফ

37

একাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

এই সময়ে টমাসের তোপগুলি দক্ষিণে আসিয়া পৌঁছিল। তখন সন্তানের দল একেবারে ছিন্নভিন্ন হইল, কেহ বাঁচিবার আর কোন আশা রহিল না। সন্তানেরা যে যেখানে পাইল, পলাইতে লাগিল । জীবানন্দ ধীরানন্দ তাহাদিগকে সংযত এবং এক

38

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

8 November 2023
0
0
0

রণজয়ের পর অজয়তীরে সত্যানন্দকে ঘিরিয়া বিজয়ী বীরবর্গ নানা উৎসব করিতে লাগিল। কেবল সত্যানন্দ বিমর্ষ, ভবানন্দের জন্য। এতক্ষণ বৈষ্ণবদিগের রণবাদ্য অধিক ছিল না, কিন্তু সেই সময় কোথা হইতে সহস্র সহস্র কাড়

39

চতুর্থ খণ্ড : প্রথম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণা হইল। সন্তানেরা দলে দলে যেখানে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কেহ “বন্দে মাতরম্” কেহ “জগদীশ হরে” বলিয়া গাইয়া বেড়াইতে লাগিল। কেহ শত্রুসেনার অস্ত্র, কেহ বস্ত্র অপহরণ

40

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

যখন শান্তি আপন আশ্রম ত্যাগ করিয়া গভীর রাত্রে নগরাভিমুখে যাত্রা করে, তখন জীবানন্দ আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন। শান্তি জীবানন্দকে বলিল, “আমি নগরে চলিলাম। মহেন্দ্রর স্ত্রীকে লইয়া আসিব। তুমি মহেন্দ্রকে বলিয়া

41

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পদচিহ্নে নূতন দুর্গমধ্যে, আজ সুখে সমবেত, মহেন্দ্র, কল্যাণী, জীবানন্দ, শান্তি, নিমাই, নিমাইয়ের স্বামী, সুকুমারী। সকলে সুখে সম্মিলিত। শান্তি নবীনানন্দের বেশে আসিয়াছিল। কল্যাণীকে যে রাত্রে আপন কুটীরে আ

42

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

উত্তর বাঙ্গালা মুসলমানের হাতছাড়া হইয়াছে। মুসলমান কেহই এ কথা মানেন না মনকে চোখ - ঠারেন – বলেন, কতকগুলি লুঠেড়াতে বড় দৌরাত্ম্য করিতেছে – শাসন করিতেছি। এইরূপ কত কাল - যাইত বলা যায় না; কিন্তু এই সময়ে

43

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

তখন দুই জনে কাণে কাণে কি পরামর্শ করিলেন। পরামর্শ করিয়া জীবানন্দ এক বনে লুকাইলেন। শান্তি আর এক বনে প্রবেশ করিয়া এক অদ্ভুত রহস্যে প্রবৃত্ত হইল। শান্তি মরিতে যাইতেছিল, কিন্তু মৃত্যুকালে স্ত্রীবেশ ধরিব

44

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

এডওয়ার্ডস পাকা ইংরেজ। ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে তাহার লোক ছিল। শীঘ্র তাহার নিকটে খবর পৌঁছিল যে, সেই বৈষ্ণবীটা লিণ্ডলে সাহেবকে ফেলিয়া দিয়া আপনি ঘোড়ায় চড়িয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। শুনিয়াই এডওয়ার্ডস বলিলে

45

সপ্তম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

পূর্ণিমার রাত্রি! –সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির। সেই ঘোড়ার দড়বড়ি, বন্দুকের কড়কড়ি, কামানের গুম্ গুম্ – সর্বব্যাপী ধূম, আর কিছুই নাই। কেহ হুরে বলিতেছে না – কেহ হরিধ্বনি করিতেছে না । - শব্দ করিতেছে

46

অষ্টম পরিচ্ছেদ

9 November 2023
0
0
0

সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকে কিছু না বলিয়া আনন্দমঠে চলিয়া আসিলেন। সেখানে গভীর রাত্রে, বিষ্ণুমণ্ডপে বসিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত। এমত সময়ে সেই চিকিৎসক সেখানে আসিয়া দেখা দিলেন। দেখিয়া সত্যানন্দ

---