shabd-logo

তৃতীয় খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : ভূতপূর্ব্বে

18 November 2023

2 Viewed 2

“কষ্টোহয়ং খলু ভৃত্যভাবঃ।"

রত্নাবলী

যখন নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে লইয়া চটি হইতে যাত্রা করেন, তখন মতিবিবি পথান্তরে বর্দ্ধমানাভিমুখে যাত্রা করিলেন। যতক্ষণ মতিবিবি পথবাহন করেন, ততক্ষণ আমরা তাঁহার পূর্ব্ববৃত্তান্ত কিছু বলি। মতির চরিত্র মহাদোষ কলুষিত, মহদৃগুণেও শোভিত। এরূপ চরিত্রের বিস্তারিত বৃত্তান্তে পাঠক মহাশয় অসন্তুষ্ট হইবেন না ।

যখন ইহার পিতা মহম্মদীয় ধর্মাবলম্বন করিলেন, তখন ইহার হিন্দু নাম পরিবর্তিত হইয়া লুৎফউন্নিসা নাম হইল । মতিবিবি কোন কালেও ইহার নাম নহে। তবে কখনও কখনও ছদ্মবেশে দেশবিদেশে ভ্রমণকালে ঐ নাম গ্রহণ করিতেন। ইহার পিতা ঢাকায় আসিয়া রাজকার্যে নিযুক্ত হইলেন। কিন্তু তথায় অনেক নিজদেশীয় লোকের সমাগম। দেশীয় সমাজে সমাজচ্যুত হইয়া সকলের থাকিতে ভাল লাগে না। অতএব তিনি কিছু দিনে সুবাদারের নিকট প্রতিপত্তি লাভ করিয়া তাঁহার সুহৃদ অনেকানেক ওমরাহের নিকট পত্রসংগ্রহপূর্বক সপরিবারে আগ্রায় আসিলেন। আকবরশাহের নিকট কাহারও গুণ অবিদিত থাকিত না; শীঘ্রই তিনি ইহার গুণগ্রহণ করিলেন। লুৎফউন্নিসার পিতা শীঘ্রই উচ্চপদস্থ হইয়া আগ্রার প্রধান ওমরাহ মধ্যে গণ্য হইলেন। এদিকে লুৎফউন্নিসা ক্রমে বয়ঃপ্রাপ্ত হইতে লাগিলেন। আগ্রাতে আসিয়া তিনি পারসীক, সংস্কৃত, নৃত্য গীত, রসবাদ ইত্যাদিতে সুশিক্ষিতা হইলেন। রাজধানীর অসংখ্য রূপবর্তী গুণবতীদিগের মধ্যে অগ্রগণ্যা হইতে লাগিলেন । দুর্ভাগ্যবশতঃ বিদ্যাসম্বন্ধে তাঁহার যাদৃশ শিক্ষা হইয়াছিল, ধর্মসম্বন্ধে তাঁহার কিছুই হয় নাই। লুৎফউন্নিসার বয়স পূর্ণ হইলে প্রকাশ পাইতে লাগিল যে, তাঁহার মনোবৃত্তি সকল দুৰ্দ্দমবেগবতী। ইন্দ্রিয়দমনে কিছুমাত্র ক্ষমতাও নাই, ইচ্ছাও নাই। সদসতে সমান প্রবৃত্তি। এ কাৰ্য্য সৎ, এ কাৰ্য্য অসৎ, এমত বিচার করিয়া তিনি কোন কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইতেন না; যাহা ভাল লাগিত, তাহাই করিতেন। যখন সৎকর্মে অন্তঃকরণ সুখী হইত, তখন সৎকর্ম্ম করিতেন; যখন অসৎকর্ম্মে অন্তঃকরণ সুখী হইত তখন অসৎকর্ম্ম করিতেন; যৌবনকালের মনোবৃত্তি দুৰ্দ্দম হইলে যে সকল দোষ জন্মে, তাহা লুৎফ- উন্নিসা সম্বন্ধে জন্মিল। তাঁহার পূর্ব্ব স্বামী বর্ত্তমান, ওমরাহেরা কেহ তাঁহাকে বিবাহ করিতে সম্মত হইলেন না। তিনিও বড় বিবাহের অনুরাগিণী হইলেন না । মনে মনে ভাবিলেন, কুসুমে কুসুমে বিহারিণী ভ্রমরীর পক্ষচ্ছেদ কেন করাইব? প্রথমে কানাকানি, শেষে কালিমাময় কলঙ্ক রটিল। তাহার পিতা বিরক্ত হইয়া তাঁহাকে আপন গৃহ হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন ।

লুৎফ-উন্নিসা গোপনে যাহাদিগকে কৃপা বিতরণ করিতেন, তন্মধ্যে যুবরাজ সেলিম একজন। একজন ওমরাহের কুলকলঙ্ক জন্মাইলে, পাছে আপন অপক্ষপাতী পিতার কোপানলে পড়িতে হয়, সেই আশঙ্কায় সেলিম এ পর্যন্ত লুৎফউন্নিসাকে আপন অবরোধবাসিনী করিতে পারেন নাই। এক্ষণে সুযোগ পাইলেন । রাজপুতপতি মানসিংহের ভগিনী, যুবরাজের প্রধানা মহিষী ছিলেন। যুবরাজ লুৎফউন্নিসাকে তাঁহার প্রধানা সহচরী করিলেন। লুৎফউন্নিসা প্রকাশ্যে বেগমের সখী, পরোক্ষে যুবরাজের অনুগ্রহভাগিনী হইলেন ।

লুৎফউন্নিসার ন্যায় বুদ্ধিমতী মহিলা যে অল্প দিনেই রাজকুমারের হৃদয়াধিকার করিবেন, ইহা সহজেই উপলব্ধি হইতে পারে। সেলিমের চিত্তে তাঁহার প্রভুত্ব এরূপ প্রতিযোগিশূন্য হইয়া উঠিল যে, লুৎফউন্নিসা উপযুক্ত সময়ে তাঁহার পাটরাণী হইবেন, ইহা তাঁহার স্থির প্রতিজ্ঞা হইল। কেবল লুৎফউন্নিসার স্থির প্রতিজ্ঞা হইল, এমত নহে; রাজপুরবাসী সকলেরই উহা সম্ভব বোধ হইল। এইরূপ আশার স্বপ্নে লুৎফউন্নিসা জীবন বাহিত করিতেছিলেন, এমত সময়ে নিদ্রাভঙ্গ হইল । আকবরশাহের কোষাধ্যক্ষ (আকতিমাদ-উদ্দৌলা) খাজা আয়াসের কন্যা মেহেরউন্নিসা যবনকুলে প্রধানা সুন্দরী। একদিন কোষাধ্যক্ষ রাজকুমার সেলিম ও অন্যান্য প্রধান ব্যক্তিকে নিমন্ত্রণ করিয়া গৃহে আনিলেন। সেই দিন মেহেরউন্নিসার সহিত সেলিমের সাক্ষাৎ হইল এবং সেই দিন সেলিম মেহের- উন্নিসার নিকট চিত্ত রাখিয়া গেলেন। তাহার পর যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা ইতিহাস পাঠকমাত্রেই অবগত আছেন। শের আফগান নামক একজন মহাবিক্রমশালী ওমরাহের সহিত কোষাধ্যক্ষের কন্যার সম্বন্ধ পূৰ্ব্বেই হইয়াছিল। সেলিম অনুরাগান্ধ হইয়া সেই সম্বন্ধ রহিত করিবার জন্য পিতার নিকট যাচমান হইলেন। কিন্তু নিরপেক্ষ পিতার নিকট কেবল তিরস্কৃত হইলেন মাত্র। সুতরাং সেলিমকে আপাততঃ নিরস্ত হইতে হইল। আপাততঃ নিরস্ত হইলেন বটে, কিন্তু আশা ছাড়িলেন না। শের আফগানের সহিত মেহেরউন্নিসার বিবাহ হইল । কিন্তু সেলিমের চিত্তবৃত্তি সকল লুৎফউন্নিসার নখদর্পণে ছিল; তিনি নিশ্চিত বুঝিয়াছিলেন যে, শের আফগানের সহস্র প্রাণ থাকিলেও তাঁহার নিস্তার নাই, আকবরশাহের মৃত্যু হইলেই তাঁহার প্রাণান্ত হইবে- মেহেরউন্নিসা সেলিমের মহিষী হইবেন। লুৎফ- উন্নিসা সিংহাসনের আশা ত্যাগ করিলেন।

মহম্মদীয় সম্রাট-কুলগৌরব আকবরের পরমায়ু শেষ হইয়া আসিল । যে প্রচণ্ড সূর্য্যের প্রভায় তুরকী হইতে ব্রহ্মপুত্র পর্য্যন্ত প্রদীপ্ত হইয়াছিল, সে সূর্য্য অস্তগামী হইল । এ সময়ে লুৎফ-উন্নিসা আত্মপ্রাধান্য রক্ষার জন্য এক দুঃসাহসিক সঙ্কল্প করিলেন।

রাজপুতপতি রাজা মানসিংহের ভগিনী সেলিমের প্রধানা মহিষী। খসু তাঁহার পুত্র। একদিন তাঁহার সহিত আকবরশাহের পীড়িত শরীর সম্বন্ধে লুক- উন্নিসার কথোপকথন হইতেছিল; রাজপুতকন্যা এক্ষণে বাদশাহপত্নী হইবেন, এই কথার প্রসঙ্গ করিয়া লুৎফউন্নিসা তাঁহাকে অভিনন্দন করিতেছিলেন, প্রত্যুত্তরে খসুর জননী কহিলেন, "বাদশাহের মহিষী হইলে মনুষ্যজন্ম সার্থক বটে, কিন্তু যে বাদশাহ জননী, সেই সর্ব্বোপরি।” উত্তর শুনিবামাত্র এক অপূৰ্ব্বচিন্তিত অভিসন্ধি লুৎফ-উন্নিসার হৃদয়ে উদয় হইল । তিনি প্রত্যুত্তর করিলেন, “তাহাই হউক না কেন? সেও ত আপনার ইচ্ছাধীন।” বেগম কহিলেন, “সে কি?” চতুরা উত্তর করিলেন, “যুবরাজপুত্র খসুকে সিংহাসন দান করুন।” বেগম কোন উত্তর করিলেন না। সে দিন এ প্রসঙ্গ পুনরুত্থাপিত হইল না, কিন্তু কেহ-ই এ কথা ভুলিলেন না। স্বামীর পরিবর্ত্তে পুত্র যে সিংহাসনারোহণ

করেন, ইহা বেগমের অনভিমত নহে; মেহেরউন্নিসার প্রতি সেলিমের অনুরাগ লুৎফউন্নিসার যেরূপ হৃদয়শেল, বেগমেরও সেইরূপ। মানসিংহের ভগিনী আধুনিক তুর্কমান কন্যার যে আজ্ঞানুবর্তিনী হইয়া থাকিবেন, তাহা ভাল লাগিবে কেন? লুৎ-উন্নিসারও এ সঙ্কল্পে উদ্যোগিনী হইবার গাঢ় তাৎপর্য্য ছিল। অন্য দিন পুনর্ব্বার এ প্রসঙ্গ উত্থাপিত হইল। উভয়ের মত স্থির হইল । সেলিমকে ত্যাগ করিয়া খসুকে আকবরের সিংহাসনে স্থাপিত করা অসম্ভাবনীয় বোধ হইবার কোন কারণ ছিল না। এ কথা লুৎফউন্নিসা বেগমের বিলক্ষণ হৃদয়ঙ্গম করাইলেন । তিনি কহিলেন, “মোগলের সাম্রাজ্য রাজপুতের বাহুবলে স্থাপিত রহিয়াছে; সেই রাজপুতজাতির চূড়া রাজা মানসিংহ, তিনি খসুর মাতুল; আর মুসলমানদিগের প্রধান খা আজিম, তিনি প্রধান রাজমন্ত্রী, তিনি খসুর শ্বশুর; ইহারা দুই জনে উদ্যোগী হইলে, কে ইহাদিগের অনুবর্ত্তী না হইবে? আর কাহার বলেই বা যুবরাজ সিংহাসন গ্রহণ করিবেন? রাজা মানসিংহকে এ কার্য্যে ব্রতী করা, আপনার ভার। খাঁ আজিম ও অন্যান্য মহম্মদীয় ওমরাহগণকে লিপ্ত

করা আমার ভার । আপনার আশীর্ব্বাদে কৃতকার্য্য হইব, কিন্তু এক আশঙ্কা, পাছে সিংহাসন আরোহণ করিয়া খসু এ দুশ্চারিণীকে পুরবহিষ্কৃত করিয়া দেন।” বেগম সহচরীর অভিপ্রায় বুঝিলেন। হাসিয়া কহিলেন, “তুমি আগ্রার যে ওমরাহের গৃহিণী হইতে চাও, সেই তোমার পাণিগ্রহণ করিবে। তোমার স্বামী পঞ্চ হাজারি মসবদার হইবেন।”

লুৎফউন্নিসা সন্তুষ্ট হইলেন। ইহাই তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল। যদি রাজপুরীমধ্যে সামান্য পুরস্ত্রী হইয়া থাকিতে হইল, তবে প্রতিপুষ্পবিহারিণী মধুকরীর পক্ষচ্ছেদন করিয়া কি সুখ হইল? যদি স্বাধীনতা ত্যাগ করিতে হইল, তবে বাল্যসখী মেহেরউন্নিসার দাসীত্বে কী সুখ? তাহার অপেক্ষা কোন প্রধান রাজপুরুষের সর্ব্বময়ী ঘরণী হওয়া গৌরবের বিষয় 1

শুধু এই লোভে লুৎফ-উন্নিসা এ কর্ম্মে প্রবৃত্ত হইলেন না। সেলিম যে তাঁহাকে উপেক্ষা করিয়া মেহেরউন্নিসার জন্য এত ব্যস্ত, ইহার প্রতিশোধও তাঁহার উদ্দেশ্য।

খাঁ আজিম প্রভৃতি আগ্রা দিল্লীর ওমরাহেরা লুৎফউন্নিসার বিলক্ষণ বাধ্য ছিলেন। খাঁ আজিম যে জামাতার ইষ্টসাধনে উদ্যুক্ত হইবেন, ইহা বিচিত্র নহে। তিনি এবং আর আর ওমরাহগণ সম্মত হইলেন। খাঁ আজিম লুৎফউন্নিসাকে কহিলেন, “মনে কর, যদি কোন অসুযোগে আমরা কৃতকার্য্য না হই, তবে তোমার আমার রক্ষা নাই। অতএব প্রাণ বাঁচাইবার একটা পথ রাখা ভাল। "

লুৎফউন্নিসা কহিলেন, “আপনার কি পরামর্শ।” খাঁ আজিম কহিলেন, “উড়িষ্যা ভিন্ন অন্য আশ্রয় নাই। কেবল সেই স্থানে মোগলের শাসন তত প্রখর নহে। উড়িষ্যায় সৈন্য আমাদিগের হস্তগত থাকা আবশ্যক। তোমার ভ্রাতা উড়িষ্যায় মন্সবদার আছেন; আমি কল্য প্রচার করিব, তিনি যুদ্ধে আহত হইয়াছেন। তুমি তাঁহাকে দেখিবার ছলে কল্যই উড়িষ্যায় যাত্রা কর। তথায় যৎকর্ত্তব্য, তাহা সাধন করিয়া শীঘ্র প্রত্যাগমন কর।”

লুৎফউন্নিসা এ পরামর্শে সম্মত হইলেন। তিনি উড়িষ্যায় আসিয়া যখন প্রত্যাগমন করিতেছিলেন, তখন তাহার সহিত পাঠক মহাশয়ের সাক্ষাৎ হইয়াছে।

31
Articles
কপালকুণ্ডলা
0.0
কপালকুণ্ডলা হল একজন বিশিষ্ট ভারতীয় লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। উপন্যাসটি 1866 সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্র কপালকুণ্ডলা, কমলপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী এক তরুণী ও সুন্দরীকে ঘিরে। তিনি তার স্বাধীন চেতনা এবং দৃঢ়-ইচ্ছা প্রকৃতির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্লট মোড় নেয় যখন কলকাতার এক যুবক নবকুমার গ্রামে আসে এবং কপালকুণ্ডলার প্রেমে পড়ে। উপন্যাসটি প্রেম, নিয়তি এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে। এটি মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং সামাজিক নিয়ম এবং প্রত্যাশার পরিণতিগুলির মধ্যে তলিয়ে যায়। "কপালকুণ্ডলা" শিরোনামটি নায়কের কপালে একটি পবিত্র চিহ্নকে নির্দেশ করে, যা তার পরিচয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং তাকে আলাদা করে। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "কপালকুণ্ডলা" তার সাহিত্যিক গুণাবলীর জন্য উদযাপিত হয়, যার মধ্যে প্রকৃতির প্রাণবন্ত বর্ণনা, সমৃদ্ধ চরিত্রায়ন এবং সামাজিক ভাষ্যের সাথে রোমান্সকে মিশ্রিত একটি আখ্যান। উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে এবং বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মাধ্যমের রূপান্তরিত হয়েছে।
1

প্রথম খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : সাগরসঙ্গমে

16 November 2023
1
0
0

"Floating straight obedient to the stream." Comedy of Errors. প্রায় দুই শত পঞ্চাশ বৎসর পূর্ব্বে এক দিন মাঘ মাসের রাত্রিশেষে একখানি যাত্রীর নৌকা গঙ্গাসাগর হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিল। পর্তুগিস্ ও অন্যান

2

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : উপকূলে

16 November 2023
0
0
0

"Ingratitude! Thou marble-hearted friend!-" King Lear. আরোহীদিগের স্ফূর্ত্তিব্যঞ্জক কথা সমাপ্ত হইলে, নাবিকেরা প্রস্তাব করিল যে, জোয়ারের বিলম্ব আছে;– এই অবকাশে আরোহিগণ সম্মুখস্থ সৈকতে পাকাদি সমাপন ক

3

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বিজনে

16 November 2023
0
0
0

"Like a veil, Which if withdrawn, would but disclose the frown Of one who hates us, so the night was shown And grimly darkled o'er their faces pale And hopeless eyes". Don Juan. যে স্থানে নবকুমারকে

4

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : স্তূপশিখরে

16 November 2023
0
0
0

“— সবিস্ময়ে দেখিলা অদূরে ভীষণ-দর্শন মূৰ্ত্তি।” মেঘনাদবধ যখন নবকুমারের নিদ্রাভঙ্গ হইল, তখন রজনী গভীরা। এখনও যে তাঁহাকে ব্যাঘ্রে হত্যা করে নাই, ইহা তাঁহার আশ্চর্য্য বোধ হইল। ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিয়া দ

5

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : সমুদ্রতটে

16 November 2023
0
0
0

"যোগপ্রভাবো ন চ লক্ষ্যতে তে । বিভর্ষি চাকারমনিববৃতানাং মৃণালিনী হৈমমিবোপরাগম্ ॥ প্রাতে উঠিয়া নবকুমার সহজেই বাটী গমনের উপায় করিতে ব্যস্ত হইলেন; বিশেষ, এ কাপালিকের সান্নিধ্য কোনক্রমেই শ্রেয়ঙ্কর বলিয

6

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : কাপালিকসঙ্গে

16 November 2023
0
0
0

“ কথং নিগড়সংযতাসি । দ্রুতম্ নয়ামি ভবর্তীমিতঃ-" রত্নাবলী নবকুমার কুটীরমধ্যে প্রবেশ করিয়া দ্বারসংযোজনপূর্বক করতলে মস্তক দিয়া বসিলেন। শীঘ্র আর মস্তকোত্তোলন করিলেন না। “এ কি দেবী-মানুষী-না কাপালিকে

7

সপ্তম পরিচ্ছেদ : অন্বেষণে

16 November 2023
1
0
0

"And the great lord of Luna Fell at that deadly stroke; As falls on mount Alvernus A thunder-smitten oak." Lays of Ancient Rome. এদিকে কাপালিক গৃহমধ্যে তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়া না খড়গ, না

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ : আশ্রয়ে

17 November 2023
2
0
0

"And that very night= Shall Romeo bear thee to Mantua." Romeo and Juliet. সেই অমাবস্যার ঘোরান্ধকার যামিনীতে দুই জনে উর্দ্ধশ্বাসে বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বন্য পথ নবকুমারের অপরিজ্ঞাত; কেবল সহচারিণী ষোড

9

নবম পরিচ্ছেদ : দেবনিকেতনে

17 November 2023
1
0
0

“কম্ব। অলং রুদিতেন; স্থিরা ভব, ইতঃ পন্থানমালোকয়।" শকুন্তলা অধিকারী নবকুমারের নিকট আসিলেন। দেখিলেন, এখনও নবকুমার শয়ন করেন নাই। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কি কর্ত্তব্যঃ” প্রাতে নবকুমার কহিলেন,“ আজি হইতে

10

দ্বিতীয় খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : রাজপথে

17 November 2023
1
0
0

"There now. lean on me:: Place your foot here-" Manfred নবকুমার মেদিনীপুরে আসিয়া অধিকারীর প্রদত্ত ধনবলে কপালকুণ্ডলার জন্য একজন দাসী, একজন রক্ষক ও শিবিকাবাহক নিযুক্ত করিয়া তাঁহাকে শিবিকারোহণে পাঠাই

11

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : পান্থনিবাসে

17 November 2023
1
0
0

“কৈষা যোষিৎ প্রকৃতিচপলা" উদ্ধবদূত যদি এই রমণী নির্দোষ সৌন্দর্য্যবিশিষ্টা হইতেন, তবে বলিতাম, “পুরুষ পাঠক! ইনি আপনার গৃহিণীর ন্যায় সুন্দরী। আর সুন্দরী পাঠকারিণি! ইনি আপনার দর্পণস্থ ছায়ার ন্যায় রূপব

12

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : সুন্দরীসন্দর্শনে

17 November 2023
1
0
0

"ধর দেবি মোহন মূরতি দেহ আজ্ঞা, সাজাই ও বরবপু আনি নানা আভরণ!" মেঘনাদবধ নবকুমার গৃহস্বামীকে ডাকিয়া অন্য প্রদীপ আনিতে বলিলেন। অন্য প্রদীপ আনিবার পূর্ব্বে একটি দীর্ঘনিশ্বাস শব্দ শুনিতে পাইলেন। প্রদীপ আ

13

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : শিবিকারোহণে

17 November 2023
1
0
0

-খুলি সত্বরে, কঙ্কণ, বলয়, হার, সাঁথি, কণ্ঠমালা, কুণ্ডল, নূপুর কাঞ্চি।” মেঘনাদবধ গহনার দশা কি হইল, বলি শুন। মতিবিবি গহনা রাখিবার জন্য একটি রৌপ্যজড়িত হস্তিদন্তের কৌটা পাঠাইয়া দিলেন। দস্যুরা তাহার

14

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : স্বদেশে

18 November 2023
1
0
0

“সাধ্যের বদপি কিন্তু তে যঃ সখীনাং পুরস্তাৎ। কর্ণে লোলঃ কথয়িত্বমভূদানন স্পর্শলোভাৎ।।” মেঘদূত নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে লইয়া স্বদেশে উপনীত হইলেন। নবকুমার পিতৃহীন, তাঁহার বিধবা মাতা গৃহে ছিলেন, আর দুই ভগ

15

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : অবরোধে

18 November 2023
1
0
0

"কিমিতাপ স্যঞ্জণানি যৌবনে ধৃতং ত্বয়া বাৰ্দ্ধকশোভি বলম্ । বদ প্রদোষে স্ফুটচন্দ্রতারকা বিভাবরী হন্যর পায় কম্ভুতে কুমারসম্বর সকলেই অবগত আছেন যে, পূৰ্ব্বকালে সপ্তগ্রাম মহাসমৃদ্ধিশালী নগর ছিল। এককালে য

16

তৃতীয় খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : ভূতপূর্ব্বে

18 November 2023
1
0
0

“কষ্টোহয়ং খলু ভৃত্যভাবঃ।" রত্নাবলী যখন নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে লইয়া চটি হইতে যাত্রা করেন, তখন মতিবিবি পথান্তরে বর্দ্ধমানাভিমুখে যাত্রা করিলেন। যতক্ষণ মতিবিবি পথবাহন করেন, ততক্ষণ আমরা তাঁহার পূর্ব্বব

17

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : পথান্তরে

18 November 2023
1
0
0

“যে মাটিতে পড়ে লোকে উঠে তাই ধ'রে। বারেক নিরাশ হয়ে কে কোথায় মরে- তুফানে পতিত কিন্তু ছাড়িব না হাল আজিকে বিফল হলো, হতে পারে কাল।" নবীন তপস্বিনী যে দিন নবকুমারকে বিদায় করিয়া মতিবিবি বা লুৎফউন্নিস

18

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : প্রতিযোগিনী-গৃহে

18 November 2023
1
0
0

“শ্যামাদন্যো নহি নহি প্রাণনাথে মমাস্তি।" উদ্ধবদূত এ সময়ে শের আফগান বঙ্গদেশের সুবাদারের অধীনে বর্দ্ধমানের কর্মাধ্যক্ষ হইয়া অবস্থিতি করিতেছিলেন। মতিবিবি বৰ্দ্ধমানে আসিয়া শের আফগানের আলয়ে উপনীত হই

19

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : রাজনিকেতনে

18 November 2023
1
0
0

"পত্নীভাবে আর তুমি ভেবো না আমারে।” বীরাঙ্গনা কাব্য মতি আগ্রায় উপনীতা হইলেন। আর তাঁহাকে মতি বলিবার আবশ্যক করে না। কয়দিনে তাঁহার চিত্তবৃত্তিসকল একেবারে পরিবর্তিত হইয়াছিল। জাহাগীরের সহিত তাঁহার সাক্

20

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : আত্মমন্দিরে

18 November 2023
1
0
0

"জনম অবধি হম রূপ নেহার নয়ন না তিরপিত ভেল। সোই মধুর বোল শ্রবণহি শুননু শ্রুতিপথে পরশ না গেল কত মধুযামিনী রভসে গোঁয়ায় না বুঝনু কৈছন কেল। লাখ লাখ যুগ হিয়ে দিয়ে রাখনু তবু হিয়া জুড়ান না গেল - যত য

21

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: চরণতলে

20 November 2023
1
0
0

"কায় মনঃ প্রাণ আমি সঁপিব তোমারে। ভুঞ্জ আসি রাজভোগ দাসীর আলয়ে।।" বীরাঙ্গনা কাব্য ক্ষেত্রে বীজ রোপিত হইলে আপনিই অঙ্কুর হয়। যখন অঙ্কুর হয়, তখন কেহ জানিতে পারে না-কেহ দেখিতে পায় না। কিন্তু একবার বীজ রোপ

22

সপ্তম পরিচ্ছেদ: উপনগরপ্রান্তে

20 November 2023
1
0
0

"----I am settled, and bend up Each corporal agent to this terrible feat." Macbeth. কক্ষান্তরে গিয়া লুৎফ-উন্নিসা দ্বার রুদ্ধ করিলেন। দুই দিন পর্য্যন্ত সেই কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন না। এই দুই দিনে তিনি

23

চতুর্থ খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ: শয়নাগারে

20 November 2023
1
0
0

"রাধিকার বেড়ী ভাঙ্গ, এ মম মিনতি।" ব্রজাঙ্গনা কাব্য লুৎফ-উন্নিসার আগ্রা গমন করিতে এবং তথা হইতে সপ্তগ্রাম আসিতে প্রায় এক বৎসর গত হইয়াছিল। কপালকুণ্ডলা এক বৎসরের অধিক কাল নবকুমারের গৃহিণী। যেদিন প্রদোষক

24

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: কাননতলে

20 November 2023
1
0
0

"--Tender is the night..And haply the Queen moon is on her throne, Clustered around by all her starry fays; But here there is no light." Keats. সপ্তগ্রামের এই ভাগ যে বনময়, তাহা পূর্ব্বেই কতক কতক উল

25

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : স্বপ্নে

20 November 2023
1
0
0

"I had a dream, which was not all a dream." Byron. কপালকুণ্ডলা ধীরে ধীরে দ্বার রুদ্ধ করিলেন, ধীরে ধীরে শয়নাগারে আসিলেন, ধীরে ধীরে পালঙ্কে শয়ন করিলেন। মনুষ্যহৃদয় অনন্ত সমুদ্র, যখন তদুপরি ক্ষিপ্ত বায়ু

26

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : কৃতসঙ্কেতে

20 November 2023
1
0
0

"----I will have grounds More relative than this." Hamlet. কপালকুণ্ডলা সেদিন সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অনন্যচিন্তা হইয়া কেবল ইহাই বিবেচনা করিতেছিলেন যে, ব্রাহ্মণবেশীর সহিত সাক্ষাৎ বিধেয় কি না। পতিব্রতা যুবত

27

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: গৃহদ্বারে

21 November 2023
0
0
0

"Stand you awhile apart, Confine yourself but in a patient list." Othello. যখন সন্ধ্যার প্রাক্কালে কপালকুণ্ডলা গৃহকার্যে ব্যাপৃতা ছিলেন, তখন লিপি কবরী-বন্ধনচ্যুত হইয়া ভূমিতলে পড়িয়া গিয়াছিল। কপালকুণ্

28

যষ্ঠ পরিচ্ছেদ: পুনরালাপে

21 November 2023
0
0
0

"তদাচ্ছ সিন্ধ্যে কুরু দেবকার্য্যম।" কুমারসম্ভব কাপালিক আসন গ্রহণ করিয়া দুই বাহু নবকুমারকে দেখাইলেন। নবকুমার দেখিলেন, উভয় বাহু ভগ্ন। পাঠক মহাশয়ের স্মরণ থাকিতে পারে যে, যে রাত্রে কপালকুণ্ডলার সহিত নবক

29

সপ্তম পরিচ্ছেদ: সপত্নীসম্ভাসে

21 November 2023
0
0
0

Be at peace; it is your sister that addresses you. Riquite Lucretia's love," " Lucretia. কপালকুণ্ডলা গৃহ হইতে বহির্গতা হইয়া কাননাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। প্রথমে ভগ্ন গৃহমধ্যে গেলেন। তথায় ব্রাহ্মণকে দ

30

অষ্টম পরিচ্ছেদ : গৃহাভিমুখে

21 November 2023
0
0
0

"No spectre greets me--no vain shadow this." Wordsworth. কপালকুণ্ডলা ধীরে ধীরে গৃহাভিমুখে চলিলেন। অতি ধীরে ধীরে মৃদু মৃদু চলিলেন। তাহার কারণ, তিনি অতি গভীর চিন্তামগ্ন হইয়া যাইতেছিলেন। লুৎফ- উন্নিসার

31

নবম পরিচ্ছেদ: প্রেতভূমে

21 November 2023
0
0
0

"বপুষা করণোঝিতেন সা নিপতন্তী পতিমপ্যপাতয়ৎ। ননু তৈলনিষেকবিন্দুনা সহ দীপ্তাচ্চিরুপৈতি মেদিনীম্-- রঘুবংশ চন্দ্রমা অস্তমিত হইল। বিশ্বমণ্ডল অন্ধকারে পরিপূর্ণ হইল। কাপালিক যথায় আপন পূজাস্থান সংস্থাপন করিয়া

---