shabd-logo

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : কাপালিকসঙ্গে

16 November 2023

0 Viewed 0

“ কথং নিগড়সংযতাসি । দ্রুতম্ নয়ামি ভবর্তীমিতঃ-"

রত্নাবলী

নবকুমার কুটীরমধ্যে প্রবেশ করিয়া দ্বারসংযোজনপূর্বক করতলে মস্তক দিয়া বসিলেন। শীঘ্র আর মস্তকোত্তোলন করিলেন না।

“এ কি দেবী-মানুষী-না কাপালিকের মায়ামাত্র!” নবকুমার নিস্পন্দ হইয়া হৃদয়মধ্যে এই কথার আন্দোলন করিতে লাগিলেন। কিছুই বুঝিতে পারিলেন না।

অন্যমনস্ক ছিলেন বলিয়া, নবকুমার আর একটি ব্যাপার দেখিতে পান নাই। সেই কুটীরমধ্যে তাঁহার আগমন পূৰ্ব্বাবধি একখানি কাষ্ঠ জ্বলিতেছিল। পরে যখন অনেক রাত্রে স্মরণ হইল যে, সায়াহ্নকৃত্য অসমাপ্ত রহিয়াছে—তখন জলান্বেষণ অনুরোধে চিন্তা হইতে ক্ষান্ত হইয়া এ বিষয়ের অসম্ভাবিতা হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলেন। শুধু আলো নহে, তণ্ডুলাদি পাকোপযোগী কিছু কিছু সামগ্রীও আছে। নবকুমার বিস্মিত হইলেন না— মনে করিলেন যে, এও কাপালিকের কর্ম-এ স্থানে বিশ্বয়ের বিষয় কি আছে। নবকুমার সায়ংকৃত্য সমাপনান্তে তলগুলি কুটীরমধ্যে প্রাপ্ত এক মৃৎপাত্রে সিদ্ধ করিয়া আত্মসাৎ করিলেন।

পরদিন প্রভাতে চর্ম্মশয্যা হইতে গাত্রোত্থান করিয়াই সমুদ্রতীরাভিমুখে চলিলেন। পূর্ব্ব দিনের যাতায়াতের গুণে অদ্য অল্প কষ্টে পথ অনুভূত করিতে পারিলেন। তথায় প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কাহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন? পুর্বদৃষ্টা মায়াবিনী পুনর্ব্বার সে স্থলে যে আসিবেন—এমত আশা নবকুমারের হৃদয়ে কত দূর প্রবল হইয়াছিল বলিতে পারি না- কিন্তু সে স্থান তিনি ত্যাগ করিতে পারিলেন না। অনেক বেলাতেও তথায় কেহ আসিল না। তখন নবকুমার সে স্থানের চারিদিকে ভ্রমিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। বৃথা অন্বেষণ মাত্র। মনুষ্যসমাগমের চিহ্নমাত্র দেখিতে পাইলেন না। পুনর্ব্বার ফিরিয়া আসিয়া সেই স্থানে উপবেশন করিলেন। সূর্য্য অস্তগত হইল; অন্ধকার হইয়া আসিতে লাগিল; নবকুমার হতাশ হইয়া কুটীরে ফিরিয়া আসিলেন । সায়াহ্নকালে সমুদ্রতীর হইতে প্রত্যাগমন করিয়া নবকুমার দেখিলেন যে, কাপালিক কুটীরমধ্যে ধরাতলে উপবেশন করিয়া নিঃশব্দে আছে। নবকুমার প্রথমে স্বাগত জিজ্ঞাসা করিলেন; তাহাতে কাপালিক কোন উত্তর করিল না।

নবকুমার কহিলেন; “এ পর্যন্ত প্রভুর দর্শনে কি জন্য বঞ্চিত ছিলাম?” কাপালিক কহিল, “নিজ ব্রতে নিযুক্ত ছিলাম।” নবকুমার গৃহগমনাভিলাষ ব্যক্ত করিলেন। কহিলেন, “পথ অবগত নহি পাথেয় নাই; যদ্ধিহিতবিধান প্রভুর সাক্ষাৎ পাইলেই হইতে পারিবে, এই ভরসায় আছি।”

কাপালিক কেবলমাত্র কহিল, “ আমার সঙ্গে আগমন কর।” এই বলিয়া উদাসীন গাত্রোত্থান করিলেন। বাটী যাইবার কোন সদুপায় হইতে পারিবে প্রত্যাশায় নবকুমারও তাহার পশ্চাদ্বর্ত্তী হইলেন ।

তখন সন্ধ্যালোক অন্তর্হিত হয় নাই— কাপালিক অগ্রে অগ্রে, নবকুমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতেছিলেন। অকস্মাৎ নবকুমারের পৃষ্ঠদেশে কাহার কোমল করস্পর্শ হইল । পশ্চাৎ ফিরিয়া যাহা দেখিলেন, তাহাতে স্পন্দহীন হইলেন। সেই আগুল্‌ফলম্বিত-নিবিড়কেশ-রাশি-ধারিণী বন্যদেবীমূৰ্ত্তি! পূর্ব্ববৎ নিঃশব্দ নিষ্পন্দ। কোথা হইতে এই মূৰ্ত্তি অকস্মাৎ তাঁহার পশ্চাতে আসিল! নবকুমার দেখিলেন, রমণী মুখে অঙ্গুলী প্রদান করিয়া আছে। নবকুমার বুঝিলেন যে, রমণী বাক্যস্ফূর্ত্তি নিষেধ করিতেছে, নিষেধের বড় প্রয়োজন ছিল না। নবকুমার কি কথা কহিবেন? তিনি তথায় চমৎকৃত হইয়া দাঁড়াইলেন। কাপালিক এ সকল কিছুই দেখিতে পাইল না, অগ্রসর হইয়া চলিয়া গেল। তাহারা উদাসীনের শ্রবণাতিক্রান্ত হইলে রমণী মৃদুস্বরে কি কথা কহিল। নবকুমারের কর্ণে এই শব্দ প্রবেশ করিল, “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও-পলায়ন কর।" এই কথা সমাপ্ত করিয়াই উক্তিকারিণী সরিয়া গেলেন, প্রত্যুত্তর শুনিবার জন্য তিষ্ঠিলেন না। নবকুমার কিয়ৎকাল অভিভূতের ন্যায় দাঁড়াইলেন; পশ্চাদ্বর্ত্তী হইতে ব্যগ্র হইলেন, কিন্তু রমণী কোন দিকে গেল, তাহার কিছুই স্থিরতা পাইলেন না। মনে করিতে লাগিলেন- “এ কাহার মায়া? না আমারই ভ্রম হইতেছে। যে কথা শুনিলাম- সে ত আশঙ্কাসূচক, কিন্তু কিসের আশঙ্কা? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব? পলাইব বা কেন? সে দিন যদি বাঁচিয়াছি, আজিও বাঁচিব। কাপালিকও মনুষ্য, আমিও মনুষ্য।”

নবকুমার এইরূপ চিন্তা করিতেছিলেন, এমত সময়ে দেখিলেন, কাপালিক তাঁহাকে সঙ্গে না দেখিয়া প্রত্যাগমন করিতেছে। কাপালিক কহিল, “বিলম্ব করিতেছ কেন?”

কাপালিক পুনরাহ্বান করাতে বিনা বাক্যব্যয়ে নবকুমার তাঁহার পশ্চাদ্বর্ত্তী হইলেন ।

কিয়দ্দূর গমন করিয়া সম্মুখে এক মৃৎপ্রাচীরবিশিষ্ট কুটীর দেখিতে পাইলেন। তাহাকে কুটীরও বলা যাইতে পারে, ক্ষুদ্র গৃহও বলা যাইতে পারে। কিন্তু ইহাতে আমাদিগের কোন প্রয়োজন নাই। ইহার পশ্চাতেই সিকতাময় সমুদ্রতীর। গৃহপার্শ্ব দিয়া কাপালিক নবকুমারকে সেই সৈকতে লইয়া চলিলেন; এমত সময় তীরের তুল্য বেগে পূর্ব্বদৃষ্টা রমণী তাঁহার পার্শ্ব দিয়া চলিয়া গেল; গমনকালে তাঁহার কর্ণে বলিয়া গেল, “এখনও পলাও। নরমাংস নহিলে তান্ত্রিকের পূজা হয় না, তুমি কি জান না?”

নবকুমারের কপালে স্বেদনির্গম হইতে লাগিল। দুর্ভাগ্যবশতঃ যুবতীর এই কথা কাপালিকের কর্ণে গেল। সে কহিল, “ কপালকুণ্ডলে!” স্বর নবকুমারের কর্ণে মেঘগর্জ্জনবৎ ধ্বনিত হইল। কিন্তু কপালকুণ্ডলা কোন উত্তর দিল না।

কাপালিক নবকুমারের হস্ত ধারণ করিয়া লইয়া যাইতে লাগিল। মানুষঘাতী করস্পর্শে নবকুমারের শোণিত ধমনীমধ্যে শতগুণ বেগে প্রধাবিত হইল-লুপ্ত সাহস পুনর্ব্বার আসিল। কহিলেন, “ হস্ত ত্যাগ করুন।”

কাপালিক উত্তর করিল না। নবকুমার পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমায় কোথায় লইয়া যাইতেছেন। "

কাপালিক কহিল, “পূজার স্থানে।” নবকুমার কহিলেন, “কেন?”

কাপালিক কহিল, “বধার্থ।”

অতি তীব্রবেগে নবকুমার নিজ হস্ত টানিলেন। যে বলে তিনি হস্ত আকর্ষিত করিয়াছিলেন, তাহাতে সামান্য লোকে তাহার হাত ধরিয়া থাকিলে হস্তরক্ষা করা দূরে থাকুক—বেগে ভূপতিত হইত। কিন্তু কাপালিকের অঙ্গমাত্রও হেলিল না; - নবকুমারের প্রকোষ্ঠ তাহার হস্তমধ্যেই রহিল। নবকুমারে অস্থিগ্রন্থিসকল যেন ভগ্ন হইয়া গেল । নবকুমার দেখিলেন, বলে হইবে না। কৌশলের প্রয়োজন। “ভাল দেখা যাউক”– এইরূপ স্থির করিয়া নবকুমার কাপালিকের সঙ্গে চলিলেন । সৈকতের মধ্যস্থানে নীত হইয়া নবকুমার দেখিলেন, পূর্ব্বদিনের ন্যায় তথায় বৃহৎ কাষ্ঠে অগ্নি জ্বলিতেছে। চতুঃপার্শ্বে তান্ত্রিক পূজার আয়োজন রহিয়াছে, তন্মধ্যে নরকপালপূর্ণ আসব রহিয়াছে—কিন্তু শব নাই। অনুমান করিলেন, তাঁহাকে শব হইতে হইবে।

কতকগুলি শুষ্ক, কঠিন লতাগুলা তথায় পূৰ্ব্ব হইতেই আহরিত ছিল। কাপালিক তদ্বারা নবকুমারকে দৃঢ় বন্ধন করিতে আরম্ভ করিল। নবকুমার সাধ্যমত বল প্রকাশ করিলেন; কিন্তু বল প্রকাশ কিছুমাত্র ফলদায়ক হইল না। তাঁহার প্রতীতি হইল যে, এ বয়সেও কাপালিক মত্ত হস্তীর বল ধারণ করে। নবকুমারের বল প্রকাশ দেখিয়া কাপালিক কহিল, “মূর্খ! কি জন্য বল প্রকাশ কর? তোমার জন্ম আজি সার্থক হইল। ভৈরবীর পূজায় তোমার এই মাংসপিণ্ড অর্পিত হইবেক, ইহার অধিক তোমার তুল্য লোকের আর কি সৌভাগ্য হইতে পারে?”

কাপালিক নবকুমারকে দৃঢ় বন্ধন করিয়া সৈকতোপরি ফেলিয়া রাখিলেন। এবং বধের প্রাক্কালিক পূজাদি ক্রিয়ায় ব্যাপৃত হইলেন। ততক্ষণ নবকুমার বাঁধন ছিঁড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন; কিন্তু শুষ্ক লতা অতি কঠিন-বন্ধন অতি দৃঢ়। মৃত্যু আসন্ন! নবকুমার ইষ্টদেবচরণে চিত্ত নিবিষ্ট করিলেন। একবার জন্মভূমি মনে পড়িল, নিজ সুখের আলয় মনে পড়িল, একবার বহুদিন অন্তর্হিত জনক এবং জননীর মুখ মনে পড়িল, দুই এক বিন্দু অশ্রুজল সৈকত-বালুকায় শুষিয়া গেল। কাপালিক বলির প্রাক্কালিক ক্রিয়া সমাপনান্তে বধার্থ খড়গ লইবার জন্য আসন ত্যাগ করিয়া উঠিল। কিন্তু যথায় খড়গ রাখিয়াছিল, তথায় খড়গ পাইল না। আশ্চর্য্য! কাপালিক কিছু বিস্মিত হইল। তাহার নিশ্চিত মনে হইতেছিল যে, অপরাহ্ণে খড়গ আনিয়া উপযুক্ত স্থানে রাখিয়াছিল এবং স্থানান্তরও করে নাই, তবে খড়গ কোথায় গেল? কাপালিক ইতস্ততঃ অনুসন্ধান করিল। কোথাও পাইল না। তখন পূৰ্ব্বকথিত কুটীরাভিমুখ হইয়া কপালকুণ্ডলাকে ডাকিল, কিন্তু পুনঃ পুনঃ ডাকাতেও কপালকুণ্ডলা কোন উত্তর দিল না। তখন কাপালিকের চক্ষু লোহিত, ভূযুগল আকুঞ্চিত হইল । দ্রুতপদবিক্ষেপে গৃহাভিমুখে চলিল; এই অবকাশে বন্ধনলতা ছিন্ন করিতে নবকুমার আর একবার যত্ন পাইলেন- কিন্তু সে যত্নও নিষ্ফল হইল ।

এমত সময়ে নিকটে বালুকার উপর অতি কোমল পদধ্বনি হইল-এ পদধ্বনি কাপালিকের নহে। নবকুমার নয়ন ফিরাইয়া দেখিলেন, সেই মোহিনী-কপালকুণ্ডলা । তাঁহার করে খড়গ দুলিতেছে।

কপালকুণ্ডলা কহিলেন, “চুপ! কথা কহিও না-খড়গ আমারই কাছে চুরি করিয়া রাখিয়াছি।"

এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা অতি শীঘ্রহস্তে নবকুমারের লতাবন্ধন খড়গ দ্বারা ছেদন করিতে লাগিলেন। নিমিষমধ্যে তাঁহাকে মুক্ত করিলেন। কহিলেন, “পলায়ন কর; আমার পশ্চাৎ আইস, পথ দেখাইয়া দিতেছি।"

এই বলিয়া কপালকুণ্ডলা তীরের ন্যায় বেগে পথ দেখাইয়া চলিলেন। নবকুমার লাফ দিয়া তাঁহার অনুসরণ করিলেন।

31
Articles
কপালকুণ্ডলা
0.0
কপালকুণ্ডলা হল একজন বিশিষ্ট ভারতীয় লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। উপন্যাসটি 1866 সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং এটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্র কপালকুণ্ডলা, কমলপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী এক তরুণী ও সুন্দরীকে ঘিরে। তিনি তার স্বাধীন চেতনা এবং দৃঢ়-ইচ্ছা প্রকৃতির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্লট মোড় নেয় যখন কলকাতার এক যুবক নবকুমার গ্রামে আসে এবং কপালকুণ্ডলার প্রেমে পড়ে। উপন্যাসটি প্রেম, নিয়তি এবং ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে। এটি মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং সামাজিক নিয়ম এবং প্রত্যাশার পরিণতিগুলির মধ্যে তলিয়ে যায়। "কপালকুণ্ডলা" শিরোনামটি নায়কের কপালে একটি পবিত্র চিহ্নকে নির্দেশ করে, যা তার পরিচয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে এবং তাকে আলাদা করে। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "কপালকুণ্ডলা" তার সাহিত্যিক গুণাবলীর জন্য উদযাপিত হয়, যার মধ্যে প্রকৃতির প্রাণবন্ত বর্ণনা, সমৃদ্ধ চরিত্রায়ন এবং সামাজিক ভাষ্যের সাথে রোমান্সকে মিশ্রিত একটি আখ্যান। উপন্যাসটি বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে এবং বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মাধ্যমের রূপান্তরিত হয়েছে।
1

প্রথম খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : সাগরসঙ্গমে

16 November 2023
1
0
0

"Floating straight obedient to the stream." Comedy of Errors. প্রায় দুই শত পঞ্চাশ বৎসর পূর্ব্বে এক দিন মাঘ মাসের রাত্রিশেষে একখানি যাত্রীর নৌকা গঙ্গাসাগর হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিল। পর্তুগিস্ ও অন্যান

2

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : উপকূলে

16 November 2023
0
0
0

"Ingratitude! Thou marble-hearted friend!-" King Lear. আরোহীদিগের স্ফূর্ত্তিব্যঞ্জক কথা সমাপ্ত হইলে, নাবিকেরা প্রস্তাব করিল যে, জোয়ারের বিলম্ব আছে;– এই অবকাশে আরোহিগণ সম্মুখস্থ সৈকতে পাকাদি সমাপন ক

3

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বিজনে

16 November 2023
0
0
0

"Like a veil, Which if withdrawn, would but disclose the frown Of one who hates us, so the night was shown And grimly darkled o'er their faces pale And hopeless eyes". Don Juan. যে স্থানে নবকুমারকে

4

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : স্তূপশিখরে

16 November 2023
0
0
0

“— সবিস্ময়ে দেখিলা অদূরে ভীষণ-দর্শন মূৰ্ত্তি।” মেঘনাদবধ যখন নবকুমারের নিদ্রাভঙ্গ হইল, তখন রজনী গভীরা। এখনও যে তাঁহাকে ব্যাঘ্রে হত্যা করে নাই, ইহা তাঁহার আশ্চর্য্য বোধ হইল। ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিয়া দ

5

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : সমুদ্রতটে

16 November 2023
0
0
0

"যোগপ্রভাবো ন চ লক্ষ্যতে তে । বিভর্ষি চাকারমনিববৃতানাং মৃণালিনী হৈমমিবোপরাগম্ ॥ প্রাতে উঠিয়া নবকুমার সহজেই বাটী গমনের উপায় করিতে ব্যস্ত হইলেন; বিশেষ, এ কাপালিকের সান্নিধ্য কোনক্রমেই শ্রেয়ঙ্কর বলিয

6

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : কাপালিকসঙ্গে

16 November 2023
0
0
0

“ কথং নিগড়সংযতাসি । দ্রুতম্ নয়ামি ভবর্তীমিতঃ-" রত্নাবলী নবকুমার কুটীরমধ্যে প্রবেশ করিয়া দ্বারসংযোজনপূর্বক করতলে মস্তক দিয়া বসিলেন। শীঘ্র আর মস্তকোত্তোলন করিলেন না। “এ কি দেবী-মানুষী-না কাপালিকে

7

সপ্তম পরিচ্ছেদ : অন্বেষণে

16 November 2023
1
0
0

"And the great lord of Luna Fell at that deadly stroke; As falls on mount Alvernus A thunder-smitten oak." Lays of Ancient Rome. এদিকে কাপালিক গৃহমধ্যে তন্ন তন্ন করিয়া অনুসন্ধান করিয়া না খড়গ, না

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ : আশ্রয়ে

17 November 2023
2
0
0

"And that very night= Shall Romeo bear thee to Mantua." Romeo and Juliet. সেই অমাবস্যার ঘোরান্ধকার যামিনীতে দুই জনে উর্দ্ধশ্বাসে বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। বন্য পথ নবকুমারের অপরিজ্ঞাত; কেবল সহচারিণী ষোড

9

নবম পরিচ্ছেদ : দেবনিকেতনে

17 November 2023
1
0
0

“কম্ব। অলং রুদিতেন; স্থিরা ভব, ইতঃ পন্থানমালোকয়।" শকুন্তলা অধিকারী নবকুমারের নিকট আসিলেন। দেখিলেন, এখনও নবকুমার শয়ন করেন নাই। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কি কর্ত্তব্যঃ” প্রাতে নবকুমার কহিলেন,“ আজি হইতে

10

দ্বিতীয় খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : রাজপথে

17 November 2023
1
0
0

"There now. lean on me:: Place your foot here-" Manfred নবকুমার মেদিনীপুরে আসিয়া অধিকারীর প্রদত্ত ধনবলে কপালকুণ্ডলার জন্য একজন দাসী, একজন রক্ষক ও শিবিকাবাহক নিযুক্ত করিয়া তাঁহাকে শিবিকারোহণে পাঠাই

11

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : পান্থনিবাসে

17 November 2023
1
0
0

“কৈষা যোষিৎ প্রকৃতিচপলা" উদ্ধবদূত যদি এই রমণী নির্দোষ সৌন্দর্য্যবিশিষ্টা হইতেন, তবে বলিতাম, “পুরুষ পাঠক! ইনি আপনার গৃহিণীর ন্যায় সুন্দরী। আর সুন্দরী পাঠকারিণি! ইনি আপনার দর্পণস্থ ছায়ার ন্যায় রূপব

12

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : সুন্দরীসন্দর্শনে

17 November 2023
1
0
0

"ধর দেবি মোহন মূরতি দেহ আজ্ঞা, সাজাই ও বরবপু আনি নানা আভরণ!" মেঘনাদবধ নবকুমার গৃহস্বামীকে ডাকিয়া অন্য প্রদীপ আনিতে বলিলেন। অন্য প্রদীপ আনিবার পূর্ব্বে একটি দীর্ঘনিশ্বাস শব্দ শুনিতে পাইলেন। প্রদীপ আ

13

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : শিবিকারোহণে

17 November 2023
1
0
0

-খুলি সত্বরে, কঙ্কণ, বলয়, হার, সাঁথি, কণ্ঠমালা, কুণ্ডল, নূপুর কাঞ্চি।” মেঘনাদবধ গহনার দশা কি হইল, বলি শুন। মতিবিবি গহনা রাখিবার জন্য একটি রৌপ্যজড়িত হস্তিদন্তের কৌটা পাঠাইয়া দিলেন। দস্যুরা তাহার

14

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : স্বদেশে

18 November 2023
1
0
0

“সাধ্যের বদপি কিন্তু তে যঃ সখীনাং পুরস্তাৎ। কর্ণে লোলঃ কথয়িত্বমভূদানন স্পর্শলোভাৎ।।” মেঘদূত নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে লইয়া স্বদেশে উপনীত হইলেন। নবকুমার পিতৃহীন, তাঁহার বিধবা মাতা গৃহে ছিলেন, আর দুই ভগ

15

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : অবরোধে

18 November 2023
1
0
0

"কিমিতাপ স্যঞ্জণানি যৌবনে ধৃতং ত্বয়া বাৰ্দ্ধকশোভি বলম্ । বদ প্রদোষে স্ফুটচন্দ্রতারকা বিভাবরী হন্যর পায় কম্ভুতে কুমারসম্বর সকলেই অবগত আছেন যে, পূৰ্ব্বকালে সপ্তগ্রাম মহাসমৃদ্ধিশালী নগর ছিল। এককালে য

16

তৃতীয় খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ : ভূতপূর্ব্বে

18 November 2023
1
0
0

“কষ্টোহয়ং খলু ভৃত্যভাবঃ।" রত্নাবলী যখন নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে লইয়া চটি হইতে যাত্রা করেন, তখন মতিবিবি পথান্তরে বর্দ্ধমানাভিমুখে যাত্রা করিলেন। যতক্ষণ মতিবিবি পথবাহন করেন, ততক্ষণ আমরা তাঁহার পূর্ব্বব

17

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : পথান্তরে

18 November 2023
1
0
0

“যে মাটিতে পড়ে লোকে উঠে তাই ধ'রে। বারেক নিরাশ হয়ে কে কোথায় মরে- তুফানে পতিত কিন্তু ছাড়িব না হাল আজিকে বিফল হলো, হতে পারে কাল।" নবীন তপস্বিনী যে দিন নবকুমারকে বিদায় করিয়া মতিবিবি বা লুৎফউন্নিস

18

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : প্রতিযোগিনী-গৃহে

18 November 2023
1
0
0

“শ্যামাদন্যো নহি নহি প্রাণনাথে মমাস্তি।" উদ্ধবদূত এ সময়ে শের আফগান বঙ্গদেশের সুবাদারের অধীনে বর্দ্ধমানের কর্মাধ্যক্ষ হইয়া অবস্থিতি করিতেছিলেন। মতিবিবি বৰ্দ্ধমানে আসিয়া শের আফগানের আলয়ে উপনীত হই

19

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : রাজনিকেতনে

18 November 2023
1
0
0

"পত্নীভাবে আর তুমি ভেবো না আমারে।” বীরাঙ্গনা কাব্য মতি আগ্রায় উপনীতা হইলেন। আর তাঁহাকে মতি বলিবার আবশ্যক করে না। কয়দিনে তাঁহার চিত্তবৃত্তিসকল একেবারে পরিবর্তিত হইয়াছিল। জাহাগীরের সহিত তাঁহার সাক্

20

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : আত্মমন্দিরে

18 November 2023
1
0
0

"জনম অবধি হম রূপ নেহার নয়ন না তিরপিত ভেল। সোই মধুর বোল শ্রবণহি শুননু শ্রুতিপথে পরশ না গেল কত মধুযামিনী রভসে গোঁয়ায় না বুঝনু কৈছন কেল। লাখ লাখ যুগ হিয়ে দিয়ে রাখনু তবু হিয়া জুড়ান না গেল - যত য

21

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: চরণতলে

20 November 2023
1
0
0

"কায় মনঃ প্রাণ আমি সঁপিব তোমারে। ভুঞ্জ আসি রাজভোগ দাসীর আলয়ে।।" বীরাঙ্গনা কাব্য ক্ষেত্রে বীজ রোপিত হইলে আপনিই অঙ্কুর হয়। যখন অঙ্কুর হয়, তখন কেহ জানিতে পারে না-কেহ দেখিতে পায় না। কিন্তু একবার বীজ রোপ

22

সপ্তম পরিচ্ছেদ: উপনগরপ্রান্তে

20 November 2023
1
0
0

"----I am settled, and bend up Each corporal agent to this terrible feat." Macbeth. কক্ষান্তরে গিয়া লুৎফ-উন্নিসা দ্বার রুদ্ধ করিলেন। দুই দিন পর্য্যন্ত সেই কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন না। এই দুই দিনে তিনি

23

চতুর্থ খণ্ড - প্রথম পরিচ্ছেদ: শয়নাগারে

20 November 2023
1
0
0

"রাধিকার বেড়ী ভাঙ্গ, এ মম মিনতি।" ব্রজাঙ্গনা কাব্য লুৎফ-উন্নিসার আগ্রা গমন করিতে এবং তথা হইতে সপ্তগ্রাম আসিতে প্রায় এক বৎসর গত হইয়াছিল। কপালকুণ্ডলা এক বৎসরের অধিক কাল নবকুমারের গৃহিণী। যেদিন প্রদোষক

24

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: কাননতলে

20 November 2023
1
0
0

"--Tender is the night..And haply the Queen moon is on her throne, Clustered around by all her starry fays; But here there is no light." Keats. সপ্তগ্রামের এই ভাগ যে বনময়, তাহা পূর্ব্বেই কতক কতক উল

25

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : স্বপ্নে

20 November 2023
1
0
0

"I had a dream, which was not all a dream." Byron. কপালকুণ্ডলা ধীরে ধীরে দ্বার রুদ্ধ করিলেন, ধীরে ধীরে শয়নাগারে আসিলেন, ধীরে ধীরে পালঙ্কে শয়ন করিলেন। মনুষ্যহৃদয় অনন্ত সমুদ্র, যখন তদুপরি ক্ষিপ্ত বায়ু

26

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : কৃতসঙ্কেতে

20 November 2023
1
0
0

"----I will have grounds More relative than this." Hamlet. কপালকুণ্ডলা সেদিন সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অনন্যচিন্তা হইয়া কেবল ইহাই বিবেচনা করিতেছিলেন যে, ব্রাহ্মণবেশীর সহিত সাক্ষাৎ বিধেয় কি না। পতিব্রতা যুবত

27

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: গৃহদ্বারে

21 November 2023
0
0
0

"Stand you awhile apart, Confine yourself but in a patient list." Othello. যখন সন্ধ্যার প্রাক্কালে কপালকুণ্ডলা গৃহকার্যে ব্যাপৃতা ছিলেন, তখন লিপি কবরী-বন্ধনচ্যুত হইয়া ভূমিতলে পড়িয়া গিয়াছিল। কপালকুণ্

28

যষ্ঠ পরিচ্ছেদ: পুনরালাপে

21 November 2023
0
0
0

"তদাচ্ছ সিন্ধ্যে কুরু দেবকার্য্যম।" কুমারসম্ভব কাপালিক আসন গ্রহণ করিয়া দুই বাহু নবকুমারকে দেখাইলেন। নবকুমার দেখিলেন, উভয় বাহু ভগ্ন। পাঠক মহাশয়ের স্মরণ থাকিতে পারে যে, যে রাত্রে কপালকুণ্ডলার সহিত নবক

29

সপ্তম পরিচ্ছেদ: সপত্নীসম্ভাসে

21 November 2023
0
0
0

Be at peace; it is your sister that addresses you. Riquite Lucretia's love," " Lucretia. কপালকুণ্ডলা গৃহ হইতে বহির্গতা হইয়া কাননাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন। প্রথমে ভগ্ন গৃহমধ্যে গেলেন। তথায় ব্রাহ্মণকে দ

30

অষ্টম পরিচ্ছেদ : গৃহাভিমুখে

21 November 2023
0
0
0

"No spectre greets me--no vain shadow this." Wordsworth. কপালকুণ্ডলা ধীরে ধীরে গৃহাভিমুখে চলিলেন। অতি ধীরে ধীরে মৃদু মৃদু চলিলেন। তাহার কারণ, তিনি অতি গভীর চিন্তামগ্ন হইয়া যাইতেছিলেন। লুৎফ- উন্নিসার

31

নবম পরিচ্ছেদ: প্রেতভূমে

21 November 2023
0
0
0

"বপুষা করণোঝিতেন সা নিপতন্তী পতিমপ্যপাতয়ৎ। ননু তৈলনিষেকবিন্দুনা সহ দীপ্তাচ্চিরুপৈতি মেদিনীম্-- রঘুবংশ চন্দ্রমা অস্তমিত হইল। বিশ্বমণ্ডল অন্ধকারে পরিপূর্ণ হইল। কাপালিক যথায় আপন পূজাস্থান সংস্থাপন করিয়া

---