প্রথম দৃশ্য
ঘোষক, হনুমান, লঙ্কাদেবী, প্রহরী
লঙ্কানগরের মেন গেট
জুড়ির গান
রামায়ণের বাহাদুর রামচন্দ্র নয়, বদন তুলে কহ সবে হনুমানের জয়।। কর হনু গুণ-গান, উল্কপালের দু-পাশেতে গাহ হজুমানের জয় ।
হজুমান কথা শোন,
সোটালেমেড, সমান ।।
তাঁব্যপানা পোড়া-মুখ
দেখে ভুজি স্বর্গসুখ,
গাহ হজুমানের জয় ।।
হের বাঁধাকপি কান,
কর হনু গুণ-গান ।।
লালচে রঙ নাকের ফুটোর,
বাবা! দেখেই লাগে ভয়,
গাহ হজুমানের জয় ।
ঘোষক বাঁদরের প্রবেশ ও ঢোলক বাজিয়ে অঙ্গ-ভঙ্গি সহকারে প্রস্তাবনা
প্রস্তাবনা
মহেন্দ্র পর্বতে চড়ি
বীর হনুমান
লঙ্কাদ্বীপ অভিমুখে
করে লম্ফ দান ।
পায়ের দাপটে শিলা
হয় চুরমার,
ফোকর ফাটল দিয়া
জীবজন্তু ভয় পেয়ে
বহে জলধার
করে হু-হুংকার,
যত যক্ষ মজা দেখে
ছাড়ি পানাহার ।।
গাছপালা উপাড়িয়া
আকাশেতে ওড়ে,
বাসা ছাড়ি কাগ চিল
নীলাভ মেঘের মতো
মহাশূন্যে ঘোরে ।।
হনু শূন্যে ধায়,
সাগর লঙ্ঘন করি
যদি সীতা পায় ৷৷
মৈনাক পাহাড় কহে
না থামি তাহারে ছুয়ে
তিষ্ঠ ক্ষণকাল,
সুরসা সাপিনী এবে
হনু দেয় ফাল ।। চাহে গিলিবারে,
তিল সম তনু ধরি
ফাঁকি দেয় তারে।
সিংহিকা রাক্ষসী সে
জলতলে রয়,
ছায়া ধরি হনুমানে চাতুরি করিয়া হনু
মুখে টানি লয় ৷৷
বাঁচাইলা পরাণ,
সুরাসুর সবে তার
করে গুণ-গান ।।
এমতে উত।র শেষে
লম্ব শৈল পরে,
বাঁদুরে প্রথাতে হনু
নাচ গান করে ।।
বুকে চপেটাঘাত করত ঘোষকের ল্যাজ দুলিয়ে সরে দাঁড়ানো এবং হনুমানের লাফ দিয়ে প্রবেশ
হনু। উঃফ। আরেকটু হলেই পৈত্রিক ল্যাজটা গেছিল গো! কি বাঁচান বেঁচেছি, আরি বাপু! নাক মুখ সিল্কে, একটা নীল রঙের মেঘের মতো সমুদ্দুরের ওপর দিয়ে চলেছি তো চলেইছি। কেরামতি দেখে দেবতাদের দাঁত ছিরকুটে গেছে, তাঁরা সব ধন্যি ধন্যি করছেন। • যক্ষ-যক্ষিণীরা পুষ্পবৃষ্টি করছেন। সমুদ্দুরের ঢেউ খেলানো জলের ওপর দশগুণো হয়ে আমার ছায়াটা পড়েছে, ল্যাজটা কেমন সুন্দর এলিয়ে রয়েছে। এমনি সময় কোথাকার তুই কেরে, ল্যাজ ধরে টেনে নামিয়ে আমাকে জলখাবার করতে চাস্? অ্যাঁ! তেমনি সাজাটাও পেলি কি না বল্? এতটুকু বড়িটার মতো হয়ে মুখ দিয়ে সেঁদিয়ে-এই পেরকান্ড বিকট রূপ ধরে তোকে চিরে কুটিকুটি করে কেমন বেরিয়ে এলাম। প্রাণটা বড় ভালো জিনিস রে বাগ্।
এতটুকু বড়িটার মতো হয়ে তোর মুখে সেঁদিয়ে...
হনুর নৃত্য ও গান
উঃফ! বড্ড বাঁচা বেঁচেছিস, রে প্রাণ ছায়া ধরে ক্যায়সা জোরে লাগিয়েছিল টান! চন্দ্রবিন্দু পড়ে যেত নামের আগায়, ঘুচে যেত কলা খাওয়া, মরি হায় হায়! বাঁদুরে বুদ্ধির ক্ষুরে শত শত গড়, চাচা আপনা বাঁচা বলে পেঁপেগাছে চড়।
ঘোমটা দিয়ে লঙ্কাদেবীর প্রবেশ
লঙ্কা। আ সব্বনাশ! তোর সাহস তো কম নয়! বেড়াল হয়ে আমার পেয়ারের পেঁপেগাছে চাপছিস্, অ্যা? যদি নখের খামচি লেগে যায়? ভাগ্ বলছি। আ মোলো যা, তবু যায় না যে। হেই, হ্যাল্, হুশ্! জানিস্ আমি লঙ্কাদেবী, নাক্কসরা রোজ আমার পুজো দেয়, হ্যাঁ। হাঁড়ি হাঁড়ি মোষের মাংস, টক দই-
(হনুর পিঠ ফেরা) ইকি। দেখেছ, বেড়ালটা কি, খারাপ, আমাকে ল্যাজ দেখাচ্ছে! এই খবরদার! নইলে এমনি দাঁত চিরকুটি। করব যে ভয়ে পেলিয়ে যাবি।
হনুর দু পা এগোনো
ও কি! এগিয়ে আসে যে। ওরে বাবা, কামড়াবে-টামড়াবে না তো? ওরে রাগিস্ নে বাছা, তোকে দুধ-ভাত খেতে দোব, আ, আ, আ, পুস্, পুস্, পুস্।
হনু। ছিচরণে পেন্নাম করে বলি মা-ঠাকরুন, চক্ষুর কি মাথা খেয়েছ? কে বেড়াল, কে বাঁদর, তাও জান না? আমি একজন বাঁদর, তোমাদের দেশ দেখতে এইচি।
লঙ্কা। ওঃ, তা হলে বেড়াল নয়? আঃ, বাঁচা গেল-এই-চোপ্। বেড়ালেতে বাঁদরেতে কি তফাতটা হল শুনি? বলি, কি চাস্ তুই?
হনু। শুনেছি লঙ্কা, শহরের পথঘাট সোনা দিয়ে বাঁধানো, তাই দেখতে এইচি, তাকি এমন অন্যায়টা করেছি শুনি? কিচ্ছু নিচ্ছি না, ভাঙছি না, চিবুচ্ছি না, শুধু একটু তাকিয়ে দেখব, তাতে অত রাগের কি হল, কাটবে, রাঁধবে, বাড়বে,
আমি একজন বাঁদর, তোমাদের দেশ দেখতে এইচি!
ঠাকরুন? দেখ, মেয়েরা থাকবে রান্নাঘরে, তাদের মুখে অত গলাবাজি কি শোভা পায়?
লঙ্কা। নাঃ, আজ আমার হাতে তোর নির্ঘাৎ মরণ দেখতে পাচ্ছি। পই-পই করে বলছি এখান থেকে পালা, তা কানে তোলে না। লঙ্কা- নগর রক্ষা করা আমার কাজ। তোকে আমি ঢুকতে দোব না, পালা বলছি- হনু। ঐ যাঃ। ও মা-ঠাকরুন, তোমার খোঁপা খুলে গেছে। লঙ্কা। তবে রে! যত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা! একটা চড় না খেলে মন উঠবে না দেখছি!
ছুটে গিয়ে হনুর গালে প্রচণ্ড চপেটাঘাত
হনু। উ-হু-হু। গিছি গিছি। কিযে কর। আমার লাগে না বুঝি! নেহাত আমি মেয়েছেলের সঙ্গে নড়াই করি না, নইলে তোমাকে আজ আমি মেরে মাদুর বানিয়ে দিতাম না, হ্যাঁ!
লঙ্কা। ইল্লি? তাই দিতিস্ নাকি রে? তবে দিচ্ছিস্ না কেন? হনু। এই যে দিচ্ছি। আমার বাঁ হাতের আস্তে একটা কিল, খেয়ে দ্যাখ দিকিনি কেমন মজা।
বাম হস্তে কিল মারন
লঙ্কা। (ডুকরে কেঁদে উঠে) উরি বাবা রে, মা রে, ও পিসিমা গো -ও! গেলুম গো! শেষটা একটা বাঁদরের হাতে পিটুনি খেয়ে অক্কা পেতে হবে নাকি গো। -নাঃ, যা, ভিতরে গিয়ে দেখে আয় গে। হতোস্মি। তোকে আমি আর কিছু বলব না। লঙ্কারও দিন ঘনিয়ে এসেছে। হা
পতন ও মূর্ছা
হনু। ন্যাকা! একটু ছুঁয়েছি কি না ছুঁয়েছি, অমনি উনি মুচ্ছো গেলেন। যাই, নগরটা দেখেই আসি, সীতা-মা কোথায় আছেন দেখতে হবে তো। ওটা থাক গে পড়ে, ছাগলে খেয়ে যাক।
হনুর প্রস্থান ও লঙ্কাদেবীর মিট মিট, চাওন
লঙ্কা। (উঠে বসে) শুনলে, হতভাগাটার কথা শুনলে? আচ্ছা, এক মাঘে শীত যায় না। যাও না, বাছাধন, লঙ্কানগরে, নাক্কসরা কেউ ছেড়ে কথা কইবে না। আমি ততক্ষণ এখানে বসে বসে জিরিয়ে নিই।
প্রহরীর প্রবেশ
প্রহরী। অ্যা! বড় যে ডিউটির মধ্যিখানে শুয়ে আছ বড়দিদি!
এবার আমাকে বকুনি খাওয়ানোর মজা বের কচ্ছি দাঁড়াও। জম্বু- মালীকে বলে দিচ্ছি। (প্রস্থানোদ্যত)
লঙ্কা। ওরে থাম, থাম! যাস্ নি বলছি, তা হলে তোকে একটা জিনিস দোব।
প্রহরী। ঠিক দেবে তো দিদি? সেবারের মতো করবে না তো?
লঙ্কা। আরে না, না, ঠিকই দোব। সেবার-সেবার-ওরে
সেবার যে আমার পেটব্যথা করেছিল।
প্রহরী। আচ্ছা তা হলে নাহয় জম্বুমালীকে বলব না। কিন্তু প্রহস্ত-ওরে বাবা রে, ওটা কি আসছে রে! না, দিদি, আমি চলি। আমার আবার ওদিকটাও পাহারা দিতে হবে
[ বেগে প্রস্থান
ঝড়ের মতন হনুমানের পুনঃপ্রবেশ ও হতাশভাবে বসে পড়ে কপালের ঘাম মুছন
লঙ্কা। কি? কি হল? রাবণের কিছু হয় নি তো? তার কাছে আমার অনেক টাকাকড়ি গচ্ছিত আছে যে! আহা, বসে বসে মুক্ত নাড়ছ কেন? কি দেখে এলে তাই বল।
হনু। আরি বাগ্! সে যে কি না দেখলাম, সে আর কি বলব! সোনার দ্যাল! হীরের ঝাড়লণ্ঠন! ফটিকের বাসন। তাতে এই বড়-বড় মাংসের বড়া, মাছের কালিয়া, ক্ষীরের সমুদ্দুর, ই-ই-ইস্! (জিব চাটন)
লঙ্কা। খুব সাঁটিয়ে এলি বুঝি!
হনু। (জিব কেটে) ও মা, ছ্যা ছ্যা, কি যে বল ঠাকরুন। আমি। -আমি যে আহ্নিক না করে জলস্পর্শ করি না। কিন্তু কি যে তার। সুবাস গো! তার পর দেখলাম একটা হাতির দাঁতের পালঙ্ক বেনিয়েছে, তার ওপরে মানিকের তৈরি প্রদীপ জ্বলছে, তার সুগন্ধে ভুর্-ভুর্ করছে। আর বাতির নীচে কালো মেঘের মতো কে একটা শুয়ে রয়েছে, সারা গায়ে রক্ত-চন্দন মাখা, গা ভরা গয়নাগাটি, এই বিরাট হাঁ করে নাক ডাকাচ্ছে আর একটা মশা একবার ভেতরে সেঁদুচ্ছে একবার বেরিয়ে আসছে। চার দিকে দেখলাম সব্বাই ঘুমুচ্ছে। একজনকে দেখে সীতা মা ভেবে খুব খানিকটা তাল ঠুকে নেচে নিলাম। কিন্তু দুঃখের কথা আর কি বলব, রামচন্দ্রের কাছে তাঁর গয়নার লিস্টি মুখস্থ করেছিলাম।
সে গয়না মিলল না, কাজেই উনি সীতা নন। লঙ্কা। ও মা, সে কি! তুমি গয়না দিয়ে মানুষ চেনো নাকি?
হনু। তা নয়তো কি। মানুষদের মেয়েদের নাক চোখ মুখ বুঝি আবার আলাদা রকমের হয়? আর যদি হয়-ও, তবু পদ্মরেণু মেখে তাম্বুল চিবিয়ে, কাজল পরে, সবাই একরকম হয়ে যায়। চিনতে হয় গয়না দিয়ে। নাঃ, উঠি এখন।
এদিকে তন্ন-তন্ন করে খুঁজে দেখেছি, তিনি নেই। ঐ যে দূরে বন- বাদাড় দেখছি। যাই, ওখানেই যাই, যদি পাই।
[ প্রস্থান
লঙ্কা। এই রে। ঐখানেই তো সে আছে! এইবার নিশ্চয় মজা শুরু হবে। যাই, আমিও যাই, মজা দেখে আসিগে।
[প্রস্থান
ঘোষক। (বেরিয়ে এসে) উঃ! বাবা! হাতে করে বেরিয়ে পালাবার সুযোগ পেলাম। এতক্ষণ পরে পরানটা ঈস্! একটা পোড়া হাঁড়ির মতো কালামুখো বাঁদর, একটা রাক্ষসী! ভয়ে আমার হাত-পা পেটে সেঁদিয়েছিল। আরি বাগ্!
[প্রস্থান
দ্বিতীয় দৃশ্য
হনুমান, খুদে রাক্ষস, সীতা, গেড়ীবৃন্দ, রাবণ
অশোকবন
হনুমানের প্রবেশ
হনু। আরি বাপ্! না বসলেই নয়। উঃফ আর তো পা চলে নারে। এবার একটু ঐ শিংশপা গাছটির আড়ালে বসে আগে বাঁদুরে বিস্কুটগুলোর সদ্ব্যবহার করা যাক। তাপর দেখা যাবে। বাবা! কত কষ্ট করে লুকিয়ে-চুরিয়ে জোগাড় করতে হয়েছে গো! কেউ না আবার দেখতে পেয়ে ভাগ বসাতে চায় ।
গাছের আড়ালে বসে বিস্কুট-ভোজন। খুদে রাক্ষসের প্রবেশ খুদে। (শূন্যে নাক তুলে জোরে জোরে শুঁকে)
উহুহু। বেড়ে গন্ধটি তো। ও পিসেমশাই, আমাকে দাও! হনু। (বিস্কুট ঢেকে) কে রে তুই? ভাগ বলছি। আমি তোর পিসেমশাই নই। তোর পিসেমশাই রাবণের বাড়ি গেছে। যা, যা। তুইও যা, সেখানে বড়-বড় বড়া ভেজেছে দেখে এলাম। এখানে কিছু হবে-টবে না।
খুদে। তবে আমি চ্যাঁচাই! হা-আ-আ!
হনু। (খুদের মুখ চেপে ধরে) আ সব্বনাশ! এই চুপ চুপ। এই নে ধর বিস্কুট! এ তো আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়া গেল। কি যে করি এখন। কোথায় না তাঁকে খুঁজেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকির ডগাটুকু দেখলাম না। পা ব্যথাটা সারলে, এই বনটাকে সরু চিরুনি দিয়ে আঁচড়াব। কিন্তু তবু যদি না পাই?
খুদে। খাটের তলায় দেখেছ?
হনু। তুই থাম দিকিনি! খাটের তলায় দেখব আবার কি? খাট তো সব রথের চুড়োর চেয়ে উঁচু।
দূরে মলিনবেশে, দুঃখী মুখে, সীতার প্রবেশ। গায়ে সামান্য অলংকার
হনু। এই খেয়েছে। খিদে খিদে মুখ করে উটি কে আসছে? আবার না ভাগ বসাতে চায়। এ তো মহা গেরো দেখছি!
খুদে। উট তোমার বিস্কুট খাবে না। উটি খায় না, চুল বাঁধে না। উট সীতে। আমাকে আরেকটু দাও বলছি, নইলে-
হনু। (আঁতকে উঠে) অ্যাঁ। সীতে কিরে! ঐ কি সীতা নাকি? হ্যাঁ, তাই তো! গলার কণ্ঠিটা রামচন্দ্র যেমন বলেছিল ঠিক তেমনি দেখা যাচ্ছে তো!
খুদে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঐ সীতে। আমার মা ওর চেড়ি। কই, দিলে না বিস্কুট? তা হলে আমি-
উটি খায় না, চুল বাঁধে না, উটি সীতে।
হনু। (সব বিস্কুট খুদেকে দিয়ে) এই নে, নে, সবগুলো খা! আমার খিদে চলে গেছে। ঐ নাকি সীতে, অ্যাঁ! এরই জন্যে রাম-লক্ষ্মণ ইত্যাদি হেদিয়ে গেলেন? আরে, হ্যা, ছ্যা, এর চাইতে কত সুন্দরী কিষ্কিন্ধ্যার পথে-ঘাটে গড়াগড়ি খাচ্ছে-ব্যাটা, তুই এখান থেকে যাবি কি না বল্।
খুদে। না, যাব না তো। মা বলেছে একটু নুন-লঙ্কা মেখে-এই রে! ও বাঁবা। ঐ বোঁধ হয় রাবণ এল!
হনু। ওরে বাবা রে! ওগুলো কি সীতাকে ঘিরে দাঁড়াল! দেখেই যে আমার পিলে চম্স্কাচ্ছে! কি গুগুলো? কুলোর মতো কান, মুলোর মতো দাঁত, ভাঁটার মতো চোখ? নয় তো? শেষটা আমাকেই যদি চেটে খায়! অ্যাঁ, সত্যিকার রাক্ষস কাজ কি বাপু ঘাঁটিয়ে এই শিংশপাটার মগডালেতে চড়ে বসাই যেন ভালো মনে হচ্ছে।
মগডালেতে চড়ন-সঙ্গে খুদে রাক্ষস
খুদে। আঃ, সরো না, আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
হনু। আরে বাবা! চুপ কর, এই সরে গেলাম। খুদে। তোমার ল্যাজটা দিয়ে তা হলে আমাকে জড়িয়ে রেখে দাও, নইলে যদি ভয়ের চোটে পড়ে যাই।
অনুচরবন্দ সহ রাবণের প্রবেশ
সীতা। ফের এসেছিস। যা বলছি, পালা এখান থেকে, নইলে- রাবণ। নইলে কি, রাজকন্যে? তোমার সাহস তো কম নয়। আমি একটা রাজা, আমার দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেখে কি বলে ইয়ে
নইলে কি, রাজকন্যে? তোমার সাহস তো কম নয়।
সীতা। আবালবৃদ্ধবনিতা-
রাবণ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক তাই। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ভয় পায়, সবাই আমাকে ভালোবাসে, আমার গুণ-কীর্তন করে, আর তুমি কিনা আমাকে দেখলেই দাঁত খিঁচুতে শুরু কর!
সীতা। তোকে আমি থোড়াই কেয়ার করি। জানিস, ইচ্ছে করলে আমি নিজেই তোকে ভস্ম করে এক দলা ছাই বানিয়ে দিতে পারি! নেহাত শ্রীরামের অনুমতি পাই নি বলে বেঁচে গেলি। ভালো চাস তো ভাগ এখান থেকে!
রাবণ। হাঁ, হ্যাঁ, তাই যাচ্ছি বাবা। ঠিক যেন একটা আস্ত কেউটে সাপ! এখন যাচ্ছি বটে, কিন্তু এ-ও বলে যাচ্ছি যে আর দুই মাস দেখব, তার পর সরষে বাটা কাঁচালঙ্কা দিয়ে ঝোল সপ্সপে ঝাল রাঁধিয়ে-
চেড়িবৃন্দ। (জিবের ঝোল টেনে) চাট্টিখানি ঝরঝরে ভাত দিয়ে না মেখে-
রাবণ। চোপ্। দ্বত বড় মুখ নয়, তত বড় কথা! ঝোল রাঁধা হলেও তোরা কিচ্ছ পাবি নে। ভালো চাস্ তো সীতাকে পোষ মানা, তার পর না হয় দেখা যাবে।
তোকে আমি থোড়াই কেয়ার করি।
[ অনুচর সহ রাবণের প্রস্থান
দুর্মুখী। এই সীতে, শুনলি তো, বেশি তেজ দেখালে শুঁটকি মাছ হয়ে যাবি।
বিনতা। ওঃ! রাবণের রানী হতে ওর আপত্তি! একটা চ্যাং মাছের মতো তো রূপের ছিরি! রাবণটার পছন্দও বলিহারি! বলি, রানী হবার তোর যোগ্যতাটা কোথায় যে এত দেমাঙ্ক করিস? বিকটা। হাঁউ-মাউ-খাঁউ !
অজামুখী। অত কথায় কাজ কি ভাই, আয় জলখাবার করি। শূর্পনখা। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ভাঁই হঁক। বাঁবা, এখনো নাঁকের জ্বালায় অলুম!
ব্রিজটা। ওরে, তোরা অমন করিস নে, বরং নিজেদের থেকে ফেল্। এতক্ষণ ঘুমুতে ঘুমুতে সে যা স্বপ্ন দেখলুম, ভেবেও আমার পায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছে।
চেড়িবৃন্দ। কি দেখলে, কি দেখলে, দিদি?
ব্রিজটা। দেখলুম রাবণ ন্যাড়া মাথায় তেল মেখে, লাল কাপড় পরে, গলায় কুরবীফুলের মালা ঝুলিয়ে, পুষ্পক-বুধ থেকে ধপাস, চেড়িবৃন্দ। এ মা, ছি, ছি!
ত্রিজটা। আরো দেখলুম, রাবণ গাধায় চেপে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে, গাধা থেকে পিছলে যেই-না কাদায় পড়া, অমনি একটা কালো কুকুচে মেয়ে এসে, তার গলায় দড়ি দিয়ে হিড়, হিড় করে টেনে নিয়ে চলল- চেড়িবৃন্দ। এ রাম! রাবণটার যদি কোনো, আক্কেল থাকে! ব্রিজটা। আরো দেখলুম রাম-লক্ষ্মণ এলেন, সীতা চার দাঁতওয়ালা হাতির পিঠে উঠে চাঁদ-সূর্য ছুলেন-ওরে তোরা সীতার পা ধরে ক্ষমা কা, রক্ষে চা, তাপর এখান থেকে পালা! চেড়িরা। পালা পালা পালা পালা।
[ সকলের প্রস্থান
সীতা। হায়, হায়, আমি কি পাথর দিয়ে তৈরি যে তবুও বেঁচে আছি!
হনু। ছি, মা, অমন কথা বলতে হয় না। তুমি না জনকরাজার মেয়ে, সেই সীতা, রামচন্দ্র যাকে খুঁজতে এসে সুগ্রীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন। সেই সুগ্রীব আমাকে পাঠিয়েছেন। কত দেশে, কত বনে- উপবনে ঘুরে, শেষে সম্পাতি পাখির কথায়, সাগর পেরিয়ে, আজ সত্যি বুঝি সীতা মায়ের দেখা পেলাম।
সীতা। কে তুমি? এ-সব কথা কেন বলছ? তুমি নিশ্চয় রাবণ, আমার' সঙ্গে ছলনা করছ।
হনুমানের নীচের ডালে অবতরণ, খুদে রাক্ষস তখনো সঙ্গে
সীতা। আরে, এ যে একটা সত্যিকার বাঁদর। কিন্তু চেহারাটি 'কি আশ্চর্য! অশোকফুলের মতো লাল গায়ের রঙ, সোনার মতো চোখ- আহা, তাই যেন হয়, বাছা, তোমার কথাই যেন সত্যি হয়।
হনু। রামচন্দ্র এই আংটি আপনাকে দেখাতে বলেছেন। এবার চলো, মা। আমার পিঠে চাপো। তোমাকে নিয়ে আমি সাগর পার হয়ে শ্রীরামের কাছে চলে যাই ।
সীতা। ও মা, সে কি। আমার ভারে যে তুমি চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। হনু। ইচ্ছা করলেই আমি এর শতগুণ বড় হতে পারি, দেখবে? খুদে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিও দেখব! আমার মায়ের মুখটি কি বড়!
ঠিক ছাগলের মতো সুন্দর।
হনু। তুই থাম দিকিনি। বড়দের কথার মধ্যে কথা বলতে হয় না, তাও জানিস না? মা সীতা, আর বিলম্বে কাজ কি, তুমি আমার পিঠে উঠে বসো। আর আমিও সাঁ করে উড়ে পড়ি।
খুদে। ধেৎ! কি যে বল! বাঁদর আবার ওড়ে নাকি?
সীতা। না বাছা হনুমান, ও আমি পারব না। সমুদ্রের ওপর দিয়ে যাবার সময়, নির্ঘাৎ আমি মাথা ঘুরে ধপ্ করে পড়ে যাব।
খুদে। তা হলে সুরসা সাপিনী খপ্ করে তোমাকে গিলে খাবে। আর তা হলে আমার মায়ের জলখাবারের কি হবে? ও মা মা- গো-৩-৩!
হনু। এই। এই কি হচ্ছে! চোপ্ নইলে এক চড়ে তোকে তাল-
গোল পাকিয়ে দেব। এই নে ধর, সুপুরি খা। খুদে। (এক গাল হেসে) কি মজা, না? হনু। তা হলে কি হবে, মা? এই বিকট রাক্ষুসীদের মধ্যে কি করে তোমাকে ছেড়ে যাই? সত্যি যদি খেয়ে ফেলে?
সীতা। না বাছা, সে ভয় নেই। রাবণ তা হলে ওদের আস্ত রাখবে না। তুমি নির্ভয়ে গিয়ে শ্রীরামকে আমার প্রণাম দাও, শ্রীলক্ষ্মণ- কে আশীর্বাদ দাও! আর দেখ, এই আমার মাথা থেকে চূড়ামণি রত্নটি খুলে দিলাম। এটি আমার বিয়ের সময় আমার বাবা জনকরাজা, আমার স্বস্তরের হাতে দিয়েছিলেন। এটি দেখলেই শ্রীরামের সে-সব কথা মনে পড়বে। যাও বাছা, নিরাপদে। তাঁদের শিল্পির নিয়ে এসো, আমাকে তাঁরা উদ্ধার করুন।
হনু। আপনার চরণে শতকোটি প্রণাম করি, মা।
[ সাঁতার প্রন্থান
হনু। এই আমি গেলাম বলে। কিন্তু তার আগে এই বনটাকে তহু নছ করে দিয়ে যাব। হেই, হপ্, হাপ্। ঝননন, রণনন। মার্, মার্, মার, কার্টু, কাট্, কাট্। গাছের ডাল ভাঙ্ ভাঙ্, ভাঙ মড়-নন্দ-মড়াৎ। খুদে। আমিও ডাল ভাঙব! ও পিসেমশাই গোঁ, আমাকে ফেঁলে কোঁথায় চললে!
গাছপালা ভাঙতে ভাঙতে তুমুল কোলাহল সহ হনুমানের প্রস্থান, পিছন পিছন খুদে রাক্ষস তৃতীয় দৃশ্য
কালনেমি, গায়কত্বন্দ, রাবণ, দ্বারপাল, চেড়িত্বন্দ, খুদে রাক্ষস, সভাসদূগণ, বিরাগাক্ষ
রাবণের সভাগ হ
জুড়ির গান
রামায়ণের বাহাদুর রামচন্দ্র নয়
কহ বাহু তুলে বদন খুলে
হজুমানের জয় ।।
সাগরপারের নামটি শুনে
শুষেন পাহে ভয় ।।
শতবলীর অষ্ট রস্তা,
গল্প-গবাক্ষের-লয় ।।
অঙ্গদ হলেন শিবনের
ভাবেই তন্ময় ।।
আর মূর্তিমান জাম্বুবান
চক্ষু বুজে রয় ।।
হাত-পা পেটে সেঁদোয় পাছে
লঙ্কা যেতে হয় ।।
চের চের বীর জানা আছে,
কেউ না লাগে হনুর কাছে,
কোথা সুধীব বিভীষণ,
চটি ফেলে পলায়ন ।
লঙ্কা গিয়ে একলা হনু
সীতার খবর লয়।
কালনেমি। আঃ, আবার গোড়া থেকে শুরু
(বেসুরো গলায়)-এ-এ-রাবণ রাবণ রাবণ রাবণ-
গায়করা। (সুর করে)
রাবণ বধিবে রাম-লক্ষ্মণ,
মেরে করবে তুলোধুনো,
নে ধর-
আহা, রাবণের কথা শুনো,
পাঠাবে শমন-সদন
ঐ দুরন্ত বিভীষণ,
রাবণ বধিবে রামলক্ষ্মণ-
প্রথম গায়ক। তার মানে কি হল, স্যার?
কালনেমি। মানে আবার কিরে? হ্যাঁরে, এই সামান্য জিনিসটার
মানে বুঝতে পাল্লি না রে, ইডিয়ট?
প্রথম গায়ক। না, না, বুঝতে পেরেছি ঠিকই, তবে কি জানেন ঐ একটু গুলিয়ে যাচ্ছে, কি বলছে তা টের পাচ্ছি নে, উ-উ-উঃ । কালনেমি। ও কি? ও কি হচ্ছে?
প্রথম গায়ক। চিমটি কাটছে, স্যার। তা হলে মানেটা? দ্বিতীয় গায়ক। দুৎ। ওঁকে জিগেস কচ্ছিস কেন? উনি কি
গাইতে জানেন, নাকি আর কিছু জানেন? কালনেমি। চোপ্ বেয়াদব। হ্যাঁ, কি যেন বলছিলাম? ও হ্যাঁ গানের আবার মানে কি রে? গানের বুঝি মানে হয়?
দ্বিতীয় গায়ক। না স্যার, না স্যার, গানের শুধু সুর হয়। কালনেমি। ও-ও! বড্ড বাড় বেড়েছে, না? ওই বলছি, ঊঠে দাঁড়া! বল্, তুই-ই বল্ মানেটা কি!
দ্বিতীয় গায়ক। বলছি, বলছি। ঐ রাবণ বধিবে-অর্থাৎ কিনা রাবণকে পিটিয়ে হাড় গুঁড়ো করবে। কে করবে?-না, রাম-লক্ষণ। বুঝলে কিনা, তাতেও রক্ষে নেই, রাবণের কি হালটা হবে? না, তাজ্জব যুদ্ধসজ্জায় বিভীষণের প্রবেশ হবে, ব্যাটা বেজায় দুরন্ত, রাবণের ঠ্যাং ধরে হিড়হিড় করে টেনে, এক্কেবারে শমন-সদন, অর্থাৎ কিনা পুড়িয়ে-টুড়িয়ে একাকার।
সভাস্থসকলে। সাধু। সাধু। দশমুণ্ডুর একটা টিকি পর্যন্ত বাকি থাকবে না। বাঃ, বাঃ, বেশ বেশ।
প্রথম গায়ক। তাপর কি হবে?
কালনেমি। তাপর কি হবে। ন্যাকা। তাপর কি হবে, উনি জানেন না যেন। কোথাকার গবেট রে! তার পর রাবণ অক্কা পেলে, রাম-লক্ষ্মণ এসে লঙ্কা তছনছ করে, দেবে, তোদের কাউকে বাকি রাখবে না। তাই বলছিলুম যুদ্ধ কর, যুদ্ধ কর।
প্রথম গায়ক। অ্যা? যুদ্ধ করব? এই যে বললেন গান কর। কালনেমি। তুই তো আচ্ছা গাধা রে, ঠাট্টার সময় ইয়াকিও বুঝিস নে? রাবণ মলে-
দ্বারপালের প্রবেশ
দ্বারপাল। স্-স্-স্ চুপ, চুপ, রাবণ আসছে। কালনেমি। স্-স্-স্ বসে পড়, যে যার জায়গায় বসে পড়। খোল করতাল ঢাক ঢোল মৃদঙ্গ সব রেডি ?-আচ্ছা, এইবার-
প্রথম গায়ক। স্যার! রাবণ আসছে? কই, তা হলে মরে নি তো? এ কি রকম অন্যায় কথা!
কালনেমি। স্-স্-স্! আরম্ভ কর, আরম্ভ কর, আহা! এটা কি পেট চুলকোবার সময় হল? গায়কবৃন্দ। (বাদ্যের সঙ্গে) রাবণ বধিবে রাম-লক্ষ্মণ, মেরে করবে তুলোধুনো,
রাবণ। এই। এই। অত চ্যাঁচাস্ নি। ও হে কালনেমিমামা, বাইরে অত হট্টগোলটা কিসের? হাতিমুখো, ঘোড়ামুখো এক পাল মেয়ে- ছেলে দেখলাম যেন।
কালনেমি। এঃ। গোলমাল নাকি? আমি গান শেখাচ্ছিলাম কিনা তাই-
রাবণ। ঢের হয়েছে, এবার ক্ষান্তি দিন। প্রহরী।
দ্বারপালের প্রবেশ
দ্বারপাল। এজে মহারাজ! রাবণ। বাইরে কি হচ্ছেটা কি? খেয়ে-দেয়ে মুখে পান ফেলে
সভায় একটু ঘুমোতেও দিবি না নাকি? কে ওরা?
দ্বারপাল। ওরা না-এজে ওরা অশোকবন থেকে এয়েচে, সেখানে নাকি কি হয়েচে।
রাবণ। অ্যা! অশোকবনে আবার কি হল? ডাক্ ডাক্ শিল্পির ডাক ওদের।
দ্বারপাল। (দরজার কাছে গিয়ে) অয়! তোমরা এবার এসো।
হয় সাতটি রাক্ষসীর প্রবেশ, তাদের মধ্যে অজামুখী ও খুদে রাক্ষস
প্রথমা। তবে-না ঢুকতে দেবে না? এক চড়ে এক্কেবারে সব দাঁতগুলোকে-!
দ্বিতীয়া। না, দেবে না ঢুকতে! ওর ঘাড় দেবে।
তৃতীয়া। এই সর্ ব্যাটা, দরজা থেকে। দে ব্যাটাকে ঠেলে
যমের বাড়ি পাঠিয়ে।
চতুর্থ।। ওর কান ছিঁড়ে দে!
পঞ্চমা। চিমটি কাট্!
ষষ্ঠা। খিচে দে, খিচে দে!
সপ্তমা। এইবারে বোঝ বাছাধন। বলে নাকি ঢুকতে দেবে না। খুদে রাক্ষস। আমি কঙ্কচিষ্টা খাব।
দ্বারপাল। ওরে বাবা রে। মেরে ফেললে রে!
[ পলায়ন
রাবণ। (অবাক হয়ে) মামা এরা কারা? অমন কচ্ছে কেন? কালনেমি। (মাথা চুলকিয়ে) তা আর করবে না? অশোকবন ভেঙে চুরমার! গুদের বাসা-ফাসার আর-কিছু রাখে নি!
রাবণ। কে রাখে নি?
অজামুখী। ঐ একটা বাঁদর, মহারাজ! ভারি দুষ্টু, কত মানা
করছি, শুনছে না।
রাবণ। কোথাকার বাঁদর? কি চায় সে? কেউ দেখেছে
তাকে?
খুলে। আমি দেখেছি মহারাজ। আমি না-আমি ওর বন্দুক। আমাকে বিস্কুট দেহে। ভারি ভালো বাঁদর।
অজা। এই চুপ, চুপ, পাঞ্জি বেয়াড়াকে ভালো বলতে হয় না।
রাবণ। কি চায় সে?
খুদে। তা জানি না। কি সব খাচ্ছিল মগডালে বসে। সীতেকে বলল, আমার পিঠে চাপো, আমি বোঁ করে উড়ে যাই। বাব্বা। সীতের কি ভয়, কিছুতেই গেল না। আমি হলে-
রাবণ। চোপ্। বাঁদরটার আস্পর্ধা তো কম নয়। গাছপালা নষ্ট করল, তা তোমরা কেউ বাধা দিতে পারলে না? একটা সামান্য বাঁদর দেখে ভয় পেলে?
প্রথমা। ওমা! সামান্য কোথায়। তেড়ে আসে, ভেংচি কাটে, ল্যাজ আছড়ায়, কান নাড়ে, বিকট চ্যাঁচায়!
দ্বিতীয়া। আর ল্যাজ দিয়ে পাকিয়ে ধরে এই বড়-বড় গাছ শেকড়
বাকল সুদ্ধ উপড়ে আনে। রাবণ। মামা! একটা সামান্য বাঁদর-নাঃ, এরা ঠিকই বলেছে,
সামান্য নয় তা হলে। হয়তো রাম-লক্ষ্মণই বাঁদর সেজে--
সভাস্থ সকলে। (উঠে দাঁড়িয়ে) অ্যা! তাই নাকি। রাম-লক্ষাপ। নাকি? তা হলে আমরা কোথায় যাব গো।
রাবণ। চুপ, কাপুরুষের দল। রাম-লক্ষ্মণের নাম শুনেই তোমাদের আত্মাপাখি খাঁচাছাড়া তো তারা সামনে এলে যুদ্ধ করবে কি করে। বসো, বসে যে যার কাজ কর। আমি একটু ভেবে দেখি।
যে-যার জিনিসপন্ন গুছোতে ব্যস্ত হওন
প্রথম সভাসদ।-এই রে! আমার আবার স্বর্ণপটিতে জরুরি কাজ আছে। নেতান্ত না গেলেই নয়।
দ্বিতীয়। আমাকে যেতে হবে রথের ডিপোতে। স্বশুরমশাই আসছেন কিনা।
তৃতীয়। ওয়াক্। পেটটা এমন মোচড় দিয়ে উঠল যে এখানে আর থাকা নিরাপদ নয়।
চতুর্থ। আমার জন্য ওদিকে দলিল-পত্র নিয়ে তিনটে লোক আবার
বসে রয়েছে!
রাবণ। ওরে জম্বুমালীকে ডাক্, সে যা হয় একটা ব্যবস্থা করুক। এই তোর নাম কিরে? আমার পা থেকে জুতো-জোড়াটা খুলে দে তো বাগ্, পা দুটোকে তুলে বসি। কেমন ব্যথা-ব্যথাও কচ্ছে। তা ছাড়া সিংহাসনের তলাটাতে শুধু রাম-লক্ষ্মণ কেন, তাদের হাতি ঘোড়াও লুকিয়ে থাকতে পারে।
সভাস্থ সকলে। অ্যাঁ। (সকলের ঠ্যাং তুলে বসন) রাবণ। কই, জম্বুবালী এখনো এল না? প্রথম সভাসদ্। সে আসতে পারবে না স্যার, তার দাঁত
কন্কন কচ্ছে। রাবণ। কে বলেছে ওর দাঁত কল্ক কচ্ছে রে হতভাগা?
প্রথম। বাঃ। ও নিজেই তো যাবার সময় বলে গেল।
রাবণ। কি বলে গেল?
প্রথম। বলল, ভুড়ো ব্যাটা আমার কথা জিঙ্গেস করলে বন্ত্রিস আমার দাঁত কল্ক কচ্ছে। আমি ঘুমুতে গেলাম।
রাবণ। ঘুমুতে গেলাম? ব্যাটা আর ঘুমুবার সময় পেল না।
বেশ, ও না যায় তো বিরূপাক্ষ যাক।
বিরু। আমি, স্যার? আমি কি করে যাব? আমার না গায়ে
ফোকা? তা ছাড়া গুরুদেব মানা করেছেন।
রাবণ। আহা! কি জ্বালা। তোমার সঙ্গে দুর্ধর, প্রথস, ভাসকর্ণ, যুপাক্ষ, সবাই যাবে।
বিরু। কই, কই তারা? এখানে তো কাকেও দেখছি না।
রাবণ। মামা, পাইক পাঠিয়ে তাদের ধরে এনে বাঁদরটাকে বন্ধ করতে পাঠিয়ে দাও তো। আমি ততক্ষণ একটু ঘুমিয়ে নিই।
রাবণের শয়ন ও নিদ্রা। বিরূপাক্ষ, কালনেয়ি ও সভাস্থ সকলের প্রস্থান। যেতে যেতে রাবণের নাক-ডাক। শুনে রাক্ষসীদের চমক লাগন
মঞ্চের আলো নিবে গিয়ে আবার জ্বলে উঠবে। রাবণ তখনো নিদ্রিত, নাক -ডাকা চলেছে। হুড়মুড় করে কালনেমির প্রবেশ
কালনেমি। বলি, ও রাজা, ও ভাগ্নে, আর কত ঘুমুবে? এদিকে
সবকটাই যে পটল তুলল। তুমি কখন যাবে?
রাবণ। (চমকে উঠে) অ্যাঁ, কে কি তুলল বললে? কালনেমি। (কপাল চাপড়ে) হায়! হায়! ওদিকে লঙ্কার সর্বনাশ
হতে চলেছে আর তুমি এদিকে দিব্যি নাক ডাকাচ্ছ!
রাবণ। (পেটে হাত বুলিয়ে) বড্ড খেইছিলুম কিনা। সত্যি মন্দোদরীর মতো অমন খাসা রাঁধিয়ে আর দেখলাম না। তাকে পটল
তুলেছে বললে? কালনেমি। কে তোলে নি তাই বল। দুর্ধর, প্রথস, ডাসকর্ণ, জম্বুমালী, বিরূপাক্ষ-
রাবণ। অ্যা! বল কি! একটা ছোট বাঁদরে-
কালনেমি। ছোট নয়, ভাগ্নে, ইচ্ছেমতো সে পর্বতের সমান বড়ও হতে পারে। আর সে কি যুদ্ধ! এই বড়-বড় থাম্বা নিয়ে, তাই দিয়ে পেটাচ্ছে, ঐ রথের উপর লাফিয়ে পড়ছে, ঘোড়াটোড়া সবসুদ্ধ চ্যাপটা জিবে-গজা। ঐ হাতি দিয়ে হাতি মারছে, ঘোড়া দিয়ে ঘোড়া মারছে রাক্ষসগুলোকে ইঁদুরের মতো দূরে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রাবণ। কি সর্বনাশ। কিন্তু অক্ষ যদি--
কালনেমি। অক্ষ? অক্ষ কি আর আছে? তাকে একেবারে
ধুলোপড়া করে দিয়েছে।
রাবণ। হায়! হায়! এও ছিল কপালে।
কালনেমি। এখন কেঁদে কি হবে ভাগ্নে? তখন পই-পই করে বলি নি, ঐ সীতেটাকে এনো না, এনো না, তা কে কার কথা শোনে। সে যাক গে, এখন কুমার ইন্দ্রজিৎ ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে গিয়েছেন। দেখতে দেখতে, ব্যাটাছেলেকে এইখানে নিয়ে এসে ফেলবেন, দেখো। ব্রহ্মাস্ত্র আটকানো শুধু বাঁদরের কেন, রামেরও কম্ম নয়।
নেপথ্যে। জয়, কুমার ইন্দ্রজিতের জয়। মিলিত কণ্ঠ। হেঁইয়ো হো। হেঁইয়ো হো! হেঁইয়ো হো! কালনেমি! ঐ বোধ হয় এল। ভাগ্নে ওঠো, ওঠো, আর ভয় নেই।
চতুর্থ দৃশ্য
রাবণ, সভাসদ্গণ, হনুমান, রাক্ষসগণ, নিকুম্ভ, মন্ত্রিগণ ও জনতা
রাবণের সভাগৃহ
রাবণ সিংহাসনে পা গুটিয়ে বসে ব্যস্ত হয়ে হাঁটু নাচাচ্ছেন। মন্ত্রীরা ভয়ে ভয়ে থেকে থেকে সিংহাসনের তলায় উকি মারছেন। সভাসদ্রা ও জনতা ব্যস্ত হয়ে পাইচারি করছে, দরজার দিকে তাকাচ্ছে, বাইরে যাবার সাহস হচ্ছে না।
নেপথ্যে সুর করে
মারো জোয়ান হেঁইয়ো!
আউর ভি থোড়া হেঁইয়ো। এমনি ভারী, এমনি মোটা, আর কোথা কেউ নেই-ও
হেঁইয়ো মারো বল্।
(গান)
উরি বাবারি
ব্যাটা বেজায় ভারী।
খায় শুধু গুপ্-গাপ্
ডাক ছাড়ে হুপ্-হাপ্!
পিটিয়ে করল গুঁড়ো গুঁড়ো
অমন ভালো নগর-চুড়ো মনটা বড় খল!
ভালোমানুষ সাজে কিন্তু মনটা বড় খল।
আহা, অশোকবনের দশা দেখে,
চক্ষে ঝরে জল
হেইয়ো মারো বল্।
আষ্টেপৃষ্ঠে দড়িদড়া দিয়ে বেঁধে হনুকে চ্যাংদোলা করে আট-দশজন রাক্ষসের প্রবেশ ও ধপাস্ করে দোর গোড়াতেই ফেলন
রাক্ষসদের পান
বলি ও রাবণ রাজা
এ কেমন দিলে সাজা।
কাঁধে চেপে ব্যাটাচ্ছেলে
পাচ্ছে রাম নাম!
ভারের চোটে প্রাণটা বেরোয়
ঝরছে মোদের ঘাম!
ভোগের বেলা-
হনুমান। (খোঁচা দিয়ে) বলি, ও অলম্বুসের দল, একটা কি গান গাইবার সময় হল? এইখেনেতে নামালি যে বড়? ওঁর কাছে নিয়ে গিয়ে আমাকে ফেল্, নইলে আমাকে উনি ভালো করে অবলোকন করবেন কি করে? এরই মধ্যে হাঁপিয়ে গেলি নাকি? কি খাস্ তোরা? দুব্বোঘাস বুঝি?
প্রথম রাক্ষস। আর পারি নে, বাপু। অত ষে বঞ্চিমে কচ্ছিস, নিজে হেঁটে একটু যেতে পারিস নে?
হনু। ই-ই-ইস্! তোর কাজ আমি করব কেন রে? তুই মাস-কাবারে মাইনে পাস-না? তা ছাড়া, আমি বন্দীদশায় রাজসমীপে আনীত হচ্ছি, অত হাঁটা লাফানো কি শোভা পায়? নে, নে, তোল্ দিকি। আচ্ছা, আমিই নাহয় নিজের থেকে তোদের ঘাড়ে চাপছি। এই নে, ধর্! (ঘাড়ে ঠ্যাং স্থাপন)
দ্বিতীয় রাক্ষস। উ-হু-হু, ওরে বাবা রে, মরে গেলাম রে, কাঁধটার আর কিছু রইল না গো? ও রাজা, বসে বসে দেখছ কি? তোমার সামনেই কি আমাকে চ্যাপ্টা করে ফেলবে?
রাবণ। চুপ কর, বেয়াদব। কি, লাগিয়েছটা কি? এই কি তবে সেই দুর্বৃত্ত দুরাচার, যে আমার সোনার অশোকবন লন্ডভণ্ড করে এক কান্ড করেছে? এ তো একটা সাধারণ কপি দেখছি- জনতার মধ্যে থেকে। কি? কি বলছে রাবণ? ভালো করে
শুনতে পাচ্ছি না! বিড়-বিড়, কচ্ছে কেন? গলায় জোর পায় না
নাকি?
রাবণ। (চিৎকার করে) এটাকে এনেছিস কেন? একে তো একটা সাধারণ কপির মতো দেখাচ্ছে।
জনতার প্রথম কন্ঠ। কবি? অ্যা? বাঁদরটাকে কবি বলছে কেন?
দ্বিতীয় কণ্ঠ। কে জানে। কবিদের মতো মাথায় লম্বা লম্বা লোম
বলে বোধ হয়।
মন্ত্রী। আঃ, তোরা চুপ করবি কি না। কবি নয়, কপি। প্রথম কণ্ঠ। কপি? কপি কি ভাই? দ্বিতীয় কণ্ঠ। কপি জানিস না? বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওল-
কপি। ওকে খেয়ে ফেলা হবে কি না, তাই কপি বলা হচ্ছে। প্রথম কণ্ঠ। ও, তাই বল। আমি কপি খেতে বড্ড ভালোবাসি। রাবণ। চোপ্। তোদের দিনরাত খালি খাই আর খাই। লজ্জাও করে না।
মন্ত্রী। আহা, মহারাজ, ওদের অমন বলতে নেই, ওরা হল গিয়ে আপনার প্রজা, যুদ্ধের সময় প্রাণ দেবে, ওদের চটাতে হয় না। শোনোবাছা, কৃষ্ণপক্ষে কপি খেতে নেই। যাও, এখন যে যার জায়গায় বসো দিকিনি।
রাবণ। আমরা তো ছোটবেলায় ধামাচাপা দিয়ে বাঁদর ধরতাম। তা এটাকে ধরতে ব্রহ্মাস্ত্র লাগল কেন? ইকি! বাঁদরটা আমার দিকে অমন পিট পিট করে তাকাচ্ছেই-বা কেন?
হনু। 'অহো রূপমহো ধৈর্যমহো সত্ত্বমহো দ্যুতি! ওহে রাবণ, পবন-নন্দন কচ্ছে তোমার স্তুতি। যেমন বিরাট বাহু তোমার, তেমনি বুকের ছাতি, এত রূপের সঙ্গে কেন এতটা বজ্জাতি ?
রাবণ। কে এ? এ তো সাধারণ বাঁদর নয়। একি তবে শিবের অনুচর, নন্দী? নাকি অসুরদের রাজা, বাণ? একটু দেখো তো মন্ত্রী।
নিকুন্ত। হ্যাঁরে, কে পাঠিয়েছে তোকে? কুবের? যম? ইন্দ্র? সত্যি কথা বল দিকিনি, তা হলে তোর বাঁধন খুলে দেব! মিথ্যা বললে কিন্তু পিটিয়ে পাপোশ বানাব।
হনু। বাঁধন আবার খুলবে কি গো? সে তো আপনিই খুলে গেছে। অনেক কষ্টে ধরে রেখেছি। আর কিছু থাকে তো দাও । রাবণ। অ্যা! ব্রহ্মাস্ত্র খুলে গেছে মানে? সে আবার খোলে নাকি? নিকুন্ত। আরে, সত্যিই তো তাই দেখছি। এটা কি করে সম্ভব হল ভেবে পাচ্ছি না।
হনু। মহারাজ, এ গবেটটাকে পেন্সিল দিয়ে দিন। ব্রহ্মান্তের ওপর শনের দড়ি পড়লে যে ব্রহ্মাস্ত্র খুলে যায়, আহাম্মকটা তাও জানে না! ওরে ব্যাটা, মাছের মুড়ো খা, বুদ্ধি বাড়বে।
সভাসদ্রা (বেঞ্চির ওপর চড়ে) অ্যাঁ! তাই নাকি! বাঁধন খোলা নাকি। যদি কামড়ায়? ও বাবা! তবে আমরা এখন বাড়ি যাই, খাবার সময় হয়ে গেছে, স্ত্রী ছেলেপুলেরা বসে আছে।
সকলের পাশের দরজার দিকে অগ্রসর হওন।
রাবণ। চোগ! যে যার আসনে বসো গে। (হনুকে) বাছা, তুমি কি চাও?
হনু। চাই তো অনেক কিছুই, কিন্তু দিচ্ছে কে? আপাতত মা জানকীকে ছেড়ে দিলেই খুশি থাকব।
রাবণ। (চিৎকার করে) বাঁদরটার তো বড় বেশি আস্পর্ধা দেখছি। বন্দী অবস্থাতেও চোখ রাঙাচ্ছে!
হনু। ও মা। বলে কি। চোখ রাঙালাম কোথায়? আমি বাঁদর কিনা, আমার চোখটাই লালমতন। সত্যি রাঙালে তোমার দাঁত- কপাটি লেগে যেত। তোমার জন্যই বলছি, সীতা-মাকে ছেড়ে দাও। নইলে তুমি, তোমার রানীরা, ছেলেপুলেরা, ভাইবোন, পিসেমশাই, কালনেমিমামা, সভাসদ, অনুচর, ভাই-বেরাদার, লোক-লস্কর, মায় লঙ্কাশহর কিছুর বাকি থাকবে না, সব ধুলোপড়া হয়ে যাবে।
সভাসদ্রা! (এক বাক্যে) না, না, না, না, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না, ঠাকুরমশাই মানা করেছেন, তা ছাড়া আমরা কেউ সেখানে ছিলাম না।
রাবণ। চোপ্। কাপুরুষের দল! বেয়াদবি সহ্য করেছি, কিন্তু আর নয়। দেখো, বাঁদর, তোমার অনেক বুঝতে পারছি তুমি রামের লোক, নইলে ইঁদুর বাঁদর নিয়ে লঙ্কা আক্রমণ করার সাহস আর কার হবে? তোমার উচিত সাজার ব্যবস্থা করছি। মন্ত্রী, একে বধ করা হোক।
নিকুম্ভ। সহজে মরবে বলে তো মনে হয় না, যা ঠ্যাঁটা! তা ছাড়া-
রাবণ। থামলে কেন, মন্ত্রী? তা ছাড়া কি?
জনতার মধ্যে থেকে। ও বলতে ভয় পাচ্ছে, রাজা। পাছে ভালো কথা কানে গেলে তুমি রেগে যাও।
রাবণ। নির্ভয়ে বলো, মন্ত্রী। তা ছাড়া কি?
হনু। কি আবার তা ছাড়া? ও বলতে চায় দূতকে বধ করা মহাপাপ। তার মাথা মুড়িয়ে ঘোল ভালা যেতে পারে। তাকে লাঠিপেটা করা যেতে পারে। ঠ্যাং ভাঙা, কান ছেঁড়া, মাথা নীচের দিকে করে গাছ থেকে ঝুলোনো, এই-সবই চলতে পারে, কিন্তু বধ করা যায় না।
রাবণ। যায় না বুঝি? কেন যায় না?
নিকুন্ত। কি যেন একটা হয়, ঠিক মনে পড়ছে না। তবে ভারি
খারাপ কিছু।
রাবণ। বেশ, তোমাদের সকলেরই যখন তাই ইচ্ছা, তখন তাই হোক।
হনু। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেই ভালো। নইলে আমাকে বধ করলে রাম- লক্ষ্মণের কাছে গিয়ে, তোমাদের সাহসের কথা কে বলবে, শুনি? ঐ সাগর লাফিয়ে যাওয়া তোমাদের কশ্ম নয়। তা ছাড়া, আমি নিজে গিয়ে সব কথা বুঝিয়ে না বললে, তাঁরা না আবার ভেবে বসেন ষে আমাকে দেখেই তোমাদের মুখগুলো দিস্ কাইন্ড অফ্ স্মল্ হয়ে গেছে, কিছু বলতেও সাহস পাচ্ছ না। আর সব চাইতে বড় কথা হল বধ করলে যদি শেষটা সত্যি সত্যি মরে যাই, তা হলে কি হবে?
রাবণ। চোপ্। নাঃ এ তো আয় সহ্য করা যায় না। এ হতভাগাটার ল্যাজে আচ্ছা করে ন্যাকড়া জড়িয়ে-
প্রথম রাক্ষস। অত ন্যাকড়া কোথায় পাব, স্যার? দেখছেন না, চোখের সামনে বাঁদরটা কেমন হু-হু শব্দে বেড়ে যাচ্ছে!
রাবণ। কোথায় পাব আবার কি? কেন, তোদের পরনে কাপড়- জামা নেই? তার থেকে ছিঁড়ে নিবি। তাতে বেশ করে তেল চেলে-যে যার বাড়ি থেকে তেল আনবি-হ্যাঁ, কি যেন বলছিলাম, বেশ করে তেল ঢেলে, আগুন ধরিয়ে, সারা শহরময় ব্যাটাকে ঘুরিয়ে আনবি। সবাই দেখুক রাবণের সঙ্গে যারা বেয়াদপি করে, তাদের কি দশা হয়। যা এখন, একে তুলে নিয়ে চলে যা।
হনু। দেখো, বাপু, সাবধানে তুলো। আমার আবার বাঁ পায়ের কড়ে আঙুলটা কন্কন করে, তেঁতুল খেলে বাড়ে, উটিতে হাত দিয়ো না। নাও, তোলো, ওয়ান-টু-থ্রি!
জনতার মধ্যে। হি-হি-হি, বাঁদরটা তো বেড়ে মজার রে। চ'চ' সঙ্গে যাই।
হনু। হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাবে বৈকি, শহরের কোথায় কি দ্রষ্টব্য জিনিস আছে, দেখিয়ে দিবি তো? চল্, যাওয়া যাক। ন্যাকড়া জড়ানো, আগুন ধরানো, এ-সব পারবি তো? নাহয় বলে দেব। চল, চল্ দুর্গা দুর্গা।
পঞ্চম দৃশ্য
হনুমান, কালনেমি, লঙ্কাদেবী, খুদে রাক্ষস, উনুনমুখো ও জন্য রাক্ষস
রাবণের প্রাসাদের প্রাঙ্গণ
হনুমানের ল্যাজে ফালা ফালা ন্যাকড়া জড়ানো হচ্ছে
কালনেমি। আহা! তোদের যা কান্ড! অতটুকু ফালিতে কি হবে? পাহাড় পাহাড় নিয়ে আয়। ব্যাটা লক্ষ্মীছাড়ার বপুখানি দেখছিস নে?
হনু। দ্যাখ বাপু, কথায় কথায় অমন খুঁড়িস নে বলছি। বলি তোর ভাগ্নের খেয়ে এতটা মোটা হইচি নাকি? বেশি বকবক করলে এক চড়ে ইদিককার দাঁতগুলো উদিক দিয়ে বের করে দেব।
কালনেমি। আচ্ছা, বাবা, আচ্ছা। এই তোরা সব হাঁ করে দেখছিস কি? যা, আরো ন্যাকড়া আন।
প্রথম রাক্ষস। আর কোথায় পাব, স্যার? এর উঠোন থেকে, ওর ঘাট থেকে, তার বাড়ি থেকে যতগুলো এনেছিলাম সব শেষ! আর নেই। কালনেমি। আর নেই মানে? নেই বললেই হল কিনা! দ্যাখ ঠাট্টার সময় ইয়াকি ভালো লাগে না। যেখান থেকে পারিস নিয়ে আয়।
লঙ্কাদেবী। যত সব ন্যাকা। কেন, রাবণরাজা বলে নি তোদের পরনের কাপড় ছিড়ে সলতে পাকা। তার খানিকটে আমাকেও-
কালনেমি। ঠিক বলেছ, ঠাকরুন। এই ব্যাটা, দে তোর ধটিটা খুলে দে দিকিনি। ওরে উনুনমুখো, আগে ওরটা ফালা ফালা করে ছিঁড়ে তার পর তোর নিজেরটাকেও ইকি। এরা সব পাঙ্গাচ্ছে কেন? শেষটা কি আমাকে কাজ করতে হবে নাকি? এই হতভাগারা, বলি, যাওয়া হচ্ছে কোথা?
রাক্ষসরা। আমাদের-আমাদের এখন খাবার সময়-
কালনেমি! ফের মিথ্যে কথা! তোদের শুলে দেব, জেলে দেব, মাইনে কাটব। ও হনুমান, দ্যাখ তো বাপ্, এ আবার কি গেরো! মা হয় একটা কিছু কর, অমন শুয়ে শুয়ে মুচকি হাসলে চলবে কেন?
হনু। (মাথা তুলে) ওরে, নারে, আর দরকার নেই রে?
এতেই চের হবে। মামার যা বুদ্ধি! আয়, আয়, আয়, মামা'সবাইকে বিস্কুট দেবে! (রাক্ষসদের ফিরে আসা)
রাক্ষসরা কই? কোথায় বিস্কুট? আমরা বড়-বড় নেব।
হনু। হ্যাঁ হ্যাঁ তাই নিবি, মামা সব দেবে। এখন ঐ সরু ফালি- গুলোকে নিয়ে আমার ন্যাজের ডগা থেকে জড়াতে শুরু কর দিকিনি। (রাক্ষসদের তথাকরণ)
হনু (চিৎকার করে) উঃ। কি আরম্ভ করেছিস তোরা? অন্ত টাইট্ কচ্ছিস কেন রে ব্যাক্টারা? আমার লাগে না বুঝি! ই-স্ দেখেছ! ন্যাজটাকে এটে একেবারে পেন্সিল বানিয়ে ফেলল গো! খোল্ খোল্, ভিল দে বলছি!
প্রথম রাক্ষস। কি করে খুলি? গিঁট পড়ে গেছে যে! (ব্যান্ডেজ ধরে টান)
হনু। ( বিকট চিৎকার) উঃ-উফ্! হাড় ছাড়! আচ্ছা আমিই নাহয় একটু ছোট হয়ে বাঁধন চিলে করে নিচ্ছি! হ্যাঁ এই বেশ! কই, তেল কই? তেল আনিস নি, আহাম্মক? আচ্ছা, ঐ লণ্ঠনটা থেকেই নাহয় খানিকটা ঢেলে নে। ই কি! ব্যান্ডেজটা আবার ঝুলে পড়ছে কেন? সেটিপিন লাগাস নি বুঝি? নাঃ, তোদের নিয়ে পারা গেল না দেখছি। যেটাই না দেখব, সেটাই ভন্ডুল! বলি ও কালনেমি মামা।
কালনেমি। না, না, না, আমার সেপটিপিন আমি দিতে পারব না। বরং গিঁট পাকাও।
হনু। সে কথা বলছি না। আমি বলি কি, এখন একটু টিপিনের ছুটি হোক-না কেন? চ্যালা-চামুণ্ডারা যে না খেয়ে-খেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। একটু নিমকি, মাছের চপ, আলুকাবলি, ঝালচানা-কি বল?
খুদে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, তাই হোক, তাই হোক!
কালনেমি। না, না, বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এখন বলে টিপিন খাব। তাপর বলবে জিরুব। তাপর বলবে আজ থাক, কাল হবে! অত দেরি করলে চলবে না, বাছা আর গোলমাল পাকিয়ো না, জাদু। তোমার ন্যাজে আগুন দিয়ে, পাড়াময় ঘুরিয়ে, লোকেদের শিক্ষা দিয়ে, তবে আমি বাজার যাব। খিদে পেয়ে থাকে, নাহয় ফিরে এসে যাহোক কিছু মুখে দিয়ো। কই, দে দিকি অয়েল-ক্যানটা। ই কি! এতে নেবুর গন্ধ কেন? (কিঞ্চিৎ চাখন) আ সর্বনাশ! এ যে বাপ্পির শরবত!
হনু। (উঠে বসে) কই, কই বাপ্পির শরবত? আমি বড্ড ভালোবাসি। (টেনে নিয়ে গলায় ঢালন) আঃ নতুন প্রাণ পেলেম! হনু। নেনে ধর! আঃ, প্রাণটা জুঃড়াল। (শুয়ে পড়ন) কই, দে দিকিনি দেশলাই।
খুদে। আমিও! আমিও। ঐ দেখ দিচ্ছে না!
কালনেমি। দেশলাই? কই দেশলাই? ওরে উনুনমুখো ম্যাচিস আনু। উনুনমুখো। কোথায় পাব স্যার?
হনু। কি জ্বালা। আরে ঐ লণ্ঠনটা থেকে ধরাতে পারিস না রে,
ব্যাটারা? কালনেমি। আচ্ছা, তাই হোক, তাই হোক। হ্যাঁ, এইবার ঠিক.
হয়েছে।
তা হলে বল সবাই একসঙ্গে, জয়, রাবণের জয়।
হনু। (লাফিয়ে উঠে) হাঁ হাঁ হাঁ ও কি হচ্ছে? আমি না রামের অনুচর? আমার ন্যাজে দেশলাই দেবার সময় বলবি: রামচন্দ্রের জয়! তাপর তোদের মগজে যখন দেশলাই দেওয়া হবে, তখন বলবি:
ছাবণ রাজার জয়।
গোবুদ্ধি কারে কয়! সীতা-মাকে আনলি ধরে মরবি সুনিশ্চয়।
-কই, চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস যে? স্লাই দে, স্লাই দে! না থাকে তো নিদেন লণ্ঠনটাই দে। আচ্ছা, এই নে দেশলাই, আমার ট্যাকেই ছিল। বল্ তা হলে রামচন্দ্রের জয়।
কালনেমি। [দেশলাই ধরে] উহুহু। নড়ো না বলছি, হনু, শেষটা যদি গায়ে আগুন লেগে যায়, তখন আমাকে দোষ দিলে চলবে না বলছি। হ্যাঁ, এই হয়েছে। ও কি। ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে দিলি কেন, পাজি? আর মোটে একটা কাঠি আছে।
হনু। আহা! আমার চোখে ধোঁয়া লাগে না বুঝি। তোর চেয়ে এক কাজ কর, আমাকে তুলে বাইরে নে চল্। সেখানে গিয়ে ধরানো যাবে। নে তোল্ দিকিনি। বল্, রামচন্দ্রের জয়!
সকলে। রামচন্দ্রের জয়!
অনেক কষ্টে হনুকে তুলে, মিলিত কণ্ঠে গান
হনুমানের ন্যাজের আগায় আগুন জ্বালো, আগুন জ্বালো! ব্যাটা, ন্যাজ দিয়ে মাছি ভাগায়, কেসিন ঢালো, কেসিন ঢালো!
[ গাইতে গাইতে প্রস্থান
ষষ্ঠ দৃশ্য
চেড়িরা, খুদে রাক্ষস, রাক্ষসগণ, সীতা, হনু, বাঁদরের দল
অশোকবনের নিকটস্থ রাজপথ
ব্যস্ত হয়ে চেড়িদের ঘোরাঘুরি। লঙ্কাদেবী সহ এক দল রাক্ষসের
হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ
প্রথমা। বলো না গো, কি সব্বনাশটা হচ্ছে? আকাশ লালে লাল! ফট্ হুড়মুড় শব্দ। এ কি প্রলয় শুরু হল নাকি গো? খুদে। ও মা! সে কি! মোটেই পেলয় নয়। ও আমার বন্দুক হজুমান মজা কচ্ছে!
দ্বিতীয়া। তা বাপু, তোমার বন্ধুর মজা করার রকমটি তো বেশ। কিন্তু হচ্ছেটা কি তাই শুনি?
খুদে। ওমা, তাও জান না বুঝি? হজুমান বলল কি না আমাকে বধ করে কাজ নেই, শেষটা যদি সত্যি মরে যাই। তাই রাবণ রাজা বললেন: বেশ, ব্যাটার ন্যাজে ন্যাকড়া জড়িয়ে, তেল ঢেলে, আগুন জ্বেলে, শহরে বেড়াতে নে যাও।
তৃতীয়া। ওমা কি কান্ড। তাপর কি হল? প্রথম রাক্ষস। হল কি জান, যত ন্যাকড়া জড়ায়, হলুমান ততই
বড় হয়। তাই দেখে এই লঙ্কা ঠাকরুনের কি রাগ। বললেন, থাক আর জড়িয়ে কাজ নেই, ওতেই হবে! শেষটা আমার মন্দিরের প্রদীপে সলতে দেবার জন্য এক চিলতে ত্যানাও বাকি থাকবে না। এবার তেল ঢেলে আগুন লাগাও!
প্রথন চেড়ি। ব্যাটা তখন খুব জব্দ হল নিশ্চয়!
দ্বিতীয় রাক্ষস। জব্দ না আরো কিছু! চোখ মুদে বলে কিনা, আঃ কি আরাম। দেখেছিস? ঠিক যেন চন্দন মাখাচ্ছে! একটুও গা পুড়ছে না
খুদে। হ্যাঁ, খালি ন্যাকড়াগুলো পুড়ছিল, তার কি গন্ধ রে বাবা! আমাকে দেখে হজুমান বলল-ন্যাজ পুড়বে কি করে রে, আমি যে পবনের পুত্র, বাবা সব উড়িয়ে নে যাচ্ছে!
সীতার প্রবেশ
সীতা। কি হয়েছে? ও কিসের শব্দ? আকাশ লাল কেন? আমার বড় ভয় কচ্ছে। দ্বিতীয়া চেড়ি। হবে আবার কি, ঠাকরুন তোমার পেয়ারের সেই
23
হবে আবার কি, ঠাকরুন।
তাঁবামুখো বাঁদরটা এদিকে পুড়ে শিক-কাবাব। তার বেশি কিছু হয় নি। সীতা। হা ভগবান! এ-ও লিখেছিলে আমার কপালে।
খুদে। এ রাম ছিঃ! বুড়ো ধাড়ি মেয়ে আবার কাঁদে। তা ছাড়া সব মিছে কথা, মোটেই হলুমান পোড়ে নি। সে আমাকে বলল, দেখেছিস রাস্কেলগুলোর আস্পন্দা, দেখেছিস? আমার ন্যাজে আগুন দেওয়া! দাঁড়া, মজা দেখাচ্ছি! এই-না বলে, অত বড় শরীরটাকে গুটিয়ে এই এত্তটুকুন করে ফেলল। ব্যস্। সব দড়িদড়া থস্-খস্ করে খসে পড়ে গেল।
দ্বিতীয়া। তাপর? তাপর?
লঙ্কা। (কাঠ হেসে) তাপর? হা সব্বনাশ, তাপর ব্যাটাচ্ছেলে লম্ব পাহাড়ের সমান উঁচু এক লাফে পগার পার। ন্যাজে দাউ-দাউ
লম্বপাহাড়ের সমান উঁচু এক লাফে পগার পার।
আগুন জ্বলছে, যেখানেই যাচ্ছে সব বাড়িঘর পুড়ে ছাই। সঙ্গে-সঙ্গে সে কি হাওয়া! হু-হু করে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ল। দেখতে দেখতে আমার সোনার লঙ্কা পুড়ে কাঠ-কয়লা! এখন আমার ভোগের কি ব্যবস্থা হবে, তাই বল্ তোরা! ক্ষীর, সর, মোষের মাংসের কালিয়া-হায় হায়! সব গেল।
সীতা। আর হনুমান? তার কি হল?
খুদে। (হেসে) কিছু না, কিচ্ছু না, তাকে ধরতে পাল্লে, তবে তো কিছু হবে। যে কাছে যায়, তার মাথা ফাটিয়ে চীনে-পটকা। তাপর দিব্যি সুন্দর সমূদ্রের জলে ন্যাজ ডুবিয়ে আগুন নিবিয়ে, বলল, উঃ তোদের দেশে বড্ড ধোঁয়া রে। দে তো আমার মুখে একটা বড় দেখে মিঠে পান ফেলে দে দিকিনি! যেই-না পানটা দিয়েছি, অমনি হপ্ করে পগার পার।
অজামুখী। অ্যা! গান কোথায় পেলি বল্, হতভাগা! আমার কৌটো থেকে নিয়ে থাকিস যদি, তা হলে তোর কানদুটোর কিছু রাখব না। (কান পাকড়ানো)
খুদে। আঃ! উঃ। ছাড়ো মা, বড্ড লাগে। তোমার পান নয়। তোমার পান ঝাল, তেতো। যেই-না সবাই রাবণের সভা থেকে মজা দেখতে বেরিয়ে এসেছে, অমনি আমিও ইজের ভরতি করে পান নিয়ে, পালিয়ে এসেছি। আরে, ঐ তো হজুমান আসছে। এদিকে বন্দুক! এদিকে! ই কি। এরা সব পালায় কেন?
হনুমানের প্রবেশ। সীতা ও খুদে ছাড়া সকলের পলায়ন
হনু। (সীতার পায়ে পড়ে) উঃ। তুমি তা হলে পুড়ে থাক্ হও নি, মা-সীতে। যা ভয় হল, কি জানি রাগের মাথায় তোমাকে সুদ্ধ বেগুন- পোড়া বানিয়ে ফেলি নি তো। তাপর দেখি, অশোকবন যেমন সবুজ তেমনি সবুজ। বাবা, ধড়ে প্রাণ এল। এবার তবে বিদায় দাও, মা, শ্রীরামকে গিয়ে সব কথা বলি।
সীতা। দুদিন জিরিয়ে গেলে হত না, বাছা?
খুদে। তোমার যেমন কথা! বাড়িঘরের কিছু রেখেছে যে জিরুবে? না, বাপু, তুমি কেটে পড়। আর দেখো আবার যখন আসবে, আমার জন্য বেশি করে বাঁদুরে বিস্কুট এনো, কেমন?
হনু। তথাস্ত। এবার তবে বিদায় দাও, মা।
[সীতাকে প্রণাম করে প্রস্থান
সীতা। নিরাপদে যাও, বাছা। দুগ্গা, দুগ্গা!
বাঁদরদলের প্রবেশ ও গান সহ নৃত্য
প্রথমদল।
রামায়ণের বাহাদুর রামচন্দ্র নয়, বল বাহু তুলে, বদন খুলে, হজুমানের জয়।
দ্বিতীয়দল।
অবাক হল রাবণরাজা, লঙ্কা পুড়ে আলুভাজা, হনুমানে দিলে সাজা, উল্টো ফল-ই হয়।
প্রথমদল।
কর হনু গুণ-গান! উট-কপালের দু পাশেতে হের বাঁধাকপি কান।
দ্বিতীয়দল।
রামায়ণ-কথা সোটা- লেমনেড্ সমান। রামায়ণের বাহাদুর ইত্যাদি