দুর্গাপূজার জন্ম
দুর্গাপূজার সূচনা নিয়ে নানান কাহিনী আছে। সেইসব কাহিনীর মধ্যে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেইসব কাহিনী গুলো হলঃ
পৌরাণিক উপাখ্যান
ব্রম্ভ বৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী দেব দেবীরা যখনই কোন বিপদে পড়েছেন, দেবী দুর্গার পূজা করেছেন। তবে এই পুরাণ মতে শ্রী কৃষ্ণ প্রথম দুর্গাপূজা করেন। তারপরে ব্রম্ভা, শিব ও ইন্দ্র অসুরের হাত থেকে রক্ষা পেতে দুর্গা পূজা করেছিলেন।
দেবী ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, ব্রম্ভার পুত্র মনু পৃথিবীতে প্রথম মাটি দিয়ে মূর্তি বানিয়ে দুর্গা পূজা করেন।
কৃত্তিবাসী রামায়ন
কৃত্তিবাসী রামায়ন অনুযায়ী রামচন্দ্র দেবী দুর্গার থেকে বর নেওয়ার জন্য দুর্গাপূজা করেন। দেবী দুর্গা প্রসন্ন হয়ে রামচন্দ্র কে আশীর্বাদ দেন। এই আশীর্বাদ এর কারনেই রামচন্দ্র রাবন কে বধ করতে সক্ষম হন। তবে বাল্মীকি রচিত রামায়নে এই সংক্রান্ত কোন কাহিনীর বিবরন নেই।
দুর্গাপূজা কে ঘিরে পুরাণে নানান গল্প
পুরাণে দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রধান চারটি গল্প আছে। রাজা সুরথের গল্প, মধুকৈটভের গল্প, মহিষাসুরের কাহিনী, শুম্ভ ও নিশুম্ভের কাহিনী।
রাজা সুরথ ছিলেন পৃথিবীর রাজা। তাঁর মনের মধ্যে নানান রকমের দুশ্চিন্তার কারন তিনি জানতে চেয়েছিলেন এক ঋষির কাছে। ঋষি বলেন এইসব কিছু দেবী দুর্গার প্রভাবে হচ্ছে। এই কথা জানার পরে রাজা সুরথ দেবী দুর্গার কঠিন তপস্যা করেন। দেবী দুর্গা প্রসন্ন হয়ে রাজাকে তাঁর হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
মধুকৈটভের গল্প অনুযায়ী ভগবান বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে দুই অসুর এর জন্ম হয়। এই দুই অসুর ব্রম্ভা কে আক্রমন করতে গেলে, ব্রম্ভা বিষ্ণু জাগানোর জন্য কিছু মন্ত্র উচ্চারণ করেন। এই মন্ত্রে প্রসন্ন হয়ে দেবী বিষ্ণু কে জাগিয়ে তোলেন। বিষ্ণু ওই দুই অসুরের সাথে এক বিশাল যুদ্ধ করেন যা থামানোই যায় না। শেষে মহামায়া ওই দুই অসুর কে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করেন। ভগবান বিষ্ণু ওদের বধ করেন। এইভাবেই যুদ্ধের ইতি ঘটে।
এই চারটি কাহিনীর মধ্যে মহিষাসুরের কাহিনী সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। মহিষাসুর কঠোর তপস্যা করে ব্রম্ভার থেকে বর চেয়েছিলেন যেন কোন দেবতা তাকে বধ করতে না পারে। ব্রম্ভা তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে সেই বর দিতে রাজী হয়েছিলেন। তারপরে এক যুদ্ধে, মহিষাসুর দেবগন কে পরাস্ত করে স্বর্গের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেন। দেবতারা তখন ব্রম্ভা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের স্মরনাপন্ন হন। ব্রম্ভা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর তিনজনে মিলে তাঁদের থেকে তেজ নির্গত করে সেই তেজের মিলন ঘটালেন ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে। সেই তেজের মিলনে জন্ম হল এক দেবীর। দেবীর জন্ম ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে হওয়ায় দেবী কাত্যায়নী নামেও পরিচিত। সকল দেবতারা দেবী কে অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুললেন।
এই দেবীই অষ্টদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুরের বধ করেছিলেন। তাই দেবী মহিষাসুরমর্দিনী নামেও পরিচিত।
শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুর স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, দেবতারা আদি দেবী মহাদেবীর স্মরনাপন্ন হন। দেবী তাঁর দেহকোষ থেকে আরেক দেবীর জন্ম দেন। এই দেবী আর পার্বতী বিন্ধ্য পর্বতে যান। তাঁদের যুগল রুপ দেবী বিন্ধ্যবাসিনী নামে পরিচিত। এই দেবী কৌশিকী নামেও আখ্যাত হলেন। দেবী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে যুদ্ধে যিনি তাঁকে পরাস্ত করতে পারবেন, তাঁকেই বিবাহ করবেন। একে একে শুম্ভ ও নিশুম্ভ এর সকল সৈন্য দেবীর কাছে পরাজিত হলেন। শুম্ভ ও নিশুম্ভ তখন দেবীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য রক্ত বীজ দৈত্য কে পাঠালেন। এই দৈত্যের রক্ত মাটিতে পড়া মাত্র আরও অনেক দৈত্যের জন্ম হওয়াতে দেবী ক্রোধান্বিত হয়ে যান। দেবীর এর ক্রোধের জন্য দেবীর মুখ খানা কাল হয়ে যায়। দেবীর এই রুপ কালী নামে পরিচিত। দেবী কালী ওই দৈত্য কে এমনভাবে বধ করেন যেন এক ফোঁটা রক্ত ও মাটিতে না পড়ে। দেবী নিজেই সেই রক্ত পান করেন। আর দৈত্য কে বধ করেন। তারপরে শুম্ভ ও নিশুম্ভ কেও বধ করেন।