shabd-logo

দেবদাস

9 August 2023

7 Viewed 7

                                   

                                 প্রথম পরিচ্ছেদ

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্লেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা ছড়াইয়া, হাই তুলিয়া, অবশেষে হঠাৎ খুব চিন্তাশীল হইয়া উঠিল; এবং নিমিষে স্থির করিয়া ফেলিল যে, এই পরম রমণীয় সময়টিতে মাঠে মাঠে ঘুড়ি উড়াইয়া বেড়ানোর পরিবর্তে পাঠশালায় আবদ্ধ থাকাটা কিছু নয়। উর্বর মস্তিষ্কে একটা উপায় ও গজাইয়া উঠিল। সে শ্লেট-হাতে উঠিয়া দাঁড়াইল।

পাঠশালায় এখন টিফিনের ছুটি হইয়াছিল। বালকের দল নানারূপ ভাবভঙ্গী ও শব্দসাড়া করিয়া অনতিদূরের বটবৃক্ষতলে ডাংগুলি খেলিতেছিল। দেবদাস সেদিকে একবার চাহিল । টিফিনের ছুটি সে পায় না— কেননা গোবিন্দ পণ্ডিত অনেকবার দেখিয়াছেন যে, একবার পাঠাশালা হইতে বাহির হইয়া পুনরায় প্রবেশ করাটা দেবদাস নিতান্ত অপছন্দ করে। তাহার পিতারও নিষেধ ছিল। নানা কারণে ইহাই স্থির হইয়াছিল যে এই সময়টিতে সে সর্দার-পোড়ো ভুলোর জিম্মায় থাকিবে।

এখন ঘরের মধ্যে শুধু পণ্ডিত মহাশয় দ্বিপ্রাহরিক আলস্যে চক্ষু মুদিয়া শয়ন করিয়াছিলেন এবং সর্দার-পোড়ো ভুলো এক কোণে হাত-পা ভাঙ্গা একখণ্ড বেঞ্চের উপর ছোটখাটো পণ্ডিত সাজিয়া বসিয়াছিল এবং মধ্যে মধ্যে নিতান্ত তাচ্ছিল্যের সহিত কখন বা ছেলেদের খেলা দেখিতেছিল, কখন বা দেবদাস এবং পার্বতীর প্রতি আলস্য-কটাক্ষ নিক্ষেপ করিতেছিল। পার্বতী এই মাসখানেক হইল পণ্ডিত মহাশয়ের আশ্রয়ে এবং তত্ত্বাবধানে আসিয়াছে। পণ্ডিত মহাশয় সম্ভবতঃ এই অল্পসময়ের মধ্যেই তাহার একান্ত মনোরঞ্জন করিয়াছিলেন, তাই সে নির্বিষ্টমনে, নিরতিশয় ধৈর্যের সহিত সুপ্ত পণ্ডিতের প্রতিকৃতি বোধোদয়ের শেষ পাতাটির উপর কালি দিয়া লিখিতেছিল এবং দক্ষ চিত্রকরের ন্যায় নানাভাবে দেখিতেছিল যে, তাহার বহু-যত্নের চিত্রটি আদর্শের সহিত কতখানি মিলিয়াছে। বেশী যে মিল ছিল তাহা নয়; কিন্তু পার্বতী ইহাতেই যথেষ্ট আনন্দ ও আত্মপ্রসাদ উপভোগ করিতেছিল।

এই সময় দেবদাস শ্লেট-হাতে উঠিয়া দাঁড়াইল এবং ভুলোর উদ্দেশে ডাকিয়া বলিল, অঙ্ক হয় না।

ভুলো শান্ত গম্ভীরমুখে কহিল, কি আঁক?

মণকথা—

শেলেটটা দেখি—

ভাবটা এই যে, তাহার নিকট এ-সব কাজে শ্লেটখানি হাতে পাওয়ার অপেক্ষা মাত্র। দেবদাস তাহার হাতে শ্লেট দিয়া নিকটে দাঁড়াইল। ভুলো ডাকিয়া লিখিতে লাগিল যে, এক মণ তেলের দাম যদি চৌদ্দ টাকা নয় আনা তিন গণ্ডা হয়, তাহা হইলে-

এমনি সময়ে একটা ঘটনা ঘটিল। হাত-পা-ভাঙ্গা বেঞ্চখানার উপর সর্দার-পোড়ো তাহার পদমর্যাদার উপযুক্ত আসন নির্বাচন করিয়া যথানিয়মে আজ তিন বৎসর ধরিয়া প্রতিদিন বসিয়া আসিতেছে। তাহার পশ্চাতে একরাশি চুন গাদা করা ছিল। এটি পণ্ডিত মহাশয় কবে কোন্ যুগে নাকি সস্তা দরে কিনিয়া রাখিয়াছিলেন, মানস ছিল, সময় ভাল হইলে ইহাতে কোঠা দালান দিবেন। কবে যে সে শুভদিন আসিবে তাহা জানি না। কিন্তু এই শ্বেত-চূর্ণের প্রতি তাঁহার সতর্কতা এবং যত্নের অবধি ছিল না। সংসারানভিজ্ঞ, অপরিণামদর্শী কোন অলক্ষ্মী-আশ্রিত বালক ইহার রেণুমাত্র নষ্ট না করিতে পারে, এইজন্য প্রিয়পাত্র এবং অপেক্ষাকৃত বয়স্ক ভোলানাথ এই সযত্ন-সঞ্চিত বস্তুটি সাবধানে রক্ষা করিবার ভার পাইয়াছিল এবং তাই সে বেঞ্চের উপর বসিয়া ইহাকে আগুলিয়া থাকিত।

ভোলানাথ লিখিতেছিল—এক মণ তেলের দাম যদি চৌদ্দ টাকা নয় আনা তিন গণ্ডা হয়, তাহা হইলে, —ওগো বাবা গো—তাহার পর খুব শব্দ-সাড়া হইল। পার্বতী ভয়ানক উচ্চকণ্ঠে চেঁচাইয়া হাততালি দিয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িল। সদ্যঃনিদ্রোখিত গোবিন্দ পণ্ডিত রক্তনেত্রে একেবারে উঠিয়া দাঁড়াইলেন; দেখিলেন, গাছতলায় ছেলের দল একেবারে সার বাঁধিয়া হৈহৈ শব্দে ছুটিয়া চলিয়াছে, এবং তখনি চক্ষে পড়িল যে, ভগ্ন বেঞ্চের উপর একজোড়া পা নাচিয়া বেড়াইতেছে এবং চুনের মধ্যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হইতেছে। চীৎকার করিলেন, কি-কি-কি রে!

কি–কি রে!

বলিবার মধ্যে শুধু পার্বতী ছিল। কিন্তু সে তখন ভূমিতলে লুটাইতেছে এবং করতালি দিতেছে। পণ্ডিত মহাশয়ের বিফল প্রশ্ন ক্রুদ্ধভাবে ফিরিয়া গেল, কি তাহার পর শ্বেতমূর্তি ভোলানাথ চুন ঠেলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। পণ্ডিত মহাশয় আবার চীৎকার করিলেন, গুয়োটা তুই!—তুই ওর ভেতর!


অ্যা—অ্যা—অ্যা—

আবার!

দেবা শালা— ঠেলে — অ্যা—অ্যা—মণকষা—

আবার গুয়োটা!

কিন্তু পরক্ষণেই সমস্ত ব্যাপারটা বুঝিয়া লইয়া, মাদুরের উপর উপবেশন করিয়া প্রশ্ন করিলেন, দেবা ঠেলে ফেলে দিয়ে পালিয়েচে? ভুলো আরো কাঁদিতে লাগিল – অ্যা – অ্যা— অ্যা—

তাহার পর অনেকক্ষণ ধরিয়া চুন ঝাড়াঝাড়ি হইল, কিন্তু সাদা এবং কাল রঙে সর্দার-পোড়োকে কতকটা ভূতের মত দেখাইতে লাগিল এবং তখনও তাহার

ক্রন্দনের নিবৃত্তি হইল না। পণ্ডিত বলিলেন, দেবা ঠেলে ফেলে পালিয়েচে? বটে?

ভুলো বলিল—অ্যা—অ্যা—

পণ্ডিত বলিলেন, এর শোধ নেব।

ভুলো কহিল, – অ্যা-অ্যা-অ্যা-

পণ্ডিত প্রশ্ন করিলেন, ছোঁড়াটা কোথায়—

তাহার পর ছেলেদের দল রক্তমুখে হাঁপাইতে হাঁপাইতে ফিরিয়া আসিয়া জানাইল, দেবাকে ধরা গেল না। উঃ—যে ইঁট ছোঁড়ে—!

ধরা গেল না?

আর একজন বালক পূর্বকথার প্রতিধ্বনি করিল—উঃ—যে—

থাম বেটা—

সে ঢোক গিলিয়া একপাশে সরিয়া গেল। নিষ্ফল-ক্রোধে পণ্ডিতমশাই প্রথমে পার্বতীকে খুব ধমকাইয়া উঠিলেন; তাঁহার পর ভোলানাথের হাত ধরিয়া কহিলেন, চল, একবার কাছাড়িবাড়িতে কর্তাকে বলে আসি।

ইহার অর্থ এই যে, জমিদার নারায়ণ মুখুয্যের নিকট তাঁহার পুত্রের আচরণের নালিশ করিবেন।

তখন বেলা তিনটা আন্দাজ হইয়াছিল। নারায়ণ মুখুয্যেমশায় বাহিরে বসিয়া গড়গড়ায় তামাক খাইতেছিলেন এবং একজন ভৃত্য হাতপাখা লইয়া বাতাস করিতেছিল । সছাত্র পণ্ডিতের অসময় আগমনে কিছু বিস্মিত হইয়া কহিলেন, গোবিন্দ যে!

গোবিন্দ জাতিতে কায়স্থ — ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া ভুলোকে দেখাইয়া সমস্ত কথা সবিস্তারে বর্ণনা করিলেন। মুখুয্যেমশায় বিরক্ত হইলেন; বলিলেন, তাইত, দেবদাস যে শাসনের বাইরে গেছে দেখচি !

কি করি, আপনি হুকুম করুন।

জমিদারবাবু নলটা রাখিয়া দিয়া কহিলেন, কোথা গেল সে?

তা কি জানি? যারা ধরতে গিয়েছিল, তাদের ইঁট মেরে তাড়িয়েচে।

তাঁহারা দুইজনেই কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন। নারায়ণবাবু বলিলেন, বাড়ি এলে যা হয় করব।

গোবিন্দ ছাত্রের হাত ধরিয়া পাঠশালায় ফিরিয়া গিয়া মুখ ও চোখের ভাবভঙ্গীতে সমস্ত পাঠশালা সন্ত্রাসিত করিয়া তুলিলেন এবং প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, দেবদাসের পিতা সে অঞ্চলের জমিদার হইলেও তাহাকে আর পাঠশালে ঢুকিতে দিবেন না। সেদিন পাঠশালার ছুটি কিছু পূর্বেই হইল; যাইবার সময় ছেলেরা অনেক কথা বলাবলি করিতে লাগিল।

একজন কহিল, উঃ! দেবা কি যণ্ডা দেখেচিস!

আর একজন কহিল, ভুলোকে আচ্ছা জব্দ করেচে ।

উঃ, কি ঢিল ছোঁড়ে!

আর একজন ভুলোর তরফ হইতে কহিল, — ভুলো শোধ নেবে দেখিস। -

ইস্—সে ত আর পাঠশালায় আসবে না যে শোধ নেবে।

এই ক্ষুদ্র দলটির একপাশে পার্বতীও বই-শ্লেট লইয়া বাড়ি আসিতেছিল। সে নিকটবর্তী একজন ছেলের হাত ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মণি, দেবদাদাকে আর

পাঠশালায় সত্যি আসতে দেবে না? মণি বলিল, না—কিছুতেই না।

পার্বতী সরিয়া গেল—কথাটা তার বরাবরই ভাল লাগে নাই।

পার্বতীর পিতার নাম নীলকণ্ঠ চক্রবর্তী। চক্রবর্তী মহাশয় জমিদারের প্রতিবেশী অর্থাৎ মুখুয্যে মহাশয়ের খুব বড় বাড়ির পার্শ্বে তাঁহার ছোট এবং পুরাতন সেকেলে ইঁটের বাড়ি। তাঁহার দু-দশ বিঘা জমিজমা আছে, দু-চার ঘর যজমান আছে, জমিদারবাড়ির আশা-প্রত্যাশাটা আছে,—বেশ স্বচ্ছন্দ পরিবার—বেশ দিন কাটে।

প্রথমে ধর্মদাসের সহিত পার্বতীর সাক্ষাৎ হইল। সে দেবদাসের বাটীর ভৃত্য। এক বৎসর বয়স হইতে আজ দ্বাদশবর্ষ বয়স পর্যন্ত তাহাকে লইয়াই আছে—পাঠশালায় পৌঁছিয়া দিয়া আসে এবং ছুটির সময় সঙ্গে করিয়া বাটী ফিরাইয়া আনে । এ কাজটি সে যথানিয়মে প্রত্যহ করিয়াছে এবং আজিও সেইজন্যই পাঠশালায় যাইতেছিল। পার্বতীকে দেখিয়া কহিল, কৈ পারু, তোর দেবদাদা কোথায়?

পালিয়ে গেছে—

ধর্মদাস ভয়ানক আশ্চর্য হইয়া বলিল, পালিয়ে গেছে কি রে?

তখন পার্বতী ভোলানাথের দুর্দশার কথা মনে করিয়া আবার নূতন করিয়া হাসিতে শুরু করিল, দেখ্‌ ধৰ্ম্ম, দেবদা— হি হি হি—একেবারে চুনের গাদায়—হি

হি—হু হু—একেবারে ধম্ম চিৎ করে—

ধর্মদাস সব কথা বুঝিতে না পারিলেও হাসি দেখিয়া খানিকটা হাসিয়া লইল; পরে হাস্য সংবরণ করিয়া জিদ করিয়া কহিল, বল না পারু, কি হয়েচে? দেবদা ঠেলে ফেলে দিয়ে—ভুলোকে — চুনের গাদায়—হি হি হি- ধর্মদাস এবার বাকীটা বুঝিয়া লইল এবং অতিশয় চিন্তিত হইল; বলিল, পারু সে এখন কোথায় আছে জানিস?

আমি কি জানি!

তুই জানিস—বলে দে। আহা তার বোধ হয় খুব খিদে পেয়েচে।

তা ত পেয়েচে—আমি কিন্তু বলব না।

কেন বলবি নে?

বললে আমাকে বড় মারবে। আমি খাবার দিয়ে আসব।

ধর্মদাস কতকটা সন্তুষ্ট হইল—কহিল, তা দিয়ে আসিস, আর সন্ধ্যের আগে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাড়ি ডেকে আনিস।

আনৰ । বাটীতে আসিয়া পার্বতী দেখিল, তাহার মা এবং দেবদাসের মা উভয়েই সব কথা শুনিয়াছেন। তাহাকেও এ কথা জিজ্ঞাসা করা হইল। হাসিয়া গম্ভীর হইয়া সে যতটা পারিল কহিল। তাহার পর আঁচলে মুড়ি বাঁধিয়া জমিদারদের একটা আমবাগানের ভিতর প্রবেশ করিল। বাগানটা তাহাদেরই বাটীর নিকটে, এবং ইহারই একান্তে একটা বাঁশঝাড় ছিল। সে জানিত, লুকাইয়া তামাক খাইবার জন্য দেবদাস এই বাঁশঝাড়ের মধ্যে কতকটা স্থান পরিষ্কার করিয়া রাখিয়াছিল। পলাইয়া লুকাইয়া থাকিতে হইলে ইহাই তাহার গুপ্তস্থান। ভিতরে প্রবেশ করিয়া পার্বতী দেখিল, বাঁশঝোপের মধ্যে দেবদাস ছোট একটা হুঁকা-হাতে বসিয়া আছে এবং বিজ্ঞের মত ধূমপান করিতেছে। মুখখানা বড় গম্ভীর— যথেষ্ট দুর্ভাবনার চিহ্ন তাহাতে প্রকাশ পাইতেছে। পার্বতীকে দেখিতে পাইয়া সে খুব খুশী হইল, কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করিল না। তামাক টানিতে টানিতে গম্ভীরভাবেই কহিল, আয় ।

পার্বতী কাছে আসিয়া বসিল। আঁচলে যাহা বাঁধা ছিল, তৎক্ষণাৎ দেবদাসের চক্ষে পড়িল। কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া সে তাহা খুলিয়া খাইতে আরম্ভ করিয়া কহিল, পারু, পণ্ডিতমশাই কি বললে রে?

জ্যাঠামশায়ের কাছে বলে দিয়েচে। দেবদাস হুঁকা নামাইয়া চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া কহিল, বাবাকে বলে দিয়েচে?

হাঁ ।

তারপর?

তোমাকে আর পাঠশালায় যেতে দেবে না।

আমি পড়তেও চাই না ।

এই সময়ে তাহার খাদ্যদ্রব্য প্রায় ফুরাইয়া আসিল, দেবদাস পার্বতীর মুখপানে চাহিয়া বলিল, সন্দেশ দে। তাহার রুক্ষস্বর পার্বতীর ভাল লাগিল না; কহিল, আমি আবার যেতে পারিনে—তুমি খেয়ে আসবে চল । এইখানে থাকব, তারপর চলে যাব—

সন্দেশ ত আনিনি।

তবে জল দে।

জল কোথায় পাব?

বিরক্ত হইয়া দেবদাস কহিল, কিছুই নেই, ত এসেচিস কেন? যা, জল নিয়ে আয় ।

আমি কি এখন যেতে পারি?

তবে কি এইখানেই থাকবে?

পার্বতীর মনটা খারাপ হইয়া গেল। দেবদাসের আপাত-বৈরাগ্য দেখিয়া এবং কথাবার্তা শুনিয়া তাহার চোখে জল আসিতেছিল, – কহিল, দেবদা, আমিও

যাব।

কোথায়? আমার সঙ্গে? দূর—তা কি হয় ?

পার্বতী মাথা নাড়িয়া কহিল, যাবই—

না,—যেতে হবে না—তুই আগে জল নিয়ে আয়-

পার্বতী আবার মাথা নাড়িয়া বলিল, আমি যাবই—  আগে জল নিয়ে আয়-

আমি যাব না—তুমি তা হলে পালিয়ে যাবে।

না—যাব না।

কিন্তু পার্বতী কথাটা বিশ্বাস করিতে পারিল না, তাই বসিয়া রহিল। দেবদাস পুনরায় হুকুম করিল, যা বলচি ! আমি যেতে পারব না ।

রাগ করিয়া দেবদাস পার্বতীর চুল ধরিয়া টান দিয়া ধমক দিল—যা বলচি।

পার্বতী চুপ করিয়া রহিল। তারপর তাহার পিঠে একটা কিল পড়িল—যাবিনে ? পার্বতী কাঁদিয়া ফেলিল— আমি কিছুতেই যাব না ।

দেবদাস একদিকে চলিয়া গেল। পার্বতীও কাঁদিতে কাঁদিতে একেবারে দেবদাসের পিতার সুমুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। মুখুয্যেমশাই পার্বতীকে বড়

ভালবাসিতেন। বলিলেন, পারু, কাঁদচিস কেন মা?

দেবদা মেরেচে।

কোথায় সে?

ঐ বাঁশবাগানে বসে তামাক খাচ্ছিল।

একে পণ্ডিত মহাশয়ের আগমন হইতেই তিনি চটিয়া বসিয়াছিলেন—এখন এই সংবাদটা তাঁহাকে একেবারে অগ্নিমূর্তি করিয়া দিল। বলিলেন, দেবা বুঝি

আবার তামাক খায়?

হাঁ খায়, রোজ খায়। বাঁশবাগানে তার হুঁকো নুকোন আছে—

এতদিন আমাকে বলিস নি কেন?

দেবদাদা মারবে বলে।

কথাটা কিন্তু ঠিক তাই নহে। প্রকাশ করিলে দেবদাস পাছে শাস্তি ভোগ করে, এই ভয়ে সে কোন কথা বলে নাই। আজ কথাটা শুধু রাগের মাথায় বলিয়া দিয়াছে। এই তাহার সবে আট বৎসরমাত্র বয়স — রাগ এখন বড় বেশী; কিন্তু তাই বলিয়া তাহার বুদ্ধি-বিবেচনা নিতান্ত কম ছিল না। বাড়ি গিয়া বিছানায় শুইয়া অনেকক্ষণ কাঁদিয়া-কাটিয়া ঘুমাইয়া পড়িল,- – সে রাত্রে ভাত পর্যন্ত খাইল না।

                           


                                                          দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল— সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্বতীর ঘরের জানালার নিকট দাঁড়াইল — ডাকিল, পারু! আবার ডাকিল, পারু! পার্বতী জানালা খুলিয়া কহিল, দেবদা! দেবদাস ইশারা করিয়া বলিল, শিগগির আয়।দু'জনে একত্র হইলে দেবদাস বলিল, তামাক খাবার কথা বলে দিলি কেন?

তুমি মারলে কেন?

তুই জল আনতে গেলি না কেন?

পার্বতী চুপ করিয়া রহিল।

দেবদাস বলিল, তুই বড় গাধা — আর যেন বলে দিসনে।

পার্বতী মাথা নাড়িয়া বলিল, না।

তবে চল্, ছিপ কেটে আনি। আজ বাঁধে মাছ ধরতে হবে।

বাঁশঝাড়ের নিকট একটা নোনাগাছ ছিল, দেবদাস তাহাতে উঠিয়া পড়িল। বহুকষ্টে একটা বাঁশের ডগা নোয়াইয়া পার্বতীকে ধরিতে দিয়া কহিল, দেখিস যেন

ছেড়ে দিসনে, তা হলে পড়ে যাব।

পার্বতী প্রাণপণে টানিয়া ধরিয়া রহিল। দেবদাস সেইটা ধরিয়া একটা নোনাডালে পা রাখিয়া, ছিপ কাটিতে লাগিল। পার্বতী নীচে হইতে কহিল, দেবদা,

পাঠশালে যাবে না?

না ।

জ্যাঠামশাই তোমাকে পাঠিয়ে দেবেন।

বাবা আপনি বলেচেন, আমি আর ওখানে পড়ব না। বাড়িতে পণ্ডিত আসবে।

পার্বতী একটু চিন্তিত হইয়া উঠিল। পরে বলিল, কাল থেকে গরমের জন্য আমাদের সকালবেলা পাঠশালা বসে, আমি এখনি যাব।

দেবদাস উপর হইতে চক্ষু রাঙ্গাইয়া বলিল, না, যেতে হবে না ।

এই সময়ে পার্বতী একটু অন্যমনস্ক হইয়া পড়িল,— অমনি বাঁশের ডগা উপরে উঠিয়া গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে দেবদাস নোনাডাল হইতে নীচে পড়িয়া গেল । বেশী উঁচু ছিল না বলিয়া তেমন লাগিল না, কিন্তু গায়ে অনেক স্থানে ছড়িয়া গেল। নীচে আসিয়া ক্রুদ্ধ দেবদাস একটা শুষ্ক কঞ্চি তুলিয়া লইয়া পার্বতীর পিঠের উপর, গালের উপর, যেখানে-সেখানে সজোরে ঘা-কতক বসাইয়া দিয়া বলিল, যা, দূর হয়ে যা। প্রথমে পার্বতী নিজেই লজ্জিত হইয়া পড়িয়াছিল; কিন্তু যখন ছড়ির পর ছড়ি ক্রমাগত পড়িতে লাগিল, তখন সে ক্রোধে ও অভিমানে চক্ষু-দুটি আগুনের মত

করিয়া কাঁদিয়া বলিল, এই আমি জ্যাঠামশায়ের কাছে যাচ্ছি—

দেবদাস রাগিয়া আর এক ঘা বসাইয়া দিয়া বলিল, যা, এখনি বলে দিগে যা—বয়ে গেল।

পার্বতী চলিয়া গেল। যখন অনেকটা গিয়াছে, তখন দেবদাস ডাকিল, পারু! পার্বতী শুনিয়াও শুনিল না – আরও দ্রুত চলিতে লাগিল। দেবদাস আবার ডাকিল, ও পারু, শুনে যা না!

পার্বতী জবাব দিল না। দেবদাস বিরক্ত হইয়া, কতকটা চীৎকার করিয়া, কতকটা আপনার মনে বলিল, যাক—মরুক গে।পার্বতী চলিয়া গেলে, দেবদাস যেমন— তেমন করিয়া দুই-একটা ছিপ কাটিয়া লইল। তাহার মনটা বিগড়াইয়া গিয়াছিল। কাঁদিতে কাঁদিতে পার্বতী বাড়ি ফিরিয়া আসিল। তাহার গালের উপর ছড়ির দাগ নীল হইয়া ফুলিয়া রহিয়াছে। প্রথমেই ঠাকুরমার চক্ষে পড়িল। তিনি চেঁচাইয়া উঠিলেন—ওগো, মা গো, কে এমন করে মারলে পারু?

চোখ মুছিতে মুছিতে পাৰ্বতী কহিল, পণ্ডিতমশাই।

ঠাকুরমা তাহাকে ক্রোড়ে লইয়া ভয়ানক ক্রুদ্ধ হইয়া কহিলেন, চল্ ত একবার নারাণের কাছে যাই, দেখি সে কেমন পণ্ডিত! আহা–বাছাকে একেবারে মেরে

ফেলেচে ! পার্বতী পিতামহীর গলা জড়াইয়া কহিল, চল ।

মুখুয্যে মহাশয়ের নিকট আসিয়া পিতামহী পণ্ডিত মহাশয়ের অনেকগুলি পুরুষের উল্লেখ করিয়া তাহাদিগের পারলৌকিক অশুভ ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন এবং

খাদ্যদ্রব্যেরও তেমন ভাল ব্যবস্থা করিলেন না। শেষে স্বয়ং গোবিন্দকে নানামতে গালি পাড়িয়া বলিলেন, নারাণ, দেখ ত মিনসের আস্পর্ধা! শুদ্দুর হয়ে বামুনের মেয়ের গায়ে হাত তোলে! কি করে মেরেচে একবার দেখ। বলিয়া গালের উপর নীল দাগগুলা বৃদ্ধা অত্যন্ত বেদনার সহিত দেখাইতে লাগিলেন । নারায়ণবাবু তখন পার্বতীকে প্রশ্ন করিলেন, কে মেরেচে পারু?

পার্বতী চুপ করিয়া রহিল। তখন ঠাকুরমাই আর একবার চীৎকার করিয়া বলিলেন, আবার কে! ঐ গোঁয়ার পণ্ডিতটা। কেন মারলে?

পার্বতী এবারও কথা কহিল না। মুখুয্যেমশাই বুঝিলেন, কোন দোষ করার জন্য মার খাইয়াছে—কিন্তু এরূপ আঘাত করা উচিত হয় নাই, প্রকাশ করিয়া তাহাই বলিলেন । শুনিয়া পার্বতী পিঠ খুলিয়া বলিল, এখানেও মেরেচে।

পিঠের দাগগুলা আরও স্পষ্ট, আরো গুরুতর। তাই দু'জনেই নিতান্ত ক্রুদ্ধ হইয়া গেলেন। পণ্ডিত মহাশয়কে ডাকিয়া কৈফিয়ত তলব করিবেন, মুখুয্যে মহাশয় এরূপ অভিসন্ধিও প্রকাশ করিলেন; এবং স্থির হইল যে, এরূপ পণ্ডিতের নিকট ছেলেমেয়ে পাঠান উচিত নহে । রায় শুনিয়া পার্বতী খুশী হইয়া ঠাকুরমার কোলে চড়িয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল। বাটীতে পৌঁছিয়া পার্বতী জননীর জেরায় পড়িল। তিনি ধরিয়া বসিলেন, কেন মেরেচে বল্? পার্বতী বলিল, মিছিমিছি মেরেচে।

জননী কন্যার খুব করিয়া কান মলিয়া দিয়া বলিলেন, মিছিমিছি কেউ কখন মারে?

দালান দিয়া সেই সময় শাশুড়ী যাইতেছিলেন, তিনি ঘরের চৌকাঠের কাছে আসিয়া বলিলেন, বৌমা, মা হয়ে তুমি মিছিমিছি মারতে পার, আর সে মুখপোড়া পারে না?

বৌমা বলিল, শুধু-শুধু কখনো মারেনি। যে শান্ত মেয়ে—কি করেচে, তাই মার খেয়েচে ।

শাশুড়ী বিরক্ত হইয়া বলিলেন— আচ্ছা, তাই নাহয় হলো, কিন্তু ওকে আর আমি পাঠশালে যেতে দেব না। একটু লেখাপড়া শিখবে না !

কি হবে বৌমা? একটা-আধটা চিঠিপত্র লিখতে পারলে, দু'ছত্র রামায়ণ-মহাভারত পড়তে শিখলেই ঢের। পারু কি তোমার জজিয়তি করবে, না উকিল হবে? বৌমা অগত্যা চুপ করিয়া রহিল। সেদিন দেবদাস বড় ভয়ে ভয়েই বাড়িতে প্রবেশ করিল। পার্বতী যে ইতিমধ্যে সমস্তই বলিয়া দিয়াছে, তাহাতে তাহার আর কিছুমাত্র সংশয় ছিল না। কিন্তু বাড়ি আসিয়া যখন তাহার অণুমাত্র আভাসও প্রকাশ পাইল না, বরঞ্চ মায়ের কাছে শুনিতে পাইল— আজ গোবিন্দ পণ্ডিত পার্বতীকেও অত্যন্ত প্রহার করিয়াছে, তাই আর সে পাঠশালায় যাইবে না—তখন আনন্দের আতিশয্যে তাহার ভাল করিয়া আহার করাই হইল না; কোনমতে নাকে-মুখে গুঁজিয়া পার্বতীর কাছে ছুটিয়া আসিয়া হাঁফাইতে হাঁফাইতে বলিল, তুই আর পাঠশালে যাবিনে?

না ।

কি করে হল রে?

আমি বললুম, পণ্ডিতমশায় মেরেচে।

দেবদাস খুব একগাল হাসিয়া, তাহার পিঠ ঠুকিয়া দিয়া মত প্রকাশ করিল যে, তাহার মত বুদ্ধিমতী এ পৃথিবীতে আর নাই। তাহার পর ধীরে ধীরে সে পার্বতীর গালের নীল দাগগুলি সযত্নে পরীক্ষা করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, আহা! পার্বতী একটু হাসিয়া মুখপানে চাহিয়া বলিল, কি?

বড় লেগেচে, না রে পারু?

পার্বতী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হুঁ।

আহা, কেন অমন করিস, তাই ত রাগ হয়— তাই ত মারি।

পার্বতীর চোখে জল আসিল; মনে ভাবিল জিজ্ঞাসা করে, কি করি! কিন্তু পারিল না । দেবদাস তাহার মাথায় হাত রাখিয়া বলিল, আর অমন করো না, কেমন?

পার্বতী মাথা নাড়িয়া বলিল, না।

দেবদাস আর একবার তাহার পিঠ ঠুকিয়া দিয়া কহিল, আচ্ছা – আর কখনও তোকে আমি মারব না ।

                                                        তৃতীয় পরিচ্ছেদ 

দিনের পর দিন যায়—এ দুটি বালক-বালিকার আমোদের সীমা নাই—সমস্ত দিন ধরিয়া রোদে রোদে ঘুরিয়া বেড়ায়, সন্ধ্যার সময় ফিরিয়া আসিয়া মারধর খায়, আবার সকালবেলায় ছুটিয়া পলাইয়া যায়—আবার তিরস্কার-প্রহার ভোগ করে। রাত্রে নিশ্চিন্ত-নিরুদ্বেগে নিদ্রা যায়; আবার সকাল হয়, আবার পলাইয়া খেলা করিয়া বেড়ায়। অন্য সঙ্গীসাথী বড় কেহ নাই, প্রয়োজনও হয় না। পাড়াময় অত্যাচার উপদ্রব করিয়া বেড়াইতে দুইজনেই যথেষ্ট। সেদিন সূর্যোদয়ের কিছু পরেই দুইজনে বাঁধে গিয়া নামিয়াছিল। বেলা দ্বিপ্রহরে চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া, সমস্ত জল ঘোলা করিয়া, পনরটা পুঁটিমাছ ধরিয়া যোগ্যতা অনুসারে ভাগ করিয়া

লইয়া বাটী ফিরিয়া আসিল। পার্বতীর জননী কন্যাকে রীতিমত প্রহার করিয়া ঘরে আবদ্ধ করিয়া রাখিলেন। দেবদাসের কথা ঠিক জানি না; কেননা এ-সব কাহিনী সে কিছুতেই প্রকাশ করে না। তবে পার্বতী যখন বসিয়া খুব করিয়া কাঁদিতেছিল, তখন—বেলা দুইটা-আড়াইটার সময়, একবার জানালার নীচে আসিয়া অতি মৃদুকণ্ঠে ডাকিয়াছিল, পারু, ও পারু! পার্বতী বোধ হয় শুনিতে পাইয়াছিল, কিন্তু রাগ করিয়া উত্তর দেয় নাই। তাহার পর সমস্ত দিনটা সে অদূরবর্তী একটা চাপাগাছে বসিয়া কাটাইয়া দিয়াছিল; এবং সন্ধ্যার পর বহু পরিশ্রমে ধর্মদাস তাহাকে নামাইয়া আনিতে পারিয়াছিল।

তবে শুধু সেই দিনটা মাত্র। পরদিন পার্বতী সকালবেলা হইতে দেবদাদার প্রতীক্ষায় উন্মুখ হইয়া রহিল, কিন্তু দেবদাস আসিল না – সে পিতার সহিত নিকটবর্তী গ্রামে নিমন্ত্রণ রাখিতে গিয়াছিল। দেবদাস যখন আসিল না, পার্বতী তখন ক্ষুণ্নমনে একাকী বাটীর বাহির হইয়া পড়িল। কাল বাঁধে নামিবার সময় দেবদাস তিনটা টাকা পার্বতীকে রাখিতে দিয়াছিল— পাছে হারাইয়া যায়। আঁচলে সে টাকা-তিনটা বাঁধা ছিল। সে আঁচল ঘুরাইয়া, নিজে ঘুরিয়া বহুক্ষণ একা কাটাইয়া দিল। সঙ্গীসাথী কেহ মিলিল না; কেননা তখন সকালবেলায় পাঠশালা বসে। পার্বতী তখন ওপাড়ায় চলিল। সেখানে মনোরমাদের বাড়ি। মনোরমা পাঠশালে পড়ে, বয়সে কিছু বড়, কিন্তু পারুর বন্ধু। অনেকদিন দেখাশুনা হয় নাই। আজ সময় পাইয়া পার্বতী ওপাড়ায় তাহাদের বাটীতে প্রবেশ করিয়া ডাকিল,

মনো, বাড়ি আছিস?

মনোরমার পিসীমা বাহিরে আসিলেন।

পারু?

হ্যাঁ, মনো কোথায় পিসীমাঃ

সে ত পাঠশালায় গেছে—তুমি যাওনি?

আমি পাঠশালায় যাইনি — দেবদাও যায় না ।

মনোরমার পিসীমাতা হাসিয়া কহিলেন,—তবে ত ভাল! তুমিও যাও না, দেবদাদাও যায় না

না। আমরা কেউ যাইনে। ? সে ভাল কথা; কিন্তু মনো পাঠশালায় গেছে। পিসীমা বসিতে বলিলেন, কিন্তু পার্বতী ফিরিয়া আসিল। পথে রসিক পালের দোকানের কাছে তিনজন বৈষ্ণবী রসকলি পরিয়া খঞ্জনী-হাতে ভিক্ষায়

চলিয়াছিল, পার্বতী তাহাদিগকে ডাকিয়া বলিল, ও বোষ্টমী! তোমরা গান করতে জান?

একজন ফিরিয়া চাহিল—জানি বৈ কি বাছা!

তবে গাও না।

তখন তিনজনেই ফিরিয়া দাঁড়াইল। একজন কহিল, অমনি কি গান হয় মা, ভিক্ষে দিতে হয়। চল, তোমাদের বাড়ি গিয়ে গা'ব।

না, এইখানে গাও ।

পয়সা দিতে হয় যে মা ! পার্বতী আঁচল দেখাইয়া কহিল, পয়সা নেই—টাকা আছে।

আঁচলে বাঁধা টাকা দেখিয়া তাহারা দোকান হইতে একটু দূরে গিয়া বসিল। তাহার পর খঞ্জনী বাজাইয়া তিনজনে গলা মিলাইয়া গান ধরিল। কি গান হইল, কি তাহার অর্থ—পার্বতী এ-সব কিছুই বুঝিল না। ইচ্ছা করিলেও হয়ত বুঝিতে পারিত না। কিন্তু মনটি তাহার সেই নিমেষে দেবদাদার কাছে ছুটিয়া গিয়াছিল।

গান শেষ করিয়া তাহারা কহিল, কৈ, কি ভিক্ষে দেবে দাও তো মা!

পার্বতী আঁচলের গ্রন্থি খুলিয়া টাকা-তিনটা তাহাদের হাতে দিল। তিনজনেই অবাক হইয়া তাহার মুখপানে কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিল ।

একজন বলিল, কার টাকা বাছা?

দেবদাদার।

সে তোমকে মারবে না?

পার্বতী একটু ভাবিয়া কহিল, না ।

একজন কহিল, বেঁচে থাক মা ।

পার্বতী হাসিয়া কহিল, তোমাদের তিনজনের বেশ ভাগে মিলেচে, না গো?

তিনজনেই মাথা নাড়িয়া বলিল, তা মিলেচে। রাধারানী তোমার ভাল করুন। বলিয়া তাহারা আন্তরিক আশীর্বাদ করিয়া গেল, যেন এই দানশীলা ছোট মেয়েটি শাস্তি ভোগ না করে। পার্বতী সেদিন সকাল সকাল বাড়ি ফিরিয়া আসিল। পরদিন সকালবেলাই দেবদাসের সহিত তাহার দেখা হইল। তার হাতে একটা লাটাই ছিল—তবে ঘুড়ি নাই, সেইটা কিনিতে হইবে। পার্বতীকে কাছে পাইয়া কহিল, পারু, টাকা দে। পার্বতীর মুখ শুকাইল,—বলিল, টাকা নেই!

কি হল?

বোষ্টমীদের দিয়ে দিয়েচি। তারা গান গেয়েছিল।

সব দিয়ে দিয়েচিস?

সব। তিনটি টাকা ত ছিল ।

দূর গাধা, সব বুঝি দিতে হয়!

বাঃ! তারা যে তিনজন ছিল! তিন টাকা না দিলে তিনজনের কি ভাগে মেলে?

দেবদাস গম্ভীর হইয়া বলিল, আমি হলে দুই টাকা দিতুম, বলিয়া সে লাটাইয়ের বাঁট দিয়া মাটির উপর আঁচড় কাটিয়া কহিল, তা হলে তারা দশ আনা তের

গণ্ডা এক কড়া এক ক্রান্তি ভাগে পেত ।

পার্বতী ভাবিয়া কহিল, তারা কি তোমার মত আঁক কষতে জানে?

দেবদাস মণকষা পর্যন্ত পড়িয়াছিল; পার্বতীর কথাটায় খুশী হইয়া কহিল, তা বটে!

পার্বতী দেবদাসের হাত ধরিয়া বলিল, আমি ভেবেছিলুম তুমি আমাকে মারবে, দেবদা। দেবদাস বিস্মিত হইল— মারব কেন?

বোষ্টমীরা বলেছিল, তুমি আমাকে মারবে ।

কথা শুনিয়া দেবদাস মহা খুশী হইয়া পার্বতীর কাঁধের উপর ভর দিয়া কহিল, দূর—না দোষ করলে কি আমি মারি? দেবদাস বোধ হয় মনে করিয়াছিল যে, পার্বতীর এ কাজটা তাহার পিনাল কোডের ভিতরে পড়ে না; কেননা, তিন টাকা তিনজনে বেশ ভাগ করিয়া লইতে পারিয়াছে। বিশেষতঃ, যে বোষ্টমীরা পাঠশালায় মণকষা পর্যন্ত পড়ে নাই তাহাদিগকে তিন টাকার বদলে দুই টাকা দিলে, তাহাদের প্রতি কতকটা অত্যাচার করা হইত। তাহার পর সে পার্বতীর হাত ধরিয়া ঘুড়ি কিনিবার জন্য ছোটবাজারের দিকে চলিল, —লাটাইটা সেইখানে একটা ঝোপের মধ্যে লুকাইয়া রাখিয়া দিল ।


                           চতুর্থ পরিচ্ছেদ

এমনি করিয়া এক বৎসর কাটিল বটে, কিন্তু আর কাটিতে চাহে না। দেবদাসের জননী বড় গোলযোগ করিতে লাগিলেন। স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, দেবা যে মুখ্যু চাষা হয়ে গেল, — একটা যা হয় উপায় কর।

তিনি ভাবিয়া বলিলেন, দেবা কলকাতায় যাক। নগেনের বাসায় থেকে বেশ পড়াশুনা করতে পারবে। নগেনবাবু সম্পর্কে দেবদাসের মাতুল হইতেন। কথাটা সবাই শুনিল। পার্বতী শুনিয়া ভীত হইয়া উঠিল। দেবদাসকে একা পাইয়া তাহার হাত ধরিয়া ঝুলিতে ঝুলিতে বলিল, দেবদা, তুমি বুঝি কলকাতা যাবে?

কে বললে?

জেঠামশাই বলেচেন ।

দূর—আমি কিছুতে যাব না।

আর যদি জোর করে পাঠিয়ে দেন?

জোর?

দেবদাস এই সময় এমন একটা মুখের ভাব করিল, যাহাতে পার্বতী বেশ বুঝিল যে, জোর করিয়া কোন কাজ তাহাকে দিয়া করাইবার জন্য এ পৃথিবীতে কেহ নাই। সেও ত তাহাই চায়। অতএব, নিরতিশয় আনন্দে আর একবার তাহার হাত ধরিয়া, আর একবার ঝুলিয়া এ-পাশ ও পাশ করিয়া মুখপানে চাহিয়া হাসিয়া কহিল, দেখো, যেন যেয়ো না দেবদা।

কখন না—

এ প্রতিজ্ঞা কিন্তু তাহার রহিল না। তাহার পিতা রীতিমত বকাঝকা করিয়া, এমন কি তিরস্কার ও প্রহার করিয়া ধর্মদাসকে সঙ্গে দিয়া তাহাকে কলিকাতায় পাঠাইয়া দিলেন। যাইবার দিন দেবদাস মনের মধ্যে বড় ক্লেশ অনুভব করিল; নূতন স্থানে যাইতেছে বলিয়া তাহার কিছুমাত্র কৌতূহল বা আনন্দ হইল না।

পার্বতী সেদিন তাহাকে কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না। কত কান্নাকাটি করিল, কিন্তু কে তাহার কথা শুনিবে? প্রথমে অভিমানে কিছুক্ষণ দেবদাসের সহিত কথা কহিল না; কিন্তু শেষে যখন দেবদাস ডাকিয়া বলিল, পারু, আবার শিগগির আসব; যদি না পাঠিয়ে দেয় ত পালিয়ে আসব।

তখন পার্বতী প্রকৃতিস্থা হইয়া নিজের ক্ষুদ্র হৃদয়ের অনেক কথা কহিয়া শুনাইল। তাহার পর ঘোড়ার গাড়ি চড়িয়া, পোর্টমার্টো লইয়া, জননীর আশীর্বাদ ও চক্ষের জলের শেষ বিন্দুটি কপালে টিপের মত পরিয়া দেবদাস চলিয়া গেল ।

তখন পার্বতীর কত কষ্ট হইল; কত চোখের জলের ধারা গাল বহিয়া নীচে পড়িতে লাগিল; কত অভিমানে তাহার বুক ফাটিতে লাগিল। প্রথম কয়েকদিন তাহার এইরূপে কাটিল। তাহার পর হঠাৎ একদিন প্রাতঃকালে উঠিয়া দেখিতে পাইল, সমস্তদিনের জন্য তাহার কিছুই করিবার নাই। ইতিপূর্বে পাঠশালা ছাড়িয়া অবধি প্রাতঃকাল হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু গোলমালে, হুজুগে কাটিয়া যাইত; কত কি যেন তাহার করিবার আছে,—শুধু সময়ে কুলাইয়া উঠে না। এখন অনেক সময়, কিন্তু এতটুকু কাজ খুঁজিয়া পায় না। সকালবেলা উঠিয়া কোনদিন চিঠি লিখিতে বসে। বেলা দশটা বাজিয়া যায়, জননী বিরক্ত হইয়া উঠেন; পিতামহী শুনিয়া বলেন, আহা, তা লিখুক । সকালবেলা ছুটোছুটি না করিয়া লেখাপড়া করা ভাল।

আবার যেদিন দেবদাসের পত্র আইসে, সেদিনটি পার্বতীর বড় সুখের দিন। সিঁড়ির দ্বারে চৌকাঠের উপর কাগজখানি হাতে লইয়া সারাদিন তাহাই পড়িতে থাকে। শেষে মাস-দুই অতিবাহিত হইয়া গেল। পত্র লেখা কিংবা পাওয়া আর তত ঘন ঘন হয় না; উৎসাহটা যেন কিছু কিছু কমিয়া আসিয়াছে। একদিন পার্বতী সকালবেলায় জননীকে বলিল, মা, আমি আবার পাঠশালায় যাব।

কেন রে?—তিনি কিছু বিস্মিত হইয়াছিলেন। পার্বতী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, আমি নিশ্চয় যাব।

তা যাস। পাঠশালা যেতে আমি আর কবে তোকে মানা করেচি মা? সেইদিন দ্বিপ্রহরে পার্বতী দাসীর হাত ধরিয়া, বহুদিন-পরিত্যক্ত শ্লেট ও বইখানি খুঁজিয়া বাহির করিয়া, সেই পুরাতন স্থানে গিয়া শান্ত, ধীরভাবে উপবেশন করিল । দাসী কহিল, গুরুমশাই, পারুকে আর মারধর করো না; আপনার ইচ্ছায় পড়তে এসেছে। যখন তার ইচ্ছে হবে পড়বে, যখন ইচ্ছা হবে না বাড়ি চলে যাবে ।

পণ্ডিত মহাশয় মনে মনে কহিলেন, তথাস্তু। মুখে বলিলেন, তাই হবে।

একবার তাঁহার এমন ইচ্ছাও হইয়াছিল যে জিজ্ঞাসা করেন, পার্বতীকেও কেন কলিকাতায় পাঠাইয়া দেওয়া হইল না। কিন্তু সে কথা কহিলেন না। পার্বতী দেখিল, সেইখানে সেই বেঞ্চের উপরেই সর্দার-পোড়ো ভুলো বসিয়া আছে। তাহাকে দেখিয়া প্রথমে একবার হাসি আসিবার মত হইল, কিন্তু, পরক্ষণেই চোখে জল আসিল। তাহার পর তাহার ভুলোর উপর বড় রাগ হইল। মনে হইল, যেন সে-ই শুধু দেবদাসকে গৃহছাড়া করিয়াছে। এমন করিয়াও অনেক দিন কাটিয়া গেল ।

অনেক দিনের পর দেবদাস বাটী ফিরিয়া আসিল। পার্বতী কাছে ছুটিয়া আসিল – অনেক কথাবার্তা হইল। তাহার বেশী কিছু বলিবার ছিল না, – থাকিলেও বলিতে পারিল না । কিন্তু দেবদাস অনেক কথা কহিল । সমস্তই প্রায় কলিকাতার কথা। তাহার পর, একদিন গ্রীষ্মের ছুটি ফুরাইল। দেবদাস আবার কলিকাতায় চলিয়া গেল। এবারও কান্নাকাটি হইল বটে, কিন্তু সেবারের মত তাহাতে তেমন গভীরতা রহিল না। এমনি করিয়া চারি বৎসর কাটিয়া গেল। এই কয় বৎসরে

দেবদাসের স্বভাবের এত পরিবর্তন হইয়াছে যে, দেখিয়া পার্বতী গোপনে কাঁদিয়া অনেকবার চক্ষু মুছিল। ইতিপূর্বে দেবদাসের যে-সমস্ত গ্রাম্যতা-দোষ ছিল, শহরে বাস করিয়া সে-সব আর একেবারে নাই। এখন তাহার বিলাতী জুতা, ভাল জামা, কাপড়, ছড়ি, সোনার ঘড়ি-চেন, বোতাম—এ-সব না হইলে বড় লজ্জা করে। গ্রামে নদীতীরে বেড়াইতে আর সাধ যায় না; বরং তাহার পরিবর্তে বন্দুক-হাতে শিকারে বাহির হইতেই আনন্দ পায়। ক্ষুদ্র পুঁটিমাছ ধরার বদলে বড় মাছ খেলাইতে ইচ্ছে হয়। শুধু কি তাই? সমাজের কথা, রাজনীতির চর্চা, সভা-সমিতি—ক্রিকেট, ফুটবলের আলোচনা। হায় রে! কোথায় সেই পার্বতী, আর তাহাদের সেই তালসোনাপুর গ্রাম! বাল্যস্মৃতিজড়িত দুই-একটা সুখের কথা যে এখন আর মনে পড়ে না, তাহা নয়—কিন্তু নানা কাজের উৎসাহে সে-সকল আর বেশীক্ষণ হৃদয়ে স্থান পায় না ।

আবার গ্রীষ্মের ছুটি হইল। পূর্ব বৎসর গ্রীষ্মাবকাশে দেবদাস বিদেশ বেড়াইতে গিয়াছিল, বাটী যায় নাই। এবার পিতামাতা উভয়েই জিদ করিয়া পত্ৰ লিখিয়াছেন, তাই ইচ্ছা না থাকিলেও দেবদাস বিছানাপত্র বাঁধিয়া তালসোনাপুর গ্রামের জন্য হাওড়া স্টেশনে আসিয়া উপস্থিত হইল। যেদিন বাটী আসিল, সেদিন তাহার শরীর তেমন ভাল ছিল না, তাই বাহির হইতে পারিল না। পরদিন পার্বতীদের বাটীতে আসিয়া ডাকিল, খুড়ীমা! পার্বতীর জননী আদর করিয়া ডকিলেন, এস বাবা, ব'স ।

খুড়ীমার সহিত কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর দেবদাস জিজ্ঞাসা করিল, পারু কোথায় খুড়ীমা?

ঐ বুঝি ওপরের ঘরে আছে ।

দেবদাস উপরে আসিয়া দেখিল, পার্বতী সন্ধ্যাদীপ জ্বালিতেছে; ডাকিল, পারু! প্রথমে পার্বতী চমকিত হইয়া উঠিল, তারপর প্রণাম করিয়া সরিয়া দাঁড়াইল ।

কি হচ্ছে পারু? সে কথা আর বলিবার প্রয়োজন নাই—তাই পার্বতী চুপ করিয়া রহিল। তার পর, দেবদাসের লজ্জা করিতে লাগিল— কহিল, যাই, সন্ধ্যা হয়ে গেল। শরীরটা ভাল নয় । দেবদাস চলিয়া গেল।


                            পঞ্চম পরিচ্ছেদ


পার্বতী এই তের বছরে পা দিয়াছে—ঠাকুরমাতা এই কথা বলেন। এই বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য অকস্মাৎ যেন কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া কিশোরীর সর্বাঙ্গ ছাইয়া ফেলে। আত্মীয়স্বজন হঠাৎ একদিন চমকিত হইয়া দেখিতে পান যে, তাঁহাদের ছোট মেয়েটি বড় হইয়াছে। তখন পাত্রস্থা করিবার জন্য বড় তাড়াহুড়া পড়িয়া যায়। চক্রবর্তী-বাড়িতে আজ কয়েক দিবস হইতেই সেই কথার আলোচনা হইতেছে। জননী বড় বিষণ্ণ; কথায় কথায় স্বামীকে শুনাইয়া বলেন, তাইত, পারুকে আর ত রাখা যায় না। তাঁহারা বড়লোক নহেন, তবে ভরসা এই যে, মেয়েটি অতিশয় সুশ্রী। জগতে রূপের যদি মর্যাদা থাকে, ত পার্বতীর জন্য ভাবিতে হইবে না। আরও একটা কথা আছে—সেটা এইখানেই বলিয়া রাখি। চক্রবর্তী-পরিবারে ইতিপূর্বে কন্যার বিবাহে এতটুকু চিন্তা করিতে হইত না, পুত্রের বিবাহে করিতে হইত। কন্যার বিবাহে পণ গ্রহণ করিতেন এবং পুত্রের বিবাহে পণ দিয়া মেয়ে ঘরে আনিতেন। নীলকণ্ঠের পিতাও তাঁহার কন্যার বিবাহে অর্থ গ্রহণ করিয়াছিলেন । কিন্তু নীলকণ্ঠ স্বয়ং এ প্রথাটাকে ঘৃণা করিতেন। তাঁহার আদৌ ইচ্ছা ছিল না যে, পার্বতীকে বিক্রয় করিয়া অর্থলাভ করিবেন। পার্বতীর জননী এ কথা জানিতেন; তাই স্বামীকে কন্যার জন্য তাগাদা করিতেন। ইতিপূর্বে পার্বতীর জননী মনে মনে একটা দুরাশাকে স্থান দিয়াছিলেন—ভাবিয়াছিলেন, দেবদাসের সহিত যদি কোন সূত্রে কন্যার বিবাহ ঘটাইতে পারেন! এ আশা যে নিতান্ত অসম্ভব, তাহা মনে হইত না। ভাবিলেন, দেবদাসকে অনুরোধ করিলে বোধ হয় কোন সুরাহা হইতে পারে। তাই বোধ হয় নীলকণ্ঠের জননী কথায় কথায় দেবদাসের মাতার কাছে কথাটা এইরূপে পাড়িয়াছিলেন—আহা বৌমা, দেবদাসে আর আমার পারুতে কি ভাব! এমনটি কৈ কোথাও ত দেখা যায় না!

দেবদাসের জননী বলিলেন, তা আর হবে না খুড়ী, দু'জনে ভাইবোনের মতই যে একসঙ্গে মানুষ হয়ে এসেচে। হাঁ মা হাঁ—তাইত মনে হয়, যদি দু'জনের—এই দেখ না কেন বৌমা, দেবদাস যখন কলকাতায় গেল, বাছা তখন সবে আট বছরের; সেই বয়সেই ভেবে ভেবে যেন কাঠ হয়ে গেল। দেবদাসের একখানা চিঠি এলে, সেখানা যেন একেবারে ওর জপমালা হয়ে উঠত। আমরা সবাই ত তা জানি!

দেবদাসের জননী মনে মনে সমস্ত বুঝিলেন। একটু হাসিলেন। এ হাসিতে বিদ্রূপ কতটুকু প্রচ্ছন্ন ছিল জানি না, কিন্তু, বেদনা অনেকখানি ছিল। তিনিও সব কথা জানিতেন, পার্বতীকে ভালও বাসিতেন। কিন্তু বেচা-কেনা ঘরের মেয়ে যে! তার ওপর আবার ঘরের পাশে কুটুম্ব! ছি ছি! বলিলেন, খুড়ী, কর্তার ত একেবারে ইচ্ছা নয় এই ছেলেবেলায়, বিশেষ পড়াশুনার সময়ে দেবদাসের বিয়ে দেন। তাই ত কর্তা আমাকে এখনও বলেন, বড়ছেলে দ্বিজদাসের ছেলেবেলায় বিয়ে দিয়ে কি সর্বনাশটাই করলে। লেখাপড়া একেবারেই হল না ।

পার্বতীর ঠাকুরমা একেবারে অপ্রতিভ হইয়া পড়িলেন। তবুও কহিলেন, তা ত সব জানি বৌমা, কিন্তু কি জান— পারু, যেটের বাছা একটু অমনি বেড়েচেও বটে, আর বাড়ন্ত গড়নও বটে, তাইতে—তাইতে—যদি নারাণের অমত— দেবদাসের জননী বাধা দিলেন; বলিলেন, না খুড়ী, এ কথা আমি তাঁকে বলতে পারব না। দেবদাসের এ সময়ে বিয়ের কথা পাড়লে তিনি কি আমার মুখ দেখবেন!

কথাটা এইখানেই চাপা পড়িয়া গেল। কিন্তু স্ত্রীলোকের পেটে কথা থাকে না। দেবদাসের জননী কর্তার খাবার সময় কথাটা পাড়িয়া বলিলেন, পারুর ঠাকুমা আজ তার বিয়ের কথা পেড়েছিলেন।

কর্তা মুখ তুলিলেন; বলিলেন, হাঁ, পারুর বয়স হল বটে; শীঘ্র বিবাহ দেওয়াই কর্তব্য।

তাইতে ত আজ কথা পেড়েছিলেন। বললেন, দেবদাসের সঙ্গে যদি—

স্বামী ভ্রূকুঞ্চিত করিলেন, তুমি কি বললে?

আমি আর কি বলব! দু'জনের বড় ভাব; কিন্তু তাই বলে কি বেচা-কেনা, চক্রবর্তী-ঘরের মেয়ে আনতে পারি? তাতে আবার বাড়ির পাশে কুটুম্ব—ছি ছি! কর্তা সন্তুষ্ট হইলেন; কহিলেন, ঠিক তাই। কুলের কি মুখ হাসাব? এ-সব কথায় কান দিও না । গৃহিণী শুল্কহাসি হাসিয়া কহিলেন, না— আমি কান দিইনে; কিন্তু তুমিও যেন ভুলে যেয়ো না।

কর্তা গম্ভীরমুখে ভাতের গ্রাস তুলিয়া বলিলেন, তা হলে এতবড় জমিদারি কোনকালে উড়ে যেত! জমিদারি তাঁহার চিরদিন থাকুক, তাহতে আপত্তি নাই; কিন্তু পার্বতীর দুঃখের কথাটা বলি। যখন এই প্রস্তাবটা নিতান্ত অগ্রাহ্য হইয়া নীলকণ্ঠের কানে গেল,

তখন তিনি মাকে ডাকিয়া তিরস্কার করিয়া বলিলেন, মা, কেন এমন কথা বলতে গিয়েছিলে?

মা চুপ করিয়া রহিলেন।

নীলকণ্ঠ কহিতে লাগিলেন, মেয়ের বিয়ে দিতে আমাদের পায়ে ধরে বেড়াতে হয় না, বরং অনেকেই আমার পায়ে ধরবে। মেয়ে আমার কুৎসিত নয়। দেখো, তোমাদের বলে রাখলুম—এক হপ্তার মধ্যেই আমি সম্বন্ধ স্থির করে ফেলবো। বিয়ের ভাবনা কি?

কিন্তু যাহার জন্য পিতা এতবড় কথাটা বলিলেন, তাহার যে মাথায় বাজ ভাঙ্গিয়া পড়িল। ছোটবেলা হইতে তাহার একটা ধারণা ছিল যে, দেবদাদার উপর তাহার একটু অধিকার আছে। অধিকার কেহ যে হাতে তুলিয়া দিয়াছে, তাহা নয়। প্রথম সে নিজেও ঠিকমত কিছুই বুঝিতে পারে নাই,—অজ্ঞাতসারে, অশান্ত মন দিনে দিনে এই অধিকারটি এমন নিঃশব্দে অথচ এতই দৃঢ় করিয়া প্রতিষ্ঠিত করিয়া লইয়াছিল যে, বাহিরে যদিও একটা বাহ্য আকৃতি তাহার এতদিন চোখে পড়ে নাই, কিন্তু আজ এই হারানোর কথা উঠিতেই তাহার সমস্ত হৃদয় ভরিয়া একটা ভয়ানক তুফান উঠিতে লাগিল ।

কিন্তু দেবদাসের সম্বন্ধে এই কথাটা ঠিক খাটানো যায় না। ছেলেবেলায় যখন সে পার্বতীর উপর দখল পাইয়াছিল, তখন তাহা সে পরিপূর্ণভাবেই উপভোগ করিয়াছিল। কিন্তু কলিকাতায় গিয়া কর্মের উৎসাহে ও অন্যান্য আমোদ-আহ্লাদের মধ্যে পার্বতীকে সে অনেকটা ছাড়িয়াই দিয়াছিল। কিন্তু সে জানিত না যে, পার্বতী তাহার সেই একঘেয়ে গ্রাম্য-জীবনের মধ্যে নিশিদিন শুধু তাহাকেই ধ্যান করিয়া আসিয়াছে। শুধু তাই নয়। সে ভাবিত, ছেলেবেলা হইতে যাহাকে নিতান্ত আপনার বলিয়াই জানিয়াছিল, ন্যায়-অন্যায় সমস্ত আবদারই এতদিন যাহার উপর খাটাইয়া লইয়াছে, যৌবনের প্রথম ধাপটিতে পা দিয়াই তাহা হইতে এমন অকস্মাৎ পিছলাইয়া পড়িতে হইবে না। কিন্তু তখন কে ভাবিত বিবাহের কথা? কে জানিত সেই কিশোর-বন্ধন বিবাহ ব্যতীত কোনমতেই চিরস্থায়ী করিয়া রাখা যায় না! 'বিবাহ হইতে পারে না', এই সংবাদটা পার্বতীর হৃদয়ের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা তাহার বুকের ভিতর হইতে যেন ছিঁড়িয়া ফেলিবার জন্য টানাটানি করিতে লাগিল। কিন্তু দেবদাসকে সকালবেলাটায় পড়াশুনা করিতে হয়; দুপুরবেলা বড় গরম, ঘরের বাহির হওয়া যায় না, শুধু বিকেলবেলাটাতেই ইচ্ছা করিলে একটু বাহির হইতে পারা যায়। এই সময়টাতেই কোনোদিন বা সে জামাজোড়া পরিয়া, ভাল জুতা পায়ে দিয়া, ছড়ি-হাতে ময়দানে বাহির হইত। যাইবার সময় চক্রবর্তীদের বাড়ির পাশ দিয়াই যাইত, – পার্বতী উপরে জানালা হইতে চক্ষু মুছিতে মুছিতে তাহা দেখিত। কত কথা মনে পড়িত। মনে পড়িত, দু'জনেই বড় হইয়াছে,— দীর্ঘ প্রবাসের পর পরের মত এখন পরস্পরকে বড় লজ্জা করে। দেবদাস সেদিন অমনি চলিয়া গিয়াছিল; লজ্জা করিতেছিল, তাই ভাল করিয়া কথাই কহিতে পারে নাই। এটুকু পার্বতীর বুঝিতে বাকী ছিল না।

দেবদাসও প্রায় এমনি করিয়া ভাবে। মাঝে মাঝে তাহার সহিত কথা কহিতে, তাহাকে ভাল করিয়া দেখিতে ইচ্ছা হয়; কিন্তু অমনি মনে হয়, ইহা কি ভাল দেখাইবে?

এখানে কলিকাতার সেই কোলাহল নাই, আমোদ-আহ্লাদ, থিয়েটার, গানবাজনা নাই—তাই কেবলই তাহার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে, সেই পার্বতী এই পার্বতী হইয়াছে! পার্বতী মনে করে, সেই দেবদাস – এখন এই দেবদাসবাবু হইয়াছে! দেবদাস এখন প্রায়ই চক্রবর্তীদের বাটিীতে যায় না । কোনদিন যদি-বা সন্ধ্যার সময় উঠানে দাঁড়াইয়া ডাকে, খুড়ীমা, কি হচ্ছে? খুড়ীমা বলেন, এসো বাবা, বোস।

দেবদাস অমনি কহে—না থাক খুড়ীমা, একটু ঘুরে আসি।

তখন পার্বতী কোনদিন বা উপরে থাকে, কোনদিন বা সামনে পড়িয়া যায়। দেবদাস খুড়ীমার সহিত কথা কহে, পার্বতী ধীরে ধীরে সরিয়া যায়। রাত্রে দেবদাসের ঘরে আলো জ্বলে। গ্রীষ্মকালের খোলা জানালা দিয়া পার্বতী সেদিকে বহুক্ষণ হয়ত চাহিয়া থাকে—আর কিছুই দেখা যায় না। পার্বতী চিরদিন অভিমানিনী। সে যে ক্লেশ সহ্য করিতেছে, ঘৃণাগ্রে এ কথা কেহ না বুঝিতে পারে, পার্বতীর ইহা কায়মন চেষ্টা। আর জানাইয়াই বা লাভ কি? সহানুভূতি সহ্য হইবে না, আর তিরস্কার-লাঞ্ছনা?—তা তার চেয়ে ত মরণ ভাল। মনোরমার গত বৎসর বিবাহ হইয়াছে। এখনও সে শ্বশুরবাড়ি যায় নাই, তাই মাঝে মাঝে বেড়াইতে আসে। পূর্বে দুই সখীতে মিলিয়া মাঝে মাঝে এই-সব কথাবার্তা হইত, এখনও হয়; কিন্তু পার্বতী আর যোগ দেয় না–হয় চুপ করিয়া থাকে, নাহয় কথা উলটাইয়া দেয় ।

পার্বতীর পিতা কাল রাত্রে বাটী ফিরিয়াছেন। এ কয়দিন তিনি পাত্র স্থির করিতে বাহিরে গিয়াছিলেন। এখন বিবাহের সমস্ত স্থির করিয়া ঘরে আসিয়াছেন। প্রায় কুড়ি-পঁচিশ ক্রোশ দূরে বর্ধমান জেলায় হাতীপোতা গ্রামের জমিদারই পাত্র। তাঁহার অবস্থা ভাল, বয়স চল্লিশের নীচেই,—গত বৎসর স্ত্রীবিয়োগ হইয়াছে, তাই আবার বিবাহ করিবেন। সংবাদটা যে বাটীর সকলেরই চিত্তরঞ্জন করিয়াছিল, তাহা নহে, বরং দুঃখের কারণই হইয়াছিল; তবে একটা কথা এই যে, ভুবন চৌধুরীর নিকট হইতে সর্বরকমে প্রায় দু'তিন হাজার টাকা ঘরে আসিবে। তাই মেয়েরা চুপ করিয়া ছিলেন।

একদিন দুপুরবেলা দেবদাস আহারে বসিয়াছিল। মা কাছে বসিয়া কহিলেন, পারুর যে বিয়ে।

দেবদাস মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কবে?

এই মাসেই। কাল মেয়ে দেখে গেছে। বর নিজেই এসেছিল।

দেবদাস কিছু বিস্মিত হইল, – কৈ, আমি ত কিছু জানিনে মা ! তুমি আর কি করে জানবে? বর দোজবরে – বয়স হয়েছে; তবে বেশ টাকাকড়ি নাকি আছে, পারু সুখে-স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে। দেবদাস মুখ নীচু করিয়া আহার করিতে লাগিল। তাহার জননী পুনরায় কহিতে লাগিলেন, ওদের ইচ্ছা ছিল এই বাড়িতে বিয়ে দেয় । দেবদাস মুখ তুলিল—তারপর?

জননী হাসিলেন—ছিঃ, তা কি হয়! একে বেচা-কেনা ছোটঘর, তাতে আবার ঘরের পাশে বিয়ে, ছি ছি—বলিয়া মা ওষ্ঠ কুঞ্চিত করিলেন। দেবদাস তাহা দেখিতে পাইল ।

কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া মা পুনরায় কহিলেন, কর্তাকে আমি বলেছিলাম ।

দেবদাস মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, বাবা কি বললেন?

কি আর বলবেন! এতবড় বংশের মুখ হাসাতে পারবেন না, – তাই আমাকে শুনিয়ে দিলেন। দেবদাস আর কথা কহিল

 না ।

সেইদিন দ্বিপ্রহরে মনোরমা ও পার্বতীতে কথোপকথন হইতেছিল। পার্বতীর চোখে জল, – মনোরমা বোধ করি এইমাত্র মুছিয়াছে। মনোরমা কহিল, তবে

উপায় বোন?

পার্বতী চোখ মুছিয়া কহিল, উপায় আর কি? তোমার বরকে তুমি পছন্দ করে বিয়ে করেছিলে?

আমার কথা আলাদা। আমার পছন্দ ছিল না, অপছন্দও হয়নি; তাই আমার কোন কষ্টই ভোগ করতে হয় না। কিন্তু তুমি যে নিজের পায়ে নিজে কুডুল

মেরেচ বোন!

পার্বতী জবাব দিল না,—ভাবিতে লাগলি ।

মনোরমা কি ভাবিয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিল, পারু, বরটির বয়স কত?

কার বরটির?

তোর।

পার্বতী একটু হিসাব করিয়া বলিল, বোধ হয় উনিশ।

মনোরমা অতিশয় বিস্মিত হইল; কহিল, সে কি, এই যে শুনলুম প্রায় চল্লিশ! এবারে পার্বতীও একটু হাসিল; কহিল, মনোদিদি, কত লোকের বয়স চল্লিশ থাকে, আমি কি তার হিসাব রাখি? আমার বরের বয়স উনিশ-কুড়ি এই পর্যন্ত

জানি ।

মুখপানে চাহিয়া মনোরমা জিজ্ঞাসা করিল, কি নাম রে?

পার্বতী আবার হাসিয়া উঠিল— এতদিনে বুঝি তাও জানো না।

কি করে জানব!

জান না? আচ্ছা, বলে দিই। একটু হাসিয়া, একটু গম্ভীর হইয়া পাবর্তী তাহার কানের কাছে মুখ আনিয়া বলিল, জানিস নে— শ্রীদেবদাস- মনোরমা প্রথমে একটু চমকাইয়া উঠিল। পরে ঠেলিয়া দিয়া বলিল, আর ঠাট্টায় কাজ নেই। নাম কি, এই বেলা বল্, আর ত বলতে পাবিনে ।

এই ত বললুম

মনোরমা রাগ করিয়া কহিল, যদি দেবদাস নাম—তবে কান্নাকাটি করে মরচিস কেন?

পার্বতী সহসা মলিন হইয়া গেল। কি যেন একটু ভাবিয়া বলিল, তা বটে। আর ত কান্নাকাটি করব না-

পারু ।

সব কথা খুলে বল্ না বোন! আমি কিছুই বুঝতে পারলুম না ।

পার্বতী কহিল, যা বলবার সবই ত বললুম ।

কিন্তু কিছুই যে বোঝা গেল না রে !

যাবেও না। বলিয়া পার্বতী আর একদিকে মুখ ফিরাইয়া রহিল।

মনোরমা ভাবিল, পার্বতী কথা লুকাইতেছে,—তাহার মনের কথা কহিবার ইচ্ছা নাই। বড় অভিমান হইল; দুঃখিত হইয়া কহিল, পারু, তোর যাতে দুঃখ, আমারও ত তাতে তাই বোন। তুই সুখী হ, এই ত আমার আন্তরিক প্রার্থনা। যদি কিছু তোর লুকোন কথা থাকে, আমাকে বলতে না চাস্, বলিস নে। কিন্তু এমন করে আমাকে তামাশা করিস নে।

পার্বতীও দুঃখিতা হইল, কহিল, ঠাট্টা করিনি দিদি। যতদূর নিজে জানি, ততদূর তোমাকেও বলেচি। আমি জানি, আমার স্বামীর নাম দেবদাস; বয়স উনিশ- কুড়ি—সেই কথাই ত তোমাকে বলেচি।

কিন্তু এই যে শুনলুম, তোর আর কোথায় সম্বন্ধ স্থির হয়েচে!

স্থির আর কি! ঠাকুরমার সঙ্গে ত আর বিয়ে হবে না, হলে আমারই সঙ্গে হবে; আমি ত কৈ এ খবর শুনিনি! মনোরমা যাহা শুনিয়াছিল, তাহা এখন বলিতে গেল। পার্বতী তাহাতে বাধা দিয়া বলিল, ও-সব শুনেচি।

তবে? দেবদাস তোকে—

কি আমাকে ?

মনোরমা হাসি চাপিয়া বলিল, তবে স্বয়ম্বরা বুঝি? লুকিয়ে লুকিয়ে পাকা বন্দোবস্ত করা হয়ে গেছে?

কাঁচা-পাকা এখনও কিছুই হয়নি।

মনোরমা ব্যথিতস্বরে কহিল, তুই কি বলিস পারু, কিছুই ত বুঝতে পারিনে। পার্বতী কহিল, তা হলে দেবদাসকে জিজ্ঞাসা করে তোমায় বুঝিয়ে দেব।

কি জিজ্ঞাসা করবে? সে বিয়ে করবে কি না, তাই?

পার্বতী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, হাঁ, তাই।

মনোরমা ভয়ানক আশ্চর্য হইয়া কহিল, বলিস কি পারু? তুই নিজে এ কথা জিজ্ঞাসা করবি?

দোষ কি দিদি?

মনোরমা একেবারে অবাক হইয়া গেল—বলিস কি রে? নিজে?

নিজেই । নইলে আমার হয়ে আর কে জিজ্ঞাসা করবে দিদি?

লজ্জা করবে না?

লজ্জা কি? তোমাকে বলতে লজ্জা করলুম?

আমি মেয়েমানুষ—তোর সই, কিন্তু সে যে পুরুষমানুষ পারু।

এবার পার্বতী হাসিয়া উঠিল; কহিল, তুমি সই, তুমি আপনার—কিন্তু তিনি কি পর? যে কথা তোমাকে বলতে পারি, সে কথা কি তাঁকে বলা যায় না ? মনোরমা অবাক হইয়া মুখপানে চাহিয়া রহিল ।

পার্বতী হাসিমুখে কহিল, মনোদিদি, তুই মিছামিছি মাথায় সিঁদুর পরিস। কাকে স্বামী বলে তাই জানিস নে। তিনি আমার স্বামী না হলে, আমার সমস্ত লজ্জা- শরমের অতীত না হলে, আমি এমন করে মরতে বসতুম না। তা ছাড়া দিদি, মানুষ যখন মরতে বসে, তখন সে কি ভেবে দেখে, বিষটা তেতো কি মিষ্টি! তাঁর কাছে আমার কোন লজ্জা নেই ।

মনোরমা মুখপানে চাহিয়া রহিল । কিছুক্ষণ পরে বলিল, তকে কি বলবি? বলবি যে পায়ে স্থান দাও? পার্বতী মাথা নাড়িয়া বলিল, ঠিক তাই বলবো, দিদি।

আর যদি সে স্থান না দেয়?

এবার পার্বতী বহুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তাহার পর কহিল, তখনকার কথা জানিনে দিদি। বাটী ফিরিবার সময় মনোরমা ভাবিল, ধন্য সাহস! ধন্য বুকের পাটা! আমি যদি মরেও যাই ত এমন কথা মুখে আনতে পারিনে। কথাটা সত্য। তাই ত পার্বতী বলিয়াছিল, ইহারা অনর্থক মাথায় সিন্দূর পরে, হাতে নোয়া দেয়!


                                ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ


রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে। তখনও ম্লান জ্যোৎস্না আকাশের গায়ে লাগিয়া আছে। পার্বতী বিছানার চাদরে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া ধীরপদবিক্ষেপে সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া আসিল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, – কেহ জাগিয়া নাই। তাহার পর দ্বার খুলিয়া নিঃশব্দে পথে আসিয়া উপস্থিত হইল। পাড়াগ্রামের পথ, একেবারে স্তব্ধ, একেবারে নির্জন— কাহারও সাক্ষাতের আশঙ্কা ছিল না। সে বিনা বাধায় জমিদারবাড়ির সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইল। দেউড়ির উপর বৃদ্ধ দরোয়ান কিষণ সিংহ খাটিয়া বিছাইয়া তখনও তুলসীদাসী রামায়ণ পড়িতেছিল; পার্বতীকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া চোখ না তুলিয়াই কহিল, কে? পার্বতী বলিল, আমি ।

দ্বারবানজী কন্ঠস্বরে বুঝিল স্ত্রীলোক। দাসী মনে করিয়া, সে আর কোন কথা জিজ্ঞাসা না করিয়া, সুর করিয়া রামায়ণ পড়িতে লাগিল। পার্বতী চলিয়া গেল। গ্রীষ্মকাল; বাহিরে উঠানের উপর কয়েকজন ভৃত্য শয়ন করিয়া ছিল; তাহাদের মধ্যে কেহ-বা নিদ্রিত, কেহ-বা অর্ধ-জাগরিত। তন্দ্রার ঘোরে কেহ-বা পার্বতীকে দেখিতে পাইল, কিন্তু দাসী ভাবিয়া কথা কহিল না। পার্বতী নির্বিঘ্নে ভিতরে প্রবেশ করিয়া সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিয়া গেল। এ বাটীর প্রতি কক্ষ, প্রতি গবাক্ষ তাহার পরিচিত। দেবদাসের ঘর চিনিয়া লইতে তাহার বিলম্ব হইল না। কপাট খোলা ছিল এবং ভিতরে প্রদীপ জ্বলিতেছিল। পার্বতী ভিতরে আসিয়া দেখিল, দেবদাস শয্যায় নিদ্রিত। শিয়রের কাছে কি একখানা বই তখনও খোলা পড়িয়াছিল, — ভাবে বোধ হইল, সে এইমাত্র যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। দীপ উজ্জ্বল করিয়া দিয়া সে দেবদাসের পায়ের কাছে আসিয়া নিঃশব্দে উপবেশন করিল। দেয়ালের গায়ে বড় ঘড়িটা শুধু টক্‌টক্ শব্দ করিতেছে, ইহা ভিন্ন সমস্ত নিস্তব্ধ, সমস্ত সুপ্ত।

পায়ের উপর হাত রাখিয়া পার্বতী ধীরে ধীরে ডাকিল, দেবদা!—

দেবদাস ঘুমের ঘোরে শুনিতে পাইল, কে যেন ডাকিতেছে। চোখ না চাহিয়া সাড়া দিল, উঃ—

ও দেবদা-

এবার দেবদাস চোখ রগড়াইয়া উঠিয়া বসিল। পার্বতীর মুখে আবরণ নাই, ঘরে দীপও উজ্জ্বলভাবে জ্বলিতেছে; সহজেই দেবদাস চিনিতে পারিল। কিন্তু প্রথমে যেন বিশ্বাস হইল না। তাহার পর কহিল, এ কি! পারু নাকি?

হাঁ, আমি ।

দেবদাস ঘড়ির পানে চাহিয়া দেখিল। বিস্ময়ের উপর আরও বিস্ময় বাড়িল— কহিল, এত রাত্রে? পার্বতী উত্তর দিল না, মুখ নীচু করিয়া বসিয়া রহিল।

দেবদাস পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, এত রাত্রে কি একলা এসেচ নাকি?

পার্বতী বলিল, হাঁ।

দেবদাস উদ্বেগে, আশঙ্কায় কণ্টকিত হইয়া কহিল, বল কি! পথে ভয় করেনি?

পার্বতী মৃদু হাসিয়া কহিল, ভূতের ভয় আমার তেমন করে না ।

ভূতের ভয় না করুক, কিন্তু মানুষের ভয় ত করে। কেন এসেচ? পার্বতী জবাব দিল না, কিন্তু মনে মনে কহিল, এ সময়ে আমার তাও বুঝি নেই।

বাড়ি ঢুকলে কি করে? কেউ দেখেনি ত?

দরোয়ান দেখেচে।

দেবদাস চক্ষু বিস্ফারিত করিল, দরোয়ান দেখেচে? আর কেউ? উঠানে চাকরেরা শুয়ে আছে—তাদের মধ্যেও বোধ হয় কেউ দেখে থাকবে।

দেবদাস বিছানা হইতে লাফাইয়া উঠিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল। কেউ চিনতে পেরেচে কি? পার্বতী কিছুমাত্র উৎকণ্ঠা প্রকাশ না করিয়া অত্যন্ত সহজভাবে

বলিল, তারা সবাই আমাকে জানে, হয়ত বা কেউ চিনে থাকবে ।

বল কি? এমন কাজ কেন করলে পারু?

পার্বতী মনে মনে কহিল, তা তুমি কেমন করে বুঝবে? কিন্তু কোন কথা কহিল না, – অধোবদনে বসিয়া রহিল ।

এত রাত্রে! ছি ছি! কাল মুখ দেখাবে কেমন করে? মুখ নীচু করিয়াই পার্বতী বলিল, আমার সে সাহস আছে।

কথা শুনিয়া দেবদাস রাগ করিল না, কিন্তু নিরতিশয় উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিল, ছি ছি—এখনও কি তুমি ছেলেমানুষ আছ? এখানে, এভাবে আসতে কি তোমার

কিছুমাত্র লজ্জাবোধ হল না? পার্বতী মাথা নাড়িয়া কহিল, কিছু না।

কাল তোমার লজ্জায় কি মাথা কাটা যাবে না?

প্রশ্ন শুনিয়া পার্বতী তীব্র অথচ করুণ দৃষ্টিতে দেবদাসের মুখপানে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া অসঙ্কোচে কহিল, মাথা কাটাই যেতো—যদি না আমি নিশ্চয় জানুতম, আমার সমস্ত লজ্জা তুমি ঢেকে দেবে।

দেবদাস বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া বলিল, আমি! কিন্তু আমিই কি মুখ দেখাতে পারব? পার্বতী তেমনি অবিচলিতকণ্ঠে উত্তর দিল, তুমি? কিন্তু তোমার কি দেবদা?

একটুখানি মৌন থাকিয়া পুনরায় কহিল, তুমি পুরুষ মানুষ। আজ নাহয় কাল তোমার কলঙ্কের কথা সবাই ভুলবে; দুদিন পরে কেউ মনে রাখবে না—কবে কোন্ রাত্রে হতভাগিনী পার্বতী তোমায় পায়ের উপর মাথা রাখবার জন্যে সমস্ত তুচ্ছ করে এসেছিল।

ও কি পারু?

আর আমি— তাহার পর দুইজনেই চুপ করিয়া রহিল। দেবদাসের পা বহিয়া অনেক ফোঁটা অশ্রু শুভ্র শয্যার উপর গড়াইয়া পড়িল । বহুক্ষণ পরে দেবদাস পার্বতীর মুখ তুলিয়া ধরিয়া বলিল, পারু, আমাকে ছাড়া কি তোমার উপায় নেই? পার্বতী রুদ্ধকণ্ঠে বলিল, কি? বাপ-মায়ের একেবারে অমত, তা শুনেচ

মন্ত্রমুগ্ধের মত দেবদাস কহিল, আর তুমি?

আমার কলঙ্কের কথা বলচ? না, আমার কলঙ্ক নেই। তোমার কাছে গোপনে এসেছিলাম বলে যদি আমার নিন্দে হয়, সে নিন্দে আমার গায়ে লাগবে না । ও কি পারু? কাঁদচ?

দেবতা, নদীতে কত জল । অত জলেও কি আমার কলঙ্ক চাপা পড়বে না?

সহসা দেবদাস পার্বতীর হাত দুখানি ধরিয়া ফেলিল— পার্বতী !

পার্বতী দেবদাসের পায়ের উপর মাথা রাখিয়া অবরুদ্ধস্বরে বলিয়া উঠিল—এইখানে একটু স্থান দাও, দেবদা!

পার্বতী কথা কহিল না । তেমনি করিয়া পায়ের উপর মাথা পাতিয়া পড়িয়া রহিল। নিস্তব্ধ ঘরের মধ্যে শুধু তাহার অশ্রুব্যাকুল ঘন দীর্ঘশ্বাস দুলিয়া দুলিয়া, ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল। টং টং করিয়া ঘড়িতে দুইটা বাজিয়া গেল। দেবদাস ডাকিল, পারু!

পার্বতী মাথা নাড়িয়া জবাব দিল যে, সে শুনিয়াছে। তাহার পর দুইজনেই চুপ করিয়া রহিল। বহুক্ষণ অতিবাহিত হইবার পর দেবদাস দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিল, তবে আর কেন ?

জলে ডুবিয়া মানুষ যেমন করিয়া অন্ধভাবে মাটি চাপিয়া ধরে, সেটা কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না, ঠিক তেমনি করিয়া পার্বতী অজ্ঞানের মত দেবদাসের পা দুটি চাপিয়া ধরিয়া রাখিল। মুখপানে চাহিয়া কহিল, আমি কিছুই জানতে চাইনে, দেবদা!

পারু, বাপ-মায়ের অবাধ্য হব?

দোষ কি? হও ।

তুমি তাহলে কোথায় থাকবে?

পার্বতী কাঁদিয়া বলিল, তোমার পায়ে

আবার দুইজনে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। ঘড়িতে চারিটা বাজিয়া গেল। গ্রীষ্মকালের রাত্রি, আর অল্পক্ষণেই প্রভাত হইবে দেখিয়া দেবদাস পার্বতীর হাত ধরিয়া কহিল, চল, তোমাকে বাড়ি রেখে আসি—

আমার সঙ্গে যাবে?

ক্ষতি কি? যদি দুর্নাম রটে, হয়ত কতকটা উপায় হতে পারবে—

তবে চল ।

উভয়ে নিঃশব্দ পদক্ষেপে বাহির হইয়া গেল ।


                              সপ্তম পরিচ্ছেদ


পরদিন পিতার সহিত দেবদাসের অল্পক্ষণের জন্য কথাবার্তা হইল ।

পিতা কহিলেন, তুমি চিরদিন আমাকে জ্বালাতন করিয়াছ, যতদিন বাঁচিব, ততদিনই জ্বালাতন হইতে হইবে। তোমার মুখে এ কথায় আশ্চর্য হইবার কিছু

নাই ।

দেবদাস নিঃশব্দে অধোবদনে বসিয়া রহিল ।

পিতা কহিলেন, আমি ইহার ভিতর নাই। যা ইচ্ছা হয়, তুমি ও তোমার জননীতে মিলিয়া কর ।

দেবদাসের জননী এ কথা শুনিয়া কাঁদিয়া কহিলেন- বাবা, এতও আমার অদৃষ্টে ছিল! সেই দিন দেবদাস তোড়জোড় বাঁধিয়া কলিকাতায় চলিয়া গেল।

পার্বতী এ কথা শুনিয়া কঠোর মুখে আরও কঠিন হাসিয়া চুপ করিয়া রহিল। গতরাত্রের কথা কেহই জানে না, সেও কাহাকে কহিল না। তবে মনোরমা

আসিয়া ধরিয়া বসিল, পারু, শুনলাম দেবদাস চলে গেছে?

তবে, তোর উপায় কি করেছে?

উপায়ের কথা সে নিজেই জানে না, অপরকে কি বলিবে? আজ কয়দিন হইতে সে নিরন্তর ইহাই ভাবিতেছিল। কিন্তু কোনক্রমেই স্থির করিতে পারিতেছিল না যে, তাহার আশা কতখানি এবং নিরাশা কতখানি। তবে একটা কথা এই যে, মানুষ এমনি দুঃসময়ের মাঝে আশা-নিরাশার কুলকিনারা যখন দেখিতে পায় না, তখন দুর্বল মনে বড় ভয়ে ভয়ে আশার দিকটাই চাপিয়া ধরিয়া থাকে। যেটা হইলে তাহার মঙ্গল, সেইটাই আশা করে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই দিক পানেই নিতান্ত উৎসুক নয়নে চাহিয়া দেখিতে চাহে। পার্বতীর এই অবস্থায় সে কতকটা জোর করিয়া আশা করিতেছিল যে, কাল রাত্রের কথাটা নিশ্চয়ই বিফল হইবে না। বিফল হইলে তাহার দশা কি হইবে, এটা তাহার চিন্তার বাহিরে গিয়া পড়িয়াছিল। তাই সে ভাবিতেছিল, দেবদাদা আবার আসিবে, আবার আমাকে ডাকিয়া বলিবে, পারু, তোমাকে আমি সাধ্য থাকিতে পরের হাতে দিতে পারিব না ।

কিন্তু দিন-দুই পরে পার্বতী এইরূপ পত্র পাইল—

পার্বতী, আজ দুইদিন হইতে তোমার কথাই ভাবিয়াছি। পিতামাতার কাহারও ইচ্ছা নহে যে, আমাদের বিবাহ হয়। তোমাকে সুখী করিতে হইলে, তাঁহাদিগকে এতবড় আঘাত দিতে হইবে, যাহা আমার দ্বারা অসাধ্য। তা ছাড়া, তাঁহাদের বিরুদ্ধে এ কাজ করিবই বা কেমন করিয়া? তোমাকে আর যে কখন পত্র লিখিব, আপাততঃ এমন কথা ভাবিতে পারিতেছি না। তাই এ পত্রেই সমস্ত খুলিয়া লিখিতেছি। তোমাদের ঘর নীচু। বেচা-কেনা ঘরের মেয়ে মা কোনমতেই ঘরে আনিবেন না; এবং ঘরের পাশে কুটুম্ব, ইহাই তাঁহার মতে নিতান্ত কদর্য। বাবার কথা—সে ত তুমি সমস্তই জান। সে রাত্রের কথা মনে করিয়া বড় ক্লেশ পাইতেছি। কারণ, তোমার মত অভিমানিনী মেয়ে কতবড় ব্যথায় যে সে কাজ পারিয়াছিল, সে আমি জানি।

আর এক কথা— তোমাকে আমি যে বড় ভালবাসিতাম, তাহা আমার কোনদিন মনে হয় নাই— আজিও তোমার জন্য আমার অন্তরের মধ্যে নিরতিশয় ক্লেশ বোধ করিতেছি না। শুধু এই আমার বড় দুঃখ যে, তুমি আমার জন্য কষ্ট পাইবে। চেষ্টা করিয়া আমাকে ভুলিও, এবং আন্তরিক আশীর্বাদ করি, তুমি সফল হও।—দেবদাস ।

পত্রখানা যতক্ষণ দেবদাস ডাকঘরে নিক্ষেপ করে নাই, ততক্ষণ এক কথা ভাবিয়াছিল; কিন্তু রওনা করিবার পরমুহূর্ত হইতেই অন্য কথা ভাবিতে লাগিল । হাতের ঢিল ছুঁড়িয়া দিয়া একদৃষ্টে সেই দিকে চাহিয়া রহিল। একটা অনির্দিষ্ট শঙ্কা তাহার মনের মাঝে ক্রমে ক্রমে জড় হইতেছিল। সে ভাবিতেছিল, এ ঢিলটা তাহার মাথায় কিভাবে পড়িবে। খুব লাগিবে কি? বাঁচিবে ত? সে-রাত্রে পায়ের উপর মাথা রাখিয়া সে কেমন করিয়া কাঁদিয়াছিল, পোস্ট অফিস হইতে বাসায় ফিরিবার পথে প্রতি পদক্ষেপে দেবদাসের ইহাই মনে পড়িতেছিল। কাজটা ভাল হইল কি? এবং সকলের উপরে দেবদাস এই ভাবিতেছিল যে, পার্বতীর নিজের যখন কোন দোষ নাই, তখন কেন পিতামাতা নিষেধ করেন? বয়সের বৃদ্ধির সহিত, এবং কলিকাতায় থাকিয়া, সে এই কথাটি বুঝিতে পারিতেছিল যে, শুধু- লোক-দেখানো কুলমর্যাদা এবং একটা হীন খেয়ালের উপর নির্ভর করিয়া নিরর্থক একটা প্রাণনাশ করিতে নাই। যদি পার্বতী না বাঁচিতে চাহে, যদি সে নদীর জলে অন্তরের জ্বালা জুড়াইতে ছুটিয়া যায়, তা হইলে বিশ্বপতির চরণে কি একটা মহাপাতকের দাগ পড়িবে না?

বাসায় আসিয়া দেবদাস আপনার ঘরে শুইয়া পড়িল। আজকাল সে একটা মেসে থাকে। মাতুলের আশ্রয় সে অনেকদিন ছাড়িয়া দিয়াছে, – সেখানে তাহার কিছুতেই সুবিধা হইত না। যে ঘরে দেবদাস থাকে, তাহারই পাশের ঘরে চুনিলাল বলিয়া একজন যুবক আজ নয় বৎসর হইতে বাস করিয়া আসিতেছেন।

তাঁহার এই দীর্ঘ কলিকাতা বাস বি এ পাস করিবার জন্য অতিবাহিত হইয়াছে—আজিও সফলকাম হইতে পারেন নাই বলিয়া এখনো এইখানেই তাঁহাকে থাকিতে হইয়াছে। চুনিলাল তাঁহার নিত্যকর্ম সান্ধ্যভ্রমণে বাহির হইয়াছেন, ভোর নাগাদ বাটী ফিরিবেন। বাসায় আর কেহ এখনও আসেন নাই। ঝি আলো জ্বালিয়া দিয়া গেল, দেবদাস দ্বার রুদ্ধ করিয়া শুইয়া পড়িল।

তাহার পর একে একে সকলে ফিরিয়া আসিল। খাইবার সময় দেবদাসকে ডাকাডাকি করিল, কিন্তু সে উঠিল না। চুনিলাল কোনদিন রাত্রে বাসায় আসে না,

আজিও আসে নাই । তখন রাত্রি একটা বাজিয়া গিয়াছে। বাসায় দেবদাস ব্যতীত কেহই জাগিয়া নাই। চুনিলাল গৃহপ্রত্যাবর্তন করিয়া দেবদাসের ঘরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া দেখিল,

দ্বার রুদ্ধ কিন্তু আলো জ্বলিতেছে; ডাকিল, দেবদাস কি জেগে আছ নাকি হে?

দেবদাস ভিতর হইতে কহিল, আছি, তুমি এর মধ্যে ফিরলে যে?

চুনিলাল ঈষৎ হাসিয়া কহিল, হাঁ, শরীরটা আজ ভাল নেই, বলিয়া চলিয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, দেবদাস, একবার দ্বার খুলতে পার? পারি, কেন?

তামাকের জোগাড় আছে?

আছে। বলিয়া দেবদাস দ্বার খুলিয়া দিল। চুনিলাল তামাক সাজিতে বসিয়া কহিল; দেবদাস, এখনো জেগে কেন?

রোজ রোজই কি ঘুম হয়?

হয় না?

চুনিলাল যেন একটু বিদ্রূপ করিয়া কহিল, আমি ভাবতুম তোমাদের মত ভাল ছেলেরা কখনো দুপুর রাত্রের মুখ দেখেনি—আমার আজ একটা নূতন শিক্ষা

হল । দেবদাস কথা কহিল না। চুনিলাল আপনার মনে তামাক খাইতে খাইতে কহিল, দেবদাস, বাড়ি থেকে ফিরে এসে পর্যন্ত যেন ভাল নেই। তোমার মনে যেন

কি ক্লেশ আছে।

দেবদাস অন্যমনস্ক হইয়াছিল। জবাব দিল না ।

মনটা ভাল নেই, না হে

দেবদাস হঠাৎ বিছানার উপর উঠিয়া বসিল। ব্যগ্রভাবে তাহার মুখপানে চাহিয়া বলিল, আচ্ছা চুনিবাবু, তোমার মনে কি কোন ক্লেশ নেই?

চুনিলাল হাসিয়া উঠিল— কিছু না।

কখন এ জীবনে ক্লেশ পাওনি?

এ কথা কেন?

আমার শুনতে বড় সাধ হয়।

তা হলে আর একদিন শুনো ।

দেবদাস বলিল, আচ্ছা, চুনি, তুমি সারারাত্রি কোথায় থাক?

চুনিলাল মৃদু হাসিয়া কহিল, তা কি তুমি জানো না?

জানি, কিন্তু ঠিক জানিনে।

চুনিলালের মুখ উৎসাহে উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। এ-সব আলোচনার মধ্যে আর কিছু না থাক, একটা চক্ষুলজ্জাও যে আছে, দীর্ঘ অভ্যাসের দোষে সে তাহাও বিস্মৃত হইয়াছিল । কৌতুক করিয়া চক্ষু মুদিয়া বলিল, দেবদাস, ভাল করে জানতে হলে কিন্তু ঠিক আমার মত হওয়া চাই। কাল আমার সঙ্গে যাবে? দেবদাস একবার ভাবিয়া দেখিল। তাহার পর কহিল, শুনি, সেখানে নাকি খুব আমোদ পাওয়া যায়। কোন কষ্ট মনে থাকে না; এ কি সত্যি? একেবারে খাঁটি সত্যি।

তা যদি হয়, ত আমাকে নিয়ে যেয়ো—আমি যাবো ।

পরদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে চুনিলাল দেবদাসের ঘরে আসিয়া দেখিল, সে ব্যস্তভাবে জিনিসপত্র বাঁধিয়া গুছাইয়া সাজাইয়া লইতেছে। বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা

করিল, কি হে, যাবে না?

দেবদাস কোনদিকে না চাহিয়া কহিল, হাঁ, যাবো বৈ কি।

তবে এ-সব কি করচ ?

যাবার উদ্যোগ করচি।

চুনিলাল ঈষৎ হাসিয়া ভাবিল, মন্দ উদ্যোগ নয়; কহিল, ঘরবাড়ি কি সব সেখানে নিয়ে যাবে নাকি হে?

তবে কার কাছে রেখে যাব?

চুনিলাল বুঝিতে পারিল না। কহিল, জিনিসপত্র আমি কার কাছে রেখে যাই? সব ত বাসায় পড়ে থাকে ।

দেবদাস যেন হঠাৎ সচেতন হইয়া চোখ তুলিল। লজ্জিত হইয়া কহিল, চুনিবাবু, আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি।

সে কি হে? কবে আসবে?

দেবদাস মাথা নাড়িয়া বলিল, আমি আর আসব না ।

বিস্ময়ে চুনিলাল তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল। দেবদাস কহিতে লাগিল—এই টাকা নাও; আমার যা কিছু ধার আছে, এই থেকে শোধ করে দিয়ো । যদি

কিছু বাঁচে, বাসার দাসী-চাকরকে বিলিয়ে দিয়ো। আমি আর কখনো কলকাতায় ফিরব না। মনে মনে বলিতে লাগিল, কলকাতায় এসে আমার অনেক গেছে, অনেক গেছে।

আজ যৌবনের কুয়াশাচ্ছন্ন আঁধার ভেদ করিয়া তাহার চোখে পড়িতেছে—সেই দুর্দান্ত দুর্বিনীত কিশোর বয়সের সেই অযাচিত পদদলিত রত্ন আজ সমস্ত কলিকাতার তুলনাতেও যেন অনেক বড়, অনেক দামী। চুনিলালের মুখপানে চাহিয়া বলিল, চুনি শিক্ষা বিদ্যা বুদ্ধি জ্ঞান উন্নতি— যা কিছু, সব সুখের জন্য। যেমন করেই দেখ না কেন, নিজের সুখ বাড়ানো ছাড়া এ-সকল আর কিছুই নয়

চুনিলাল বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল, তবে তুমি কি আর লেখাপড়া করবে না নাকি? না। লেখাপড়ার জন্যে আমার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। আগে যদি জানতাম, এতখানির বদলে আমার এইটুকু লেখাপড়া হবে, তাহলে আমি জন্মে কখনো কলিকাতার মুখ দেখতাম না ।

তোমার হয়েছে কি?

দেবদাস ভাবিতে বসিল; কিছুক্ষণ পরে কহিল, আবার যদি কখন দেখা হয়, সব কথা বলব।

রাত্রি তখন প্রায় নয়টা বাজিয়াছে। বাসায় সকলে এবং চুনিলাল নিরতিশয় বিস্মিত হইয়া দেখিল, দেবদাস গাড়িতে সমস্ত দ্রব্যাদি বোঝাই করিয়া চিরদিনের মত বাসা পরিত্যাগ করিয়া বাটী চলিয়া গেল। সে চলিয়া গেলে চুনিলাল রাগ করিয়া বাসার অপর সকলকে বলিতে লাগিল—এইরকম ভিজে-বেড়ালগোছ লোকগুলোকে আদতে চিনিতে পারা যায় না।


                          অষ্টম পরিচ্ছেদ


সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ সম্বন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না—সবটুকুর বিচার না করিয়া, সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথা কহে না। কিন্তু আর একরকমের লোক আছে, যাহারা ঠিক ইহার উলটা। কোন জিনিস বেশীক্ষণ ধরিয়া চিন্তা করার ধৈর্য ইহাদের নাই, কোন কিছু হাতে পড়িবামাত্র স্থির করিয়া ফেলে—ইহা ভাল কিংবা মন্দ; তলাইয়া দেখিবার পরিশ্রমটুকু ইহারা বিশ্বাসের জোরে চালাইয়া লয়। এ-সকল লোক যে জগতে কাজ করিতে পারে না তাহা নহে, বরঞ্চ অনেক সময় বেশী কাজ করে। অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হইলে ইহাদিগকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে দেখিতে পাওয়া যায়। আর না হইলে, অবনতির গভীর কন্দরে চিরদিনের জন্য শুইয়া পড়ে; আর উঠিতে পারে না, আর বসিতে পারে না, আর আলোকের পানে চাহিয়া দেখে না; নিশ্চল, মৃত জড়পিণ্ডের মত পড়িয়া থাকে। এই শ্রেণীর মানুষ দেবদাস।

পরদিন প্রাতঃকালে সে বাড়ি আসিয়া উপস্থিত হইল । মা আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, দেবা, কলেজের কি আবার ছুটি হল? দেবদাস 'হাঁ' বলিয়া অন্যমনস্কের ন্যায় চলিয়া গেল। পিতার প্রশ্নেও সে এমনি কি-একটা জবাব দিয়া পাশ কাটাইয়া সরিয়া গেল। তিনি ভাল বুঝিতে না পারিয়া গৃহিণীকে প্রশ্ন করিলেন। তিনি বুদ্ধি খাটাইয়া কহিলেন, গরম এখনো কমেনি বলে আবার ছুটি হয়েচে।

দিন-দুই দেবদাস ছটফট করিয়া বেড়াইল। কেননা, যাহা কামনা তাহা হইতেছে না—পার্বতীর সহিত নির্জনে মোটেই সাক্ষাৎ হইল না। দিন-দুই পরে পার্বতীর জননী দেবদাসকে সুমুখে পাইয়া বলিলেন, যদি এসেচিস বাছা, ত পারুর বিয়ে পর্যন্ত থেকে যা । দেবদাস কহিল, আচ্ছা ।

দুপুরবেলা আহারাদি শেষ হইবার পর পার্বতী নিত্য বাঁধে জল আনিতে যাইত। কক্ষে পিত্তল-কলসী লইয়া আজিও সে ঘাটের উপর আসিয়া দাঁড়াইল; দেখিতে পাইল, অদূরে একটা কুলগাছের আড়ালে দেবদাস জলে ছিপ ফেলিয়া বসিয়া আছে। একবার তাহার মনে হইল, ফিরিয়া যায়; একবার মনে হইল,

নিঃশব্দে জল লইয়া প্রস্থান করে; কিন্তু তাড়াতাড়ি কোন কাজটাই সে করিতে পারিল না। কলসীটা ঘাটের উপর রাখিতে গিয়া বোধ হয় একটু শব্দ হওয়ায় দেবদাস চাহিয়া দেখিল। তাহার পর হাত নাড়িয়া ডাকিয়া কহিল, পারু, শুনে যাও।

পার্বতী ধীরে ধীরে কাছে গিয়া দাঁড়াইল। দেবদাস একটিবার মাত্র মুখ তুলিল, তাহার পর বহুক্ষণ ধরিয়া শূন্যদৃষ্টিতে জলের পানে চাহিয়া রহিল । পার্বতী কহিল, দেবদা, আমাকে কিছু বলবে?

দেবদাস কোনদিকে না চাহিয়া কহিল, হুঁ, বোসো। পার্বতী বসিল না, আনতমুখে দাঁড়াইয়া রহিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর্যন্ত যখন কোন কথাই হইল না, তখন পার্বতী এক-পা এক-পা করিয়া ধীরে ধীরে ঘাটের দিকে ফিরিয়া চলিতে লাগিল। দেবদাস একবার মুখ তুলিয়া চাহিল; তাহার পর পুনরায় জলের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া কহিল, শোন । পার্বতী ফিরিয়া আসিল; কিন্তু তথাপি দেবদাস আর কোন কথা কহিতে পারিল না দেখিয়া সে আবার ফিরিয়া গেল। দেবদাস নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । অল্পক্ষণ পরে সে ফিরিয়া দেখিল; পার্বতী জল লইয়া প্রস্থানের উদ্যোগ করিতেছে। তখন সে ছিপ গুটাইয়া ঘাটের নিকট আসিয়া দাঁড়াইল; কহিল, আমি এসেচি ।

পার্বতী ঘড়াটা শুধু নামাইয়া রাখিল, কথা কহিল না। আমি এসেচি, পারু!

পার্বতী কিছুক্ষণ কথা না কহিয়া, শেষে অতি মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, কেন?

তুমি আসতে লিখেছিলে, মনে নেই?

না ।

সে কি পারু! সে-রাত্রের কথা মনে পড়ে না?

তা পড়ে। কিন্তু সে-কথায় আর কাজ কি?

তাহার কণ্ঠস্বর স্থির, কিন্তু অতি রুক্ষ। কিন্তু দেবদাস তাহার মর্ম বুঝিল না; কহিল, আমাকে মাপ কর, পারু। আমি তখন অত বুঝিনি ।

চুপ কর। ও-সব কথা আমার শুনতেও ভাল লাগে না ।

আমি যেমন করিয়া পারি, মা-বাপের মত করিব। শুধু তুমি—

পার্বতী দেবদাসের মুখপানে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, তোমার মা-বাপ আছেন, আমার নেই? তাঁদের মতামতের প্রয়োজন নেই?

দেবদাস লজ্জিত হইয়া কহিল, তা আছে বৈ কি পারু, কিন্তু তাঁদের ত অমত নেই,—তুমি শুধু—

কি করে জানলে তাঁদের অমত নেই? সম্পূর্ণ অমত ।

দেবদাস হাসিবার ব্যর্থ প্রয়াস করিয়া কহিল না গো, তাঁদের একটুকুও অমত নেই—সে আমি বেশ জানি। শুধু তুমি— পার্বতী কথার মাঝখানেই তীব্রকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, শুধু আমি! তোমার সঙ্গে? ছিঃ—

চক্ষের পলকে দেবদাসের দুই চক্ষু আগুনের মত জ্বলিয়া উঠিল । কঠিনকণ্ঠে কহিল, পার্বতী! আমাকে কি ভুলে গেলে?

প্রথমটা পার্বতী থতমত খাইল; কিন্তু পরক্ষণেই আত্মসংবরণ করিয়া লইয়া শান্ত কঠিনস্বরে জবাব দিল, না, ভুলব কেন? ছেলেবেলা থেকে তোমাকে দেখে আসচি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত ভয় করে আসচি—তুমি কি তাই আমাকে ভয় দেখাতে এসেচ? কিন্তু আমাকেই কি তুমি চেন না? বলিয়া সে নির্ভীক দুই চক্ষু তুলিয়া দাঁড়াইল।

প্রথমে দেবদাসের বাক্য-নিঃসরণ হইল না; পরে কহিল, চিরকাল ভয় করেই আমাকে এসেচ, – আর কিছু না? পার্বতী দৃঢ়স্বরে বলিল, না, আর কিছুই না।

সত্যি বলচ?

হাঁ, সত্যিই বলচি। তোমাতে কিছুমাত্র আমার আস্থা নেই। আমি যাঁর কাছে যাচ্ছি, তিনি ধনবান্ বুদ্ধিমান্ — শান্ত এবং স্থির। তিনি ধার্মিক। আমার মা-বাপ আমার মঙ্গল কামনা করেন; তাই তাঁরা তোমার মত একজন অজ্ঞান, চঞ্চলচিত্ত, দুর্দান্ত লোকের হাতে আমাকে কিছুতেই দেবেন না। তুমি পথ ছেড়ে দাও । একবার দেবদাস একটুখানি ইতস্ততঃ করিল, একবার যেন একটু পথ ছাড়িতেও উদ্যত হইল, কিন্তু পরক্ষণেই দৃঢ়পদে মুখ তুলিয়া কহিল—এত অহঙ্কার! পার্বতী বলিল, নয় কেন? তুমি পার, আমি পারিনে? তোমার রূপ আছে, গুণ নেই—আমার রূপ আছে, গুণও আছে। তোমরা বড়লোক, কিন্তু আমার বাবাও

ভিক্ষে করে বেড়ান না। তা ছাড়া, দুদিন পরে আমি নিজেও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে হীন থাকবো না, সে তুমি জানো? দেবদাস অবাক হইয়া গেল । পার্বতী পুনরায় কহিয়া উঠিল— তুমি ভাবচ যে, আমার অনেক ক্ষতি করবে। অনেক না হোক, কিছু ক্ষতি করতে পার বটে, সে আমি জানি। বেশ, তাই

করো । আমাকে শুধু পথ ছেড়ে দাও।

দেবদাস হতবুদ্ধি হইয়া কহিল, ক্ষতি কেমন করে করবো? পার্বতী তৎক্ষণাৎ বলিয়া দিল— অপবাদ দিয়ে। তাই দাও গে যাও।

কথা শুনিয়া দেবদাস বজ্রাহতের মত চাহিয়া রহিল। তাহার মুখ দিয়া শুধু বাহির হইল— অপবাদ দেব আমি!

পার্বতী বিষের মত একটুখানি ক্রূর হাসি হাসিয়া বলিল, যাও, শেষ সময়ে আমার নামে একটা কলঙ্ক রটিয়ে দাও গে; সে রাত্রে তোমার কাছে একাকী গিয়েছিলাম, এই কথা চারিদিকে রাষ্ট্র করে দাও গে। মনের মধ্যে অনেকখানি সান্ত্বনা পেতে পারবে। বলিয়া পার্বতীর দর্পিত ক্রুদ্ধ ওষ্ঠাধর কাঁপিয়া কাঁপিয়া থামিয়া গেল ।

কিন্তু দেবদাসের বুকের ভিতরটায় রাগে অপমানে অগ্ন্যুৎপাতের ন্যায় ভীষণ হইয়া উঠিল। সে অব্যক্তস্বরে কহিল, মিথ্যে দুর্নাম রটিয়ে মনের মধ্যে সান্ত্বনা পাব আমি? এবং পরক্ষণেই সে ছিপের মোটা বাঁটটা সজোরে ঘুরাইয়া ধরিয়া ভীষণকণ্ঠে কহিল, শোন পার্বতী, অতটা রূপ থাকা ভাল নয়। অহঙ্কার বড় বেড়ে যায়। বলিয়া গলাটা একটু খাটো করিয়া কহিল, দেখতে পাও না, চাঁদের অত রূপ বলেই তাতে কলঙ্কের কালো দাগ; পদ্ম অত সাদা বলেই তাতে কালো ভ্রমর

বসে থাকে। এস, তোমারও মুখে কিছু কলঙ্কের ছাপ দিয়ে দিই।

দেবদাসের সহ্যের সীমা অতিক্রম করিয়াছিল। সে দৃঢ়মুষ্টিতে ছিপের বাঁট ঘুরাইয়া লইয়া সজোরে পার্বতীর মাথায় আঘাত করিল; সঙ্গে সঙ্গেই কপালের উপর বাম ক্রূর নীচে পর্যন্ত চিরিয়া গেল। চক্ষের নিমিষে সমস্ত মুখ রক্তে ভাসিয়া গেল ।

পার্বতী মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া বলিল, দেবদা, করলে কি!

দেবদাস ছিপটা টুকরা টুকরা করিয়া ভাঙ্গিয়া জলে ভাসাইয়া দিতে দিতে স্থিরভাবে উত্তর দিল, বেশী কিছু নয়, সামান্য খানিকটা কেটে গেছে মাত্র।

পার্বতী আকুলকণ্ঠে কাঁদিয়া উঠিল – ও গো, দেবদা!

দেবদাস নিজের পাতলা জামার খানিকটা ছিঁড়িয়া লইয়া, জলে ভিজাইয়া পার্বতীর কপালের উপর বাঁধিতে বাঁধিতে কহিল, ভয় কি পারু! এ আঘাত শীঘ্র সেরে যাবে—শুধু দাগ থাকবে। যদি কেউ কখনো এ কথা জিজ্ঞাসা করে, মিথ্যা কথা বলো; নাহয়, সত্য বলে নিজের কলঙ্ক নিজেই প্রকাশ করো।

ও গো, মা গো!—

ছিঃ অমন করে না পারু। শেষ-বিদায়ের দিনে শুধু একটুখানি মনে রাখবার মত চিহ্ন রেখে গেলাম। অমন সোনার মুখ আরশিতে মাঝে মাঝে দেখবে ত? বলিয়া উত্তরের জন্য অপেক্ষামাত্র না করিয়া চলিতে উদ্যত হইল।

পার্বতী আকুল হইয়া কাঁদিয়া উঠিয়া বলিল, দেবদাদা গো— দেবদাস ফিরিয়া আসিল। চোখের কোণে একফোঁটা জল ।

বড় স্নেহজড়িতকণ্ঠে কহিল, কেন রে পারু?

কাউকে যেন বলো না ।

দেবদাস নিমেষে ঝুঁকিয়া দাড়াইয়া পার্বতীর চুলের উপর ওষ্ঠাধর স্পর্শ করিয়া বলিল, ছিঃ— তুই কি আমার পর পারু? তোর মনে নেই, দুষ্টামি করলে ছেলেবেলায় কত তোর কান মলে দিয়েচি।

দেবদাদা—মাপ কর আমাকে।

তা তোকে বলতে হবে না ভাই। সত্যিই কি পারু, আমাকে একেবারে ভুলে গেছিস? কবে তোর ওপর রাগ করেছিলাম? কবে মাপ করিনি? দেবদাদা-

পার্বতী, তুমি ত জানো আমি বেশী কথা বলতে পারিনে; বেশী ভেবেচিন্তে কাজ করতেও পারিনে। যখন যা মনে হয় করি। বলিয়া দেবদাস পার্বতীর মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া বলিল, তুমি ভালই করেছ। আমার কাছে তুমি ত সুখ পেতে না; কিন্তু তোমার এই দেবদাদার অক্ষয় স্বর্গবাস ঘটত। এই সময় বাঁধের অন্যদিকে কাহারা আসিতেছিল। পার্বতী ধীরে ধীরে জলে আসিয়া নামিল। দেবদাস চলিয়া গেল। পার্বতী যখন বাটী ফিরিয়া আসিল, তখন বেলা পড়িয়া গিয়াছে । ঠাকুমা না দেখিয়াই কহিতেছিলেন, পারু, পুকুর খুঁড়ে কি জল আনচিস দিদি!

কিন্তু তাঁর মুখের কথা মুখেই রহিয়া গেল। পার্বতীর মুখপানে চাহিবামাত্রই চীৎকার করিয়া উঠিলেন, ও মা গো! এ সর্বনাশ কেমন করে হল? ক্ষতস্থান দিয়া তখনও রক্তস্রাব হইতেছিল; বস্ত্রখণ্ড প্রায় সমস্তটাই রক্তে রাঙ্গা। কাঁদিয়া কহিলেন, ওগো মা গো! তোর যে বিয়ে পারু! পার্বতী স্থিরভাবে কলসী নামাইয়া রাখিল। মা আসিয়া কাঁদিয়া প্রশ্ন করিলেন, এ সর্বনাশ কি করে হলো, পারু পারু সহজভাবে বলিল, ঘাটে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলুম। ইঁটে মাথা লেগে কেটে গেছে। তাহার পর সকলে মিলিয়া শুশ্রূষা করিতে লাগিল। দেবদাস সত্য কথাই কহিয়াছিল— আঘাত বেশী নয়। চার-পাঁচ দিনেই শুকাইয়া উঠিল। আরো আট-দশ দিন অমনি গেল। তাহার পর একদিন রাত্রে হাতীপোতা গ্রামের জমিদার শ্রীযুক্ত ভুবনমোহন চৌধুরী বর সাজিয়া বিবাহ করিতে আসিলেন। উৎসবে ঘটাপটা তেমন হইল না । ভুবনবাবু নির্বোধ লোক ছিলেন না, – প্রৌঢ় বয়সে আবার বিবাহ করিতে আসিয়া ছোকরা সাজাটা ভাল বোধ করেন নাই । -

বরের বয়স চল্লিশের নীচে নহে, – কিছু উপর; গৌরবর্ণ, মোটাসোটা নন্দদুলাল ধরনের শরীর। কাঁচাপাকা গোঁফ, মাথার সামনে একটু টাক। বর দেখিয়া কেহ হাসিল, কেহ চুপ করিয়া রহিল। ভুবনবাবু শান্ত-গম্ভীরমুখে কতকটা যেন অপরাধীর মত, ছাদনাতলায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। কানমলা প্রভৃতি অত্যাচার উপদ্রব হইল না; কারণ, অতখানি বিজ্ঞ গম্ভীর লোকের কানে কাহারও হাত উঠিল না। শুভদৃষ্টির সময় পার্বতী কটমট করিয়া চাহিয়া রহিল। ওষ্ঠের কোণে একটু হাসির রেখা,—ভুবনবাবু ছেলেমানুষটির মত দৃষ্টি অবনত করিলেন। পাড়ার মেয়েরা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। চক্রবর্তী মহাশয় ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। প্রবীণ জামাতা লইয়া তিনি কিছু ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। জমিদার নারাণ মুখুয্যে আজ কন্যাকর্তা। পাকা লোক—কোন পক্ষে, কোনদিকেই ত্রুটি হইল না। শুভকর্ম সুশৃঙ্খলায় সমাধা হইয়া গেল ।

পরদিন প্রাতঃকালে চৌধুরীমহাশয় একবাক্স অলঙ্কার বাহির করিয়া দিলেন। পার্বতীর সর্বাঙ্গে সে-সকল ঝলমল করিয়া উঠিল। জননী তাহা দেখিয়া আঁচল দিয়া চোখের কোণ মুছিলেন। নিকটে জমিদার-গৃহিণী দাঁড়াইয়া ছিলেন,—তিনি সস্নেহে তিরস্কার করিয়া বলিলেন, আজ চোখের জল ফেলে অকল্যাণ করিস নে দিদি!

সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মনোরমা পার্বতীকে একটা নির্জন ঘরে টানিয়া লইয়া গিয়া আশীর্বাদ করিল—যা হল, ভালই হল। এখন থেকে দেখবি—কত সুখে থাকবি। পার্বতী অল্প হাসিয়া বলিল, তা থাকব। যমের সঙ্গে কাল একটুখানি পরিচয় হয়েছে কিনা!

ও কি কথা রে!

সময়ে সব দেখতে পাবি ।

মনোরমা তখন অন্য কথা পাড়িল; কহিল, একবার ইচ্ছে করে, দেবদাসকে ডেকে এনে এই সোনার প্রতিমা দেখাই!

পার্বতীর যেন চমক ভাঙ্গিল। পারিস দিদি? একবার ডেকে আনতে পারা যায় না?

কণ্ঠস্বরে মনোরমা শিহরিয়া উঠিল, – কেন পারু!

পার্বতী হাতের বালা ঘুরাইতে ঘুরাইতে অন্যমনস্কভাবে কহিল, একবার পায়ের ধূলা মাথায় নেব- আজ যাব কিনা! মনোরমা পার্বতীকে বুকের ভিতর টানিয়া লইয়া, দুজনে বড় কান্না কাঁদিল। সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে, ঘর অন্ধকার – পিতামহী দ্বার ঠেলিয়া বাহির হইতে

কহিলেন, ও পারু, ও মনো, তোরা বাইরে আয় দিদি! সেই রাত্রিতেই পার্বতী স্বামীর ঘরে চলিয়া গেল ।

তাহার পর সকলে মিলিয়া শুশ্রূষা করিতে লাগিল। দেবদাস সত্য কথাই কহিয়াছিল— আঘাত বেশী নয়। চার-পাঁচ দিনেই শুকাইয়া উঠিল। আরো আট-দশ দিন অমনি গেল। তাহার পর একদিন রাত্রে হাতীপোতা গ্রামের জমিদার শ্রীযুক্ত ভুবনমোহন চৌধুরী বর সাজিয়া বিবাহ করিতে আসিলেন। উৎসবে ঘটাপটা তেমন হইল না । ভুবনবাবু নির্বোধ লোক ছিলেন না, – প্রৌঢ় বয়সে আবার বিবাহ করিতে আসিয়া ছোকরা সাজাটা ভাল বোধ করেন নাই । -

বরের বয়স চল্লিশের নীচে নহে, – কিছু উপর; গৌরবর্ণ, মোটাসোটা নন্দদুলাল ধরনের শরীর। কাঁচাপাকা গোঁফ, মাথার সামনে একটু টাক। বর দেখিয়া কেহ হাসিল, কেহ চুপ করিয়া রহিল। ভুবনবাবু শান্ত-গম্ভীরমুখে কতকটা যেন অপরাধীর মত, ছাদনাতলায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। কানমলা প্রভৃতি অত্যাচার উপদ্রব হইল না; কারণ, অতখানি বিজ্ঞ গম্ভীর লোকের কানে কাহারও হাত উঠিল না। শুভদৃষ্টির সময় পার্বতী কটমট করিয়া চাহিয়া রহিল। ওষ্ঠের কোণে একটু হাসির রেখা,—ভুবনবাবু ছেলেমানুষটির মত দৃষ্টি অবনত করিলেন। পাড়ার মেয়েরা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। চক্রবর্তী মহাশয় ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। প্রবীণ জামাতা লইয়া তিনি কিছু ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। জমিদার নারাণ মুখুয্যে আজ কন্যাকর্তা। পাকা লোক—কোন পক্ষে, কোনদিকেই ত্রুটি হইল না। শুভকর্ম সুশৃঙ্খলায় সমাধা হইয়া গেল ।

পরদিন প্রাতঃকালে চৌধুরীমহাশয় একবাক্স অলঙ্কার বাহির করিয়া দিলেন। পার্বতীর সর্বাঙ্গে সে-সকল ঝলমল করিয়া উঠিল। জননী তাহা দেখিয়া আঁচল দিয়া চোখের কোণ মুছিলেন। নিকটে জমিদার-গৃহিণী দাঁড়াইয়া ছিলেন,—তিনি সস্নেহে তিরস্কার করিয়া বলিলেন, আজ চোখের জল ফেলে অকল্যাণ করিস নে দিদি!

সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মনোরমা পার্বতীকে একটা নির্জন ঘরে টানিয়া লইয়া গিয়া আশীর্বাদ করিল—যা হল, ভালই হল। এখন থেকে দেখবি—কত সুখে থাকবি। পার্বতী অল্প হাসিয়া বলিল, তা থাকব। যমের সঙ্গে কাল একটুখানি পরিচয় হয়েছে কিনা!

ও কি কথা রে!

সময়ে সব দেখতে পাবি ।

মনোরমা তখন অন্য কথা পাড়িল; কহিল, একবার ইচ্ছে করে, দেবদাসকে ডেকে এনে এই সোনার প্রতিমা দেখাই!

পার্বতীর যেন চমক ভাঙ্গিল। পারিস দিদি? একবার ডেকে আনতে পারা যায় না?

কণ্ঠস্বরে মনোরমা শিহরিয়া উঠিল, – কেন পারু!

পার্বতী হাতের বালা ঘুরাইতে ঘুরাইতে অন্যমনস্কভাবে কহিল, একবার পায়ের ধূলা মাথায় নেব- আজ যাব কিনা! মনোরমা পার্বতীকে বুকের ভিতর টানিয়া লইয়া, দুজনে বড় কান্না কাঁদিল। সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে, ঘর অন্ধকার – পিতামহী দ্বার ঠেলিয়া বাহির হইতে

কহিলেন, ও পারু, ও মনো, তোরা বাইরে আয় দিদি! সেই রাত্রিতেই পার্বতী স্বামীর ঘরে চলিয়া গেল ।

                                                                                    নবম পরিচ্ছেদ

আর দেবদাস? সে রাত্রিটা সে কলিকাতা ইডেন গার্ডেনের একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া কাটাইয়া দিল। তাহার খুব যে ক্লেশ হইতেছিল, যাতনায় মর্মভেদ হইতেছিল, তাহা নয়। কেমন একটা শিথিল ঔদাস্য ধীরে ধীরে বুকের মধ্যে জমা হইয়া উঠিতেছিল। নিদ্রার মধ্যে শরীরের কোন একটা অঙ্গে হঠাৎ পক্ষাঘাত হইলে, ঘুম ভাঙ্গিয়া সেটার উপর যেমন কোন অধিকার খুঁজিয়া পাওয়া যায় না, এবং বিস্মিত স্তম্ভিত মন মুহূর্ত ঠাওরাইতে পারে না, কেন তাহার আজন্ম-সঙ্গী চিরদিনের বিশ্বস্ত অঙ্গটা তাহার আহ্বানে সাড়া দিতেছে না; তাহার পর ধীরে ধীরে বুঝিতে পারা যায়, ধীরে ধীরে জ্ঞান জন্মে যে, এটা আর তাহার নিজের নাই; দেবদাস এমনি ধীরে ধীরে সমস্ত রাত্রি ধরিয়া বুঝিতেছিল যে, সময়ে সংসারটার অকস্মাৎ পক্ষাঘাত হইয়া, তাহার সহিত চিরদিনের জন্য বিচ্ছেদ হইয়া গিয়াছে। এখন তাহার উপর মিথ্যা রাগ-অভিমান আর কিছুই খাটিবে না। সাবেক অধিকারের কথাটা ভাবিতে যাওয়াই ভুল হইবে। তখন সূর্যোদয় হইতেছিল। দেবদাস উঠিয়া দাঁড়াইয়া ভাবিল, কোথায় যাই। হঠাৎ স্মরণ হইল তাহার কলিকাতার বাসাটা। সেখানে চুনিলাল আছে। দেবদাস চলিতে লাগিল। পথে বার-দুই ধাক্কা খাইল, হোঁচট খাইয়া অঙ্গুলি রক্তাক্ত করিল— টাল খাইয়া একজনের গায়ের উপর পড়িতেছিল, – সে মাতাল বলিয়া ঠেলিয়া দিল। এমনি করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া দিনশেষে মেসের দরজায় আসিয়া দাঁড়াইল। চুনিবাবু তখন বেশবিন্যাস করিয়া বাহির হইতেছিলেন। এ কি, দেবদাস যে ! দেবদাস নীরবে চাহিয়া রহিল। কখন এলে হে? মুখ শুকনো, স্নানাহার হয়নি—ও কি—কি! দেবদাস পথের উপরেই বসিয়া পড়িতেছিল, চুনিলাল হাত ধরিয়া ভিতরে লইয়া গেল। নিজের

শয্যার উপর বসাইয়া, শান্ত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ব্যাপার কি দেবদাস ?

কাল বাড়ি থেকে এসেচি।

কাল? সমস্তদিন তবে ছিলে কোথায়? রাত্রেই বা কোথায় ছিলে?

ইডেন গার্ডেনে । পাগল নাকি! কি হয়েছে, বল দেখি?

শুনে কি হবে?

না বল, এখন খাওয়া-দাওয়া করো। তোমার জিনিসপত্র কোথায় ?

কিছুই আনিনি ।

তা হোক, এখন খেতে বোস ।

তখন জোর করিয়া চুনিলাল কিছু আহার করাইয়া,শয্যায় শুইতে আদেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিতে করিতে কহিল, একটু ঘুমোবার চেষ্টা কর, আমি রাত্রে এসে তোমাকে তুলব। বলিয়া সে তখনকার মত চলিয়া গেল। রাত্রি দশটার মধ্যে সে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, দেবদাস তাহার বিছানায় গভীর নিদ্রায় সুপ্ত। না ডাকিয়া, সে নিজে একখানা কম্বল টানিয়া লইয়া, নীচে মাদুর পাতিয়া শুইয়া পড়িল। সারা রাত্রির মধ্যে দেবদাসের ঘুম ভাঙ্গিল না, প্রভাতেও না। বেলা দশটার

সময় সে উঠিয়া বসিয়া কহিল, চুনিবাবু, কখন এলে হে?

এইমাত্র আসচি।

তবে তোমার কোনরকম অসুবিধা হয়নি!

কিছু না ।

দেবদাস কিছুক্ষণ তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, চুনিবাবু, আমার যে কিছু নেই, তুমি আমাকে প্রতিপালন করবে? চুনিলাল হাসিল। সে জানিত, দেবদাসের পিতা মহা ধনবান ব্যক্তি। তাই হাসিয়া কহিল, আমি প্রতিপালন করব! বেশ কথা। তোমার যতদিন ইচ্ছা থাক,

কোন ভাবনা নেই।

চুনিবাবু, তোমার আয় কত?

ভাই, আমার আয় সামান্য। বাটীতে কিছু বিষয়-সম্পত্তি আছে, তা দাদার কাছে গচ্ছিত রেখে এখানে বাস করি। তিনি প্রতিমাসে সত্তর টাকা হিসাবে পাঠিয়ে দেন। এতে তোমার আমার স্বচ্ছন্দে চলে যাবে।

তুমি বাড়ি যাও না কেন?

চুনিলাল ঈষৎ মুখ ফিরাইয়া কহিল, সে অনেক কথা । দেবদাস আর কিছু জিজ্ঞাসা করিল না। ক্রমে আহারাদির জন্য ডাক পড়িল । তাহার পর দুইজনে স্নানাহার শেষ করিয়া পুনরায় ঘরে আসিয়া বসিলে চুনিলাল বলিল, দেবদাস, বাপের সঙ্গে ঝগড়া করেচ?

না ।

আর কারো সঙ্গে?

দেবদাস তেমনি জবাব দিল, না।

তাহার পর চুনিলালের হঠাৎ অন্য কথা স্মরণ হইল। কহিল, ওহো, তোমার এখনো বিয়েই হয়নি যে

এই সময় দেবদাস অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া শুইয়া পড়িল । অল্পক্ষণেই চুনিলাল দেখিল, দেবদাস ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এমনি করিয়া ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া আরও দুইদিন অতীত হইল। তৃতীয় দিবসের প্রাতঃকালে দেবদাস সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিল। মুখ হইতে সেই ঘন ছায়া যেন অনেকটা সরিয়া গিয়াছে বোধ হইল।

চুনিলাল জিজ্ঞাসা করিল, আজ শরীর কেমন?

বোধ হয় অনেকটা ভাল । আচ্ছা চুনিবাবু, রাত্রে তুমি কোথায় যাও?

আজ চুনিলাল লজ্জিত হইল; বলিল, হাঁ, তা যাই বটে, কিন্তু সে কথা কেন?

আচ্ছা,—আর তুমি কেন কলেজে যাও না?

না—লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েচি।

ছিঃ, তা কি হয়? মাস-দুই পরে তোমার পরীক্ষা। পড়াও তোমার মন্দ হয়নি, এবার কেন পরীক্ষা দাও না! না—পড়া ছেড়ে দিয়েচি।

চুনিলাল চুপ করিয়া রহিল। দেবদাস পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় যাও—বলবে না? তোমার সঙ্গে আমিও যাবো।

চুনিলাল দেবদাসের মুখপানে চাহিয়া বলিল, কি জান দেবদাস, আমি খুব ভাল জায়গায় যাইনে। দেবদাস যেন আপনার মনে কহিল, ভাল আর মন্দ! ছাই কথা! – চুনিবাবু, আমাকে সঙ্গে নেবে না? তা নিতে পারি। কিন্তু তুমি যেয়ো না । না, আমি যাবই। যদি ভাল না লাগে, আর না হয় যাব না। কিন্তু তুমি যে সুখের আশায় প্রত্যহ উন্মুখ হয়ে থাকো—যাই হোক চুনিবাবু, আমি নিশ্চয়ই

চুনিলাল মুখ ফিরাইয়া একটু হাসিল; মনে মনে বলিল, আমার দশা! মুখে বলিল, আচ্ছা তাই যেয়ো। অপরাহ্ণেবেলায় ধর্মদাস জিনিসপত্র লইয়া উপস্থিত হইল । দেবদাসকে দেখিয়া কাঁদিয়া ফেলিল। দেবতা? আজ তিন-চারদিন ধরে মা কত যে কাঁদচেন-

কেন রে?

যাবো। চন্দ্রমুখী কহিল, সত্যিই একটু মায়া পড়েচে ।

কিছু না বলে হঠাৎ চলে এলে কেন? একখানা পত্র বাহির করিয়া হাতে দিয়া কহিল, মার চিঠি । চুনি চন্দ্ৰমুখীকে কতকটা চিনিতে পারিয়াছিল । ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না না, নোট-ফোটের লোক আলাদা — সে তুমি নও। কিন্তু সত্যি কথাটা বল ত?

চুনি বিশ্বাস করিল না; হাসিয়া কহিল, এই পাঁচ মিনিটের মধ্যে?

এবার চন্দ্রমুখীও হাসিতে লাগিল । বলিল, তা হোক। মন ভালো হলে আর একদিন এনো— আর একবার দেখব। আনবে ত? কি জানি!

আমার মাথার দিব্যি রইল ।

আচ্ছা—দেখব।


                              দশম পরিচ্ছেদ


পার্বতী আসিয়া দেখিল, তাহার স্বামীর মস্ত বাড়ি। নূতন সাহেবী ফ্যাশনের নহে, পুরাতন সেকেলে ধরনের। সদর মহল, অন্দর মহল, পূজার দালান, নাটমন্দির, অতিথিশালা, কাছারি-বাড়ি, তোশাখানা, কত দাসদাসী – পার্বতী অবাক হইয়া গেল। সে শুনিয়াছিল, তাহার স্বামী বড়লোক, জমিদার। কিন্তু এতটা ভাবে নাই । -

অভাব শুধু লোকের। আত্মীয়, কুটুম্ব-কুটুম্বিনী কেহই প্রায় নাই। অতবড় অন্দর মহল জনশূন্য। পার্বতী বিয়ের কনে, একেবারে গৃহিণী হইয়া বসিল । বরণ করিয়া ঘরে ভুলিবার জন্য একজন বৃদ্ধা পিসী ছিলেন। ইনি ভিন্ন কেবল দাসদাসীর দল।

সন্ধ্যার পূর্বে একজন সুশ্রী সুন্দর বিংশবর্ষীয় যুবাপুরুষ প্রণাম করিয়া অদূরে দাঁড়াইয়া কহিল, মা, আমি তোমার বড়ছেলে । পার্বতী অবগুণ্ঠনের মধ্য দিয়া ঈষৎ চাহিয়া দেখিল, কথা কহিল না। সে আর একবার প্রণাম করিয়া কহিল, মা, আমি তোমার বড়ছেলে – প্রণাম করি ।

পার্বতী দীর্ঘ অবগুণ্ঠন কপালের উপর পর্যন্ত তুলিয়া দিয়া এবার কথা কহিল । মৃদুকণ্ঠে বলিল, এস বাবা, এস। ছেলেটির নাম মহেন্দ্র। সে কিছুক্ষণ পার্বতীর মুখপানে অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল; তৎপর অদূরে বসিয়া পড়িয়া বিনীতস্বরে বলিতে লাগিল, আজ দুবছর হল আমরা মা হারিয়েচি। এই দুবছর আমাদের দুঃখে-কষ্টেই দিন কেটেচে। আজ তুমি এলে, – আশীর্বাদ কর মা, এবার যেন সুখে থাকতে পাই ।

পার্বতী বেশ সহজ গলায় কথা কহিল। কেননা, একেবারে গৃহিণী হইতে হইলে অনেক কথা জানিবার এবং বলিবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ কাহিনী অনেকের কাছেই হয়ত একটু অস্বভাবিক শুনাইবে। তবে যিনি পার্বতীকে আরও একটু ভাল করিয়া বুঝিয়াছেন তিনি দেখিতে পাইবেন, অবস্থার এই নানারূপ পরিবর্তনে পার্বতীকে তাহার বয়সের অপেক্ষা অনেকখানি পরিপক্ক করিয়া দিয়াছিল। তা ছাড়া নিরর্থক লজ্জা-শরম, অহেতুক জড়তা সঙ্কোচ তাহার কোনদিনই ছিল না।

সে জিজ্ঞাসা করিল, আমার আর সব ছেলেমেয়েরা কোথায় বাবা? মহেন্দ্র একটু হাসিয়া বলিল, বলচি। তোমার বড় মেয়ে, আমার ছোটবোন তার শ্বশুরবাড়িতেই আছে। আমি চিঠি লিখেছিলুম, কিন্তু যশোদা কিছুতেই আসতে পারলে না ।

পার্বতী দুঃখিত হইল; জিজ্ঞাসা করিল, আসতে পারলে না, না ইচ্ছা করে এলো না?

মহেন্দ্ৰ লজ্জা পাইয়া কহিল, ঠিক জানিনে মা।

কিন্তু তাহার কথার ও মুখের ভাবে পার্বতী বুঝিল, যশোদা রাগ করিয়াই আইসে নাই; কহিল, আর আমার ছোটছেলে?

মহেন্দ্র কহিল, সে শিগগির আসবে। কলকাতায় আছে, পরীক্ষা দিয়েই আসবে।

ভুবন চৌধুরী নিজেই জমিদারির কাজকর্ম দেখিতেন। তা ছাড়া, স্বহস্তে নিত্য শালগ্রাম শিলার পূজা করা, ব্রত-নিয়ম-উপবাস, ঠাকুরবাড়ি ও অতিথিশালায় সাধু-সন্ন্যাসীর পরিচর্যা—এই সব কাজে তাঁহার সকাল হইতে রাত্রি দশটা এগারটা পর্যন্ত কাটিয়া যাইত । নূতন বিবাহ করিয়া কোনপ্রকার নূতন আমোদ-আহ্লাদ তাঁহাতে প্ৰকাশ পাইল না। রাত্রে কোনদিন ভিতরে আসিতেন, কোনদিন বা আসিতে পারিতেন না। আসিলেও অতি সামান্যই কথাবার্তা হইত—শয্যায় শুইয়া পাশবালিশটা টানিয়া লইয়া, চোখ বুজিয়া বড়জোর বলিতেন, তা তুমিই হলে বাড়ির গৃহিণী, সব দেখেশুনে, বুঝেপড়ে নিজেই নিয়ো পার্বতী মাথা নাড়িয়া বলিত, আচ্ছা।

ভুবন বলিতেন, আর দেখ, তা এই ছেলেমেয়েরা, হাঁ, তা এরা তোমারই ত সব—

স্বামীর লজ্জা দেখিয়া পার্বতীর চোখের কোণে হাসি ফুটিয়া বাহির হইত। তিনি আবার একটু হাসিয়া কহিতেন, হাঁ, আর এই দেখ, এই মহেন তোমার বড়ছেলে, সেদিন বি এ পাস করেছে, – এমন ভাল ছেলে, এমন দয়ামায়া — কি জান, একটু যত্ন-আত্মীয়তা—

পার্বতী হাসি চাপিয়া বলিত, আমি জানি, সে আমার বড়ছেলে—

তা জানবে বৈ কি! এমন ছেলে কেউ কখনও দেখেনি। আর আমার যশোমতী, মেয়ে ত নয়—প্রতিমা। তা আসবে বৈ কি! আসবে বৈ কি! বুড়ো বাপকে দেখতে আসবে না! তা সে এলে তাকে—

পার্বতী নিকটে আসিয়া টাকের উপর মৃণালহস্ত রাখিয়া মৃদুস্বরে বলিত, তোমাকে ভাবতে হবে না। যশোকে আনবার জন্য আমি লোক পাঠাব— নাহয় মহেন নিজেই যাবে ।

যাবে! যাবে! আহা, অনেকদিন দেখিনি—তুমি লোক পাঠাবে?

পাঠাব বৈ কি। আমার মেয়ে, আমি আনতে পাঠাব না ! বৃদ্ধ এই সময়ে উৎসাহে উঠিয়া বসিতেন। উভয়ের সম্বন্ধ ভুলিয়া পার্বতীর মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া কহিতেন— তোমার ভাল হবে। আমি আশীর্বাদ করচি—তুমি সুখী হবে—ভগবান তোমার দীর্ঘায়ু করবেন।

তাহার পর হঠাৎ কি সব কথা বৃদ্ধের যেন মনে পড়িয়া যাইত। পুনরায় শয্যায় শুইয়া পড়িয়া, চক্ষু মুদিয়া মনে মনে বলিতেন, বড়মেয়ে, ঐ এক মেয়ে,—সে

বড় ভালবাসত— এ সময়ে কাঁচা-পাকা গোঁফের পাশ দিয়া একফোঁটা চোখের জল বালিশে আসিয়া পড়িত। পার্বতী মুছাইয়া দিত। কখনো কখনো বা চুপি চুপি বলিতেন, আহা, তারা সবাই আসবে, আর একবার বাড়িঘরদোর জমজম করবে—আহা, আগে কি জমকালো সংসারই ছিল! ছেলেরা, মেয়ে, গিন্নী — হৈচৈ—নিত্য দুর্গোৎসব। তারপর একদিন সব নিবে গেল। ছেলেরা কলকাতায় চলে গেল, যশোকে তার শ্বশুর নিয়ে গেল। তারপর অন্ধকার শ্মশান—

এই সময় আবার গোঁফের দু'পাশ ভিজিয়া বালিশ ভিজিতে শুরু করিত। পার্বতী কাতর হইয়া মুছাইয়া দিয়া কহিত, মহেনের কেন বিয়ে দিলে না? বুড়ো বলিতেন, আহা, সে ত আমার সুখের দিন। তাইত ভেবেছিলাম কিন্তু কি যে ওর মনের কথা, কি যে ওর জিদ – কিছুতেই বিয়ে করল না। তাইত বুড়ো বয়সে—বাড়ি ঘর খাঁখাঁ করে, লক্ষ্মীছাড়া বাড়ির মতই সমস্তই মলিন, একটা জলুস কিছুতেই দেখতে পাইনে—তাইতেই—

কথা শুনিয়া পার্বতীর দুঃখ হইত। করুণসুরে, হাসির ভান করিয়া মাথা নাড়িয়া বলিত, তুমি বুড়ো হলে আমিও শিগগির বুড়ো হয়ে যাব। মেয়েমানুষের বুড়ো হতে কি বেশী দেরি হয় গা?

ভুবন চৌধুরী উঠিয়া বসিয়া একহাতে তাহার চিবুক ধরিয়া নিঃশব্দে বহুক্ষণ চাহিয়া থাকিতেন। কারিগর যেমন করিয়া প্রতিমা সাজাইয়া, মাথায় মুকুট পরাইয়া দক্ষিণে ও বামে হেলিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে থাকে, একটু গর্ব, আর অনেকখানি স্নেহ সেই সুন্দর মুখখানির আশেপাশে জমা হইয়া উঠে, ভুবনবাবুরও ঠিক তেমনি হয় ।

কোনদিন বা তাঁহার অস্ফুটে মুখ দিয়া বাহির হইয়া পড়ে, আহা, ভাল করনি—

কি ভালো করিনি গো?

ভাবছি—এখানে তোমাকে সাজে না—

পার্বতী হাসিয়া উঠিয়া বলিত, খুব সাজে! আমাদের আবার সাজাসাজি কি?

বৃদ্ধ আবার শুইয়া পড়িয়া যেন মনে মনে বলিতেন, তা বুঝি—তা বুঝি। তবে, তোমার ভাল হবে। ভগবান তোমাকে দেখবেন ।

এমনি করিয়া প্রায় একমাস অতীত হইয়া গেল। মধ্যে একবার চক্রবর্তী মহাশয় কন্যাকে লইতে আসিয়াছিলেন, – পার্বতী নিজেই ইচ্ছা করিয়া গেল না।

পিতাকে কহিল, বাবা, বড় অগোছাল সংসার, আর কিছুদিন পরে যাব।

তিনি অলক্ষ্যে মুখ টিপিয়া হাসিলেন। মনে মনে বলিলেন, মেয়েমানুষ এমনি জাতই বটে! তিনি বিদায় হইলে পার্বতী মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, বাবা, আমার বড়মেয়েকে একবার নিয়ে এস। মহেন্দ্র ইতস্ততঃ করিল । সে জানিত, যশোদা কিছুতেই আসিবে না । কহিল, বাবা একবার গেলে ভাল হয় । ছিঃ তা কি ভাল দেখায়! তার চেয়ে চল, আমরা মা-ব্যাটায় মেয়েকে নিয়ে আসি । মহেন্দ্র আশ্চর্য হইল—তুমি যাবে ?

ক্ষতি কি বাবা? আমার তাতে লজ্জা নাই; আমি গেলে যশোদা যদি আসে—যদি তার রাগ পড়ে, আমার যাওয়াটা কি এতই কঠিন! কাজেই মহেন্দ্র পরদিন একাকী যশোদাকে আনিতে গেল। সেখানে সে কি কৌশল করিয়াছিল জানি না, কিন্তু চারদিন পরে যশোদা আসিয়া উপস্থিত হইল। সেদিন পার্বতীর সর্বাঙ্গে বিচিত্র নূতন বহুমূল্য অলঙ্কার; এই সেদিন ভুবনবাবু কলিকাতা হইতে আনাইয়া দিয়াছিলেন— পার্বতী আজ তাহাই পরিয়া বসিয়াছিল। পথে আসিতে আসিতে যশোদা ক্রোধ-অভিমানের অনেক কথা মনে মনে আবৃত্তি করিতে করিতে আসিয়াছিল। নূতন বৌ দেখিয়া সে একেবারে অবাক হইয়া গেল। সে-সব বিদ্বেষের কথা তাহার মনেই পড়িল না। শুধু অস্ফুটেই কহিল, এই

পার্বতী যশোদার হাত ধরিয়া ঘরে লইয়া গেল। কাছে বসাইয়া হাতে পাখা লইয়া কহিল, মা, মেয়ের উপর নাকি রাগ করেছ? যশোদার মুখ লজ্জায় রাঙ্গা হইয়া গেল। পার্বতী তখন সে সমস্ত অলঙ্কার একটির পর একটি করিয়া যশোদার অঙ্গে পরাইতে লাগিল। বিস্মিতা যশোদা কহিল, এ কি?

কিছুই না। শুধু তোমার মেয়ের সাধ।

গহনা পরিতে যশোদার মন্দ লাগিল না এবং পরা শেষ হইলে তাহার ওষ্ঠাধরে হাসির আভাস দেখা দিল। সর্বাঙ্গে অলঙ্কার পরাইয়া নিরাভরণা পার্বতী কহিল,

মা, মেয়ের উপর রাগ করেচ?

না, না—রাগ কেন? রাগ কি? -

তা বৈ কি মা, এ তোমার বাপের বাড়ি, এতবড় বাড়ি, কত দাসদাসীর দরকার । আমি একজন দাসী বৈ ত নয়! ছি মা, তুচ্ছ দাসদাসীর ওপর কি তোমার রাগ

করা সাজে?

যশোদা বয়সে বড়, কিন্তু কথা কহিতে এখনো অনেক ছোট। সে প্রায় বিহ্বল হইয়া পড়িল। বাতাস করিতে করিতে পার্বতী আবার কহিল, – দুঃখীর মেয়ে, তোমাদের দয়ায় এখানে একটু স্থান পেয়েচি। কত দীন, দুঃখী, অনাথ তোমাদের দয়ায় এখানে নিত্য প্রতিপালিত হয়; আমি ত মা তাদেরই একজন। যে আশ্রিত—

যশোদা অভিভূত হইয়া শুনিতেছিল, এখন একেবারে আত্মবিস্মৃত হইয়া পায়ের কাছে ঢিপ করিয়া প্রণাম করিয়া বলিয়া উঠিল, তোমার পায়ে পড়ি মা- পার্বতী তাহার হাত ধরিয়া ফেলিল।

যশোদা কহিল, দোষ নিও না মা ।

পরদিন মহেন্দ্র যশোদাকে নিভৃতে ডাকিয়া কহিল, কি রে, রাগ থেমেছে?

যশোদা তাড়াতাড়ি দাদার পায়ে হাত দিয়া কহিল, দাদা, রাগের মাথায়—ছি ছি, কত কি বলেচি। দেখো যেন সে-সব প্রকাশ না পায় । মহেন্দ্ৰ হাসিতে লাগিল । যশোদা কহিল, আচ্ছা দাদা, স্যায়ে এত যত্ন-আদর করতে পারে?

দিন-দুই পরে যশোদা পিতার নিকট নিজে কহিল, বাবা, ওখানে চিঠি লিখে দাও— আমি এখন দু'মাস এখান থেকে যাব না । ভুবনবাবু একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, কেন মা?

যশোদা লজ্জিতভাবে মৃদু হাসিয়া কহিল, আমার শরীরটা তেমন ভাল নেই—এখন দিনকতক ছোটমা'র কাছে থাকি! আনন্দে বৃদ্ধের চক্ষু ফাটিয়া জল বাহির হইল। সন্ধ্যার সময় পার্বতীকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি আমাকে লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েচ। বেঁচে থাকো, সুখে

থাকো ।

পার্বতী কহিল, সে আবার কি?

কি তা তোমাকে বোঝাতে পারিনে। নারায়ণ! কত লজ্জা, কত আত্মগ্লানি থেকে আজ আমাকে নিষ্কৃতি দিলে। সন্ধ্যার আঁধারে পার্বতী দেখিল না যে তাহার স্বামীর দুই চক্ষু জলে ভরিয়া গিয়াছে। আর বিনোদলাল – সে ভুবনমোহনের কনিষ্ঠ পুত্র, পরীক্ষা দিয়া সে বাড়ি আসিয়া আর পড়িতেই গেল না ।


                            একাদশ পরিচ্ছেদ


তাহার পর দুই-তিনদিন দেবদাস মিছিমিছি পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইল — অনেকটা পাগলের মত। ধর্মদাস কি কহিতে গিয়াছিল, তাহাকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া ধমকাইয়া উঠিল। গতিক দেখিয়া চুনিলালও কথা কহিতে সাহস করিল না। ধর্মদাস কাঁদিয়া বলিল, চুনিবাবু, কেন এমন হল?

চুনিলাল বলিল, কি হয়েচে ধর্মদাস?

একজন অন্ধ আর-একজন অন্ধকে পথের কথা জিজ্ঞাসা করিল। ভিতরের খবর দু'জনের কেহই জানে না। চোখ মুছিতে মুছিতে ধর্মদাস বলিল, চুনিবাবু, যেমন করে হোক দেবতাকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিন। আর লেখাপড়া যদি করবে না, ত এখানে থেকে কি হবে?

কথাটা খুব সত্য। চুনিলাল চিন্তা করিতে লাগিল। চারি-পাঁচদিন পরে একদিন ঠিক তেমনি সন্ধ্যার সময় চুনিবাবু বাহির হইতেছিল— দেবদাস কোথা হইতে আসিয়া হাত ধরিল, চুনিবাবু, সেখানে যাচ্চ?

চুনিলাল কুণ্ঠিত হইয়া বলিতে গেল, হাঁ–না, বল ত আর যাইনে।

দেবদাস কহিল, না, যেতে বারণ করচি নে; কিন্তু একটি কথা বল, কি আশায় সেখানে তুমি যাও?

আশা আর কি? এমনি সময় কাটে ।কাটে? কৈ, আমার সময় ত কাটে না! আমি সময় কাটাতে চাই। চুনিলাল কিছুক্ষণ তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল, বোধ করি তাহার মনের ভাব মুখে পড়িতে চেষ্টা করিল। তাহার পর কহিল, দেবদাস, তোমার কি হয়েচে খুলে বলতে পারো?

কিছুই ত হয়নি।

বলবে না?

না চুনি, বলবার কিছুই নেই।

চুনিলাল বহুক্ষণ অধোমুখে থাকিয়া কহিল, দেবদাস, একটা কথা রাখবে?

সেখানে আর একবার তোমাকে যেতে হবে। আমি কথা দিয়েচি।

যেখানে সেদিন গিয়েছিলাম—সেইখানে ত?

ছিঃ—আমার ভাল লাগে না ।

যাতে ভাল লাগে, আমি করে দেব।

দেবদাস অন্যমনস্কের মত কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, আচ্ছা, চল যাই ।

অবনতির এক সোপান নীচে নামাইয়া দিয়া চুনিলাল কোথায় সরিয়া গিয়াছে। একা দেবদাস চন্দ্রমুখীর ঘরে নীচে বসিয়া মদ খাইতেছে—অদূরে বসিয়া

চন্দ্ৰমুখী বিষণ্নমুখে চাহিয়া চাহিয়া সভয়ে বলিয়া উঠিল— দেবদাস, আর খেয়ো না ।

দেবদাস মদের গ্লাস নীচে রাখিয়া ভ্রূকুটি করিল, কেন? অল্পদিন মদ ধরেচ, অত সইতে পারবে না ।

সহ্য করব বলে মদ খাইনে। এখানে থাকব বলে শুধু মদ খাই।

এ কথা চন্দ্রমুখী অনেকবার শুনিয়াছে। এক-একবার তাহার মনে হয় দেয়ালে মাথা ঠুকিয়া সে রক্তগঙ্গা হইয়া মরে। দেবদাসকে সে ভালবাসিয়াছে। দেবদাস মদের গ্লাস ছুড়িয়া ফেলিল। কৌচের পায়ায় লাগিয়া সেটা চূর্ণ হইয়া গেল । তখন আড় হইয়া বালিশে হেলান দিয়া জড়াইয়া জড়াইয়া কহিল, আমার উঠে যাবার ক্ষমতা নেই, তাই এখানে বসে থাকি—জ্ঞান থাকে না, তাই তোমার মুখের পানে চেয়ে কথা কই— কন্দ—র—তবু অজ্ঞান হইনে— তবু একটু জ্ঞান

থাকে—তোমাকে ছুঁতে পারিনে আমার বড় ঘৃণা হয় । চন্দ্রমুখী চক্ষু মুছিয়া ধীরে ধীরে কহিতে লাগিল, দেবদাস, কত লোক এখানে আসে, তারা কখনো মদ স্পর্শও করে না।

দেবদাস চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া উঠিয়া বসিল। টলিয়া টলিয়া ইতস্ততঃ হস্ত নিক্ষেপ করিয়া বলিল, —স্পর্শ করে না? আমার বন্দুক থাকলে তাদের গুলি করতাম। তারা যে আমার চেয়েও পাপিষ্ঠ—চন্দ্রমুখী!

কিছুক্ষণ থামিয়া কি যেন ভাবিতে লাগিল; তাহার পর আবার কহিল, যদি কখনও মদ ছাড়ি—যদিও ছাড়ব না- তা হলে আর কখন ত এখানে আসব না । আমার উপায় আছে, কিন্তু তাদের কি হবে? একটুখানি থামিয়া বলিতে লাগিল, বড় দুঃখে মদ ধরেচি— আমাদের বিপদের, দুঃখের বন্ধু! আর তোমাকে ছাড়তে পারিনে,—

দেবদাস বালিশের উপর মুখ রগড়াইতে লাগিল। চন্দ্রমুখী তাড়াতাড়ি কাছে আসিয়া মুখ তুলিয়া ধরিল। দেবদাস ভ্রূকুটি করিল— ছিঃ, ছুঁয়ো না – এখনো আমার জ্ঞান আছে। চন্দ্রমুখী, তুমি ত জান না— আমি শুধু জানি আমি কত যে তোমাদের ঘৃণা করি। চিরকাল ঘৃণা করব—তবু আসব, তবু বসব, তবু কথা কব—নাহলে যে উপায় নেই। তা কি তোমরা কেউ বুঝবে? হাঃহাঃ—লোকে পাপ কাজ আঁধারে করে, আর আমি এখানে মাতাল হই—এমন উপযুক্ত স্থান জগতে কি আর আছে! আর তোমরা—

দেবদাস দৃষ্টি সংযত করিয়া কিছুক্ষণ তাহার বিষণ্ন মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, আহা! সহিষ্ণুতার প্রতিমূর্তি! লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান, অত্যাচার, উপদ্রব—স্ত্রীলোকে যে কত সইতে পারে— তোমরাই তার দৃষ্টান্ত ।

তাহার পর চিত হইয়া শুইয়া পড়িয়া, চুপি চুপি কহিতে লাগিল— চন্দ্রমুখী বলে, সে আমাকে ভালবাসে—আমি তা চাইনে—চাইনে—চাইনে — লোকে থিয়েটার করে, মুখে চুনকালী মাখে—চোর হয়—ভিক্ষা করে—রাজা হয়—রানী হয়—ভালবাসে—কত ভালবাসার কথা বলে—কত কাঁদে—ঠিক যেন সব সত্য ! চন্দ্রমুখী আমার থিয়েটার করে, আমি দেখি! কিন্তু তাকে যে মনে পড়ে—একদণ্ডে কি যেন সব হয়ে গেল। কোথায় সে চলে গেল—আর কোন্ পথে আমি চলে গেলাম। এখন একটা সমস্ত জীবনব্যাপী মস্ত অভিনয় আরম্ভ হয়েছে। একটা ঘোর মাতাল— আর এই একটা—হোক, তাই হোক—মন্দ কি! আশা নেই, ভরসা নেই—সুখও নেই, সাধও নেই—বাঃ বহুৎ আচ্ছা—

তাহার পর দেবদাস পাশ ফিরিয়া বিড়বিড় করিয়া কি বলিতে লাগিল।

চন্দ্ৰমুখী তাহা বুঝিতে পারিল না। অল্পক্ষণেই দেবদাস ঘুমাইয়া পড়িল। চন্দ্রমুখী তখন কাছে আসিয়া বসিল। অঞ্চল ভিজাইয়া মুখ মুছাইয়া দিয়া, সিক্ত বালিশ বদলাইয়া দিল। একটা পাখা লইয়া কিছুক্ষণ বাতাস করিয়া, বহুক্ষণ অধোবদনে বসিয়া রহিল। রাত্রি তখন প্রায় একটা। দীপ নিভাইয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া অন্য কক্ষে চলিয়া গেল ।

                          দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

দুই ভাই দ্বিজদাস ও দেবদাস ও গ্রামের অনেকেই জমিদার নারায়ণ মুখুয্যের সৎকার করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল। দ্বিজদাস চীৎকার করিয়া কাঁদিয়া পাগলের মত হইয়াছে—পাড়ার পাঁচজন তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিতেছে না। আর দেবদাস শান্তভাবে একটা থামের পার্শ্বে বসিয়া আছে। মুখে শব্দ নাই, চোখে

একফোঁটা জল নাই । কেহ তাহাকে ধরিতেছে না— কেহ সান্ত্বনা দিবার প্রয়াস করিতেছে না। মধুসূদন ঘোষ নিকটে গিয়া একবার বলিতে গিয়াছিল,—তা বাবা

কপালে দেবদাস হাত দিয়া দ্বিজদাসের দিকটা দেখাইয়া বলিল, ওখানে ।

ঘোষজা মহাশয় অপ্রতিভ হইয়া–হাঁ, তা উনি—কত বড় লোক, ইত্যাদি বলিতে বলিতে চলিয়া গেল। আর কেহ নিকটে আসিল না। দ্বিপ্রহর অতীত হইলে, দেবদাস অর্ধমূর্ছিত জননীর পদপ্রান্তে গিয়া উপবেশন করিল। সেখানে অনেকগুলো স্ত্রীলোক তাঁহাকে ঘিরিয়া বসিয়া আছে। পার্বতীর পিতামহীও উপস্থিত ছিলেন। ভাঙ্গাগলায় সদ্যবিধবা শোকার্ত জননীকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, বউমা, চেয়ে দেখ মা, দেবদাস এসেচে। দেবদাস ডাকিল, মা।

তিনি একবারমাত্র চাহিয়া বলিলেন, বাবা! তাহার পর নিমীলিত চোখের কোণ হইতে অজস্র অশ্রু বহিতে লাগিল । স্ত্রীলোকের দল কলস্বরে রৈ-রাই করিয়া কাঁদিয়া উঠিল। দেবদাস জননীর চরণে কিছুক্ষণ মুখ ঢাকিয়া রহিল; তাহার পর ধীরে ধীরে উঠিয়া গেল। গেল মৃত পিতার শয়নকক্ষে। চোখে জল নাই, গম্ভীর শান্তমূর্তি। রক্তনেত্র ঊর্ধ্বে স্থাপিত করিয়া ভূমিতলে বসিয়া পড়িল। যে-কেহ সে মূর্তি দেখিতে পাইলে বোধ করি ভীত হইত। কপালের দুই পার্শ্বে উভয় শিরা স্ফীত হইয়া রহিয়াছে, বড় বড় রুক্ষ কেশ ফুলিয়া উঠিয়াছে। তপ্তকাঞ্চনের বর্ণ কালিমাখা হইয়াছে— কলিকাতার জঘন্য অত্যাচারের পর এই দীর্ঘ রাত্রিজাগরণ, তাহার পর পিতার মৃত্যু! এক বৎসর পূর্বে যে-কেহ তাহাকে দেখিয়াছিল—এখন বোধ হয় তাহাকে হঠাৎ সে চিনিতে পারিত না। কিছুক্ষণের পর পার্বতীর জননী সন্ধান করিয়া দ্বার ঠেলিয়া ভিতরে আসিলেন, – দেবদাস! -

কেন খুড়ীমা

এমন করলে ত চলবে না বাবা!

দেবদাস তাঁহার মুখপানে চাহিয়া কহিল, কি করেচি খুড়ীমা?

খুড়ীমা তাহা বুঝিলেন, কিন্তু উত্তর দিতে পারিলেন না। দেবদাসের মাথাটা কোলের কাছে টানিয়া লইয়া বলিলেন,— দেত্তা—বাবা ! কেন খুড়ীমা

দেবতা-চরণ—বাবা-

বুকের কাছে মুখ রাখিয়া দেবদাস এইবার একফোঁটা অশ্রুবিসর্জন করিল ।

শোকার্ত পরিবারেরও দিন কাটে। ক্রমে প্রভাত হইল, কান্নাকাটি অনেক কমিয়া আসিল। দ্বিজদাস একেবারে প্রকৃতিস্থ হইয়াছেন। তাঁহার জননীও উঠিয়া বসিয়াছেন,—চোখ মুছিতে মুছিতে দিনের কাজ করিতেছেন। দুইদিন পরে দ্বিজদাস দেবদাসকে ডাকিয়া কহিলেন, দেবদাস, পিতার শ্রাদ্ধকার্যে কত ব্যয় করা উচিত?

দেবদাস অগ্রজের মুখপানে চাহিয়া কহিল, যেমন উচিত বিবেচনা করেন ।

না ভাই, এখন শুধু আমার বিবেচনায় চলবে না। তুমি বড় হয়েচ, তোমার মত জানা আবশ্যক।

দেবদাস জিজ্ঞাসা করিল, কত নগদ টাকা আছে?

বাবার তবিলে দেড় লাখ টাকা জমা আছে। আমার বিবেচনায় হাজার দশেক টাকা খরচ করলেই যথেষ্ট হবে—কি বল?

আমি কত পাব?

দ্বিজদাস একটু ইতস্ততঃ করিয়া বলিলেন, তা তুমিও অর্ধেক পাবে। দশ হাজার খরচ হলে, তোমার সত্তর হাজার ও আমার সত্তর হাজার থাকবে।

মা কি পাবেন?

মা নগদ টাকা কি করবেন? তিনি বাটীর গিন্নী — আমরা প্রতিপালন করব।

দেবদাস একটু চিন্তা করিয়া বলিল, আমার বিবেচনায়, আপনার ভাগের পাঁচ হাজার টাকা খরচ হোক এবং আমার ভাগের পঁচিশ হাজার টাকা খরচ হবে।

বাকি পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে আমি পঁচিশ হাজার নেব, বাকী পঁচিশ হাজার টাকা মায়ের নামে জমা থাকবে। আপনার কি বিবেচনা হয়? প্রথমে দ্বিজদাস যেন লজ্জিত হইলেন; পরে কহিলেন, উত্তম কথা। কিন্তু আমার, কি জান—স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে; তাদের বিয়ে, পৈতা দেওয়া, – অনেক খরচ। তা এই পরামর্শই ভাল। একটু থামিয়া বলিলেন, তা একটু লিখে দিলেই—

লেখাপড়ার প্রয়োজন হবে কি? কাজটা ভাল দেখাবে না। আমার ইচ্ছা, টাকাকড়ির কথা—এ সময়ে গোপনেই হয়।

তা ভাল কথা; কিন্তু কি জানো ভাই—

আচ্ছা, আমি লিখেই দিচ্চি। সেইদিনই দেবদাস লেখাপড়া করিয়া দিল।

পরদিন দ্বিপ্রহরে দেবদাস নীচে নামিতেছিল, সিঁড়ির পার্শ্বে পার্বতীকে দেখিতে পাইয়া থমকিয়া দাঁড়াইল। পার্বতী মুখপানে চাহিয়াছিল— চিনিতে যেন তাহার

ক্লেশ হইতেছিল। দেবদাস গম্ভীর শান্তমুখে কাছে আসিয়া কহিল, কখন এলে পার্বতী? সেই কণ্ঠস্বর! আজ তিন বৎসর পরে দেখা। অধোমুখে পার্বতী কহিল – সকালবেলা এসেচি।

অনেকদিন দেখা হয়নি। বেশ ভাল ছিলে?

পার্বতী মাথা নাড়িল ।

চৌধুরীমশাই ভাল আছেন? ছেলেমেয়েরা সব ভাল ?

সব ভাল। পার্বতী একটিবার মুখপানে চাহিয়া দেখিল। কিন্তু একটিবার জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না, তিনি কেমন আছেন—কি করিতেছেন। এখন যে কোন প্রশ্নই খাটে না ।

দেবদাস কহিল, এখন কিছুদিন আছ ত?

হাঁ ।

তবে আর কি—বলিয়া দেবদাস বাহিরে চলিয়া গেল।

শ্রাদ্ধ শেষ হইয়া গেছে। সে কথা বলিতে গেলে অনেক লিখিতে হয়, তাই তাহাতে প্রয়োজন নাই। শ্রাদ্ধের পরদিবস পার্বতী ধর্মদাসকে নিভৃতে ডাকিয়া তাহার হাতে একগাছা সোনার হার দিয়া কহিল, ধর্ম, তোমার মেয়েকে পরতে দিয়ো–

ধর্মদাস মুখপানে চাহিয়া আর্দ্র চক্ষু আরো আর্দ্র করিয়া বলিল, আহা, তোমাকে কতদিন দেখিনি; সব ভাল খবর ত দিদি?


সব ভাল। তোমার ছেলেমেয়ে ভাল আছে?

তা আছে পারু।

তুমি ভাল আছ?

এইবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ধর্মদাস কহিল, কৈ আর ভাল! এইবার যেতে ইচ্ছে করে—কর্তা গেলেন। ধর্মদাস শোকের আবেগে কত কি হয়ত কহিত, কিন্তু

তাহাতে পার্বতী বাধা দিল। এ-সব সংবাদ শুনিবার জন্য সে হার দেয় নাই । পার্বতী কহিয়া উঠিল, সে কি কথা ধর্ম, তুমি গেলে দেবদাদাকে দেখবে কে?

ধর্মদাস কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, যখন ছেলেমানুষটি ছিল, তখন দেখেচি। এখন না দেখতে হলেই বাঁচি, পারু । পার্বতী আরও নিকটে সরিয়া আসিয়া কহিল, ধর্ম, একটি কথা সত্য বলবে?

কেন বলব না দিদি!

তবে সত্যি করে বল, দেবদা এখন কি করে?

করে আমার মাথা আর মুণ্ডু ।

ধর্মদাস, খুলে বল না?

ধর্মদাস পুনরায় কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, খুলে আর কি বলব দিদি! এ কি আর বলবার কথা! এবারে কর্তা নাই, দেবৃত্তার হাতে অগাধ টাকা হল; এবারে কি আর রক্ষা থাকবে?

পার্বতীর মুখ একেবারে ম্লান হইয়া গেল। সে আভাসে ইঙ্গিতে কিছু কিছু শুনিয়াছিল। শুষ্ক হইয়া কহিল, বল কি ধর্মদাস? সে মনোরমার পত্রে যখন কতক শুনিয়াছিল, তখন বিশ্বাস করিতে পারে নাই। ধর্মদাস মাথা নাড়িয়া কহিতে লাগিল— আহার নাই, নিদ্রা নাই, শুধু বোতল বোতল মদ। তিনদিন, চারদিন ধরে কোথায় পড়ে থাকে— ঠিকানা নাই। কত টাকা উড়িয়ে দিলে, – শুনতে পাই, কত হাজার টাকার নাকি তাকে গয়না গড়িয়ে দিয়েচে।

পার্বতীর আপাদমস্তক কাঁপিয়া উঠিল— ধর্মদাস, এ-সব সত্যি?

ধর্মদাস নিজের মনে কহিতে লাগিল, – তোর কথা হয়ত শুনতে পারে— একবার বারণ করে দে। কি শরীর কি হয়ে গেল— এমনধারা অত্যাচারে ক'টা দিন বা বাঁচবে? কাকেই বা এ কথা বলি? মা, বাপ, ভাই—এদের এ কথা বলা যায় না। ধর্মদাস শিরে পুনঃপুনঃ করাঘাত করিয়া বলিয়া উঠিল, ইচ্ছে করে মাথা খুঁড়ে মরি পারু, আর বাঁচতে সাধ নেই ।

পার্বতী উঠিয়া গেল । নারাণবাবুর মৃত্যু-সংবাদ পাইয়া সে ছুটিয়া আসিয়াছিল। ভাবিয়াছিল, এ বিপদের সময় দেবদাসের কাছে যাওয়া একবার উচিত। কিন্তু, তাহার এত সাধের দেবদাদা এই হইয়াছে! কত কথাই যে মনে পড়িতে লাগিল, তাহার অবধি নাই। যত ধিক্কার সে দেবদাসকে দিল, তাহার সহস্রগুণ আপনাকে দিল; সহস্রবার তাহার মনে হইল, সে থাকিলে কি এমন হইতে পারিত! আগেই সে নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারিয়াছিল, কিন্তু, সে কুঠার এখন তাহার মাথায় পড়িল । তাহার দেবদাদা এমন হইয়া যাইতেছে—এমন করিয়া নষ্ট হইতেছে, আর সে পরের সংসার ভাল করিবার জন্য ব্রিত! পরকে আপনার

ভাবিয়া সে নিত্য অন্ন বিতরণ করিতেছে, আর তাহার সর্বস্ব, – আজ অনাহারে মরিতেছে! পার্বতী প্রতিজ্ঞা করিল, আজ সে দেবদাসের পায়ে মাথা খুঁড়িয়া মরিবে।

এখনও সন্ধ্যা হইতে কিছু বিলম্ব আছে, – পার্বতী দেবদাসের ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। দেবদাস শয্যায় বসিয়া হিসাব দেখিতেছিল, চাহিয়া দেখিল। পার্বতী ধীরে ধীরে কপাট বন্ধ করিয়া মেঝের উপর বসিল। দেবদাস মুখ তুলিয়া হাসিল। তাহার মুখ বিষণ্ণ, কিন্তু শান্ত। হঠাৎ কৌতুক করিয়া কহিল, যদি অপবাদ দিই?

পার্বতী সলজ্জ নীলোৎপল চক্ষু-দুটি একবার তাহার পানে রাখিয়া, পরক্ষণেই অবনত করিল। মুহূর্তে বুঝাইয়া দিল, এ কথা তাহার বুকের মাঝে চিরদিনের জন্য শেলের মত বিধিয়া আছে। আর কেন? কত কথা বলিতে আসিয়াছিল, সব ভুলিয়া গেল। দেবদাসের কাছে সে কথা কহিতে পারে না । আবার দেবদাস হাসিয়া উঠিল; কহিল, বুঝেচি রে, বুঝেচি। লজ্জা হচ্ছে, না?

তবুও পার্বতী কথা কহিতে পারিল না। দেবদাস কহিতে লাগিল, তাতে আর লজ্জা কি? দু'জনে মিলেমিশে একটা ছেলেমানুষী করে ফেলে—এই দেখ দেখি—মাঝে থেকে কি গোলমাল হয়ে গেল! রাগ করে তুই যা ইচ্ছে তাই বললি, আমিও কপালের ওপর ঐ দাগ দিয়ে দিলাম । কেমন হয়েচে!

দেবদাসের কথার ভিতর শ্লেষ বা বিদ্রূপের লেশমাত্র ছিল না; প্রসন্ন হাসি-হাসি মুখে অতীতের দুঃখের কাহিনী। পার্বতীর কিন্তু বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল । মুখে কাপড় দিয়া, নিশ্বাস রুদ্ধ করিয়া মনে মনে বলিল, দেবদাদা, ঐ দাগই আমার সান্ত্বনা, ঐ আমার সম্বল। তুমি আমাকে ভালবাসিতে—তাই দয়া করে, আমাদের বাল্য-ইতিহাস ললাটে লিখে দিয়েচ। ও আমার লজ্জা নয়, কলঙ্ক নয়, আমার গৌরবের সামগ্রী ।

পারু!

মুখ হইতে অঞ্চল না খুলিয়া পার্বতী কহিল, কি

তোর উপর আমার বড় রাগ হয়—

এইবার দেবদাসের কণ্ঠস্বর বিকৃত হইতে লাগিল—বাবা নাই, আজ আমার কি দুঃখের দিন; কিন্তু তুই থাকলে কি ভাবনা ছিল! বড়বৌকে জানিস ত, দাদার স্বভাবও কিছু তোর কাছে লুকানো নেই; বল্ দেখি মাকে নিয়ে এ সময়ে কি করি! আর আমারই বা যে কি হবে, কিছুই বুঝে পাই না। তুই থাকলে নিশ্চিত

হয়ে—সব তোর হাতে ফেলে দিয়েও কি রে পারু!

পার্বতী ফুঁপাইয়া কাঁদিয়া উঠিল।

দেবদাস কহিল, কাঁদছিস বুঝি? তবে আর বলা হল না ।

পার্বতী চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল, বল।

দেবদাস মুহূর্তে কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিল, পারু, তুই নাকি খুব পাকা গিন্নী হয়েচিস রে?

ভিতরে ভিতরে পার্বতী চাপিয়া অধর দংশন করিল; মনে মনে বলিল, ছাই গৃহিণী। শিমুলফুল দেবসেবায় লাগে কি? দেবদাস হাসিয়া উঠিল; হাসিয়া কহিল – বড় হাসি পায়! ছিলি তুই এতটুকু—কত বড় হলি। বড় বাড়ি, বড় জমিদারি, বড় বড় ছেলেমেয়ে—আর চৌধুরীমশাই, সবাই বড়–কি রে পারু!

চৌধুরীমশাই পার্বতীর বড় আমোদের জিনিস; তাঁকে মনে হইলেই তাহার হাসি পাইত। এত কষ্টেও তাই তার হাসি আসিল । দেবদাস কৃত্রিম গাম্ভীর্যের সহিত কহিল, একটা উপকার করতে পারিস?

পার্বতী মুখ তুলিয়া কহিল, কি?

তোদের দেশে ভাল মেয়ে পাওয়া যায়?

পার্বতী ঢোক গিলিয়া, কাশিয়া বলিল – ভাল মেয়ে? কি করবে?

পেলে বিয়ে করি। একবার সংসারী হতে সাধ হয় ।

পার্বতী ভাল মানুষটির মত কহিল, খুব সুন্দরী ত?

হাঁ, তোর মত ।

আর খুব ভালমানুষ?

না, খুব ভালমানুষে কাজ নেই—বরং একটু দুষ্টু, – তোর মত আমার সঙ্গে যে ঝগড়া করতে পারবে। পার্বতী মনে মনে কহিল, সে ত কেউ পারবে না দেবদাদা; কেননা তাতে আমার মত ভালবাসতে পারা চাই। মুখে কহিল, পোড়া মুখ আমার, আমার মত

কত হাজার তোমার পায়ে আসতে পেলে ধন্য হয় ।

দেবদাস কৌতুক করিয়া হাসিয়া বলিল, একটি আপাততঃ দিতে পারিস দিদি?

দেবদাদা, সত্যি বিয়ে করবে?

এই যে বললাম ।

শুধু এইটি সে খুলিয়া বলিল না যে, তাকে ভিন্ন এ জীবনে অন্য স্ত্রীলোকে তার প্রবৃত্তি হইবে না।

দেবদাদা, একটি কথা বলব?

পার্বতী আপনাকে একটু সামলাইয়া লইয়া কহিল, তুমি মদ খেতে শিখলে কেন?

দেবদাস হাসিয়া উঠিল, কহিল, খেতে কি কোন জিনিস শিখতে হয়?

তা নয়, অভ্যাস করলে কেন?

কে বলেচে,ধর্মদাস?

যেই বলুক, কথাটা কি সত্যি? দেবদাস প্রতারণা করিল না; কহিল, কতকটা বটে।

পার্বতী কিছুক্ষণ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আর কত হাজার টাকার গয়না গড়িয়ে দিয়েচ, না?

দেবদাস হাসিয়া কহিল, দিইনি, গড়িয়ে রেখেচি। তুই নিবি?

পার্বতী হাত পাতিয়া বলিল, দাও। এই দেখ, আমার একটিও গয়না নেই।

চৌধুরীমশাই তোকে দেননি?

দিয়েছিলেন; আমি সমস্ত তাঁর বড়মেয়েকে দিয়ে দিয়েচি।

তোর বুঝি দরকার নেই?

পার্বতী মাথা নাড়িয়া মুখ নীচু করিল।

এইবার সত্যই দেবদাসের চোখে জল আসিতেছিল। দেবদাস অন্তরে বুঝিতে পারিয়াছিল, কম দুঃখে আর স্ত্রীলোক নিজের গহনা খুলিয়া বিলাইয়া দেয় না।

কিন্তু চোখের জল চাপিয়া ধীরে ধীরে বলিল, মিছে কথা, পারু। কোন স্ত্রীলোককেই আমি ভালবাসিনি, কাউকেই গয়না দিইনি। পার্বতী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মনে মনে কহিল, তাই আমি বিশ্বাস করি ।

অনেকক্ষণ দুইজনেই চুপ করিয়া রহিল। তাহার পর পার্বতী কহিল, কিন্তু, প্রতিজ্ঞা কর— আর মদ খাবে না!

তা পারিনে। তুমি কি প্রতিজ্ঞা করতে পার, আমাকে আর একটিবারও মনে করবে না?

পার্বতী কথা কহিল না। এই সময়ে বাহিরে সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনি হইল। দেবদাস চকিত হইয়া জানালার বাহিরে চাহিয়া কহিল, সন্ধ্যা হল, এখন বাড়ি যা পারু!

আমি যাব না। তুমি প্রতিজ্ঞা কর ।

আমি পারিনে ।

কেন পার না?

সবাই কি সব কাজ পারে?

ইচ্ছে করলে নিশ্চয় পারে।

তুমি আজ রাত্রে আমার সঙ্গে পালিয়ে যেতে পার? পার্বতীর সহসা যেন হৃৎস্পন্দন রুদ্ধ হইয়া গেল। অজ্ঞাতসারে অস্ফুটে মুখ দিয়া বাহির হইয়া গেল, তা কি হয়?

দেবদাস শয্যার উপর একটু সরিয়া বসিয়া কহিল, পার্বতী, দোর খুলে দাও । পার্বতী সরিয়া আসিয়া, দ্বারে পিঠ দিয়া ভাল করিয়া বসিয়া বলিল, প্রতিজ্ঞা কর।!

দেবদাস উঠিয়া দাঁড়াইয়া ধীরভাবে কহিতে লাগিল—পারু, জোর করিয়ে প্রতিজ্ঞা করানটা কি ভাল, না তাতে বিশেষ লাভ আছে? আজকার প্রতিজ্ঞা কাল

হয়ত থাকবে না—কেন আমাকে আর মিথ্যাবাদী করবি?

আবার বহুক্ষণ নিঃশব্দে অতিবাহিত হইল। এমনি সময়ে কোথায় কোন ঘরের ঘড়িতে টং টং করিয়া নয়টা বাজিয়া গেল। দেবদাস ব্যস্ত হইয়া পড়িল ;

কহিল, ওরে পারু, দোর খুলে দে

পার্বতী কথা কহে না। ও পারু আমি কিছুতেই যাব না, বলিয়া পার্বতী অকস্মাৎ রুদ্ধ-আবেগে সেইখানেই লুটাইয়া পড়িল—বহুক্ষণ ধরিয়া বড় কান্না কাঁদিতে লাগিল। ঘরের ভিতর এখন গাঢ় অন্ধকার—কিছুই দেখা যায় না। দেবদাস শুধু অনুমান করিয়া বুঝিল, পার্বতী মাটিতে পড়িয়া কাঁদিতেছে। ধীরে ধীরে ডাকিল—পারু! পার্বতী কাঁদিয়া উত্তর দিল, দেবদা, আমার যে বড় কষ্ট !

দেবদাস কাছে সরিয়া আসিল। তাঁহার চক্ষেও জল—কিন্তু, স্বর বিকৃত হইতে পায় নাই। কহিল, তা কি আর জানিনে রে? দেবদা, আমি যে মরে যাচ্ছি। কখনো তোমার সেবা করতে পেলাম না – আমার যে আজন্মের সাধ—

অন্ধকারে চোখ মুছিয়া দেবদাস কহিল—তারও ত সময় আছে। তবে আমার কাছে চল; এখানে তোমাকে দেখবার যে কেউ নেই!

তোর বাড়ি গেলে খুব যত্ন করবি?

আমার ছেলেবেলার সাধ! স্বর্গের ঠাকুর! আমার এ সাধটি পূর্ণ করে দাও! তারপর মরি—তাতেও দুঃখ নেই। এবার দেবদাসের চোখেও জল আসিয়া পড়িল।

পার্বতী পুনরায় কহিল, দেবদা, আমার বাড়ি চল ।

দেবদাস চোখ মুছিয়া বলিল, আচ্ছা যাব।

আমাকে ছুঁয়ে বল, যাবে ?

দেবদাস অনুমান করিয়া পার্বতীর পদপ্রান্ত স্পর্শ করিয়া বলিল, এ কথা কখনও ভুলব না। আমাকে যত্ন করলে যদি—তোমার দুঃখ ঘোচে—আমি যাব । মরবার আগেও আমার এ কথা স্মরণ থাকবে।


                           ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ


পিতার মৃত্যুর পর ছয় মাস ধরিয়া ক্রমাগত বাটীতে থাকিয়া, দেবদাস একেবারে জ্বালাতন হইয়া উঠিল। সুখ নাই, শান্তি নাই, একান্ত একঘেয়ে জীবন । তার উপর ক্রমাগত পার্বতীর চিন্তা; আজকাল সব কাজেই তাহাকে মনে পড়ে। আর, ভাই দ্বিজদাস এবং পতিব্রতা ভাতৃজায়া দেবদাসের জ্বালা আরও বাড়াইয়া তুলিলেন ।

গৃহিণীর অবস্থাও দেবদাসের ন্যায়। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সমস্ত সুখই ফুরাইয়া গিয়াছে। পরাধীনভাবে এ বাড়ি তাঁহার ক্রমে অসহ্য হইয়া উঠিতেছে। আজ কয়দিন হইতে তিনি কাশীবাসের সঙ্কল্প করিতেছেন; শুধু দেবদাসের বিবাহ না দিয়া যাইতে পারিতেছেন না। বলিতেছেন—দেবদাস, একটি বিয়ে কর—আমি দেখে যাই। কিন্তু তাহা কিরূপে সম্ভব? একে অশৌচ অবস্থা, তার উপর আবার মনোমত পাত্রীর সন্ধান করিতে হইবে। আজকাল তাই গৃহিণীর

মাঝে মাঝে দুঃখ হয় যে, সে সময় পার্বতীর সহিত বিবাহ দিলেই বেশ হইত। একদিন তিনি দেবদাসকে ডাকিয়া কহিলেন, দেবদাস, আর ত পারিনে—দিনকতক কাশী গেলে হয়। দেবদাসেরও তাই ইচ্ছা, কহিল, আমিও তাই বলি। ছয় মাস পরে ফিরে এলেই হবে।

হাঁ বাবা, তাই কর। শেষে ফিরে এসে, তাঁর কাজ হয়ে গেলে, তোর বিয়ে দিয়ে তোকে সংসারী দেখে আমি কাশীবাস করব।

দেবদাস স্বীকৃত হইয়া, জননীকে কিছুদিনের জন্য কাশীতে রাখিয়া আসিয়া, কলিকাতায় চলিয়া গেল। কলিকাতায় আসিয়া তিন-চারদিন ধরিয়া দেবদাস

চুনিলালের সন্ধান করিল। সে নাই, বাসা পরিবর্তন করিয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে। একদিন সন্ধ্যার সময় দেবদাস চন্দ্রমুখীর কথা স্মরণ করিল। একবার দেখা

করিলে হয় না? এতদিন তাহাকে মোটেই মনে পড়ে নাই। দেবদাসের যেন একটু লজ্জা করিল, একটা গাড়ি ভাড়া করিয়া সন্ধ্যার কিছু পরেই চন্দ্রমুখীর বাটীর

সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল। বহুক্ষণ ডাকাডাকির পর ভিতর হইতে স্ত্রীকণ্ঠে উত্তর আসিল, – এখানে নয় । সম্মুখে একটা গ্যাসপোস্ট ছিল, দেবদাস তাহার নিকটে সরিয়া আসিয়া কহিল, বলতে পার সে স্ত্রীলোকটি কোথায় গেছে? জানালা খুলিয়া কিছুক্ষণ সে চাহিয়া কহিল, তুমি কি দেবদাস?

হাঁ ।

দাঁড়াও, দোর খুলে দিই।

দ্বার খুলিয়া সে কহিল, এস—

কণ্ঠস্বর যেন কতকটা পরিচিত, অথচ ভাল চিনিতে পারিল না। একটু অন্ধকারও হইয়াছিল। সন্দেহে কহিল, চন্দ্ৰমুখী কোথায় বলতে পার? স্ত্রীলোকটি মৃদু হাসিয়া কহিল, পারি; ওপরে চল ।

এবার দেবদাস চিনিতে পারিল — অ্যাঁ, তুমি?

হাঁ আমি । দেবদাস, আমাকে একেবারে ভুলে গেলে?

উপরে গিয়া দেবদাস দেখিল, চন্দ্রমুখীর পরনে কালাপেড়ে ধুতি, কিন্তু মলিন। হাতে শুধু দু'গাছি বালা, অন্য অলঙ্কার নাই। মাথার চুল এলোমেলো। বিস্মিত হইয়া বলিল, তুমি? ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিল, চন্দ্রমুখী পূর্বাপেক্ষা অনেক কৃশ হইয়াছে। কহিল, তোমার অসুখ হয়েছিল? চন্দ্ৰমুখী হাসিয়া কহিল, শারীরিক একটুও নয়। তুমি ভাল করে বোস।

দেবদাস শয্যায় উপবেশন করিয়া দেখিল, ঘরটির একেবারে আগাগোড়া পরিবর্তন হইয়াছে। গৃহস্বামিনীর মত তাহারও দুর্দশার সীমা নাই। একটিও আসবাব নাই— আলমারি, টেবিল, চেয়ারের স্থান শূন্য পড়িয়া আছে। শুধু একটি শয্যা; চাদর অপরিষ্কৃত, দেয়ালের গায়ে ছবিগুলি সরাইয়া ফেলা হইয়াছে, লোহার কাটা এখনো পোঁতা আছে, দুই-একটায় লাল ফিতা এখনও ঝুলিতেছে। উপরের সেই ঘড়িটা এখনো ব্রাকেটের উপর আছে, কিন্তু নিঃশব্দ। আশেপাশে মাকড়সা মনের মত করিয়া জাল বুনিয়া রাখিয়াছে। এক কোণে একটা তৈলদীপ মৃদু আলোক বিতরণ করিতেছে—তাহারই সাহায্যে দেবদাস নূতন ধরনের গৃহসজ্জা দেখিয়া লইল। কিছু বিস্মিত, কিছু ক্ষুব্ধ হইয়া কহিল, চন্দ্র, এমন দুর্দশা কেমন করে হল?

চন্দ্ৰমুখী ম্লান হাসি হাসিয়া কহিল, দুর্দশা তোমাকে কে বললে? আমার ত ভাগ্য খুলেচে।

দেবদাস বুঝিতে পারিল না; কহিল, তোমার গায়ের গয়নাই বা গেল কোথায়?

বেচে ফেলেচি ।

আসবাবপত্র ?

তাও বেচেচি ।

ঘরের ছবিগুলোও বিক্রি করেচ?

এবার চন্দ্রমুখী হাসিয়া সম্মুখের একটা বাড়ি দেখাইয়া কহিল, ও বাড়ির ক্ষেত্রমণিকে বিলিয়ে দিয়েচি।

দেবদাস কিছুক্ষণ মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, চুনিবাবু কোথায় ? বলতে পারিনে। মাস-দুই হল ঝগড়া করে চলে গেছে, আর আসেনি।

দেবদাস আরও আশ্চর্য হইল–ঝগড়া কেন?

চন্দ্ৰমুখী কহিল, ঝগড়া কি হয় না?

হয় । কিন্তু কেন?

দালালি করতে এসেছিল, তাই তাড়িয়ে দিয়েছিলুম।

কিসের দালালি?

চন্দ্ৰমুখী হাসিয়া বলিল, পাটের। তার পর কহিল, তুমি বুঝতে পার না কেন? একজন বড়লোক ধরে এনেছিল, মাসে দু শ' টাকা, একরাশ অলঙ্কার, আর

দরজার সুমুখে এক সেপাই । বুঝলে?

দেবদাস বুঝিয়া হাসিয়া কহিল, কৈ, সে-সকল ত দেখিনে?

থাকলে ত দেখবে। আমি তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।

তাদের অপরাধ?

অপরাধ বেশী কিছু ছিল না, কিন্তু আমার ভাল লাগল না।

দেবদাস বহুক্ষণ ধরিয়া ভাবিয়া বলিল, সেই পর্যন্ত আর কেউ এখানে আসেনি?

না। সেই পর্যন্ত কেন, তুমি যাবার পরদিন থেকেই এখানে কেউ আসে না। শুধু চুনি মাঝে মাঝে এসে বসত, কিন্তু মাস দুই থেকে তাও বন্ধ । দেবদাস বিছানার উপর শুইয়া পড়িল। অন্যমনস্কভাবে বহুক্ষণ মৌন থাকিয়া ধীরে কহিল, চন্দ্রমুখী, তবে দোকানপাট সব তুলে দিলে?

হাঁ–দেউলে হয়ে পড়েছি।

দেবদাস সে কথার উত্তর না দিয়া বলিল, কিন্তু খাবে কি করে?

এই যে শুনলে কিছু গহনাপত্র ছিল, বিক্রি করেচি।

সে আর কত?

বেশী নয় । প্রায় আট-ন' শ টাকা আমার আছে। একজন মুদীর কাছে রেখে দিয়েচি—সে আমাকে মাসে কুড়ি টাকা দেয় ।

কুড়ি টাকায় আগে ত তোমার চলত না?

না, আজও ভাল চলে না। তিন মাসের বাড়িভাড়া বাকী, তাই মনে করচি, হাতের এই দু'গাছা বালা বিক্রি করে, সমস্ত পরিশোধ করে দিয়ে আর কোথাও

চলে যাব ।

কোথায় যাবে?

তা এখনো স্থির করিনি। কোন সস্তা মুলুকে যাব—কোন পাড়াগ্রামে—যেখানে কুড়ি টাকায় মাস চলে। এতদিন যাওনি কেন? যদি সত্যই তোমার আর-কিছু প্রয়োজন নেই ত এতদিন মিথ্যা কেন ধার-কর্জ বাড়ালে? চন্দ্ৰমুখী নতমুখে কিছুক্ষণ ভাবিয়া লইল। তাহার জীবনে এ কথাটা বলিতে আজ তাহার প্রথম লজ্জা করিল। দেবদাস বলিল, চুপ করলে যে?

চন্দ্রমুখী শয্যার একপ্রান্তে সঙ্কুচিতভাবে উপবেশন করিয়া ধীরে ধীরে কহিল, রাগ করো না; যাবার আগে আশা করেছিলাম, তোমার সঙ্গে দেখা হলে ভাল হয় । ভাবতাম, তুমি হয়ত আর একবার আসবে। আজ তুমি এসেচ, এখন কালই যাবার উদ্যোগ করব। কিন্তু কোথায় যাই বলে দেবে?

দেবদাস বিস্মিত হইয়া উঠিয়া বসিল; কহিল, শুধু আমাকে দেখবার আশায়? কিন্তু কেন? একটা খেয়াল । তুমি আমাকে বড় ঘৃণা করতে। এত ঘৃণা কেউ কখনো করেনি বোধ হয়, তাই। আজ তোমার মনে পড়বে কিনা জানিনে, কিন্তু আমার বেশ মনে আছে,—যেদিন তুমি এখানে প্রথম এলে, সেইদিন থেকেই তোমার উপর আমার দৃষ্টি পড়েছিল। তুমি ধনীর সন্তান তা জানতাম; কিন্তু ধনের আশায় তোমার পানে আকৃষ্ট হইনি। তোমার পূর্বে কত লোক এখানে এসেচে গেছে, কিন্তু কারো ভিতরে কখনো তেজ দেখিনি। আর তুমি এসেই আমাকে আঘাত করলে; একটা অযাচিত, উপযুক্ত অথচ অনুচিত রূঢ় ব্যবহার। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে রইলে, শেষে তামাশার মত কিছু দিয়ে গেলে। এ-সব মনে পড়ে কি?

দেবদাস চুপ করিয়া রহিল। চন্দ্রমুখী পুনরায় কহিতে লাগিল, সেই অবধি তোমার প্রতি দৃষ্টি রাখলাম। ভালবেসে নয়, ঘৃণা করেও নয়। একটা নূতন জিনিস দেখলে যেমন তা খুব মনে থাকে, তোমাকেও তাই কিছুতেই ভুলতে পারিনি—তুমি এলে বড় ভয়ে ভয়ে সতর্ক হয়ে থাকতাম, কিন্তু না এলে কিছুই ভাল লাগত না। তার পর আবার কি যে মতিভ্রম ঘটল—এই দুটো চোখে অনেক জিনিসই আর-এক রকম দেখতে লাগলাম। পূর্বের 'আমি'র সঙ্গে এমন করে বদলে গেলাম—যেন সে 'আমি' আর নয়। তার পরে তুমি মদ ধরলে। মদে আমার বড় ঘৃণা। কেউ মাতাল হলে তার ওপর বড় রাগ হত। কিন্তু তুমি মাতাল হলে রাগ হত না, কিন্তু বড্ড দুঃখ পেতাম।—বলিয়া চন্দ্রমুখী দেবদাসের পায়ের উপর হাত রাখিয়া ছলছলচক্ষে কহিল, আমি বড় অধম, আমার অপরাধ নিয়ো না। তুমি যে কত কথা কইতে, কতবড় ঘৃণায় সরিয়ে দিতে; আমি কিন্তু তোমার তত কাছে যেতে চাইতাম। শেষে ঘুমিয়ে পড়লে -থাক্ সে-সব বলব না, হয়ত আবার রাগ করে বসবে।

দেবদাস কিছুই কহিল না— নূতন ধরনের কথাবার্তা তাহাকে কিছু ক্লেশ দিতেছিল। চন্দ্রমুখী গোপনে চক্ষু মুছিয়া কহিতে লাগিল, একদিন তুমি বললে—আমরা কত সহ্য করি। লাঞ্ছনা, অপমান— জঘন্য অত্যাচার, উপদ্রবের কথা— সেইদিন থেকেই বড় অভিমান হয়েচে— আমি সব বন্ধ করে দিয়েচি। দেবদাস উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু দিন চলবে কি করে? চন্দ্ৰমুখী কহিল, সে ত আগেই বলেচি । মনে কর, সে যদি তোমার সমস্ত টাকা ফাঁকি দেয়— চন্দ্রমুখী ভয় পাইল না। শান্ত সহজভাবে কহিল, আশ্চর্য নয়, কিন্তু তাও ভেবেচি। বিপদে পড়লে তোমার কাছে কিছু ভিক্ষা চেয়ে নেব।

দেবদাস ভাবিয়া কহিল, তাই নিয়ো। এখন আর কোথাও যাবার উদ্যোগ কর । কালই করব। বালা দু'গাছা বেচে, একবার মুদীর সঙ্গে দেখা করব।

দেবদাস পকেট হইতে পাঁচখানা একশত টাকার নোট বাহির করিয়া বালিশের তলে রাখিয়া কহিল, – বালা বিক্রি করো না, তবে মুদীর সঙ্গে দেখা করো ।

কিন্তু যাবে কোথায়? কোন তীর্থস্থানে ?

না দেবদাস। তীর্থধর্মের উপর আমার তত আস্থা নেই। কলকাতা থেকে বেশী দূরে যাব না, কাছাকাছি কোন গ্রামে গিয়ে থাকব।

কোন ভদ্র-পরিবারে কি দাসীবৃত্তি করবে? চন্দ্রমুখীর চোখে আবার জল আসিল। মুছিয়া কহিল, প্রবৃত্তি হয় না। স্বাধীনভাবে স্বচ্ছন্দে থাকব। কেন দুঃখ করতে যাব? শরীরের দুঃখ কোনদিন সইনি, এখনো সইতে পারব না। আর বেশী টানাটানি করলে হয়ত ছিঁড়ে যাবে। দেবদাস বিষণ্নমুখে ঈষৎ হাসিল; কহিল, কিন্তু শহরের কাছে থাকলে আবার হয়ত প্রলোভনে পড়বে—মানুষের মনকে বিশ্বাস নেই । এবার চন্দ্রমুখীর মুখ প্রফুল্ল হইল। হাসিয়া কহিল, সে কথা সত্যি, মানুষের মনকে বিশ্বাস নেই বটে, কিন্তু আমি আর প্রলোভনে পড়ব না। স্ত্রীলোকের লোভ

বড় বেশী তাও মানি, কিন্তু যা-কিছু লোভের জিনিস যখন ইচ্ছে করেই ত্যাগ করচি তখন আর আমার ভয় নেই। হঠাৎ যদি ঝোঁকের ওপর ছাড়তাম, তাহলে হয়ত সাবধান হবার আবশ্যক ছিল, কিন্তু এতদিনের মধ্যে একটা দিনও ত আমাকে অনুতাপ করতে হয়নি। আমি যে বেশ সুখে আছি ।

তথাপি দেবদাস মাথা নাড়িল; কহিল, স্ত্রীলোকের মন বড় চঞ্চল–বড় অবিশ্বাসী।

এবার চন্দ্রমুখী একেবারে কাছে আসিয়া বসিল । হাত ধরিয়া কহিল, দেবদাস!

দেবদাস তাহার মুখপানে চাহিল, এখন আর বলিতে পারিল না – আমাকে স্পর্শ করো না ।

চন্দ্রমুখী স্নেহ-বিস্ফারিত চক্ষে, ঈষৎ কম্পিতকণ্ঠে, তাহার হাত দুটি নিজের কোলের উপর টানিয়া লইয়া কহিল, আজ শেষ দিন, আজ আর রাগ করো না। একটা কথা তোমাকে জিজ্ঞাসা করবার বড় সাধ হয়।—বলিয়া সে ক্ষণকাল স্থিরদৃষ্টিতে দেবদাসের মুখের পানে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, পার্বতী তোমাকে কি বড় বেশী আঘাত করেচে?

দেবদাস ভ্রূকুটি করিল, বলিল, এ কথা কেন? চন্দ্ৰমুখী বিচলিত হইল না। শান্ত দৃঢ়স্বরে বলিল, আমার কাজ আছে। তোমাকে সত্যি বলচি, তুমি দুঃখ পেলে আমারও বড় বাজে। তা ছাড়া আমি বোধ হয় অনেক কথাই জানি। মাঝে মাঝে নেশার ঘোরে তোমার মুখ থেকে অনেক কথাই শুনেচি। কিন্তু তবুও আমার বিশ্বাস হয় না যে, পার্বতী তোমাকে ঠকিয়েচে। বরঞ্চ মনে হয়, তুমি নিজেই নিজেকে ঠকিয়েচ । দেবদাস, আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড়, এ সংসারে অনেক জিনিস দেখেচি। আমার কি মনে হয় জান? নিশ্চয় মনে হয়, তোমারই ভুল হয়েচে। মনে হয়, চঞ্চল এবং অস্থিরচিত্ত বলে স্ত্রীলোকের যত অখ্যাতি, ততখানি অখ্যাতির তারা যোগ্য নয়। অখ্যাতি করতেও তোমরা, সুখ্যাতি করতেও তোমরা। তোমাদের যা বলবার – অনায়াসে বল, কিন্তু তারা তা পারে না। নিজের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না; পারলেও তা সবাই বোঝে না । কেননা, বড় অস্পষ্ট হয়— তোমাদের মুখের কাছে চাপা পড়ে যায়। তার পরে অখ্যাতিটাই লোকের মুখে মুখে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।

চন্দ্রমুখী একটু থামিয়া, কণ্ঠস্বর আরও একটু পরিষ্কার করিয়া বলিতে লাগিল, এ জীবনে ভালবাসার ব্যবসা অনেকদিন করেছি, কিন্তু একটিবারমাত্র ভালবেসেচি । সে ভালবাসার অনেক মূল্য। অনেক শিখেচি, জান ত ভালবাসা এক, আর রূপের মোহ আর। এ দু'য়ে বড় গোল বাধে, আর পুরুষেই বেশী গোল বাধায়। রূপের মোহটা তোমাদের চেয়ে আমাদের নাকি অনেক কম, তাই একদণ্ডেই আমরা তোমাদের মত উন্মত্ত হয়ে উঠিনে। তোমরা এসে যখন ভালবাসা জানাও, কত কথায়, কত ভাবে যখন প্রকাশ কর, আমরা চুপ করে থাকি। অনেক সময় তোমাদের মনে ক্লেশ দিতে লজ্জা করে, দুঃখ হয়, সঙ্কোচ বাধে। মুখ দেখতেও যখন ঘৃণা বোধ হয়, তখনও হয়ত লজ্জায় বলতে পারিনে – আমি তোমাকে ভালবাসতে পারব না। তার পরে একটা বাহ্যিক প্রণয়ের অভিনয় চলে; একদিন, যখন তা শেষ হয়ে যায়, পুরুষমানুষ রেগে অস্থির হয়ে বলে, কি বিশ্বাসঘাতক! সবাই সেই কথা শোনে, সেই কথাই বোঝে। আমরা তখনও চুপ করে থাকি । মনে কত ক্লেশ হয়, কিন্তু কে তা দেখতে যায়?

দেবদাস কোন কথা কহিল না। সেও কিছুক্ষণ নিঃশব্দে মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, হয়ত একটা মমতা জন্মায়; স্ত্রীলোক মনে করে এই বুঝি ভালবাসা ! শান্ত ধীরভাবে সংসারের কাজকর্ম করে, দুঃখের সময় প্রাণপণে সাহায্য করে, তোমরা কত সুখ্যাতি কর,—মুখে মুখে তার কত ধন্য ধন্য! কিন্তু হয়ত তখনো তার ভালবাসার বর্ণপরিচয় হয় না। তার পরে যদি কোন অশুভ মুহূর্তে তাহার বুকের ভেতরটা অসহ্য বেদনায় ছটফট করে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায়, তখন—বলিয়া

সে দেবদাসের মুখের পানে তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল, তখন তোমরা চিৎকার করে বলে ওঠো কলঙ্কিনী! ছিঃ ছিঃ! অকস্মাৎ দেবদাস চন্দ্রমুখীর মুখে হাত চাপা দিয়া বলিয়া উঠিল— চন্দ্রমুখী, ও কি! চন্দ্রমুখী ধীরে ধীরে হাত সরাইয়া দিয়া কহিল, ভয় নেই দেবদাস, আমি তোমার পার্বতীর কথা বলচি নে। বলিয়া সে মৌন হইল। দেবদাসও কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া অন্যমনস্কের মত কহিল, কিন্তু কর্তব্য আছে ত! ধর্মাধর্ম আছে ত!

চন্দ্ৰমুখী বলিল, তা ত আছেই। আর আছে বলেই, দেবদাস, যে যথার্থ ভালবাসে, সে সহ্য করে থাকে। শুধু অন্তরে ভালবেসেও যে কত সুখ, কত তৃপ্তি—যে টের পায়, সে নিরর্থক সংসারের মাঝে দুঃখ-অশান্তি আনতে চায় না। কিন্তু কি বলছিলাম দেবদাস, – আমি নিশ্চয় জানি, পার্বতী তোমাকে একবিন্দুও ঠকায়নি, তুমি আপনাকেই ঠকিয়েচ। আজ এ কথা বোঝবার তোমার সাধ্য নেই আমি জানি; কিন্তু যদি কখনো সময় আসে, তখন হয়ত দেখতে পাবে আমি সত্য কথাই বলেছিলাম ।

দেবদাসের দু'চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিল। আজ কেমন করিয়া তাহার যেন মনে হইতে লাগিল, চন্দ্রমুখীর কথাই সত্য। এই চোখের জল চন্দ্রমুখী দেখিতে পাইল, কিন্তু মুছাইবার চেষ্টা করিল না। মনে মনে বলিতে লাগিল, তোমাকে আমি অনেকবার অনেক রকমে দেখেচি, আমি তোমার মন জানি। বেশ বুঝেছি, সাধারণ পুরুষের মত তুমি সেধে ভালবাসা জানাতে পারবে না। তবে রূপের কথা—রূপ কে না ভালবাসে? কিন্তু তাই বলেই যে তোমার অতখানি তেজ রূপের পায়ে আত্মবিসর্জন করে ফেলবে, সে কথা কিছুতেই বিশ্বাস হয় না। পার্বতী হয়ত খুব রূপবতী; কিন্তু, তবে মনে হয়, সে-ই তোমাকে আগে ভালবেসেছিল, আগে সে কথা জানিয়েছিল। মনে মনে বলিতে বলিতে সহসা তাহার মুখ দিয়া অস্ফুটে বাহির হইয়া পড়িল, নিজেকে দিয়েই বুঝেচি, সে তোমাকে কত ভালবাসে!

দেবদাস তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া কহিল, কি বললে? চন্দ্রমুখী কহিল, কিছু না। বলছিলাম যে সে তোমার রূপে ভোলেনি। তোমার রূপ আছে বটে, কিন্তু তাতে ভুল হয় না। এই তীব্র রুক্ষ রূপ সকলের চোখেও পড়ে না। কিন্তু যার পড়ে, সে আর চোখ ফিরুতে পারে না।—বলিয়া একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, তুমি যে কি আকর্ষণ, তা যে কখন তোমাকে ভালবেসেছ সে জানে। এই স্বর্গ থেকে সাধ করে ফিরে যাবে, এমন মেয়েমানুষ কি পৃথিবীতে আছে? আবার কিছুক্ষণ নীরবে তাহার মুখপানে চাহিয়া থাকিয়া মৃদু মৃদু বলিতে লাগিল, — এ রূপ ত চোখে পড়ে না! বুকের একেবারে মাঝখানটিতে এর গভীর ছায়া

পড়ে । তার পরে দিন শেষ হলে আগুনের সঙ্গে চিতায় ছাই হয়ে যায় ।

দেবদাস বিহ্বল দৃষ্টিতে চন্দ্রমুখীর মুখপানে চাহিয়া কহিল, আজ এ-সব তুমি কি বলছ?

চন্দ্ৰমুখী মৃদু হাসিয়া বলিল, এমন বিপদ আর নেই দেবদাস, যাকে ভালবাসি না, সে যদি জোর করে ভালবাসার কথা শোনায়! কিন্তু আমি শুধু পার্বতীর জন্য ওকালতি করছিলাম—নিজের জন্য নয়।

দেবদাস উঠিতে উদ্যত হইয়া বলিল, এবার আমি যাই । আর একটু বসো। কখনো তোমাকে সজ্ঞানে পাইনি, কখনো এমন করে হাত-দুটি ধরে কথা বলতে পাইনি—এ কি তৃপ্তি! বলিয়াই হঠাৎ হাসিয়া উঠিল । দেবদাস আশ্চর্য হইয়া কহিল, হাসলে যে?

ও কিছুই নয়, শুধু একটা পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। সে আজ দশ বছরের কথা— যখন আমি ভালবেসে ঘর ছেড়ে চলে আসি। তখন মনে হতো কত না ভালবাসি, বুঝি প্রাণটাও দিতে পারি। তারপর একদিন তুচ্ছ একটা গয়না নিয়ে দু'জনের এমনি ঝগড়া হয়ে গেল যে, আর কখন কেউ কারো মুখ দেখলাম না । মনকে সান্ত্বনা দিলাম, সে আমাকে মোটেই ভালবাসত না, – নাহলে একটা গয়না দেয় না!

আর একবার চন্দ্রমুখী নিজের মনে হাসিয়া উঠিল। পরক্ষণেই শান্ত গম্ভীরমুখে মৃদু মৃদু কহিল—ছাই গয়না! তখন কি জানতাম একটু সামান্য মাথাধরা সারাবার জন্যেও অকাতরে এই প্রাণটা পর্যন্ত দেওয়া যায়! তখন না বুঝতাম সীতা-দময়ন্তীর ব্যথা, না বিশ্বাস করতাম জগাই-মাধাইয়ের কথা। আচ্ছা দেবদাস, এ জগতে সকলই সম্ভব, না?

দেবদাস কিছুই বলিতে পারিল না; হতবুদ্ধির মত ফ্যালফ্যাল করিয়া কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া বলিল, আমি যাই—

ভয় কি, আরো একটু বসো। আমি তোমাকে আর ভুলিয়ে রাখতে চাইনে—সেদিন আমার কেটে গেছে। এখন তুমিও আমাকে যতখানি ঘৃণা কর, আমিও

আমাকে ততখানি ঘৃণা করি; কিন্তু দেবদাস একটা বিয়ে কর না কেন?

এতক্ষণে দেবদাসের যেন নিঃশ্বাস পড়িল; একটু হাসিয়া কহিল, উচিত বটে, কিন্তু প্রবৃত্তি হয় না।

না হলেও কর। ছেলেমেয়ের মুখ দেখলেও অনেক শান্তি পাবে। তা ছাড়া আমারও একটা উপায় হয়। তোমার সংসারে দাসীর মত থেকেও স্বচ্ছন্দে দিন

কাটাতে পারব।

দেবদাস সহাস্যে কহিল, আচ্ছা, তখন তোমাকে ডেকে আনব।

চন্দ্রমুখী তাহার হাসি যেন দেখিতেই পাইল না; কহিল, দেবদাস, আর একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে। কি

তুমি এতক্ষণ আমার সঙ্গে কথা কইলে কেন? কোন দোষ হয়েচে কি?

তা জানিনে। কিন্তু নতুন বটে! মদ খেয়ে জ্ঞান না হারালে, কখন ত পূর্বে আমার মুখ দেখতে না! দেবদাস সে প্রশ্নের জবাব না দিয়া বিষণ্নমুখে কহিল, এখন মদ ছুঁতে নেই—আমার পিতার মৃত্যু হয়েচে । চন্দ্রমুখী বহুক্ষণ করুণচক্ষে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, এর পরে আর খাবে কি? বলতে পারিনে।

চন্দ্রমুখী তাহার হাত-দুটি আর একটু টানিয়া লইয়া অশ্রু-ব্যাকুলস্বরে কহিল, যদি পার ছেড়ে দিয়ো, অসময়ে এমন সোনার প্রাণ নষ্ট করো না । দেবদাস সহসা উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, আমি চললাম। যেখানে যাও, সংবাদ দিয়ো– আর যদি কখনও কিছু প্রয়োজন হয়, আমাকে লজ্জা করো না। চন্দ্রমুখী প্রণাম করিয়া পদধূলি লইয়া বলিল, আশীর্বাদ কর, যেন সুখী হই। আর একটা ভিক্ষা,—ঈশ্বর না করুন, কিন্তু যদি কখন দাসীর প্রয়োজন হয়, আমাকে স্মরণ করো ।

আচ্ছা।—বলিয়া দেবদাস চলিয়া গেল। চন্দ্রমুখী যুক্তকরে কাঁদিয়া বলিল, ভগবান! আর একবার যেন দেখা হয় ।


                         চতুর্দশ পরিচ্ছেদ


বৎসর-দুই হইল পার্বতী মহেন্দ্রের বিবাহ দিয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়াছে। জলদবালা বুদ্ধিমতী ও কর্মপটু। পার্বতীর পরিবর্তে সংসারের অনেক কাজ সে-ই করে। পার্বতী এখন অন্যদিকে মন দিয়াছে। আজ পাঁচ বৎসর হইল তাহার বিবাহ হইয়াছে, কিন্তু সন্তান হয় নাই। নিজের ছেলেপুলে নাই বলিয়া পরের ছেলেমেয়েদের উপর তাহার বড় টান। গরীব-দুঃখীর কথা দূরে থাক, যাহাদের কিছু সংস্থান আছে, তাহাদিগের পুত্র-কন্যারও অধিকাংশ ব্যয়ভার সে-ই বহন করে। ইহা ভিন্ন ঠাকুরবাড়ির কাজ করিয়া, সাধু-সন্ন্যাসীর সেবা করিয়া, অন্ধ খঞ্জের পরিচর্যা করিয়া তাহার দিন কাটিতেছে। স্বামীকে প্রবৃত্তি দিয়া পার্বতী আর একটা অতিথিশালা নির্মাণ করাইয়াছে। সেখানে নিরাশ্রয়, অসহায় লোক ইচ্ছামত থাকিতে পারে— জমিদার-সংসার হইতেই তাহার খাওয়া-পরা মিলে। আর একটা কাজ পার্বতী বড় গোপনে করে, স্বামীকেও তাহা জানিতে দেয় না। দরিদ্র ভদ্র পরিবারে লুকাইয়া অর্থ সাহায্য করে। এটি তাহার নিজের খরচ। স্বামীর নিকট হইতে প্রতি মাসে যাহা পায়, সমস্তই ইহাতে ব্যয় করে। কিন্তু যেমন করিয়া যাহাই ব্যয় হউক, সদর-কাছারির নায়েব-গোমস্তার তাহা জানিতে বাকী থাকে না। নিজেদের মধ্যে তাহারা বলাবলি করিতে থাকে। দাসীরা লুকাইয়া শুনিয়া আসে যে, সংসারে ব্যয় আজকাল ডবলের বেশী বাড়িয়া গিয়াছে; তহবিল শূন্য—কিছুই জমা হইতেছে না। সংসারে বাজে খরচ বৃদ্ধি পাইলে দাসদাসীর যেন তাহা মর্মান্তিক হয়। তাহাদের কাছে জলদ এ-সব কথা শুনিতে পায় । একদিন রাত্রে সে স্বামীকে কহিল, তুমি কি এ বাড়ির কেউ নয়? মহেন্দ্ৰ বলিল, কেন বল দেখি?

স্ত্রী কহিল, দাসদাসীরা দেখতে পায়, আর তুমি পাও না? কর্তার নতুনগিন্নী-অন্ত প্রাণ, তিনি ত আর কিছু বলবেন না; কিন্তু তোমার বলা উচিত ।

মহেন্দ্ৰ কথাটা বুঝিল না, কিন্তু উৎসুক হইয়া উঠিল; জিজ্ঞাসা করিল, কিসের কথা?

জলদবালা গম্ভীর হইয়া স্বামীকে মন্ত্রণা দিতে লাগিল—নতুন মার ছেলেমেয়ে নাই, তাঁর কেন সংসারে টান হবে, সব উড়িয়ে দিলেন, দেখতেও পাও না?

মহেন্দ্র ভ্রূ কুঞ্চিত করিয়া কহিল, কি করে!

জলদ কহিল, তোমার চোখ থাকলে দেখতে পেতে। আজকাল সংসারের দ্বিগুণ খরচ – সদা ব্রত, দান-খয়রাত, অতিথি-ফকির। আচ্ছা, তিনি যেন পরকালের

কাজ করচেন; কিন্তু তোমারও ত ছেলেমেয়ে হবে? তখন তারা খাবে কি? নিজের জিনিস বিলিয়ে দিয়ে কি শেষে ভিক্ষে করবে নাকি? মহেন্দ্র শয্যার উপর উঠিয়া বসিয়া কহিল, তুমি কার কথা বলচ, মার কথা?

জলদ কহিল, আমার পোড়া কপাল যে এ-সব আবার মুখ ফুটে বলতে হয় ।

মহেন্দ্ৰ কহিল, তাই তুমি মার নামে নালিশ করতে এসেচ?

জলদ রাগ করিয়া বলিল, আমার নালিশ-মকদ্দমার দরকার নেই। শুধু ভেতরের খবরটা জানিয়ে দিলুম, নইলে শেষে আমাকেই দোষ দিতে।

মহেন্দ্র অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া কহিল, তোমার বাপের বাড়িতে রোজ হাঁড়ি চড়ে না, তুমি জমিদারের বাড়ির খরচের ব্যাপার কি বোঝ?

এবার জলদও রাগিয়া উঠিল; বলিল, তোমার মার বাপের বাড়িতেই বা ক'টা অতিথিশালা আছে শুনি? মহেন্দ্র আর তর্কাতর্কি না করিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। সকালে উঠিয়া পার্বতীর কাছে আসিয়া কহিল, কি বিয়ে দিলে মা, একে নিয়ে সংসার করাই যে

যায় না। আমি কলকাতায় চললুম।

পার্বতী অবাক হইয়া কহিল, কেন বাবা ?

তোমাদের নামে কটুকথা বলে—ওকে ত্যাগ করলুম।

পার্বতী কিছুদিন হইতেই বড়বৌয়ের আচরণ লক্ষ্য করিয়া আসিতেছিল; কিন্তু সে ভাব চাপা দিয়া হাসিয়া বলিল, ছিঃ বাবা, সে যে আমার বড় ভাল মেয়ে! তার পর সে জলদকে নিভৃতে ডাকিয়া কহিল, বৌমা, ঝগড়া হয়েচে বুঝি?

সকাল হইতেই জলদ স্বামীর কলিকাতা-যাত্রার আয়োজন দেখিয়া মনে মনে ভয় পাইয়াছিল, শাশুড়ীর কথায় কাঁদিয়া ফেলিয়া বলিল, আমারই দোষ মা।

কিন্তু ঐ দাসীরাই খরচপত্রের কথা নিয়ে বলাবলি করে।

পার্বতী তখন সমস্ত শুনিল। নিজে লজ্জিত হইয়া বধূর চোখ মুছাইয়া দিয়া কহিল, বৌমা, তুমি ঠিক বলেচ। কিন্তু আমি মা তেমন সংসারী নই, তাই খরচের

দিকটা আমার স্মরণ ছিল না।

তাহার পর মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, বাবা, বিনাদোষে রাগ করো না — তুমি স্বামী, তোমার মঙ্গলচিন্তার কাছে স্ত্রীর আর সব তুচ্ছ হওয়া উচিত। বৌমা তোমার লক্ষ্মী।

কিন্তু সেইদিন হইতে পার্বতী হাত গুটাইয়া আনিল। অতিথিশালার ঠাকুরবাড়ির আর তেমন সেবা হইল না; অনাথ, অন্ধ, ফকির অনেকে ফিরিয়া যাইতে লাগিল। কর্তা শুনিয়া পার্বতীকে ডাকিয়া কহিলেন, কনেবৌ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার কি ফুরাল নাকি?

পার্বতী সহাস্যে উত্তর দিল, শুধু দিলেই চলবে কেন? দিনকতক জমা করাও ত চাই—দেখচ না, খরচ কত বেড়ে গেছে! তা যাক। আমার আর ক'দিন। দিনকতক সৎকর্ম করে পরকালের দিকটা দেখা উচিত।

পার্বতী হাসিয়া কহিল, এ যে বড় স্বার্থপরের মত কথা গো! নিজেরটাই দেখবে, আর ছেলেমেয়েরা কি ভেসে যাবে? দিনকতক আবার চুপ করে থাকো, তার

পর আবার সব হবে। কাজ মানুষের ত আর ফুরিয়ে যায় না!

কাজেই চৌধুরী মহাশয় নিরস্ত হইলেন ।

পার্বতীর এখন কাজ কমিয়াছে, তাই ভাবনাটা কিছু বাড়িয়াছে। কিন্তু সমস্ত ভাবনারই একটা ধরন আছে। যাহার আশা আছে, সে একরকম করিয়া ভাবে; আর যাহার আশা নাই, সে অন্যরকম ভাবে। পূর্বোক্ত ভাবনার মধ্যে সজীবতা আছে, সুখ আছে, তৃপ্তি আছে, দুঃখ আছে, উৎকণ্ঠা আছে; তাই মানুষকে শান্ত করিয়া আনে—বেশীক্ষণ ভাবিতে পারে না। কিন্তু আশাহীনের সুখ নাই, দুঃখ নাই, উৎকণ্ঠা নাই, অথচ তৃপ্তি আছে। চোখ দিয়া জলও পড়ে, গভীরতাও আছে—কিন্তু নিত্য নূতন করিয়া মর্মভেদ করে না। হালকা মেঘের মত যথা-তথা ভাসিয়া চলে। যেখানে বাতাস লাগে না, সেখানে দাঁড়ায়; আর যেখানে লাগে, সেখান হইতে সরিয়া যায়; তন্ময় মন উদ্বেগহীন চিন্তায় একটা সার্থকতা লাভ করে। পার্বতীর আজকাল ঠিক তাই হইয়াছে। পূজা-আহ্নিক করিতে বসিয়া অস্থির, উদ্দেশ্যহীন হতাশ মনটা চট্ করিয়া একবার তালসোনাপুরের বাঁশঝাড়, আমবাগান, পাঠশালা-ঘর, বাঁধের পাড় প্রভৃতি ঘুরিয়া আসে। আবার হয়ত এমন কোন স্থানে লুকাইয়া পড়ে যে, পার্বতী নিজেকেই খুঁজিয়া বাহির করিতে পারে না। আগে হয়ত ঠোঁটের কোণে হাসি আসিয়াছিল, এখন হয়ত একফোঁটা চোখের জল টপ্ করিয়া কোষার জলের সঙ্গে মিশিয়া যায়। তবু দিন কাটে। কাজ করিয়া, মিষ্ট কথাবার্তা কহিয়া, পরোপকার, সেবাশুশ্রূষা করিয়াও কাটে, আবার সব ভুলিয়া ধ্যানমগ্না যোগিনীর মতও কাটে। কেহ কহে, লক্ষ্মীস্বরূপা অন্নপূর্ণা! কেহ কহে, অন্যমনস্কা উদাসিনী! কিন্তু কাল সকাল হইতে তাহার অন্য এক রকমের পরিবর্তন দেখা দিয়াছে। যেন কিছু তীব্র, কিছু কঠোর। সেই পরিপূর্ণ থমথমে জোয়ার-গঙ্গায় যেন হঠাৎ কোথা হইতে ভাঁটার টান ধরিয়াছে। বাড়ির কেহ কারণ জানে না, শুধু আমরা জানি। মনোরমা কাল গ্রাম হইতে একখানা পত্র লিখিয়াছে। যাহা লিখিয়াছে, তাহা এইরূপ—

পার্বতী, অনেকদিন হইতে দু'জনের কেহ কাহাকেও পত্র লিখি নাই, সেজন্য দোষটা উভয়তঃ হইয়াছে। আমার ইচ্ছা একটা মিটমাট হইয়া যায়। দু'জনেই দোষ স্বীকার করিয়া অভিমানটা কম করি। কিন্তু আমি বড়, তাই আমি মানভিক্ষা চাহিয়া লইলাম। ভরসা করি, শীঘ্র উত্তর দিবে। আজ প্রায় একমাস হইল এখানে আসিয়াছি। আমরা গৃহস্থঘরের মেয়েরা শারীরিক ভালমন্দ তেমন বুঝি না। মরিলে বলি, গঙ্গায় গিয়াছে; আর বাঁচিয়া থাকিলে বলি, ভাল আছে। আমিও তাই ভাল আছি। কিন্তু এ তো গেল নিজের কথা, বাজে কথা। কাজের কথাও এমন যে কিছু আছে, তাও নয়। তবে একটা সংবাদ দিতে বড় ইচ্ছা হইয়াছে। কাল হইতে ভাবিতেছি দিব কিনা। দিলে তোমার ক্লেশ হইবে, না দিলেও আমি বাঁচি না— যেন মারীচের দশা হইয়াছে। দেবদাসের কথা শুনিয়া তোমার ত দুঃখ হইবেই, কিন্তু আমিও যে তোমার কথা মনে করিয়া না কাঁদিয়া থাকিতে পারি না। ভগবান রক্ষা করিয়াছেন, না হইলে তুমি যে অভিমানিনী, তার হাতে পড়িলে এতদিন হয় জলে ডুবিতে, না হয় বিষ খাইতে। আর তার কথা আজ শুনিলেও শুনিবে, দু'দিন পরে হইলেও শুনিবে, কেননা, যে কথা সংসারসুদ্ধ লোকে জানে, তার আর চাপাচাপি কি?

আজ প্রায় ছয়-সাতদিন হইল, সে এখানে আসিয়াছে। তুমি ত জান, জমিদারগৃহিণী কাশীবাসী হইয়াছেন, আর দেবদাস কলিকাতাবাসী হইয়াছে। বাড়ি আসিয়াছে শুধু দাদার সহিত কলহ করিতে, আর টাকা লইতে। শুনিলাম, এমন সে মধ্যে মধ্যে আসে; যতদিন টাকার যোগাড় না হয়, ততদিন থাকে, — টাকা পাইলেই চলিয়া যায়।

তাহার পিতা মরিয়াছেন আজ আড়াই বছর হইল। শুনিয়া আশ্চর্য হইবে, এইটুকু সময়ের মধ্যে সে নাকি তাহার অর্ধেক বিষয় উড়াইয়া দিয়াছে। দ্বিজদাস নাকি বড় হিসাবী লোক, তাই কোনমতে পৈতৃক সম্পত্তি নিজে রাখিয়াছে, না হইলে এতদিনে পাঁচজন লুটিয়া লইত। মদ ও বেশ্যায় সর্বস্বান্ত হইতেছে, কে তাহাকে রক্ষা করিবে? এক পারে যম! আর তারও বোধ হয় বেশী দেরি নাই। সর্বরক্ষা—যে বিবাহ করেনি।

আহা, দুঃখও হয় । সে সোনার বর্ণ নাই, সে রূপ নাই, সে শ্রী নাই—এ যেন আর কেহ! রুক্ষ চুলগুলা বাতাসে উড়িতেছে, চোখ কোটরে ঢুকিয়াছে, নাক যেন খাঁড়ার মত উদ্যত হইয়া উঠিয়াছে। কি কুৎসিত যে হইয়াছে, তোমাকে আর তা কি বলিব! দেখিলে ঘৃণা হয়, ভয় করে। সমস্ত দিন নদীর ধারে, বাঁধের পাড়ে বন্দুক-হাতে পাখি মারিয়া বেড়ায়। আর রৌদ্রে মাথা ঘুরিয়া উঠিলে বাঁধের পাড়ে সেই কুলগাছটার তলায় মুখ নীচু করিয়া বসিয়া থাকে। সন্ধ্যার পর বাড়ি গিয়া মদ খায়—রাত্রে ঘুমায় কি ঘুরিয়া বেড়ায়, ভগবান জানেন ।

সেদিন সন্ধ্যার সময় নদীতে জল আনিতে গিয়াছিলাম; দেখি দেবদাস বন্দুক হাতে ধীরে ধীরে শুষ্কমুখে চলিয়া যাইতেছে। আমাকে চিনিতে পারিয়া কাছে আসিয়া দাঁড়াইল,—আমি ত ভয়ে মরি! ঘাটে জনপ্রাণী নাই— আমি সেদিন আর আমাতে ছিলাম না। ঠাকুর রক্ষা করিয়াছেন যে, কোনরূপ মাতলামী কি বদমায়েসী করে নাই। নিরীহ ভদ্রলোকটির মত শান্তভাবে বলিল, 'মনো, ভাল আছ ত দিদি?'

আমি আর করি কি, ভয়ে ভয়ে ঘাড় নাড়িয়া বলিলাম, 'হুঁ।'

তখন সে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, সুখে থাক বোন, তোদের দেখলে বড় আহ্লাদ হয়'। তারপর আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। আমি উঠি ত

পড়ি—প্রাণপণে ছুটিয়া পলাইলাম। মা গো! ভাগ্যে হাত-টাত কিছু ধরিয়া ফেলে নাই! যাক তার কথা— সে-সব দুর্বৃত্তের কথা লিখিতে গেলে চিঠিতে কুলায় না । বড় কষ্ট দিলাম কি বোন? আজিও তাহাকে যদি না ভুলিয়া থাক ত কষ্ট হইবেই। কিন্তু উপায় কি? আর, সেজন্য রাঙ্গা পায়ে যদি অপরাধ হইয়া থাকে ত নিজ গুণে তোমার স্নেহকাঙ্ক্ষিণী মনোদিদিকে ক্ষমা করিও।

কাল পত্র আসিয়াছিল। আজ সে মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, দুটো পালকি আর বত্রিশ জন কাহার চাই, আমি এখনি তালসোনাপুরে যাব। মহেন্দ্ৰ আশ্চর্য হইয়া প্রশ্ন করিল, পালকি বেহারা আনিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু দুটো কেন মা?

পার্বতী কহিল, তুমি সঙ্গে যাবে বাবা। পথে যদি মরি, মুখে আগুন দেবার জন্য বড়ছেলেকে প্রয়োজন। মহেন্দ্র আর কিছু কহিল না। পালকি আসিলে দুইজনে প্রস্থান করিল।চৌধুরী মহাশয় শুনিতে পাইয়া ব্যস্ত হইয়া দাসদাসীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কেহই কিন্তু কারণ বলিতে পারিল না। তখন তিনি বুদ্ধি খরচ করিয়া আরও পাঁচ- ছ'জন দরোয়ান, , দাসদাসী পাঠাইয়া দিলেন।একজন সিপাহী জিজ্ঞাসা করিল, পথে দেখা হলে পালকি ফিরিয়া আনতে হবে কি?


পার্বতী কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, অদৃষ্ট! মনোরমার সহিত সাক্ষাৎ করিল।

মনো বলিল, পারু কি দেবদাসকে দেখতে এসেছিলে?

তিনি ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিলেন, না, তাতে কাজ নেই। তোমরা সঙ্গে যেয়ো — যেন কোনো বিপদ-আপদ ঘটে না। সেইদিন সন্ধ্যার পর পালকি-দুইটা তালসোনাপুরে পৌছিল, কিন্তু দেবদাস গ্রামে নাই। সেদিন দ্বিপ্রহরে কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছে। লজ্জা আবার কাকে? নিজের জিনিস নিজে নিয়ে যাব—তাতে লজ্জা কি?

পার্বতী বলিল, না, সঙ্গে করে নিয়ে যাবার জন্যে এসেছিলাম। এখানে তার আপনার লোক ত কেউ নেই । মনোরমা অবাক হইল। কহিল, বলিস কি? লজ্জা করত না?

ছিঃ ছিঃ—ও কি কথা! একটা সম্পর্ক পর্যন্ত নেই—অমন কথা মুখে এনো না । পার্বতী স্নানহাসি হাসিয়া কহিল, মনোদিদি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত যে কথা বুকের মাঝে বাসা করে আছে, এক-আধবার তা মুখ দিয়ে বার হয়ে পড়ে। তুমি বোন তাই এ কথা শুনলে ।

পরদিন প্রাতঃকালে পার্বতী পিতামাতার চরণে প্রণাম করিয়া পুনরায় পালকিতে উঠিল ।


                          পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ


আজ দুই বৎসর হইতে অশথঝুরি গ্রামে চন্দ্রমুখী ঘর বাঁধিয়াছে। ছোট নদীর তীরে একটা উঁচু জায়গায় তাহার ঝরঝরে দু'খানি মাটির ঘর; পাশে একটা চালা,তাহাতে কাল রংয়ের একটা পরিপুষ্ট গাভী বাঁধা থাকে। ঘর-দুইটির একটিতে রান্না, ভাঁড়ার; অপরটিতে সে শোয়। উঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, রমা বাগদীর মেয়ে রোজ নিকাইয়া দিয়া যায়। চতুর্দিকে ভেরেণ্ডার বেড়া, মাঝখানে একটা কুলগাছ, আর একপাশে তুলসীর ঝাড়। সম্মুখে নদীর ঘাট — লোক লাগাইয়া, খেজুর গাছ কাটিয়া সিঁড়ি তৈয়ারী করিয়া লইয়াছে। সে ভিন্ন এ ঘাট আর কেহ ব্যবহার করে না। বর্ষার সময় দু'কূল পুরিয়া চন্দ্রমুখীর বাটীর নীচে পর্যন্ত জল আসে। গ্রামের লোক ব্যগ্র হইয়া কোদাল লইয়া ছুটিয়া আসে। নীচে মাটি ফেলিয়া উঁচু করিয়া দিয়া যায়। এ গ্রামে ভদ্রলোকের বাস নাই। চাষা, গোয়ালা, বাগদী, দু'ঘর কলু, আর গ্রামের শেষে ঘর-দুই মুচীর বাস। চন্দ্রমুখী এ গ্রামে আসিয়া দেবদাসকে সংবাদ দেয়; উত্তরে সে আরও কিছু টাকা পাঠাইয়া দেয় । এই টাকা চন্দ্রমুখী গ্রামের লোককে ধার দেয়। আপদে-বিপদে সবাই তাহার কাছে ছুটিয়া আসে— টাকা লইয়া বাড়ি যায়। চন্দ্রমুখী সুদ লয় না—তাহার পরিবর্তে কলাটা, মূলাটা ক্ষেতের শাক-সবজি তাহারা ইচ্ছা করিয়া দিয়া যায়; আসলের জন্যও কখনো পীড়াপীড়ি করে না। যে দিতে পারে না, সে দেয় না।

চন্দ্ৰমুখী হাসিয়া বলে, আর তোকে কখনও দেব না ।

সে নম্রভাবে বলে, মা ঠাকরুন, আশীর্বাদ কর, এবার যেন ভাল ফসল হয়।

চন্দ্রমুখী আশীর্বাদ করে। আবার হয়ত ভাল ফসল হয় না, খাজনার তাগাদা পড়ে—আবার আসিয়া হাত পাতিয়া দাঁড়ায়— চন্দ্ৰমুখী আবার দেয়। মনে মনে হাসিয়া বলে, তিনি বাঁচিয়া থাকুন, আমার টাকার ভাবনা কি!

কিন্তু তিনি কোথায়! প্রায় ছয় মাস হইল, সে কোন সংবাদ পায় নাই। চিঠি লিখিলে জবাব আসে না, রেজেষ্ট্রি করিয়া দিলে ফিরিয়া আসে। একঘর গয়লাকে চন্দ্রমুখী নিজের বাটীর কাছে বসাইয়াছে, তাহার পুত্রের বিবাহে সাড়ে দশ গণ্ডা টাকা পণ দিয়াছে, একজোড়া লাঙ্গল কিনিয়া দিয়াছে। তাহারা সপরিবারে চন্দ্রমুখীর আশ্রিত এবং নিতান্ত অনুগত। একদিন সকালবেলা চন্দ্রমুখী ভৈরব গয়লাকে ডাকিয়া কহিল, ভৈরব, তালসোনাপুর এখান থেকে কতদূর জানো?

ভৈরব চিন্তা করিয়া কহিল, দুটো মাঠ পার হলেই কাছারি।

চন্দ্রমুখী প্রশ্ন করিল, সেখানে বুঝি জমিদার থাকেন?

ভৈরব কহিল, হাঁ, তিনি মুলুকের জমিদার। এ গাঁও তাঁর। আজ তিন বছর হল তিনি স্বর্গে গিয়াছেন; যত প্রজা একমাস ধরে সেখানে নুচিমা খেয়েছিল। এখন তাঁর দুই ছেলে আছে, মস্ত বড়লোক — রাজা ।

চন্দ্রমুখী কহিল, ভৈরব, আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে পার ?

ভৈরব বলিল, কেন পারব না মা, যেদিন ইচ্ছা চল। চন্দ্ৰমুখী উৎসুক হইয়া বলিল, তবে চল না কেন ভৈরব, আমরা আজই যাই।

ভৈরব বিস্মিত হইয়া কহিল, আজই? তারপর চন্দ্রমুখীর মুখের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিল, তা হলে মা তুমি শিগগির রান্না করে নাও, আমিও দুটো মুড়ি বেঁধে

নিই ।

চন্দ্রমুখী বলিল, আমি আর রান্না করব না ভৈরব, তুমি মুড়ি বেঁধে নাও।

ভৈরব বাড়ি গিয়া কিছু মুড়ি ও গুড় চাদরে বাঁধিয়া কাঁধে ফেলিল। একগাছা লাঠি হাতে লইয়া ক্ষণকাল পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, তবে চল; কিন্তু তুমি

কিছু খাবে না মা?

চন্দ্রমুখী বলিল, না ভৈরব, আমার এখনো পূজা-আহ্নিক হয়নি; যদি সময় পাই ত সেখানে গিয়ে ও-সব করব। ভৈরব আগে আগে পথ দেখাইয়া চলিল । পিছনে চন্দ্রমুখী বহু কষ্টে আলের উপর দিয়া চলিতে লাগিল। অনভ্যস্ত কোমল পা-দুটি ক্ষতবিক্ষত হইয়া রক্তাক্ত হইল, রৌদ্রে সমস্ত মুখ আরক্ত হইয়া উঠিল। স্নানাহার কিছুই হয় নাই; তবু চন্দ্রমুখী মাঠের পর মাঠ পার হইয়া চলিতে লাগিল। মাঠের কৃষকেরা আশ্চর্য হইয়া মুখপানে চাহিয়া রহিল ।চন্দ্রমুখীর পরিধানে একখানা লালপেড়ে কাপড়, হাতে দু'গাছা বালা, মাথায় কপালের উপর পর্যন্ত আধ ঘোমটা; সমস্ত দেহ একখানা মোটা বিছানার চাদরে আবৃত। সূর্যদেবের অস্ত যাইতে যখন আর অধিক বিলম্ব নাই, সেই সময়ে দুইজনে গ্রামে আসিয়া উপস্থিত হইল। চন্দ্রমুখী ঈষৎ হাসিয়া কহিল, ভৈরব, তোমার দুটো মাঠ এতক্ষণে কি শেষ হল ? ভৈরব পরিহাসটা বুঝিতে না পারিয়া সরলভাবে বলিল, মাঠাকরুন, এইবার এসেচি; কিন্তু তোমাদের এই সুখী শরীরে আজ কি আর ফিরে যেতে পারবে? চন্দ্ৰমুখী মনে মনে বলিল, আজ কেন, কালও বোধ করি এ পথ হাঁটতে পারব না ।

প্রকাশ্যে কহিল, ভৈরব, গাড়ি পাওয়া যায় না?

ভৈরব বলিল, যায় বৈ কি মা, গরুর গাড়ি ঠিক করব? গাড়ি ঠিক করিতে আদেশ করিয়া চন্দ্রমুখী জমিদারবাটী প্রবেশ করিল।

ভৈরব গাড়ির বন্দোবস্তে অন্যদিকে গেল। অন্দরে উপরের বারান্দায় বড়বৌ (আজকাল জমিদারগৃহিণী) বসিয়া ছিলেন। একজন দাসী সেইখানে চন্দ্রমুখীকে লইয়া উপস্থিত করিল । উভয়ে উভয়কে নিরীক্ষণ করিল ।

চন্দ্রমুখী নমস্কার করিল । বড়বধূর দেহে অলঙ্কার ধরে না, চোখের কোণ দিয়া অহঙ্কার ফাটিয়া পড়িতেছে। ঠোঁট-দুটা ও দাঁতগুলা পান ও মিসিতে প্রায় কালো হইয়া গিয়াছে। একদিকের গাল উঁচু, বোধ হয় দোক্তা আর পানে ভরা আছে। এমন টান করিয়া চুল বাঁধা যে খোঁপাটা মাথার ডগায় উঠিয়াছে। দু'কানে ছোট বড় বিশ-ত্রিশটা মাকড়ি। নাকের একদিকে নাকচাবি, অপর দিকে মস্ত ফুটা—বোধ হয় শাশুড়ির আমলে তাহাতে নথ পরা হইত ।

চন্দ্ৰমুখী দেখিল, বড়বৌয়ের বেশ মোটাসোটা মাজা-ঘষা দেহ, বর্ণ বেশ শ্যাম, বেশ ভাসা চোখ, গোল ধরনের মুখ— পরনে কালাপেড়ে শাড়ি, গায়ে একটা দামী জামা—সেইটা দেখিয়া চন্দ্রমুখীর ঘৃণা বোধ হইল। আর বড়বৌ দেখিলেন, চন্দ্রমুখীর বয়স হইলেও শরীরে রূপ ধরে না। দু'জনেই বোধ করি সমবয়সী, কিন্তু বড়বৌ মনে মনে তাহা স্বীকার করিলেন না। এ গ্রামে পার্বতী ভিন্ন অতখানি রূপ তিনি আর কাহারও দেখেন নাই। আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কে গা?

চন্দ্ৰমুখী কহিল, আমি আপনারই একজন প্রজা; কিছু খাজনা বাকী পড়েচে তাই দিতে এসেচি। বড়বৌ মনে মনে খুশী হইয়া বলিলেন, তা এখানে কেন? কাছারিবাড়ি যাও না ।

চন্দ্ৰমুখী মৃদু হাসিয়া কহিল, মা, আমরা দুঃখী মানুষ, সব খাজনা ত দিতে পারিনে। শুনেচি, আপনার বড় দয়া; তাই আপনার কাছেই এসেচি, দয়া করে কিছু মাপ করে দেন ।

এরূপ কথা বড়বৌ জীবনে এই প্রথম শুনিলেন। তাঁর দয়া আছে, খাজনা মাপ করিতে পারেন—কাজেই চন্দ্রমুখী একেবারে প্রিয়পাত্রী হইয়া পড়িল । বড়বৌ কহিলেন, তা বাছা, দিনের মধ্যে এমন কত টাকা আমাকে ছেড়ে দিতে হয়, কত লোক আমাকে ধরে; আমি না বলতে পারি না, এজন্য কর্তা আমার উপর কত রাগ করেন ।—তা তোমার কত টাকা বাকী পড়েছে?

বেশী নয় মা, মোটে দু'টাকা; কিন্তু আমাদের কাছে তাই যেন পাহাড়; সমস্ত দিন আজ পথ চলে এসেচি। বড়বৌ কহিলেন, আহা, তোমরা দুঃখী লোক, আমাদের দয়া করাই উচিত। ও বিন্দু, একে বাইরে নিয়ে যা, দেওয়ানমশাইকে আমার নাম করে বলে দে, যেন

দু'টাকা মাপ করা হয়। তা বাছা, তোমার বাড়ি কোথায়? চন্দ্রমুখী বলিল, আপনারই রাজত্বে—ওই অশথঝুরি গাঁয়ে। আচ্ছা মা, কর্তারা এখন দু’শরিক, না? বড়বৌ বলিলেন, পোড়া কপাল! ছোট শরিক আর কি আছে? দু'দিন পরে আমারই সব হবে। চন্দ্ৰমুখী উদ্বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কেন মা? ছোটবাবুর বুঝি ধার-কর্জ?



বড়বৌ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, আমার কাছে সব বাঁধা। ঠাকুরপো একেবারে ব'য়ে গেছে! কলকাতায় মদ-বেশ্যা এই নিয়েই আছে। কত টাকা উড়িয়ে দিলে তার কি আদি-অন্ত আছে!

চন্দ্রমুখীর মুখ শুকাইল, একটু থামিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হাঁ মা, ছোটবাবু কি তাহলে বাড়িও আসেন না?

বড়বৌ বলিলেন, আসবে না কেন! যখন টাকার দরকার হয়, আসে। ধার করে, বিষয় দেয়—চলে যায়। এই মাস-দুই হল এসে বার হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বাঁচবার আকারও নেই, গা-ময় কুচ্ছিত রোগ জন্মেচে—ছিঃ ছিঃ—

চন্দ্রমুখী শিহরিয়া উঠিল— মলিনমুখে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কলকাতায় কোথায় থাকেন? বড়বৌ কপালে একটা করাঘাত করিয়া হাসিমুখে কহিলেন, পোড়া দশা! তা কেউ কি জানে? কোথায় কোন্ হোটেলে খায় – যার-তার বাড়িতে পড়ে থাকে—সেই জানে, —আর যম জানে।

চন্দ্ৰমুখী সহসা উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, আমি যাই—

বড়বৌ একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, যাবে? ওরে ও বিন্দু

চন্দ্ৰমুখী বাধা দিয়া বলিল, থাক মা, আমি আপনিই কাছারিতে যেতে পারব, বলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। বাটীর বাহির হইয়া দেখিল, ভৈরব অপেক্ষা করিয়া আছে—গো-শকট প্রস্তুত। সেই রাত্রে চন্দ্রমুখী বাটী ফিরিয়া আসিল। সকালবেলা ভৈরবকে আবার ডাকিয়া কহিল, ভৈরব, আমি আজ কলকাতায় যাব;

তুমি ত যেতে পারবে না, তাই তোমার ছেলেকে সঙ্গে নেব, কি বল?

তোমার ইচ্ছে । কিন্তু কলকাতায় কেন মা, বিশেষ কোন কাজ আছে কি?

হাঁ ভৈরব, বিশেষ কাজ আছে।

আবার কবে আসবে মা?

সে কথা বলতে পারিনে ভৈরব। হয়ত শীঘ্র ফিরে আসব, হয়ত বা দেরি হবে। আর যদি না আসি, এ সব ঘরবাড়ি তোমার রইল।

প্রথমে ভৈরব অবাক হইয়া গেল। তাহার পর তাহার দু'চোখ জলে ভরিয়া গেল। কহিল, ও কি কথা মা! তুমি না এলে এ গাঁয়ে লোক যে কেউ বাঁচবে না । চন্দ্ৰমুখী সজলচক্ষে মৃদু হাসিয়া বলিল, সেকি ভৈরব, আমি দু'বছর হল এখানে এসেচি। তার পূর্বে কি তোমরা বেঁচে ছিলে না? ইহার উত্তর মূর্খ ভৈরব দিতে পারিল না, কিন্তু চন্দ্রমুখী অন্তরে সমস্তই বুঝিল। ভৈরবের ছেলে কেব্‌লা শুধু সঙ্গে যাইবে। গাড়িতে আবশ্যক দ্রব্যাদি বোঝাই করিয়া উঠিবার সময় পাড়ার মেয়ে-পুরুষ সবাই দেখিতে আসিল, দেখিয়া কাঁদিতে লাগিল । চন্দ্রমুখীর নিজের চোখেও জল ধরে না। ছাই কলিকাতা! দেবদাসের জন্য না হইলে কলিকাতার রানীগিরি পাইবার জন্যও চন্দ্ৰমুখী এত ভালবাসা তুচ্ছ করিয়া যাইতে পারিত না।

পরদিন সে ক্ষেত্রমণির বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার পূর্বের বাসাতে এখন অন্য লোক আসিয়াছে। ক্ষেত্রমণি অবাক হইয়া গেল – দিদি যে! কোথায় ছিলে এতদিন? চন্দ্রমুখী সত্য গোপন করিয়া বলিল, এলাহাবাদে ছিলাম।

বড়বৌ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, আমার কাছে সব বাঁধা। ঠাকুরপো একেবারে ব'য়ে গেছে! কলকাতায় মদ-বেশ্যা এই নিয়েই আছে। কত টাকা উড়িয়ে দিলে তার কি আদি-অন্ত আছে!

চন্দ্রমুখীর মুখ শুকাইল, একটু থামিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হাঁ মা, ছোটবাবু কি তাহলে বাড়িও আসেন না?

বড়বৌ বলিলেন, আসবে না কেন! যখন টাকার দরকার হয়, আসে। ধার করে, বিষয় দেয়—চলে যায়। এই মাস-দুই হল এসে বার হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বাঁচবার আকারও নেই, গা-ময় কুচ্ছিত রোগ জন্মেচে—ছিঃ ছিঃ—

চন্দ্রমুখী শিহরিয়া উঠিল— মলিনমুখে জিজ্ঞাসা করিল, তিনি কলকাতায় কোথায় থাকেন? বড়বৌ কপালে একটা করাঘাত করিয়া হাসিমুখে কহিলেন, পোড়া দশা! তা কেউ কি জানে? কোথায় কোন্ হোটেলে খায় – যার-তার বাড়িতে পড়ে থাকে—সেই জানে, —আর যম জানে।

চন্দ্ৰমুখী সহসা উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, আমি যাই—

বড়বৌ একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, যাবে? ওরে ও বিন্দু

চন্দ্ৰমুখী বাধা দিয়া বলিল, থাক মা, আমি আপনিই কাছারিতে যেতে পারব, বলিয়া ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। বাটীর বাহির হইয়া দেখিল, ভৈরব অপেক্ষা করিয়া আছে—গো-শকট প্রস্তুত। সেই রাত্রে চন্দ্রমুখী বাটী ফিরিয়া আসিল। সকালবেলা ভৈরবকে আবার ডাকিয়া কহিল, ভৈরব, আমি আজ কলকাতায় যাব;

তুমি ত যেতে পারবে না, তাই তোমার ছেলেকে সঙ্গে নেব, কি বল?

তোমার ইচ্ছে । কিন্তু কলকাতায় কেন মা, বিশেষ কোন কাজ আছে কি?

হাঁ ভৈরব, বিশেষ কাজ আছে।

আবার কবে আসবে মা?

সে কথা বলতে পারিনে ভৈরব। হয়ত শীঘ্র ফিরে আসব, হয়ত বা দেরি হবে। আর যদি না আসি, এ সব ঘরবাড়ি তোমার রইল।

প্রথমে ভৈরব অবাক হইয়া গেল। তাহার পর তাহার দু'চোখ জলে ভরিয়া গেল। কহিল, ও কি কথা মা! তুমি না এলে এ গাঁয়ে লোক যে কেউ বাঁচবে না । চন্দ্ৰমুখী সজলচক্ষে মৃদু হাসিয়া বলিল, সেকি ভৈরব, আমি দু'বছর হল এখানে এসেচি। তার পূর্বে কি তোমরা বেঁচে ছিলে না? ইহার উত্তর মূর্খ ভৈরব দিতে পারিল না, কিন্তু চন্দ্রমুখী অন্তরে সমস্তই বুঝিল। ভৈরবের ছেলে কেব্‌লা শুধু সঙ্গে যাইবে। গাড়িতে আবশ্যক দ্রব্যাদি বোঝাই করিয়া উঠিবার সময় পাড়ার মেয়ে-পুরুষ সবাই দেখিতে আসিল, দেখিয়া কাঁদিতে লাগিল । চন্দ্রমুখীর নিজের চোখেও জল ধরে না। ছাই কলিকাতা! দেবদাসের জন্য না হইলে কলিকাতার রানীগিরি পাইবার জন্যও চন্দ্ৰমুখী এত ভালবাসা তুচ্ছ করিয়া যাইতে পারিত না।

পরদিন সে ক্ষেত্রমণির বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার পূর্বের বাসাতে এখন অন্য লোক আসিয়াছে। ক্ষেত্রমণি অবাক হইয়া গেল – দিদি যে! কোথায় ছিলে এতদিন? চন্দ্রমুখী সত্য গোপন করিয়া বলিল, এলাহাবাদে ছিলাম।


সে চলিয়া গেলে চন্দ্রমুখী বহুদিন পূর্বের মত আবার জানালার পার্শ্বে উপবেশন করিল। নির্নিমেষচক্ষে রাস্তার পানে চাহিয়া রহিল। এই তাহার কাজ; এই করিতে সে আসিয়াছে—যতদিন এখানে থাকিবে, ততদিন ইহাই করিবে। নূতন লোক কেহ হয়ত আসিতে চায়, দ্বার ঠেলাঠেলি করে; কেবলরাম মুখস্থর মত

ভিতর হইতে কহে – এখানে নয় ।

পুরাতন পরিচিত কেহ বা আসিয়া উপস্থিত হয়। চন্দ্রমুখী বসাইয়া হাসিয়া কথা কহে, কথায় কথায় দেবদাসের কথা জিজ্ঞাসা করে। তাহারা বলিতে পারে না—অমনি বিদায় করিয়া দেয়। রাত্রি অধিক হইলে নিজে বাহির হইয়া পড়ে। পাড়ায় পাড়ায় দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া বেড়ায়। অলক্ষ্যে দ্বারে দ্বারে কান পাতিয়া কথাবার্তা শুনিতে চায়—নানা লোকে নানা কথা বলে, যাহা শুনিতে চায়, তাহা কিন্তু শোনা যায় না— কেহ বা মুখ ঢাকিয়া হঠাৎ মুখের কাছে আসিয়া উপস্থিত হয়—স্পর্শ করিবার জন্য হাত বাড়ায়— শশব্যস্ত চন্দ্রমুখী সরিয়া যায়। দুপুরবেলা পুরাতন পরিচিত সঙ্গিনীদের বাড়ি বেড়াইতে যায়। কথায় কথায় প্রশ্ন

করে,—কেহ দেবদাসকে জান?

তাহারা জিজ্ঞাসা করে, কে দেবদাস ?

চন্দ্রমুখী উৎসুক হইয়া পরিচয় দিতে থাকে— গৌরবর্ণ, মাথায় কোঁকড়া চুল, কপালের বাঁ দিকে একটা কাটা দাগ, বড়লোক—অজস্র টাকা খরচ করে, কেউ চেন কি?

কেহই সন্ধান দিতে পারে না। হতাশ বিষণ্নমুখে চন্দ্রমুখী বাড়ি ফিরিয়া যায়। গভীর রাত্রি পর্যন্ত জাগিয়া রাস্তার পানে চাহিয়া থাকে। ঘুম পাইলে বিরক্ত হয়; মনে মনে কহে, এ কি তোমার ঘুমাইবার সময়?

ক্রমে একমাস অতীত হইল, কেবলরামও ব্যস্ত হইয়া উঠিল। চন্দ্রমুখীর নিজেরও সন্দেহ হইতে লাগিল, বুঝি সে এখানে নাই। তবুও আশায় ভর করিয়া

দেবতার চরণে কায়মনে প্রার্থনা করিয়া দিনের পর দিন অতিবাহিত করিতে লাগিল।

কলিকাতা আসিবার পর দেড়মাস গত হইয়াছে। আজ রাত্রে তাহার অদৃষ্ট প্রসন্ন হইল। রাত্রি তখন এগারোটা — হতাশমনে বাড়ি ফিরিতেছিল, দেখিতে পাইল, পথের ধারে একটা ঘরের সম্মুখে একজন আপনার মনে কি বলিতেছে। চন্দ্রমুখীর বুকের মধ্যে ধড়াস করিয়া উঠিল। এ কণ্ঠস্বর যে পরিচিত! কোটি- কোটি লোকের মধ্যেও চন্দ্রমুখী সে স্বর বুঝিতে পারিত। স্থানটা একটু অন্ধকার, তাহাতে আবার লোকটা অত্যন্ত মাতাল হইয়া উপুড় হইয়া পড়িয়া আছে।

চন্দ্ৰমুখী নিকটে গিয়া হাত দিল—তুমি কে গা, এমন করে পড়ে আছ?

লোকটা সুর করিয়া বলিল,- ,শুন সই, মনের মানুষ কই; যদি পাই কানু হেন স্বামী—

চন্দ্রমুখীর আর সন্দেহ নাই, ডাকিল, দেবদাস?

দেবদাস সেইভাবে বলিল, উঁ।

এখানে পড়ে কেন, ঘরে যাবে?

না, বেশ আছি—

একটু মদ খাবে ?

'খাব' বলিয়া সে একেবারে চন্দ্রমুখীর গলা জড়াইয়া ধরিল, কহিল— এমন বন্ধু কে বাবা তুমি?

চন্দ্রমুখীর চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। তখন বহু পরিশ্রমে টলিয়া টলিয়া তাহার গলা ধরিয়া কোনক্রমে উঠিয়া দাঁড়াইয়া কিছুক্ষণ মুখপানে চাহিয়া বলিল, বাঃ, এ যে খাসা জিনিস!

চন্দ্রমুখীর কান্নায় হাসি মিশিল; কহিল, হাঁ, বেশ জিনিস; এখন আপাতত আমার কাঁধে ভর দিয়ে একটু এগিয়ে চল, একটা গাড়ি চাই ত! তা চাই বৈ কি! পথে আসিতে আসিতে দেবদাস জড়িতকণ্ঠে কহিল, সুন্দরী, আমাকে তুমি চেন? চন্দ্ৰমুখী কহিল, চিনি।

দেবদাস গাহিয়া উঠিল, – অন্য লোকে ভুয়া দেয় ভাগ্যে আমি চিনি—তাহার পর গাড়িতে বসিয়া চন্দ্রমুখীর কাঁধে ভর দিয়া বাটী আসিয়া উপস্থিত হইল। দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া পকেটে হাত দিয়া কহিল, সুন্দরী! কুড়িয়ে ত আনলে, কিন্তু পকেটে যে কিছু নেই—

চন্দ্রমুখী নীরবে তাহার হাত ধরিয়া টানিয়া আনিয়া একেবারে বিছানায় শোয়াইয়া দিয়া কহিল, ঘুমোও।

দেবদাস তেমনি জড়িতকণ্ঠে কহিল, কিছু মতলব আছে নাকি? এই যে বললাম পকেট খালি, – কিছু আশা নেই। বুঝলে রূপসী!

রূপসী তাহা বুঝিয়াছিল; কহিল, কাল দিয়ো।

দেবদাস বলিল, এতটা বিশ্বাস ত ভাল নয়—কি চাও খুলে বল দেখি?

চন্দ্রমুখী কহিল, কাল শুনো— বলিয়া পাশের ঘরে চলিয়া গেল । দেবদাসের যখন ঘুম ভাঙ্গিল তখন বেলা হইয়াছিল। ঘরে কেহ ছিল না।

চন্দ্রমুখী স্নান করিয়া নীচে রান্নার উদ্যোগে গিয়াছে। দেবদাস চাহিয়া দেখিল, এ ঘরে কখন সে আসে নাই, একটি জিনিসও চিনিতে পারিল না। তাহার গত রাত্রের কোন কথাই মনে পড়িল না; শুধু স্মরণ হইল কাহার একটা আন্তরিক সেবা। কে যেন বড় স্নেহ করিয়া টানিয়া আনিয়া ঘুম পাড়াইয়া দিয়াছিল। এই সময়ে চন্দ্রমুখী ঘরে প্রবেশ করিল। রাত্রের সাজসজ্জার সে অনেকখানি পরিবর্তন করিয়াছিল। গায়ে গহনাগুলি ছিল বটে, কিন্তু পরনে রঙ্গিন কাপড়, কপালে টিপ, মুখে পানের দাগ—এ-সকল ছিল না। নিতান্তই একখানি সাদাসিধা কাপড় পরিয়া ঘরে ঢুকিয়াছিল। দেবদাস মুখপানে চাহিয়া হাসিয়া উঠিল, কোথা থেকে কাল আমাকে ডাকাতি করে আনলে?

চন্দ্রমুখী বলিল, ডাকাতি করিনি— পথ থেকে শুধু কুড়িয়ে এনেছিলাম ।

দেবদাস হঠাৎ গম্ভীর হইয়া বলিয়া উঠিল, তা যেন হল, কিন্তু তোমার আবার এ-সব কি! কবে এলে? গায়ে যে গয়না ধরে না— দিলে কে?

চন্দ্রমুখী দেবদাসের মুখের প্রতি তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, আবার! দেবদাস হাসিয়া কহিল, না না—তা নয়; একটা তামাশা করতেও কি দোষ? এলে কবে?

চন্দ্ৰমুখী বলিল, দেড়-মাস হল।

দেবদাস মনে মনে যেন কি হিসাব করিল । পরে কহিল, আমাদের বাড়ি যখন গিয়েছিলে, তার পরেই এসেচ? চন্দ্ৰমুখী বিস্মিত হইয়া কহিল, তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম—কি করে জানলে?

দেবদাস কহিল, তুমি যাবার পরেই আমি বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন দাসী – যে তোমাকে বৌঠাকরুনের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, তার কাছেই শুনতে পাই,—কাল অশথঝুরি গাঁ থেকে একজন স্ত্রীলোক এসেছিল, সে ভারী সুন্দরী । আর কি বুঝতে বাকী থাকে! কিন্তু এত গয়না আবার গড়ালে কেন?

চন্দ্রমুখী বলিল, গড়াই নি, এ-সব গিল্টির গয়না, কলকাতায় এসে কিনেচি। তবুও দেখ দেখি, তোমার জন্য আমার কত বাজে খরচ করতে হল! অথচ কাল আমাকে তুমি চিনতেও পারলে না।

দেবদাস হাসিয়া উঠিল; বলিল, একেবারে চিনতে পারিনি, কিন্তু যত্নটি চিনেছিলাম। অনেকবার মনে হয়েছিল, আমার চন্দ্রমুখী ছাড়া এত যত্ন কার? আনন্দে চন্দ্রমুখীর কাঁদিতে সাধ হইল। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, দেবদাস, আমাকে আর তত ঘৃণা কর না-না ?

দেবদাস জবাব দিল, না। বরং ভালবাসি।

দুপুরবেলা স্নান করিবার সময় চন্দ্রমুখী দেখিল, দেবদাসের পেটে একখণ্ড ফ্লানেল বাঁধা আছে। ভয় পাইয়া বলিল, ও কি, ফ্লানেল বেঁধেছ কেন? দেবদাস বলিল, পেটে একটু ব্যথা বোধ করি—তুমি অমন করচ কেন?

চন্দ্রমুখী কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, সর্বনাশ করনি ত? লিভারে ব্যথা হয়নি ত? দেবদাস হাসিয়া কহিল, চন্দ্রমুখী, বোধ হয় তাই হয়েচে।

সেইদিন ডাক্তার আসিয়া বহুক্ষণ পরীক্ষা করিয়া ঠিক এই আশঙ্কাই করিয়া গেলেন, ঔষধ দিলেন, এবং জানাইলেন যে যথেষ্ট সাবধানে না থাকিলে বিষম অনিষ্ট ঘটিতে পারে। অর্থ উভয়েই বুঝিল। বাসায় সংবাদ দিয়া ধর্মদাসকে আনা হইল, চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্ক হইতে টাকা আনা হইল। দু'দিন অমনি গেল, কিন্তু তৃতীয় দিনে তাহার জ্বর দেখা দিল।

দেবদাস চন্দ্রমুখীকে ডাকিয়া কহিল, খুব সময়ে এসেছিলে, নাহলে হয়ত আর দেখতেই পেতে না। চোখ মুছিয়া চন্দ্ৰমুখী প্ৰাণপণে সেবা করিতে বসিল। যুক্তকরে প্রার্থনা করিল, ভগবান, অসময়ে এতখানি কাজে লাগিব, এ আশা স্বপ্নেও করি নাই, কিন্তু দেবদাসকে ভাল করিয়া দাও ।

প্রায় মাসাধিক কাল দেবদাস শয্যায় পড়িয়া রহিল, তাহার পর ধীরে ধীরে আরোগ্য হইতে লাগিল, অসুখ তেমন গুরুতর হইতে পারিল না । এই সময়ে একদিন দেবদাস কহিল, চন্দ্রমুখী, তোমার নামটা মস্ত বড়, সর্বদা ডাকতে অসুবিধা হয়, – একটু ছোট করে নিতে চাই। -

চন্দ্ৰমুখী বলিল, বেশ ত ।

দেবদাস কহিল, তবে আজ থেকে তোমাকে বৌ বলে ডাকব ।

চন্দ্ৰমুখী হাসিয়া উঠিল। কহিল, তা যেন ডাকলে কিন্তু একটা মানে থাকা ত চাই ।

সব কথার কি মানে থাকে?

যদি সাধ হয়ে থাকে, তাই ডেকো, কিন্তু এ সাধ কেন তাও বলবে না?

না; কখনো কারণ জিজ্ঞাসা করতেও পাবে না ।

চন্দ্ৰমুখী ঘাড় নাড়িয়া বলিল, বেশ তাই হবে।

দেবদাস অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হঠাৎ গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করিয়া বসিল, আচ্ছা বৌ, তুমি আমার কে যে এত প্রাণপণে আমার সেবা করচ? চন্দ্ৰমুখী লজ্জাবনত বধূ নহে, অ-বাকপটু বালিকাও নহে; মুখপানে স্থির শান্ত দৃষ্টি রাখিয়া স্নেহজড়িতকণ্ঠে কহিল, তুমি আমার সর্বস্ব—তা কি আজও বুঝতে পারনি!

দেবদাস দেয়ালের দিকে চাহিয়া ছিল। সেই দিকেই দৃষ্টি রাখিয়া ধীরে ধীরে বলিতে লাগিল, তা পেরেচি, কিন্তু তেমন আনন্দ পাইনে। পার্বতীকে কত ভালবাসি, সে আমাকে কত ভালবাসে, কিন্তু তবু কি কষ্ট! অনেক দুঃখ পেয়ে ভেবেছিলাম, আর কখনো এ-সব ফাঁদে পা দেব না; ইচ্ছে করে দিইও নি। কিন্তু তুমি এমন কেন করলে? জোর করে আমাকে কেন বাঁধলে? বলিয়া আবার কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া কহিল, বৌ, তুমিও হয়ত পার্বতীর মতই কষ্ট পাবে।

চন্দ্ৰমুখী মুখে অঞ্চল দিয়া শয্যার একপ্রান্তে নিঃশব্দে বসিয়া রহিল।

দেবদাস পুনরায় মৃদুকণ্ঠে বলিতে লাগিল, তোমাদের দু'জনে কত অমিল, আবার কত মিল। একজন অভিমানী, উদ্ধত, আর একজন কত শান্ত, কত সংযত । সে কিছুই সইতে পারে না, আর তোমার কত সহ্য! তার কত যশ, কত সুনাম, আর তোমার কত কলঙ্ক! সবাই তাকে কত ভালবাসে, আর কেউ তোমাকে ভালবাসে না। তবে আমি ভালবাসি, বাসি বৈ কি! বলিয়া মোটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া পুনরায় কহিল, পাপ-পুণ্যের বিচারকর্তা তোমার কি বিচার করবেন জানিনে; কিন্তু মৃত্যুর পরে যদি আবার মিলন হয়, আমি কখনো তোমা হতে দূরে থাকতে পারব না ।

চন্দ্রমুখে নীরবে কাঁদিয়া বুক ভাসাইয়া দিল; মনে মনে প্রার্থনা করিতে লাগিল, ভগবান, কোনকালে, কোন জন্মে যদি এ পাপিষ্ঠার প্রায়শ্চিত্ত হয়, আমাকে যেন এই পুরস্কার দিয়ো ।

মাস-দুই অতিবাহিত হইয়াছে। দেবদাস আরোগ্যলাভ করিয়াছে, কিন্তু শরীর সারে নাই। বায়ুপরিবর্তন আবশ্যক। কাল পশ্চিমে বেড়াইতে যাইবে, সঙ্গে শুধু

ধর্মদাস যাইবে।

চন্দ্রমুখী ধরিয়া বসিয়াছিল, তোমার একজন দাসীরও ত প্রয়োজন, আমাকে সঙ্গে যেতে দাও। দেবদাস বলিল, ছিঃ, তা হয় না! আর যাই করি, এতবড় নির্লজ্জ হতে পারব না ।

চন্দ্রমুখী একেবারে মৌন হইয়া গেল। সে অবুঝ নয়, তাই সহজেই বুঝিল। আর যাহাই হোক, এ জগতে তাহার সম্মান নাই। তাহার সংস্পর্শে দেবদাস সুখ পাইবে, সেবা পাইবে, কিন্তু কখনো সম্মান পাইবে না। চোখ মুছিয়া কহিল, আবার কবে দেখা পাব?

দেবদাস কহিল, বলতে পারিনে, তবে বেঁচে থাকতে তোমাকে কোনদিন ভুলব না, তোমাকে দেখবার তৃষ্ণা আমার কখনো মিটবে না । প্রণাম করিয়া চন্দ্রমুখী সরিয়া দাঁড়াইল। চুপি চুপি বলিল, এই আমার যথেষ্ট। এর বেশী আশা করিনে।

যাবার সময় দেবদাস আরও দু'হাজার টাকা চন্দ্রমুখীর হাতে দিয়া কহিল, রেখে দাও। মানুষের শরীরে ত বিশ্বাস নেই; শেষে তুমি কি অকূলে ভাসবে! চন্দ্ৰমুখী ইহাও বুঝিল, তাই হাত পাতিয়া অর্থ গ্রহণ করিল। চোখ মুছিয়া জিজ্ঞাসা করিল, তুমি একটি কথা আমাকে বলে যাও— দেবদাস মুখপানে চাহিয়া বলিল, কি?

চন্দ্রমুখী কহিল, বড়বৌঠাকরুন বলেছিলেন, তোমার শরীরে খারাপ রোগ জন্মেচে—এ কি সত্য?

প্রশ্ন শুনিয়া দেবদাস দুঃখিত হইল; কহিল, বড়বৌ সব পারেন; কিন্তু তাহলে তুমি জানতে না? আমার কোন্ কথা তোমার জানা নেই? এ বিষয়ে তুমি যে পার্বতীরও বেশী।

চন্দ্রমুখী আর একবার চোখ মুছিয়া কহিল, বাঁচলুম । কিন্তু তবুও খুব সাবধানে থেকো। তোমার শরীর একে মন্দ, তার ওপর দেখো, কোনদিন ভুল করে বসো না।

প্রত্যুত্তরে দেবদাস শুধু হাসিল, কথা কহিল না।

চন্দ্রমুখী কহিল, আর একটি ভিক্ষে—দেহ এতটুকু খারাপ হলেই আমাকে খবর দেবে বল ? দেবদাস তাহার মুখপানে চাহিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিল – দেব বৈ কি বৌ! - আর একবার প্রণাম করিয়া চন্দ্রমুখী কাঁদিয়া কক্ষান্তরে পলাইয়া গেল ।


                           ষোড়শ পরিচ্ছেদ


কলিকাতা ত্যাগ করিয়া কিছুদিন যখন দেবদাস এলাহাবাদে বাস করিতেছিল, তখন হঠাৎ একদিন সে চন্দ্রমুখীকে চিঠি লিখিয়াছিল, বৌ, মনে করেছিলাম, আর কখনো ভালবাসব না। একে ত ভালবেসে শুধুহাতে ফিরে আসাটাই বড় যাতনা, তার পরে আবার নূতন করে ভালবাসতে যাওয়ার মত বিড়ম্বনা সংসারে আর নেই ।

প্রত্যুত্তরে চন্দ্রমুখী কি লিখিয়াছিল তাহাতে আবশ্যক নাই; কিন্তু এই সময়টায় দেবদাসের কেবলই মনে হইত, সে একবার এলে হয় না! পরক্ষণে সভয়ে ভাবিত—না, না, কাজ নেই,— কোনদিন পার্বতী যদি জানতে পারে! এমনি করিয়া একবার পার্বতী, একবার চন্দ্রমুখী তাহার হৃদয়রাজ্যে বাস করিতেছিল । কখনও বা দু'জনের মুখই পাশাপাশি তাহার হৃদয়পটে ভাসিয়া উঠিত—যেন উভয়ের কত ভাব!

মনের মাঝে দু'জনেই পাশাপাশি বিরাজ করিত। কোনদিন বা অত্যন্ত অকস্মাৎ মনে হইত, তাহারা দু'জনেই যেন ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এই সময়টায় মনটা তাহার এমনি অন্তঃসারশূন্য হইয়া পড়িত যে, শুধু একটা নির্জীব অতৃপ্তিই তাহার মনের মধ্যে মিথ্যা প্রতিধ্বনির মত ঘুরিয়া বেড়াইত। তার পরে দেবদাস লাহোরে চলিয়া গেল । এখানে চুনিলাল কাজ করিতেছিল, সন্ধান পাইয়া দেখা করিতে আসিল। বহুদিন পরে দেবদাস সুরা স্পর্শ করিল। চন্দ্রমুখীকে মনে পড়ে, সে নিষেধ করিয়া দিয়াছিল। মনে হয়, তার কত বুদ্ধি। সে কত শান্ত, ধীর; আর তার কত স্নেহ। পার্বতী এখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল—শুধু নির্বাণোন্মুখ দীপশিখার মত কখনো কখনো জ্বলিয়া জ্বলিয়া উঠিত। কিন্তু এখানকার জলবায়ু তাহার সহিল না। মাঝে মাঝে অসুখ হয়, পেটের কাছে আবার যেন ব্যথা বোধ হয়। ধর্মদাস একদিন কাঁদ-কাঁদ হইয়া কহিল, দেতা, তোমার শরীর আবার খারাপ হচ্ছে—আর কোথাও চল। দেবদাস অন্যমনস্কভাবে জবাব দিল, চল যাই।দেবদাস প্রায় বাসাতে মদ খায় না। চুনিলাল আসিলে কোনদিন খায়, কোন দিন বাহির হইয়া চলিয়া যায়। রাত্রিশেষে বাটী ফিরিয়া আসে, কোন রাত্রি বা একেবারেই আসে না। আজ দুইদিন হইতে হঠাৎ তাহার দেখা নাই। কাঁদিয়া ধর্মদাস অন্নজল স্পর্শ করিল না। তৃতীয় দিনে দেবদাস জ্বর লইয়া বাটী ফিরিয়া আসিল; শয্যা লইল, আর উঠিতে পারিল না। তিন-চারিজন ডাক্তার আসিয়া চিকিৎসা করিতে লাগিল ।

ধর্মদাস কহিল, দেবৃতা, কাশীতে মাকে খবর দিই—

দেবদাস তাড়াতাড়ি বাধা দিয়া কহিয়া উঠিল, ছিঃ ছিঃ—মাকে কি এ মুখ দেখাতে পারি?

ধর্মদাস প্রতিবাদ করিল, রোগ-শোক সকলেরই আছে; কিন্তু তাই বলে কি এতবড় বিপদের দিনে মাকে লুকানো যায়? তোমার কোন লজ্জা নাই, দেবতা, কাশীতে চল ।

দেবদাস মুখ ফিরাইয়া কহিল, না, ধর্মদাস, এ সময়ে তাঁর কাছে যেতে পারব না। ভাল হই, তার পরে ।

ধর্মদাস একবার মনে করিল, চন্দ্রমুখীর উল্লেখ করে; কিন্তু নিজে তাহাকে এত ঘৃণা করিত যে, তাহার মুখ মনে পড়িবামাত্রই চুপ করিয়া রহিল । দেবদাসের নিজেরও অনেকবার এ কথা মনে হইত; কিন্তু কোন কথা বলিতে ইচ্ছা করিত না। সুতরাং কেহই আসিল না। তার পর অনেক দিনে সে ধীরে

ধীরে আরোগ্য হইতে লাগিল । একদিন সে উঠিয়া বসিয়া বলিল, চল ধর্মদাস, এইবার আর কোথাও যাই ।

আর কোথাও গিয়ে কাজ নেই ভাই, হয় বাড়ি চল, না হয় মায়ের কাছে চল। জিনিসপত্র বাঁধিয়া চুনিলালের নিকট বিদায় লইয়া, দেবদাস আবার এলাহাবাদে আসিয়া উপস্থিত হইল—শরীরটা অনেকটা ভাল। কিছুদিন থাকিবার পর একদিন দেবদাস কহিল, ধর্ম কোন নূতন জায়গায় গেলে হয় না? কখনো বোম্বাই দেখিনি, যাবে?

আগ্রহ দেখিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও ধর্মদাস মত দিল। সময়টা জ্যৈষ্ঠ মাস; বোম্বাই শহর তেমন গরম নয়। এখানে আসিয়া দেবদাস অনেকটা সারিয়া উঠিল।

ধর্মদাস জিজ্ঞাসা করিল, এখন বাড়ি গেলে হয় না? দেবদাস কহিল, না, বেশ আছি। আমি এখানেই আর কিছুদিন থাকব।

এক বৎসর অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে। ভাদ্র মাসের সকালবেলায়, একদিন দেবদাস ধর্মদাসের কাঁধে ভর দিয়া বোম্বাই হাসপাতাল হইতে বাহির হইয়া গাড়িতে আসিয়া বসিল। ধর্মদাস কহিল, দেবৃতা, আমি বলি, মায়ের কাছে যাওয়া ভাল ।

দেবদাসের দু'চক্ষু জলে ভরিয়া গেল— আজ কয়দিন হইতে মাকে তাহার কেবল মনে পড়িতেছিল। হাসপাতালে পড়িয়া যখন তখন এই কথাই ভাবিয়াছে,—এ সংসারে তাহার সবই আছে, অথচ কেহই নাই। তাহার মা আছেন, বড় ভাই আছেন, ভগিনীর অধিক পার্বতী আছে—চন্দ্রমুখীও আছে! তাহার সবাই আছে, কিন্তু সে আর কাহারও নাই। ধর্মদাসও কাঁদিতেছিল; কহিল, তাহলে দাদা, মায়ের কাছে যাওয়াই স্থির?

দেবদাস মুখ ফিরাইয়া অশ্রু মুছিল; বলিল, না ধর্মদাস, মাকে এ মুখ দেখাতে ইচ্ছা হয় না, – আমার এখনো বোধ করি সে সময় আসেনি। বৃদ্ধ ধর্মদাস হাউহাউ করিয়া কাঁদিয়া কহিল, দাদা, এখনো যে মা বেঁচে আছেন!

কথাটায় কতখানি যে প্রকাশ করিল, তাহা অন্তরে উভয়েই অনুভব করিল। দেবদাসের অবস্থা অত্যন্ত মন্দ হইয়াছে। সমস্ত পেট প্লীহা-লিভারে পরিপূর্ণ; তাহার উপর জ্বর, কাশি। রঙ গাঢ় কৃষ্ণবর্ণ, দেহ অস্থিচর্মসার। চোখ একেবারে ঢুকিয়া গিয়াছে, শুধু একটা অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতায় চকচক করিতেছে। মাথায়

চুল রুক্ষ ও ঋজু—চেষ্টা করিলে বোধ হয় গুণিতে পারা যায়। হাতের আঙ্গুলগুলার পানে চাহিলে ঘৃণা বোধ হয়—একে শীর্ণ, তাহাতে আবার কুৎসিত ব্যাধির

দাগে দুষ্ট । স্টেশনে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কোথাকার টিকিট কিনব দেবতা? দেবদাস ভাবিয়া চিন্তিয়া কহিল, চল বাড়ি যাই—তার পর সব হবে।

গাড়ির সময় হইলে তাহারা হুগলির টিকিট কিনিয়া চাপিয়া বসিল ।

ধর্মদাস দেবদাসের নিকটেই রহিল। সন্ধ্যার পূর্বে দেবদাসের চোখ জ্বালা করিয়া আবার জ্বর আসিল। ধর্মদাসকে ডাকিয়া কহিল,ধর্মদাস, আজ মনে হচ্চে,

বাড়ি পৌঁছনও হয়ত কঠিন হবে।

ধর্মদাস সভয়ে কহিল, কেন দাদা? দেবদাস হাসিবার চেষ্টা করিয়া শুধু বলিল, আবার যে জ্বর হল, ধর্মদাস।

কাশীর পথ যখন পার হইয়া গেল, দেবদাস তখন জ্বরে অচেতন। পাটনার কাছাকাছি তাহার হুঁশ হইল, কহিল, তাইত ধর্মদাস, মায়ের কাছে যাওয়া সত্যিই

আর ঘটল না।

ধর্মদাস কহিল, চল দাদা, আমরা পাটনায় নেমে গিয়ে ডাক্তার দেখাই—

উত্তরে দেবদাস বলিল, না থাক, আমরা বাড়ি যাই চল।

গাড়ি যখন পাণ্ডুয়া স্টেশনে আসিয়া উপস্থিত হইল, তখন ভোর হইতেছে। সারারাত্রি বৃষ্টি হইয়াছিল, এখন থামিয়াছে। দেবদাস উঠিয়া দাঁড়াইল। নীচে ধর্মদাস নিদ্রিত। ধীরে ধীরে একবার তাহার ললাট স্পর্শ করিল, লজ্জায় তাহাকে জাগাইতে পারিল না। তার পর দ্বার খুলিয়া আস্তে আস্তে বাহির হইয়া পড়িল । গাড়ি সুপ্ত ধর্মদাসকে লইয়া চলিয়া গেল। কাঁপিতে কাঁপিতে দেবদাস স্টেশনের বাহিরে আসিল। একজন ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ানকে ডাকিয়া বলিল, বাপু,

হাতীপোতায় নিয়ে যেতে পারবে?

সে একবার মুখপানে চাহিল, একবার এদিক-ওদিক চাহিল, তাহার পর কহিল, না বাবু, রাস্তা ভাল নয়— ঘোড়ার গাড়ি এ বর্ষায় ওখানে যেতে পারবে না। দেবদাস উদ্বিগ্ন হইয়া প্রশ্ন করিল, পালকি পাওয়া যায়?

গাড়োয়ান বলিল, না।

আশঙ্কায় দেবদাস বসিয়া পড়িল—তবে কি যাওয়া হবে না? তাহার মুখের উপরেই তাহার অন্তিম অবস্থা গাঢ় মুদ্রিত ছিল, অন্ধেও তাহা পড়িতে পারিত।

গাড়োয়ান আর্দ্র হইয়া কহিল, বাবু, একটা গরুর গাড়ি ঠিক করে দেব?

দেবদাস জিজ্ঞাসা করিল, কতক্ষণে পৌঁছবে?

গাড়োয়ান বলিল, পথ ভাল নয় বাবু, বোধ হয় দিন-দুই লেগে যাবে।

দেবদাস মনে মনে হিসাব করিতে লাগিল, দু'দিন বাঁচব ত? কিন্তু পাবর্তীর কাছে যাইতেই হইবে। তাহার অনেক দিনের অনেক মিথ্যা কথা, অনেক মিথ্যা আচরণ স্মরণ হইল। কিন্তু শেষদিনের এ প্রতিশ্রুতি সত্য করিতেই হইবে। যেমন করিয়া হোক, একবার তাহাকে শেষ দেখা দিতেই হইবে! কিন্তু এ জীবনের মেয়াদ যে আর বেশী বাকী নাই! সেই যে বড় ভয়ের কথা!

দেবদাস গরুর গাড়িতে যখন উঠিয়া বসিল, তখন জননীর কথা মনে করিয়া তাহার চোখ ফাটিয়া জল আসিয়া পড়িল। আর একখানি স্নেহকোমল মুখ আজ জীবনের শেষক্ষণে নিরতিশয় পবিত্র হইয়া দেখা দিল— সে মুখ চন্দ্রমুখীর। যাহাকে পাপিষ্ঠা বলিয়া সে চিরদিন ঘৃণা করিয়াছে, আজ তাহাকেই জননীর পাশে সগৌরবে ফুটিয়া উঠিতে দেখিয়া তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। এ জীবনে আর দেখা হইবে না, হয়ত বহুদিন পর্যন্ত সে খবরটাও পাইবে না। তবু পার্বতীর কাছে যাইতে হইবে। দেবদাস শপথ করিয়াছিল, আর একবার দেখা দিবেই। আজ এ প্রতিজ্ঞা তাহাকে পূর্ণ করিতেই হইবে। পথ ভাল নয়। বর্ষার জল কোথাও পথের মাঝে জমিয়া আছে, কোথাও বা পথ ভাঙ্গিয়া গিয়াছে। কাদায় সমস্ত রাস্তা পরিপূর্ণ। গরুর গাড়ি হটর হটর করিয়া চলিল। কোথাও নামিয়া ঢাকা ঠেলিতে হইল, কোথাও গরু-দুটোকে নির্দয়রূপে প্রহার করিতে হইল—যেমন করিয়াই হোক এ ষোল ক্রোশ পথ অতিক্রম করিতেই হইবে। হুহু করিয়া ঠাণ্ডা বাতাস বহিতেছিল। আজও তাহার সন্ধ্যার পর প্রবল জ্বর দেখা দিল। সে সভয়ে প্রশ্ন করিল, গাড়োয়ান, আর কত পথ?

গাড়োয়ান জবাব দিল, এখনো আট-দশ কোশ আছে বাবু।

শিগগির নিয়ে চল্ বাপু, তোকে অনেক টাকা বকশিশ দেব। পকেটে একখানা এক শ' টাকার নোট ছিল, তাই দেখাইয়া কহিল, এক শ' টাকা দেব, নিয়ে

চল্ ।

তাহার পর কেমন করিয়া কোথা দিয়া সমস্ত রাত্রি গেল, দেবদাস জানিতেও পারিল না। অসাড় অচেতন; সকালে সজ্ঞান হইয়া কহিল, ওরে, আর কত পথ? এ কি ফুরোবে না?

গাড়োয়ান কহিল, আরও ছয় কোশ।

দেবদাস দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, একটু শিগগির চল্ বাপু, আর যে সময় নেই ।

গাড়োয়ান বুঝিতে পারিল না, কিন্তু নূতন উৎসাহে গরু ঠেঙ্গাইয়া গালিগালাজ করিয়া চলিল। প্রাণপণে গাড়ি চলিতেছে, ভিতরে দেবদাস ছটফট করিতেছে। কেবল মনে হইতেছে, দেখা হবে ত? পৌঁছব ত? দুপুরবেলা গাড়ি থামাইয়া গাড়োয়ান গরুকে খাবার দিয়া, নিজে আহার করিয়া আবার উঠিয়া বসিল । কহিল, বাবু, তুমি খাবে না কিছু?

না বাপু, তবে বড় তেষ্টা পেয়েচে, একটু জল দিতে পার?

সে পথিপার্শ্বস্থ পুষ্করিণী হইতে জল আনিয়া দিল। আজ সন্ধ্যার পর জ্বরের সঙ্গে দেবদাসের নাকের ভিতর হইতে সড়সড় করিয়া ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়িতে লাগিল। সে প্রাণপণে নাক চাপিয়া ধরিল। তাহার পর বোধ হইল, দাঁতের পাশ দিয়াও রক্ত বাহির হইতেছে, নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসেও যেন টান ধরিয়াছে। হাঁপাইতে হাপাইতে কহিল, আর কত?

গাড়োয়ান কহিল, কোশ-দুই; রাত্রি দশটা নাগাদ পৌঁছব।

দেবদাস বহুকষ্টে মুখ তুলিয়া পথের পানে চাহিয়া কহিল, ভগবান! গাড়োয়ান প্রশ্ন করিল, বাবু, অমন করচেন কেন?

দেবদাস এ কথার জবাব দিতেও পারিল না। গাড়ি চলিতে লাগিল, কিন্তু দশটার সময় না পৌঁছিয়া প্রায় বারোটায় গাড়ি হাতীপোতার জমিদারবাবুর বাটীর সম্মুখে বাঁধান অশ্বত্থতলায় আসিয়া উপস্থিত হইল ।

গাড়োয়ান ডাকিয়া কহিল, বাবু, নেমে এসো।

কোন উত্তর নাই । আবার ডাকিল, তবু উত্তর নাই। তখন সে ভয় পাইয়া প্রদীপ মুখের কাছে আনিল, বাবু, ঘুমালে কি? দেবদাস চাহিয়া আছে; ঠোঁট নাড়িয়া কি বলিল, কিন্তু শব্দ হইল না। গাড়োয়ান আবার ডাকিল, ও বাবু!

দেবদাস হাত তুলিতে চাহিল, কিন্তু হাত উঠিল না; শুধু তাহার চোখের কোণ বাহিয়া দু'ফোঁটা জল গড়াইয়া পড়িল। গাড়োয়ান তখন বুদ্ধি খাটাইয়া অশ্বত্থতলার বাঁধানো বেদীটার উপর খড় পাতিয়া শয্যা রচনা করিল। তাহার পর বহুকষ্টে দেবদাসকে ভুলিয়া আনিয়া তাহার উপর শয়ন করাইয়া দিল। বাহিরে আর কেহ নাই, জমিদারবাটী নিস্তব্ধ, নিদ্রিত। দেবদাস বহুক্লেশে পকেট হইতে একশ' টাকার নোটটা বাহির করিয়া দিল। লণ্ঠনের আলোকে গাড়োয়ান দেখিল, বাবু তাহার পানে চাহিয়া আছে, কিন্তু কথা কহিতে পারিতেছে না। সে অবস্থাটা অনুমান করিয়া নোট লইয়া চাদরে বাঁধিয়া রাখিল। শাল দিয়া দেবদাসের মুখ পর্যন্ত আবৃত; সম্মুখে লণ্ঠন জ্বলিতেছে, নূতন বন্ধু পায়ের কাছে বসিয়া ভাবিতেছে।

ভোর হইল । সকালবেলা জমিদারবাটী হইতে লোক বাহির হইল,—এক আশ্চর্য দৃশ্য। গাছতলায় একজন লোক মরিতেছে। ভদ্রলোক। গায়ে শাল, পায়ে চকচকে জুতো, হাতে আংটি। একে একে অনেক লোক জমা হইল। ক্রমে ভুবনবাবুর কানে এ কথা গেল, তিনি ডাক্তার আনিতে বলিয়া নিজে উপস্থিত হইলেন। দেবদাস সকলের পানে চাহিয়া দেখিল; কিন্তু তাহার কণ্ঠরোধ হইয়াছিল— একটা কথাও বলিতে পারিল না, শুধু চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতে লাগিল । গাড়োয়ান যতদূর জানে বলিল, কিন্তু তাহাতে সুবিধা হইল না। ডাক্তার আসিয়া কহিল, শ্বাস উঠেছে, এখনই মরবে।

সকলেই কহিল, আহা! উপরে বসিয়া পার্বতী এ কাহিনী শুনিয়া বলিল, আহা!

কে একজন দয়া করিয়া মুখে একফোঁটা জল দিয়া গেল। দেবদাস তাহার পানে করুণদৃষ্টিতে একবার চাহিয়া দেখিল, তাহার পর চক্ষু মুদিল। আরও কিছুক্ষণ বাঁচিয়া ছিল, তাহার পরে সব ফুরাইল। এখন কে দাহ করিবে, কে ছুঁইবে, কি জাত ইত্যাদি লইয়া তর্ক উঠিল। ভুবনবাবু নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে সংবাদ দিলেন। ইনস্পেক্টর আসিয়া তদন্ত করিতে লাগিল। প্লীহা-লিভারে মৃত্যু। নাকে মুখে রক্তের দাগ। পকেট হইতে দুইখানা পত্র বাহির হইল। একখানা তালসোনাপুরের দ্বিজদাস মুখুয্যে বোম্বায়ের দেবদাসকে লিখিতেছে। — টাকা পাঠান এখন সম্ভব নয়। আর একটা কাশীর হরিমতী দেবী উক্ত দেবদাস মুখুয্যেকে লিখিতেছে—কেমন আছ?

বাঁ হাতে উলকি দিয়া ইংরাজী অক্ষরে নামের আদ্যক্ষর লেখা আছে। ইনস্পেক্টরবাবু তদন্ত করিয়া কহিলেন, হাঁ, লোকটা দেবদাস বটে । হাতে নীলপাথর দেওয়া আংটি—দাম আন্দাজ দেড়-শ' গায়ে একজোড়া শাল – দাম আন্দাজ দুই শ'। জামাকাপড় ইত্যাদি সমস্তই লিখিয়া লইলেন।

চৌধুরীমহাশয় ও মহেন্দ্রনাথ উভয়েই উপস্থিত ছিলেন। তালসোনাপুর নাম শুনিয়া মহেন্দ্র কহিল, ছোটমার বাপের বাড়ির লোক, তিনি দেখলে—

চৌধুরীমহাশয় তাড়া দিলেন, সে কি এখানে মড়া সনাক্ত করতে আসবে নাকি? দারোগাবাবু সহাস্যে কহিলেন, পাগল আর কি!

ব্রাহ্মণের মৃতদেহ হইলেও পাড়াগাঁয়ে কেহ স্পর্শ করিতে চাহিল না; কাজেই চণ্ডাল আসিয়া বাঁধিয়া লইয়া গেল। তার পর কোন শুষ্ক পুষ্করিণীর তটে অর্ধদগ্ধ করিয়া ফেলিয়া দিল—কাক—শকুন উপরে আসিয়া বসিল, শৃগাল-কুক্কুর শবদেহ লইয়া কলহ করিতে প্রবৃত্ত হইল। তবুও যে শুনিল, সেই কহিল, আহা! দাসী

চাকরও বলাবলি করিতে লাগিল, আহা ভদ্দরলোক, বড়লোক! দু শ' টাকা দামের শাল, দেড় শ' টাকা দামের আংটি! সে-সব এখন দারোগার জিম্মায় আছে; পত্র দু'খানাও তিনি রখিয়াছেন।

খবরটা সকালেই পার্বতীর কানে গিয়াছিল বটে, কিন্তু কোন বিষয়েই আজকাল সে মনোনিবেশ করিতে পারিত না বলিয়া ব্যাপারটা ঠিক বুঝিতে পারে নাই । কিন্তু সকলের মুখেই যখন ঐ কথা, তখন পার্বতীও বিশেষ করিয়া শুনিতে পাইয়া সন্ধ্যার পূর্বে একজন দাসীকে ডাকিয়া কহিল, কি হয়েচে লা? কে মরেছে? দাসী কহিল, আহা, কেউ তা জানে না মা! পূর্বজন্মের মাটি কেনা ছিল, তাই মরতে এসেছিল। শীতে হিমে সেই রাত্রি থেকে পড়ে ছিল, আর বেলা ন'টার

সময় মরেচে।

পার্বতী দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, আহা, কে তা কিছু জানা গেল না । দাসী বলিল, মহেনবাবু সব জানেন, আমি অত জানিনে মা।

মহেন্দ্ৰকে ডাকিয়া আনা হইলে সে কহিল, তোমাদের দেশের দেবদাস মুখুয্যে। পার্বতী মহেন্দ্রর অত্যন্ত নিকটে সরিয়া আসিয়া, তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কে, দেবদাদা? কেমন করে জানলে?

পকেটে দু'খানা চিঠি ছিল; একখানা দ্বিজদাস মুখুয্যে লিখচেন-

পার্বতী বাধা দিয়া কহিল, হাঁ, তার বড়দাদা।

আর একখানা কাশীর হরিমতী দেবী লিখেচেন-

হাঁ, তিনি মা ।

হাতের উপর উলকি দিয়ে নাম লেখা ছিল-

পার্বতী কহিল, হাঁ, কলকাতায় প্রথম গিয়ে লিখিয়েছিলেন বটে— একটা নীল রংয়ের আংটি—

পৈতার সময় জেঠামশাই দিয়েছিলেন। আমি যাই,—বলিতে বলিতে পার্বতী ছুটিয়া নামিয়া পড়িল । মহেন্দ্ৰ হতবুদ্ধি হইয়া কহিল, ও মা, কোথা যাও?

দেবদার কাছে।

সে ত আর নেই—ডোমে নিয়ে গেছে।

ওগো, মা গো । বলিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে পার্বতী ছুটিল। মহেন্দ্ৰ ছুটিয়া সম্মুখে আসিয়া বাধা দিয়া বলিল, তুমি কি পাগল হলে মা? কোথা যাবে ?

পার্বতী মহেন্দ্রের পানে তীব্র কটাক্ষ করিয়া কহিল, মহেন, আমাকে কি সত্যি পাগল পেলে? পথ ছাড় । তাহার চক্ষের পানে চাহিয়া, মহেন্দ্র পথ ছাড়িয়া নিঃশব্দে পিছনে পিছনে চলিল। পার্বতী বাহির হইয়া গেল। বাহিরে তখনও নায়েব গোমস্তা কাজ করিতেছিল, তাহারা চাহিয়া দেখিল। চৌধুরীমহাশয় চশমার উপর দিয়া চাহিয়া কহিলেন, যায় কে? মহেন্দ্ৰ বলিল, ছোটমা।

সে কি? কোথায় যায়?

মহেন্দ্ৰ বলিল, দেবদাসকে দেখতে ।

ভুবন চৌধুরী চীৎকার করিয়া উঠিলেন, তোরা কি সব ক্ষেপে গেলি, ধর—ধর— ধরে আনো ওকে। পাগল হয়েচে! ও মহেন, ও কনেবৌ!

তাহার পর দাসী-চাকর মিলিয়া ধরাধরি করিয়া পার্বতীর মূর্ছিত দেহ টানিয়া আনিয়া বাটীর ভিতরে লইয়া গেল। পরদিন তাহার মূর্ছাভঙ্গ হইল, কিন্তু সে কোন কথা কহিল না । একজন দাসীকে ডাকিয়া শুধু জিজ্ঞাসা করিল, রাত্রিতে এসেছিলেন, না? সমস্ত রাত্রি!

তাহার পর পার্বতী চুপ করিয়া রহিল।

এখন এতদিনে পার্বতীর কি হইয়াছে, কেমন আছে জানি না। সংবাদ লইতেও ইচ্ছা করে না। শুধু দেবদাসের জন্য বড় কষ্ট হয়। তোমরা যে-কেহ এ কাহিনী পড়িবে, হয়ত আমাদেরই মত দুঃখ পাইবে। তবু যদি কখনও দেবদাসের মত এমন হতভাগ্য, অসংযমী পাপিষ্ঠের সহিত পরিচয় ঘটে, তাহার জন্য একটু প্রার্থনা করিও। প্রার্থনা করিও, আর যাহাই হোক, যেন তাহার মত এমন করিয়া কাহারও মৃত্যু না ঘটে। মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময়ে যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে—যেন একটিও করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়। মরিবার সময় যেন কাহারও একফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে।











































































































































































































































































More Books by শুভ্র শঙ্খ সামন্ত

1

অমিতাভ ঘোষের নতুন বই স্মোক অ্যান্ড অ্যাশেস চেন্নাইয়ে লঞ্চ হয়েছে

3 August 2023
1
0
0

একবার তিনি তার আইবিস ট্রিলজি - আফিমের বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করার পরে, লেখক অমিতাভ ঘোষ বলেছিলেন যে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে কিছু পৌরাণিক কাহিনী ইতিহাসকে নীরব করার শক্তি অর্জন করে। আফিম আমাদের অর্থনৈত

2

বুক রিভিউ: রাজমোহনের স্ত্রী বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

3 August 2023
1
0
0

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ভারতের ইতিহাসে এক বিখ্যাত নাম।  বঙ্কিমকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম স্রষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যার জন্য তিনি তাঁর ধারণাগুলিকে তুলে ধরার জন্য ব্যক্তিত্ব এবং রূপক

3

ভারতে, এটি টেসলার সুবিধা কারণ চীনা গাড়ি নির্মাতারা তাপের সম্মুখীন হয়

3 August 2023
1
0
0

টেসলা দেশে বিনিয়োগের প্রস্তাবের জন্য ভারত থেকে লাল-গালিচাকে স্বাগত জানিয়েছে, যখন বৈদ্যুতিক যানবাহনে তার বৃহত্তম প্রতিদ্বন্দ্বী, চীনের বিওয়াইডি, নয়াদিল্লি থেকে বর্ধিত যাচাই-বাছাই করে ঠান্ডা বন্ধ কর

4

ইন্ডিয়াস্পোরা নয়াদিল্লিতে G20 ফোরামের আয়োজন করবে

3 August 2023
1
0
0

ইন্ডিয়াস্পোরা, একটি নেতৃস্থানীয় অলাভজনক সংস্থা যা একটি শক্তিশালী, আরও আন্তঃসংযুক্ত বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের জন্য ভারতীয় প্রবাসীদের একত্রিত করার জন্য নিবেদিত, 2 আগস্ট ঘোষণা করেছে যে এটি দেশের অগ্রযাত্রা

5

বেঙ্গালুরুতে ক্যাবি যাত্রার সময় বন্ধুর সাথে মহিলার কথাবার্তা শুনেছে, তার কাছ থেকে 20 লক্ষ টাকা, সোনা হাতিয়ে নিয়েছে;

3 August 2023
0
0
0

ক্যাব চালকের চাঁদাবাজির পরিকল্পনা কয়েক মাস পরে প্রকাশ্যে আসে যখন সে তার বন্ধুদের সাথে সিঙ্গেল-মল্ট হুইস্কির দামী বোতল নিয়ে ধরা পড়ে। ফোনে একজন বন্ধুর সাথে একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন বেঙ্গালুরুতে একজন ম

6

চেন্নাই এবং শহরতলিতে ক্লিন স্ট্রিট ফুড হাব স্থাপন করা হবে

3 August 2023
0
0
0

চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম এবং তিরুভাল্লুরের মতো শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা শীঘ্রই নির্দিষ্ট হাবগুলিতে পরিষ্কার রাস্তার খাবার পাবেন। রাজ্য সরকার নাগাপট্টিনম এবং কোয়েম্বাটুর জেলাগুলিতেও এই হাবগুলি তৈরি করবে৷ ন

7

টাইফুন ডাকসুরি-বিধ্বস্ত চীন আরও বিপর্যয়কর জলবায়ুর জন্য ধনুর্বন্ধনী

4 August 2023
0
0
0

চীনের রাজধানী বেইজিং সর্বকালের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হয়েছে এবং উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি অংশ এই আগস্টে বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আরও টা

8

শারজাহ পুলিশ ফ্রেন্ডস প্রোগ্রাম শিশুদের দেশের সেবা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সাহায্য করে

4 August 2023
0
0
0

শারজার ডেপুটি শাসক শেখ সুলতান বিন আহমেদ বিন সুলতান আল কাসিমি বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি প্রাসাদে পুলিশ বন্ধুদের জন্য 36তম গ্রীষ্মকালীন কোর্স এবং 5তম পুলিশ মহিলা বন্ধুদের জন্য অংশগ্রহণকারীদের গ্র্যাজুয়েশন প

9

এলন মাস্কের এক্স সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের ভিতরে একটি ট্রেডিং হাব তৈরি করতে চাইছে

4 August 2023
0
0
0

 এক্স সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল, অ্যাপের ভিতরে একটি ট্রেডিং হাব তৈরি করার জন্য একটি আর্থিক ডেটা জায়ান্ট খুঁজছে, সেমাফোর বৃহস্পতিবার রিপোর্ট করেছে, বিষয়টি এবং পরিকল্প

10

পুদুচেরি হয়ে চেন্নাই-কুড্ডালোর রেললাইনের জন্য এই অর্থবছরে ₹50 কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে: রেলমন্ত্রী

4 August 2023
0
0
0

কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত 179.28 কিলোমিটার নতুন রেললাইনের জন্য এই আর্থিক বছরে ₹50 কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে, যা চেন্নাই এবং কুদ্দালোরকে মামাল্লাপুরম, মারাক্কানাম এবং পুদুচেরি হয়ে সংযুক্ত করে। লোকসভ

11

Google শিল্পী আলটিনা শিনাসির জীবন উদযাপন করে৷

4 August 2023
0
0
0

 1907 সালের এই দিনে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে অভিবাসী বাবা-মায়ের কাছে জন্মগ্রহণ করেন আলটিনা শিনাসি।  Google 4 আগস্ট, 2023-এ আলটিনা শিনাসির জীবন উদযাপন করেছে, একজন আমেরিকান শিল্পী, ডিজাইন এবং উদ্ভাবক, য

12

UPSC প্রিলিম পরীক্ষার উত্তর কী চাওয়ার আবেদনের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে HC আদেশ সংরক্ষণ করে

4 August 2023
0
0
0

 ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (ইউপিএসসি) চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করার পরেই সিভিল সার্ভিসেস (প্রাথমিক) পরীক্ষা 2023 এর উত্তর কী প্রকাশ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একটি পিটিশনের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে প্

13

বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে আবারও রাজ্যসভায় ৩টি বিল পাশ

4 August 2023
0
0
0

 বৃহস্পতিবারও, রাজ্যসভা কোনও বড় আলোচনা ছাড়াই তিনটি বিল পাস করেছে কারণ বিরোধী সদস্যরা মণিপুরে সহিংসতার বিষয়ে কার্যধারা বয়কট করেছে। বুধবার একইভাবে তিনটি বিল পাস করেছে উচ্চকক্ষ। রাজ্যসভা বৃহস্পতিব

14

বই পর্যালোচনা: এই বাংলা উপন্যাসটি আজ সমাজে দেখা অনেক খারাপের আয়না

4 August 2023
0
0
0

সত্যজিৎ মজুমদারের তমোসিক (বাংলায়) একটি বহু-স্তরীয় গল্প, যা বিভিন্ন চরিত্র এবং তাদের বৈচিত্র্যময় জীবন সম্পর্কে গল্প অন্তর্ভুক্ত করে। এই কল্পকাহিনীতে অনেক টুইস্ট রয়েছে যা মাঝে মাঝে প্লটকে জটিল করে ত

15

বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়ল ভারত

5 August 2023
1
0
0

 ভি. জ্যোতি সুরেখা, অদিতি স্বামী এবং পারনীত কৌরের ত্রয়ী ইতিহাস তৈরি করেছিল যখন তারা কম্পাউন্ড মহিলা দলের ফাইনালে শীর্ষস্থানীয় মেক্সিকোকে 235-229-এ জয়ী করে ভারতকে সাহায্য করেছিল। এই জয়ের সাথে ভারত

16

চন্দ্রযান-৩ চাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দূরত্ব অতিক্রম করেছে

5 August 2023
0
0
0

 4 আগস্ট পর্যন্ত, চন্দ্রযান-3, ভারতের তৃতীয় চাঁদ অভিযান যা 14 জুলাই চালু হয়েছিল, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহের দূরত্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়েছে। 1 আগস্ট, ISRO চাঁদের দিকে চন্দ্রযান-3 কে

17

প্রধানমন্ত্রী মোদি 24,470 কোটি টাকায় 508টি রেলস্টেশনের সংস্কারের সূচনা করবেন

5 August 2023
0
0
0

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি 6 অগাস্ট কার্যত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা 508টি রেলওয়ে স্টেশনের পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। রেলপথ মন্ত্রকের মতে, পুনর্নির্মাণের কাজটি আনুমানিক 24,470 কোটি

18

ভুলের কারণে কয়েক সপ্তাহ নীরবতার পর ভয়েজার 2 মহাকাশযানের সাথে নাসা যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করেছে

5 August 2023
0
0
0

NASA এর ভয়েজার 2 মহাকাশযান শুক্রবার এটিকে আবার কথা বলছিল যখন ফ্লাইট কন্ট্রোলাররা একটি ভুল সংশোধন করেছে যা কয়েক সপ্তাহ নীরবতার কারণ হয়েছিল। বিলিয়ন মাইল দূরে আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে আরও গভীরে আ

19

রাধানাথ রায় জন্মগ্রহণ 1848 সালে ওড়িয়া সাহিত্যের নতুন যুগের জনক('কবিবর')

5 August 2023
0
0
0

রাধানাথ রায় 1848 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে ওড়িয়া সাহিত্যের নতুন যুগের জনক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তিনি আট বছর বয়সে তার মাকে হারিয়েছিলেন, একটি ঘটনা যা তাকে বিষণ্ণ এবং নির্জন করে রেখেছিল। একজন মেধাব

20

শনিবার জম্মু বেস ক্যাম্প থেকে অমরনাথ যাত্রা চলবে বলে জানিয়েছে সরকার

5 August 2023
0
0
0

শুক্রবার সরকার ঘোষণা করেছে যে শনিবার জম্মু বেস ক্যাম্প থেকে সময়সূচি অনুযায়ী অমরনাথ যাত্রা হবে। 370 অনুচ্ছেদ বাতিলের চতুর্থ বার্ষিকীকে সামনে রেখে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে যাত্রা স্থগিত থাকবে বলে জ

21

সাধারণ ধর্মঘটে মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত

5 August 2023
0
0
0

শনিবার মণিপুরের 27 টি বিধানসভা কেন্দ্রের সমন্বয়কারী কমিটির ডাকা 24 ঘন্টার সাধারণ ধর্মঘট ইম্ফল উপত্যকায় স্বাভাবিক জীবনকে অবিচল করে দেয়, প্রায় সমস্ত এলাকায় বাজার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।  

22

বন্ধুত্ব দিবস ( সৃজনশীল ধারণা এবং কার্যক্রম)

5 August 2023
0
0
0

বন্ধুত্ব দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয় মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য। আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের ইতিহাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভূত বন্ধুত্ব দিবসের ধারণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। হলমা

23

ব্যক্তিগত ডেটা বিল সাহায্য করবে ডিজিটাল অর্থনীতি তে, নাসকম বললেন।

5 August 2023
0
0
0

পার্লামেন্ট থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল প্রত্যাহার করা একটি আশ্চর্যজনক ছিল, বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে এটিতে এত প্রচেষ্টা চালানোর পরে। আগস্ট 2017 থেকে জুলাই 2018 এর মধ্যে, সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্ত

24

ISRO সফলভাবে কক্ষপথ হ্রাস কৌশল সম্পাদন করে, চন্দ্রযান-3 চাঁদের কাছাকাছি নিয়ে আসে

7 August 2023
0
0
0

 ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রবিবার বলেছে যে এটি চন্দ্রের কক্ষপথে ঢোকানোর একদিন পর ভারতের তৃতীয় চাঁদ মিশন চন্দ্রযান-৩ এর কক্ষপথ হ্রাস কৌশল সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। মহাকাশ সংস্থাটি বলেছে যে এটি 9 আগস্

25

বিধানসভা নির্বাচনের আগে, রাজস্থানে 19টি নতুন জেলা গঠন অনুমোদিত হয়েছে

7 August 2023
1
0
0

 নির্বাচনী বছরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণায়, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট রাজ্যে 19টি নতুন জেলা এবং তিনটি নতুন বিভাগ গঠনের ঘোষণা করেছেন, তাদের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য 2,000 কোটি টাকা বরাদ্দ

26

কনজেক্টিভাইটিস, চোখের ফ্লু বৃদ্ধির মধ্যে, ডাক্তাররা স্টেরয়েড চোখের ড্রপের অযৌক্তিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন

8 August 2023
0
0
0

প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং উপযুক্ত থেরাপির ব্যবহার রোগের দ্রুত সমাধানের চাবিকাঠি এবং এটি সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব বা চিকিত্সা না করা কনজেক্টিভাইটিসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে, DDU হাসপাতালের একজন

27

সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে পাঁচ দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে রওনা হয়েছেন

9 August 2023
0
0
0

সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডে 9 আগস্ট একটি মর্যাদাপূর্ণ সামরিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত বিষয়ে শীর্ষ ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ব্রাসের সাথে আলোচনা করতে পাঁচ দিনের সফরে যুক্তরাজ্য রওনা হয়েছ

28

কেরালা বিধানসভা সর্বসম্মতিক্রমে রাজ্যের সরকারী নাম পরিবর্তন করে 'কেরালাম' করার প্রস্তাব পাস করেছে

9 August 2023
0
0
0

বুধবার রাজ্য বিধানসভা সর্বসম্মতিক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের নাম 'কেরালা' থেকে 'কেরালাম'-তে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।  বিধানসভা সংবিধানে একটি সংশোধনী চে

29

বেঙ্গালুরু মেট্রো সুশৃঙ্খল বোর্ডিংয়ের জন্য 'বিশেষ অপারেশন প্রোগ্রাম' চালু করেছে

9 August 2023
0
0
0

নাম্মা মেট্রোর সম্প্রসারণের সাথে, বিশৃঙ্খল বোর্ডিং এবং যাত্রীদের আচরণের প্রোটোকল সম্পর্কিত সমস্যাগুলি বেড়েছে, বিশেষত পিক আওয়ারে। এইগুলি স্বীকার করে, ব্যাঙ্গালোর মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (বিএমআরস

30

বিশ্ব আদিবাসী দিবস

9 August 2023
0
0
0

বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সুরক্ষার জন্য প্রতি বছর 9 আগস্ট বিশ্ব আদিবাসীদের আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়। 9ই আগস্ট 2018-এ, ভারতের উপজাতীয় জনগণের স্বাস্থ্যের রাজ্যের উপর প্রথ

31

চাঁদ থেকে মাত্র 1,437 কিমি দূরে চন্দ্রযান-3

9 August 2023
0
0
0

 ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) 9 আগস্ট ভারতের তৃতীয় চাঁদ মিশন চন্দ্রযান-3-এর আরেকটি কক্ষপথ হ্রাস কৌশল সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।  ব্যাঙ্গালুরুতে ISRO টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কমান্ড নেটওয

32

কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যর্থ হওয়ায় চীন মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পড়ে গেছে

9 August 2023
0
0
0

ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস (এনবিএস) বুধবার জানিয়েছে, চীনের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) বছরের তুলনায় ০.৩% কমেছে।  চীনের ভোক্তাদের দাম জুলাই মাসে মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পড়েছিল, যখন কারখানার গেটের

33

দেবদাস

9 August 2023
1
0
0

                                                                     প্রথম পরিচ্ছেদ একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা

34

রাজ্যসভায় কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে ৪টি বিল

10 August 2023
0
0
0

 “সম্প্রতি বিষ্ণুপুরে (মণিপুরে) অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমরা এতদিন ধরে ২৬৭ ধারায় আলোচনার দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা বিতর্ক করব। প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করুন। আমরা প্রস্তুত," গয়ালের অভিযোগের জবাবে খড়গে বলেছেন।

35

15 বছর বয়সী 12 বন্ধুকে উল্টে বিশ্ব রেকর্ড করল

10 August 2023
0
0
0

 বারানি ফ্লিপ হল একটি কঠিন এবং বিপজ্জনক বায়বীয় কৌশল যাতে আপনার পায়ে পুরোপুরি অবতরণ করার সময় সামনের দিকে ফ্লিপ এবং 180-ডিগ্রি টার্ন অন্তর্ভুক্ত থাকে।  অ্যাথলিট এবং স্কেটিং উত্সাহীদের একটি বারানী ফ

36

তামিলনাড়ুর কেলাডিতে নতুন আবিষ্কার: প্রত্নতাত্ত্বিকরা স্ফটিক কোয়ার্টজ ওজনের ইউনিট আবিষ্কার করেছেন

10 August 2023
0
0
0

তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে 12 কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক খনন স্থান কিলাদিতে কাজ করা প্রত্নতাত্ত্বিকরা সঙ্গম যুগের একটি স্ফটিক কোয়ার্টজ ওজনের ইউনিট আবিষ্কার করেছেন। 2014 সালে কেলাডিতে

37

হাওয়াইয়ের স্বর্গে 'অ্যাপোক্যালিপস' আঘাত হানলে মাউই দাবানলে ছয়জন মারা গেছে

10 August 2023
0
0
0

 দূরবর্তী হারিকেনের বায়ু দ্বারা উদ্ভূত দাবানলে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে এবং বুধবার হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপের রিসোর্ট শহর লাহাইনার বেশিরভাগ ধ্বংস হয়েছে, কিছু ধোঁয়া এবং আগুন থেকে বাঁচতে সাগরে পালিয়ে য

38

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তৃতীয় বার বিরতি দিয়েছে, রেপো রেট 6.5% এ অপরিবর্তিত

10 August 2023
0
0
0

বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) মূল নীতির হার - রেপো রেট - 6.50 শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছিল। আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন যে ছয় সদস্যের মুদ্রানীতি কমিটি (এমপিসি) সর্বসম্মতভাবে ঋ

39

সেনসেক্স 220 পয়েন্ট পিছলেছে, আরবিআই নীতির আগে নিফটি 0.29% পড়ে 19,575 এ বাণিজ্য করেছে

10 August 2023
0
0
0

আজ সকাল 10টায় আরবিআই-এর আর্থিক নীতির আগে বৃহস্পতিবার দেশীয় মূল সূচকগুলি নিম্নমুখী হয়েছে। BSE বেঞ্চমার্ক সেনসেক্স 80.97 পয়েন্ট, বা 0.12 শতাংশ কম 65,914.84 এ খোলা হয়েছে, যেখানে বৃহত্তর NSE নিফটি 50

40

হরিয়ানার নুহতে আজ ৮ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছে

10 August 2023
0
0
0

 হরিয়ানার নুহ-তে কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার অনুমতি দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল 7 টা থেকে আট ঘন্টার জন্য কারফিউ তুলে নিয়েছে। নুহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ধীরেন্দ্র খড়গাতা জেলায় ফৌজ

41

রাশিয়ার লুনা 25 উৎক্ষেপণ, চন্দ্রযান-3কে চন্দ্র দক্ষিণ মেরুতে হারাতে পারে

11 August 2023
0
0
0

রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা Roscosmos শুক্রবার, 11 এপ্রিল, একটি সয়ুজ রকেটের উপরে, 4 AM (অস্থায়ী) দেশের সুদূর পূর্বের Vosthochny cosmodrome থেকে Luna-25 মিশন চালু করেছে। 1976 সালের পর রাশিয়ার প্রথম চন্দ্

42

সংসদের বর্ষা অধিবেশনের লাইভ আপডেট: কেন্দ্র টেবিল CrPC, GST সংশোধনী বিল; ভারতের সাংসদরা LSP পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন বর্জন করবে লাইভ আপডেট: কেন্দ্র টেবিল CrPC, GST সংশোধনী বিল; LS-কে বয়কট করবেন ভারতের সাংসদরা

11 August 2023
0
0
0

সংসদের বর্ষা অধিবেশন 2023 লাইভ আপডেট: সংসদের উভয় কক্ষ আজ মুলতবি হওয়ার সাথে সাথে, কেন্দ্র CrPC সংশোধনী বিল এবং GST সংশোধনী বিল সহ বেশ কয়েকটি বড় বিলগুলিকে ঠেলে দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে৷ আজ ব

43

অনাস্থা প্রস্তাবে মতামত প্রকাশ করুন: মণিপুরের আরও প্রয়োজন

11 August 2023
0
0
0

যদি মণিপুরে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত হয়, মেইটিস এবং কুকি উভয়ই, ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়, এবং প্রায় 150 জন মৃতের পরিবার এবং একটি ভাইরাল ভিডিওতে একটি ভিড়ের দ্বারা প্যারেড এবং যৌন নির্যাতনের

44

দেশীয় যুদ্ধজাহাজ নিয়ে মালাবার মহড়ায় অংশ নেবে নৌবাহিনী

11 August 2023
0
0
0

 নৌবাহিনীর দুটি দেশীয় ফ্রন্টলাইন যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সহ্যাদ্রি এবং আইএনএস কলকাতা শুক্রবার এবং 21 আগস্টের মধ্যে সিডনি থেকে নির্ধারিত অনুশীলন মালাবার-2023-এ অংশ নেবে, যেখানে মার্কিন নৌবাহিনী (ইউএসএন), জা

45

ঝাড়খণ্ডের মেয়েরা স্কুলে আরও শিক্ষক, মৌলিক সুযোগ-সুবিধা চেয়ে জাতীয় সড়কে বসেছে

11 August 2023
0
0
0

ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে একটি আবাসিক স্কুলের প্রায় 30 জন মেয়ে বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিষ্ঠানে মৌলিক সুবিধার অভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। দক্ষিণ ছোটনাগপুর ডিভিশন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা – সম

46

ভারতের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে অমিত শাহ ৩টি বিল পেশ করেছেন

11 August 2023
0
0
0

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তিনটি বিল পেশ করেছেন - ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বিল, 2023; ভারতীবা ন্যায় সানিতা বিল, 2023; ভারতীব সাক্ষ্য বিল, 2023- লোকসভায়, যা দেশের অপরাধমূলক বিচার ব্যবস্থার সংস্ক

47

সিইসি-ইসি বিলটি এসসি রায়ের চেতনার বিরুদ্ধে গেছে যে এই বাছাইগুলিতে নির্বাহীর কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকতে পারে না'

11 August 2023
0
0
0

সিনিয়র অ্যাডভোকেট গোপাল শঙ্করনারায়ণন বলেছেন 'এসসি একটি ব্যবস্থা নির্ধারণ করে শূন্যতা পূরণ করেছে যা নির্বাহীকে সংখ্যালঘুতে রেখে নির্বাচনী সংস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে LOP এবং CJI একটি ভারসাম্য অফার

48

কাবুলের পতনের দুই বছর পরও মার্কিন ভিসার জন্য আফগানদের অপেক্ষা অব্যাহত রয়েছে

11 August 2023
0
0
0

তালেবানরা যখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়, শুকরিয়া সেদিকি জানতেন তার নিরাপত্তার দিন শেষ হয়ে গেছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে যিনি নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন, তিনি আশ্রয়কেন্দ্র এবং নিরাপদ ঘর পরিদর্শন কর

49

যারা দেশে নেতিবাচকতা ছড়াচ্ছে তাদের উপযুক্ত জবাব: অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী মোদী

12 August 2023
0
0
0

আজকের আগে, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন যে দুর্নীতি "মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস করে" এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করা "আমাদের জনগণের প্রতি আমাদের পবিত্র কর্তব্য"। কলকাতায় অনুষ্ঠিত G20 দুর্নীতিবিরোধী ওয়ার

50

লোকসভা সাংসদ হিসেবে পুনর্বহাল হওয়ার পর প্রথমবারের মতো আজ ওয়েনাড যাবেন রাহুল গান্ধী

12 August 2023
0
0
0

ওয়ানাদ সংবাদে রাহুল গান্ধী: কেরালা কংগ্রেস বলেছে যে রাহুল গান্ধীকে স্বাগত জানাতে একটি উষ্ণ সংবর্ধনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।  কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী শনিবার থেকে তার সংসদীয় এলাকা কেরালার ওয়েনাদে দ

51

ভারতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতি রয়েছে, G-20 বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন

12 August 2023
0
0
0

 G20-এর দুর্নীতিবিরোধী বৈঠকে শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে ভারতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, একটি ভার্চুয়াল ভাষণে, আরও জোর দিয়েছিলেন যে G20-এ

52

মোবাইল ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা | মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে পরিষেবাগুলি পুনরুদ্ধারের উপায় খুঁজতে বলেছে

12 August 2023
0
0
0

 মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মানুষের কাছে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে বলেছে। আদালত 3 মে রাজ্যে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে অবরুদ্ধ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য বি

53

রাশিয়া বলেছে যে তারা ক্রিমিয়ায় 20টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে

12 August 2023
0
0
0

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে যে তাদের বাহিনী রাশিয়া-অধিভুক্ত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে 20টি ইউক্রেনীয় ড্রোনের একটি তরঙ্গ ধ্বংস করেছে। শনিবার ভোরে হামলার চেষ্টার ফলে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং কো

54

ভারতে টমেটো সরবরাহ করতে প্রস্তুত নেপাল; বাজারে সহজ প্রবেশাধিকার চায়

12 August 2023
0
0
0

আকাশ ছোঁয়া দাম কমাতে নেপাল ভারতে প্রচুর পরিমাণে টমেটো রপ্তানি করতে প্রস্তুত কিন্তু বাজারে সহজে প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা চেয়েছে। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংস

55

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যগিং-জনিত মৃত্যু কলকাতায় বিলম্বিত কিন্তু জোরালো সাড়া জাগিয়েছে

14 August 2023
0
0
0

 কথিত র‌্যাগিংয়ের কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) গত বুধবার এক ছাত্রের মৃত্যু এখন কলকাতা শহর থেকে একটি দেরীতে কিন্তু তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যা সাধারণত ক্ষুব্ধ বিষয় নিয়ে রাস্তায় নেম

56

বিগ বস OTT সিজন ২।

14 August 2023
2
0
0

প্রায় দু দশক ধরে ছোট পর্দায় রাজত্ব চালাচ্ছে 'বিগ বস' (Bigg Boss)। জনপ্রিয় এই রিয়েলিটি শোয়ের (Bigg Boss 16) দর্শকের সংখ্যাও নজরকাড়া। বহু মানুষ প্রতিদিন এই শো দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। ছোট থেকে বড়

57

ভারত, চীন 14 আগস্ট 19তম কর্পস কমান্ডার আলোচনায় বসবে

14 August 2023
0
0
0

 আলোচনা চলাকালীন, ভারত পূর্ব লাদাখের অবশিষ্ট ঘর্ষণ পয়েন্টগুলি থেকে সৈন্যদের দ্রুত বিচ্ছিন্ন করার জন্য চাপ দিতে পারে। এই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমিত করতে সোমবার কর্পস কমান্ডার পর্যায়ের 19তম দফা সংলাপ অনু

58

হিমাচলের বৃষ্টি: শিমলায় মন্দির ধসে 9 জনের মৃত্যুর আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে 20 জনেরও বেশি আটকা পড়ার আশঙ্কা

14 August 2023
0
0
0

হিমাচল প্রদেশের সিমলার গ্রীষ্মকালীন হিল এলাকায় একটি শিব মন্দির সোমবার সকালে রাজ্য জুড়ে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ভেঙে পড়ার পরে কমপক্ষে নয়জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হয়েছিল। নিহত ও তাদের পরিবারের বিস্তারিত

59

'হর ঘর তিরাঙ্গা' আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিজের বাসভবনে তেরঙ্গা তুলেছেন অমিত শাহ

14 August 2023
0
0
0

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার 'হর ঘর তিরাঙ্গা' আন্দোলনের অংশ হিসাবে জাতীয় রাজধানীতে তাঁর সরকারি বাসভবনে একটি তিরাঙ্গা উত্তোলন করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার 'হর

60

স্বাধীনতা দিবস | ৯৫৪ জন পুলিশ সদস্য পদক পেয়েছেন

14 August 2023
0
0
0

 ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মোট ৯৫৪ জন পুলিশ সদস্যকে পুলিশ পদক দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতির পুলিশ মেডেল ফর গ্যালান্ট্রি (PPMG) একজন CRPF কর্মীকে দেওয়া হবে যেখানে 229 জন কর্মীকে বীরত্বের জন্য পুলিশ পদক (P

61

সূর্য অধ্যয়নের জন্য ভারতের প্রথম মিশন উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে: ISRO

14 August 2023
0
0
0

ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এই বছরের জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে আদিত্য-এল 1 মিশন চালু করার পরিকল্পনা করছে। আদিত্য-এল 1 হল প্রথম ভারতীয় মহাকাশ মিশন যা সূর্য এবং সৌর করোনা পর্যবেক্ষণ করেছে।

62

হিমাচল বৃষ্টি: শিমলার শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে আরও একটি দেহ উদ্ধার, সোমবার থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে 52 হয়েছে

16 August 2023
0
0
0

 সিমলা, আগস্ট 15 (পিটিআই) মঙ্গলবার সিমলার একটি ধসে পড়া শিব মন্দির থেকে আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধারের সাথে সাথে, সামারহিল এবং ফাগলিতে জোড়া ভূমিধসের জায়গায় উদ্ধারকৃত মোট মৃতদেহের সংখ্যা বেড়ে 15-এ পৌঁছেছ

63

COVID-এর সময় এবং পরে বিশ্বকে সাহায্য করা ভারতকে বিশ্বের বন্ধু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে: প্রধানমন্ত্রী

16 August 2023
0
0
0

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের অর্জন বিশ্বে স্থিতিশীলতা আনছে এবং এটি 'বিশ্ব-মিত্র' (সর্বজনীন বন্ধু) হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার তার স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে বলেছেন, দেশের ক্রমব

64

আমরা গণতন্ত্রের স্বাধীনতা, ঐক্যের জন্য সংবিধান, জাতির অখণ্ডতা সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করছি: খড়গে

16 August 2023
0
0
0

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে মঙ্গলবার গণতন্ত্র ও সংবিধানকে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা তিনি হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। স্বাধীনতা দিবসে, তিনি অগণিত ভারতীয়দের আত্মত্যাগকে অভি

65

নাগাল্যান্ড গ্রাম পরিষদগুলি বন (সংরক্ষণ) সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

16 August 2023
0
0
0

চারটি রেংমা নাগা গ্রাম পরিষদের সদস্যরা বন সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, 2023 এর বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন৷ |   বিশেষ আয়োজন নাগাল্যান্ডের সেমিনিউ জেলার সেনডেনিউ এলাকার চারটি গ্রাম কাউন্সিল 2 আগস্ট সংস

66

নাগাল্যান্ড গ্রাম পরিষদগুলি বন (সংরক্ষণ) সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

16 August 2023
0
0
0

চারটি রেংমা নাগা গ্রাম পরিষদের সদস্যরা বন সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, 2023 এর বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি নিচ্ছেন৷ |   বিশেষ আয়োজন নাগাল্যান্ডের সেমিনিউ জেলার সেনডেনিউ এলাকার চারটি গ্রাম কাউন্সিল 2 আগস্ট সংস

67

আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে কেউ ভারতের দিকে খারাপ নজর দেওয়ার চেষ্টা করবে তার উপযুক্ত জবাব দেবে: রাজনাথ সিং

16 August 2023
0
0
0

পূর্ব লাদাখে চীনের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত দ্বন্দ্ব এবং আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের সমর্থনের মধ্যে সোমবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারত সর্বদাই একটি শান্তিপ্রিয় জাতি, কিন্তু

68

চন্দ্রযান-৩ শীঘ্রই আলাদা করার জন্য সমস্ত চন্দ্র-বাউন্ড ম্যানুভার্স, প্রপালশন এবং ল্যান্ডার মডিউল সম্পূর্ণ করে

16 August 2023
0
0
0

চন্দ্রয়ান-3 16 অগাস্ট, 2023-এ সমস্ত চন্দ্র-বাউন্ড ম্যানুভারস সম্পন্ন করেছে এবং উদ্দেশ্য অনুসারে 153 কিমি x 163 কিমি কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। মহাকাশযানটি 16 আগস্ট IST সকাল 8:30 টায় সফল ফায়ারিং সম্পন্ন

69

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাগিং মামলা: 18 বছর বয়সী বাঙালি অনার্স ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আরও 6 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

16 August 2023
0
0
0

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সহ আরও 6 জনকে 9 আগস্ট বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রের র‌্যাগিং এবং মৃত্যুর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  নতুন গ্রেপ্তারের সাথে, এই মামলায় মোট নয়জনকে গ্র

70

সাগরে মার্কিন আধিপত্যের অবসান ঘটাতে একধাপ এগিয়ে চীন, জানুন কিভাবে

16 August 2023
0
0
0

একটি যুগান্তকারী আবিষ্কারে, চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (CAS) এর গবেষকরা একটি অতি-সংবেদনশীল চৌম্বক আবিষ্কারক উন্মোচন করেছেন যা বিশাল দূরত্বে অত্যন্ত উন্নত সাবমেরিনের মিনিট ট্রেস সনাক্ত করার ক্ষমতা রা

71

'আমি রক বটমে পৌঁছেছি।': অভিনেত্রী পূর্ণিথা ভক্তদের সাথে স্বাস্থ্যের আপডেট শেয়ার করেছেন

16 August 2023
0
0
0

 গত কয়েকদিন ধরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ছিলেন না। এখন, তিনি তার ইনস্টাগ্রামে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি জঘন্য নোট পোস্ট শেয়ার করেছেন। পূর্ণিতা শেয়ার করেছেন যে তাকে তার জীবনে দ্বিতীয়বার মের

72

সিমলার সামার হিল এলাকায় নতুন ভূমিধস; আইএমডি বলছে হিমাচলে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে

16 August 2023
0
0
0

 বুধবার সিমলার সামার হিল এলাকা থেকে ব্যাপক ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার তৎপরতা প্রায় অবিলম্বে পুনরায় শুরু হয় এবং এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর নেই।  উদ্ধার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং স্নিফার কু

73

হিমাচল বন্যা সংকট: সিমলা এবং কাংড়ায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত, 5000 জনেরও বেশি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

16 August 2023
0
0
0

সিমলায় খাদ্য ত্রাণ কার্যক্রমে পাঁচটি প্রকৌশল বিভাগ এবং জুটগ সেনানিবাসের একটি কলাম জড়িত। নয়জন এখনও নিখোঁজ, এবং চিনুক দ্বারা বহন করা একটি স্কিড স্টিয়ার লোডার এবং GREF থেকে একটি 8-টন লোডার সহ সরঞ্জা

74

বিশ্বকর্মা যোজনাকে ছাড়পত্র দিল মোদী মন্ত্রিসভা। এটা কি? কে এই স্কিম থেকে উপকৃত হবে?

16 August 2023
0
0
0

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার ভারতের 77তম স্বাধীনতা দিবসে তাঁর ভাষণে 'বিশ্বকর্মা যোজনা' নামে সরকারের পক্ষ থেকে একটি নতুন উদ্যোগ ঘোষণা করেছেন। 17 সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে চালু করা এই

75

32,500 কোটি টাকা ব্যয়ে 7টি নতুন রেল প্রকল্প অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা৷

16 August 2023
0
0
0

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা 16 অগাস্ট 32,500 কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি নতুন রেল প্রকল্প অনুমোদন করেছে।  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন যে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলি বিদ্যমান লাইনের ক্ষমতা বাড়াতে, ট্রেন

76

লিঙ্গ-ভিত্তিক স্টেরিওটাইপগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট হ্যান্ডবুক চালু করেছে৷

16 August 2023
0
0
0

ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই. 16 অগাস্ট চন্দ্রচূড় খোলা আদালতে ঘোষণা করেছে যে সুপ্রিম কোর্ট একটি 'জেন্ডার স্টেরিওটাইপ হ্যান্ডবুক' পতাকাঙ্কিত শব্দ, বাক্যাংশ প্রকাশ করেছে যা বিচারক, আইনজীবীদের আদেশ,

77

রাশিয়ার লুনা-25 চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছেছে, 21 আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নরম অবতরণ করবে

17 August 2023
0
0
0

রাশিয়ার লুনা-25 চাঁদে পৌঁছেছে: রাশিয়ার লুনা-25 মহাকাশযান 16 আগস্ট ভারতীয় সময় দুপুর 2:27 মিনিটে চাঁদের 100 কিলোমিটার কক্ষপথে পৌঁছেছে। মহাকাশযানটিকে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণে বন্দী করার জন্য থ্রাস্টারগুলি

78

জয়পুর-মুম্বাই ট্রেনের ঘটনা | 'তিনি ঘৃণা থেকে খুন করেছেন': RPF বলেছে যে পদক্ষেপে বিলম্ব করলে ক্ষতি হবে

17 August 2023
0
0
0

রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (RPF) কনস্টেবল চেতনসিংহ চৌধুরী, 33, যিনি 31 জুলাই জয়পুর-মুম্বাই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেসে চড়ে তাঁর উচ্চপদস্থ এবং তিনজন মুসলিম যাত্রীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ করেছেন, তাকে "জঘন্য অ

79

ISRO-এর চন্দ্রযান 3 মিশন চাঁদের দূর থেকে বাড়ির ছবি পাঠাল

17 August 2023
0
0
0

 iSRO-এর চন্দ্রযান 3 মিশন চাঁদের দূরের দিক থেকে একটি ছবি তৈরি করেছে। ছবিটি 9 আগস্ট, 2023-এ চাঁদের পৃষ্ঠের 4400 কিলোমিটার উচ্চতায় ধারণ করা হয়েছিল। বৈশিষ্ট্যযুক্ত অঞ্চলটি চন্দ্রের দূরে, চাঁদের উত্তর

80

চন্দ্রযান-৩ ল্যান্ডার প্রপালশন মডিউল থেকে আলাদা, চাঁদে চূড়ান্ত যাত্রা শুরু হয়েছে

17 August 2023
0
0
0

 ভারতের চন্দ্র অন্বেষণে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) আজ দুপুর ১টায় চন্দ্রযান-৩ মিশনের প্রপালশন মডিউল থেকে বিক্রম ল্যান্ডারকে সফলভাবে পৃথক করেছে। মহাকাশযানটি এখন চা

81

মুর্মু কলকাতায় পৌঁছেছেন, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য উন্নত স্টিলথ ফ্রিগেট লঞ্চ করতে

17 August 2023
0
0
0

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য একটি উন্নত স্টিলথ ফ্রিগেট লঞ্চ করতে বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতায় পৌঁছেছেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গে

82

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ কলকাতায় উন্নত স্টিলথ ফ্রিগেট বিন্ধ্যগিরি চালু করবেন | বিস্তারিত

17 August 2023
0
0
0

 Droupadi Murmu কলকাতা সফর: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আজ (17 আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গ সফর করবেন। তার একদিনের কলকাতা সফরের সময় রাষ্ট্রপতি একটি উন্নত স্টিলথ ফ্রিগেট এবং আসক্তির বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালু করবেন

83

মৌসুমী আপডেট: আইএমডি আগামী কয়েক দিনের জন্য এই রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে; বিস্তারিত এখানে

17 August 2023
0
0
0

 ভারতের আবহাওয়া বিভাগ বৃহস্পতিবার পূর্ব ও পার্শ্ববর্তী মধ্য ভারতে 17 থেকে 19 আগস্ট এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে 17 থেকে 21 আগস্ট পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। একটি বিবৃতিতে, আইএমডি বলেছে যে আ

84

কর্ণাটকে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের ঘাটতি রয়েছে, বেঙ্গালুরুতে 5 তম আগস্টের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হয়েছে৷

17 August 2023
0
0
0

বেঙ্গালুরু শহর বুধবার তার পঞ্চম উষ্ণতম আগস্টের দিন দেখেছে কারণ এটি 31.8 ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে, যা স্বাভাবিকের থেকে 3.7 ডিগ্রি বেশি, ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (IMD) অনুসারে। বেঙ

85

পিএম বিশ্বকর্মা স্কিম: 5 শতাংশ সুদে 1 লক্ষ টাকা ঋণ

17 August 2023
0
0
0

বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা 'প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা' অনুমোদন করেছে। এতে ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে গুরু-শিষ্য ঐতিহ্য অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধিকারী শ্রমিকদের দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে ঋণ

86

আগামীকাল থেকে তেলেঙ্গানায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

17 August 2023
0
0
0

দুই সপ্তাহের বিরতির পরে, তেলেঙ্গানার জনগণ প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ হায়দ্রাবাদের আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্র ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে শুক্রবার থেকে ভারী বর্ষণ ফিরে আসবে।  বুধবার

87

নো আইডি, নো এন্ট্রি, মদ নিষিদ্ধ: ছাত্রের মৃত্যুর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

17 August 2023
0
0
0

 কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষের স্নাতক ছাত্রের মৃত্যুর কয়েকদিন পরে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় একটি আদেশ জারি করে নতুন নিয়ম ঘোষণা করে যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে যে যে কেউ কলেজ প্রাঙ্গণে

88

যাদবপুর ছাত্র মৃত্যু মামলায় প্রশাসনিক ত্রুটির বিরুদ্ধে বঙ্গ বিজেপির বিক্ষোভ

17 August 2023
0
0
0

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ) [ভারত], আগস্ট 17 (এএনআই): যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা জানাতে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী কলকাতার যাদবপুরে পশ্চিমবঙ্গ ভারতীয় জনতা পার্

89

7-বছরের জেল বা আজীবন: সরকার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ 2.0 এর দাঁত দেয় | নিউজ 18 বিশ্লেষণ

17 August 2023
0
0
0

এমনকি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) বিল, 2023 সংসদের স্থায়ী কমিটি দ্বারা যাচাই করা হচ্ছে, বিলের প্রস্তাবিত ধারা, বিশেষ করে 150 ধারা, যা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে পরিচিত IPC এর 124A ধারাকে প্রতিস্থাপন করবে

90

7-বছরের জেল বা আজীবন: সরকার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ 2.0 এর দাঁত দেয় | নিউজ 18 বিশ্লেষণ

17 August 2023
0
0
0

এমনকি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) বিল, 2023 সংসদের স্থায়ী কমিটি দ্বারা যাচাই করা হচ্ছে, বিলের প্রস্তাবিত ধারা, বিশেষ করে 150 ধারা, যা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে পরিচিত IPC এর 124A ধারাকে প্রতিস্থাপন করবে

91

রাশিয়ান লুনা-25 চাঁদের প্রথম ছবি পাঠায়, পৃথিবী থেকে স্থায়ীভাবে লুকানো অঞ্চল দেখায়

18 August 2023
0
0
0

রাশিয়ার লুনা-২৫ মহাকাশযান চাঁদের কক্ষপথ থেকে চাঁদের প্রথম ছবি ফেরত পাঠিয়েছে। চিত্রগুলিতে চাঁদের দূরে অবস্থিত দক্ষিণ মেরু খাদ জিমনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চাঁদের দূরের দিকটি, "অন্ধকার দিক" নামেও পরিচিত,

92

স্পেসএক্স আইএসএসে নাসার ক্রু -7 মিশনের আগে চকচকে ড্রাগন ক্যাপসুল বের করলো

18 August 2023
0
0
0

স্পেসএক্স-এর ব্র্যান্ডের নতুন ড্রাগন মহাকাশযান এই মাসের শেষের দিকে ক্রু -7 মিশনের আগে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড 39A এ পৌঁছেছে। মিশনটি 25 আগস্ট IST বেলা 1:19 টায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ইন্টারন্যাশ

93

মণিপুরে নতুন করে সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছেন

18 August 2023
0
0
0

জাতিগত বিবাদ-বিধ্বস্ত মণিপুরে সহিংসতার একটি নতুন রাউন্ডে, শুক্রবার উখরুল জেলার কুকি থোয়াই গ্রামে ভারী গুলি চালানোর পরে তিন যুবকের বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া গেছে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানায়, ভোরে ল

94

যাদবপুর র‌্যাগিং সারি: ছাত্রের মৃত্যুর পরে কীভাবে এই হুমকি রোধ করার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়

18 August 2023
0
0
0

 প্রথম বর্ষের একজন ছাত্রকে তার সিনিয়রদের দ্বারা র‌্যাগিংয়ের অভিযোগে মৃত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ার কয়েকদিন পর, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) নতুন ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে পরিচয়পত্র বাধ

95

ফয়সালাবাদে গীর্জায় হামলার ঘটনায় দুই প্রধান সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তান

18 August 2023
0
0
0

পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, ব্লাসফেমির অভিযোগে 21টি গির্জা এবং সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রায় তিন ডজন বাড়িতে নজিরবিহীন হামলার সাথে জড়িত দুই প্রধান সন্দেহভাজনকে প

96

রাজ্যসভার বর্তমান সংসদ সদস্যদের 12% বিলিয়নেয়ার, এপি, তেলেঙ্গানা থেকে সর্বোচ্চ শতাংশ: ADR

18 August 2023
0
0
0

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (ADR) অনুসারে, রাজ্যসভার বর্তমান সংসদ সদস্যদের প্রায় 12% বিলিয়নেয়ার এবং অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় এই জাতীয় সংসদ সদস্যদের সর্বাধিক শতাংশ রয়েছে। ADR এবং ন

97

'রাহুল গান্ধী আমেঠি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন', ঘোষণা করলেন ইউপি কংগ্রেস প্রধান অজয় ​​রাই, বলেছেন 'স্মৃতি ইরানি বিচলিত'

18 August 2023
0
0
0

 উত্তর প্রদেশের জন্য সম্প্রতি নিযুক্ত কংগ্রেস প্রধান অজয় ​​রাই শুক্রবার দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে রাহুল গান্ধী আমেঠি কেন্দ্র থেকে 2024 লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত। ইউপিতে পূর্ববর্তী

98

চন্দ্রযান 3: বিক্রম ল্যান্ডার মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে প্রথম চাঁদের ছবি শেয়ার করেছে

18 August 2023
0
0
0

আজ, বিক্রম ল্যান্ডারটি মহাকাশযানের প্রপালশন সিস্টেম থেকে সফলভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে চাঁদের প্রাথমিক চিত্রগুলি উন্মোচন করেছে।  ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) X প্ল্যাটফর্মে ল্যান্ডার ইম

99

ইন্দো-প্যাসিফিক সমুদ্রপথ রক্ষার জন্য জাপান 'কমরেড' ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অস্ত্র বন্ধ করেছে

18 August 2023
0
0
0

চারটি দেশের যুদ্ধজাহাজ সিডনির উপকূলে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক মহড়া 'মালাবার 2023'-এর সমুদ্র পর্যায়ে চলে যাওয়ায় জাপান কোয়াড অংশীদার ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে

100

কাশ্মীর নিউজ: ভারতীয় সেনাবাহিনী, বারামুল্লা পুলিশ 8 ক্রস-বর্ডার সন্ত্রাসী সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেনেড উদ্ধার করেছে

18 August 2023
0
0
0

এসএসপি বারামুল্লা আমোদ অশোক নাগপুরে বলেছেন, "11 আগস্ট একটি যৌথ অভিযানে উরি এলাকার পোয়ারিয়ান থাজাল থেকে অন্য মডিউলের মোট পাঁচ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।" তিনি আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের

101

ভারতের প্রথম সৌর মিশন আদিত্য এল 1 মহাকাশ থেকে সূর্য অধ্যয়ন করবে: আপনার যা জানা দরকার

18 August 2023
0
0
0

সফল চন্দ্রযান-৩ মিশনের পর, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) সূর্য অধ্যয়নের জন্য তার প্রথম সৌর মিশন 'আদিত্য-এল 1' চালু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আদিত্য এল 1 আগস্ট 2023 এ লঞ্চ হওয়ার কথা রয়েছে এব

102

আদিত্য L1 কি ধরনের যন্ত্র বহন করবে?

18 August 2023
0
0
0

মহাকাশযানের সীমিত ভর, শক্তি এবং আয়তনের কারণে আদিত্য L1 প্রাথমিকভাবে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের একটি সীমিত সেট বহন করবে। আদিত্য-এল1-এর সমস্ত পেলোডগুলি ISRO-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ভারতের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে দেশী

103

আদিত্য L1 কি ধরনের যন্ত্র বহন করবে?

19 August 2023
0
0
0

মহাকাশযানের সীমিত ভর, শক্তি এবং আয়তনের কারণে আদিত্য L1 প্রাথমিকভাবে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের একটি সীমিত সেট বহন করবে। আদিত্য-এল1-এর সমস্ত পেলোডগুলি ISRO-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় ভারতের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে দেশী

104

লাদাখের রাস্তায় ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন বাসের ট্রায়াল শুরু হয়েছে

19 August 2023
0
0
0

সরকারী মালিকানাধীন পাওয়ার জায়ান্ট এনটিপিসি লেহতে তার ইন্ট্রাসিটি ট্রায়াল রান চালু করার সাথে লাদাখে পাবলিক রাস্তায় হাইড্রোজেন জ্বালানীচালিত বাসগুলির প্রথম স্থাপনা শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি ভারতের বৃহ

105

চারজন পুনঃনির্বাচিত, পাঁচজন নবনির্বাচিত রাজ্যসভা সদস্য 21শে আগস্ট শপথ নেবেন

19 August 2023
0
0
0

 নতুন দিল্লি [ভারত], 18 আগস্ট (এএনআই): রাজ্যসভার নয়জন সদস্য-- চারজন পুনঃনির্বাচিত এবং পাঁচজন নবনির্বাচিত-- 21 আগস্ট হাউস অফ এল্ডার্সে শপথ নেবেন। এই সদস্যরা হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের দোলা সেন, সুখেন্দু শ

106

কোভিড-১৯ অরিজিন নিয়ে রাশিয়ার 2,000-পৃষ্ঠার রিপোর্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলিকে ছড়িয়ে দেয়

19 August 2023
0
0
0

রাশিয়া জনসমক্ষে অভিযোগ করেছে যে বিগ ফার্মা এবং মার্কিন ডিপ স্টেটের মধ্যে কিছু ব্যক্তি বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের অভিপ্রায়ে কোভিড -19 মহামারীটি সাজিয়েছে।  তারা হিলারি ক্লিনটন, বারাক ওবামা, জো বিডেন এবং

107

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যু: বেঙ্গল পুলিশ অপরাধের দৃশ্য পুনর্গঠন করছে

19 August 2023
0
0
0

9 আগস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ঠিক কী ঘটেছিল তা বোঝার জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ শুক্রবার অপরাধের দৃশ্যটি পুনর্গঠন করেছে, যখন প্রথম বর্ষের একজন ছাত্র মানসিকভাবে নির্যাতন এবং দুই জনেরও বেশ

108

চন্দ্রযান-3 ঐতিহাসিক চন্দ্র অবতরণ: একটি নিরাপদ বংশধরের জন্য চ্যালেঞ্জগুলি অতিক্রম করা

19 August 2023
0
0
0

 মহাকাশযানটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে তার পরিকল্পিত নরম অবতরণের কাছাকাছি, যা 23 আগস্ট নির্ধারিত হয়েছে। তবে চাঁদে নরম অবতরণে বাধা কী?  গিরিশ লিঙ্গান্না, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক, ব্যাখ্যা করেছেন

109

প্রাক্তন মালাবার 2023 হিটস 'উচ্চ সাগর': ইন্দো-প্যাসিফিক নৌবাহিনীর সাথে নৌ মহড়া সমুদ্র পর্ব শুরু হয়েছে

19 August 2023
0
0
0

 মালাবারের সমুদ্র পর্ব শুরু হয়েছিল 19 আগস্ট, অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনী এই বছরের মহড়ার আয়োজন করে। অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে পর্বের শুরুতে "ক্রস-ডেকিং ব্যায়াম এবং অফিসার-অফ-দ্য-ওয়াচ ম্য

110

হিন্দি ও তামিল টিভি অভিনেতা পবন 25 বছর বয়সে মুম্বাইয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণে মারা যান

19 August 2023
0
0
0

 ইদানীং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অভিনেতাদের মৃত্যুর বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। সিদ্ধার্থ শুক্লা এবং পুনীত রাজকুমারের পর, জনপ্রিয় হিন্দি, এবং তামিল টেলিভিশন অভিনেতা পবন 25 বছর বয়সে ব্যাপক হার্ট অ্যাটা

111

ভারতীয় সেনাবাহিনী 115-ফুট দীর্ঘ সেতুটি এলওসির শেষ গ্রামের বাসিন্দাদের উৎসর্গ করেছে

19 August 2023
0
0
0

ভারতীয় সেনাবাহিনী মাছাল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণরেখার শেষ গ্রাম ডান্না গ্রামের স্থানীয়দের একটি স্বাধীনতা দিবস উপহার দিয়েছে মাছাল নালার উপর একটি সেতু উৎসর্গ করে। প্রয়াত মেজর ভগত সিং, বীর চক্র, যিনি 196

112

ভারত, চীন এলএসি বরাবর বিদ্যমান সমস্যাগুলির সমাধানের বিষয়ে সূক্ষ্ম বিশদ আলোচনা করতে মেজর জেনারেল স্তরের আলোচনা করেছে

19 August 2023
0
0
0

 ভারত ও চীন শুক্রবার পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর দৌলত বেগ ওল্ডি এবং চুশুলে মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক করেছে উভয় পক্ষের সামরিক আলোচনার 19 তম রাউন্ডের কয়েকদিন পর বিদ্যমান ঘর্ষণ

113

তাইওয়ানের আশেপাশে সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন

19 August 2023
0
0
0

নানজিং, 19 আগস্ট চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড শনিবার তাইওয়ানের চারপাশে নৌ ও বিমান বাহিনীর যৌথ বিমান ও সমুদ্র টহল এবং সামরিক মহড়া শুরু করেছে। এই টহল এবং মহড়ার উদ্দে

114

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর মামলা: আরও 3 আটক; ইউনিভ ইউজিসিকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট পাঠায়

19 August 2023
0
0
0

কলকাতা: গত সপ্তাহে র‌্যাগড এবং যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রথম বর্ষের স্নাতক ছাত্রের (ইউজি) মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সিনিয়র ছাত্র এবং প্রাক্তন ছ

115

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 463 মিলিয়ন ডলার জেনেটিক টেস্টিং কেলেঙ্কারির জন্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত ল্যাব মালিকের 27 বছরের জেল হয়েছে

19 August 2023
0
0
0

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া রাজ্যের একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ল্যাবরেটরি মালিককে মেডিকেয়ারকে প্রতারণা করার জন্য তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে 463 মিলিয়ন মার্কিন ডলারের জেনেটিক টেস্টিং কেলেঙ্কারিতে জড়িত

116

বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

19 August 2023
0
0
0

অন্যান্য প্রযুক্তির মতো ফটোগ্রাফির পেছনেও রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। আলো এবং রাসায়নিকের প্রাথমিক পরীক্ষা থেকে তাত্ক্ষণিক চিত্রের ডিজিটাল যুগ পর্যন্ত, ফটোগ্রাফির ইতিহাস উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা এবং মানুষের বুদ্ধি

117

ফ্লিপকার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিন্নি বনসাল ই-কমার্স স্টার্টআপের পরিকল্পনা করছেন: রিপোর্ট

19 August 2023
0
0
0

নতুন দিল্লি: ফ্লিপকার্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিন্নি বনসাল ভারতে ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স স্পেসে একটি নতুন স্টার্টআপের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। মানি কন্ট্রোল অনুসারে, বনসাল সম্প্রতি ফ্লিপকার্টে তার অবশিষ

118

7-বছরের জেল বা আজীবন: সরকার ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিলের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ 2.0 এর দাঁত দেয় | নিউজ 18 বিশ্লেষণ

21 August 2023
0
0
0

এমনকি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) বিল, 2023 সংসদের স্থায়ী কমিটি দ্বারা যাচাই করা হচ্ছে, বিলের প্রস্তাবিত ধারা, বিশেষ করে 150 ধারা, যা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসাবে পরিচিত IPC এর 124A ধারাকে প্রতিস্থাপন করবে

119

'সব চোখ এখন ভারতের দিকে': আন্তর্জাতিক মহাকাশচারীরা চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে অবতরণের জন্য নিঃশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করছেন

21 August 2023
0
0
0

 নতুন দিল্লি: রবিবার রাশিয়ার লুনা 25 চাঁদ মিশন ব্যর্থ হওয়ার পরে, সমস্ত আন্তর্জাতিক নভোচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান -3 এর নরম অবতরণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্র

120

কানাডা দাবানল: হাজার হাজার ব্রিটিশ কলম্বিয়া জুড়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে, এক অঞ্চলের প্রধানরা অগ্রগতি দাবি করেছেন

21 August 2023
0
0
0

 যেহেতু ব্রিটিশ কলাম্বিয়া জুড়ে কয়েক হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়ার আদেশের অধীনে ছিল এবং দমকলকর্মীরা রবিবার কানাডা জুড়ে ভয়াবহ দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, পরিবারের জন্য গ্রীষ্মের গন্তব্য হিসাবে পরি

121

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প

21 August 2023
0
0
0

 ওয়াশিংটন ডিসি, 21 আগস্ট লস অ্যাঞ্জেলেসের উত্তরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় 5.1 মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ রবিবার (স্থানীয় সময়) জানিয়েছে।  ওজাই শহরের চার মাইল দক্ষি

122

অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘ পাল্লার স্ট্রাইক সক্ষমতা বাড়াতে মার্কিন টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে সম্মত হয়েছে

21 August 2023
0
0
0

 অস্ট্রেলিয়ান সোমবার ঘোষণা করেছে যে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যন্ত কার্যকর দূরপাল্লার অস্ত্র কেনার জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেছে।  অস্ট্রেলিয়া চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির জবাব দিতে চ

123

220-ফুট গ্রহাণু আজ পৃথিবী গুঞ্জন! নাসা গতি, আকার এবং আরও অনেক কিছু প্রকাশ করে

21 August 2023
0
0
0

 980 সালে পিতা এবং পুত্র জুটি লুইস এবং ওয়াল্টার আলভারেজ দ্বারা প্রস্তাবিত আলভারেজ অনুমান, বলে যে একটি গ্রহাণু 65 মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত করেছিল এবং ডাইনোসরের বিলুপ্তি শুরু করেছিল।  যদিও এর প্র

124

দিল্লি: নিলোথি গ্রামের দুটি কারখানায় ব্যাপক আগুন লেগেছে, 20টি দমকল টেন্ডার মোতায়েন করা হয়েছে

21 August 2023
0
0
0

 সোমবার দিল্লির নিলোথি গ্রামে দুটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সকাল ৮.৫২ মিনিটে এই ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে, দিল্লি ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২০টি ফায়ার টেন্ডার মোতায়েন করা হয়েছে।  এই

125

দ্বিতীয় মেয়াদে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর

21 August 2023
0
0
0

 নতুন দিল্লি: সোমবার, বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সহ নয়জন সাংসদ রাজ্যসভার নতুন সদস্য হিসাবে শপথ নিয়েছেন।  সংসদ ভবনে শপথবাক্য পাঠ করান চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখর। জয়শঙ্কর, যিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে দ্ব

126

জোহানেসবার্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী-চীনের শি বৈঠক? কোন অফিসিয়াল?

21 August 2023
0
0
0

 জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলি চূড়ান্ত করা হচ্ছে, সোমবার পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেন, কিন্তু মোদি এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়

127

চন্দ্রযান-৩ অবতরণের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে যদি...": ইসরো বিজ্ঞানী

21 August 2023
0
0
0

 চাঁদের পৃষ্ঠে চন্দ্রযান -3 মিশনের ল্যান্ডার মডিউলের প্রত্যাশিত টাচডাউনটি বিলম্বিত হতে পারে যদি কোনও কারণ অনুকূল না বলে মনে হয়, নীলেশ এম দেশাই, ডিরেক্টর, স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার-ইসরো, আহমেদাবাদ সো

128

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি স্বদেশ কনক্লেভ 2023-এ প্রভাবশালীদের স্বাগত জানিয়েছেন, বলেছেন যে তারা আসল 'অমৃত কাল' তৈরি করবে

21 August 2023
0
0
0

 আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী এবং পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী, হরদীপ সিং পুরি সোমবার বলেছেন যে প্রভাবশালীরা, তাদের সম্ভাবনা এবং শক্তি দিয়ে, প্রকৃত 'অমৃত কাল' ঢালাই করবে। স্বদেশ কনক্লেভের চতু

129

2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হবেন? কংগ্রেস যা বলে তা এখানে

21 August 2023
0
0
0

নতুন দিল্লি: ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) হল ভারতের 26টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক জোট এবং এই দলের মূল লক্ষ্য হল 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে

130

চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদে অবতরণ: ভারতের 20টি পেরেক কামড়ানোর মিনিট

22 August 2023
0
0
0

কয়েক ঘন্টার মধ্যে, জাতি সম্মিলিতভাবে তার সবচেয়ে স্নায়ু-বিধ্বংসী মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি অনুভব করবে - বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের পৃষ্ঠে একটি সাহসী নরম অবতরণ করার সাথে সাথে একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিশ মিনিট।

131

পীযূষ গোয়েল পেঁয়াজ চাষীদের ন্যায্য পারিশ্রমিক সম্পর্কে আশ্বস্ত করেছেন; প্রতি কুইন্টাল রুপি 2,410 এ দাম সেট করে

22 August 2023
0
0
0

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল মঙ্গলবার কৃষকদের আশ্বস্ত করেছেন যে সরকার মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং অন্যান্য অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষীদের কাছ থেকে বাফার স্টকের জন্য অতিরিক্ত 2 লক্ষ টন পেঁয়াজ কেনা

132

'লুনা-25 বিধ্বস্ত হয়েছে কারণ...' রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থার পরিচালক প্রকাশ করলেন কেন এই সময় চাঁদ মিশন ব্যর্থ হয়েছে

22 August 2023
0
0
0

 নতুন দিল্লি: প্রায় 50 বছরের মধ্যে রাশিয়ার প্রথম চাঁদ মিশন 'লুনা-25' চাঁদের অন্ধকার দিকে নরম অবতরণ করতে 20 আগস্ট ব্যর্থ হয়েছিল। এটি 'প্রযুক্তিগত ত্রুটির' কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে বিধ

133

আজ কল্কি জয়ন্তী: জেনে নিন এর তাৎপর্য, শুভ সময় ও পূজার পদ্ধতি

22 August 2023
0
0
0

 আজ কল্কি জয়ন্তী। কল্কি ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার। শ্রীমদ্ভাগবতে, কল্কিকে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার হিসাবে স্বীকৃত করা হয়েছে যিনি কলিযুগের বর্তমান পর্বের অবসান ঘটাতে এবং সত্যযুগকে ফিরিয়ে আনতে জন্মগ্রহণ

134

আজ কল্কি জয়ন্তী: জেনে নিন এর তাৎপর্য, শুভ সময় ও পূজার পদ্ধতি

22 August 2023
0
0
0

 আজ কল্কি জয়ন্তী। কল্কি ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার। শ্রীমদ্ভাগবতে, কল্কিকে ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার হিসাবে স্বীকৃত করা হয়েছে যিনি কলিযুগের বর্তমান পর্বের অবসান ঘটাতে এবং সত্যযুগকে ফিরিয়ে আনতে জন্মগ্রহণ

135

জাপানের JAXA তার স্লিম 'মুন স্নাইপার' ল্যান্ডার 26 আগস্ট চালু করবে

22 August 2023
0
0
0

আমরা মহাকাশ অনুসন্ধানের বছরে প্রবেশ করেছি কারণ বিভিন্ন দেশ চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায় রয়েছে। 2023 সালে পরিকল্পিত এবং সম্পাদিত মিশনের সংখ্যা দেখে অবাক লাগে। প্রথমে, আমরা ভারতের তৃতীয় চাঁদ ম

136

নতুন দিল্লি: সুপারস্টার সানি দেওল গদর 2-এর প্রধান তারকা হিসাবে তার দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে এসেছেন - একটি চলচ্চিত্র যা বক্স অফিসে তার স্বপ্ন উপভোগ করছে৷

22 August 2023
0
0
0

করণ জোহর যেমন বলেছেন, গদর 2 'সকলের মন উড়িয়ে দিচ্ছে'। অনিল শর্মা পরিচালিত সিনেমাটি বক্স অফিসে একটি শক্তিশালী দৌড় অব্যাহত রেখেছে। করণ জোহর যেমন বলেছেন, গদর 2 'সকলের মন উড়িয়ে দিচ্ছে'। অনিল শর্মা পর

137

তোশাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে ইমরান খানের আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছে পাক আদালত

22 August 2023
0
0
0

ইসলামাবাদ, আগস্ট 22 (পিটিআই) মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় তার দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং সাজাকে চ্যালেঞ্জ করে পাকিস্তানের কারাগারে থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দায়ের

138

প্রধানমন্ত্রী মোদি 15 তম ব্রিকস সম্মেলনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন: দেখুন

22 August 2023
0
0
0

 নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার দুই দেশের সফরের প্রথম ধাপে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন। তিনি 15 তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন, যা 22-24 আগ

139

প্রতিরক্ষা গুপ্তচরবৃত্তি মামলা: সিবিআই কানাডা-ভিত্তিক ব্যবসায়ী রাহুল গাঙ্গলকে গ্রেপ্তার করেছে | চার্জের তালিকা

22 August 2023
0
0
0

নয়াদিল্লি: একটি বড় অগ্রগতিতে, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) মঙ্গলবার একটি প্রতিরক্ষা গুপ্তচরবৃত্তির মামলায় কানাডিয়ান নাগরিক রাহুল গাঙ্গলকে গ্রেপ্তার করেছে। রাহুল গাঙ্গল, যিনি গুরগাঁ

140

যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যু নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে অ্যান্টি-র‌্যাগিং হেল্পলাইন চালু করলেন মমতা

22 August 2023
0
0
0

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অ্যান্টি-র‌্যাগিং হেল্পলাইন চালু করেছেন। র‌্যাগিং-এর কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র

141

অভিনেতা প্রকাশ রাজের 'চাঁদের প্রথম ছবি' পোস্ট ছিন্নভিন্ন, টুইটার একে 'অন্ধ বিদ্বেষ' বলে অভিহিত করেছে

22 August 2023
0
0
0

সংক্ষিপ্ত প্রকাশ রাজ একটি নতুন টুইটে চন্দ্রযান 3 এবং ল্যান্ডার বিক্রমকে খনন করেছেন। টুইটার ব্যবহারকারীরা তাকে জাতীয় ও রাজনৈতিক ট্রোলিং সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন। অনেকেই মনে করেছিলেন যে তিনি চন্দ্রয

142

জোহানেসবার্গে ভারতীয় প্রবাসীদের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানানো হয়েছে

22 August 2023
0
0
0

ওহানেসবার্গ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের 15তম সংস্করণে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন। তার আগমনে, জোহানেসবার্গে ভারতীয় প্রবাসীদের পক্ষ থেকে তাকে উষ্ণ

143

'ভয়ে যাবেন না': ইউক্রেনে F-16 সরবরাহের সিদ্ধান্তের পর ইউরোপে রাশিয়া

23 August 2023
0
0
0

মস্কো: রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহের পশ্চিমের সিদ্ধান্তের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, ইউরোপকে পরামর্শ দিয়েছেন যে তারা তাদের "খেলনা প্ল

144

G20 শীর্ষ সম্মেলনের জন্য 8-10 সেপ্টেম্বর দিল্লি সরকারী অফিস, সমস্ত স্কুল বন্ধ থাকবে

23 August 2023
0
0
0

সমস্ত দিল্লি সরকার, দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) অফিসের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজগুলি 8 সেপ্টেম্বর থেকে 10 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় রাজধানীতে জি 20 শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে বন্ধ থাকবেদিল্লির

145

কাভেরী সারি: 25 আগস্ট TN-এর আবেদনের শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট

23 August 2023
0
0
0

সিনিয়র আইনজীবী মুকুল রোহাতগির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিজেআই বেঞ্চ গঠন করেছিলেন। নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার, তামিলনাড়ু সরকারের আবেদন বিবেচনা করবে যাতে কর্ণাটককে অবিলম্বে তার জলাশয় থেকে 24,00

146

মদ কেলেঙ্কারির মামলায় ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রীর ছেলের বাড়িতে ইডি রেইড

23 August 2023
0
0
0

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বুধবার ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রীর ছেলে এবং অন্যদের সাথে যুক্ত একাধিক প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়েছিল মদ কেলেঙ্কারির সাথে সম্পর্কিত অর্থ পাচারের মামলায়। মদ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ঝাড়খণ্

147

চন্দ্রযান-৩: ব্রিকস-এ দূরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তবে তিনি চাঁদে অবতরণ অনুষ্ঠানটি মিস করবেন না

23 August 2023
0
0
0

 চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার এবং রোভার আশা করি আজ যাবে যেখানে আগে কোনো মানুষ বা রোভার যায়নি। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এর দক্ষিণ মেরুতে চাঁদের মিশনটি সবাই দেখছে - বেশিরভাগই নিঃশ্বাসের সাথে, এক

148

'ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছেছি!': ইসরোর চন্দ্রযান-3 চাঁদে অবতরণ করেছে

23 August 2023
0
0
0

 বেঙ্গালুরু: চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে নরম-ভূমিতে প্রথম দেশ হয়ে ইতিহাস লেখার পরে, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাতিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে। "চন্দ্রযান-3 মিশন: `ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছেছি

149

'উধয়া ইউপিএসসি প্রিলিম পাস করলে রাজনীতি ছেড়ে দেব': TN BJP রাজ্য সভাপতি

23 August 2023
0
0
0

উহায়নিধি স্ট্যালিনের উচিত ছিল NEET ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নেওয়া, তিনি যোগ করেছেন। তিরুনেলভেলি: রাজ্যপাল আরএন রবির বিরুদ্ধে যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন

150

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের 5000-কোটি টার্মিনালে অবতরণ করার জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইট হবে

23 August 2023
0
0
0

 বেঙ্গালুরুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখন দুটি টার্মিনালের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা সুগম করেছে। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি 31 আগস্ট থেকে টার্মিনাল 2 (T2) এ স্থানান্তরিত হবে। এই উল্লে

151

রাশিয়া ইউক্রেনে পশ্চিমাদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চায়: ব্রিকসে ভ্লাদিমির পুতিন

23 August 2023
0
0
0

 রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন, 15 তম ব্রিকস সম্মেলনের সময়, ইউক্রেনে "পশ্চিম এবং তার উপগ্রহ দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধ" হিসাবে তিনি যাকে চিহ্নিত করেছেন তা শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। গোষ্ঠীর নে

152

কে জয়গনেশ কে? একজন ওয়েটার যিনি UPSC পরীক্ষায় AIR 156 দিয়ে পাশ করেছিলেন এবং ছয়বার ফেল করা সত্ত্বেও IAS অফিসার হয়েছিলেন

23 August 2023
0
0
0

নয়াদিল্লি: একজন আইএএস অফিসার হওয়া অনেকের কাছে লালিত একটি স্বপ্ন, যার জন্য বছরের পর বছর উত্সর্গ এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন৷ ব্যর্থতা এবং কষ্টকে অতিক্রম করে, একজন ব্যক্তির যাত্রা অটল সংকল্প এবং কঠোর পরিশ

153

মিজোরামে সেতু ধসে শ্রমিকদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সোরেন

23 August 2023
0
0
0

 রাঁচি, 23 আগস্ট (পিটিআই) ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বুধবার মিজোরামে একটি নির্মাণাধীন রেলওয়ে সেতু ধসে 17 জন শ্রমিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন৷ কমপক্ষে 17 জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং ধ্ব

154

থাকসিন সিনাওয়াত্রা: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে ফেরার পরে সাজাপ্রাপ্ত

23 August 2023
0
0
0

 থাইল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। আদালত বলেছে যে থাকসিনের কারাদণ্ডের সাথে তার অনুপস্থিতিতে তিনটি দোষী সাব্যস্ত হয়েছে - ক্ষমত

155

ইলন মাস্ক চাঁদে অবতরণের আগে ভারতের বাজেট-বান্ধব চন্দ্রযান 3-এর প্রশংসা করেছেন

23 August 2023
0
0
0

 ইলন মাস্ক ভারতের চন্দ্রযান-৩ চন্দ্র মিশনে অনুমোদনের সম্মতি দিয়েছেন, বিশেষ করে যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন যে এটি ‘ইন্টারস্টেলার’ ছবির নির্মাণ খরচের চেয়ে সস্তা। "ভারতের জন্য ভালো!" তিনি টুইট করেছেন।

156

'বিনামূল্যে' বিতরণ করা 'মানুষের রাজনৈতিক নেশা', বলেছেন জগদীপ ধানখর

23 August 2023
0
0
0

মঙ্গলবার ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখার বলেছেন যে "ফ্রিবিজ" বিতরণ একটি বিষয় যা রাজনৈতিক দলগুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে কারণ এটি অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে, হিন্দুস্তান টাইমস রিপোর্ট করেছে৷  উ

157

আর্যভট্ট থেকে চন্দ্রযান-৩: ভারতের মাইলস্টোন স্পেস মিশন

23 August 2023
0
0
0

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত অনেক যুগান্তকারী মিশন গ্রহণ করেছে এবং এইগুলি মাত্র কয়েকটি উদাহরণ। জাতি নিঃসন্দেহে মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি বিশিষ্ট শক্তি হিসাবে আরোহণ করে এবং এর আসন্ন উদ্যোগগুলি আরও

158

IAS অফিসার পল্লবী মিশ্রের সাথে দেখা করুন, তার স্বপ্নের জন্য আইন ছেড়েছেন, কোচিং ছাড়াই দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় UPSC ক্লিয়ার করেছেন, AIR পেয়েছেন...

24 August 2023
0
0
0

UPSC পরীক্ষা হল সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি যা একজন ব্যক্তিকে ক্র্যাক করতে হয়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী UPSC পরীক্ষার জন্য আবেদন করে এবং IAS অফিসার হওয়ার জন্য তাদের হৃদয় ও আত্মা দেয়

159

চীন প্রভাব হারালে ভারত ব্রিকস-এর কেন্দ্রে অবস্থান নেয়

24 August 2023
0
0
0

 এটা পরিহাসের বিষয় যে চীন এখন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) এবং BRICS উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের কাছে দ্বিতীয় বাঁশি বাজাচ্ছে। এটি উভয় পক্ষের দ্বারা স্বীকার করা হয় না, তবে উপলব্ধিগতভাবে এটি ক্রমব

160

মহাকাশে প্রথম ভারতীয় রাকেশ শর্মা কোথায়? সে কি করে? জেনে নিন তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে

24 August 2023
0
0
0

 রাকেশ শর্মা 1984 সালে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন যখন তিনি মহাকাশে ভ্রমণকারী প্রথম ভারতীয় হয়েছিলেন। তিনি একজন মহাকাশচারী এবং উইং কমান্ডার হিসাবে একটি ঐতিহাসিক মিশনে অংশ নিয়েছিলেন যা সাত দিন, 21 ঘন্টা এবং

161

চীনের অর্থনীতি নিয়ে বক্তৃতা এড়িয়ে গেছেন শি জিনপিং

24 August 2023
0
0
0

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ব্যবসায়িক ফোরামে যোগ দিতে ব্যর্থ হন যেখানে তিনি চীনের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য একটি বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হয়েছিল, কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এশিয়ান জা

162

69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 2023 সম্পূর্ণ বিজয়ীদের তালিকা: রকেট্রি, আলিয়া ভাট, কৃতি স্যানন, আল্লু অর্জুন, আরআরআর, গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি বড় জয়ী

24 August 2023
0
0
0

69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 2023 বিজয়ীদের তালিকা: বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে 69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিজয়ীদের ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠান, যা ভবিষ্যতের তারিখে অনুষ

163

69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 2023 সম্পূর্ণ বিজয়ীদের তালিকা: রকেট্রি, আলিয়া ভাট, কৃতি স্যানন, আল্লু অর্জুন, আরআরআর, গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি বড় জয়ী

24 August 2023
0
0
0

69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 2023 বিজয়ীদের তালিকা: বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লির ন্যাশনাল মিডিয়া সেন্টারে 69তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিজয়ীদের ঘোষণা করা হয়েছে। অনুষ্ঠান, যা ভবিষ্যতের তারিখে অনুষ

164

দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল 2023 হাইলাইটস: আর প্রজ্ঞানান্ধা বিশ্ব নং 1 ম্যাগনাস কার্লসনের কাছে হেরেছে

24 August 2023
0
0
0

দাবা বিশ্বকাপের ফাইনাল 2023 হাইলাইটস: বিশ্ব নং। 1 নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসেন ভারতের 18 বছর বয়সী রমেশবাবু প্রজ্ঞানান্ধাকে তাদের FIDE দাবা বিশ্বকাপ 2023-এর ফাইনাল দ্বৈরথে পরাজিত করেছেন কারণ সর্বকালের সে

165

ইরান, সৌদি আরব, মিশর, ইথিওপিয়া, আর্জেন্টিনা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ব্রিকসের নতুন সদস্য

24 August 2023
0
0
0

 গ্রুপিংয়ে ভর্তির সম্প্রসারণের নির্দেশিকা নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছে, ব্রিকস নেতারা বৃহস্পতিবার আর্জেন্টিনা, ইরান, সৌদি আরব, মিশর, ইথিওপিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে জানুয়ারী 2024 থেকে কার্যকর নতুন সদস্য হ

166

বিতর্কিত মুন পোস্ট নিয়ে 'ডাম্ব ট্রল'-এ পাল্টা আঘাত করলেন প্রকাশ রাজ৷

24 August 2023
0
0
0

 প্রকাশ রাজ শুধুমাত্র অন-স্ক্রিনেই নয়, অফ-স্ক্রিনেও সবচেয়ে বিনোদনকারী মানুষদের একজন। অভিনেতা সম্প্রতি তার আগের চাঁদের পোস্ট সম্পর্কিত একটি নতুন পোস্ট শেয়ার করেছেন যা ইন্টারনেটে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে

167

'নিতিন গড়করি খুব ইতিবাচক...': তেজস্বী যাদব তার সাথে দেখা করার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন

24 August 2023
0
0
0

নতুন দিল্লি: বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করির সাথে পরবর্তী দিল্লির বাসভবনে সাক্ষাত করেছেন এবং তার রাজ্যের বেশ কয়েকটি সড়ক প্রকল্

168

'ভারতের মোদি এই বিশ্বের বাইরে': প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি প্রথম পাতার শিরোনাম দেখুন

24 August 2023
0
0
0

 পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশিষ্ট সংবাদপত্র থেকে চাঁদে চন্দ্রযান-3-এর ঐতিহাসিক অবতরণ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ

169

SC CWMA কে 1 সেপ্টেম্বরের আগে কাবেরী জল বণ্টনের রিপোর্ট চেয়েছে৷

25 August 2023
0
0
0

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট কাভেরী ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (সিডব্লিউএমএ) কে কর্ণাটক দ্বারা তামিলনাড়ুতে নদীর জলের নিষ্কাশনের অবস্থা, বিশেষ করে পরবর্তী পাক্ষিকের জন্য এর প্রাপ্যতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদ

170

ভারত ও ইরান চাবাহার বন্দর ইস্যুতে বিদেশী সালিশি ধারা বাদ দিয়েছে

25 August 2023
0
0
0

ভারত-ইরান বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি পদক্ষেপে, তেহরান এবং নয়াদিল্লি চাবাহার বন্দর সম্পর্কিত বিদেশী আদালতে সালিশির জন্য ধারাটি বাদ দিতে সম্মত হয়েছে, যা এই সুবিধার চারপাশে দীর্ঘমেয়াদী চু

171

শি মোদীকে বলেছেন যে চীন, ভারতের উচিত সম্পর্কের 'সামগ্রিক স্বার্থ' বিবেচনা করা এবং সীমান্ত সমস্যা 'সঠিকভাবে পরিচালনা করা'

25 August 2023
0
0
0

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক শুক্রবারের প্রথম দিকে বলেছে যে রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলেছেন যে উভয় পক্ষের সম্পর্কের "সামগ্রিক স্বার্থের কথা মাথায় রাখা উচিত" এবং "সীমান্ত

172

নীরজ চোপড়া 2024 অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে, 88.77 মিটার নিক্ষেপের সাথে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে প্রবেশ করেছে

25 August 2023
0
0
0

25 আগস্ট নীরজ চোপড়া তার প্রথম প্রচেষ্টায় 88.77 মিটার বড় থ্রো দিয়ে 2024 অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন, যা তাকে বুদাপেস্টে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জ্যাভলিন থ্রো প্রতিযোগিতার ফাইনালে নিয়ে গিয

173

ট্রাম্প আটলান্টা জেলে আত্মসমর্পণ করেন, মুখের শট নেওয়া হয়, তারপর ছেড়ে দেন

25 August 2023
0
0
0

 প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে 24শে আগস্ট জর্জিয়ার জেলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দক্ষিণ রাজ্যে 2020 সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করার জন্য তাণ্ডব এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে।

174

মিজোরাম ব্রিজ ধসে | বাংলার 23 জন শ্রমিক নিহত হওয়ার আশঙ্কা, 18 জনের লাশ পাওয়া গেছে

25 August 2023
0
0
0

মিজোরামের আইজল জেলায় ধসে পড়া নির্মাণাধীন রেলওয়ে সেতুতে উপস্থিত 26 জন শ্রমিকের মধ্যে 23 জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও পুলিশ মাত্র 18 জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, কর্মকর্তারা 24 আগস্ট বলে

175

সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা পুরুষদের দল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ, মামলা দায়ের

25 August 2023
0
0
0

বৃহস্পতিবার কলকাতার যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়, এক দিন পর একদল পুরুষ ও মহিলা মিলিটারি কর্মীদের মতো ছদ্মবেশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে এবং এর প্রশাসনিক সদর দফতরের বাইরে অবস্থান নেয়।

176

চন্দ্রযান-3 দ্বারা পাঠানো চাঁদ থেকে নতুন তথ্য সারা বিশ্বকে উপকৃত করবে: রাষ্ট্রপতি মুর্মু

25 August 2023
0
0
0

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু শুক্রবার বলেছিলেন যে চন্দ্রযান -3 এর মাধ্যমে চাঁদ থেকে প্রাপ্ত নতুন তথ্য পুরো বিশ্বকে উপকৃত করবে। এখানে একটি ইভেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময়, রাষ্ট্রপতি "ভারতের বিজ্ঞানীদের অভূতপূ

177

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক 5টি ফ্লিট সাপোর্ট জাহাজের জন্য HSL-এর সাথে 19,000 কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে

25 August 2023
0
0
0

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শুক্রবার ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি নৌবহর সমর্থন জাহাজ অধিগ্রহণের জন্য হিন্দুস্তান শিপইয়ার্ড লিমিটেড (এইচএসএল) এর সাথে 19,000 কোটি টাকার একটি চুক্তি সিল করেছে।  44,000 টন ক্যাট

178

NIA আদালত খালিস্তানি সন্ত্রাসী নীতাকে 30 দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দিয়েছে

25 August 2023
0
0
0

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) আদালত খালিস্তানি সন্ত্রাসী রঞ্জিত সিং নীতাকে আত্মসমর্পণ করতে বা কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আল্টিমেটাম জারি করেছে। মোহালি ভিত্তিক বিশেষ এনআইএ আদালত তাকে আত্মসমর

179

আল্লু অর্জুন জাতীয় পুরষ্কার জিতলেন, পুষ্পাকে প্রত্যাখ্যান নিয়ে মহেশ বাবুর পুরানো টুইটটি আবার সামনে এল

26 August 2023
0
0
0

সুকুমার পরিচালিত পুষ্প: দ্য রাইজ- পার্ট ওয়ান মুক্তির প্রায় দুই বছর পরে আল্লু অর্জুনকে কেবল প্যান-ইন্ডিয়া তারকাই করে তোলেনি, এটি এখন ইতিহাসে প্রথম তেলুগু অভিনেতা হিসাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয়

180

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসছেন না: ক্রেমলিন

26 August 2023
0
0
0

 নয়াদিল্লি: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য G20 সম্মেলনে ব্যক্তিগতভাবে যোগ দেবেন না, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার রাশিয়ান মিডিয়াকে বলেছেন। ভা

181

মাদুরাইয়ের কাছে ট্যুরিস্ট ট্রেনে আগুন লেগে 10 জনের মৃত্যু; 10L টাকা এক্স-গ্রেশিয়া ঘোষণা করা হয়েছে

26 August 2023
0
0
0

 উত্তর প্রদেশের লখনউ থেকে রামেশ্বরম যাওয়ার পথে ভারত গৌরব ট্যুরিস্ট ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পরে দশ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং 20 জন আহত হয়েছে। দক্ষিণ রেলওয়ে মৃতদের পরিবারকে 10 লক্ষ টাকা এক্স-গ্রেশিয়া ঘো

182

'জওহর বনাম শিবশক্তি': প্রধানমন্ত্রী মোদি চন্দ্রযান ল্যান্ডিং সাইটগুলির নাম দেওয়ার পরে 'পরিবারকে আগে' রাখার জন্য বিজেপি কংগ্রেসের নিন্দা করেছে

26 August 2023
0
0
0

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসরোর শেষ দুটি চাঁদ মিশনের অবতরণ সাইটের নাম ঘোষণা করার পরপরই, বিজেপি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পুরো বন্দুকযুদ্ধে চলে যায় এবং পরিবারকে প্রথমে রাখার জন্য গ্র্যান্ড পুরানো দলকে অভি

183

আসামে এমবিবিএস ভর্তির জন্য এনআরআই কোটা স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট

26 August 2023
0
0
0

 26শে আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আসামে এমবিবিএস ভর্তির জন্য অনাবাসী ভারতীয় (এনআরআই) কোটা বাস্তবায়ন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। এই সিদ্ধান্তটি অ্যাডভোকেট আদিজ জামানের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার (পিআইএল)

184

চন্দ্রযান-৩: বেঙ্গালুরুতে ইসরো বিজ্ঞানীদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

26 August 2023
0
0
0

নতুন দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার বেঙ্গালুরুতে ইসরো বিজ্ঞানীদের সাথে দেখা করেছেন এবং চন্দ্রযান -3 মিশনের সাফল্যের জন্য দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমানাথ ব্যক্তিগতভ

185

চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের জন্য আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই, গ্রিসে ভারতীয় প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন

26 August 2023
0
0
0

 40 বছরের মধ্যে এটি প্রথমবারের মতো যে কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রিস সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের শীর্ষ এজেন্ডা হল এথেন্স এবং নয়া দিল্লির মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক ইস্যুতে স

186

চীনের সামরিক তৎপরতা অব্যাহত থাকায় তাইওয়ান যুদ্ধ ড্রোন, জেট বিমানের খবর দিয়েছে

26 August 2023
0
0
0

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শনিবার সকালে বলেছে যে গত 24 ঘন্টার মধ্যে এটি তাইওয়ানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় পূর্ব উপকূলে উড়ে যাওয়া একটি যুদ্ধ ড্রোন সহ দ্বীপের বায়ু প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশকারী 20টি চ

187

রাশিয়ান দলত্যাগী এবং তাদের সরঞ্জামাদি উদ্ধারের জন্য ইউক্রেনের প্রচেষ্টা দেশটিকে একটি Mi-8 হেলিকপ্টার এবং ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশ অবতরণ করতে সাহায্য করেছিল

26 August 2023
0
0
0

একজন রাশিয়ান পাইলট এই সপ্তাহে একটি Mi-8 হেলিকপ্টার এবং ফাইটার জেটের যন্ত্রাংশ নিয়ে ইউক্রেনে চলে গেছেন। কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের প্রচেষ্টার পর এই ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে এই ধরনের দলত্যাগের ঘটনা। রাশি

188

প্রধানমন্ত্রী মোদি বক্তৃতা থামিয়েছেন, মেডিকেল টিমকে ব্যক্তিগত পতন বলে ডাকলেন

26 August 2023
0
0
0

 নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অত্যধিক তাপ এবং ক্লান্তির কারণে ভেঙে পড়া ভিড়ের মধ্যে একজন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার জন্য তার বক্তৃতা মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী, যিনি দিল্লির পালা

189

রোজগার মেলা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ 51,000 টিরও বেশি নিয়োগ পত্র বিতরন করবেন নতুন নিযুক্ত CAPF নিয়োগকারীদের

28 August 2023
0
0
0

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের 51,000 টিরও বেশি নিয়োগ পত্র বিতরণ করবেন। একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী রোজগার মেলার 8 তম সংস্করণের সূচনা করবেন এবং কার্যত দেশের 45টি স্

190

NASA 24548 kmph বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুকে ট্র্যাক করে!

28 August 2023
0
0
0

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) একটি দ্রুত উন্নয়নশীল ক্ষেত্র যা প্রায় প্রতিটি সেক্টরে তার চিহ্ন তৈরি করছে। এমনকি সম্প্রতি এটি ভারতকে সফলভাবে চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে তার ল্যান্ডার স্থাপন করতে সাহায্য করেছে,

191

70 ডিগ্রি সেলসিয়াস চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রত্যাশিত ছিল না: বিজ্ঞানীরা

28 August 2023
0
0
0

চন্দ্রযান 3 রবিবার যেমন দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার উপর প্রথম অনুসন্ধান পাঠিয়েছে, বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে পৃষ্ঠের কাছাকাছি 70-ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রত্যাশিত নয়। চন্দ্রযান 3 যেখানে অ

192

'দুর্যোগের টিকিট': রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করার পর বিজেপি কংগ্রেসকে উপহাস করেছে

28 August 2023
0
0
0

 ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সোমবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর একটি কার্টুন পোস্ট করেছে, বিরোধী দল ভারতকে উপহাস করেছে যখন গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি তাকে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর

193

'ভারতীয়রা যে কোনও কিছু করতে পারে,' বিশ্ব সি'শিপ সোনা জেতার পরে নীরজ চোপড়া বলেছেন

28 August 2023
0
0
0

নীরজ চোপড়া তার ঐতিহাসিক 2023 বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের স্বর্ণপদক তার ভারতীয় ভক্তদের উৎসর্গ করেছেন।  2023 সালের বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তার স্বর্ণপদক জয়ের পর, 27 আগস্ট রবিবার,

194

মোদির গ্রীস সফর শুধু ভূমধ্যসাগরীয় আউটরিচের জন্য নয়, একটি সমর্থন শিবিরও।

28 August 2023
0
0
0

এটি আংশিকভাবে, তুর্কি শত্রুতার প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং তুরস্ক, পাকিস্তান এবং আজারবাইজানের উদীয়মান অক্ষ। নরেন্দ্র মোদি চল্লিশ বছরের মধ্যে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন যিনি বিশ্বের দুটি

195

এসসি বলেছে যে এটি একটি 'সমস্যা' যদি J&K একাডেমিককে 370 ধারার মামলায় হাজির হওয়ার জন্য স্থগিত করা হয়

28 August 2023
0
0
0

২৮শে আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেলকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের দ্বারা একজন প্রবীণ কাশ্মীরি প্রভাষক, জারুর আহমেদ ভাটকে তার চাকরি থেকে বরখাস্তের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছে, কারণ 370 ধারা

196

মুকেশ আম্বানির সন্তানরা রিলায়েন্স বোর্ডে যোগ দেয়; পদত্যাগ করছেন নীতা আম্বানি

28 August 2023
0
0
0

 রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (আরআইএল) পরিচালনা পর্ষদ, মানবসম্পদ, মনোনয়ন এবং পারিশ্রমিক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত তার সভায়, ইশা আম্বানি, আকাশ আম্বানি এবং অনন্তের নিয়োগের অনুম

197

শুধু দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, ভারতের আহ্বায়ক হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই: নীতীশ কুমার

28 August 2023
0
0
0

 বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সোমবার বলেছেন যে তিনি কেবল বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন এবং ভারতীয় জাতীয় উন্নয়নমূলক অন্তর্ভুক্তিমূলক জোট (ইন্ডিয়া) গ্রুপিংয়ের আহ্বায়ক হওয়ার কোনও ইচ্

198

G20 শীর্ষ সম্মেলন: পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তার অপারগতা জানিয়েছেন, বলেছেন রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন এফএম সের্গেই ল্যাভরভ

28 August 2023
0
0
0

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেছেন যিনি আগামী মাসে এখানে G20 শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে অপারগতা জানিয়েছেন এবং জানিয়েছিলেন যে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব

199

সূর্য অধ্যয়নের জন্য আদিত্য-এল 1 মিশন 2 সেপ্টেম্বর চালু হবে, ঘোষণা করেছে ISRO

28 August 2023
0
0
0

সফল চন্দ্রযান-3 মিশনের পর, ISRO সোমবার শ্রীহরিকোটা মহাকাশবন্দর থেকে 2 সেপ্টেম্বর সকাল 11.50 টায় সূর্য অধ্যয়নের জন্য আদিত্য-এল1 মহাকাশযান উৎক্ষেপণের ঘোষণা করেছে। আদিত্য-এল1 মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে প

200

সেনসেক্স 177 পয়েন্ট বেড়েছে, নিফটি শুরুর বাণিজ্যে 62 লাভ করেছে

28 August 2023
0
0
0

 ইক্যুইটি বেঞ্চমার্ক সূচকগুলি সোমবার, 28 আগস্ট, 2023-এ প্রথম বাণিজ্যে উঠেছিল, বিশ্ব বাজারে শক্তির ট্র্যাকিং। BSE সেনসেক্স প্রথম বাণিজ্যে 177.63 পয়েন্ট বেড়ে 65,064.14 এ পৌঁছেছে। NSE নিফটি 62.2 পয়েন্

Loading ...