shabd-logo

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : চতুরে চতুরে

12 November 2023

0 Viewed 0

বিমলা আসিয়া নিজ কক্ষে পালঙ্কের উপর বসিলেন। বিমলার মুখ অতি হর্ষপ্রফুল্ল তিনি গতিকে মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছেন। কক্ষমধ্যে প্রদীপ জ্বলিতেছে; সম্মুখে মুকুর; বেশভূষা যেরূপ প্রদোষকালে ছিল, সেইরূপই রহিয়াছে; বিমলা দর্পণাভ্যন্তরে মুহূৰ্তজন্য নিজ প্রতিমূর্তি নিরীক্ষণ করিলেন। প্রদোষকালে যেরূপ কুটিল- কেশবিন্যাস করিয়াছিলেন, তাহা সেইরূপ কর্ণাভরণ পীবরাংসসংসক্ত হইয়া দুলিতেছে। বিমলা উপাধানে পৃষ্ঠ রাখিয়া অর্ধ শয়ন, অর্ধ উপবেশন করিয়া রহিয়াছেন; বিমলা মুকুরে নিজ-লাবণ্য দেখিয়া হাস্য করিলেন। বিমলা এই ভাবিয়া হাসিলেন যে, দিগ্গরজ পণ্ডিত নিতান্ত নিষ্কারণে গৃহত্যাগী হইতে চাহেন নাই। বিমলা জগৎসিংহের পুনরাগমন প্রতীক্ষা করিয়া আছেন, এমত সময়ে আম্রকাননমধ্যে গম্ভীর তুর্যনিনাদ হইল। বিমলা চমকিয়া উঠিলেন এবং ভীতা হইলেন; সিংহদ্বার ব্যতীত আম্রকাননে কখনই তূর্যধ্বনি হইয়া থাকে না, এত রাত্রেই বা তুর্যধ্বনি কেন হয়? বিশেষ সেই রাত্রে মন্দিরে গমনকালে ও প্রত্যাগমনকালে যাহা যাহা দেখিয়াছেন, তৎসমুদয় স্মরণ হইল। বিমলার তৎক্ষণাৎ বিবেচনা হইল, এ তূর্যধ্বনি কোন অমঙ্গল ঘটনার পূর্বলক্ষণ। অতএব সশঙ্কচিত্তে তিনি বাতায়ন- সন্নিধানে গিয়া আম্রকানন প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। কাননমধ্যে বিশেষ কিছুই দেখিতে পাইলেন না। বিমলা ব্যস্তচিত্তে নিজ কক্ষ হইতে নির্গত হইলেন; যে শ্রেণীতে তাঁহার কক্ষ, তৎপরেই প্রাঙ্গণ; প্রাঙ্গণপরেই আর এক কক্ষশ্রেণী; সেই শ্রেণীতে প্রসাদোপরি উঠিবার সোপান আছে। বিমলা কক্ষত্যাগপূর্বক সে সোপানাবলী আরোহণ করিয়া ছাদের উপর উঠিলেন; ইতস্তত: নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন; তথাপি কাননের গভীর ছায়ান্ধকার জন্য কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিমলা দ্বিগুণ উদ্বিগ্নচিত্তে ছাদের আলিসার নিকটে গেলেন; তদুপরি বক্ষ স্থাপনপূর্বক মুখ নত করিয়া দুর্গমূল পর্যন্ত দেখিতে লাগিলেন; কিছুই দেখিতে পাইলেন না। শ্যামোজ্জ্বল শাখাপল্লব সকল স্নিগ্ধ চন্দ্রকরে প্লাবিত; কখন কখন সুমন্দ পরনান্দোলনে পিঙ্গলবর্ণ দেখাইতেছিল; কাননতলে ঘোরান্ধকার, কোথাও কোথাও শাখাপত্রাদির বিচ্ছেদে চন্দ্রালোক পতিত হইয়াছে; আমোদরের স্থিরায়ু-মধ্যে নীলাম্বর, চন্দ্র ও তারা সহিত প্রতিবিম্বিত; দূরে, অপরপারস্থিত অট্টালিকাসকলের গগনস্পর্শী মূর্তি, কোথাও বা তৎ প্রাসাদস্থিত প্রহরীর অবয়ব। এতদ্ব্যতীত আর কিছুই লক্ষ্য করিতে পারিলেন না। বিমলা বিষণ্‌ণ মনে প্রত্যাবর্তন করিতে উদ্যত হইলেন, এমন সময়ে তাঁহার অকস্মাৎ বোধ হইল, যেন কেহ পশ্চাৎ হইতে তাঁহার পৃষ্ঠদেশ অঙ্গুলি দ্বারা স্পর্শ করিল। বিমলা চমকিত হইয়া মুখ ফিরাইয়া দেখিলেন, একজন সশস্ত্র অজ্ঞাত পুরুষ দণ্ডায়মান রহিয়াছে। বিমলা চিত্রার্পিত পুত্তলীবৎ নিষ্পন্দ হইলেন।

শস্ত্রধারী কহিল, "চীৎকার করিও না। সুন্দরীর মুখে চীৎকার ভাল শুনায় না। যে ব্যক্তি অকস্মাৎ এইরূপ বিমলাকে বিহ্বল করিল, তাহার পরিচ্ছদ পাঠান জাতীয় সৈনিক পুরুষদিগের ন্যায়। পরিচ্ছদের পারিপাট্য ও মহার্ঘ গুণ দেখিয়া অনায়াসে প্রতীতি হইতে পারিত, এ ব্যক্তি কোন মহৎ পদাভিষিক্ত। অদ্যাপি তাহার বয়স ত্রিংশতের অধিক হয় নাই; কান্তি সাতিশয় শ্রীমান, তাঁহার প্রশস্ত ললাটোপরি যে উষ্ণীষ সংস্থাপিত ছিল, তাহাতে এক খণ্ড মহার্ঘ হীরক শোভিত ছিল। বিমলার যদি তৎক্ষণে মনের স্থিরতা থাকিত, তবে বুঝিতে পারিতেন যে স্বয়ং জগৎসিংহের সহিত তুলনায় এ ব্যক্তি নিতান্ত ন্যূন হইবেন না; জগৎসিংহের সদৃশ দীর্ঘায়ত বা বিশালোরঙ্ক নহেন, কিন্তু তৎসদৃশ বীরত্বব্যঞ্জক সুন্দরকান্তি; তদধিক সুকুমার দেহ। তাঁহার বহুমূল্য কটিবন্ধে প্রবালজড়িত কোষমধ্যে দামাস্ক ছুরিকা ছিল; হস্তে নিষ্কোষিত তরবার। অন্য প্রহরণ ছিল না।

সৈনিক পুরুষ কহিলেন, "চীৎকার করিও না। চীৎকার করিলে তোমার বিপদ ঘটিবে।" প্রত্যুৎপন্নবুদ্ধিশালিনী বিমলা ক্ষণকাল মাত্র বিহ্বলা ছিলেন; শস্ত্রধারীর দ্বিরুক্তিতে তাঁহার অভিপ্রায় বুঝিতে পারিলেন। বিমলার পশ্চাতেই ছাদের শেষ সম্মুখেই সশস্ত্র যোদ্ধা; ছাদ হইতে বিমলাকে নীচে ফেলিয়া দেওয়াও কঠিন নহে। বুঝিয়া সুবুদ্ধি বিমলা কহিলেন, “কে তুমি?”

সৈনিক কহিলেন, “আমার পরিচয়ে তোমার কি হইবে?

বিমলা কহিলেন, “তুমি কি জন্য এ দুর্গমধ্যে আসিয়াছ? চোরেরা শূলে যায়, তুমি কি শোন নাই?"

সৈনিক। সুন্দরি! আমি চোর নই।

বি। তুমি কি প্রকারে দুর্গমধ্যে আসিলে?

সৈ। তোমারই অনুকম্পায়। তুমি যখন জানালা খুলিয়া রাখিয়াছিলে, তখন প্রবেশ

করিয়াছিলাম; তোমারই পশ্চাৎ পশ্চাৎ এ ছাদে আসিয়াছি।

বিমলা কপালে করাঘাত করিলেন। পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে?

সৈনিক কহিল, “তোমার নিকট এক্ষণে পরিচয় দিলেই বা হানি কি? আমি পাঠান।"

বি। এত পরিচয় হইল না; জানিলাম যে, জাতিতে পাঠান, – কে তুমি? -

সৈ। ঈশ্বরেচ্ছায়, এ দীনের নাম ওসমান খাঁ। বি। ওলমান খাঁ কে, আমি চিনি না!

সৈ। ওসমান খাঁ, কতলু খাঁর সেনাপতি।

বিমলার শরীর কম্পান্বিত হইতে লাগিল। ইচ্ছা-কোনরূপে পলায়ন করিয়া বীরেন্দ্রসিংহকে সংবাদ করেন; কিন্তু তাহার কিছুমাত্র উপায় ছিল না। সম্মুখে

সেনাপতি গতিরোধ করিয়া দণ্ডায়মান ছিলেন। অনন্যগতি হইয়া বিমলা এই বিবেচনা করিলেন যে, এক্ষণে সেনাপতিকে যতক্ষণ কথাবার্তায় নিযুক্ত রাখিতে পারেন, ততক্ষণ অবকাশ। পশ্চাৎ দুর্গপ্রাসাদস্থ কোন প্রহরী সেদিকে আসিলেও আসিতে পারে, অতএব পুনরপি কথোপকথন আরম্ভ করিলেন, “আপনি কেন এ দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিয়াছেন?"

ওসমান খাঁ উত্তর করিলেন, “আমরা বীরেন্দ্রসিংহকে অনুনয় করিয়া দূত প্রেরণ করিয়াছিলাম। প্রত্যুত্তরে তিনি কহিয়াছেন যে, তোমরা পার, সসৈন্য দুর্গে আসিও।" বিমলা কহিলেন, "বুঝিলাম, দুর্গাধিপতি আপনাদিগের সহিত মৈত্র না করিয়া, মোগলের পক্ষ হইয়াছে বলিয়া আপনি দুর্গ অধিকার করিতে আসিয়াছেন। কিন্তু আপনি একক দেখিতেছি?" ওস। আপাততঃ আমি একক।

বিমলা কহিলেন, "সেইজন্যই বোধ করি, শঙ্কা প্রযুক্ত আমাকে যাইতে দিতেছেন না।” ভীরুতা অপবাদে পাঠান সেনাপতি বিরক্ত হইয়া, তাঁহার গতি যুক্ত করিয়া সাহস প্রকাশ করিলেও করিতে পারেন, এই দুরাশাতেই বিমলা এই কথা বলিলেন। ওসমান খাঁ ঈষৎ হাস্য করিয়া বলিলেন, "সুন্দরি! তোমার নিকট কেবল তোমার কটাক্ষকে শঙ্কা করিতে হয়, আমার সে শঙ্কাও বড় নাই, তোমার নিকট ভিক্ষা আছে।”

বিমলা কৌতূহলিনী হইয়া ওসমান খাঁর মুখপানে চাহিয়া রহিলেন। ওসমান খাঁ কহিলেন, “তোমার ওড়নার অঞ্চলে যে জানালার চাবি আছে, তাহা আমাকে দান করিয়া বাধিত কর। তোমার অঙ্গস্পর্শ করিয়া অবমাননা করিতে সঙ্কোচ করি।" গবাক্ষের চাবি যে, সেনাপতির অভীষ্টসিদ্ধি পক্ষে নিতান্ত প্রয়োজনীয়, তাহা বুঝিতে বিমলার ন্যায় চতুরার অধিককাল অপেক্ষা করে না। বুঝিতে পারিয়া বিমলা দেখিলেন, ইহার উপায় নাই। যে বলে লইতে পারে, তাহার যাজ্ঞা করা ব্যঙ্গ করা মাত্র। চাবি না দিলে সেনাপতি এখনই বলে লইবেক। অপর কেহ তৎক্ষণাৎ চাবি ফেলিয়া দিত সন্দেহ নাই; কিন্তু চতুরা বিমলা কহিলেন, “মহাশয়! আমি ইচ্ছাক্রমে চাবি না দিলে আপনি কি প্রকারে লইবেন?"

এই বলিতে বলিতে বিমলা অঙ্গ হইতে ওড়না খুলিয়া হস্তে লইলেন। ওসমানের চক্ষু ওড়নার দিকে; তিনি উত্তর করিলেন, "ইচ্ছাক্রমে না দিলে তোমার অঙ্গ-স্পর্শ-সুখ লাভ করিব।"

"করুন" বলিয়া বিমলা হস্তস্থিত বস্ত্র আম্রকাননে নিক্ষেপ করিলেন। ওসমানের চক্ষু ওড়নার প্রতি ছিল; যেই বিমলা নিক্ষেপ করিয়াছেন, ওসমান অমনি সঙ্গে সঙ্গে হস্ত প্রসারণ করিয়া উড্ডীয়মান বস্ত্র ধরিলেন।

ওসমান খাঁ ওড়না হস্তগত করিয়া এক হতে বিমলার হস্ত বজ্রমুষ্টিতে ধরিলেন, দত্ত দ্বারা ওড়না ধরিয়া দ্বিতীয় হস্তে চাবি খুলিয়া নিজ কটিবন্ধে রাখিলেন। পরে যাহা করিলেন, তাহাতে বিমলার মুখ শুকাইল। ওসমান বিমলাকে এক শত সেলাম করিয়া জোড়হাত বলিলেন, "মাফ করিবেন।" এই বলিয়া ওড়না লইয়া তদ্বারা বিমলার দুই হস্ত আলিসার সহিত দৃঢ়বদ্ধ করিলেন। বিমলা কহিলেন, "এ কি?"

ওসমান কহিলেন, "প্রেমের ফাঁস।"

বি। এ দুষ্ককর্মের ফল আপনি অচিরাৎ পাইবেন!

ওসমান বিমলাকে তদবস্থায় রাখিয়া চলিয়া গেলেন। বিমলা চীৎকার করিতে লাগিলেন। কিন্তু কিছু ফলোদয় হইল না। কেহ শুনিতে পাইল না। ওসমান পূর্বপথে অবতরণ করিয়া পুনর্বার বিমলার কক্ষের নীচের কক্ষে গেলেন। তথায় বিমলার ন্যায় জানালার চাবি ফিরাইয়া জানালা দেয়ালের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দিলেন। পথ মুক্ত হইলে ওসমান মৃদু মৃদু শিশ দিতে লাগিলেন। তচ্ছ্রবণমাত্রেই বৃক্ষান্তরাল হইতে এক জন পাদুকাশূন্য যোদ্ধা গবাক্ষ নিকটে আসিয়া গৃহমধ্যে প্রবেশ করিল। সে ব্যক্তি প্রবেশ করিলে অপর এক ব্যক্তি আসিল। এইরূপে ক্রমে ক্রমে বহুসংখ্যক পাঠান সেনা নি:শব্দে দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিল। শেষে যে ব্যক্তি গবাক্ষ নিকটে আসিল, ওসমান তাহাকে কহিলেন, "আর না, তোমরা বাহিরে থাক আমার পূর্বকথিত সঙ্কেতধ্বনি শুনিলে তোমরা বাহির হইতে দুর্গ আক্রমণ করিও এই কথা তুমি তাজ খাঁকে বলিও।"

সে ব্যক্তি ফিরিয়া গেল। ওসমান লব্ধপ্রবেশ সেনা লইয়া পুনরপি নি:শব্দ-পদ-সঞ্চারে প্রাসাদারোহণ করিলেন; যে ছাদে বিমলা বন্ধন-দশায় বসিয়া আছেন, সেই ছাদ দিয়া গমনকালে কহিলেন, "এই স্ত্রীলোকটি বড় বুদ্ধিমতী; ইহাকে কদাপি বিশ্বাস নাই; রহিম সেখা তুমি ইহার নিকট প্রহরী থাক; যদি পলায়নের চেষ্টা বা কাহারও সহিত কথা কহিতে উদ্যোগ করে, কি উচ্চ কথা কয়, তবে স্ত্রীবধে ঘৃণা করিও না।

* যে আজ্ঞা," বলিয়া রহিম তথায় প্রহরী রহিল। পাঠান সেনা ছাদে ছাদে দুর্গের অন্য দিকে চলিয়া গেল।

43
Articles
দুর্গেশনন্দিনী
0.0
দুর্গাসন্ধিনী" বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস। গল্পটি 18 শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ঐতিহাসিক ঘটনাকে ঘিরে। উপন্যাসটি সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিতে স্থাপিত হয়েছে, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ আন্দোলন। নায়ক, সুরজা মুখী, একজন সাহসী এবং দেশপ্রেমিক মহিলা যিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠেন। সুরজা মুখীর স্বামী সতীশ প্রথমে ব্রিটিশদের অনুগত থাকলেও পরে সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেন। উপন্যাসটি দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। সুরজা মুখীর চরিত্রটি ভারতীয় জনগণের অদম্য চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। বিদ্রোহ গতি লাভ করার সাথে সাথে গল্পটি বিভিন্ন মোড় এবং বাঁক নিয়ে উন্মোচিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দক্ষতার সাথে এই আখ্যানে গল্পের সাথে ইতিহাসের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। উপন্যাসটি নিপীড়নের মুখে সন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের সাহস ও সংকল্পকে চিত্রিত করেছে। গল্পের রোমান্টিক উপাদানগুলি চরিত্র এবং তাদের প্রেরণায় গভীরতা যোগ করে। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা উদযাপন করে "দুর্গাসন্ধিনী" বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।
1

প্রথম খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ: দেবমন্দির

10 November 2023
0
0
0

৯৯৭ বঙ্গাব্দের নিদাঘশেষে একদিন একজন অশ্বারোহী পুরুষ বিষ্ণুপুর হইতে মান্দারণের পথে একাকী গমন করিতেছিলেন। দিনমণি অস্তাচলগমনোদ্যোগী দেখিয়া অশ্বারোহী দ্রুতবেগে অশ্ব সঞ্চালন করিতে লাগিলেন। কেন না, সম্মুখে

2

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : আলাপ

10 November 2023
0
0
0

প্রথমে যুবক নিজ কৌতূহল পরবশতা প্রকাশ করিলেন। বয়োজ্যেষ্ঠাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “অনুভবে বুঝিতেছি, আপনারা ভাগ্যবানের পুরস্ত্রী, পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতে সঙ্কোচ হইতেছে; কিন্তু আমার পরিচয় দেওয়ার পক্ষে

3

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : মোগল পাঠান

10 November 2023
0
0
0

নিশীথকালে জগৎসিহ শৈলেশ্বরের মন্দির হইতে যাত্রা করিলেন। আপাতত: তাঁহার অনুগমনে অথবা মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী মনোমোহিনীর সংবাদ কথনে পাঠক মহাশয়দিগের কৌতূহল নিবারণ করিতে পারিলাম না। জগৎসিংহ রাজপুত, কি প্রয়োজনে

4

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : নবীন সেনাপতি

10 November 2023
0
0
0

শৈলেশ্বর-মন্দির হইতে যাত্রা করিয়া জগৎসিংহ পিতৃশিবিরে উপস্থিত হইলে পর, মহারাজ মানসিংহ পুত্রমুখাৎ অবগত হইলেন যে, প্রায় পঞ্চাশৎ সহস্র পাঠান সেনা ধরপুর গ্রামের নিকট শিবির সংস্থাপন করিয়া নিকটস্থ গ্রামসক

5

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : গড় মান্দারণ

10 November 2023
0
0
0

যে পথে বিষ্ণুপুর প্রদেশ হইতে জগৎসিংহ জাহানাবাদে প্রত্যাগমন করিয়াছিলেন, সেই পথের চিহ্ন অদ্যাপি বর্তমান আছে। তাহার কিঞ্চিৎ দক্ষিণে মান্দারণ গ্রাম। মান্দারণ এক্ষণে ক্ষুদ্র গ্রাম, কিন্তু তৎকালে ইহা সৌষ্ঠ

6

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : অভিরাম স্বামীর মন্ত্রণা

10 November 2023
0
0
0

তিলোত্তমা ও বিমলা শৈলেশ্বরের হইতে নির্বিঘ্নে দুর্গে প্রত্যাগমন করিলেন। প্রত্যাগমনের তিন চারি দিবস পরে বীরেন্দ্রসিংহ নিজ দেওয়ানখানায় মছনদেবসিয়া আছেন, এমন সময় অভিরাম স্বামী তথায় উপস্থিত হইলেন। বীরে

7

সপ্তম পরিচ্ছেদ : অসাবধানতা

10 November 2023
0
0
0

দুর্গের যে ভাগে দুর্গমূল বিধৌত করিয়া আমোদর নদী কলকল রবে প্রবহণ করে, সেই অংশে এক কক্ষবাতায়নে বসিয়া তিলোত্তমা নদীজলাবর্ত নিরীক্ষণ করিতেছিলেন। সায়াহ্নকাল উপস্থিত, পশ্চিমগগনে অস্তাচলগত দিনমণির ম্লান ক

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ : বিমলার মন্ত্রণা

11 November 2023
0
0
0

বিমলা অভিরাম স্বামীর কুটীরমধ্যে দণ্ডায়মান আছেন। অভিরাম স্বামী ভূমির উপর যোগাসনে বসিয়াছেন। জগৎসিংহের সহিত যে প্রকারে বিমলা ও তিলোত্তমার সাক্ষাৎ হইয়াছিল, বিমলা তাহা আদ্যোপান্ত অভিরাম স্বামীর নিকট বর্

9

নবম পরিচ্ছেদ : কুলতিলক

11 November 2023
0
0
0

জগৎসিংহ পিতৃচরণ হইতে সসৈন্য বিদায় হইয়া যে যে কার্য করিলেন, তাহাতে পাঠান সৈন্যমধ্যে মহাভীতি প্রচার হইল। কুমার প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, পঞ্চ সহস্র সেনা লইয়া তিনি কতলু খাঁর পঞ্চাশৎ সহস্রকে সুবর্ণরেখা পা

10

দশম পরিচ্ছেদ: মন্ত্রণার পর উদ্যোগ

11 November 2023
0
0
0

মন্ত্রণার পর উদ্যোগয়ে দিবস অভিরাম স্বামী বিমলার প্রতি কৃরুদ্ধ হইয়া তাহাকে গৃহবহিষ্কৃত করিয়া দেন, তাহার পরদিন প্রদোষকালে বিমলা নিজ কক্ষে বসিয়া বেশভূষা করিতেছিলেন। পঞ্চত্রিংশৎ বর্ষীয়ার বেশভূষা? কেন

11

একাদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির দৌত্য

11 November 2023
0
0
0

এদিকে বিমলার ইঙ্গিতমত আশমানি গৃহের বাহিরে আসিয়া প্রতীক্ষা করিতেছিল। বিমলা আসিয়া তাহাকে কহিলেন, "আশমানি, তোমার সঙ্গে কোন বিশেষ গোপনীয় কথা আছে।" আশমানি কহিল, “বেশভূষা দেখিয়া আমিও ভাবিতেছিলাম, আজ কি

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির অভিসার

11 November 2023
0
0
0

দিগ্‌গজ গজপতির মনোমোহিনী আশমানি কিরূপ রূপবতী, জানিতে পাঠক মহাশয়ের কৌতূহল জন্মিয়াছে সন্দেহ নাই। অতএব তাঁহার সাধ পুরাইব। কিন্তু স্ত্রীলোকের রূপবর্ণন-বিষয়ে গ্রন্থকারগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করিয়া থাকেন,

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : আশমানির প্রেম

11 November 2023
0
0
0

দ্বার খুলিলে আশমানি গৃহে প্রবেশ করিবামাত্র দিগ্‌গজের হৃদ্বোধ হইল যে, প্রণয়িনী আসিয়াছেন, ইহার সরস অভ্যর্থনা করা চাই, অতএব হস্ত উত্তোলন করিয়া কহিলেন, "ওঁ আয়াহি বরদে দেবি!” আশমানি কহিল, এটি যে বড় স

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : দিগ্‌গজহরণ

11 November 2023
0
0
0

এমন সময় বিমলা আসিয়া বাহির হইতে দ্বার নাড়িল। বিমলা দ্বারপার্শ্ব হইতে অলক্ষ্যে সকল দেখিতেছিল। দ্বারের শব্দ শুনিয়া দিগ্‌গজের মুখ শুকাইল। আশমানি বলিল, "কি সর্বনাশ, বিমলা আসিতেছে- লুকোও লুকোও | " দিগ্‌

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : দিগ্‌গজের সাহস

12 November 2023
0
0
0

বিমলা দ্রুতপাদবিক্ষেপে শীঘ্র মান্দারণ পশ্চাৎ করিলেন। নিশা অত্যন্ত অন্ধকার, নক্ষত্রালোকে সাবধানে চলিতে লাগিলেন। প্রান্তরপথে প্রবেশ করিয়া বিমলা কিঞ্চিৎ শঙ্কান্বিতা হইলেন; সমভিব্যাহারী নিঃশব্দে পশ্চাৎ প

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ : শৈলেশ্বর সাক্ষাৎ

12 November 2023
0
0
0

বিমলা মন্দিমধ্যে প্রবেশ করিয়া প্রথমে বসিয়া একটু স্থির হইলেন। পরে নতভাবে শৈলেশ্বরকে প্রণাম করিয়া যুবরাজকে প্রণাম করিলেন। কিয়ৎক্ষণ উভয়েই নীরব হইয়া রহিলেন, কে কি বলিয়া আপন মনোগত ভাব ব্যক্ত করিবেন?

17

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : বীর পঞ্চমী

12 November 2023
0
0
0

উভয়ে শৈলেশ্বর প্রণাম করিয়া, সশঙ্কচিত্তে গড় মান্দারণ অভিমুখে যাত্রা করিলেন। কিঞ্চিৎ নীরবে গেলেন। কিছু দূর গিয়া রাজকুমার প্রথমে কথা কহিলেন, "বিমলে, আমার এক বিষয়ে কৌতূহল আছে। তুমি শুনিয়া কি বলিবে ব

18

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : চতুরে চতুরে

12 November 2023
0
0
0

বিমলা আসিয়া নিজ কক্ষে পালঙ্কের উপর বসিলেন। বিমলার মুখ অতি হর্ষপ্রফুল্ল তিনি গতিকে মনোরথ সিদ্ধ করিয়াছেন। কক্ষমধ্যে প্রদীপ জ্বলিতেছে; সম্মুখে মুকুর; বেশভূষা যেরূপ প্রদোষকালে ছিল, সেইরূপই রহিয়াছে; বিম

19

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : প্রেমিকে প্রেমিকে

12 November 2023
0
0
0

বিমলা যখন দেখিলেন যে, চতুর ওসমান অন্যত্র গেলেন, তখন তিনি ভরসা পাইলেন যে কৌশলে মুক্তি পাইতে পারিবেন। শীঘ্র তাহার উপায় চেষ্টা করিতে লাগিলেন। প্রহরী কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান থাকিলে বিমলা তাহার সহিত কথোপকথন

20

বিংশ পরিচ্ছেদ : প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে

12 November 2023
0
0
0

বিমুক্তি লাভ করিয়া বিমলার প্রথম কার্য বীরেন্দ্রসিংহকে সংবাদ দান। ঊর্ধ্বশ্বাসে বীরেন্দ্রের শয়নকক্ষাভিমুখে ধাবমানা হইলেন। অর্ধপথ যাইতে না যাইতেই “আল্লা – ল্লা- হো" পাঠান সেনার চীৎকারধ্বনি তাঁহার - কর্

21

একবিংশ পরিচ্ছেদ : খড়ো খড়ো

12 November 2023
0
0
0

বিমলাকে দেখিয়া জগৎসিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, "কিসের কোলাহল?” বিমলা কহিলেন, “পাঠানের জয়ধ্বনি। শীঘ্র উপায় করুন; শত্রু আর তিলার্ধ মাত্রে এ ঘরের মধ্যে আসিবে।" জগৎসিংহ ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, "বীরেন্

22

দ্বিতীয় খণ্ড প্রথম পরিচ্ছেদ : আয়েষা

13 November 2023
0
0
0

আয়েষা, জগৎসিংহ যখন চক্ষুরুন্মীলন করিলেন, তখন দেখিলেন যে, তিনি সুরমা হৰ্মামধ্যে পর্যঙ্কে শয়ন করিয়া আছেন। যে ঘরে তিনি শয়ন করিয়া আছেন, তথায় যে আর কখন আসিয়াছিলেন, এমত বোধ হইল না; কক্ষটি অতি প্রশস্ত

23

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : কুসুমের মধ্যে পাষাণ

13 November 2023
0
0
0

কুসুমের মধ্যে পাষাণসেই দিবস অনেক রাত্রি পর্যন্ত আয়েষা ও ওসমান জগৎসিংহের নিকট বসিয়া রহিলেন। জগৎসিংহের কখন চেতনা হইতেছে, কখন মূর্ছা হইতেছে; হকিম অনেকবার আসিয়া দেখিয়া গেলেন। আয়েষা অবিশ্রান্তা হইয়া

24

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : তুমি না তিলোত্তমা

13 November 2023
0
0
0

পরদিন প্রদোষকালে জগৎসিংহের অবস্থান-কক্ষে আয়েষা, ওসমান আর চিকিৎসক পূর্ববৎ নিঃশব্দে বসিয়া আছেন; আয়েষা পালঙ্কে বসিয়া স্বহস্তে ব্যজনাদি করিতেছেন; চিকিৎসক ঘন ঘন জগৎসিংহের নাড়ী দেখিতেছেন; জগৎসিংহ অচেতন

25

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : অবগুণ্ঠনবতী

13 November 2023
0
0
0

দুর্গজয়ের দুই দিবস পরে, বেলা প্রহরেকের সময়ে কতলু খাঁ নিজ দুর্গমধ্যে দরবারে বসিয়াছেন। দুই দিকে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া পারিষদগুণ দণ্ডায়মান আছে। সম্মুখস্থ ভূমিখণ্ডে বহু সহস্র লোক নিঃশব্দে রহিয়াছে। অদ্য বী

26

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : বিধবা

13 November 2023
0
0
0

তিলোত্তমা কোথায়? পিতৃহীনা, অনাথিনী বালিকা কোথায়? বিমলাই বা কোথায়? কোথা হইতে বিমলা স্বামীর বধ্যভূমিতে আসিয়া দর্শন দিয়াছিলেন? তাহার পরই আবার কোথায় গেলেন? কেন বীরেন্দ্রসিংহ মৃত্যুকালে প্রিয়তমা কন

27

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : বিমলার পত্র

13 November 2023
0
0
0

“যুবরাজ! আমি প্রতিশ্রুত ছিলাম যে, একদিন আপনার পরিচয় দিব। এখন তাহার সময় উপস্থিত হইয়াছে। ভরসা করিয়াছিলাম, আমার তিলোত্তমা অম্বরের সিংহাসনরূঢ়া হইলে পরিচয় দিব। সে সকল আশাভরসা নির্মূল হইয়াছে। বোধ কর

28

সপ্তম পরিচ্ছেদ : বিমলার পত্র সমাপ্ত

13 November 2023
0
0
0

“আমি পূর্বেই বলিয়াছি যে, গড় মান্দারণের কোন দরিদ্রা রমণী আমার পিতার ঔরসে গর্ভবতী হয়েন। আমার মাতার যেরূপ অদৃষ্টলিপির ফল, ইঁহারও তদ্রুপ ঘটিয়াছিল। ইঁহার গর্ভেও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে, এবং কন্যার মাত

29

অষ্টম পরিচ্ছেদ : আরোগ্য

14 November 2023
0
0
0

দিন যায়। তুমি যাহা ইচ্ছা তাহা কর, দিন যাবে, রবে না। যে অবস্থায় ইচ্ছা, সে অবস্থায় থাক, দিন যাবে, রবে না। পথিক! বড় দারুণ ঝটিকা বৃষ্টিতে পতিত হইয়াছ? উচ্চরবে শিরোপরি ঘনগর্জন হইতেছে? বৃষ্টিতে প্লাবিত

30

নবম পরিচ্ছেদ : দিগ্‌গজ সংবাদ

14 November 2023
0
0
0

ভৃত্যসঙ্গে গজপতি বিদ্যাদিগ্নযজ্ঞ কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিলে রাজকুমার জিজ্ঞাসিলেন, “আপনি ব্রাহ্মণ?" দিগ্গপজ হস্তভঙ্গী সহিত কহিলেন, "যাবৎ মেরৌ স্থিতা দেবা যাবদ্ গঙ্গা মহীতলে, অসারে খলু সংসারে সারং শ্বশুরমন

31

দশম পরিচ্ছেদ : প্রতিমা বিসর্জন

14 November 2023
0
0
0

বলা বাহুল্য যে, জগৎসিংহের সে রাত্রে নিদ্রা আসিল না। শয্যা অগ্নিবিকীর্ণবৎ, হৃদয়মধ্যে অগ্নি জ্বলিতেছে। যে তিলোত্তমা মরিলে জগৎসিংহ পৃথিবীশূন্য দেখিতেন, এখন সে তিলোত্তমা প্রাণত্যাগ করিল না কেন, ইহাই পরিত

32

একাদশ পরিচ্ছেদ : গৃহান্তর

14 November 2023
0
0
0

অপরাহে কথামত ওসমান রাজপুত্র সমক্ষে উপস্থিত হইয়া কহিলেন, "যুবরাজ! প্রত্যুত্তর পাঠাইবার অভিপ্রায় হইয়াছে কি?" যুবরাজ প্রত্যুত্তর লিখিয়া রাখিয়াছিলেন, পত্র হস্তে লইয়া ওসমানকে দিলেন। ওসমান লিপি হতে ল

33

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : অলৌকিক আভরণ

14 November 2023
0
0
0

মহোৎসব উপস্থিত। অদ্য কত খাঁর জন্মদিন। দিবসে রঙ্গ, নৃত্য, দান, আহার, পান ইত্যাদিতে সকলেই ব্যাপৃত ছিল। রাত্রিতে ততোধিক। এইমাত্র সায়াহ্নকাল উত্তীর্ণ হইয়াছে: দুর্গমধ্যে আলোকময়; সৈনিক, সিপাহী, ওমরাহ, ভৃ

34

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : অঙ্গুরীয় প্রদর্শন

14 November 2023
1
0
0

বিমলা গমন করিলে পর একাকিনী কক্ষমধ্যে বসিয়া তিলোত্তমা যে সকল চিন্তা করিতে ছিলেন, তাহা সুখদুঃখ উভয়েরই কারণ। পাপাত্মার পিঞ্জর হইতে যে আশু মুক্তি পাইবার সম্ভাবনা হইয়াছে, এ কথা মুহূর্মুহু: মনে পড়িতে লা

35

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : মোহ

15 November 2023
1
0
0

মোহজগৎসিংহ আনত হইয়া দেখিলেন, তিলোত্তমার স্পন্দ নাই। নিজ বস্ত্র দ্বারা ব্যজন করিতে লাগিলেন, তথাপি তাঁহার কোন সংজ্ঞাচিহ্ন না দেখিয়া প্রহরীকে ডাকিলেন। তিলোত্তমার সঙ্গী তাঁহার নিকটে আসিল। জগৎসিংহ তাঁহা

36

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : মুক্ত কণ্ঠ

15 November 2023
1
0
0

তিলোত্তমা ও দাসী কক্ষমধ্য হইতে গমন করিলে আয়েষা শয্যার উপর আসিয়া বসিলেন; তথায় আর বসিবার আসন ছিল না; জগৎসিংহ নিকটে দাঁড়াইলেন। আয়েষা কবরী হইতে একটি গোলার খসাইয়া তাহার দলগুলি নখে ছিঁড়িতে ছিঁড়িতে ক

37

ষোড়শ পরিচ্ছেদ দাসী চরণে

15 November 2023
1
0
0

সেই রজনীতে কতলু খাঁর বিলাস-গৃহমধ্যে নৃত্য চলিতেছিল। তথায় অপরা নর্তকী কেহ ছিল না-বা অপর শ্রোতা কেহ ছিল না। জন্মদিনোপলক্ষে মোগল সম্রাটেরা যেরূপ পারিষদমণ্ডলী মধ্যে আমোদ-পরায়ণ থাকিতেন, কতলু খাঁর সেরূপ ছ

38

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : অন্তিম কাল

15 November 2023
1
0
0

বিমলার পলায়নের ক্ষণমাত্র পরেই একজন কর্মচারী অতিব্যস্তে জগৎসিংহের কারাগারমধ্যে আসিয়া কহিল, "খুবরাজ! নবাব সাহেবের মৃত্যুকাল উপস্থিত, তিনি আপনাকে স্মরণ করিয়াছেন।" যুবরাজ চমৎকৃত হইয়া কহিলেন, “সে কি!"

39

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : প্রতিযোগিতা

15 November 2023
1
0
0

জগৎসিংহ কারামুক্ত হইয়া পিতৃশিবিরে গমনান্তর নিজ স্বীকারানুযায়ী যোগল পাঠানে সন্ধিসম্বন্ধ করাইলেন। পাঠানেরা দিল্লীশ্বরের অধীনতা স্বীকার করিয়াও উৎকলাধিকারী হইয়া রহিলেন। সন্ধির বিস্তারিত বিবরণ ইতিবৃত্ত

40

ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ : আয়েষার পত্র

15 November 2023
1
0
0

আয়েষা লেখনী হস্তে পত্র লিখিতে বসিয়াছেন। মুখকান্তি গম্ভীর, স্থির; জগৎসিংহকে পত্র লিখিতেছেন। একখানা কাগজ লইয়া পত্র আরম্ভ করিলেন। প্রথমে লিখিলেন, "প্রাণাধিক," তখনই প্রাণাধিক শব্দ কাটিয়া দিয়া লিখিলেন

41

বিংশ পরিচ্ছেদ : দীপ নির্বাণোন্মুখ

15 November 2023
1
0
0

যে পর্যন্ত তিলোত্তমা আশমানির সঙ্গে আয়েষার নিকট হইতে বিদায় লইয়া আসিয়াছিলেন, সেই পর্যন্ত আর কেহ তাঁহার কোন সংবাদ পায় নাই। তিলোত্তমা, বিমলা, আশমানি, অভিরাম স্বামী, কাহারও কোন উদ্দেশ পাওয়া যায় নাই।

42

একবিংশ পরিচ্ছেদ : সফলে নিষ্ফল স্বপ্ন

15 November 2023
1
0
0

পিতৃহীনা অনাথিনী, রুগ্না শয্যায়; -জগৎসিংহ তাঁহার শয্যাপার্শ্বে। দিন যায়, রাত্রি যায়, আর বার দিন আসে; আর বার দিন যায়, রাত্রি আসে। রাজপুত-কুল-গৌরব তাহার ভগ্ন পালঙ্কের পাশে বসিয়া শুশ্রূষা করিতেছেন;

43

দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ : সমাপ্তি

15 November 2023
1
0
0

ফুল ফুটিল। অভিরাম স্বামী গড় মান্দারণে গমন করিয়া মহাসমারোহের সহিত দৌহিত্রীকে জগৎসিংহের পাণিগৃহীত্রী করিলেন। উৎসবাদির জন্য জগৎসিংহ নিজ সহচরবর্গকে জাহানাবাদ হইতে নিমন্ত্রণ করিয়া আনাইয়াছিলেন। তিলোত্ত

---