shabd-logo

তিন- [ক]

31 October 2023

5 Viewed 5

প্রসিদ্ধ জয়রাম মুখোর দৌহিত্র শ্রীমান বীরচন্দ্র বন্দ্যোর সহিতই বিবাহ স্থির হইয়া গেছে। আগামীকল্য বরপক্ষ আশীর্বাদ করিতে আসিবেন, বাড়িতে তাহার উদ্যোগ-আয়োজন চলিতেছে। অগ্রহায়ণের শেষাশেষি বিবাহ, একটিমাত্র দিন আছে, তাহার পরে দীর্ঘদিনব্যাপী অকাল। এই সূত্রে বহু বৎসর পরে বহু সাধ্যসাধনায় শাশুড়ী কাশী হইতে আসিয়াছেন। সন্ধ্যার পরে ভাঁড়ার ঘরের দাওয়ায় বসিয়া প্রদীপের আলোকে জগদ্ধাত্রী মিষ্টান্ন রচনা করিতেছিলেন এবং তাহারই অদূরে কম্বলের আসনে বসিয়া বৃদ্ধা শাশুড়ী কালীতারা মালা জপ করিতেছিলেন। শীতের আভাস দিয়াছে, তাঁহার গায়ে একখানি গেরুয়া রঙের দুই পরিধানেও সেই রঙে রঞ্জিত বস্ত্র, পুত্রবধূর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া শান্তস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিয়ের বুঝি আর দিন-দশেক বাকী রইল বৌমাঃ জগদ্ধাত্রী মুখ তুলিয়া চাহিলেন, কহিলেন, কোথায় দশ দিন মা? এই আজ নিয়ে ন'দিন। কাজটা হয়ে গেলে যেন বাঁচি। এ পোড়া দেশে কিছুই যেন না হলে আর ভরসা হয় না।

শাশুড়ী একটু হাসিয়া কহিলেন, সব দেশেই এই ভয় মা, কেবল তোমাদের গ্রামেই নয়। কিন্তু এতে আশা-ভরসাই বা কি আছে বৌমা, অমন লক্ষ্মীর প্রতিমা মেয়েকে যখন জলে ফেলেই দিচ্ছ?

জগদ্ধাত্রী চুপ করিয়া কাজ করিতে লাগিলেন। উত্তর দিলেন না।

শাশুড়ী বলিলেন, প্রিয়র কাছে সমস্ত শুনেছি। আজ সকালে স্নানের পথে অরুণকেও দেখলাম। এমন সোনার চাঁদ ছেলেকে তোমার পছন্দ হলো না বৌমা? জগদ্ধাত্রী বিশেষ খুশী হইলেন না, বলিলেন, কিন্তু কেবল পছন্দই ত সব নয় মা?

শাশুড়ী বলিলেন, নয় মানি। কিন্তু ফিরে এসে সন্ধ্যার কাছে তার কথা পেড়ে একটু একটু করে যতটুকু পেলাম তাতেই যেন দুঃখে আমার বুক ফাটতে লাগল। হাঁ বৌমা, মা হয়েও কি এ তোমার চোখে পড়ল না?

চোখে তাঁহার বহুদিন পড়িয়াছে, কিন্তু স্বীকার করা যে একেবারে অসম্ভব। বরঞ্চ সভয়ে এদিকে-ওদিকে চাহিয়া চাপা গলায় বলিলেন, কাজ-কর্মের বাড়ি, কেউ যদি এসে পড়ে ত শুনতে পাবে মা।

শাশুড়ী আর কিছুই বলিলেন না, কিন্তু জগদ্ধাত্রী নিজের কণ্ঠস্বরের রুক্ষতায় নিজেই লজ্জিত হইয়া আস্তে আস্তে বলিলেন, আচ্ছা মা, তুমি কি ক'রে এমন কথা বল? তোমার এতবড় কুলের মর্যাদা ভাসিয়ে দিয়ে কি ক'রে লোকের কাছে মুখ দেখাবে বল ত? তা ছাড়া তার ত জাতত নেই। যারা তার হয়ে তোমার কাছে ওকালতি করেছে, এ কথাটা কি তোমাকে তারা বলেছে।

জগদ্ধাত্রী মনে করিলেন, ইহার পরে আর কাহারও বলিবার কিছু থাকিতেই পারে না। কিন্তু শাশুড়ী ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন, বলেছে বৈ কি। কিন্তু তার কিছুই যায়নি বৌমা, সমস্তই বজায় আছে। কেবল তার বিদ্যা-বুদ্ধির জন্যেই বলচি নে। ছোটজাত বলে যে অনাথা মেয়ে দুটোকে তোমরা তাড়িয়ে দিলে, সে তাদের বুকে তুলে নিলে । তার জাত ভগবানের বরে অমর হয়ে গেছে, বৌমা, তাকে আর মানুষ মারতে পারে না।

জগদ্ধাত্রী মনে মনে কুপিত হইয়া বলিলেন, অনাথা বলেই কি হাড়ী-দুলে হয়ে বামুনের ভিটে-বাড়িতে বাস করবে মা? এই কি শাস্তরে বলে?

শাশুড়ী বলিলেন, শাস্তারে কি বলে তা ঠিক জানিনে বৌমা। কিন্তু নিজের ব্যথা যে কত তা ত ঠিক জানি আমার কথা কাউকে বলবার নয়, কিন্তু এ ব্যথা যদি পেতে, ত বুঝতে বৌমা, ছোটজাত বলে মানুষকে ঘৃণা করার শাস্তি ভগবান প্রতিনিয়ত কোথা দিয়ে দিচ্ছেন। এই যে কুলের মর্যাদা, এ যে কত বড় পাপ, কত বড় ফাঁকির বোঝা, এ যদি টের পেতে ত নিজের মেয়েটাকে এমন ক'রে বলি দিতে পারতে না। জাত আর কুলই সত্যি, আর দুটো মানুষের সমস্ত জীবনের সুখদুঃখ কি এত বড়ই মিথ্যে মা জগদ্ধাত্রী ক্ষুব্ধ হইয়া কহিলেন, তা হলে কি এই মিথ্যে নিয়েই পৃথিবী চলচে মা?

শাশুড়ী একটু ম্লান হাসিয়া কহিলেন, পৃথিবী ত চলে না বৌমা — চলে কেবল আমাদের মত অভিশপ্ত জাতের। আমি বিদেশে থাকি, অনেক বয়স হ'ল, অনেক দেখলাম, অনেক দুঃখ পেলাম, – আমি জানি যাকে বংশের মর্যাদা বলে ভাবচো, যথার্থ সে কি! কিন্তু কথাটা তোমাকে খুলে বলতেও পারব না, হয়ত বুঝতেও তুমি পারবে না। তবুও এই কথাটা আমার মনে রেখো মা, মিথ্যাটাকে মর্যাদা দিয়ে যত উঁচু করে রাখবে তার মধ্যে তত গ্লানি, তত পঙ্ক, তত অনাচার জমা হয়ে উঠতে থাকবে। উঠেচেও তাই।

জগদ্ধাত্রী কি একটা উত্তর দিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু মেয়েকে আসিতে দেখিয়া চুপ করিয়া গেলেন। সন্ধ্যা খিড়কির বাগানে এতক্ষণ তাহার ফুলগাছে জল দিতেছিল, বাড়িতে প্রবেশ করিয়া হাতের ঘটিটা প্রাঙ্গণের চাতালের উপর রাখিয়া দিয়া সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইল। মায়ের প্রতি চাহিয়া কহিল, ও কি মা? চন্দ্রপুলি বুঝি? বলিয়াই হঠাৎ পিতামহীর দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, হাঁ ঠাকুরমা, সকলের নাড়ু আছে, আমাদের নেই কেন?

কালীতারা সস্নেহে হাসিয়া বলিলেন, তা ত আমি জানিনে দিদি । সন্ধ্যা কহিল, বাঃ তোমার শাশুড়িকে বুঝি এ কথা জিজ্ঞাসা করোনি।

কালীতারা বলিলেন, কি করে আর জিজ্ঞেস করব ভাই, জন্মে ত কোনদিন শ্বশুরবাড়ির মুখ দেখিনি।

জগদ্ধাত্রী ইহা জানিতেন, তিনি লজ্জিত-মুখে নীরবে কাজ করিতে লাগিলেন। সন্ধ্যা প্রশ্ন করিল, আচ্ছা ঠাকুরমা, তোমার সবসুদ্ধ কতগুলি সতীন ছিল। এক শ? দু'শ? তিন শ'? চার শ'?

ঠাকুরমা পুনরায় হাসিলেন — ঠিক জানিনে দিদি, কিন্তু অসম্ভবও নয়। আমার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে, তখনই তাঁর পরিবার ছিল ছিয়াশিটি। তারপরেও অনেক বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু কত, সে বোধ হয় তিনি নিজেও জানতেন না, তা আমি জানব কি করে? সন্ধ্যা বলিল, আহা, তার লেখা ত ছিল? সেই খাতাখানা যদি কেড়ে রাখতে ঠাকুরমা, তা হলে বাবাকে দিয়ে আমি খোঁজ করাতুম তাঁরা সব এখন কে কোথায় আচেন। হয়ত আমার কত কাকা কত জ্যাঠামশাই, কত ভাই-বোন সব আছেন, না ঠাকুরমা? আহা, তাঁদের যদি সব জানতে পারা যেত!

একটুখানি হাসিয়াই প্রশ্ন করিল, আচ্ছা ঠাকুরমা, ঠাকুদ্দামশাই কালে-ভদ্রে কখনো এলে তাঁকে ক' টাকা দিতে হতো? দর-দস্তুর নিয়ে তোমাদের সঙ্গে বুঝি ঝগড়া বেধে যেতো, না?

জগদ্ধাত্রী রাগ করিয়া উঠিলেন। বলিলেন, জ্যাঠামি রেখে ঠাকুরের শেতলের জোপাড়টি সেরে ফেল দিকি সন্ধ্যে ঠাকুরমা নিজেও একটু হাসিয়া বলিলেন, সমস্তই ত জানো দিদি, কিন্তু তবু ত তোমাদের মোহ কাটে না!

এইসকল বিরুদ্ধ-আলোচনা জগদ্ধাত্রীর গোড়া হইতেই ভাল লাগিতেছিল না এবং মনে মনে তিনি বিরক্তও কম হইতেছিলেন না; শাশুড়ীর কথার উত্তরে বলিলেন, তখনকার দিনের কথা জানিনে মা, কিন্তু এখন অত বিয়েও কেউ করে না, ওসব অত্যাচারও আর নেই। আর জন-কতক লোক যদি এসময়ে অন্যায় করেই থাকে, তাই বলে কি বংশের সম্মান কেউ ছেড়ে দেয় মা? আমি বেঁচে থাকতে ত সে হবে না। গৃহস্বামীনি পুত্রবধূর উত্তপ্ত কণ্ঠস্বরে শাশুড়ী নীরব রইলেন, কিন্তু সন্ধ্যা ব্যথিত হইয়া উঠিল; সে পিতামহীর আর একটু কাছে গিয়া কোমল-স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু, কেন তাঁরা অমন অত্যাচার করতেন ঠাকুরমা। তাদের কি মায়াও হ'তো না?

ঠাকুরমা সন্ধ্যার হাত ধরিয়া তাহাকে পার্শ্বে টানিয়া লইয়া বলিলেন, কি ক'রে হবে দিদি? একটি রাত ছাড়া আর জীবনে হয়তো কখনো দেখা হবে না, তার জন্যে কি কারো প্রাণ কাঁদে? আর সে অত্যাচার কি আজই থেমে গেছে? তোমার ওপরে যা হতে যাচ্ছে সে কি কারও চেয়ে কম অত্যাচার দিদি ?

জগদ্ধাত্রী হাতের কাজ রাখিয়া দিয়া অকস্মাৎ উঠিয়া দাঁড়াইয়া অত্যন্ত কঠোরস্বরে মেয়েকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, তুই ঠাকুরঘরে যাবি, না আমি কাজকর্ম ফেলে রেখে উঠে যাবো সন্ধ্যা ?

সন্ধ্যা মায়ের মুখের দিকে চাহিল, কিন্তু কথাও কহিল না, উঠিবারও চেষ্টা করিল না। ধীরে ধীরে পিতামহীকে জিজ্ঞাসা করিল, কিন্তু, যে জিনিসটার এত সম্মান—এতদিন ধরে এমনভাবে চলে আসচে ঠাকুরমা, তাকে কি নষ্ট হতে দেওয়াই ভাল?

এবার শাশুড়ীও বধূর রুক্ষ-কথায় বিশেষ কর্ণপাত করিলেন না। নাতিনীর প্রশ্নের জবাবে বলিলেন, কিছু একটা দীর্ঘদিন ধরে কেবল চলে আসছে বলেই তা ভাল হয়ে যায় না দিদি, সম্মানের সঙ্গে হলেও না। মাঝে মাঝে তাকে যাচাই করে বিচার করে নিতে হয়। যে মমতায় চোখ বুজে থাকতে চায় সে-ই মরে। আমার সকল কথা কাউকে বলবার নয় ভাই, কিন্তু এ নিয়ে সমস্ত জীবনটাই না কি আমাকে অহরহ বিষের জ্বালা সইতে হয়েছে, বলিতে বলিতে তাঁহার গলা যেন ভিতরের অব্যক্ত যাতনায় বুজিয়া আসিল। সন্ধ্যা তাহার হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে লইয়া আস্তে আস্তে বলিল, থাক গে ঠাকুরমা, এ-সব কথা।

তিনি অন্য হাত দিয়া পৌত্রীকে বুকের কাছে টানিয়া লইয়া নীরবে আপনাকে আপনি একমুহূর্তে সংবরণ করিয়া ফেলিলেন, তারপর সহজকণ্ঠে ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন, সন্ধ্যা দেশের রাজা একদিন শুধু গুণের সমষ্টি ধরেই ব্রাহ্মণকে কৌলীন্য-মর্যাদা দিয়ে শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন, তারপরে আবার এমন দুর্দিন ও একদিন এসেছিল যেদিন এই দেশেরই রাজার আদেশে তাঁদের বংশধরদের কেবল দোষের সংখ্যা গণনা করেই মেলবদ্ধ করা হয়েছিল। যে সম্মানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ত্রুটি এবং অনাচারের উপর, তার ভিতরের মিথ্যেটা যদি জানতে দিদি, তা হলে আজ যে বস্তু তোমাদের এত মুগ্ধ করে রেখেচে, শুধু কেবল সেই কুল নয়— ছোটজাত বলে যে দুলে-মেয়ে দুটোকে তোমরা তাড়িয়ে দিলে, তাদেরও ছোটো বলতে তোমাদের লজ্জায় মাথা হেঁট হ'তো।

জগদ্ধাত্রী ক্রোধ এবং বিরক্তি আর সহ্য করিতে না পারিয়া উঠিয়া চলিয়া গেলেন, কিন্তু সন্ধ্যা চুপ করিয়া সেইখানেই বসিয়া রহিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, তাহার সত্যবাদিনী সন্ন্যাসিনী পিতামহী ভিতরের কি একটা অত্যন্ত লজ্জা ও ব্যথার ইতিহাস কিছুতেই প্রকাশ করিতে পারিতেছেন না, কিন্তু তাঁহার বুক ফাটিতেছে। তাহার হঠাৎ মনে হইল, তাহার পিতামহের বহুবিবাহের সহিত ইহার কি যেন একটা ঘনিষ্ঠ সংস্রব আছে।

খানিকক্ষণ নিঃশব্দে থাকিয়া সে ফলছে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল, সত্যিই কি ঠাকুরমা, আমাদের মধ্যে খুব বেশী অনাচার প্রবেশ করেছে? যা নিয়ে আমরা এত গর্ব করি তার কি অনেকখানি ডুয়োঃ পিতামহী কহিলেন, এর যে কতখানি ভুয়ো সে যে আমার চেয়ে কেউ বেশি জানে না। কিন্তু কথাটা উচ্চারণ করিতেও যে তাঁর চোখে জল আসিয়া পড়িল তাহা সন্ধ্যার অন্ধকারেও সন্ধ্যার অবিদিত রহিল না। তিনি হাত দিয়া চোখ দুটি মুছিয়া ফেলিয়া ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন, কিন্তু এখন আমি মাঝে মাঝে কি মনে করি জানিস সন্ধ্যা? মানুষে মানুষে ব্যবধানের এই যে মানুষের হাতে গড়া গণ্ডি, এ কখনো ভগবানের নিয়ম নয়। তাঁর প্রকাশ্য মিলনের মুক্ত সিংহদ্বারে মানুষে যতই কাঁটার উপর-কাঁটা চাপায়, ততই গোপন গহ্বরে তার অত্যাচারের বেড়া অনাচারে শতচ্ছিদ্র হতে থাকে। তাদের মধ্যে দিয়ে তখন পাপ আ আবর্জনাই কেবল লুকিয়ে প্রবেশ করে।

অতঃপর কিছুক্ষণ পর্যন্ত উভয়েই নিঃশব্দে স্থির হইয়া বসিয়া রহিলেন। সন্ধ্যার নিশ্চয় মনে হইতে লাগিল, ইহার সহতি তাহার পিতামহের বহুবিবাহের ত্যই কি একটা কদর্য সম্বন্ধ আছে এবং কিছু না বুঝিয়াও তাহার কেমন যেন ভয় করিতে লাগিল। ঠাকুরমা বলিলেন, যাও দিদি, ঠাকুরঘরের কাজটি সেরে ফেল গে, নইলে তোমার মা বড় রাগ করবেন।

সন্ধ্যা অন্যমনস্কভাবে জবাব দিল, তিনি নিজেই করে নেবেন এখন। বলিয়াই সে তাঁহার একটা হাত ধরিয়া কহিল, চল না ঠাকুরমা আমার ঘরে গিয়ে একটু সেকালের গল্প করবে!

এই বলিয়া সে একরকম জোর করিয়া তাঁহাকে টানিয়া তুলিয়া নিজের ঘরের দিকে প্রস্থান করিল।


13
Articles
বামুনের মেয়ে
0.0
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি বাংলা উপন্যাস "বামুনের মেয়ে"। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে বর্ষা নামের এক যুবতীকে ঘিরে, যে গ্রামীণ পটভূমি থেকে আসে তার ধনী শহরের আত্মীয়দের সাথে থাকতে। তিনি সাংস্কৃতিক ধাক্কার সম্মুখীন হন এবং শহরের পরিশীলিত জীবনধারার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করেন। বর্ষার নির্দোষতা এবং সরলতা শহুরে জটিলতার সাথে বিপরীত, যা দ্বন্দ্ব এবং ভুল বোঝাবুঝির দিকে পরিচালিত করে। উপন্যাসটি শ্রেণী বিভাজন, সামাজিক রীতিনীতি এবং গ্রামীণ ও শহুরে মূল্যবোধের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে। বর্ষার চরিত্র শহুরে দুর্নীতির মুখে গ্রামীণ জীবনের বিশুদ্ধতার প্রতীক। গল্পটি শহুরে বিশ্বের মুখোমুখি হওয়ার সময় গ্রামীণ পটভূমি থেকে আসা লোকেরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয়েছিল তার একটি মর্মস্পর্শী ভাষ্য।
1

এক : ক

29 October 2023
1
0
0

পাড়া-বেড়ানো শেষ করিয়া রাসমণি অপরাহবেলায় ঘরে ফিরিতেছিল। সঙ্গে দশ বারো বৎসরের নাতিনীটি আগে আগে চলিয়াছিল। অপ্রশস্ত পল্লী পথের এধারে বাঁধা একটি ছাগশিশু ওধারে পড়িয়া ঘুমাইতেছিল। সম্মুখে দৃষ্টি পড়িবা

2

এক - [খ]

29 October 2023
0
0
0

সম্মুখের একটা দাওয়ায় বসিয়া সন্ধ্যা নিবিষ্টচিত্তে সেলাই করিতেছিল, জগদ্ধাত্রী আহ্নিক সারিয়া পূজার ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিয়া ক্ষণকাল কন্যার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া থাকিয়া বলিলেন, সকাল থেকে কি অত সেল

3

এক - [গ]

29 October 2023
0
0
0

যে গোলোক চাটুয্যে মহাশয়ের নামে বাঘে ও গরুতে একঘাটে জলপান করে বলিয়া সেদিন রাসমণি বারংবার সন্ধ্যাকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছিলেন, সেই হিন্দুকুল-চূড়ামণি পরাক্রান্ত ব্যক্তিটি এইমাত্র তাঁহার বৈঠকখানায় আসিয

4

এক : [ঘ]

29 October 2023
0
0
0

সন্ধ্যার শরীরটা কিছুদিন হইতে তেমন ভাল চলিতেছিল না। প্রায়ই জ্বর হইত, এবং পিতার চিকিৎসাধীনে থাকিয়া সে যেন ধীরে ধীরে মন্দের দিকেই পথ করিতেছিল। মা বিপিন ডাক্তারকে ডাকিয়া পাঠাইবেন বলিয়া প্রত্যহ ভয় দেখ

5

এক - [ঙ]

30 October 2023
1
0
0

সকালবেলায় প্রিয় মুখুয্যেমশায় অত্যন্ত ব্যস্ত হইয়া প্র্যাকটিসে চলিতেছিলেন, বগলে চাপা একভাড়া হোমিওপ্যাথি বই, হাতে তোয়ালে-বাঁধা ঔষধের বাক্স, পিছনে পিছনে এককড়ি দুলের বিধবা স্ত্রী মিনতি করিয়া চলিয়া

6

দুই - ক

30 October 2023
1
0
0

সন্ধ্যার অন্ধকার ধীরে ধীরে গাঢ় হইয়া আসিতেছিল, কিন্তু তখনও আলো জ্বালা হয় নাই। অরুণ তাহার পড়িবার ঘরের মধ্যে টেবিলের উপর দুই পা তুলিয়া দিয়া কড়িকাঠের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করিয়া স্থির হইয়া বসিয়াছি

7

দুই - [খ]

30 October 2023
1
0
0

বোধ করি দিনদুই পরে হইবে, জগদ্ধাত্রী তাঁহার পুস্করিণী হইত স্নান করিয়া বাড়ি ফিরিতেছিলেন, পথের মধ্যে রাসমণি দেখা দিলেন। তাঁহার সমস্ত চোখমুখ উত্তেজনা ও আগ্রহের আতিশয্যে কাঁদ-কাঁদ হইয়া উঠিয়াছে; কাছে আস

8

দুই - [গ]

30 October 2023
1
0
0

স্নান, পূজাহ্নিক এবং যথাবিহিত সাত্ত্বিক জালযোগাদি সমাপনান্তর মূর্তিমান ব্রহ্মণ্যের ন্যায় গোলোক চাটুয্যেমহাশয় ধীরে ধীরে নীচে অবতরণ করিলেন, এবং রোধ হয় সোজা বাহিরেই যাইতেছিলেন, হঠাৎ কি মনে করিয়া পাশে

9

দুই - [ঘ]

31 October 2023
0
0
0

তাহার পরে জ্ঞানদা সেই যে ঘরে কবাট দিল আর খুলিল না। বৃদ্ধ অন্ধ শ্বশুর সমস্ত দুপুরবেলাটা বিমূঢ় বুদ্ধিভ্রষ্টের ন্যায় নীরবে বসিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে বাটীর বাহির হইয়া গেলেন। সঙ্গে সৌদামিনীও দেল। এই অপ্র

10

তিন- [ক]

31 October 2023
0
0
0

প্রসিদ্ধ জয়রাম মুখোর দৌহিত্র শ্রীমান বীরচন্দ্র বন্দ্যোর সহিতই বিবাহ স্থির হইয়া গেছে। আগামীকল্য বরপক্ষ আশীর্বাদ করিতে আসিবেন, বাড়িতে তাহার উদ্যোগ-আয়োজন চলিতেছে। অগ্রহায়ণের শেষাশেষি বিবাহ, একটিমাত্

11

তিন- [খ]

31 October 2023
0
0
0

রাত্রি খুব বেশী হয় নাই, বোধ হয় একপ্রহর হইয়া থাকিবে, কিন্তু শীতের দিনের পল্লীগ্রামে ইহারই মধ্যে অত্যন্ত গভীর মনে হইতেছিল। জ্ঞানদার শয়ন-কক্ষের এক কোণে একটা মাটির প্রদীপ মিটমিট করিয়া জ্বলিতেছিল। ঘরে

12

তিন - [গ]

31 October 2023
0
0
0

আজ সমস্ত দিন ধরিয়াই কাছে ও দূর হইতে সানাইয়ের করুণ সুর মাঝে মাঝে ভাসিয়া আসিতেছিল। অঘ্রাণের আজিকার দিনটি ছাড়া অনেকদিন পর্যন্ত বিবাহের দিন নাই; তাই বোধ হয় এই ছোট গ্রামখানির মধ্যেই প্রায় চার-পাঁচটা

13

তিন - [ঘ]

31 October 2023
0
0
0

বাঁ হাতে প্রদীপ লইয়া প্রিয় মুখুযো কি কয়েকটা বস্তু বাক্স হইতে বাছিয়া বাছিয়া একটুকরো কাপড়ে রাখিতেছিলেন, হঠাৎ পিছনে ডাক শুনিলেন, বাবা— কাজটা প্রিয় গোপনেই করিতেছিলেন, শশব্যস্তে হাতের প্রদীপটা রাখিয

---