shabd-logo

সতাশি তমো অধ্যায়

5 November 2023

0 Viewed 0

ম্যাজিস্টেট ব্রাউনলো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন।


ব্রাউনলো সাহেব গার্ডন পার্টিতে মাঝে মাঝে বাঙালি ভদ্রলোকদিগকে তাঁহার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করিতেন। জিলার এনট্রেন্স স্কুলে প্রাইজ বিতরণ উপলক্ষে তিনিই সভাপতির কাজ করিতেন। কোনো সম্পন্ন লোকের বাড়িতে বিবাহাদি ক্রিয়াকর্মে তাহাকে আহ্বান করিলে তিনি গৃহকর্তার অভ্যর্থনা গ্রহণ করিতেন। এমন-কি, যাত্রাগানের মজলিসে আহুত হইয়া তিনি একটা বড়ো কেদারায় বসিয়া কিছুক্ষণের জন্য ধৈর্যসহকারে গান শুনিতে চেষ্টা করিতেন। তাঁহার আদালতে গবর্মেন্ট পীডারের বাড়িতে গত পূজার দিন যাত্রায় যে দুই ছোকরা ভিত্তি ও মেথরানি সাজিয়াছিল তাহাদের অভিনয়ে তিনি বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করিয়াছিলেন এবং তাঁহার অনুরোধক্রমে একাধিক বার তাহাদের অংশ তাঁহার সম্মুখে পুনরাবৃত্ত হইয়াছিল।


তাঁহার স্ত্রী মিশনরির কন্যা ছিলেন। তাঁহার বাড়িতে মাঝে মাঝে মিশনরি মেয়েদের চা-পান সভা


বসিত। জেলায় তিনি একটি মেয়ে-ইস্কুল স্থাপন করিয়াছিলেন এবং যাহাতে সে স্কুলে ছাত্রীর অভাব


না হয় সেজনা তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করিতেন। পরেশবাবুর বাড়িতে মেয়েদের মধ্যে বিদ্যাশিক্ষার চর্চা


দেখিয়া তিনি তাহাদিগকে সর্বদা উৎসাহ দিতেন। দূরে থাকিলেও মাঝে মাঝে চিঠিপত্র চালাইতেন ও


ক্রিসমাসের সময় তাহাদিগকে ধর্মগ্রন্থ উপহার পাঠাইতেন। মেলা বসিয়াছে। তদুপলক্ষে হারানবাবু সুধীর ও বিনয়ের সঙ্গে বরদাসুন্দরী ও মেয়েরা সকলেই আসিয়াছেন তাহাদিগকে ইনস্পেকশন বাংলায় স্থান দেওয়া হইয়াছে। পরেশবাবু এই সমস্ত গোলমালের মধ্যে কোনোমতেই থাকিতে পারেন না, এইজন্য তিনি একলা কলিকাতাতেই রহিয়া গিয়াছেন। সুচরিতা তাঁহার সঙ্গরদার জন্য তাঁহার কাছে থাকিতে অনেক চেষ্টা পাইয়াছিল, কিন্তু পরেশ ম্যাজিস্ট্রেটের নিমন্ত্রণে কর্তব্য পালনের জন্য সুচরিতাকে বিশেষ উপদেশ দিয়াই পাঠাইয়া দিলেন। আগামী পরশু কমিশনর সাহেব ও সস্ত্রীক ছোটোলাটের সম্মুখে ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে ডিনারের পরে ঈভনিং পার্টিতে পরেশবাবুর মেয়েদের দ্বারা অভিনয় আবৃত্তি প্রভৃতি হইবার কথা স্থির হইয়াছে। সেজন্য ম্যাজিস্ট্রেটের অনেক ইংরেজ বন্ধু জেলা ও কলিকাতা হইতে আহুত হইয়াছেন। কয়েকজন বাছা বাছা বাঙালি ভদ্রলোকেরও উপস্থিত হইবার আয়োজন হইয়াছে। তাঁহাদের জন্য বাগানে একটি তাঁবুতে ব্রাহ্মণ পাচক-কর্তৃক প্রস্তুত জলযোগেরও ব্যবস্থা হইবে এইরূপ শুনা যাইতেছে।


হারানবাবু অতি অল্পকালের মধ্যেই উচ্চভাবের আলাপে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে বিশেষ সন্তুষ্ট করিতে পারিয়াছিলেন। খৃস্টান ধর্মশাস্ত্রে হারানবাবুর অসামান্য অভিজ্ঞতা দেখিয়া সাহের আশ্চর্য হইয়া গিয়াছিলেন এবং খৃস্টান ধর্ম গ্রহণে তিনি অল্প একটুমাত্র বাধা কেন রাখিয়াছেন এই প্রশ্নও হারানবাবুকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। আজ অপরাহ্নে নদীতীরের পথে হারানবাবুর সঙ্গে তিনি ব্রাহ্মসমাজের কার্যপ্রণালী ও হিন্দুসমাজের সংস্কারসাধন সম্বন্ধে গভীরভাবে আলোচনায় নিযুক্ত ছিলেন। এমন সময় গোৱা "গুড ইভনিং সার" বলিয়া তাঁহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল।


কাল সে ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত দেখা করিবার চেষ্টা করিতে গিয়া বুঝিয়াছে যে সাহেবের চৌকণ্ঠ উত্তীর্ণ হইতে গেলে তাঁহার পেয়াদার মান্ডল জোগাইতে হয়। এরূপ দণ্ড ও অপমান স্বীকার করিতে অসম্মত হইয়া আজ সাহেবের হাওয়া খাইবার অবকাশে সে তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে। এই সাক্ষাৎকালে হারানবাবু ও গোরা উভয় পক্ষ হইতেই পরিচয়ের কোনো লক্ষণ প্রকাশ হইল না।


লোকটাকে দেখিয়া সাহের কিছু বিস্মিত হইয়া গেলেন। এমন ছয় ফুটের চেয়ে লম্বা, হাড়-মোটা, মজবুত মানুষ তিনি বাংলা দেশে পূর্বে দেখিয়াছেন বলিয়া মনে করিতে পারিলেন না। ইহার দেহের বর্ণও সাধারণ বাঙালির মতো নহে। গায়ে একখানা খাকি রঙের পাঞ্জাবি জামা, ধুতি মোটা ও মলিন, হাতে একগাছা বাঁশের লাঠি, চাদরখানাকে মাথায় পাগড়ির মতো বাঁধিয়াছে।


গোরা ম্যাজিস্ট্রেটকে কহিল, "আমি চর ঘোষপুর হইতে আসিতেছি।" ম্যাজিস্ট্রেট একপ্রকার বিস্ময়সূচক শিস দিলেন। ঘোষপুরের তদন্তকার্যে একজন বিদেশী বাধা দিতে আসিয়াছে সে সংবাদ তিনি গতকলাই পাইয়াছিলেন। তবে এই লোকটাই সে। গোরাকে আপাদমস্তক তীহ্মাভাবে একবার নিরীক্ষণ করিলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন জাত ?”


গোরা কহিল, “আমি বাঙালি ব্রাহ্মণ।”


সাহেব কহিলেন, "ও! খবরের কাগজের সঙ্গে তোমার যোগ আছে বুঝি?” গোৱা কহিল, "না"


ম্যাজিস্ট্রেট কহিলেন, “তবে ঘোষপুর চরে তুমি কী করতে এসেছ ?”


গোৱা কহিল, “ভ্রমণ করতে করতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলুম। পুলিসের অত্যাচারে গ্রামের দুর্গতির চিহ্ন দেখে এবং আরো উপদ্রবের সম্ভাবনা আছে জেনে প্রতিকারের জন্য আপনার কাছে এসেছি।"


ম্যাজিস্ট্রেট কহিলেন, “চর-ঘোষপুরের লোকগুলো অত্যন্ত বদমায়েস সে কথা তুমি জান ?” গোৱা কহিল, “তারা বদমায়েস নয়, তারা নির্ভীক, স্বাধীনচেতা-- তারা অন্যায় অত্যাচার নীরবে সহ্য করতে পারে না ।"


ম্যাজিস্ট্রেট চটিয়া উঠিলেন। তিনি মনে মনে ঠিক করিলেন নবাবাঙালি ইতিহাসের পুথি পড়িয়া কতকগুলা বুলি শিখিয়াছে-- ইনসাফারেবল।


" এখানকার অবস্থা তুমি কিছুই জান না” বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট গোৱাকে খুব একটা ধমক দিলেন। "আপনি এখানকার অবস্থা আমার চেয়ে অনেক কম জানেন।" গোরা মেঘমন্দ্রস্বরে জবাব করিল। ম্যাজিস্ট্রেট কহিলেন, “আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি তুমি যদি ঘোষপুরের ব্যাপার সম্বন্ধে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ কর তা হলে খুব সস্তায় নিষ্কৃতি পাবে না।"


গোৱা কহিল, "আপনি যখন অত্যাচারের প্রতিবিধান করবেন না বলে মনস্থির করেছেন এবং গ্রামের লোকের বিরুদ্ধে আপনার ধারণা যখন বদ্ধমূল, তখন আমার আর কোনো উপায় নেই-- আমি গ্রামের লোকদের নিজের চেষ্টায় পুলিসের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্যে উৎসাহিত করব।


ম্যাজিস্ট্রেট চলিতে চলিতে হঠাৎ থামিয়া দাঁড়াইয়া বিদ্যুতের মতো গোরার দিকে ফিরিয়া গর্জিয়া উঠিলেন, “কী! এত বড়ো স্পর্ধা ।"


গোর। দ্বিতীয় কোনো কথা না বলিয়া ধীরগমনে চলিয়া গেল।


ম্যাজিস্ট্রেট কহিলেন, “হারানবাবু, আপনাদের দেশের লোকদের মধ্যে এ-সকল কিসের লক্ষণ


দেখা যাইতেছে ?”


হারানবাবু কহিলেন, “লেখাপড়া তেমন গভীরভাবে হইতেছে না, বিশেষত দেশে আধ্যাত্মিক ও চারিত্রনৈতিক শিক্ষা একেবারে নাই বলিয়াই এরূপ ঘটিতেছে। ইংরেজি বিদ্যার যেটা শ্রেষ্ঠ অংশ সেটা গ্রহণ করিবার অধিকার ইহানের হয় নাই। ভারতবর্ষে ইংরেজের রাজত্ব যে ঈশ্বরের বিধান-- এই অকৃতজ্ঞরা এখনো তাহা স্বীকার করিতে চাহিতেছে না। তাহার একমাত্র কারণ, ইহারা কেবল পড়া


মুখস্থ করিয়াছে, কিন্তু ইহাদের ধর্মবোধ নিতান্তই অপরিণত।"


ম্যাজিস্ট্রেট কহিলেন, “খৃস্টকে স্বীকার না করিলে ভারতবর্ষে এই ধর্মবোধ কখনোই পূর্ণতা লাভ করিবে না।"


হারানবাবু কহিলেন, “সে এক হিসাবে সভা" এই বলিয়া খৃস্টকে স্বীকার করা সম্বন্ধে একজন


খৃস্টানের সঙ্গে হারানবাবুর মতের কোন অংশে কতটুকু এঁকা এবং কোথায় অনৈক্য তাহাই লইয়া হারানবাবু ম্যাজিস্টেটের সহিত সূক্ষ্মভাবে আলাপ করিয়া তাঁহাকে এই কথাপ্রসঙ্গে এতই নিবিষ্ট করিয়া রাখিয়াছিলেন যে, মেমসাহের যখন পরেশবাবুর মেয়েদিগকে গাড়ি করিয়া ডাকবাংলায় পৌঁছাইয়া দিয়া ফিরিবার পথে তাঁহার স্বামীকে কহিলেন, "হ্যারি, ঘরে ফিরিতে হইবে", তিনি চমকিয়া উঠিয়া ঘড়ি খুলিয়া কহিলেন, “বাই জোভ, আটটা বাজিয়া কুড়ি মিনিট।"


গাড়িতে উঠিবার সময় হারানবাবুর কর নিপীড়ন করিয়া বিদায়সম্ভাষণপূর্বক কহিলেন, “আপনার


সহিত আলাপ করিয়া আমার সন্ধ্যা খুব সুখে কাটিয়াছে।"


হারানবাবু ডাকবাংলায় ফিরিয়া আসিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত তাঁহার আলাপের বিবরণ বিস্তারিত করিয়া বলিলেন। কিন্তু গোরার সহিত সাক্ষাতের কোনো উল্লেখমাত্র করিলেন না।

30
Articles
গোড়া
0.0
গোরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাস। এটি ১৮৮০-এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভূমিতে লেখা। এটি লেখার ক্রমে পঞ্চম এবং রবীন্দ্রনাথের তেরোটি উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম।[১] এটি রাজনীতি এবং ধর্ম নিয়ে দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ উপন্যাস। উপন্যাসে মুক্তি, সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্ব, লিঙ্গ, নারীবাদ, বর্ণ, শ্রেণি, ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা, নগর অভিজাত বনাম গ্রামীণ কৃষক, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ এবং ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে লেখা রয়েছে। গোরা উপন্যাস দুই প্রেমিক জুটির দুটি সমান্তরাল প্রেমের গল্প নিয়ে গঠিত: গোরা এবং সুচরিতা, বিনয় এবং ললিতা। এতে উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে তাদের আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ দেখানো হয়েছে
1

প্রথম অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাসের সকালবেলায় মেঘ কাটিয়া গিয়া নির্মল রৌদ্রে কলিকাতার আকাশ ভরিয়া গিয়াছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার বিরাম নাই, ফেরিওয়ালা অবিশ্রাম হাঁকিয়া চলিয়াছে, যাহারা আপিসে কালেঞ্জে আদালতে যাইবে তাহাদের

2

দ্বিতীয় অধ্যায়

30 October 2023
1
0
0

বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশের অন্ধকার যেন ভিজিয়া ভারী হইয়া পড়িয়াছে। বর্ণহীন বৈচিত্র্যহীন মেঘের নিঃশব্দ শাসনের নীচে কলিকাতা শহর একটা প্রকাণ্ড নিরানন্দ কুকুরের মতো লেজের মধ্যে মুখ গুজিয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া

3

তৃতীয় অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

গোৱা ও বিনয় হাত হইতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিল। গোরার মা আনন্দময়ীকে দেখিলে গোরার মা বলিয়া মনে হয় না।

4

চতুর্থ অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

মত হিসাবে একটা কথা যেমনতরো শুনিতে হয়, মানুষের উপর প্রয়োগ করিবার বেলায় সকল সময় তাহার সেই একান্ত নিশ্চিত ভাবটা থাকে না-- অন্তত বিনয়ের কাছে থাকে না, বিনয়ের হৃদয়বৃত্তি অত্যন্ত প্রবল। ভাই তর্কের সময

5

পঁচম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

“ওগো, শুনছ? আমি তোমার পূজোর ঘরে ঢুকছি নে, ভয় নেই। আহ্নিক শেষ হলে একবার ও ঘরে যেয়ো-- তোমার সঙ্গে কথা আছে। দুজন নৃতন সন্ন্যাসী যখন এসেছে তখন কিছুকাল তোমার আর দেখা পাব না জানি, সেইজন্যে বলতে এলুম। ভুলো

6

ষষ্ঠ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন। আনন্দময়ী কহিল

7

সাতম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

ভোরে উঠিয়া বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকাল-বেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মতো নির্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই-একটা সাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।

8

আঠম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

এই একটা বাঁধ ভাঙিয়া যাইতেই বিনয়ের হৃদয়ের নূতন বন্যা আরো যেন উদ্দাম হইয়া উঠিল। আনন্দময়ীর ঘর হইতে বাহির হইয়া রাস্তা দিয়া সে যেন একেবারে উড়িয়া চলিল : মাটির স্পর্শে তাহার যেন পায়ে ঠেকিল না ; তাহ

9

নবম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে পাতাবাহার এবং ফুলের গাছ। বারান্দার উপর হইতে রাস্তার ধারের শিরীয় ও কৃষ্ণচূড়া

10

দশম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা হাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। সুদীর্ঘ শুকায় গোরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই ব

11

একাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

সেদিন তর্কে গোরাকে অপদস্থ করিয়া সুচরিতার সম্মুখে নিজের জয়পতাকা তুলিয়া ধরিবার জনা হারানের বিশেষ ইচ্ছা ছিল, গোড়ায় সুচরিতাও তাহার আশা করিয়াছিল। কিন্তু দৈবক্রমে ঠিক তার বিপরীত ঘটিল। ধর্ম বিশ্বাস ও স

12

দ্বাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

বিনয় ও গোরা পরেশের বাড়ি হইতে রাস্তায় বাহির হইলে বিনয় কহিল, "গোরা, একটু আস্তে আস্তে চলো ভাই-- তোমার পা দুটো আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো-- ওর চালটা একটু খাটো না করলে তোমার সঙ্গে যেতে আমরা হাঁপিয়ে পড়ি ।

13

তেরো অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

মধ্যাহ্নে গোরার কাছে যাইবার জন্য বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার কাছে নিজেকে নত করিতে কোনোদিন সংকোচ বোধ করে নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভিমানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশবাবুর

14

চোদ্দশ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

গোরা যখন মধ্যাহ্নে যাইতে বসিল, আনন্দময়ী আস্তে আস্তে কথা পাড়িলেন, “আজ সকালে বিনয় এসেছিল। তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি? গোরা খাবার খালা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিল, "হাঁ, হয়েছিল।" আনন্দময়ী অনেকক্ষণ চ

15

পনের তেম অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

রাত্রে গোরা বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকার হাতের উপর বেড়াইতে লাগিল । তাহার নিজের উপর রাগ হইল। রবিবারটা কেন সে এমন বৃথা কাটিতে দিল। ব্যক্তিবিশেষের প্রণয় লইয়া অন্য সমস্ত কাজ নষ্ট করিবার জন্য তো গো

16

ষোড়শ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

বরদাসুন্দী কহিলেন, “তুমি সুচরিতার বিয়ে দেবে না নাকি ?” পরেশবাবু তাঁহার স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত বুলাইলেন -- তার পর মৃদুস্বরে কহিলেন, “পাত্র কোথায় ?” বরদাসুন্দরী কহ

17

সতের্দশ অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

ঘন্টা দুই-তিন নিদ্রার পর যখন গোরা ঘুম ভাঙিয়া পাশে চাহিয়া দেখিল বিনয় ঘুমাইতেছে তখন তাহার হৃদয় আনন্দে ভরিয়া উঠিল। স্বপ্নে একটা প্রিয় জিনিস হারাইয়া জাগিয়া উঠিয়া যখন দেখা যায় তাহা হারায় নাই

18

আঠারো অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় গেল। আনন্দময়ীর মুখের একটি কথাও এপর্যন্ত বিনয়ের কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই। সে রাত্রে তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল। পরদিন সকালে উঠিয়া

19

ঊনিশতম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

সকালবেলায় গোরা কাজ করিতেছিল। বিনয় খামকা আসিয়া অত্যন্ত খাপছাড়াভাবে কহিল, "সেদিন পরেশবাবুর মেয়েদের নিয়ে আমি সার্কাস দেখতে গিয়েছিলুম।" গোরা লিখিতে লিখিতেই বলিল, “শুনেছি।” বিনয় বিস্মিত হইয়া

20

বিশেষ অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

মহিম সেদিন গোৱাকে কিছু না বলিয়া তাহার পরের দিন তাহার ঘরে গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন গোরাকে পুনর্বার রাজি করাইতে বিস্তর লড়ালড়ি করিতে হইবে। কিন্তু তিনি যেই আসিয় বলিলেন যে বিনয় কাল বিকালে আসিয়া বি

21

একুশ অষ্টম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

গোরা তাহার স্বাভাবিক দ্রুতগতি পরিত্যাগ করিয়া অন্যমনস্কভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিল। বাড়ি যাইবার সহজ পথ ছাড়িয়া সে অনেকটা ঘুরিয়া গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরিল। তখন কলিকাতার গঙ্গা ও গঙ্গার ধার বণিক-সভ্যতার

22

বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
2
0
0

গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে। কাল রাত্রে গোৱা তো পরেশবাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ল‍ইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। এই অভ

23

ত্রয়বিংশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

অভিনয়ের অভ্যাস উপলক্ষে বিনয় প্রত্যহই আসে। সূচরিতা তাহার দিকে একবার চাহিয়া দেখে, তাহার পরে হাতের বইটার দিকে মন দেয় অথবা নিজের ঘরে চলিয়া যায়। বিনয়ের একলা আসার অসম্পূর্ণতা প্রত্যহই তাহাকে আঘাত করে

24

চব্বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

এইরূপ স্থির হইয়াছিল যে, ইংরেজ কবি ড্রাইডেনের রচিত সংগীত-বিষয়ক একটি কবিতা বিনয় ভাবব্যক্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া যাইবে এবং মেয়েরা অভিনয়মঞ্চে উপযুক্ত সাজে সজ্জিত হইয়া কাব্যলিখিত ব্যাপারের মূক অভিনয়

25

পঁচিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

রবিবার দিন সকালে আনন্দময়ী পান সাজিতেছিলেন, শশিমুখী তাহার পাশে বসিয়া সুপারি কাটিয়া স্তূপাকার করিতেছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেই শশিমুখী তাহার কোলের আঁচল হইতে সুপারি ফেলিয়া দিয়া তাড়

26

ছাব্বিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

গোরা যখন ভ্রমণে বাহির হইল তখন তাহার সঙ্গে অবিনাশ মতিলাল বসন্ত এবং রমাপতি এই চারজন সঙ্গী ছিল। কিন্তু গোরার নির্ণয় উৎসাহের সঙ্গে তাহারা তাল রাখিতে পারিল না। অবিনাশ এবং বসন্ত অসুস্থ শরীরের ছুতা করিয়া চ

27

সতাশি তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ম্যাজিস্টেট ব্রাউনলো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন। ব্রাউনলো স

28

আঠাশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

কোনোপ্রকার অপরাধ বিচার না করিয়া কেবলমাত্র গ্রামকে শাসন করিবার জন্য সাতচল্লিশ জন আসামিকে হাজতে দেওয়া হইয়াছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাতের পর গোৱা উকিলের সন্ধানে বাহির হইল। কোনো লোকের কাছে খবর প

29

ঊনত্রিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

আজ ছোটোলটি আসিবেন বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক সাড়ে দশটায় আদালতে আসিয়া বিচারকার্য সকাল সকাল শেষ করিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন। সাতকড়িবাবু ইস্কুলের ছাত্রদের পক্ষ লইয়া সেই উপলক্ষে তাঁহার বন্ধুকে বাচাই

30

তিরিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় পরেশবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনের ভাবটা কী তাহা স্টীমারে উঠিবার পূর্বে পর্যন্ত বিনয় নিশ্চিত জানিত না। ললিতার সঙ্গে বিরোধেই তাহার মন ব্যাপৃ

---