shabd-logo

ষষ্ঠ অধ্যায়

31 October 2023

3 Viewed 3

আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন।


আনন্দময়ী কহিলেন, "ওগো, তুমি তো তপস্যা করছ, ঘরের কথা কিছু ভাব না, কিন্তু আমি যে গোরার জন্যে সর্বদাই ভয়ে ভয়ে গেলুম "


কৃষ্ণদয়াল। কেন, ভয় কিসের ?


আনন্দময়ী। তা আমি ঠিক বলতে পারি নে। কিন্তু আমার যেন মনে হচ্ছে, গোরা আজকাল এই যে হিদুয়ানি আরম্ভ করেছে এ ওকে কখনোই সইবে না, এ ভাবে চলতে গেলে শেষকালে একটা কী বিপদ ঘটবে। আমি তো তোমাকে তখনই বলেছিলুম, ওর পইতে দিয়ো না। তখন যে তুমি কিছুই মানতে না; বললে, গলায় একগাছা সুতো পরিয়ে দিলে তাতে কারো কিছু আসে যায় না। কিন্তু শুধু তো সুতো নয়-- এখন ওকে ঠেকাবে কোথায় ?


কৃষ্ণদয়াল। বেশ। সব দোষ বুঝি আমার! গোড়ায় তুমি যে ভুল করলে। তুমি যে ওকে কোনোমতেই ছাড়তে চাইলে না। তখন আমিও গোঁয়ারগোছের ছিলুম-- ধর্মকর্ম কোনো কিছুর তো জ্ঞান ছিল না। এখন হলে কি এমন কাজ করতে পারতুম।


আনন্দময়ী। কিন্তু যাই বল, আমি যে কিছু অধর্ম করেছি সে আমি কোনোমতে মানতে পারব না। তোমার তো মনে আছে ছেলে হবার জন্যে আমি কী না করেছি-- যে যা বলেছে তাই শুনেছি-- কত মাদুলি কত মত্তর নিয়েছি সে তো তুমি জানই। একদিন স্বপ্নে দেখলুম যেন সাজি ভরে টগরফুল নিয়ে এসে ঠাকুরের পুজো করতে বসেছি-- এক সময় চেয়ে দেখি সাজিতে ফুল নেই, ফুলের মতো ধধরে একটি ছোট্ট ছেলে ; আহা সে কী দেখেছিলুম সে কী বলব, আমার দুই চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল-- তাকে তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিতে যাব আর ঘুম ভেঙে গেল। তার দশ দিন না যেতেই তো গোৱাকে পেলুম-- সে আমার ঠাকুরের দান-- সে কি আর কারো যে আমি কাউকে ফিরিয়ে দেব। আর জন্মে তাকে গর্ভে ধারণ করে বোধ হয় অনেক কষ্ট পেয়েছিলুম তাই আজ সে আমাকে মা বলতে এসেছে। কেমন করে কোথা থেকে সে এল ভেবে দেখো দেখি। চারি দিক তখন মারামারি কাটাকাটি, নিজের প্রাণের ভয়েই মরি-- সেই সময় রাত-দুপুরে সেই মেম যখন আমাদের বাড়িতে এসে লুকোল, তুমি তো তাকে ভয়ে বাড়িতে রাখতেই চাও না-- আমি তোমাকে ভাঁড়িয়ে তাকে গোয়ালঘরে লুকিয়ে রাখলুম। সেই রাত্রেই ছেলেটি প্রসব করে সে তো মারা গেল। সেই বাপ-মা মরা ছেলেকে আমি যদি না বাঁচাম তো সে কি বাঁচত ? তোমার কী। তুমি তো পাদ্রির হাতে ওকে দিতে চেয়েছিলে। কেন! পাদ্রিকে দিতে যাব কেন! পাদ্রি কি ওর মা-বাপ, না ওর প্রাণরক্ষা করেছে ? এমন করে যে ছেলে পেয়েছি সে কি গর্ভে পাওয়ার চেয়ে কম। তুমি যাই বল, এ ছেলে যিনি আমাকে দিয়েছেন তিনি স্বয়ং যদি না নেন তবে প্রাণ গেলেও আর কাউকে নিতে দিচ্ছি নে।

কৃষ্ণদয়াল। সে তো জানি। তা, তোমার গোরাকে নিয়ে তুমি থাকো, আমি তো কখনো তাতে কোনো বাধা দিই নি। কিন্তু ওকে ছেলে বলে পরিচয় দিয়ে তার পরে এর পইতে না দিলে তো সমাজে মানবে না। তাই পইতে কাজেই দিতে হল। এখন কেবল দুটি কথা ভাববার আছে। ন্যায়ত আমার বিষয়সম্পত্তি সমস্ত মহিমেরই প্রাপ্য-- ভাই--


আনন্দময়ী। কে তোমার বিষয়সম্পত্তির অংশ নিতে চায়। তুমি যত টাকা করেছ সব তুমি মহিমকে দিয়ে যেয়ো-- গোৱা তার এক পয়সাও নেবে না। ও পুরুষমানুষ, লেখাপড়া শিখেছে, নিজে খেটে উপার্জন করে খাবে- ও পরের ধনে ভাগ বসাতে যাবে কেন! ও বেঁচে থাক সেই আমার ঢের-- আমার


আর কোনো সম্পত্তির দরকার নেই।


কৃষ্ণদয়াল। না, ওকে একেবারে বঞ্চিত করব না, জায়গিরটা ওকেই দিয়ে দেব-- কালে তার মুনফা বছরে হাজার টাকা হতে পারবে। এখন ভাবনার কথা হচ্ছে এর বিবাহ দেওয়া নিয়ে। পূর্বে যা করেছি। তা করেছি-- কিন্তু এখন তো হিন্দুমতে ব্রাহ্মণের ঘরে ওর বিয়ে দিতে পারব না- তা এতে তুমি রাগই কর আর যাই কর।


আনন্দময়ী। হাফ হায়, তুমি মনে কর তোমার মতো পৃথিবীময় গঙ্গাজল আর গোবর ছিটিয়ে বেড়াই। নে বলে আমার ধর্মজ্ঞান নেই। ব্রাহ্মণের ঘরে ওর বিয়েই বা দেব কেন, আর রাগ করবই বা কী হন্যে কৃষ্ণদয়াল। বল কী! তুমি যে বামুনের মেয়ে।


আনন্দময়ী। তা হই না বামুনের মেয়ে। বামনাই করা তো আমি ছেড়েই দিয়েছি। ঐ তো মহিমের বিয়ের সময় আমার খ্রীস্টানি চাল বলে কুটুম্বরা গোল করেতে চেয়েছিল-- আমি তাই ইচ্ছে করেই তফাত হয়ে ছিলুম, কথাটি এই নি। পৃথিবীসুদ্ধ লোক আমাকে খ্রীস্টান বলে, আরো কত কী কথ কয়-- আমি সমস্ত মেনে নিয়েই বলি, তা খ্রীস্টান কি মানুষ নয়। তোমরাই যদি এত উঁচু জাত আর ভগবানের এত আদরের তবে তিনি একবার পাঠানের, একবার মোগলের, একবার খ্রীস্টানের পায়ে এমন করে তোমাদের মাথা মুড়িয়ে দিচ্ছেন কেন ?


কৃষ্ণদয়াল। ও সব অনেক কথা, তুমি মেয়েমানুষ সে সব বুঝবে না। কিন্তু সমাজ একটা আছে-- সেটা তো বোঝ, সেটা তোমার মেনে চলাই উচিত।


আনন্দময়ী। আমার বুঝে কাজ নেই। আমি এই বুঝি যে, গোনাকে আমি যখন ছেলে বলে মানুষ করেছি তখন আচার-বিচারের ভড়ং করতে গেলে সমাজ থাক আর না থাক ধর্ম থাকবে না। আমি কেবল সেই ধর্মের ভয়েই কোনোদিন কিছু লুকোই নে-- আমি যে কিছু মানছি নে সে সকলকেই জানতে দিই, আর সকলেরই ঘৃণা কুড়িয়ে চুপ করে পড়ে থাকি। কেবল একটি কথাই লুকিয়েছি, তারই জন্যে ভয়ে ভয়ে সারা হয়ে গেলুম, ঠাকুর কখন কী করেন। দেখো, আমার মনে হয় গোরাকে সকল কথা বলে ফেলি, তার পরে অদৃষ্টে যা থাকে তাই হবে। কৃষ্ণদয়াল ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “না না, আমি বেঁচে থাকতে কোনোমতেই সে হতে পারবে


না। গোরাকে তো জানই। এ কথা শুনলে সে কী যে করে বসবে তা কিছুই বলা যায় না। তার পরে সমাজে একটা হুলস্থুল পড়ে যাবে। শুধু তাই? এ দিকে গবর্মেন্ট কী করে তাও বলা যায় না। যদিও গোরার বাপ লড়াইয়ে মারা গেছে, ওর মাও তো মরেছে জানি, কিন্তু সব হাঙ্গামা ঢুকে গেলে ম্যাজেস্টরিতে খবর দেওয়া উচিত ছিল। এখন এই নিয়ে যদি একটা গোলমাল উঠে পড়ে তা হলে আমার সাধন-ভজন সমস্ত মাটি হবে, আরো কী বিপদ ঘটে বলা যায় না।

আনন্দময়ী নিরুত্তর হইয়া বসিয়া রহিলেন। কৃষ্ণদয়াল কিছুক্ষণ পরে কহিলেন, “গোরার বিবাহ সম্বন্ধে আমি একটা পরামর্শ মনে মনে করেছি। পরেশ ভট্টচার্জ আমার সঙ্গে একসঙ্গে পড়ত। সে স্কুল- ইন্‌সপেক্টরি কাজে পেনসন নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় এসে বসেছে। সে মোর ব্রাহ্ম। শুনেছি তার ঘরে অনেকগুলি মেয়েও আছে। গোরাকে তার বাড়িতে যদি ভিড়িয়ে দেওয়া যায় তবে যাতায়াত করতে করতে পরেশের কোনো মেয়েকে তার পছন্দ হয়ে যেতেও পারে। তার পরে প্রজাপতির নির্বন্ধ ।"


আনন্দময়ী। বল কী গোৱা ব্ৰাহ্মর বাড়ি যাতায়াত করবে? সেদিন ওর আর নেই।


বলিতে বলিতে স্বয়ং গোরা তাহার মেঘমন্ত্র স্বরে "মা" বলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। কৃষ্ণদয়ালকে এখানে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া সে কিছু আশ্চর্য হইয়া গেল। আনন্দময়ী তাড়াতাড়ি উঠিয়া গোরার কাছে গিয়া দুই চক্ষে স্নেহ বিকীর্ণ করিতে করিতে কহিলেন, "কী বাবা, কী চাই?” কানা বিশেষ কিছু না, এখন থাক।" বলিয়া গোরা ফিরিবার উপক্রম করিল।


কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “একটু বোসো, একটা কথা আছে। আমার একটি ব্রাহ্মবন্ধু সম্প্রতি


কলকাতায় এসেছেন : তিনি হেদোতলায় থাকেন।"


গোৱা । পরেশবাবু নাকি ? কৃষ্ণদয়াল। তুমি তাঁকে জানলে কী করে ?


গোরা। বিনয় তাঁর বাড়ির কাছেই থাকে, তার কাছে তাঁদের গল্প শুনেছি।


কৃষ্ণদয়াল । আমি ইচ্ছা করি তুমি তাদের খবর নিয়ে এসো


গোরা আপন মনে একটু চিন্তা করিল, তার পরে হঠাৎ বলিল, “আচ্ছা, আমি কালই যাব।"


আনন্দময়ী কিছু আশ্চর্য হইলেন।


গোরা একটু ভাবিয়া আবার কহিল, “না, কাল তো আমার যাওয়া হবে না।”


কৃষ্ণদয়াল। কেন ?


গোৱা। কাল আমাকে ত্রিবেণী যেতে হবে। ”


কৃষ্ণদয়াল আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “ত্রিবেণী !


গোরা। কাল সূর্যগ্রহণের স্থান।


আনন্দময়ী। তুই অবাক করলি গোরা। স্নান করতে চাস কলকাতার গঙ্গা আছে। ত্রিবেণী না হলে


ভোর স্নান হবে না- তুই যে দেশসুদ্ধ সকল লোককে ছাড়িয়ে উঠলি । গোরা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া চলিয়া গেল ।


গোরা যে ত্রিবেণীতে স্নান করিতে সংকল্প করিয়াছে তাহার কারণ এই যে, সেখানে অনেক তীর্থযাত্রী একত্র হইবে। সেই জনসাধারণের সঙ্গে গোরা নিজেকে এক করিয়া মিলাইয়া দেশের একটি বৃহৎ প্রবাহের মধ্যে আপনাকে সমর্পণ করিতে ও দেশের হৃদয়ের আন্দোলনকে আপনার হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতে চায়। যেখানে গোরা একটুমাত্র অবকাশ পায় সেখানেই সে তাহার সমস্ত সংকোচ, সমস্ত পূর্বসংস্কার সবলে পরিত্যাগ করিয়া দেশের সাধারণের সঙ্গে সমান ক্ষেত্রে নামিয়া দাঁড়াইয়া মনের সঙ্গে বলিতে চায়, “আমি তোমাদের, তোমরা আমার "

30
Articles
গোড়া
0.0
গোরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাস। এটি ১৮৮০-এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভূমিতে লেখা। এটি লেখার ক্রমে পঞ্চম এবং রবীন্দ্রনাথের তেরোটি উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম।[১] এটি রাজনীতি এবং ধর্ম নিয়ে দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ উপন্যাস। উপন্যাসে মুক্তি, সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্ব, লিঙ্গ, নারীবাদ, বর্ণ, শ্রেণি, ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা, নগর অভিজাত বনাম গ্রামীণ কৃষক, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ এবং ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে লেখা রয়েছে। গোরা উপন্যাস দুই প্রেমিক জুটির দুটি সমান্তরাল প্রেমের গল্প নিয়ে গঠিত: গোরা এবং সুচরিতা, বিনয় এবং ললিতা। এতে উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে তাদের আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ দেখানো হয়েছে
1

প্রথম অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাসের সকালবেলায় মেঘ কাটিয়া গিয়া নির্মল রৌদ্রে কলিকাতার আকাশ ভরিয়া গিয়াছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার বিরাম নাই, ফেরিওয়ালা অবিশ্রাম হাঁকিয়া চলিয়াছে, যাহারা আপিসে কালেঞ্জে আদালতে যাইবে তাহাদের

2

দ্বিতীয় অধ্যায়

30 October 2023
1
0
0

বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশের অন্ধকার যেন ভিজিয়া ভারী হইয়া পড়িয়াছে। বর্ণহীন বৈচিত্র্যহীন মেঘের নিঃশব্দ শাসনের নীচে কলিকাতা শহর একটা প্রকাণ্ড নিরানন্দ কুকুরের মতো লেজের মধ্যে মুখ গুজিয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া

3

তৃতীয় অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

গোৱা ও বিনয় হাত হইতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিল। গোরার মা আনন্দময়ীকে দেখিলে গোরার মা বলিয়া মনে হয় না।

4

চতুর্থ অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

মত হিসাবে একটা কথা যেমনতরো শুনিতে হয়, মানুষের উপর প্রয়োগ করিবার বেলায় সকল সময় তাহার সেই একান্ত নিশ্চিত ভাবটা থাকে না-- অন্তত বিনয়ের কাছে থাকে না, বিনয়ের হৃদয়বৃত্তি অত্যন্ত প্রবল। ভাই তর্কের সময

5

পঁচম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

“ওগো, শুনছ? আমি তোমার পূজোর ঘরে ঢুকছি নে, ভয় নেই। আহ্নিক শেষ হলে একবার ও ঘরে যেয়ো-- তোমার সঙ্গে কথা আছে। দুজন নৃতন সন্ন্যাসী যখন এসেছে তখন কিছুকাল তোমার আর দেখা পাব না জানি, সেইজন্যে বলতে এলুম। ভুলো

6

ষষ্ঠ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন। আনন্দময়ী কহিল

7

সাতম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

ভোরে উঠিয়া বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকাল-বেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মতো নির্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই-একটা সাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।

8

আঠম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

এই একটা বাঁধ ভাঙিয়া যাইতেই বিনয়ের হৃদয়ের নূতন বন্যা আরো যেন উদ্দাম হইয়া উঠিল। আনন্দময়ীর ঘর হইতে বাহির হইয়া রাস্তা দিয়া সে যেন একেবারে উড়িয়া চলিল : মাটির স্পর্শে তাহার যেন পায়ে ঠেকিল না ; তাহ

9

নবম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে পাতাবাহার এবং ফুলের গাছ। বারান্দার উপর হইতে রাস্তার ধারের শিরীয় ও কৃষ্ণচূড়া

10

দশম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা হাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। সুদীর্ঘ শুকায় গোরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই ব

11

একাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

সেদিন তর্কে গোরাকে অপদস্থ করিয়া সুচরিতার সম্মুখে নিজের জয়পতাকা তুলিয়া ধরিবার জনা হারানের বিশেষ ইচ্ছা ছিল, গোড়ায় সুচরিতাও তাহার আশা করিয়াছিল। কিন্তু দৈবক্রমে ঠিক তার বিপরীত ঘটিল। ধর্ম বিশ্বাস ও স

12

দ্বাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

বিনয় ও গোরা পরেশের বাড়ি হইতে রাস্তায় বাহির হইলে বিনয় কহিল, "গোরা, একটু আস্তে আস্তে চলো ভাই-- তোমার পা দুটো আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো-- ওর চালটা একটু খাটো না করলে তোমার সঙ্গে যেতে আমরা হাঁপিয়ে পড়ি ।

13

তেরো অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

মধ্যাহ্নে গোরার কাছে যাইবার জন্য বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার কাছে নিজেকে নত করিতে কোনোদিন সংকোচ বোধ করে নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভিমানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশবাবুর

14

চোদ্দশ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

গোরা যখন মধ্যাহ্নে যাইতে বসিল, আনন্দময়ী আস্তে আস্তে কথা পাড়িলেন, “আজ সকালে বিনয় এসেছিল। তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি? গোরা খাবার খালা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিল, "হাঁ, হয়েছিল।" আনন্দময়ী অনেকক্ষণ চ

15

পনের তেম অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

রাত্রে গোরা বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকার হাতের উপর বেড়াইতে লাগিল । তাহার নিজের উপর রাগ হইল। রবিবারটা কেন সে এমন বৃথা কাটিতে দিল। ব্যক্তিবিশেষের প্রণয় লইয়া অন্য সমস্ত কাজ নষ্ট করিবার জন্য তো গো

16

ষোড়শ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

বরদাসুন্দী কহিলেন, “তুমি সুচরিতার বিয়ে দেবে না নাকি ?” পরেশবাবু তাঁহার স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত বুলাইলেন -- তার পর মৃদুস্বরে কহিলেন, “পাত্র কোথায় ?” বরদাসুন্দরী কহ

17

সতের্দশ অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

ঘন্টা দুই-তিন নিদ্রার পর যখন গোরা ঘুম ভাঙিয়া পাশে চাহিয়া দেখিল বিনয় ঘুমাইতেছে তখন তাহার হৃদয় আনন্দে ভরিয়া উঠিল। স্বপ্নে একটা প্রিয় জিনিস হারাইয়া জাগিয়া উঠিয়া যখন দেখা যায় তাহা হারায় নাই

18

আঠারো অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় গেল। আনন্দময়ীর মুখের একটি কথাও এপর্যন্ত বিনয়ের কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই। সে রাত্রে তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল। পরদিন সকালে উঠিয়া

19

ঊনিশতম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

সকালবেলায় গোরা কাজ করিতেছিল। বিনয় খামকা আসিয়া অত্যন্ত খাপছাড়াভাবে কহিল, "সেদিন পরেশবাবুর মেয়েদের নিয়ে আমি সার্কাস দেখতে গিয়েছিলুম।" গোরা লিখিতে লিখিতেই বলিল, “শুনেছি।” বিনয় বিস্মিত হইয়া

20

বিশেষ অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

মহিম সেদিন গোৱাকে কিছু না বলিয়া তাহার পরের দিন তাহার ঘরে গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন গোরাকে পুনর্বার রাজি করাইতে বিস্তর লড়ালড়ি করিতে হইবে। কিন্তু তিনি যেই আসিয় বলিলেন যে বিনয় কাল বিকালে আসিয়া বি

21

একুশ অষ্টম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

গোরা তাহার স্বাভাবিক দ্রুতগতি পরিত্যাগ করিয়া অন্যমনস্কভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিল। বাড়ি যাইবার সহজ পথ ছাড়িয়া সে অনেকটা ঘুরিয়া গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরিল। তখন কলিকাতার গঙ্গা ও গঙ্গার ধার বণিক-সভ্যতার

22

বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
2
0
0

গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে। কাল রাত্রে গোৱা তো পরেশবাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ল‍ইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। এই অভ

23

ত্রয়বিংশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

অভিনয়ের অভ্যাস উপলক্ষে বিনয় প্রত্যহই আসে। সূচরিতা তাহার দিকে একবার চাহিয়া দেখে, তাহার পরে হাতের বইটার দিকে মন দেয় অথবা নিজের ঘরে চলিয়া যায়। বিনয়ের একলা আসার অসম্পূর্ণতা প্রত্যহই তাহাকে আঘাত করে

24

চব্বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

এইরূপ স্থির হইয়াছিল যে, ইংরেজ কবি ড্রাইডেনের রচিত সংগীত-বিষয়ক একটি কবিতা বিনয় ভাবব্যক্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া যাইবে এবং মেয়েরা অভিনয়মঞ্চে উপযুক্ত সাজে সজ্জিত হইয়া কাব্যলিখিত ব্যাপারের মূক অভিনয়

25

পঁচিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

রবিবার দিন সকালে আনন্দময়ী পান সাজিতেছিলেন, শশিমুখী তাহার পাশে বসিয়া সুপারি কাটিয়া স্তূপাকার করিতেছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেই শশিমুখী তাহার কোলের আঁচল হইতে সুপারি ফেলিয়া দিয়া তাড়

26

ছাব্বিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

গোরা যখন ভ্রমণে বাহির হইল তখন তাহার সঙ্গে অবিনাশ মতিলাল বসন্ত এবং রমাপতি এই চারজন সঙ্গী ছিল। কিন্তু গোরার নির্ণয় উৎসাহের সঙ্গে তাহারা তাল রাখিতে পারিল না। অবিনাশ এবং বসন্ত অসুস্থ শরীরের ছুতা করিয়া চ

27

সতাশি তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ম্যাজিস্টেট ব্রাউনলো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন। ব্রাউনলো স

28

আঠাশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

কোনোপ্রকার অপরাধ বিচার না করিয়া কেবলমাত্র গ্রামকে শাসন করিবার জন্য সাতচল্লিশ জন আসামিকে হাজতে দেওয়া হইয়াছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাতের পর গোৱা উকিলের সন্ধানে বাহির হইল। কোনো লোকের কাছে খবর প

29

ঊনত্রিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

আজ ছোটোলটি আসিবেন বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক সাড়ে দশটায় আদালতে আসিয়া বিচারকার্য সকাল সকাল শেষ করিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন। সাতকড়িবাবু ইস্কুলের ছাত্রদের পক্ষ লইয়া সেই উপলক্ষে তাঁহার বন্ধুকে বাচাই

30

তিরিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় পরেশবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনের ভাবটা কী তাহা স্টীমারে উঠিবার পূর্বে পর্যন্ত বিনয় নিশ্চিত জানিত না। ললিতার সঙ্গে বিরোধেই তাহার মন ব্যাপৃ

---