shabd-logo

তৃতীয় পৰ্ব : নয়

21 October 2023

2 Viewed 2

তাহাদের সম্বন্ধে সবাই ভাবিল, যাক, বাঁচা গেল! রাজলক্ষ্মীর তুচ্ছ কথায় মন দিবার সময় ছিল না; সে উহাদের দুই-চারিদিনেই বিস্মৃত হইল; মনে পড়িলেও কি যে মনে করিত সেই জানে। তবে, পাড়া হইতে যে একটা পাপ বিদায় হইয়াছে তাহা অনেকেই ভাবিত। কেবল রতন খুশি হইল না। সে বুদ্ধিমান, সহজে মনের কথা ব্যক্ত করে না, কিন্তু তাহার মুখ দেখিয়া মনে হইত জিনিসটা সে একেবারেই পছন্দ করে নাই। তাহার মধ্যস্থ হইবার, কর্তৃত্ব করিবার সুযোগ গেল, ঘরের টাকা গেল এতসবড় একটা সমারোহ কাণ্ড রাতারাতি কোথা দিয়া কেমন করিয়া বিলুপ্ত হইয়া গেল—সবসুদ্ধ জড়াইয়া সে যেন নিজেকেই অপমানিত, এমন কি আহত জ্ঞান করিল। তথাপি সে চুপ করিয়াই রহিল। আর বাটীর যিনি কর্ত্রী, তাঁহার ত কোনদিকে খেয়ালমাত্র নাই। যত দিন কাটিতে লাগিল সুনন্দা ও তাহার কাছ হইতে মন্ত্রতন্ত্রের উচ্চারণ শুদ্ধির লোভ তাহাকে যেন পাইয়া বসিতে লাগিল। কোনদিন তথায় যাওয়ার তাহার বিরাম ছিল না। সেখানে সে কি পরিমাণে যে ধর্মতত্ত্ব ও জ্ঞান লাভ করিতেছিল তাহা আমি জানিব কি করিয়া আমি কেবল জানিতেছিলাম তাহার পরিবর্তন। তাহা যেমন দ্রুত, তেমনি অভাবিত। দিনের বেলায় আহারটা আমার চিরকাল একটু বেলাতেই সাঙ্গ হইত। রাজলক্ষ্মী বরাবর আপত্তি করিয়াই আসিয়াছে, অনুমোদন কখনও করে নাই- সে ঠিক; কিন্তু সে ত্রুটি সংশোধনের জন্য কখনও আমাকে লেশমাত্ৰ চেষ্টা করিতেও হয় নাই। কিন্তু আজকাল দৈবাৎ কোনদিন অধিক বেলা হইয়া গেলে মনে মনে লজ্জা বোধ করি। রাজলক্ষ্মী বলিত, তুমি রোগামানুষ, তোমার এত দেরি করা কেন? নিজের শরীরের পানে না চাও, দাসী-চাকরদের মুখের দিকে ত চাইতে হয়। তোমার কুঁড়েমিতে তারা যে মারা যায়। কথাগুলো ঠিক সেই আগেকার তবুও ঠিক তা নয়। সেই সস্নেহ প্রশ্রয়ের সুর যেন আর বাজে না বাজে বিরক্তির এমন একটা কুশাগ্র সূক্ষ কটুতা যাহা চাকর-দাসী কেন, হয়ত আমি ছাড়া ভগবানের কানেও তাহার নিগূঢ় রেশটুকু ধরা পড়ে না। তাই ক্ষুধার উদ্রেক না হইলেও দাসী চাকরদের মুখ চাহিয়া তাড়াতাড়ি কোনমতে স্নানাহারটা সারিয়া লইয়া তাহাদের ছুটি করিয়া দিতাম। কিন্তু এই অনুগ্রহের প্রতি চাকর- দাসী যাহারা, তাহাদের আগ্রহ ছিল কি উপেক্ষা ছিল, সে তাহারাই জানে: কিন্তু রাজলক্ষ্মী দেখিতাম ইহার মিনিট দশ-পনেরোর মধ্যেই বাড়ি হইতে বাহির হইয়া যাইতেছে। কোনদিন রতন, কোনদিন বা দরোয়ান সঙ্গে যাইত, কোনদিন বা দেখিতাম সে একাই চলিয়াছে, ইহাদের কাহারও জন্য অপেক্ষা করিবার সময় পর্যন্ত হয় নাই। প্রথমে দুই-চারি দিন আমাকে সঙ্গে যাইতে সাধিয়াছিল। কিন্তু ওই দুই-চারি দিনেই বুঝা গেল, কোন পক্ষ হইতেই তাহাতে সুবিধা হইবে না। হইলও না। অতএব আমি আমার নিরালা ঘরে পুরাতন আলস্যের মধ্যে এবং সে তাহার ধর্মকর্ম ও মন্ত্রতন্ত্রের নবীন উদ্দীপনার মধ্যে নিমগ্ন থাকায় ক্রমশঃই উভয়ে যেন পৃথক্‌ হইয়া পড়িতে লাগিলাম। আমার খোলা জানালা দিয়া দেখিতে পাইতাম, সে রৌদ্রতপ্ত শুষ্ক মাঠের পথ দিয়া দ্রুত পদক্ষেপে মাঠ পার হইয়া যাইতেছে। একাকী সমস্ত দুপুরবেলাটা যে আমার কি করিয়া কাটে, এদিকে খেয়াল করিবার সময় তাহার ছিল না – সে আমি বুঝিতাম ।

তবুও যতদূর পর্যন্ত তাহাকে চোখ দিয়া অনুসরণ করা যায়, না করিয়া পারিতাম না। পায়েহাঁটা আঁকাবাঁকা পথের উপর তাহার বিলীয়মান দেহলতা ধীরে ধীরে দূরান্তরালে কোন এক সময়ে তিরোহিত হইয়া যাইত অনেকদিন সেই সময়টুকুও যেন চোখে আমার ধরা পড়িত না; মনে হইত ওই একান্ত সুপরিচিত চলনখানি যেন তখনও শেষ হয় নাই— সে যেন চলিয়াই চলিয়াছে। হঠাৎ চেতনা হইত। হয়ত চোখ মুছিয়া আর একবার ভাল করিয়া চাহিয়া দেখিয়া তার পরে বিছানায় শুইয়া পড়িতাম। কর্মহীনতার দুঃসহ ক্লান্তিবশতঃ হয়ত বা কোনদিন ঘুমাইয়া পড়িতাম—নয়ত নিমীলিত চক্ষে নিঃশব্দে পড়িয়া থাকিতাম। অদূরবর্তী কয়েকটা খর্বাকৃতি বাবলাগাছে বসিয়া ঘুঘু ডাকিত, এবং তাহারি সঙ্গে মিলিয়া মাঠের তপ্ত বাতাসে কাছাকাছি ডোমেদের কোন্ একটা বাঁশঝাড় এমনি একটা একটানা ব্যথাভরা দীর্ঘশ্বাসের মত শব্দ করিতে থাকিত যে, মাঝে মাঝে ভুল হইত, সে বুঝি বা আমার নিজের বুকের ভিতর হইতেই উঠিতেছে। ভয় হইত, এমন বুঝি বা আর বেশিদিন সহিতে পারিব না। রতন বাড়ি থাকিলে মাঝে মাঝে পা টিপিয়া ঘরে ঢুকিয়া আস্তে আস্তে বলিত, বাবু একবার তামাক দেব কি? এমন কতদিন হইয়াছে, জাগিয়াও সাড়া দিই নাই, ঘুমানোর ভান করিয়াছি: ভয় হইয়াছে, পাছে সে আমার মুখের উপর বেদনার ঘুণাগ্র আভাসও দেখিতে পায়। প্রতিদিনের মত সেদিনও দুপুরবেলায় রাজলক্ষ্মী সুনন্দার বাটীতে চলিয়া গেলে সহসা আমার বর্মার কথা মনে পড়িয়া বহুকালের পরে অভয়াকে একখানা চিঠি লিখিতে বসিয়াছিলাম। ইচ্ছা ছিল, যে ফার্মে কাজ করিতাম, তাহার বড়সাহেবকেও একখানা পত্র লিখিয়া খবর লইব। কি খবর লইব, কেন লইব লইয়া কি হইবে, এত কথা তখনও ভাবি নাই। সহসা মনে হইল জানালার সুমুখ দিয়া যে রমণী ঘোমটায় মুখ ঢাকিয়া ত্বরিতপদে সরিয়া গেল, সে যেন চেনা-সে যেন মালতীর মত। উঠিয়া উঁকি মারিয়া দেখিবার চেষ্টা করিলাম, কিন্তু দেখা গেল না। সেই মুহূর্তেই তাহার আঁচলের রাঙ্গা পাড়টুকু আমাদের প্রাচীরের কোণটায় অন্তর্হিত হইল।

মাসখানেকের ব্যবধানে ডোমদের সেই শয়তান মেয়েটাকে সবাই একপ্রকার ভুলিয়াছে, আমিই কেবল তাহাকে ভুলিতে পারি নাই। জানি না কেন, আমার মনের একটা কোণে ওই উচ্ছৃঙ্খল মেয়েটার সেই সন্ধ্যাবেলাকার চোখের জলের এক ফোঁটা ভিজা দাগ তখনও পর্যন্তও মিলায় নাই। প্রায়ই মনে হইত, কি জানি কোথায় তাহারা আছে। জানিতে সাধ হইত এই গঙ্গামাটির অসৎ প্রলোভন ও কুৎসিত ষড়যন্ত্রের বেষ্টনের বাহিরে মেয়েটার স্বামীর কাছে থাকিয়া কিভাবে দিন কাটিতেছে! ইচ্ছা করিতাম, এখানে তাহারা আর যেন শীঘ্র না আসে। ফিরিয়া গিয়া চিঠিটা শেষ করিতে বসিলাম। ছত্রকয়েক লেখার পরেই পদশব্দে মুখ তুলিয়া দেখিলাম, রতন। তাহার হাতে সাজা কলিকা, গুড়গুড়ির মাথায় বসাইয়া দিয়া নলটি আমার হাতে তুলিয়া দিয়া কহিল, বাবু, তামাক খান।

আমি ঘাড় নাড়িয়া জানাইলাম, আচ্ছা।

রতন কিন্তু তৎক্ষণাৎ গেল না। নিঃশব্দে ক্ষণকাল দাঁড়াইয়া থাকিয়া পরম গাম্ভীর্যের সহিত কহিল, বাবু, এই রতন পরামাণিক যে কবে মরবে তাই কেবল সে জানে না!

তাহার ভূমিকার সহিত আমাদের পরিচয় ছিল; রাজলক্ষ্মী হইলে বলিত, জানলে লাভ ছিল, কিন্তু কি বলতে এসেচিস বল। আমি কিন্তু শুধু মুখ তুলিয়া হাসিলাম। রতনের গাম্ভীর্যের পরিমাণ তাহাতে বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হইল না; কহিল, মাকে সেদিন বলেছিলাম কিনা ছোটলোকের কথায় মজবেন না! তাদের চোখের জলে ভুলে দু’দু'শ টাকা জলে দেবেন না: বলুন, বলেছিলাম কি না! আমি জানি, সে বলে নাই। এ সদভিপ্রায় তাহার অন্তরে ছিল বিচিত্র নয় কিন্তু প্রকাশ করিয়া বলা সে কেন, বোধ হয় আমারও সাহস হইত না। কহিলাম, ব্যাপার কি রতন ?

রতন কহিল, ব্যাপার যা বরাবর জানি তাই।

কহিলাম, কিন্তু আমি যখন এখনও জানিনে তখন একটু খুলেই বল।

রতন খুলিয়াই বলিল। সমস্ত শুনিয়াই মনের মধ্যে যে কি হইল বলা কঠিন। কেবল মনে আছে, ইহার নিষ্ঠুর কদর্যতা ও অপরিসীম বীভৎসতার ভারে সমস্ত চিত্ত একেবারে তিক্ত বিবশ হইয়া গেল। কি করিয়া যে কি হইল, রতন সবিস্তারে ইহার ইতিবৃত্ত এখনও সংগ্রহ করিয়া উঠিতে পারে নাই; কিন্তু যেটুকু সত্য সে ছাঁকিয়া বাহির করিয়াছে, তাহা এই যে, নবীন মোড়ল সম্প্রতি জেল খাটিতেছে এবং মালতী তাহার ভগিনীপতির সেই বড়লোক ছোটভাইকে স্যাঙা করিয়া উভয়ে তাহার পিতৃগৃহে বাস করিতে গঙ্গামাটিতে কাল ফিরিয়া আসিয়াছে! মালতীকে একপ্রকার স্বচক্ষে না দেখিলে বোধ করি বিশ্বাস করাই কঠিন হইত যে রাজলক্ষ্মীর টাকাগুলোর যথার্থই এইভাবে সদগতি হইয়াছে।

সেই রাত্রে আমাকে খাওয়াইতে বসিয়া রাজলক্ষ্মী এ সংবাদ শুনিল। শুনিয়া কেবল আশ্চর্য হইয়া কহিল, বলিস্ কি রতন, সত্যি নাকি? ছুঁড়িটা সেদিন আচ্ছা তামাশা করলে তা টাকাগুলো গেল—অবেলায় আমাকে নাইয়ে মারলে! –ও কি, তোমার খাওয়া হয়ে গেল নাকি, তার চেয়ে খেতে না বসলেই ত হয়?

এ-সকল প্রশ্নের উত্তর দিবার কোনদিনই আমি বৃথা চেষ্টা করি না —– আজও চুপ করিয়া রহিলাম। তবে একটা বস্তু উপলব্ধি করিলাম। আজ নানা কারণে আমার একেবারে ক্ষুধা ছিল না, প্রায় কিছুই খাই নাই—তাই আজ সেটা তাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছে; কিন্তু কিছুকাল হইতে যে আমার খাওয়া ধীরে ধীরে কমিয়া আসিতেছিল, সে তাহার চোখে পড়ে নাই। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে তাহার নজর এত তীক্ষ্ণ ছিল যে, ইহার লেশমাত্র কম-বেশি লইয়া তাহার আশঙ্কা ও অভিযোগের অবধি থাকিত না কিন্তু আজ যে কারণেই হোক একজনের সেই শ্যেনদৃষ্টি ঝাপসা হইয়া গেছে বলিয়াই যে অপরের গভীর বেদনাকেও হা-হুতাশের দ্বারা প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করিয়া তুলিব, সে ও আমি নই। তাই উচ্ছ্বসিত দীর্ঘনিশ্বাস চাপিয়া লইয়া নিরুত্তরে উঠিয়া দাঁড়াইলাম।

আমার দিনগুলা একভাবেই আরম্ভ হয় একভাবেই শেষ হয়। আনন্দ নাই, বৈচিত্র্য নাই, অথচ কোন দুঃখ-কষ্টের নালিশও নাই। শরীর মোটের উপর ভালই আছে। পরদিন প্রভাত হইল, বেলা বাড়িয়া উঠিল, যথারীতি স্নানাহার সমাপ্ত করিয়া নিজের ঘরে গিয়া বসিলাম। সুমুখের সেই খোলা জানালা এবং তেমনি বাধাহীন উন্মুক্ত শুষ্ক মাঠ।

পাঁজিতে আজ বোধ হয় বিশেষ কোন উপবাসের বিধি ছিল: রাজলক্ষ্মীর তাই আজ সেইটুকু সময় অপব্যয় করিতে হইল না– যথাসময়ের কিছু পূর্বেই সুনন্দার উদ্দেশে বাহির হইয়া গেল। অভ্যাসমত বোধ করি বহুক্ষণ তেমনিই চাহিয়াছিলাম, হঠাৎ স্মরণ হইল কালকার অসমাপ্ত চিঠি দুটা আজ শেষ করিয়া বেলা তিনটার পূর্বেই ডাকবাক্সে ফেলা চাই। অতএব আর মিথ্যা কালহরণ না করিয়া অবিলম্বে তাহাতেই নিযুক্ত হইলাম। চিঠি দুখানা সম্পূর্ণ করিয়া যখন পড়িতে লাগিলাম, তখন কোথায় যেন ব্যথা বাজিতে লাগিল, কি যেন একটা না লিখিলেই ভাল হইত; অথচ নিতান্তই সাধারণ লেখা, তাহার কোথায় যে ত্‌রুটি বার বার পড়িয়াও ধরিতে পারিলাম না। একটা কথা আমার মনে আছে। অভয়ার পত্রে রোহিণীদাদাকে নমস্কার জানাইয়া শেষের দিকে লিখিয়াছি তোমাদের অনেকদিন খবর পাই নাই। তোমরা কেমন আছ, কেমন করিয়া তোমাদের দিন কাটিতেছে, কেবলমাত্র কল্পনা করা ছাড়া জানিবার চেষ্টা করি নাই। হয়ত সুখেই আছ, হয়ত নাই, কিন্তু তোমাদের জীবনযাত্রার এই দিকটাকে সেই যে একদিন ভগবানের হাতে ফেলিয়া দিয়া স্বেচ্ছায় পর্দা টানিয়া দিয়াছিলাম, আজও সে তেমনি ঝুলানো আছে; তাহাকে কোনদিন তুলিবার ইচ্ছা পর্যন্তও করি নাই। তোমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আমার দীর্ঘকালের নয়, কিন্তু যে অত্যন্ত দুঃখের ভিতর দিয়া একদিন আমাদের পরিচয় আরম্ভ এবং আর একদিন সমাপ্ত হয়, তাহাকে সময়ের মাপ দিয়া মাপিবার চেষ্টা আমরা কেহই করি নাই। যেদিন নিদারুণ রোগাক্রান্ত হই, সেদিন সেই আশ্রয়হীন সুদূর বিদেশে তুমি ছাড়া আমার যাইবার স্থান ছিল না। তখন একটি মুহূর্তের জন্যও তুমি দ্বিধা কর নাই সমস্ত হৃদয় দিয়া পীড়িতকে গ্রহণ করিয়াছিলে। অথচ তেমনি রোগে, তেমনি সেবা করিয়া আর কখনো যে কেহ আমাকে বাঁচায় নাই, এ কথা বলি না; কিন্তু আজ অনেক দূরে বসিয়া উভয়ের প্রভেদটাও অনুভব করিতেছি। উভয়ের সেবার মধ্যে নির্ভয়ের মধ্যে, অন্তরের অকপট শুভকামনার মধ্যে তোমাদের নিবিড় স্নেহের মধ্যে গভীর ঐক্য রহিয়াছে, কিন্তু তোমার মধ্যে এমন একটি স্বার্থলেশহীন সুকোমল নির্লিপ্ততা, এমন অনির্বচনীয় বৈরাগ্য ছিল যাহা কেবলমাত্র সেবা করিয়াই আপনাকে আপনি নিঃশেষ করিয়াছে। আমার আরোগ্যের মধ্যে এতটুকু চিহ্ন রাখিতে একটি পা-ও কখনো বাড়ায় নাই, তোমার এই কথাটাই আজ বারংবার মনে পড়িতেছে। হয়ত অত্যন্ত স্নেহ আমার সহে না বলিয়াই, হয়ত বা স্নেহের যে রূপ একদিন তোমার চোখে-মুখে দেখিতে পাইয়াছি তাহারই জন্য সমস্ত চিত্ত উন্মুখ হইয়া উঠিয়াছে। অথচ তোমাকে আর একবার মুখোমুখি না দেখা পর্যন্ত ঠিক করিয়া কিছুই বুঝিতে পারিতেছি না। সাহেবের চিঠিখানা ও শেষ করিয়া ফেলিলাম। একসময়ে তিনি আমার সত্যসত্যই বড় উপকার করিয়াছিলেন। ইহার জন্য তাঁহাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়াছি। প্রার্থনা কিছুই করি নাই, কিন্তু এই দীর্ঘকাল পরে সহসা পায়ে পড়িয়া এমন ধন্যবাদ দিবার ঘটা দেখিয়াও নিজের কাছেই নিজের লজ্জা করিতে লাগিল। ঠিকানা লিখিয়া খামে বন্ধ করিতে গিয়া দেখি সময় উত্তীর্ণ হইয়া গেছে, এত তাড়াতাড়ি করিয়াও ডাকে দেওয়া গেল না, কিন্তু মন তাহাতে ক্ষুণ্ণ না হইয়া যেন স্বস্তি অনুভব করিল। মনে হইল এ ভালই হইল যে, কাল আর একবার পড়িয়া দেখিবার সময় মিলিবে।

রতন আসিয়া জানাইল কুশারী গৃহিণী আসিয়াছেন, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিলেন। আমি কিছু ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিলাম, কহিলাম, তিনি ত বাড়ি নেই, ফিরে আসতে বোধ করি সন্ধ্যা হবে।

তা জানি, এই বলিয়া তিনি জানালার উপর হইতে একটা আসন টানিয়া লইয়া নিজেই মেঝের উপর পাতিয়া লইয়া উপবেশন করিলেন, কহিলেন, কেবল সন্ধ্যা কেন, ফিরে আসতে ত প্রায় রাত হয়েই যায়।

লোকের মুখে মুখে শুনিয়াছিলাম, ধনী-গৃহিণী বলিয়া ইনি অতিশয় দাম্ভিকা । কাহারও বাড়ি বড় একটা যান না। এ বাড়ির সম্বন্ধেও তাঁহার ব্যবহার অনেকটা এইরূপ; অন্ততঃ এতদিন ঘনিষ্ঠতা করিতে ঔৎসুক্য প্রকাশ করেন নাই। ইতিপূর্বে মাত্র বার-দুই আসিয়াছেন। মনিরবাড়ি বলিয়া একবার নিজেই আসিয়াছিলেন এবং আর একবার নিমন্ত্রণ রাখিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন। কিন্তু কেন যে আজ অকস্মাৎ স্বেচ্ছায় আগমন করিলেন এবং বাটীতে কেহ নাই জানিয়াও—আমি ভাবিয়া পাইলাম না।

আসন গ্রহণ কহিয়া কহিলেন, আজকাল ছোটগিন্নীর সঙ্গে ত একেবারে এক- আত্মা।

না জানিয়া তিনি একটা ব্যথার স্থানেই আঘাত করিলেন; তথাপি ধীরে ধীরে বলিলাম, হাঁ প্রায়ই ওখানে যান বটে। কুশারী গৃহিণী কহিলেন, প্রায় রোজ রোজ! প্রত্যহ! কিন্তু ছোটগিন্নী কি কখনও আসে? একটি দিনও না! মানীর মান রাখবে সুনন্দা সে মেয়েই নয়! এই বলিয়া তিনি আমার মুখের প্রতি চাহিলেন। আমি একজনের নিত্য যাওয়ার কথাই কেবল ভাবিয়াছি, কিন্তু আর একজনের আসার কথা মনেও করি নাই; সুতরাং তাঁহার কথায় হঠাৎ একটু যেন ধাক্কা লাগিল। কিন্তু ইহার উত্তর আর কি দিব? শুধু মনে হইল ইঁহার আসার উদ্দেশ্যটা কিছু পরিষ্কার হইয়াছে, এবং একবার এমনও মনে হইল যে মিথ্যাসঙ্কোচ ও চক্ষুলজ্জা পরিত্যাগ করিয়া বলি, আমি নিতান্তই নিরুপায়, অতএব এই অক্ষম ব্যক্তিটিকে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়া কোন লাভ নাই। বলিলে কি হইত জানি না, কিন্তু না বলার ফলে দেখিলাম সমস্ত উত্তাপ ও উত্তেজনা তাঁহার চক্ষের পলকে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল; এবং কবে, কাহার কি ঘটিয়াছিল, এবং কি করিয়া তাহার সম্ভবপর হইয়াছিল, ইহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যায় তাঁহার শ্বশুরকুলের বছর- দশেকের ইতিহাস প্রায় রোজনামচার আকারে অনর্গল বকিয়া চলিতে লাগিলেন।

তাঁহার গোটাকয়েক কথার পরেই কেমন যেন বিমনা হইয়া পড়িয়াছিলাম। তাহার কারণও ছিল। মনে করিয়াছিলাম, একদিকে আত্মপক্ষের স্তুতিবাদ দয়াদাক্ষিণ্য, তিতিক্ষা প্রভৃতি যাহা কিছু শাস্ত্রোক্ত সদৃগুণাবলী মনুষ্যজন্মে সম্ভবপর সমস্তগুলিরই বিস্তৃত আলোচনা এবং অন্যদিকে যত কিছু ইঁহারই বিপরীত তাহারই বিশদ বিবরণ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে আরোপ করিয়া সন তারিখ, মাস, প্রতিবেশী সাক্ষীদের নামধাম সমেত আবৃত্তি করা ভিন্ন তাঁহার এই বলার মধ্যে আর কিছুই থাকিবে না। প্রথমটা ছিলও না—কিন্তু হঠাৎ একসময়ে আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হইল কুশারী গৃহিণীর কণ্ঠস্বরের আকস্মিক পরিবর্তনে। একটু বিস্মিত হইয়াই জিজ্ঞাসা করিলাম, কি হয়েছে? তিনি ক্ষণকাল একদৃষ্টে আমার মুখের প্রতি চাহিয়া রহিলেন, তার পরে ধরা গলায় বলিয়া উঠিলেন, হবার আর কি বাকি রইল বাবু? শুনলাম, কাল নাকি ঠাকুরপো হাটের মধ্যে নিজের হাতে বেগুন বেচতেছিলেন।

কথাটা ঠিক বিশ্বাস হইল না, এবং মন ভাল থাকিলে হয়ত হাসিয়াই ফেলিতাম। কহিলাম, অধ্যাপক মানুষ তিনি হঠাৎ বেগুনই বা পেলেন কোথায়, আর বেচতেই বা গেলেন কেন?

কুশারী গৃহিণী বলিলেন, ওই হতভাগীর জ্বালায়। বাড়ির মধ্যেই নাকি গোটাকয়েক গাছে বেগুন ফলেছিল, তাই পাঠিয়ে দিয়েছিল হাটে বেচতে এমন করে শত্‌রুতা করলে আমরা গাঁয়ে বাস করি কি করে?

বলিলাম, কিন্তু একে শত্রুতা করা বলচেন কেন? তাঁরা ত আপনাদের কিছুর মধ্যেই নেই। অভাব হয়েছে, নিজের জিনিস বিক্রি করতে গেছেন, তাতে আপনার নালিশ কি?

আমার জবাব শুনিয়া কুশারী গৃহিণী বিহ্বলের মত চাহিয়া থাকিয়া শেষে কহিলেন, এই বিচারই যদি করেন, তাহলে আমার বলবার আর কিছু নেই মনিবের কাছে নালিশ জানাবারও কিছু নেই—আমি উঠলাম।শেষের দিকে তাঁহার গলা একেবারে ধরিয়া গেল দেখিয়া ধীরে ধীরে কহিলাম, দেখুন, এর চেয়ে বরঞ্চ আপনার মনিব-ঠাকরুনকে জানাবেন, তিনি হয়ত সকল কথা বুঝতেও পারবেন, আপনার উপকার করতেও পারবেন।

তিনি মাথা নাড়িয়া বলিয়া উঠিলেন, আর আমি কাউকে বলতেও চাইনে, আমার উপকার করেও কারও কাজ নেই। এই বলিয়া তিনি সহসা অঞ্চলে চোখ মুছিয়া বলিলেন, আগে আগে কর্তা বলতেন, দু'মাস যাক, আপনিই ফিরে আসবে। তারপরে সাহস দিতেন, থাকো না আরও মাস দুই চেপে, সব শুধরে যাবে কিন্তু এমনি করে মিথ্যে আশায় আশায় প্রায় বছর ঘুরে গেল। কিন্তু কাল যখন শুনলাম সে উঠানের দুটো বেগুন পর্যন্ত বেচতে পেরেছে, তখন কারও কথায় আর আমার কোন ভরসা নেই। হতভাগী সমস্ত সংসার ছারখার করে দেবে, কিন্তু ও-বাড়িতে আর পা দেবে না। বাবু, মেয়েমানুষে যে এমন শক্ত পাষাণ হতে পারে, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।

তিনি কহিতে লাগিলেন, কর্তা ওকে কোনদিন চিনতে পারেন নি. কিন্তু আমি চিনেছিলাম। প্রথম প্রথম এর-ওর-তার নাম করে লুকিয়ে লুকিয়ে জিনিসপত্র পাঠাতাম; উনি বলতেন, সুনন্দা জেনেশুনেই নেয়—কিন্তু অমন করলে তাদের চৈতন্য হবে না। আমিও ভাবতাম, হবেও বা! কিন্তু একদিন সব ভুল ভেঙ্গে গেল। কি করে সে জানতে পারে, যতদিন যা-কিছু দিয়েচি, একটা লোকের মাথায় সমস্ত টান মেরে আমাদের উঠানের মাঝখানে ফেলে দিয়ে গেল। তাতে কর্তার তবুও চৈতন্য হ'ল না—হ'ল আমার।

এতক্ষণে আমি তাঁর মনের কথাটা ঠিক বুঝিতে পারিলাম। সদয়কণ্ঠে কহিলাম, এখন আপনি কি করতে চান? আচ্ছা, তাঁরা কি আপনাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বা কোনপ্রকার শত্রুতা করবার চেষ্টা করেন।

কুশারী গৃহিণী আর একদফা কাঁদিয়া ফেলিয়া কপালে করাঘাত করিয়া কহিলেন পোড়াকপাল, তা হলে ত একটা উপায় হ'ত। সে আমাদের এমনি ত্যাগ করেছে যে, কোনদিন যেন আমাদের চোখেও দেখেনি, নামও শোনেনি, এমনি কঠিন, এমনি পাষাণ মেয়ে! আমাদের দু'জনকে সুনন্দা তার বাপ মায়ের বেশি ভালবাসত: কিন্তু যেদিন থেকে শুনেচে তার ভাশুরের বিষয় পাপের বিষয়, সেই দিন থেকে তার সমস্ত মন যেন একেবারে পাথর হয়ে গেছে। স্বামী পুত্ৰ নিয়ে সে দিনের পর দিন শুকিয়ে মরবে, তবু এর কড়াক্রান্তি ছোঁবে না। কিন্তু এতবড় সম্পত্তি কি আমরা ফেলে দিতে পারি বাবু? সে যেমন দয়ামায়াহীন ছেলেপুলে নিয়ে না খেয়ে মরতেও পারে, কিন্তু আমরা ত তা পারিনে।

কি জবাব দিব ভাবিয়া পাইলাম না, শুধু আস্তে আস্তে কহিলাম, আশ্চর্য মেয়েমানুষ!

বেলা পড়িয়া আসিতেছিল, কুশারী গৃহিণী নীরবে কেবল ঘাড় নাড়িয়া সায় দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন, কিন্তু হঠাৎ দুই হাত জোড় করিয়া বলিয়া ফেলিলেন, সত্যি বলচি বাবু, এদের মাঝে পড়ে আমার বুকখানা যেন ফেটে যেতে চায়। কিন্তু শুনতে পাই আজকাল সে মার নাকি বড় বাধ্য কোন একটা উপায় হয় না? আমি যে আর সইতে পারিনে।

আমি চুপ করিয়া রহিলাম। তিনিও আর কিছু বলিতে পারিলেন না– তেমনি অশ্রু মুছিতে মুছিতে নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেলেন।

56
Articles
শ্রীকান্ত
0.0
"শ্রীকান্ত" প্রখ্যাত বাঙালি লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি ক্লাসিক উপন্যাস। গল্পটি শিরোনাম চরিত্র শ্রীকান্তের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, একজন বিচরণকারী এবং লক্ষ্যহীন যুবক যে আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রা শুরু করে। উপন্যাসটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের ব্রিটিশ শাসিত ভারতের পটভূমিতে রচিত। শ্রীকান্তের জীবন বিভিন্ন মোড় এবং বাঁক নেয় যখন সে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায় এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির মুখোমুখি হয়। তিনি অন্নদা, অভয়া এবং রাজলক্ষ্মী সহ একাধিক মহিলার প্রেমে পড়েন, কিন্তু স্বত্বের অনুভূতি খুঁজে পেতে সংগ্রাম করেন। শ্রীকান্ত নৈতিক এবং অস্তিত্বগত দ্বিধা নিয়ে, সামাজিক নিয়মকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তার যাত্রা মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব প্রতিফলিত করে। উপন্যাসটি প্রেম, পরিচয়, এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে। এটি তার সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলির একটি সমালোচনামূলক অনুসন্ধানের প্রস্তাব দেয়। শ্রীকান্তের ভ্রমণ গভীর দার্শনিক আত্মদর্শনের দিকে পরিচালিত করে। গল্পটি শেষ হয় শ্রীকান্তের আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং জ্ঞানার্জনের অনুভূতি অর্জনের মাধ্যমে। "শ্রীকান্ত" শরৎচন্দ্রের অন্যতম বিখ্যাত কাজ, যা মানুষের আবেগের চিত্রায়ন এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বে নিজের সত্যিকারের সন্ধানের জন্য পরিচিত।
1

প্রথম পর্ব এক

15 October 2023
0
0
0

আমার এই ‘ভবঘুরে জীবনের অপরাহ্ন বেলায় দাঁড়াইয়া ইহারই একটা অধ্যায় বলিতে বসিয়া আজ কত কথাই না মনে পড়িতেছে! ছেলেবেলা হইতে এমনি করিয়াই ত বুড়া হইলাম। আত্মীয় অনাত্মীয় সকলের মুখে শুধু একটা একটানা 'ছ

2

প্রথম পর্ব - দুই

15 October 2023
0
0
0

কয়েক মুহূর্তেই ঘনান্ধকারে সম্মুখ এবং পশ্চাৎ লেপিয়া একাকার হইয়া গেল। রহিল শুধু দক্ষিণ ও বামে সীমান্তরাল প্রসারিত বিপুল উদ্দাম জলস্রোত এবং তাহারই উপর তীব্রগতিশীলা এই ক্ষুদ্র তরণীটি এবং কিশোরবয়স্ক দু

3

প্রথম পর্ব : তিন

15 October 2023
0
0
0

বড় ঘুম পেয়েছে ইন্দ, বাড়ি ফিরে চল না ভাই! ইন্দ্র একটুখানি হাসিয়া ঠিক যেন মেয়েমানুষের মত স্নেহার্দ্র কোমল স্বরে কথা কহিল। বলিল, ঘুম ত পাবার কথাই ভাই। কি করব শ্রীকান্ত, আজ একটু দেরি হবেই—অনেক কাজ র

4

প্রথম পর্ব : চার

16 October 2023
0
0
0

'পা আর চলে না—এমনি করিয়া গঙ্গার ধারে ধারে চলিয়া সকালবেলা রক্তচক্ষু ও একান্ত শুষ্ক ম্লানমুখে বাটী ফিরিয়া আসিলাম। একটা সমারোহ পড়িয়া গেল। এই যে! এই যে করিয়া সবাই সমস্বরে এমনি অভ্যর্থনা করিয়া উঠিল

5

প্রথম পর্ব - পাঁচ

16 October 2023
0
0
0

সমস্ত ব্যাপারটা শুনিতে শুনিতে ইন্দুর দিদি হঠাৎ বার-দুই এমনি শিহরিয়া উঠিলেন যে, ইন্দ্রর সেদিকে যদি কিছুমাত্র খেয়াল থাকিত, সে আশ্চর্য হইয়া যাইত। সে দেখিতে পাইল না, কিন্তু আমি পাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ নী

6

প্রথম পর্ব : ছয়

16 October 2023
0
0
0

নিস্তব্ধ গভীর রাত্রে মা-গঙ্গার উপকূলে ইন্দ্র যখন আমাকে নিতান্ত অকারণে একাকী ত্যাগ করিয়া চলিয়া গেল, তখন কান্না আর সামলাইতে পারিলাম না। তাহাকে যে ভালবাসিয়াছিলাম, সে তাহার কোন মূল্যই দিল না। পরের বাড়

7

প্রথম পর্ব : সাত

18 October 2023
1
0
0

আজ একাকী গিয়া মুদীর কাছে দাঁড়াইলাম। পরিচয় পাইয়া মুদী একটি ছোট ন্যাকড়া বাহির করিয়া গেরো খুলিয়া দুটি সোনার মাকড়ি এবং পাঁচটি টাকা বাহির করিল। টাকা কয়টি আমার হাতে দিয়া কহিল, বহু, মাকড়ি-দুইটি আম

8

প্রথম পর্ব - আট

16 October 2023
0
0
0

লিখিতে বসিয়া আমি অনেক সময়ই আশ্চর্য হইয়া ভাবি, এই সব এলোমেলো ঘটনা আমার মনের মধ্যে এমন করিয়া পরিপাটিভাবে সাজাইয়া রাখিয়াছিল কে? যেমন করিয়া বলি, তেমন করিয়া ত তাহারা একটির পর একটি শৃঙ্খলিত হইয়া ঘট

9

প্রথম পর্ব - নয়

15 October 2023
0
0
0

মানুষের অন্তর জিনিসটিকে চিনিয়া লইয়া, তাহার বিচারের ভার অন্তর্যামীর উপর না দিয়া মানুষ যখন নিজেই গ্রহণ করিয়া বলে, আমি এমন, আমি তেমন, এ কাজ আমার দ্বারা কদাচ ঘটিত না, সে কাজ আমি মরিয়া গেলেও করিতাম না

10

প্রথম পর্ব : দশ

15 October 2023
0
0
0

সমস্ত ঘটনারই হেতু দেখাইবার জিদটা মানুষের যে বয়সে থাকে, সে বয়স আমার পার হইয়া গেছে। সুতরাং কেমন করিয়াই যে এই সূচিভেদা অন্ধকার নিশীথে একাকী পথ চিনিয়া দীঘির ভাঙ্গাঘাট হইতে এই শ্মশানের উপকণ্ঠে আসিয়া

11

প্রথম পর্ব : এগার

15 October 2023
1
0
0

পিয়ারীর কাছে যে সত্য করিয়াছিলাম, তাহা যে রক্ষাও করিয়াছিলাম, বাটী ফিরিয়া এই সংবাদ জানাইয়া তাহাকে চিঠি দিলাম। অবিলম্বে জবাব আসিল। আমি একটা বিষয় বারবার লক্ষ্য করিয়াছিলাম—কোন দিন পিয়ারী আমাকে তাহা

12

প্রথম পর্ব : বারো

15 October 2023
0
0
0

যাহাতে অচৈতন্য শয্যাগত হইয়া পড়িয়াছিলাম, তাহা বসন্ত নয়, অন্য জ্বর। ডাক্তারিশাস্ত্রে নিশ্চয়ই তাহার একটা-কিছু গালভরা শক্ত নাম ছিল, কিন্তু আমি তাহা অবগত নই। খবর পাইয়া পিয়ারী তাহার ছেলেকে লইয়া জন-দ

13

দ্বিতীয় পৰ্ব : এক

16 October 2023
1
0
0

এই ছন্নছাড়া জীবনের যে অ্যান্নত সেদিন রাজ মহীর কাছে শেষ বিদায়ের শুনে চোখের জলের ভিতর দিয়া শেষ করিয়া নিয়া আসিয়াছিলাম, মনে করি নাই, আবার তাহার ছিন্ন মুদ্রা যোজনা করিবার জন্য আমার ডাক পড়িবে। কিন্তু

14

দ্বিতীয় পৰ্ব : দুই

16 October 2023
0
0
0

এক-একটা কথা দেখিয়াছি, সারাজীবনে ভুলিতে পারা যায় না। যখনই মনে পড়ে—তাহার শব্দগুলা পর্যন্ত যেন কানের মধ্যে বাজিয়া উঠে। পিয়ারীর শেষ কথাগুলাও তেমনি। আজও আমি তাহার রেশ শুনিতে পাই। সে যে স্বভাবতঃই কত বড

15

দ্বিতীয় পৰ্ব : তিন

16 October 2023
0
0
0

দিন পাঁচ ছয় পরে একদিন ভোরবেলায় একটা লোহার তোরঙ্গ এবং একটা পাতলা বিছানামাত্র অবলম্বন করিয়া কলিকাতার কয়লাঘাটে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। গাড়ি হইতে নামিতে না নামিতে, এক খাঁকি-কুর্তি-পরা কুলি আসিয়া এই দু

16

দ্বিতীয় পৰ্ব : চার

16 October 2023
0
0
0

সেদিন এমন প্রবৃত্তি হইল না যে নীচে যাই। সুতরাং নন্দ টগরের যুদ্ধের অবসান কি ভাবে হইল, সন্ধিপত্রে কোন্ কোন্ শর্তাদি নির্দিষ্ট হইল, কিছুই জানি না। তবে, পরে দেখিয়াছি, শর্ত যাই হোক, বিপদের দিনে সেই স্ক্র্

17

দ্বিতীয় পৰ্ব : পাঁচ

17 October 2023
0
0
0

কেরেন্টি কারাবাসের আইন কুলিদের জন্য— ভদ্রলোকের জন্য নয়; এবং যে- কেহ জাহাজের ভাড়া দশ টাকার বেশি দেয় নাই, সেই কুলি। চা বাগানের আইনে কি বলে জানি না, তবে জাহাজী আইন এই বটে এবং কর্তৃপক্ষরাও প্রত্যক্ষ জ্

18

দ্বিতীয় পৰ্ব : ছয়

17 October 2023
0
0
0

অভয়া ও রোহিণীদাদাকে তাহাদের নূতন বাসায় নূতন ঘরকন্নার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করিয়া যেদিন সকালে নিজের জন্য আশ্রয় খুঁজিতে রেঙ্গুনের রাজপথে বাহির হইয়া পড়িলাম, সেদিন ওই দুটি লোকের সম্বন্ধে আমার মনের মধ্যে

19

দ্বিতীয় পৰ্ব : সাত

17 October 2023
0
0
0

পথে যাহাদের সুখ দুঃখের অংশ গ্রহণ করিতে করিতে এই বিদেশে আসিয়া উপস্থিত হইলাম, ঘটনাচক্রে তাহারা রহিয়া গেল শহরের এক প্রান্তে, আর আমার আশ্রয় মিলিল অন্য প্রান্তে। সুতরাং পনর-ষোল দিনের মধ্যে ওদিকে আর যাইত

20

দ্বিতীয় পৰ্ব : আট

17 October 2023
0
0
0

রাজলক্ষীর অনুরোধ আমি বিস্মৃত হই নাই। পাটনায় একখানা চিঠি পাঠাইবার কথা আসিয়া পর্যন্তই আমার মনে ছিল, কিন্তু একে ত সংসারে যত শক্ত কাজ আছে, চিঠি লেখাকে আমি কারও চেয়ে কম মনে করি না। তার পরে লিখবই বা কি”

21

দ্বিতীয় পৰ্ব : নয়

18 October 2023
1
0
0

আবার অভয়ার স্বামীর পত্র পাইলাম। পূর্ববৎ সমস্ত চিঠিময় কৃতজ্ঞতা ছড়াইয়া দিয়া এবার সে যে কি সঙ্কটে পড়িয়াছে তাহাই সসম্ভ্রমে ও সবিস্তারে নিবেদন করিয়া আমার উপদেশ প্রার্থনা করিয়াছে। ব্যাপারটা সংক্ষেপ

22

দ্বিতীয় পৰ্ব : দশ

18 October 2023
1
0
0

হঠাৎ অভয়া দ্বার খুলিয়া সুমুখে আসিয়া দাঁড়াইল, কহিল, জন্ম-জন্মান্তরের অন্ধ-সংস্কারের ধাক্কাটা প্রথমে সামলাতে পারিনি বলেই পালিয়েছিলাম শ্রীকান্তবাবু, নইলে ওটা আমার সত্যিকারের লজ্জা বলে ভাববেন না যেন।

23

দ্বিতীয় পৰ্ব : এগার

18 October 2023
0
0
0

মনোহর চক্রবর্তী বলিয়া একটি প্রাজ্ঞ ব্যক্তির সহিত আমার আলাপ হইয়াছিল। দাঠাকুরের হোটেলে একটা হরি-সংকীর্তনের দল ছিল; তিনি পুণ্যসঞ্চয়ের অভিপ্রায়ে মাঝে মাঝে তথায় আসিতেন। কিন্তু কোথায় থাকিতেন, কি করিতে

24

দ্বিতীয় পৰ্ব : বার

18 October 2023
0
0
0

সেদিন যখন মৃত্যুর পরওয়ানা হাতে লইয়া অভয়ার দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিলাম, তখন মরণের চেয়ে মরার লজ্জাই আমাকে বেশি ভয় দেখাইয়াছিল। অভয়ার মুখ পাণ্‌ডুর হইয়া গেল, কিন্তু সেই পাংশু ওষ্ঠাধর ফুটিয়া শুধ

25

দ্বিতীয় পৰ্ব : তের

19 October 2023
0
0
0

কলিকাতার ঘাটে জাহাজ ভিড়িল। দেখিলাম, জেটির উপর বঙ্কু দাঁড়াইয়া আছে। সে সিঁড়ি দিয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়া আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া কহিল, মা রাস্তার উপর গাড়িতে অপেক্ষা করচেন। আপনি নেমে যান, আমি

26

দ্বিতীয় পৰ্ব : চৌদ্দ

19 October 2023
0
0
0

শ্রীমান বঙ্কুকে কেন যে বাধ্য হইয়া আমাদের জন্য একটা স্বতন্ত্র গাড়ি রিজার্ভ করিতে হইয়াছিল, এই খবরটা যখন তাহার কাছে আমি লইতেছিলাম, তখন রাজলক্ষ্মী কান পাতিয়া শুনিতেছিল। এখন সে একটু অন্যত্র যাইতে রাজলক

27

দ্বিতীয় পৰ্ব : পনর

19 October 2023
0
0
0

রাজলক্ষ্মী আমার তত্ত্ব লইতে সেই সাজেই আমার ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। আমি লাফাইয়া উঠিয়া তাহার প্রতি দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করিয়া থিয়েটারী গলায় কহিলাম, ওরে পাষণ্ড রোহিণি! তুই গোবিন্দলালকে চিনিস না? আহ

28

তৃতীয় পৰ্ব : এক

19 October 2023
0
0
0

একদিন যে ভ্রমণকাহিনীর মাঝখানে অকস্মাৎ যবনিকা টানিয়া দিয়া বিদায় লইয়াছিলাম, আবার একদিন তাহাকেই নিজের হাতে উদ্ঘাটিত করিবার আর আমার প্রবৃত্তি ছিল না। আমার সেই পল্লীগ্রামের যিনি ঠাকুরদাদা তিনি যখন আমার

29

তৃতীয় পৰ্ব : দুই

20 October 2023
0
0
0

বাঙ্গলার ম্যালেরিয়া আমাকে যে বেশ শক্ত করিয়াই ধরিয়াছিল তাহা পশ্চিমের শহরে প্রবেশ করিবার পূর্বেই বুঝা গেল। পাটনা স্টেশন হইতে রাজলক্ষ্মীর বাড়িতে আমি অনেকটা অচেতন অবস্থাতেই নীত হইলাম। ইহার পরের মাসটা

30

তৃতীয় পৰ্ব : তিন

20 October 2023
0
0
0

সাঁইথিয়া স্টেশনে আসিয়া যখন পৌঁছান গেল তখন বেলা পড়িয়া আসিতেছে। রাজলক্ষ্মীর গোমস্তা কাশীরাম স্বয়ং স্টেশনে আসিতে পারেন নাই – সেদিকের ব্যবস্থা করিতে নিযুক্ত আছেন, কিন্তু জন-দুই লোক পাঠাইয়া পত্ৰ দিয়

31

তৃতীয় পৰ্ব : চার

20 October 2023
0
0
0

সাধু জিজ্ঞাসা করিলেন, গঙ্গামাটি কি তোমাদের জমিদারি দিদি? রাজলক্ষ্মী একটু হাসিয়া কহিল, দেখচ কি ভাই, আমরা একটা মস্ত জমিদার। এবার উত্তর দিতে গিয়ে সাধুও একটুখানি হাসিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, মন্ত জমিদারি

32

তৃতীয় পৰ্ব : পাঁচ

20 October 2023
0
0
0

সাধুজীত স্বচ্ছন্দে চলিয়া গেলেন। তাঁহার বিরহব্যথাটা রতনের কিরূপ বাজিল অবশ্য জিজ্ঞাসা করা হয় নাই, সম্ভবতঃ মারাত্মক তেমন কিছু হইবে না : কিন্তু একজন ত দেখিলাম কাঁদিয়া গিয়া ঘরে ঢুকিলেন এবং তৃতীয় ব্যক্

33

তৃতীয় পৰ্ব : ছয়

21 October 2023
0
0
0

সকালে উঠিয়া শুনিলাম কুশারীমহাশয় মধ্যাহ্ন ভোজনের নিমন্ত্রণ করিয়া গিয়াছেন। ঠিক এই আশঙ্কাই করিতেছিলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম, আমি একা নাকি? রাজলক্ষ্মী হাসিয়া কহিল, না, আমিও আছি। যাবে? যাব বৈ কি। তাহার

34

তৃতীয় পৰ্ব : সাত

21 October 2023
0
0
0

আপনাকে আপনি বিশ্লেষণ করিলে দেখিতে পাই, যে কয়টি নারী চরিত্র আমার মনের উপর গভীর রেখাপাত করিয়াছে, তাহার একটি সেই কুশারীমহাশয়ের বিদ্রোহী ভ্রাতৃজায়া। এই সুদীর্ঘ জীবনে সুনন্দাকে আমি আজও ভুলি নাই। মানুষক

35

তৃতীয় পৰ্ব : আট

21 October 2023
0
0
0

পূর্বেই বলিয়াছি একদিন সুনন্দা আমাকে দাদা বলিয়া ডাকিয়াছিল, তাহাকে পরমাত্মীয়ের মত কাছে পাইয়াছিলাম। ইহার সমস্ত বিবরণ বিস্তৃত করিয়া না বলিলেও কথাটাকে প্রত্যয় না করিবার বিশেষ কোন হেতু নাই। কিন্তু আম

36

তৃতীয় পৰ্ব : নয়

21 October 2023
0
0
0

তাহাদের সম্বন্ধে সবাই ভাবিল, যাক, বাঁচা গেল! রাজলক্ষ্মীর তুচ্ছ কথায় মন দিবার সময় ছিল না; সে উহাদের দুই-চারিদিনেই বিস্মৃত হইল; মনে পড়িলেও কি যে মনে করিত সেই জানে। তবে, পাড়া হইতে যে একটা পাপ বিদায়

37

তৃতীয় পৰ্ব : দৃশ

22 October 2023
0
0
0

মানুষের পরকালের চিন্তার মধ্যে নাকি পরের চিন্তার ঠাঁই নাই, না হইলে আমার খাওয়া পরার চিন্তা রাজলক্ষ্মী পরিত্যাগ করিতে পারে এত বড় বিস্ময় সংসারে আর কি আছে? এই গঙ্গামাটিতে আমরা কতদিনই বা আসিয়াছি, এই ক'ট

38

তৃতীয় পৰ্ব : এগারো

22 October 2023
0
0
0

সকালে উঠিয়া শুনিলাম, অতি প্রত্যূষেই রাজলক্ষ্মী স্নান করিয়া রতনকে সঙ্গে লইয়া চলিয়া গেছে, এবং তিনদিনের মধ্যে যে বাড়ি আসিতে পারিবে না, এ খবরও পাইলাম। হইলও তাহাই। সেখানে বিরাট কাজ কিছু যে চলিতে লাগিল

39

তৃতীয় পৰ্ব : বার

22 October 2023
0
0
0

সকালে খবর পৌঁছিল আর দুই জন পীড়িত হইয়াছে। ঔষধ দিলাম, জমাদার সাঁইথিয়ায় সংবাদ পাঠাইয়া দিল। আশা করিলাম, এবার কর্তৃপক্ষের আসন টলিবো বেলা নয়টা আন্দাজ ছেলেটা মরিল। ভালই হইল। এই ত ইহাদের জীবন! সম্মুখে

40

তৃতীয় পৰ্ব : তের

22 October 2023
0
0
0

সন্ধ্যা শেষ হইল বলিয়া কিন্তু রাত্রির অন্ধকার গাঢ়তর হইয়া উঠিতে তখনও বিলম্ব ছিল। এই সময়টুকুর মধ্যে যেমন করিয়া হউক আশ্রয় খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। এ কাজ আমার পক্ষে নূতনও নহে, কঠিন বলিয়াও কোনদিন ভ

41

তৃতীয় পৰ্ব : চৌদ্দ

23 October 2023
0
0
0

গঙ্গামাটির বাটীতে আসিয়া যখন পৌঁছিলাম তখন বেলা প্রায় তৃতীয় প্রহর। দ্বারের উভয় পার্শ্বে কদলীবৃক্ষ ও মঙ্গলঘট বসান। উপরে আম্রপল্লবের মালা দোলানো। বাহিরে অনেকগুলি লোক বসিয়া জটলা করিয়া তামাক খাইতেছে।

42

তৃতীয় পৰ্ব : পনর

23 October 2023
0
0
0

সন্ন্যাসী বজ্রানন্দ তাহার ঔষধের বাক্স ও ক্যাম্বিসের ব্যাগ লইয়া যেদিন বাহির হইয়া গেল সেদিন শুধু যে সে এ বাড়ির সমস্ত আনন্দটুকুই ছাঁকিয়া লইয়া গেল তাই নয়, আমার মনে হইল যেন সে সেই শূন্য স্থানটুকু ছিদ

43

চতুর্থ পৰ্ব : এক

23 October 2023
0
0
0

এতকাল জীবনটা কাটিল উপগ্রহের মত। যাহাকে কেন্দ্র করিয়া ঘুরি, না 'পাইলাম তাহার কাছে আসিবার অধিকার, না পাইলাম দূরে যাইবার অনুমতি। অধীন নই, নিজেকে স্বাধীন বলারও জোর নাই। কাশীর ফেরত-ট্রেনের মধ্যে বসিয়া বা

44

চতুর্থ পৰ্ব : দুই

23 October 2023
0
0
0

স্টেশনে পদার্পণ মাত্র ট্রেন ছাড়িয়া গেল: পরেরটা আসিতে ঘণ্টা-দুই দেরি। সময় কাটাইবার পন্থা খুঁজিতেছি – বন্ধু জুটিয়া গেল। একটি মুসলমান যুবক আমার প্রতি মুহূর্তকয়েক চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, শ্রীকান্ত না?

45

চতুর্থ পৰ্ব : তিন

24 October 2023
0
0
0

সশব্দ উদগারে চমকিত করিয়া রতন দেখা দিল। কি রতন, পেট ভরলো? আজ্ঞে হ্যাঁ কিন্তু আপনি যাই বলুন বাবু, আমাদের কলকাতায় বাঙ্গালী বামুনঠাকুর ছাড়া রান্নার কেউ কিছু জানে না। ওদের ঐসব মেডুয়া মহারাজগুলোকে ত জ

46

চতুর্থ পৰ্ব : চার

24 October 2023
0
0
0

পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় সত্য এই যে, মানুষকে সদুপদেশ দিয়া কখনো ফললাভ হয় না। সৎপরামর্শ কিছুতেই কেহ শুনে না। কিন্তু সত্য বলিয়াই দৈবাৎ ইহার ব্যতিক্রমও আছে। সেই ঘটনাটা বলিব। ঠাকুর্দা দাঁত বাহির করিয়া

47

চতুর্থ পৰ্ব : পাঁচ

24 October 2023
0
0
0

গহরের খোঁজে আসিয়া নবীনের সাক্ষাৎ মিলিল। সে আমাকে দেখিয়া খুশি হইল, কিন্তু মেজাজটা ভারী রুক্ষ; বলিল, দেখুন গে ঐ বোষ্টমী বেটীদের আড্ডায়। কাল থেকে তো ঘরে আসাই হয়নি। সে কি কথা নবীন! বোষ্টমী এলো আবার ক

48

চতুর্থ পৰ্ব : ছয়

24 October 2023
0
0
0

যদিচ ধর্মাচরণে নিজের মতিগতি নাই, কিন্তু যাহাদের আছে তাহাদেরও বিঘ্ন ঘটাই না। মনের মধ্যে নিঃসংশয়ে জানি, ঐ গুরুতর বিষয়ের কোন অন্ধিসন্ধি আমি কোন কালে খুঁজিয়া পাইব না। তথাপি ধার্মিকদের আমি ভক্তি করি। বি

49

চতুর্থ পৰ্ব : সাত

25 October 2023
0
0
0

আজ আমাকে বৈষ্ণবী বার বার করিয়া শপথ করাইয়া লইল তাহার পূর্ব-বিবরণ শুনিয়া আমি ঘৃণা করিব কি না। বলিলাম, শুনতে আমি চাইনে, কিন্তু শুনলেও ঘৃণা করব না। বৈষ্ণবী প্রশ্ন করিল, কিন্তু করবে না কেন? সে শুনলে ম

50

চতুর্থ পৰ্ব : আট

25 October 2023
0
0
0

এখানে আর একদণ্ডও থাকা উচিত নয় এবিষয়ে সন্দেহ ছিল না, কিন্তু তখনি কে যেন আড়ালে দাঁড়াইয়া চোখ টিপিয়া ইশারায় নিষেধ করে, বলে, যাবে কেন? ছ-সাতদিন থাকবে বলেই ত এসেছিলে – থাক না। কষ্ট ত কিছু নেই। রাত্র

51

চতুর্থ পৰ্ব : নয়

25 October 2023
0
0
0

আজ অবেলায় কলিকাতার বাসার উদ্দেশে যাত্রা করিয়া বাহির হইয়াছি। তার পরে এর চেয়েও দুঃখময় বর্মায় নির্বাসন। ফিরিয়া আসিবার হয়ত আর সময়ও হইবে না, প্রয়োজনও ঘটিবে না। হয়ত এই যাওয়াই শেষের যাওয়া। গণিয়

52

চতুর্থ পৰ্ব : দশ

25 October 2023
0
0
0

ওগো, ওঠো! কাপড় ছেড়ে মুখহাত ধোও—রতন চা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে। আমার সাড়া না পাইয়া রাজলক্ষ্মী পুনরায় ডাকিল, বেলা হ'লো—কত ঘুমোবে? পাশ ফিরিয়া জড়িত কণ্ঠে বলিলাম, ঘুমোতে দিলে কই? এই ত সবে শুয়েছি

53

চতুর্থ পৰ্ব : এপার

26 October 2023
1
0
0

পরদিন আমার অনিচ্ছায় যাওয়া ঘটিয়া উঠিল না। কিন্তু পরের দিন আর ঠেকাইয়া রাখা গেল না, মুরারিপুর আখড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিতেই হইল। রাজলক্ষ্মীর বাহন রতন, সে নহিলে কোথাও পা বাড়ানো চলে না, কিন্তু রান্না

54

চতুর্থ পৰ্ব : বার

26 October 2023
0
0
0

রাজলক্ষ্মীর প্রশ্নের উত্তরে আমার অর্থাগমের বৃত্তান্তটা প্রকাশ করিতে হইল। আমাদের বর্মা-অফিসের একজন বড়দরের সাহেব ঘোড়দৌড়ের খেলায় সর্বস্ব হারাইয়া আমার জমানো টাকা ধার লইয়াছিলেন। নিজেই শর্ত করিয়াছিলে

55

চতুর্থ পৰ্ব : তের

26 October 2023
0
0
0

এক সকালে স্বামীজী আনন্দ আসিয়া উপস্থিত। তাহাকে আসার নিমন্ত্রণ করা হইয়াছে রতন জানিত না, বিষণ্নমুখে আসিয়া আমাকে খবর দিল, বাবু, গঙ্গামাটির সেই সাধুটা এসে হাজির হয়েছে। বলিহারি তাকে খুঁজে খুঁজে বার করেছ

56

চতুর্থ পৰ্ব : চৌদ্দ

26 October 2023
0
0
0

সমস্ত পথ চোখ যাহাকে অন্ধকারেও খুঁজিতেছিল, তাহার দেখা পাইলাম রেলওয়ে স্টেশনে। লোকের ভিড় হইতে দূরে দাঁড়াইয়া আছে, আমাকে দেখিয়া কাছে আসিয়া বলিল, একখানি টিকিট কিনে দিতে হবে গোঁসাই সত্যিই কি তবে সকলকে

---