shabd-logo

নবম অধ্যায়

31 October 2023

2 Viewed 2

উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে পাতাবাহার এবং ফুলের গাছ। বারান্দার উপর হইতে রাস্তার ধারের শিরীয় ও কৃষ্ণচূড়া গাছের বর্ষা-জলধৌত পল্লবিত চিক্কণতা দেখা যাইতেছে।


সূর্য তখনো অস্ত যায় নাই; পশ্চিম আকাশ হইতে ম্লান বৌদ্র সোজা হইয়া বারান্দার এক প্রাপ্তে আসিয়া পড়িয়াছে।


ছাতে তখন কেহ ছিল না। একটু পরেই সতীশ সাদাকালো-রোঁয়াওয়ালা এক ছোটো কুকুর সঙ্গে


লইয়া আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার নাম খুদে। এই কুকুরের যতরকম বিদ্যা ছিল সতীশ তাহা


বিনয়কে দেখাইয়া দিল। সে এক পা তুলিয়া সেলাম করিল, মাথা মাটিতে ঠেকাইয়া প্রণাম করিল, একখণ্ড বিস্কুট দেখাইতেই লেভের উপর বসিয়া দুই পা জড়ো করিয়া ভিক্ষা চাহিল। এইরূপে খুদে যে খ্যাতি অর্জন করিল সতীশই তাহা আত্মসাৎ করিয়া গর্ব অনুভব করিল এই যশোলাভে খুদের লেশমাত্র উৎসাহ ছিল না, বস্তুত যশের চেয়ে বিস্কুটটাকে সে ঢের বেশি সত্য বলিয়া গণ্য করিয়াছিল। কোনো একটা ঘর হইতে মাঝে মাঝে মেয়েদের গলার খিলখিল হাসি ও কৌতুকের কণ্ঠস্বর এবং তাহার সঙ্গে একজন পুরুষের গলাও শুনা যাইতেছিল। এই অপর্যাপ্ত হাস্যকৌতুকের শব্দে বিনয়ের মনের মধ্যে একটা অপূর্ব মিষ্টতার সঙ্গে সঙ্গে একটা যেন ঈর্ষার বেদনা বহন করিয়া আনিল। ঘরের ভিতরে মেয়েদের গলার এই আনন্দের কলধ্বনি বয়স হওয়া অবধি সে এমন করিয়া কখনো শুনে নাই। এই আনন্দের মাধুর্য তাহার এত কাছে উচ্ছ্বসিত হইতেছে অথচ সে ইহা হইতে এত দূরে। সতীশ তাহার কানের কাছে কী বলিতেছিল, বিনয় তাহা মন দিয়া শুনিতেই পারিল না।


পরেশবাবুর স্ত্রী তাহার তিন মেয়েকে সঙ্গে করিয়া হাতে আসিলেন -- সঙ্গে একজন যুবক আসিল, সে তাঁহাদের দূর আত্মীয়।


পরেশবাবুর স্ত্রীর নাম বরদাসুন্দরী। তাঁহার বয়স অল্প নহে কিন্তু দেখিলেই বোঝা যায় যে বিশেষ যত্ন করিয়া সাজ করিয়া আসিয়াছেন। বড়োবয়স পর্যন্ত পাড়াগেয়ে মেয়ের মতো কাটাইয়া হঠাৎ এক সময় হইতে আধুনিক কালের সঙ্গে সমান বেগে চলিবার জন্য বাস্ত হইয়া পড়িয়াছেন; সেইজনাই তাঁহার সিল্কের শাড়ি বেশি খসখস্ এবং উঁচু গোড়ালির জুতা বেশি খটখট শব্দ করে। পৃথিবীতে কোন জিনিসটা ব্রাহ্ম এবং কোনটা অব্রাহ্ম তাহারই ভেদ লইয়া তিনি সর্বদাই অত্যন্ত সতর্ক হইয়া থাকেন। সেইজনাই রাধারানীর নাম পরিবর্তন করিয়া তিনি সুচরিতা রাখিয়াছেন। কোনো-এক সম্পর্কে তাঁহার এক শ্বশুর বহুদিন পরে বিদেশের কর্মস্থান হইতে ফিরিয়া আসিয়া তাঁহাদিগকে জামাইষষ্ঠী পাঠাইয়াছিলেন। পরেশবাবু তখন কর্ম উপলক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন। বরদাসুন্দরী এই জামাইষষ্ঠীর উপহার সমস্ত ফেরত পাঠাইয়াছিলেন। তিনি এ-সকল ব্যাপারকে কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতার অঙ্গ বলিয়া জ্ঞান করেন। মেয়েদের পায়ে মোজা দেওয়াকে এবং টুপি পরিয়া বাহিরে যাওয়াকে তিনি এমনভাবে দেখেন যেন তাহাও ব্রাহ্মসমাজের ধর্মমতের একটা অঙ্গ। কোনো ব্রাহ্ম পরিবারে মাটিতে

আসন পাতিয়া খাইতে দেখিয়া তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, আজকাল ব্রাহ্মসমাজ


পৌত্তলিকতার অভিমুখে পিছাইয়া পড়িতেছে।


তাঁহার বড়ো মেয়ের নাম লাবণ্য। সে মোটাসোটা, হাসিখুশি, লোকের সঙ্গ এবং গল্পগুজব ভালোবাসে। মুখটি গোলগাল, চোখ দুটি বড়ো, বর্ণ উজ্জ্বল শ্যাম। বেশভূষার ব্যাপারে সে স্বভাবতই কিছু ঢিলা, কিন্তু এ সম্বন্ধে তাহার মাতার শাসনে তাহাকে চলিতে হয়। উঁচু গোড়ালির জুতা পরিতে সে সুবিধা বোধ করে না, তবু না পরিয়া উপায় নাই। বিকালে সাজ করিবার সময় মা স্বহস্তে তাহার মুখে পাউডার ও দুই গালে রঙ লাগাইয়া দেন। একটু মোটা বলিয়া বরদাসুন্দরী তাহার জামা এমনি আর্ট করিয়া তৈরি করিয়াছেন যে, লাবণ্য যখন সাজিয়া বাহির হইয়া আসে তখন মনে হয় যেন তাহাকে পাটের বস্তার মতো কলে চাপ দিয়া আটিয়া বাঁধা হইয়াছে।


মেজো মেয়ের নাম ললিতা। সে বড়ো মেয়ের বিপরীত বলিলেই হয়। তাহার দিদির চেয়ে সে মাথায় লম্বা, রোগা, রঙ আর-একটু কালো, কথাবার্তা বেশি কয় না, সে আপনার নিয়মে চলে, ইচ্ছা করিলে কড়া কড়া কথা শুনাইয়া দিতে পারে। বরদাসুন্দরী তাহাকে মনে মনে ভয় করেন, সহজে তাহাকে ক্ষুব্ধ করিয়া তুলিতে সাহস করেন না।


ছোটো লীলা, তাহার বয়স বছর দশেক হইবে। সে দৌড়বাপ উপদ্রব করিতে মজবুত। সতীশের সঙ্গে তাহার ঠেলাঠেলি মারামারি সর্বদাই চলে। বিশেষত খুদে নামধারী কুকুরটার স্বত্বাধিকার লইয়া উভয়ের মধ্যে আজ পর্যন্ত কোনো মীমাংসা হয় নাই। কুকুরের নিজের মত লইলে সে বোধ হয় উভয়ের মধ্যে কাহাকেও প্রভুরূপে নির্বাচন করিত না ; তবু দুজনের মধ্যে সে বোধ করি সভাশকেই কিঞ্চিৎ পছন্দ করে। কারণ, লীলার আদরের কো সম্বরণ করা এই ছোটো জন্তুটার পক্ষে সহজ ছিল না। বালিকার আদরের চেয়ে বালকের শাসন তাহার কাছে অপেক্ষাকৃত সুসহ ছিল।


বরদাসুন্দরী আসিতেই বিনয় উঠিয়া দাঁড়াইয়া অবনত হইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল। পরেশবাবু


কহিলেন, “এরই বাড়িতে সেদিন আমরা--


বরদা কহিলেন, “ওঃ। বড়ো উপকার করেছেন-- আপনি আমাদের অনেক ধন্যবাদ জানবেন।”


শুনিয়া বিনয় এত সংকুচিত হইয়া গেল যে ঠিকমত উত্তর দিতে পারিল না।


মেয়েদের সঙ্গে যে যুবকটি আসিয়াছিল তাহার সঙ্গেও বিনয়ের আলাপ হইয়া গেল। তাহার নাম সুধার। সে কালেজে বি. এ পড়ে। চেহারাটি প্রিয়দর্শন, রঙ গৌর, চোখে চশমা, অল্প গোঁফের রেখা উঠিয়াছে। ভাবখানা অত্যন্ত চঞ্চল-- এক দণ্ড বসিয়া থাকিতে চায় না, একটা কিছু করিবার জন্য বাস্ত। সর্বদাই মেয়েদের সঙ্গে ঠাট্টা করিয়া, বিরক্ত করিয়া, তাহাদিগকে অস্থির করিয়া রাখিয়াছে। মেয়েরাও তাহার প্রতি কেবলই তর্জন করিতেছে, কিন্তু সুধীরকে নহিলে তাহাদের কোনোমতেই চলে না। সার্কাস দেখাইতে, ভুঅলজিকাল গার্ডেনে লইয়া যাইতে, কোনো শখের জিনিস কিনিয়া আনিতে, সুধীর সর্বদাই প্রস্তুত। মেয়েদের সঙ্গে সুধীরের অসংকোচ হৃদ্যতার ভাব বিনিয়ের কাছে অত্যন্ত নূতন এবং বিস্ময়কর ঠেকিল। প্রথমটা সে এইরূপ ব্যবহারকে মনে মনে নিন্দাই করিল, কিন্তু সে নিন্দার সঙ্গে একটু যেন ঈর্যার ভাব মিশিতে লাগিল।


বরদাসুন্দরী কহিলেন, “মনে হচ্ছে আপনাকে যেন দুই-একবার সমাজে দেখেছি।


বিনয়ের মনে হইল যেন তাহার কী একটা অপরাধ ধরা পড়িল। সে অনাবশ্যক লজ্জা প্রকাশ করিয়া


কহিল, “হাঁ, আমি কেশবাবুর বক্তৃতা শুনতে মাঝে মাঝে যাই।”

বরদাসুন্দরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি বুঝি কলেজে পড়ছেন ?”


বিনয় কহিল, “না, এখন আর কলেজে পড়ি নে। বরদা কহিলেন, “আপনি কলেজে কতদূর পর্যন্ত পড়েছেন ?”


বিনয় কহিল, “এম. এ. পাস করেছি।"


শুনিয়া এই বালকের মতো চেহারা যুবকের প্রতি বরদাসুন্দরীর শ্রদ্ধা হইল। তিনি নিশ্বাস ফেলিয়া


পরেশের দিকে চাহিয়া কহিলেন, "আমার মন যদি থাকত তবে সেও এতদিনে এম. এ. পাস করে বের হত।


বরদার প্রথম সন্তান মনোরঞ্জন নয় বছর বয়সে মারা গেছে। যে-কোনো যুবক কোনো বড়ো পাস করিয়াছে, বা বড়ো পদ পাইয়াছে, ভালো বই লিখিয়াছে, বা কোনো ভালো কাজ করিয়াছে শোনেন, বরদার তখনই মনে হয় মনু বাঁচিয়া থাকিলে তাহার দ্বারাও ঠিক এইগুলি ঘটিত। যাহা হউক সে যখন নাই তখন বর্তমানে জনসমাজে তাঁহার মেয়ে তিনটির গুণপ্রচারই বরদাসুন্দরীর একটা বিশেষ কর্তব্যের মধ্যে ছিল। তাঁহার মেয়েরা যে খুব পড়াশুনা করিতেছে এ কথা বরদা বিশেষ করিয়া বিনয়কে জানাইলেন, মেম তাঁহার মেয়েদের বুদ্ধি ও গুণপনা সম্বন্ধে করে কী বলিয়াছিল তাহাও বিনয়ের অগোচর রহিল না। যখন মেয়ে-ইস্কুলে প্রাইজ দিবার সময় লেফটেনেন্ট গবর্নর এবং তাঁহার স্ত্রী আসিয়াছিলেন তখন তাহাদিগকে ভোড়া দিবার জন্য ইস্কুলের সমস্ত মেয়েদের মধ্যে লাবণ্যকেই বিশেষ করিয়া বাছিয়া নওয়া হইয়াছিল এবং গবর্নরের স্ত্রী লাবণাকে উৎসাহজনক কী-একটা মিষ্টবাকা বলিয়াছিলেন তাহাও বিনয় শুনিল।


অবশেষে বরদা লাবণ্যকে বলিলেন, "যে সেলাইটার জন্যে তুমি প্রাইজ পেয়েছিলে সেইটে নিয়ে এসো তো মা।"


একটা পশমের সেলাই করা টিয়াপাখির মূর্তি এই বাড়ির আত্মীয়বন্ধুদের নিকট বিখ্যাত হইয়া উঠিয়াছিল। মেমের সহযোগিতায় এই জিনিসটা লাবণা অনেক দিন হইল রচনা করিয়াছিল, এই রচনায় লাবণ্যের নিজের কৃতিত্ব যে খুব বেশি ছিল তাহাও নহে-- কিন্তু নূতন-আলাপী মাত্রকেই এটা দেখাইতে হইবে সেটা ধরা কথা। পরেশ প্রথম প্রথম আপত্তি করিতেন, কিন্তু সম্পূর্ণ নিষ্ফল জানিয়া এখন আর আপত্তিও করেন না। এই পশমের টিয়াপাখির রচনানৈপুণ্য লইয়া যখন বিনয় দুই চক্ষু বিস্ময়ে বিস্ফারিত করিয়াছে তখন বেহারা আসিয়া একখানি চিঠি পরেশের হাতে দিল।


চিঠি পড়িয়া পরেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠিলেন। কহিলেন, “বাবুকে উপরে নিয়ে আয় বরদা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে?”


পরেশ কহিলেন, “আমার ছেলেবেলাকার বন্ধু কৃষ্ণলয়ান তাঁর ছেলেকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করবার জন্যে পাঠিয়েছেন ।"


হঠাৎ বিনয়ের হৃৎপিণ্ড লাফাইয়া উঠিল এবং তাহার মুখ বিবর্ণ হইয়া গেল। তাহার পরক্ষণেই সে


হাত মুঠা করিয়া বেশ একটু শক্ত হইয়া বসিল, যেন কোনো প্রতিকূল পক্ষের বিরুদ্ধে সে নিজেকে দৃঢ় রাখিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠিল। গোরা যে এই পরিবারের লোকদিগকে অশ্রদ্ধার সহিত দেখিবে ও বিচার করিবে ইহা আগে হইতেই বিনয়কে যেন কিছু উত্তেজিত করিয়া তুলিল।

30
Articles
গোড়া
0.0
গোরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাস। এটি ১৮৮০-এর দশকে ব্রিটিশ রাজত্বকালের সময়কার কলকাতার পটভূমিতে লেখা। এটি লেখার ক্রমে পঞ্চম এবং রবীন্দ্রনাথের তেরোটি উপন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম।[১] এটি রাজনীতি এবং ধর্ম নিয়ে দার্শনিক বিতর্কে সমৃদ্ধ উপন্যাস। উপন্যাসে মুক্তি, সর্বজনীনতা, ভ্রাতৃত্ব, লিঙ্গ, নারীবাদ, বর্ণ, শ্রেণি, ঐতিহ্য বনাম আধুনিকতা, নগর অভিজাত বনাম গ্রামীণ কৃষক, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ এবং ব্রাহ্মসমাজ নিয়ে লেখা রয়েছে। গোরা উপন্যাস দুই প্রেমিক জুটির দুটি সমান্তরাল প্রেমের গল্প নিয়ে গঠিত: গোরা এবং সুচরিতা, বিনয় এবং ললিতা। এতে উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার পটভূমিতে তাদের আবেগপূর্ণ ক্রমবিকাশ দেখানো হয়েছে
1

প্রথম অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাসের সকালবেলায় মেঘ কাটিয়া গিয়া নির্মল রৌদ্রে কলিকাতার আকাশ ভরিয়া গিয়াছে। রাস্তায় গাড়িঘোড়ার বিরাম নাই, ফেরিওয়ালা অবিশ্রাম হাঁকিয়া চলিয়াছে, যাহারা আপিসে কালেঞ্জে আদালতে যাইবে তাহাদের

2

দ্বিতীয় অধ্যায়

30 October 2023
1
0
0

বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশের অন্ধকার যেন ভিজিয়া ভারী হইয়া পড়িয়াছে। বর্ণহীন বৈচিত্র্যহীন মেঘের নিঃশব্দ শাসনের নীচে কলিকাতা শহর একটা প্রকাণ্ড নিরানন্দ কুকুরের মতো লেজের মধ্যে মুখ গুজিয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া

3

তৃতীয় অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

গোৱা ও বিনয় হাত হইতে নামিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় গোরার মা উপরে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। বিনয় তাঁহার পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিল। গোরার মা আনন্দময়ীকে দেখিলে গোরার মা বলিয়া মনে হয় না।

4

চতুর্থ অধ্যায়

30 October 2023
0
0
0

মত হিসাবে একটা কথা যেমনতরো শুনিতে হয়, মানুষের উপর প্রয়োগ করিবার বেলায় সকল সময় তাহার সেই একান্ত নিশ্চিত ভাবটা থাকে না-- অন্তত বিনয়ের কাছে থাকে না, বিনয়ের হৃদয়বৃত্তি অত্যন্ত প্রবল। ভাই তর্কের সময

5

পঁচম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

“ওগো, শুনছ? আমি তোমার পূজোর ঘরে ঢুকছি নে, ভয় নেই। আহ্নিক শেষ হলে একবার ও ঘরে যেয়ো-- তোমার সঙ্গে কথা আছে। দুজন নৃতন সন্ন্যাসী যখন এসেছে তখন কিছুকাল তোমার আর দেখা পাব না জানি, সেইজন্যে বলতে এলুম। ভুলো

6

ষষ্ঠ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

আজ আহ্নিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেক দিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারি দিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিক্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন। আনন্দময়ী কহিল

7

সাতম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

ভোরে উঠিয়া বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকাল-বেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মতো নির্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই-একটা সাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে।

8

আঠম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

এই একটা বাঁধ ভাঙিয়া যাইতেই বিনয়ের হৃদয়ের নূতন বন্যা আরো যেন উদ্দাম হইয়া উঠিল। আনন্দময়ীর ঘর হইতে বাহির হইয়া রাস্তা দিয়া সে যেন একেবারে উড়িয়া চলিল : মাটির স্পর্শে তাহার যেন পায়ে ঠেকিল না ; তাহ

9

নবম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

উপরে গাড়িবারান্দায় একটা টেবিলে শুভ্র কাপড় পাতা, টেবিল ঘেরিয়া চৌকি সাজানো। রেলিঙের বাহিরে কার্নিসের উপরে ছোটো ছোটো টবে পাতাবাহার এবং ফুলের গাছ। বারান্দার উপর হইতে রাস্তার ধারের শিরীয় ও কৃষ্ণচূড়া

10

দশম অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

খুঞ্চের উপর জলখাবার ও চায়ের সরঞ্জাম সাজাইয়া চাকরের হাতে দিয়া সুচরিতা হাতে আসিয়া বসিল এবং সেই মুহূর্তে বেহারার সঙ্গে গোরাও আসিয়া প্রবেশ করিল। সুদীর্ঘ শুকায় গোরার আকৃতি আয়তন ও সাজ দেখিয়া সকলেই ব

11

একাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

সেদিন তর্কে গোরাকে অপদস্থ করিয়া সুচরিতার সম্মুখে নিজের জয়পতাকা তুলিয়া ধরিবার জনা হারানের বিশেষ ইচ্ছা ছিল, গোড়ায় সুচরিতাও তাহার আশা করিয়াছিল। কিন্তু দৈবক্রমে ঠিক তার বিপরীত ঘটিল। ধর্ম বিশ্বাস ও স

12

দ্বাদশ অধ্যায়

31 October 2023
0
0
0

বিনয় ও গোরা পরেশের বাড়ি হইতে রাস্তায় বাহির হইলে বিনয় কহিল, "গোরা, একটু আস্তে আস্তে চলো ভাই-- তোমার পা দুটো আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো-- ওর চালটা একটু খাটো না করলে তোমার সঙ্গে যেতে আমরা হাঁপিয়ে পড়ি ।

13

তেরো অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

মধ্যাহ্নে গোরার কাছে যাইবার জন্য বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার কাছে নিজেকে নত করিতে কোনোদিন সংকোচ বোধ করে নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভিমানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশবাবুর

14

চোদ্দশ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

গোরা যখন মধ্যাহ্নে যাইতে বসিল, আনন্দময়ী আস্তে আস্তে কথা পাড়িলেন, “আজ সকালে বিনয় এসেছিল। তোমার সঙ্গে দেখা হয় নি? গোরা খাবার খালা হইতে মুখ না তুলিয়া কহিল, "হাঁ, হয়েছিল।" আনন্দময়ী অনেকক্ষণ চ

15

পনের তেম অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

রাত্রে গোরা বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া অন্ধকার হাতের উপর বেড়াইতে লাগিল । তাহার নিজের উপর রাগ হইল। রবিবারটা কেন সে এমন বৃথা কাটিতে দিল। ব্যক্তিবিশেষের প্রণয় লইয়া অন্য সমস্ত কাজ নষ্ট করিবার জন্য তো গো

16

ষোড়শ অধ্যায়

1 November 2023
0
0
0

বরদাসুন্দী কহিলেন, “তুমি সুচরিতার বিয়ে দেবে না নাকি ?” পরেশবাবু তাঁহার স্বাভাবিক শান্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত বুলাইলেন -- তার পর মৃদুস্বরে কহিলেন, “পাত্র কোথায় ?” বরদাসুন্দরী কহ

17

সতের্দশ অধ্যায়

1 November 2023
1
0
0

ঘন্টা দুই-তিন নিদ্রার পর যখন গোরা ঘুম ভাঙিয়া পাশে চাহিয়া দেখিল বিনয় ঘুমাইতেছে তখন তাহার হৃদয় আনন্দে ভরিয়া উঠিল। স্বপ্নে একটা প্রিয় জিনিস হারাইয়া জাগিয়া উঠিয়া যখন দেখা যায় তাহা হারায় নাই

18

আঠারো অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় গেল। আনন্দময়ীর মুখের একটি কথাও এপর্যন্ত বিনয়ের কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই। সে রাত্রে তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল। পরদিন সকালে উঠিয়া

19

ঊনিশতম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

সকালবেলায় গোরা কাজ করিতেছিল। বিনয় খামকা আসিয়া অত্যন্ত খাপছাড়াভাবে কহিল, "সেদিন পরেশবাবুর মেয়েদের নিয়ে আমি সার্কাস দেখতে গিয়েছিলুম।" গোরা লিখিতে লিখিতেই বলিল, “শুনেছি।” বিনয় বিস্মিত হইয়া

20

বিশেষ অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

মহিম সেদিন গোৱাকে কিছু না বলিয়া তাহার পরের দিন তাহার ঘরে গেলেন। তিনি মনে করিয়াছিলেন গোরাকে পুনর্বার রাজি করাইতে বিস্তর লড়ালড়ি করিতে হইবে। কিন্তু তিনি যেই আসিয় বলিলেন যে বিনয় কাল বিকালে আসিয়া বি

21

একুশ অষ্টম অধ্যায়

2 November 2023
0
0
0

গোরা তাহার স্বাভাবিক দ্রুতগতি পরিত্যাগ করিয়া অন্যমনস্কভাবে ধীরে ধীরে বাড়ি চলিল। বাড়ি যাইবার সহজ পথ ছাড়িয়া সে অনেকটা ঘুরিয়া গঙ্গার ধারের রাস্তা ধরিল। তখন কলিকাতার গঙ্গা ও গঙ্গার ধার বণিক-সভ্যতার

22

বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
2
0
0

গোলাপ ফুলের একটু ইতিহাস আছে। কাল রাত্রে গোৱা তো পরেশবাবুর বাড়ি হইতে চলিয়া আসিল, কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ল‍ইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল। এই অভ

23

ত্রয়বিংশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

অভিনয়ের অভ্যাস উপলক্ষে বিনয় প্রত্যহই আসে। সূচরিতা তাহার দিকে একবার চাহিয়া দেখে, তাহার পরে হাতের বইটার দিকে মন দেয় অথবা নিজের ঘরে চলিয়া যায়। বিনয়ের একলা আসার অসম্পূর্ণতা প্রত্যহই তাহাকে আঘাত করে

24

চব্বিশতম অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

এইরূপ স্থির হইয়াছিল যে, ইংরেজ কবি ড্রাইডেনের রচিত সংগীত-বিষয়ক একটি কবিতা বিনয় ভাবব্যক্তির সহিত আবৃত্তি করিয়া যাইবে এবং মেয়েরা অভিনয়মঞ্চে উপযুক্ত সাজে সজ্জিত হইয়া কাব্যলিখিত ব্যাপারের মূক অভিনয়

25

পঁচিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

রবিবার দিন সকালে আনন্দময়ী পান সাজিতেছিলেন, শশিমুখী তাহার পাশে বসিয়া সুপারি কাটিয়া স্তূপাকার করিতেছিল। এমন সময় বিনয় আসিয়া ঘরে প্রবেশ করিতেই শশিমুখী তাহার কোলের আঁচল হইতে সুপারি ফেলিয়া দিয়া তাড়

26

ছাব্বিশ অধ্যায়

3 November 2023
0
0
0

গোরা যখন ভ্রমণে বাহির হইল তখন তাহার সঙ্গে অবিনাশ মতিলাল বসন্ত এবং রমাপতি এই চারজন সঙ্গী ছিল। কিন্তু গোরার নির্ণয় উৎসাহের সঙ্গে তাহারা তাল রাখিতে পারিল না। অবিনাশ এবং বসন্ত অসুস্থ শরীরের ছুতা করিয়া চ

27

সতাশি তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ম্যাজিস্টেট ব্রাউনলো সাহেব দিবাবসানে নদীর ধারের রাস্তায় পদব্রজে বেড়াইতেছেন, সঙ্গে হারানবাবু রহিয়াছেন। কিছু দূরে গাড়িতে তাঁহার মেম পরেশবাবুর মেয়েদের লইয়া হাওয়া খাইতে বাহির হইয়াছেন। ব্রাউনলো স

28

আঠাশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

কোনোপ্রকার অপরাধ বিচার না করিয়া কেবলমাত্র গ্রামকে শাসন করিবার জন্য সাতচল্লিশ জন আসামিকে হাজতে দেওয়া হইয়াছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাতের পর গোৱা উকিলের সন্ধানে বাহির হইল। কোনো লোকের কাছে খবর প

29

ঊনত্রিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

আজ ছোটোলটি আসিবেন বলিয়া ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক সাড়ে দশটায় আদালতে আসিয়া বিচারকার্য সকাল সকাল শেষ করিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন। সাতকড়িবাবু ইস্কুলের ছাত্রদের পক্ষ লইয়া সেই উপলক্ষে তাঁহার বন্ধুকে বাচাই

30

তিরিশ তমো অধ্যায়

5 November 2023
0
0
0

ললিতাকে সঙ্গে লইয়া বিনয় পরেশবাবুর বাসায় আসিয়া উপস্থিত হইল। ললিতার সম্বন্ধে বিনয়ের মনের ভাবটা কী তাহা স্টীমারে উঠিবার পূর্বে পর্যন্ত বিনয় নিশ্চিত জানিত না। ললিতার সঙ্গে বিরোধেই তাহার মন ব্যাপৃ

---