থ্রিলার পড়তে আমি সব থেকে ভালোবাসি। আর সেটা যদি হয় ক্রাইম থ্রিলার তাহলে সেটা অনেকটা আমার স্পেশাল পেপারের মতো। মানে তখন প্রত্যেকটা লাইন পড়ি, প্রত্যেকটা শব্দ ধরে ধরে পড়ি আর সব কিছুকেই তলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। গল্পগুলোর কথা আগে বলে নিই। সব মিলিয়ে বইয়ে আছে পাঁচটা গল্প। তারমধ্যে শেষের দুটো বোধহয় উপন্যাসিকা বললেও খুব ভুল হবে না।
লেখকের প্রথম বই বলেই কিনা জানি না, তবে প্রথম গল্প থেকে দ্বিতীয় গল্প তারপর তৃতীয় গল্প হয়ে ধীরে ধীরে মূল চরিত্রগুলোকে পরিণত হতে দেখা যায়। মানে প্রথম গল্পে তাদের যেভাবে দেখা যাচ্ছে তৃতীয় গল্পে তাদের সেই তুলনায় বেশি পরিণত লাগে আবার পাঁচ নম্বর গল্পে গিয়ে আরও বেশি পরিণত লেগেছে। পুরো বইটা পড়তে থাকলে চরিত্রগুলোর সাথেই যেন সময় এগিয়ে যাচ্ছে এই অনুভূতিটা অজান্তেই হয়। সাধারণত গোয়েন্দা সাহিত্যে গোয়েন্দার চরিত্রটিকে প্রথম থেকে শেষ গল্প অবধি একই রকম রাখা হয়, সেটা এখানে হয় না। এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লেগেছে।
এই গল্পটি ডিটেকটিভ বললেই চলে । গল্পের প্লট , অ্যালিবাই , সকল চরিত্রের মোটিভকে যথার্থভাবে উপলব্ধি করলেই বোঝা যায় এটি সবচেয়ে পছন্দের বলার কারণ। বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা কুমার অর্জুনের খুন হওয়াকে কেন্দ্র করেই মূলত গল্পটি । এই গল্পের ক্ষেত্রে আর একটা জিনিস না বললেই নয়, অনুরাগ নন্দীর কলমের পাশাপাশি গোপা গোয়েন্দির কলমের জোরও টের পাওয়া যায়। আলাদা করে নিশ্চয় আর বলতে হয়না, কেন এই বই এর নামকরণ "অর্জুন বধের নেপথ্যে" রাখা হয়েছে।
তাই নয়, আধুনিক গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে এরম লেখা সত্যি বিশেষ স্থানের দাবীদার। সুচিত্রা ভট্টচার্যের মৃত্যুর পর মিতিন মাসীর কাহিনীর অভাব বড্ড বেশি অনুভব করেছিলাম। মনোজ সেন এর 'দময়ন্তী' ও যেন সেভাবে দাগ কেটে উঠতে পারেনি, তবে সেদিক দিয়ে অনিরুদ্ধ সাউ এর 'গোপা গোয়েন্দি' অনেক বেশি সেই অভাব পূরণে সক্ষম হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের উচ্চপদস্থ অফিসার অনুরাগ নন্দী আর তাঁর স্ত্রী গোপা নন্দী, এঁরাই কাহিনীর মুলচরিত্র। এই বইতে মোট ৫টি কাহিনী আছে। যার মধ্যে ২টি ছোট গল্প, আর তিনটি বড়ো গল্প (নভেলেট বলা চলে)।
ছোটো গল্প গুলো নিজেদের স্বল্প পরিসরে স্বয়ং সম্পূর্ণ, বড়ো গুলোও পাঠকের রহস্য রোমাঞ্চ রসনায় ভরপুর তৃপ্তি জোগাতে সমর্থ বলেই আমার মনে হয়েছে।
থ্রিলার আর গোয়েন্দা ঘরানার বইগুলিতে চিরকাল ডুবে থেকেছি আমরা যারা তাদের প্রত্যেককে এই বইটি কিনতে অনুরোধ করবো। গল্পের ঘটনার সাথে সাথে চরিত্রগুলির বিকাশ চোখে পড়ার মতো। অসম্ভব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে গল্পগুলি। বোঝা দায় যে এটিই লেখকের প্রথম বই। আর বইটি আমি প্রায় এক দমেই শেষ করেছি এবং বলতে বাধ্য হচ্ছি গল্পের সাথে বইয়ের নামটি চমৎকার মানিয়েছে। মনে রাখার মতো একটি বই।
অনিরুদ্ধ সাউ রচিত "অর্জুন বাধের নেপথ্যে" একটি আকর্ষক উপন্যাস যা আটটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু আকর্ষক লাইনের মধ্য দিয়ে তার নায়ক অর্জুনের জটিল যাত্রার বর্ণনা দেয়। গল্পটি গ্রামীণ নেপালের পটভূমিতে অর্জুনের সংগ্রাম, স্বপ্ন এবং আত্ম-আবিষ্কারের জন্য তার চূড়ান্ত অনুসন্ধানের একটি প্রাণবন্ত ছবি আঁকে। সাউ-এর গল্প বলা গীতিধর্মী এবং চিন্তা-প্ররোচনামূলক, পাঠকদের নেপালি জীবনের সৌন্দর্য ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে নিমজ্জিত করে। চরিত্রগুলি ভালভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং অর্জুনের বিবর্তন বাধ্যতামূলক। আখ্যানটি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে এটি নেপালি সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের সারমর্মকে সুন্দরভাবে ক্যাপচার করে। এই বইটি যারা একটি খাঁটি এবং আবেগগতভাবে অনুরণিত সাহিত্যিক অভিজ্ঞতা খুঁজছেন তাদের জন্য অবশ্যই পড়া উচিত।